#শখের_সাদা_শাড়ি,12,13
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
১২.
দমকা হাওয়ার মতো মেঘনার জীবন টা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। তবে আবার সব কিছু ঠিক ঠাক হতে চলেছে। যদি ও বা গর্ভধারণকালে মেয়েরা মায়ের বাড়ি তে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তবে মেঘনা স্বামীর বাড়ি তে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব। মেয়েটার কাপড় গুছিয়ে দিচ্ছে উর্মি। সত্যি বলতে কল্পনা ও করতে পারে নি মেঘনার জীবন টা আবারো ক্যানভাসে রঙ তুলি তে ফুটে উঠবে। মেঘনার চোখে জল নেই যেটা আছে সেটা খুশি। প্রচন্ড খুশি দেখায় তাকে। কিন্তু উর্মির মন টা খুব একটা ভালো নেই। সে চেয়েছিল বাচ্চা হলেই মেঘনা স্বামীর বাড়ি যাবে। তবে নয়নের অনুরোধ আর মেঘনার জোড়াজুড়ি তে না রাজি হয়ে ও পারে নি। মেঘনা আচানাক বুকে টেনে নিলো উর্মি কে। মেয়েটা স্থির থেকে প্রশ্ন করে–
” কি হয়েছে আপা? ”
” তুই আমার মায়ের অভাব পূরণ করে দিলি বোন। যে কাজ টা আমার করা উচিত ছিল সেই কাজ টা তুই করেছিস। আমি হয়তো ভালো বোন হতে পারি নি তবে আমি গর্বিত আমার ভালো বোন আছে। আই মিস ইউ অল টাইম। ”
উর্মি কাঁদছে খুব কাঁদছে তবে মুখ থেকে না কোনো শব্দ বের হলো আর না বের হলো চোখের জল। মেয়েটি কে আলগা হাতে জড়িয়ে ধরলো।
” অন্তু এসেছে আপা। ”
” কই দেখি, কি রে মন খারাপ কেন? ”
” তুমি সত্যিই চলে যাচ্ছো বড় ফুপি? ”
” চলে যাচ্ছি আবার আসবো তো। এতে মন খারাপের কি আছে। দেখি আয় তো।”
খুব করে আদর করে দিলো অন্তু কে। বলা বাহুল্য নয়নের আদর টা এই বাড়ি তে বরাবর ই একটু বেশি। এই যে বড় ভাইয়া সে নিজ থেকে বাজার করলো আজ। বড় মাছ, খাসির পা। সেই খাসির লেগ রোস্ট করলো বড় ভাবি। তুলি অবশ্য এতো তেল মাখে নি। শুধু হেসে খেলে কথা বলেছে দু দন্ড। উর্মি একটু নিশ্বাস ফেললো। নয়নের নিকট গিয়ে বসলো। কেন যেন উর্মি কে বেশ বুঝে চলে নয়ন। খুব সাবধানী ছোট শালিকার ব্যপারে।
” কেমন আছেন নয়ন ভাই? ”
” ভালো তো। তোমার আপা কে নিয়ে যাচ্ছি যে। ”
” হুম। এত দিন পর এলেন। আমি তো ভেবেই রেখেছিলাম মন মালিন্য সপ্তাহের বেশি যাবে না। ”
” দেখো উর্মি ভুল সবার ই থাকে। তোমার আপা আর আমি দুজনেই ভুল করেছি। ভুল হয়তো আমার বেশি ছিল। আর সেই জন্য আমি ক্ষমা ও চেয়েছি। ”
উর্মি তাকিয়ে রইলো। এক টা সময় নয়ন খুব প্রিয় মানুষ ছিল ওর। খুব সম্মানের স্থানে ছিলো দুলাভাই নামক ভাই টি। ভাব ও ছিল। মেঘনার প্রতি যে ভালোবাসা নয়ন দেখিয়েছে এতে করে নয়নের প্রতি শ্রদ্ধা আসা দোষের ছিল না।
