শখের_সাদা_শাড়ি_২,২১ (সমাপ্তি)

0
1225

#শখের_সাদা_শাড়ি_২,২১ (সমাপ্তি)
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

জাকজমক ভাবে বিয়ে হচ্ছে উর্মির। তবে কেউ কেউ বেশ কথা বললেন বেনারসি টা সাদা হওয়া তে। উর্মি সেই বেনারসি টা তে হাত বুলাতে বুলাতে বলল ” এটা আমার ভীষণ প্রিয়। সমীর নিজ হাতে যত্ন নিয়ে তৈরি করেছে। ”

মেঘনা বাবু কে ঘুম পারাচ্ছিল। আলিদের হাতে তুলে দিয়ে উর্মির কাছে এলো। শাড়ি টা স্পর্শ করে জানালো ” আসলেই খুব বেশি সুন্দর এটা। তবে কিছু টা মলিন লাগছে। ”

” রাগ করে রেখে দিয়েছিল অযত্নে। সেই জন্যেই ভাঁজ পরেছে। এখনি ঠিক করে দিচ্ছি আপা। ”

উর্মির মুখে একটা আলাদা দ্যুতি কাজ করছে। মেঘনার ভীষণ ভালো লাগলো। বোনের বিয়ে তে সব থেকে বেশি খুশি হলো সৌজন্য। কিছু দিন পূর্বেই সমস্ত টা খোলসা করেছে উর্মি। পরিবারের সবাই ছিলো তখন নির্বাক। বাচ্চা একটি মেয়ে কতো টা ভালোবাসে পরিবার কে। নিজের জীবন টা কে বাজি রেখেছে ভাবা যায়!

আয়রন করে সাদা শাড়ি টা ঠিক করলো উর্মি। চিকন দেহ টা কেমন কাঁপে। এতো টা আনন্দ বহু দিন দেখা যায় নি। উর্মি যখন শাড়ি টা আয়রন করছে তখনি অন্তু এলো ঘরে।” ছোট ফুপি তোমার নামে পার্সেল এসেছে। ”

” পার্সেল? কে পাঠালো। ”

” এই দেখো। ”

সৌমেন পার্সেল পাঠিয়েছে! বিষয় টা মেয়েটির মন কে নাড়া দিল। গলার কাছ টা শুকিয়ে এলো কেমন। মন টা মুহুর্তেই হলো ব্যকুল। মেঘনার হাত টা এখন উর্মির কাঁধে। চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করে জানালো
” সব ঠিক আছে। এতো চিন্তা করছিস কেন? ”

” পার্সেল কেন পাঠালো আপা? ”

” সেটা তো বুঝতে পারছি না। দেখ খুলে, আমি এখন আসছি। ”

” তুই থাক প্লিজ। ”

” বোকা, তুই তো সাহসী। ”

হাসলো মেঘনা। অথচ উর্মির হৃদয়ে বড্ড দহন। জীবন ওকে নতুন কিছুর সাথে পরিচয় করায়। বড্ড নতুন সব টা।

প্যাকেটে একটা সাদা শাড়ি রাখা। সাথে কিছু ফুল ও আছে। শাড়ি টা বিস্মিত করলো উর্মি কে। সমীরের দেওয়া শাড়ি আর সৌমেন এর দেওয়া শাড়ি দুটোই যেন হুবুহু এক। মেয়েটি এবার মনোযোগ হারালো। সব কিছু এলোমেলো লাগে। ফুল গুলো সরাতেই একটা চিঠি পেল উর্মি।

” শেষ বারের মতো দেখা করবে উর্মি? কিছু বলার আছে। আর বাকি গুলো তোমার উপহার। ”

অতিরিক্ত ভাবনায় মাথা ধরে এলো। অশিষ্ট হয়ে গেল মন। উর্মি ধপ করে বসে পরলো মেঝের উপর। সৌমেন এর সাথে দশ দিন পূর্বে দেখা হয়েছিল। সেদিনের পর আর খোঁজ ও নেওয়া হয় নি। ভালো আছে নাকি সেটা ও জানা নেই। তবে সৌমেন কেন দেখা করতে চায়?

হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো বলে। উর্মি কে ডাকতে এলো প্রায় সকলে। এক কোনে বসে থাকা উর্মি চট করে লুকিয়ে ফেলে জিনিস গুলো। দরজা দিয়ে প্রবেশ করে সমীর। উর্মির মন ভালো হয়ে যায়। সমীর হাত বাড়িয়ে ডেকে নেয় মেয়েটি কে।

একটু হলুদ ছুঁইয়ে দিয়ে সমীর বলল ” এই মায়াবী সন্ধ্যা আরেকটু দীর্ঘ হোক। থেমে যাক সবটা। ”

” থেমে গেলে বিয়ে টা কি করে হবে ভাইয়া? ”

শশী কে দেখে খুব ভালো লাগলো উর্মির। টেনে বসিয়ে দিলো পাশে। এক বছরের ও বেশি সময় ধরে দেখা নেই। উর্মি বলল
” বেশ বড় হয়ে গেলে তুমি। ”

” তুমি ও তো বড় হয়ে গেছো। বিয়ে করে নিচ্ছো। ”

” হ্যাঁ। এরপর তোমায় বিয়ে দিবো। ”

” দিও। আগে বলো তোমাদের লাভ স্টোরি। ”

” বড় দের লাভ স্টোরি শুনতে চাচ্ছিস সাহস তো কম না। ”

” ওমা বড় হয়েছি না। আর সমীর ভাইয়া আগে বলো নি কেন আপুর সাথে তোমার প্রেমের কথা? ”

কান টেনে ধরলো শৌখিন। শশী ভাইয়ের গায়ে কিল বসালো। ওদের কান্ডে হেসে লুটিপুটি অবস্থা। সেলফি তুলতে চলে গেল শশী। শৌখিন বলল ” অবশেষে তদের বিয়ে টা হচ্ছে। ”

” শুধু অবশেষেই নয় বল বহু বাঁধা বিপত্তির পরে। ”

” একদম। তবে একটা কনফিউশন আছে উর্মি। ”

” কি? ”

” তোমায় কি বলি বলো তো। ভাবি বলবো কি? ”

” যা তা বলছেন ভাইয়া। আমি ভাবি টাবি না। ”

” তাহলে কি হলো বিষয় টা। ”

” আমি আপনার বোন। তাহলে সমীর আপনার বোনের জামাই। ”

হেসে ফেললো শৌখিন। সমীর আর উর্মি কে নিয়ে দুটো ছবি তুলে ফোন নিয়ে চলে গেল। উর্মির গা ঘেষে বসেছে সমীর। দারুণ এক সুবাস নাকে এসে ধরা দিলো।
” সময় টা দারুণ তাই না? ”

” অনেক বেশি সুন্দর। ”

” ভালোবাসি উর্মি। অনেক বেশি ভালোবাসি তোমায়। ”

কথা টা বলেই উর্মির মুখ বরাবর হলো সমীর। উর্মি ফিসফিস করে বলল
” আমি ও যে খুব বেশি ভালোবাসি তোমায়। সব বাঁধা শেষে তোমাকে আমার নামে পাচ্ছি এটা কতো টা সুখের তুমি কি জানো? ”

উর্মি একটু বিচলিত। কাল কে সৌমেন এর সাথে দেখা করা যাবে না। চিঠি তে লিখা ছিলো আর্জেন্ট দেখা করার কথা। সেই জন্যেই উর্মি ফোন করলো কয়েক বার। অথচ ফোন বন্ধ বলে। মাহফুজ সাহেবের নাম্বারে ও কল করলো একি অবস্থা। মেয়েটি এবার চিন্তায় পরলো। তৎক্ষণাৎ কল করলো সমীরকে। শাড়ির বিষয় টা গোপন রেখে সব টা জানাতেই সমীর বলল
” হয়তো নেটওয়ার্ক প্রবলেম। পরশু আমরা দুজন এক সাথে দেখা করবো কেমন? ”

” ঠিক আছে। আর শোনো, কাল দ্রুত চলে আসবে প্লিজ। আমার না ভয় হচ্ছে খুব।”

” আসবো। ”

কল রেখে অন্ধকার ঘর টায় তাকালো সমীর। মাইশা আর কল্লোল কে ঠা*টিয়ে চ*ড় বসালো প্রবীণ। দুজন কে বহু কষ্টে ধরেছে আজ।একটু হেরফের হলেই দেশ ছেড়ে পালাতো দুজন। সমীর এর রাগ উঠেছে আকাশ চুম্বী। দুজন কে খু * ন যে করে নি সেটাই বেশি।
” কি করবো এদের? ”

” যা করার পরে করবো। আপাততো এদের কে এখানেই বন্দী করে রাখ। ”

” হারা*মীর বা*চ্চা গুলোর জন্য সৌমেন এতো বড় নাটক করতে পারলো। ভুগতে হচ্ছে সব গুলো জীবন কে। ”

” এখনো খেলা বাকি দোস্ত। আমার সাথে খেলার ফল ওকে পেতেই হবে। সব কিছুর হিসেব নেওয়া বাকি। ”
মুঠো ফোন টা শক্ত করে ধরায় অনেক টা ভেঙে এলো। হাতের তালুতে কাঁচ ভেঙে র*ক্ত ঝরছে। সেসব পাত্তা না দিয়ে ফের বলল ” কোন ঘরে রেখেছিস ওকে? ”

” কাছেই আছে। আয় এদিকে। ”

চেতনা ছিলো না সৌমেনের। সবে একটু একটু জ্ঞান ফিরেছে। দ্বার খুলাতে কিছু টা আলো ছিটকে পরলো চোখে। না চাইতে ও চোখ দুটো বুজে এলো। সমীর এর পা দুটো এগুচ্ছে এদিকে। পদচারণের শব্দ টা বেশ লাগলো সৌমেনের। কপালের ডান পাশটায় লাল তরল শুকিয়ে লেপ্টে গেছে। হাসলো সমীর। গম্ভীর হয়ে আসা মুখাশ্রী তে একটা হিং*স্রতার দেখা মিলে।
” কেমন আছো সৌমেন ভাই? ”

তীর তীর করে কাঁপছে সৌমেন এর দুই ঠোঁট। কিছু বলার চেষ্টা করে ও লাভ হলো না। মেডিসিন এর প্রভাব টা এখনো যায় নি। সমীর প্রায় রেগে গেল ” কু*ত্তা ‘র বাচ্চা আমার লাইফ টা হেল করে দিলি তুই। আমার সাথে এতো বড় খেলা খেললি। ছিনিয়ে নিলি আমার জীবন থেকে ভালোবাসা কে। ” আবার কিছু বলার ট্রাই করলো সৌমেন। সমীরের মাথা গরম। নাক বরাবর ঘু*ষি মা’রাতে সৌমেনের দেহ টা প্রায় নিস্তেজ হয়ে এলো। অদ্ভুত হাসলো সমীর। চুল গুলো টেনে ধরে বলল
” আমার ভালোবাসা কে ছিনিয়ে নিলি তুই? আমার থেকে আমার হৃদয় টা কেই আলাদা করে দিলি। শুধু তোর নোংরা পরিকল্পনার স্বীকার হয়ে কতো গুলো জীবন এলোমেলো হয়ে গেল। সব শেষ করে দিলি। এর শাস্তি তো পেতেই হবে তোকে। তোর সামনে তোর স্ত্রী কে বিয়ে করবো আমি। কতো টা কষ্ট হয় নিজ ভালোবাসা কে হারালে তুই ও বুঝবি এবার। ”

কথা বলতে না পারলে ও অস্ফুটণ স্বরে সৌমেন বলল
” সব দোষ স্বীকার করে নিবো,তবু উর্মি কে ছেড়ে দে সমীর। পা ধরে ক্ষমা চাইবো আমি। তবু এমন টা করিস না। ”