” আপা এসেছিস। বোস একটু। আমি আসি। ”
নয়নের পাশে রেখে উর্মি চলে যায়। নয়ন মাথা টা নিচু করে বলে–
” স্যরি মেঘনা। ”
” ঠিক আছে। তুমি প্লিজ বার বার স্যরি বলো না। ”
” আমি বুঝতে পারি নি। ”
” আরে বাবা ঠিক আছে তো। ”
মেঘনা কেঁদে দিলো এবার। নয়নের বুকে মাথা রেখে একদম ই শান্ত হয়ে গেল। এই সময় টা প্রিয় মানুষ কে কাছে পাওয়া ঠিক কতো টা জরুরি সেসব ভাষায় প্রকাশ একে বারেই অসম্ভব।
সমীরের মায়ের নাম মিষ্টি। সেই জন্য সমীর আবার ভালোবেসে ডাকে মিষ্টি মা। মায়ের নাম ধরে ডাকা টা নিশ্চয়ই অশুভ লাগলে ও বস্তুত সমীর নাম হিসেবে নয় মিষ্টি হিসেবেই ডাকে। এই যে সকাল সকাল ডেকে উঠলো।
” মিষ্টি মা, কোথায় গেলে তুমি। আমার লেট হচ্ছে তো। ”
মা সাড়া দিলেন না। তবে সাড়া দিলো ছোট ভাই সিয়াম। ছেলেটা এবার খুব একটা ভালো রেজাল্ট করে নি। সেই জন্য রেগে আছে সমীর।
” মিষ্টি মা, মিষ্টি মা। ”
” মা বাসায় নেই। ”
“কোথায় গেছে? ”
” বাজারে। ”
সমীর কিছু বলতে নিয়েছিল তবে সিয়াম দ্রুত বলল–
” আমি বলেছিলাম আমি যাই। তবে মা যেতে দিলো না আমায়। ”
কথা বললো না সমীর। শার্ট গায়ে দিলো। সিয়াম পিছু ঘুরছে। বার বার সাফাই গাইছে।
” সত্যি বলছি মা নিলো না আমায়। তোর জন্য নাকি নিজে বাজার করবে। ”
” সর। ”
” ভাইয়া শোন না। ”
” কি বলবি? ”
” স্যরি। ”
” বলা শেষ? আমি যাচ্ছি এখন। ”
” এই ভাইয়া। ”
সমীর শুনছে না কোনো কথা। সিয়াম পেছন থেকে জাপটে ধরলো। বাচ্চা দের মতো টেনে ধরলো। সমীর এর মন গলছে না। ফোন এলো। উর্মির নাম টা ভেসে বেড়াচ্ছে। বিরক্ত হয়ে দ্রুত বলল–
” যা মাফ করে দিয়েছি। ”
উর্মির সাথে কথা বলছে সমীর। মেয়েটা দেখা করতে চাইছে। সমীর খুশি হলো। সত্যি বলতে সে নিজেই বলতো দেখা করার কথা। তবে উর্মিই বলে দিলো। হেসে উঠে উর্মি।
” তাহলে কাল দেখা করছো? ”
” হুম। যাওয়ার আগে দেখা করেই যাবো। ”
” ওকে। তাহলে সেই কথাই রইলো। ক্যাফে তে অপেক্ষা করবে। ”
” ঠিক আছে বাবা। ”
” আমার লেট হলে ও অপেক্ষা করবে বুঝেছো। ”
” করবো রে। এখন বলো কি করছো। ”
” কি করছি আবার। কথা বলছি। ”
” এটা বাদে কি করছো। ”
” হাটছি, হাসছি। আর বকা দিচ্ছি। ”
” বকা? ”
” হুম। ”
” কাকে? ”
” তোমাকে। এই গাঁধা টাইপ প্রশ্ন করার জন্য। ”
গগন কাঁপিয়ে হাসলো সমীর। উর্মি ঠোঁট চেপে সেই হাসি শুনতে লাগলো। এতো সুন্দর হতে হয় বুঝি!
তুলির সাথে বোধহয় সৌজন্যের ঝগড়া চলছে। বিষয় টা টাকা পয়সা নিয়েই। উর্মি কিছু কথা শুনতে পেল। এক পর্যায়ে চলে এলো করিডোর থেকে। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করলো। বাবার স্বপ্ন ছিলো পুরো পরিবার কে নিয়ে সুখে বাস করার। তবে ভদ্রলোক জীবনে সুখ পেলেন না। উর্মির হাত দুটো প্রায় বুকে চেপে ধরে বসে থাকতেন। শেষ বেলায় এসে খুব করে বলেছিলেন আমার সোনা মেয়ে তুই। আমি জানি তুই পারবি। তোকে বাঁচাতে হবে আমার পরিবার কে। দুজন রাক্ষসী এনেছে সংসারে। এরা ভালো থাকতে দিবে না এই সংসার কে। তুই বাঁচিয়ে রাখিস মা। উর্মি স্থির নয়নে চেয়ে থাকতো। বাবা কে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি ভাই ভাবি দের নিয়ে সাফাই গাইতো। বলতো ওরা খুব ভালো বাবা। তবে তিনি শুধুই চোখের পানি ঝরাতেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলতেন তোর ভাই দুটো বউ সোহাগী। এটা দোষের না। তবে বাবার কথা ভুলে যায়। তোদের বোন দুটো কে ও মনে রাখবে না দেখিস। তবে আমি বলছি তুই কখনো ওদের ঠকাবি না। ওদের জন্য জান দিবি সব সময়। আমার সোনা মেয়ে থাকবি তুই। ওরা তোকে কোলে পিঠে করে বড় করেছে এটা মনে রাখবি। ঠোঁট দুটো কামড়ে চোখের জল আটকালো উর্মি। বাবার কথা খুব মনে পরছে আজ। এলাম বাজলো। উর্মি উঠে গেল। খুব দেড়ি হয়ে গেল যে। রান্না ঘরে গেল দ্রুত। পায়েস আর চিড়ার পোলাও রান্না করলো। সমীর এর প্রিয় খাবার। মাছ মাংস নিলো না। তবে ফুলের চপ বানালো কয়েক টা। সমীর খেতে খুব পছন্দ করে। ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে সাত টা। একটু লেট হয়ে গেল। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো বেটারি লো। ইসস একদম মনে নেই চার্জ দিতে। রিক্সা পাওয়া ও যাচ্ছে না। একি অবস্থা!
ওয়েটার এসে বললেন–
” স্যার অর্ডার। ”
” কফি দিয়ে যান। ”
” ওকে স্যার। ”
গালে হাত রেখে বসলো সমীর। মেয়েটা ফোন ধরছে না কেন। আবার কল করতেই সুইচ অফ বলে। এই সকাল সকাল উর্মির ফোন বন্ধ কেন বলে। উর্মির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। তখনি মা কল করলেন। সময় সাড়ে নয় টা। দশ টায় এয়ারপোর্ট পৌছাতে হবে। সমীর আর ও কিছু সময় অপেক্ষা করলো। তবে উর্মি কে দেখতে পেল না। লাগাতার কল করছে সিয়াম। রিসিভ করে ধমকে উঠলো। যদি ও বা কোনো দোষ ছিলো না। দশ টা বাজার পাঁচ মিনিট আগে বের হলো সমীর। হতাশ তার চেহারা। গাড়ি তে উঠে ও পেছনে তাকিয়ে রইলো। যদি একবার উর্মির দেখা মিলে।
ভীড় ঠেলে বের হলো উর্মি। পুরো পথ হেঁটে এসেছে। যানবাহন নেই। রাস্তা ছিলো পুরো ব্লক। ঘেমে যা তা অবস্থা। দরজা ঠেলে প্রবেশ করে দেখল সমীর নেই। ঘড়ি ঢং ঢং করে জানান দিলো এগারো টা। সাড়ে আট টার সময় দেখা করার কথা ছিলো। উর্মি উদাসীন। হাতে সব খাবার দাবার আর এক টা গোলাপ ফুল। একদম লাল টকটকে গোলাপ। ভালোবাসি বলার জন্য এতো আয়োজন করেছিল। অথচ কোনো কিছুই হলো না। উর্মি দ্রুত কল করলো। সমীরের ফোন সুইচ অফ বলছে। চুপচাপ বেরিয়ে এলো ক্যাফ থেকে। হাতের ফোন টা কে আছাড় মারতে ইচ্ছে হয়। সাথে রাগ হয় নিজের প্রতি। কাল কোন আক্কেলে ফোন চার্জ করে নি।
চলবে….
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
#শখের_সাদা_শাড়ি
১৩.