মানুষ যখন শখের কিছু হারিয়ে ফেলে তখন অদ্ভুত আচারণ করে। সমীরের ভেতরে ও পাগলামি শুরু হয়েছে। হাসতে লাগলো লাগাতার। চোখ দুটো অতিরিক্ত লাল। সৌমেন এর নাক বরাবর বসলো। ঘোলাটে চোখে সৌমেন দেখলো সমীর কে। সিগারেট ধরায় সমীর। ফোনটা বের করে উর্মির সাথে হলুদে তোলা ছবি গুলো দেখাতে থাকে। এক পর্যায়ে সৌমেন দেখতে পায় উর্মির খুব নিকটে এসেছে সমীর। দুজনের ঠোঁটের মাঝের দূরত্ব কয়েক ইঞ্চি মাত্র। রাগ সংবরণে ব্যর্থ হলো সৌমেন। ফুঁসতে লাগলো। বুকের ভেতর টা ছটফট করছে। হাত পা নাড়াচাড়া করলো গলা কাঁ’টা মুরগির মতো। হাসছে সমীর। এ দৃশ্যে ওকে আনন্দ দিচ্ছে। ঠিক একি ভাবে গত এক বছর ধরে ভুগেছে সমীর। কষ্ট পেয়েছে নিজের ভালোবাসা কে অন্য কারো সাথে দেখে। সৌমেন এর দু চোখ জ্বলন্ত। ” দূরে থাক সমীর। লজ্জা হওয়া উচিত তোর। অন্যের স্ত্রী কে স্পর্শ করার আগে বিবেক জাগা। ”

” বিবেক? তুই বলছিস বিবেকের কথা। যেদিন খেলা টা শুরু করলি সেদিন কই ছিলো তোর বিবেক? কি লাভ হলো আমার থেকে উর্মিকে ছিনিয়ে নিয়ে। ”

” প্রয়োজনে তোর পা ধরে ক্ষমা চাইবো আমি। ভুল সিদ্ধান্ত ছিল সব। কিন্তু এখন তো উর্মি আমার স্ত্রী। ”

সৌমেন এর কাছাকাছি হলো সমীর। খুব ধীরে ধীরে বলল ” তোর স্ত্রী আজ ও আমায় ভালোবাসে, নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে আমায়। ”

সত্য কথাটা।তবে সৌমেন এর বুকের ভেতর ক্ষতবিক্ষত করছে। মেনে নিতে পারছে না এসব। উর্মি যে ওকে ভালোবাসে না সেটার জন্য কোনো কষ্ট হচ্ছে না তবে সমীর কে ভালোবাসে এ কথা টা ওর মস্তিষ্কে লাগে। উঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সমীর লাগাতার সিগারেট ধরায়। ওর মেনে নিতে কষ্ট হয় উর্মি অন্য কারো স্ত্রী। অথচ এ সত্য টা আগে যখন জেনেছিল এতো কষ্ট হয় নি। সব তো ঠিক ই হয়ে গেল। উর্মি তো সেদিন জড়িয়ে ধরে খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলেছিল
” বিয়ে টা হয় নি। সব নকল ছিলো। নাটক ছিলো সব টা। ” তবে আজ কেন নাটক টাই সত্য হলো?এমন কেন হলো? এতো কষ্ট ওর সইলো না। সৌমেন এর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসলো। ধীর গতিতে আওড়ালো
” এতো যন্ত্রণা দেওয়ার থেকে আমাকে জীবন্ত কব’র দিলে ও তো পারতি। তবু শান্তি পেতাম। জানতাম পৃথিবী তে আমার ও একজন নির্দিষ্ট মানুষ আছে। যার অন্তরে শুধু আমি। যার হাজার মাইলে ও অন্য কারো বিচরণ নিষিদ্ধ। ”

সকাল থেকে দুটো বিষয় নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। একটি সৌমেন এর সাথে উর্মির বিয়ে আর দ্বিতীয় টা বিয়ের সাদা শাড়ি। বিয়ের শাড়ি এসেছে সাদা। বর পক্ষের এমন মানসিকতায় বেশ চটেছেন সবাই। একে একে প্রায় সকলেই আলোচনায় ডুবেছেন। বিয়ের শাড়ির রঙ হবে লাল নীল বেগুনি। সংসার জীবনের শুরু হবে রঙিন হয়ে। সেখানে সাদা টেনে নিয়ে যাওয়া এক প্রকার বোকামি! সকলের তিক্ততা দেখতে পায় উর্মি। ওর মুখ থেকে কোনো শব্দ এলো না। অন্তত প্রতিবাদ বা সমর্থন আসা প্রয়োজন। তবে বিয়ের কনে নিশ্চুপ! এই নিয়ে ও আরেক দফায় আলোচনা। ভগ্ন চিত্তের অবস্থা কাউ কেই দেখাতে চায় না উর্মি। হৃদয় চেড়া তাজা সব দীর্ঘশ্বাস কে লুকিয়ে রাখে সন্তপর্ণে। সকাল বেলাই সমীরের সাথে মতান্তর ঘটেছে। বিষয় টা সৌমেন কে নিয়ে। তখন থেকে উর্মির মন ভালো নেই। হৃদয় হয়েছে ব্যকুল। আচানাক সৌমেনের জন্য চিন্তা বেড়েছে। ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না কাউ কেই। সব টা যেন এক একটা মৌন যুদ্ধ। ফোন বাজলো উর্মির। সে দিকে তাকাতে ইচ্ছে হলো না। তবে ম্যাসেজের টুং শব্দ টা চিত্ত নাড়িয়ে দিলো। ফোনের ভাঙা স্ক্রিন। রাগ,ক্ষোভ অভিমান সব মিলিয়ে সকালেই ভাঙলো ফোনের গ্লাস। এ যেন আরেক দফায় বিপদের আশঙ্কা! উর্মি জানে কে ম্যাসেজ করেছে। হতাশ হয়ে ভাবে জীবন টা থেমে গেলে ও পারতো। পরক্ষণেই ভাবলো জীবন কখনো থেমে থাকে না। সব টাই চলমান, বহমান।