ব্যস্ততা মানুষ কে ভোগায়। ব্যস্ততা মানুষ কে কাঁদায়। সমীর উর্মি দুজনেই ব্যস্ত। যখন একজনের ফ্রি টাইম আসে তখন আবার অপরজন ব্যস্ত থাকে। এই করে করে দশ টা দিন পেরিয়ে গেল। শুধু হাই হ্যালো ছাড়া আর কিছুই বলা হয় নি। উর্মি আজকাল চটপটে ভাব হারিয়ে ফেলে। প্রায় সময় ক্লান্ত হয়ে বসে থাকে। যখন সৌমেন এর কল আসে তখন হুরমুরিয়ে উঠে কাজে নামে। এমন করে তিন দিন সিডিউল এর গড়মিল করেছে। সৌমেন খুব বকেছে ও। উর্মির খারাপ লাগে নি। সে নির্বিঘ্নে চলে এসেছে। আজকাল আবার সৌমেন এর ব্যবসা খারাপ যায়। সে ব্যস্ত হয়ে মিটিং বসায় হুটহাট। সবাই কে খুব কাজ করতে হচ্ছে। এই নিয়ে উর্মি পরেছে যন্ত্রণায়। লাঞ্চ টাইমে নিয়ম করে কল করে সমীর কে। সমীর বলে ব্যস্ত আছি উর্মি। পরে কল করছি। হুম বলে কেঁটে দেয় উর্মি। যখন সমীর কল করে তখন আবার উর্মির মাথায় কাজ। রিসিভ করেই বলে কাজ করছি। দুজনেই দু প্রান্তে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সব কিছু সময়ের সাথে সাথে কেমন যেন তিক্ত হয়ে আসে। ভালো লাগে না এই কাজ। কর্ম কে নিকৃষ্ট মনে হয়। তবে এই কর্মেই পেট চলে। চলে কারো সংসার। দুদিন আগেই মেঘনার ব্যথা উঠেছিল। উর্মি এতো কাজের চাপে যেতেই পারে নি। আজ যাবে বলে স্থির করলো। হাতে সময় মাত্র দেড় ঘন্টা। তড়ি ঘড়ি করে ফোন দেয়। মেঘনা জানায় সে এখন ঠিক আছে। আর কোথায় নাকি ঘুরতে এসেছে। উর্মি ব্যস্ত হয়। এই সময় টা ঘুরাঘুরির না সেটা বোঝায়। তবে মেঘনা বলে নয়ন আছে পাশে। কিছু হবে না তাঁর। উর্মি স্থির থাকে। কথা শেষে আবার কাজে নেমে পরে। প্রচুর কাজ। একবার কল করে সমীর এর নাম্বারে। সুইচ অফ বলে। হয়তো কাজের মাঝে আছে। উর্মি কাজ করে তবে মন নেই একটু ও। হাত মুখে পানি দিয়ে আসে। সৌমেন এর রুমে গিয়ে মিটিং করে। সৌমেন কে কেমন রুগ্ন দেখায়। গলার কাছ টা কেমন বার বার উঠা নামা করে। ফর্সা গাল টা রক্তিম।
” আপনি কি অসুস্থ স্যার? ”
” কিছু টা। ঠান্ডা লেগেছ। ”
” ওও। ”
উর্মি আবার কাজে ফিরে। মাইশা আসে। হাতে কিছু ফাইল। উর্মি কাজ শেষ করে চলে আসে নিজ কেবিনে। এক মনে তাকিয়ে থাকে জানালা দিয়ে। বাসায় কল করে। অন্তু জানায় তার মা চাচি আবার ঝগড়ায় নেমেছে। আগে কখনোই এমন টা হয় নি। ইদানিং দুজনেই খুব ঝগড়া করছে। চিন্তিত হয় উর্মি। মাথা ঘুরায়। মেঘনা কে কল করলে মেঘনা খুব সুন্দর করে মিথ্যে বলে। তবে উর্মি জানে মেয়ে টা ভালো নেই। মন কে চেপে ধরে উর্মি। আজ যাবে মেঘনার শশুর বাড়ি। গিয়ে দেখবে কেমন ভালো আছে তাঁর আপা।