একটি দুসংবাদ দিলো আলিদ। মাহফুজ সাহেব আর লতিফা বেগমের এক্সি*ডেন্ট হয়েছে। সেই জন্যেই ফোন নাকি বন্ধ। কষ্ট হলো উর্মির। বিয়ের সময় না হলে এখনি চলে যেতো ছুটে। আলিদ কিছু বলতে চেয়ে ও যেন বলতে পারছে না। গুমোট হয়ে আসছে অনুভূতি। উর্মি সেটা স্পষ্ট লক্ষ্য করলো। ” কোনো সমস্যা আলিদ ভাই? ”

” না তো। ”

” আপনার মুখ টা কেমন দেখাচ্ছে। ”

” এমনি হয়তো। চলে যাচ্ছো যে। ”

” চলে যাচ্ছি তো ঠিক ই। তবে আপনি কবে তুই তুমি টা ঠিক করবেন বলেন তো। একবার তুই একবার তুমি। ”

একগাল হাসলো আলিদ। উর্মির মাথায় হাত রেখে বলল ” হয়ে যাবে কোনো এক সময়। সুখী হও বোন আমার। শখের জিনিস গুলো সুখ বয়ে আনুক তোমার জীবনে। ”

সুখ এলো না উর্মির জীবনে। সন্ধ্যা হয়ে এলো অথচ সমীর এলো না বিয়ে করতে। প্রায় সকলেই এই নিয়ে কানাঘুষা করছে। কেউ কেউ আমোদ করে বলছে
” বিয়ের জন্য শখের সাদা শাড়ি পরেছে। এমন শখ কস্মিনকালে ও শুনেছি বলে মনে পরে না। হলো তো শুভ সময়ে একটা অঘ*টন। ”

সমস্ত কথা হজম করে নিলো উর্মি। ফোন টা খুলে দেখলো সমীর কেবল স্যরি লিখেছে ম্যাসেজে। ছেলেটার নাম্বার বন্ধ বলে। সিয়াম কে ও কল করলো। উর্মি জানতে পারলো দুপুরে কোথাও একটা বের হয়েছে সমীর। অথচ এখনো বাড়ি আসে নি। এই নিয়ে সবাই চিন্তিত। উর্মির গলায় তরল কিছু নেমে এলো। সারাদিন না খাওয়া ছিলো। গড়গড় করে বমি করে বসলো। জোৎস্না এসে ধরলো। অসুস্থ লাগে ওর। ” ভাবি আমাকে একটু ঘরে নিয়ে চলো। ”

” কি হলো তোর! ”

” অসুস্থ লাগছে। ঘরে নিয়ে যাও প্লিজ। ”

স্বীয় কক্ষে এসে শুয়ে পরলো উর্মি। মাথা টা ভন ভন করছে। একে একে জড়ো হয় প্রায় সকলে। সৌজন্য বোনের মাথায় হাত বুলাচ্ছে। বাতাস করে মেঘনা। সাগরিকা কে সামলাচ্ছে আলিদ। অন্তু দরজার কাছ টায় দাঁড়ানো। অমর এদিক সেদিক কল করে যাচ্ছে। উর্মি হাতের ইশারায় অন্তু কে কাছে ডাকলো। ” কাল যে পার্সেল টা দিয়েছিস, সেটা কে দিয়েছে তোকে। নিশ্চয়ই ডেলিভারী ম্যান তোকে দেয় নি সেটা। ”

সহজ করে উত্তর করলো অন্তু ” সমীর আঙ্কেল ই তো দিয়ে পাঠালো। ”

ভ্রু কুচকে এলো উর্মির। পার্সেল নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করলো না। উর্মি উঠে গেল। বের হতে চাইলে কেউ ওকে বের হতে দিলো না। উর্মি প্রায় চিৎকার করে বলল
” আমার যাওয়া জরুরী। ”

মেয়েটির কথা কেউ শুনে নি। সারা রাত পেরিয়ে গেল বর পক্ষ এলো না। অতীথি রা চলে গেছে সব। যাওয়ার আগে বেশ নিন্দে ও করলো। উর্মির সাথে সৌমেনের বিয়ের নাটকের কথা দু একজন জানতো। সে কথা গুলো এখন সকলের মুখে মুখে। ছি ছি করছে সবাই। উর্মি যেন নিষ্প্রাণ। আলগোছে নিজের রুমে এসে বিয়ের শাড়ি খুলে ফেললো। বের হয়ে এলো সাদা মাটা এক কামিজে। চুল গুলো হাত খোপা করা। চোখ ডেবে গেছে। কিয়ৎক্ষণ বাদে মেঘনা এলো। চোখ দুটো ছলছল। উর্মি একবার ও বলল না কি হয়েছে। মেয়েটি যেন পাথর বনে গেছে। ধীর পায়ে এলো ড্রয়িং রুমে। অনেক গুলো মানুষ দাঁড়ানো। সবাই কেই চিনে উর্মি। তবে আজ সব গুলো মুখ অচেনা হয়ে এলো। সবাই কে দেখে নিয়ে উর্মি শুধু একজন কেই দেখে সে হলো সমীর। আলগোছে ছেলেটির নিকটে আসে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট চোট। দু চোখে এক রাশ আতঙ্ক।

উর্মি কেবল বলল ” কাল কেন এলে না? খুব সেজেছিলাম আমি। বউ সাজ, তবে বর এলো না। সবাই বললো আমার কপাল পোঁড়া। ”

গলা ধরে এলো উর্মির। সমীর এর চোখ দুটো ভিজে উঠেছে। পাশ থেকে শৌখিন কিছু বলতে যেতেই উর্মি বলল ” ওর সাথে আমি একটু কথা বলি? ”

সরে এলো শৌখিন। উর্মি যেন সমুদ্র সমান থমকে গেছে। সমীর এবার মুখ খুললো ” আমি ম’রে গেলাম না কেন উর্মি? কেন ম’রে গেলাম না আমি। ”

” কাল কেন আসো নি? ”

শব্দ ভান্ডারে ভীষণ সংকট। উর্মি উত্তর না পেয়ে এদিক সেদিক তাকালো। সকলের দৃষ্টি টা কেমন অচেনা। দরজা দিয়ে এবার প্রবেশ করলো সৌমেন। শরীরের বিভিন্ন স্থানে চোট। ছেলেটা যেন একে বারেই বদলে গেছে। চেহারা চেনার উপায় নেই। লায়লা ধরে নিয়ে এলো ওকে। উর্মির অবাক হওয়ার কথা। তবে উর্মি অবাক নয়। সব ধরণের পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে যেন। সৌমেন আর সমীর দুজনেই বরাবর দাঁড়ানো। উর্মি তাকালো না এক বার ও। সৌমেন ভাঙা গলায় বলল ” আমায় মাফ করো উর্মি। তোমাকে ঠকিয়েছি আমি। খুব বেশি প্রতারণা করেছি সবার সাথে। ”

” আপনি এখানে কেন এসেছেন সৌমেন স্যার? ”

” তোমায় নিয়ে যেতে এসেছি আমি। ”

সমীরের হাত টা কেঁপে উঠলো। কত সহজেই সৌমেন বলে দিলো নিয়ে যেতে এসেছি তোমায়। অথচ সমীর একটি বার ও বলতে পারলো না কথা টা। দ্বিধার এক দেয়াল তৈরি হয়েছে ওর মাঝে। উর্মির দিকে হাত বাড়ানো যেন এক মহা পাপ!
” আপনি চলে যান সৌমেন স্যার। আমি এখন কিছু শুনতে চাইছি না। ”

” ক্ষমা করো উর্মি। সবার পা ধরে ক্ষমা চাইবো আমি। তবু এমন করো না। সব কিছুর মাঝে একটা সত্য তো তুমি আমার স্ত্রী। ”

আগুনে ঘি ঢালার মতো রেগে গেল উর্মি। চেঁচিয়ে বলল ” নাটক ছিলো সেসব। সব কিছু নকল ছিলো। তাহলে এ কথা কেন বলেন? ”

” সেসব মিথ্যে নয়। ”

” বিভ্রান্ত করবেন না দয়া করে। এমনি তেই আমার মাথা ঠিক নেই। ”

” শোনো আমার কথা। ”

” দূরে সরুণ। আমাকে স্পর্শ করবেন না। ”

সরে না সৌমেন। উর্মি কে দু হাতে আকড়ে নেওয়ার প্রয়াস করে। সমীর বাঁধা দিতেই রগরগে কন্ঠে সৌমেন বলে ” সরে যাও সমীর। উর্মি আমার স্ত্রী। ”

সমীরের হাত আলগা হয়ে আসে। এক পা করে পিছিয়ে যায় ছেলেটা। অবাক নয়নে তাকায় উর্মি। সমীর যেন ওর সমস্ত শঙ্কা কে সত্য করে দিলো!