দরজা খুলতেই চমকালো মেঘনা। কপাল বেয়ে নেমে আসা ঘাম আর শরীরে মলিন কাপড়। সব মিলিয়ে বাড়ির কাজের লোক টার ও বোধহয় এমন হাল হয় না। উর্মির গলা টা ধরে আসে। খেই হারিয়ে ফেলে। এটা তার আপা? মাত্র কয়েক দিনে কি হাল করে ফেলেছে অমানুষ গুলো! উর্মি স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনে। মেঘনা বৃথা হাসার চেষ্টা করলো। তবে চোখ গুলো যেন হাজার খানেক অভিযোগ দাঁড় করায়। মেঘনা লুকাতে চায় সেসব। চোখের পানি আড়ালে নিতে বোন কে জড়িয়ে ধরে। কুশলাদি করার চেষ্টা চালায়। পাশেই বালতি ভর্তি নোংরা জল। বোঝা যায় ঘর মুছছিল মেঘনা। উর্মি চুপ করে থাকে।আশ পাশে তাকায়। ওম্নি করে উর্মির শাশুড়ির হাক ডাক ” মেঘনা মেঘনা কি করো এতো সময় ধরে। কখন বলেছি চা করে দিতে। ঘর ঝাড়ু দিয়ে মুছতে এতো টাইম লাগে। ”
মেঘনা চুপ করে থাকে। লজ্জায় মাথা কাঁটা যায় যেন। উর্মি তাকায় আপার নিকট। মেয়েটা কাঁদতে চাইছে না। তবে বেহায়া চোখ থামে না। ফুপিয়ে উঠে সে। মেঘনার চোখের একেক বিন্দু উর্মির উপর বিষ ঢেলে দেওয়ার মত যন্ত্রণা দেয়। এরা মানুষ?
” মেঘনা, এই মেঘনা কথার উত্তর দেও না কেন। একটু কাজ সেটা ও এত লেট। মেঘনা — ”
মেঘনার শাশুড়ি ড্রয়িং রুমে এসে থেমে যান। উর্মি সৌজন্য বোধ থেকে সালাম টুকু দেয় আর তারপর ই আপার হাত ধরে বের করে নিয়ে আসে এক কাপড়ে। নয়ন ভাই এর সাথে বোঝাপড়া টা না হয় পরেই হবে।
সৌমেন টেবিলে মাথা গুজে আছে। সব কিছু তে অদ্ভুত তিক্ততা নেমে এসেছে। বিজনেস যাচ্ছে রসাতলে। প্রায় সময় ই অসুস্থ বোধ করে। সৌমেন এর বাবা মাহফুজ সাহেব ছেলের এই অবস্থা দেখে চিন্তিত। মা বাবার যত্নের ছেলে সৌমেন। বড্ড বেশি ভালোবাসেন। অবশ্য অতি দরদের কারণ বিয়ের নয় বছর পর এই সন্তান লাভ। খুব ছোট বয়সে বিয়ে করেন মাহফুজ সাহেব। বিয়ের নয় বছরে ও সন্তান হচ্ছিল না। অবশেষে আল্লাহর দয়া তে পেলেন চাঁদের টুকরো কে। সেই চাঁদের টুকরো আবার অসুস্থ। তিনি ষাট বছরে পা রেখে ও যতো টা সুস্থ ছেলেটা যেন আজকাল ততোটাই অসুস্থ। স্থবির ছেলের দিকে তাকিয়ে বুঝলেন স্ত্রীর সাথে এই বিষয়ে গম্ভীর এক আলোচনায় বসতে হচ্ছে। ছেলেটা আবার কোনো রোগে পরে নি তো। কি যে চেকাপ করালো সেদিন কে জানে। সব সুস্থ থাকলে এতো ক্লান্ত হয়ে পরে কেন?