স্তব্ধ হয়ে বসে আছে উর্মি। প্রচন্ড চেঁচানোর ফলে জ্ঞান হারিয়েছিল। আপাততো ঠিক আছে। সকলেই প্রায় বিস্মিত! সৌমেন আর সমীর দু প্রান্তে দাঁড়ানো। সমীর এক পা আগাতে গিয়ে ও পারলো না। তবে সৌমেন সব কিছু কে তুচ্ছ করে উর্মির কাছে হাঁটু গেড়ে বসলো। উর্মির হাত টা বুকে চেপে ধরলো। রেসপন্স নেই ওর। বার কয়েক চুমু খেল হাতে। ” আমি আর মিথ্যে বলবো না। সবটা বলবো এখন। আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি। সেসবের ক্ষমা হয়তো হয় না। তবু বলবো ক্ষমা করতে। ” একটু থেমে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সৌমেন। ফের বলা শুরু করলো ” আমি তখন খুব ছোট। বাবার সাথে মায়ের প্রায় দিন ঝগড়া হতো। এই ঝগড়ার কেন্দ্র ছিল সমীরের মা মিষ্টি মৃধা। বাবার সাথে ওনার প্রণয় ছিলো কোনো এক সময়। তবে সফল হলো না। সেটার রেষ থেকে গেল বাবার বিয়ের পর ও। মা খুব শান্ত। প্রথম দিকে চুপ থাকলেও একটা সময় এসে মা রেগে গেলেন। ছোট ছিলাম বুঝতাম না তেমন। তবে ধীরে ধীরে বুঝতে শিখলাম। মা লুকিয়ে কাঁদতেন। খুব বেশি পাগলামি করতেন। কত বার সুইসা’ ইড করার ট্রাই করেছেন হিসেব নেই। আমি আমার মা কে সব থেকে বেশি ভালোবাসি। মা ও আমায় খুব ভালোবাসে। তবে এতো সবের মাঝে আমাদের মা ছেলের সম্পর্ক টা সুন্দর ভাবে প্রকাশ পায় নি। আমি ছোট থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম শেষ করে দিবো মিষ্টি মৃধার জীবন। যেই মহিলার জন্য আমার মা কষ্ট পেলেন তাকে সুখী থাকতে দেই কি করে? এর ই মাঝে আমি জানতে পারি মিষ্টি মৃধার স্বামী তথা সওলাত খান স্বীয় স্ত্রী কে নিয়ে সন্তুষ্ট নন। একটা দূরত্ব আছে ওনাদের। সেটাকেই কাজে লাগাই আমি। তখন আমার বয়স খুব বেশি না। তবে দুরন্ত ছিলাম খুব। তিথি নামক একজনের সাথে সওলাত খানের বন্ধুত্ব ভালো। এটা জানতে পারি আমি। তারপর ই ঠিক করি তিথির সাথে দেখা করবো। এতিম সন্তান তিনি। আমার থেকে বছর পাঁচেকের বড় হবে। ওনার সাথে আমি ডিল করি। আর সেটা হচ্ছে সওলাত খানের সন্তানের মা হতে হবে। এমনি তেই ওনাদের মাঝে বেড শেয়ার ছিল। তবে আমি চেয়েছিলাম যে নতুন একজন আসুক। যাতে সওলাত খান বাধ্য হোন তিথি কে নিতে। অনেক টাকা অফার করে তিথি কে রাজি করাই। প্রথমে তিথি ভয়ে ছিলেন। যদি সওলাত খান অস্বীকার করলেন বা মেনে না নিলেন। তবু নিজের এক ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে কাজ টা করেন তিথি। হয় ও তেমন। সব ঠিক ই ছিল।বাবা মায়ের সম্পর্ক টাও যাচ্ছে ভালো। অতো দিনে সওলাত খান আর মিষ্টি মৃধা আলাদা হয়ে গেছেন। তবে সেটা তে ও থামলো না ঘটনা। একদিন বাবার সাথে মিষ্টি মৃধার দেখা হলো। দুজন কে এক সাথে দেখে ফেলেন মা। হয় আবার কলহ। সব থেকে খারাপ লেগেছিল বাবা সেদিন মা কে মে*রেছিল। আগে শুধু ঝগড়া হতো তবে সেদিন হাত তুলেছিল মায়ের শরীরে। আমি তখন বড়। তবু সহ্য হয় নি আমার। হয়তো তিনি আমার বাবা না হলে আমি…. ” থেমে গেল সৌমেন। কথা টা বলতে ওর কষ্ট হলো। ঢোক গিলে ফের বলতে লাগলো ” সবটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। এতো বেশি ডিপ্রেশন যাচ্ছিলো যে মাঝে মাঝে নেশা ও করেছি। অথচ আমি এটা কে ঘৃনা করতাম। দূর্বিসহ হয়ে এলো আমার জীবন। তবু চুপ ছিলাম। একদিন হঠাৎ করেই সমীর এলো। আমি তখন নতুন জয়েন করেছি বাবার বিজনেসে। ফ্যাশেন ডিজাইন এ পড়াশোনা। আমার হাতের কাজ ও খুব ভালো ছিল। চাইতাম যে আমাদের কাজ গুলো আমি করবো। তবে বাবা বিরোধ করলেন। সমীর এর কাজ কে বেশি গুরুত্ব দিলেন। আমার সামনে ওর পিঠ চাপরে বলতেন অনেক নাম হবে। চাপা হিং*সে কাজ করতো। সমীর কে সহ্য না করতে পারলে ও সহ্য করতে হতো। ও পরিশ্রমী ছিলো। বহু বার ওর কাজ নষ্ট করেছি তবু ঠিক ঠাক করে ফেলতো সব টা। একটা সময় আমি ছেড়ে দেই ডিজাইন করা। বিজনেস এ মনোযোগ দেই। সফল ও হই। চলে দিন, তবু কোথাও একটা রাগ ক্ষোভ হতো। বার বার মায়ের মুখ টা ভাসতো। বাবা সেদিন মা কে অন্য এক মহিলার জন্য মে*রেছে এটা আমি কিছু তে মানতে পারছিলাম না। আবার ভুগতে থাকি চাপা এক হীনমন্যতায়। সে সুযোগ নিয়ে মাইশা আর কল্লোল আসে আমাদের অপোজিট টিমের সাথে হাত মিলিয়ে। আমার ক্ষতি করাই ছিলো এক মাত্র লক্ষ্য। তবে ধরা পরে যায় একদিন। সেদিন ই আমি প্ল্যান করি সমীর কে ফাঁসাবো মেয়েলি কেইসে। ততো দিনে উর্মি জয়েন করেছে। আর সমীর যথেষ্ট চরিত্রবান। এতো বার মাইশা কে দিয়ে আকর্ষিত করার ট্রাই করেছি তবে হয় নি লাভ। একদিন লক্ষ্য করলাম উর্মির সাথে সমীরের সম্পর্ক ভালো। খোঁজ খবর নিতাম তখন। খুব বেশি খবর পাই নি। কারণ উর্মি নিজেও ছিল পরিশ্রমী। ভালো মেয়ে। দিনের পর দিন আমি হতাশায় ভুগি। একটা সময় এসে লস হতে লাগলো বিজনেসে। বাবা সেদিন আমায় কথা শোনালো। সমীরের উদাহরণ টেনে নিলেন। এতো রাগ হলো সেদিন যে, আমি তিন দিন বের হলাম না ঘর থেকে। তবে সেই তিন দিনে আমার মাথায় প্ল্যান আসে। উর্মি আর সমীরের বন্ধুত্বে কোথাও একটা ভালোবাসা দেখেছি আমি। সেটাকেই বেইজ করে সাজাই গল্প। মাইশা আর কল্লোল কে দিয়ে সব আমিই করাই। আর অন্য দিকে উর্মি আর সমীরের প্রণয় গভীর হয়। চুপ ছিলাম আমি। ভালোবাসা যতো বাড়বে আলাদা করে ততোই না মজা। “এক দমে বলে থামলো সৌমেন।উর্মির দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটি নড়ছে না। হাল্কা করে ধাক্কা দিলো সৌমেন। ফের বলল ” আমি সত্যিই তোমায় ভালোবাসি উর্মি। ”
একটা রা নেই কারো মুখের। আলিদের সাথে চোখের পলক বিনিময় হতেই সৌমেন অসহায় চোখে তাকালো। তবে আলিদ ছাড়লো না এক বিন্দু। সৌমেন তাই বলতে লাগলো ” সাগরিকার মাথায় কিছু সমস্যা ছিলো। সেটা জানতেই আমি আরো প্ল্যান করি। দ্বিগুন টাকা দিয়ে আয়োজন করাই ফ্যাশেন কনটেস্ট। এমন কি সওলাত খান কে বিচারক করাই। আমার ভয় ছিল যে প্ল্যান হয়তো কাজে দিবে না। তবে অদ্ভুত ভাবে কাজ করলো সেটা। এটা ছিলো ম্যাজিকের মতো। সমীরের সাথে একটা সু সম্পর্ক গড়ে উঠে সওলাত খানের। কিছু প্রপার্টিজ ওদের নামে করবে বলে স্থির হোন। আর সেই সময় টাই ছিল আমার জন্য মোক্ষম সময়। অনেক কসরত করে সমীরের ফোন চুরি করাই। আর নানান প্রতিবন্ধকতা তৈরি করি যাতে একদম ই যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। সব টাই চলে ঠিক ঠাক। এদিকে সাগরিকার মাথায় থাকা ছোট সমস্যা আর তুলির সাথে ডিভোর্স হওয়া টা নিয়ে কাজ চলতে থাকে। মিথ্যে অভিনয় করাই সাগরিকার অসুস্থতা নিয়ে। আর তুলি কে টাকা দেই সৌজন্য কে ডিভোর্সের টাকা শোধ করার চাপ দিতে। জানতাম ওরা পারবে না অতো টাকা পরিশোধ করতে। আর সৌজন্য কে যেতে হবে জেলে। সাগরিকার অসুস্থতা আর সৌজন্যের জেল সব টা উর্মির মাথা নষ্ট করে দেয়। এদিকে আমি অভিনয় করছি মানসিক ভাবে অসুস্থতার। বাবা কে ইঙ্গিত দিয়ে ফোর্স করি। বাবা বুঝতে ও পারেন নি আমার নাটক। উর্মির সাথে ডিল হয় তবে সেটা কেবল ই একটা নাটক। এসব জানতে পেরে আমি আরও রেগে যাই। কারণ সমীর কে কষ্ট দিতেই হবে। তখনি কায়দা করে সব পেপার আসল করে দেই। আর বাকি টা তো….আমি মানছি যে আমি প্রতারণা করেছি। তবে এর মাঝে ও সত্য টা কি জানো আমি তোমায় অতিরিক্ত ভালোবেসে ফেলেছি। আমায় মা&রো কাঁ*টো যা ইচ্ছে করো উর্মি তবু ফিরে আসো। সব শেষে বিয়েটা অস্বীকার করতে পারো না তুমি। ”

ঘর টা পুরো শুনশান। এতো গুলো মানুষ থেকে ও নেই। উর্মি প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সমীর এর নিকট তাকালো। ওর মৌনতা ভেঙে দিচ্ছে হ‍ৃদয়। সৌমেনের থেকে ঝটকা মেরে সরিয়ে নিলো হাত। সমীরের কাছে এসে বলল
” কাল কেন আসো নি তুমি? ”

সবাই অবাক! এতো বড় সত্য জানার পর ও উর্মি এমন কথা বলবে ভাবতে পারে নি। সমীর চুপ থাকাতেই উর্মি প্রায় রেগে উঠলো। ” কথা বলছো না কেন? ”

দু ফোঁটা অশ্রু মুছে সমীর বলল ” কিছু দিন আগে ও আমি জানতাম তোমার বিয়ে টা নাটক। সব আমার ভালোই যাচ্ছিলো। তবে হলুদের দিন একটা পার্সেল এলো। যেটাতে ছিল বিয়ের কিছু প্রমান আর সৌমেনের দেখা করার জন্য চিঠি। সাথে ছিলো সেইম ডিজাইনের শাড়ি। আমি অবাক হলাম খুব। আগ্রহ জাগলো আর ও বেশি। চিঠি তে লিখা ছিলো বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছে সৌমেন। আমি সেটা কেই কাজে লাগাই। চিঠির প্রথম অংশ ছিঁড়ে ফেলি। আর সৌমেন কে লোক দিয়ে নিয়ে যাই।সৌমেন যে নাটক করছে আমি জানতাম।তবে প্রমাণ ছাড়া আগাতে ও পারছিলাম না। ”

বিরক্ত হলো উর্মি। ভ্রু কুচকে বলল ” কাল কেন আসো নি? ”

” সময় খারাপ যাচ্ছিলো। আমি বুঝে গিয়েছিলাম তুমি অন্য কারো নামে দলিল। যে কষ্ট টা আমি পাচ্ছিলাম সে কষ্ট টা সৌমেন কে দিতে চেয়েছি আমি। প্রিয় মানুষ হারানোর যন্ত্রণা। তাই এই বিয়ের নাটক টা করি। ”

চমকালো উর্মি। অকোপটে সমীর বলে ফেললো এই বিয়ের আয়োজন টা নাটক। সমীর আবার বলল ” তবে সমস্যা করলো লায়লা। কে জানতো এতো দিন পর ভাই বোনের ভালোবাসা উতলে পরবে। লায়লা হলো আমার ভার্সিটি ফ্রেন্ড। তাছাড়া আমাকে সাহায্য করার জন্য এসেছিল। সৌমেনের থেকে ছাড়া পেয়ে দুদিন গা ঢাকা দিলো। আর সৌমেন কে যেই না আমি আটকে দিলাম ওমনি করে আসলো আমার কাছে। বললো যে সৌমেন কে নিজে আ*ঘাত করতে চায়। আমি ও সহজ ভাবে ছেড়ে দেই লায়লার কাছে। তবে কাল দুপুরে জানতে পারি সৌমেন কে নিয়ে পালিয়েছে লায়লা। আর তখনি ছুটে যাই। অনেক ঝামেলা হয় আমাদের মাঝে। অবেশেষে হাল ছেড়ে দেই। ”

সমীরের কথা তে কোথাও একটা কার্য হাশিল অনুভব করে উর্মি। সব সত্য মিথ্যের মাঝে ও উর্মির ভরসা ছিলো সমীর। ও ভেবেছিল ছেলেটা বলবে যা হবার তা হয়েছে এখন আমরা নতুন করে শুরু করবো আমাদের জীবন। কিন্তু হলো কই সেসব?