তুলির সাথে সৌজন্যের ঝগড়া চলছে।
নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেলেছে ছোট ভাবি। সহসা এদের বিষয়ে নাক গলায় না উর্মি। তবু ও আজ সহ্য হচ্ছে না। ছোট ভাইয়ের রুমের কাছে এসে দাঁড়ালো। তুলি তখন বলছে–
” বউ পালা না পারলে বিয়ে করেছো কেন? সংসারে টাকা ঢেলেই সব টাকা শেষ হয়ে যায় তাই না। আমি কি বুড়ি হয়ে গেছি? সাজ গোজ করতে ইচ্ছে করে না আমার। ”
” পাঁচ হাজার টাকা তে ও তোমার হচ্ছেনা তুলি। জানোই তো সেদিন জব টায় ধরা খেলাম। দেখলে তো কতো গুলো টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হলো। এখন তুমিই বলো আমি কি করবো। এই সময়ে দশ হাজার টাকা করে দেওয়া কি করে সম্ভব? ”
” কেন সম্ভব না। নতুন চাকরির বেতন তো ত্রিশ হাজার টাকা। সংসার খরচ কেন বেশি দিচ্ছো? সেখান থেকে হাজার দুয়েক টাকা কমিয়ে নাও। তোমার বোন ও তো কম করেই দেয়। ”
” আহ তুলি। তুমি তো জানোই ”
” সরো সামনে থেকে। ”
সৌজন্য কে ধাক্কা দিয়ে সরে আসে তুলি। দশ হাজার টাকা সংসার খরচ কেন দেয় এটা তুলি জানে ঠিক ই। তবু ও তুলি বেশি কথা বলছে। এই যে রাত দিন চব্বিশ টা ঘন্টা এসি অন করে বসে থাকে তুলি এই কারনে বিল আসে তিন হাজারের ও উপরে। রোজ নিয়ম করে যে পানির কল ছেড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা হাত পা পরিষ্কার করে। এসবের খরচা তো কম হচ্ছে না। তবু ও সেই খরচা নিয়ে প্রশ্ন করে তুলি। অন্য কারো ঘরে তো এসি নেই যে সমান ভাগ তুলবে। সৌজন্য চিন্তায় বসে থাকে। সেভিং এর টাকা টা কোনো মতে চালাতে হচ্ছে। না হলে বছর শেষে যে লাভ টা পাওয়ার কথা সেটা আর পাবে না। উর্মি দরজার কাছ থেকে সরে আসে। নক করার ইচ্ছে হয় না। সে মনে মনে এক সিদ্ধান্ত নেয়। অন্তুর জন্য সেভিং এর টাকা টা যেমন দিয়েছে ঠিক তেমনি ভাবে ছোট ভাবির জন্য ভাইয়ার হাতে কিছু টাকা গুজে দিবে। তুলির আবার সম্মানবোধ খুব। টাকার জন্য জ্বলবে ঠিক তবে উর্মি নিজ হাতে দিলে ফিরিয়ে দিবে। বলবে আমি কি ফকির নাকি?
পনেরো টা দিন পর আজকের দিন টা ফ্রি পেল সমীর। লোকে বলে ব্যস্ততা নাকি গুরুত্বের উপর ডিপেন্ড করে। তবে এ কথা টা শতভাগ সত্য নয়। উর্মি তার নিকট ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তবুও ব্যস্ততার জন্য উর্মির সাথে ঠিক ঠাক কথা হয় নি। সোশ্যাল সাইট গুলো তে যাওয়া হয় নি অনেক গুলো দিন। আবার সেভাবে দেখতে গেলে ব্যস্ততা সত্যিই গুরুত্বের উপর ডিপেন্ড করে। সে যাই হোক না কেন সমীর আজ উর্মি কি কল করেছে। গভীর রাতে কল করায় ব্যলকনিতে এলো উর্মি। ধীরে ধীরে ঘুম জড়ানো কন্ঠ টা খোলসা করলো।
” কেমন আছো তুমি? ”
” ভালোই। ”
” বেশি ভালো না? ”
” উহু। কি করে বেশি ভালো থাকি বলো উর্মি। এই সব কিছু ফেলে চলে আসতে ইচ্ছে করে। ”
” চলে আসো তাহলে। ”
” সত্যিই চলে আসবো? ”
” আরে পাগল নাকি। কাজে গেছো। কত টা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেটি ভেবেছো? ”
” বাট তোমার থেকে তো নয়। ”
নিশব্দে হাসলো উর্মি। সমীর হঠাৎ ই আবেগঘন হয়ে পরলো। ভীষণ ভাবে আকর্ষিত কন্ঠে বলল–
” আমি তোমায় ভালোবাসি উর্মি। ভীষণ ভালোবাসি। নিজের থেকে ও বেশি। আমার শখের মানুষ তুমি। যাকে পেলে আমার জীবনের সব থেকে সুন্দর শখ টি পূর্ণতা পাবে। আমার শখের প্রণয়িনী। ”
চলবে…….
কলমে ~ ফাতেমা তুজ