উর্মি প্রায় চুপ হয়ে নিজে ঘরে চলে গেল। সৌমেন পিছু নিতে গেলে বাঁধা দেয় সমীর। ” অন্তত এবার নিজ কর্মের জন্য অনুতপ্ত হ। ”

” পথ ছাড় সমীর। আমি আমার স্ত্রীর কাছে যাচ্ছি। ”

রেগে গেল সমীর। কিছু বলার পূর্বেই মিষ্টি মৃধা এসে সৌমেন এর গালে চ*ড় বসিয়ে দিলেন। এতো সময় চুপ ছিলেন তিনি। তবে এবার আর পারলেন না। নম্র স্বভাবের মানুষ টা যেন আজ কোনো জ্বলন্ত লাভা! মেঝে তে থু থু ফেললেন।
” তুই যে তোর মায়ের ই সন্তান তা প্রমান হয়ে গেল। ”

” আন্টি আমি ক্ষমা চাইছি। ”

” চুপ কর। তোর মায়ের ভুল গুলো আমাদের সবার জীবন তছনছ করে দিয়েছে। ”

সওলাত খান স্ত্রী কে সামলাতে এলেই তিনি বললেন
” স্পর্শ করবেন না আপনি। নোংরা মানুষ। পরনারী তে আসক্ত পুরুষ আমি ঘৃনা করি। ”

” মিষ্টি…! ”

” কখনো আপনি আমাকে বুঝেন নি। স্বামী হিসেবে কলঙ্ক! ”

কান্না করে উঠলেন মিষ্টি। লতিফা বেগম আর মাহফুজ সাহেব ও উপস্থিত। মিষ্টি মৃধা প্রায় চেঁচিয়ে বললেন
” আজ তোমার জন্য আমরা সবাই ভুক্তভোগী লতিফা। তোমার ভুল ধারণা আর সন্দেহ কত দূর পৌছে গেছে, দেখো। ”

ভয়ে শিটিয়ে গেলেন লতিফা। মাহফুজ সাহেব নির্বাক। মিষ্টি ক্রন্দনরত ভাবেই বললেন ” মাহফুজ ভাই আমার সিনিয়র ছিলেন। সমীহ করতেন আমাকে। ছোট বোন হিসেবে দেখতেন। সে সম্পর্ক টা কে নোংরা ভাবে দেখেছে তোমার মা। ভুল ভাঙিয়ে দিয়েছিলাম আমরা। তবু সন্দেহ যায় নি। সেদিন খুব বাজে কথা বলেছেন তোমার মা। যা এই ভরা সভায় উচ্চারণ তো দূরে থাক ভাবতে ও লজ্জা হয়। সেই সব ভুলের সুতো ধরে আজ তুমি সবাই কে ধ্বংস করে দিলে। ”

কাঁদতে কাঁদতে বসে পরলেন মিষ্টি। সমীর দু হাতে মা কে জড়িয়ে ধরলো। ঠিক তখনি নিজ ঘর থেকে বের হলো উর্মি। হাতে লাগেজ। সমীর কাছে আসার চেষ্টা করতেই উর্মি বাঁধা দিলো। ” তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছো আমি অন্য কারো স্ত্রী। ”

ধাক্কা টা খেল সমীর। তবে সৌমেনের অধরে এক চিলতে হাসি ফুটলো। সে প্রায় ছিটক‍ে এসে উর্মির লাগেজ ধরলো। খুব স্বাভাবিক ভাবে উর্মি বলল
” ধন্যবাদ। তবে আমি একাই নিতে পারবো। ”

” স্যরি উর্মি। আমায় দাও না, তুমি কেন…। ”

তাকালো উর্মি। গভীর ওর দৃষ্টি। তবে প্রাণ নেই সেখানে। চিত্ত কেঁপে উঠলো ছেলেটার। উর্মি বলল ” এক বছর তো হয়েই এলো তাই না? সামনের মাসেই আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। আশা করি সেদিন ই ডিভোর্স লেটার টা পাঠিয়ে দিতে পারবো।”

প্রতিটা মানুষ স্তব্ধ। উর্মি কারো দিকে তাকালো না এমন কি কেউ সাহস করলো না ওকে বাঁধা দিতে। উর্মি দ্বারে পৌছে মনে করলো বাবা কে দেওয়া প্রতিশ্রুতি।কোনো এক বিকেলে বাবার হাত টা ধরে বলেছিল তোমার সংসার কখনো ভা*ঙতে দিবো না বাবা। সবার শখের জিনিস এনে দিবো যে কোনো মূল্যে। উর্মি রেখেছে সে কথা। তবে পারে নি নিজের শখ টা কে নিজের করার। সবাই যখন নিশ্চুপ ঠিক তখনি অন্তু এলো। হাতে দুটো সাদা শাড়ি। সকলে চেয়ে দেখলো উর্মির শখের সাদা শাড়ি দুটো পুড়ে ছাড়খাড়। একটা তাঁর স্বামীর দেওয়া আর অন্য টা জীবনের প্রথম ভালোবাসার!

পরিশিষ্ট : উর্মি নিজ জীবন দিয়ে অনুভব করেছে শখের জিনিস বড্ড দামী। তাই সে সবার শখের জিনিস এনে দিতে পারলে ও পারে নি আগলে রাখতে নিজের শখের সাদা শাড়ি। অথচ ওর কপাল ছিলো সাড়ে ষোলো আনা। একটা নয় একে বারে দু দুটো শখের সাদা শাড়ি এসেছিল ওর জীবনে। দুটোই জীবনের মারাত্মক ভুল আর অত্যন্ত দামী! যা ওকে পাগল করে তুলেছে। তিন খানা পথ তৈরি করেছে।কোন পথে যাবে উর্মি? কিই বা হবে উচিত? সৌমেন কে ডিভোর্স দিয়ে সমীরের সাথে জীবনের বাকি পথ চলা নাকি সমীর কে ভুলে গিয়ে সৌমেন কে ক্ষমা করা। কিংবা দুটোর বিকল্প কিছু বেছে নেওয়া।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here