শত_তারার_দেশে?
Last_Part
#Nusrat_Jahan_Abida
.
.
বড়মা আমাকে পছন্দ করেন বলেই বিয়ের প্রস্তাবটা দিচ্ছেন, কিন্তু ধ্রুব ভাইয়া! তিনি তো অন্য কাউকে পছন্দ করেন, হয়তো ভালোও বাসেন। হ্যাঁ, ভালোবাসেন তিনি, কিন্তু অন্যকাউকে। হয়তো অনেক বেশিই ভালোবাসেন। একদিন তার রুমে গিয়ে দেখি তিনি নেই। টেবিলেই তার ডায়রী রাখা। আজ পর্যন্ত কখনোই তার রুমে যেতে কিংবা তার কোন জিনিস ধরতে আমাকে অনুমতি নিতে হয় নি। তাই সাহস দেখিয়ে ডায়রীর কাছে গেলাম। যতই হোক, কারো ডায়রী পড়ার মজাই আলাদা। প্রথম পৃষ্টা খুলতে বুঝতে পারি সেটা তার ভালোবাসার মানুষটির জন্য লেখা। কিন্তু পরের পৃষ্ঠা দেখার আগেই তিনি ডায়রীটা ছিনিয়ে নেন। তারপর থেকে আর ডায়রীটা চোখে পরে নি। আমি হয়তো জানি না তার ভালোবাসার মানুষটি কে? কিন্তু এটা তো জানি তিনি কাউকে ভালোবাসেন। তাহলে কিভাবে তার উপর নিজের ভালবাসা চাপিয়ে দিতে পারি? হ্যাঁ, ভালোবাসি তাকে। কিন্তু কখনো বুঝতে দিই নি। কেনই বা বুঝতে দিব? যখন জানি যে সেই মানুষটি কখনোই আমার হবে না। কথাটা ভাবতেই অনুভব করলাম চোখের কোণায় জল চলে এসেছে। দ্রুতই চোখ মুছে মুখে হাসি ফুটিয়ে নিলাম। এটা আমার জন্য নতুন কিছু নয়, প্রতিনিয়তই আমাকে মিথ্যা হাসির আশ্রয় নিতে হয়। হাসিমুখে তাদের কাছে যেতেই বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
– তোর কথাই বলছিলাম এতক্ষণ!
.
.
নিজেকে সামলিয়ে বললাম,
– তাই বুঝি? নিশ্চয়ই কোন বদনাম করছিলেন আমার নামে!
.
.
বড়মা হেসে বললেন,
– তোর নামে কি বদনাম করা যায়? আমি তো ভাবছিলাম তোকে নিজের ঘরের বউ করে তুলবো।
.
.
কথাটা বলতেই মনে হচ্ছে বুকে ধক করে উঠলো। নিজেকে সামলে নিয়ে হাসিমুখে বললাম,
– কি যে বলেন! ধ্রুব ভাইয়ার জন্য বেস্ট কেউই আসবে, একদম বেস্ট!
.
.
বড়মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
– তোর চেয়ে বেস্ট ওর জন্য কেউ হবে না! তুই-ই ধ্রুবর জন্য পার্ফেক্ট!
.
.
চোখের জল লুকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি চাই না তারা কেউ আমার চোখের জল দেখুক। শেষে না পেরে বললাম,
– ধ্রুব ভাইয়ার চোখে হয়তো অন্য কেউ বেস্ট। বলা তো যায় না।
.
.
বড়মা হয়তো কিছু বুঝতে পেরেছে তাই বললেন,
– ধ্রুব কি তোকে কিছু বলেছে?
.
.
আমি আমার মিথ্যে হাসিটা বজায় রেখে বললাম,
– তিনি কি বলবেন! তবে আমার মনে হয় আমার চেয়ে ভালো কেউ আছে তার জন্য, আর তার সাথেই হয়তো তিনি বেশি খুশি হবেন।
.
.
বড়মা একটু চিন্তার ভাব নিয়ে বলল,
– কিন্তু ঐ নিজেই তো বলল…
.
.
বড়মা আর কিছু বলার আগেই রোজা টেনে আমাকে নিয়ে গেলো। ওর সাথে নাকি আমি ছবি তুলি নি। কিভাবে যে এতো বড় অপরাধটা করলাম তাই ভেবে পাচ্ছি না। শেষে অপরাধের মশুল দিতে কমপক্ষে পঞ্চাশটা ছবি তুলতে হলো ওর সাথে।
.
.
.
.
.
মাত্রই বাসায় ফিরেছি। বাসায় বলতে নিজেদের বাসায়। অন্য জায়গায় যতই ভালো হোক না কেন, নিজের বাসার মতো শান্তি কোথাও নেই। ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম ছাদে। ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাসে তাজা তাজা হাওয়া খাবো এটাই চিন্তা ভাবনা। কিন্তু ছাদে যেতেই দেখলাম ধ্রুব ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। তার সামনে এখন গেলে নিজেকে সামলানো কঠিন হবে, তাই নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। কিন্তু যাওয়ার আগেই পিছন থেকে বলল,
– কোথায় যাচ্ছিস?
.
.
নিজের উপর জিদ আসছে। শব্দ না করে কি কিছু করতে পারি না নাকি! পিছনে ঘুরে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললাম,
– কোথায় যাবো আবার!
.
.
ধ্রুব ভাইয়া একনজর আমাকে দেখে বলল,
– মমকে তুই কি বলেছিস রে!
.
.
বড়মাকে আমি কি বললাম! ওহ, বিয়ে নিয়ে লাস্ট কথা হয়েছিল। হয়তো মানা করায় খুব বেশি কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু আমিই বা কি করতে পারি। নিজেকে সমালে বললাম,
– আমাদের বিয়ের কথা বলছিলেন, আমি মানা করে দিয়েছি।
.
.
ধ্রুব ভাইয়া ভ্রুযুগল কুঁচকে প্রশ্ন করলেন,
– কেন?
.
.
আমি কোন উত্তর দিচ্ছি না দেখে তিনি বললেন,
– প্রেম টেম করিস নাকি যে বিয়ে করতে চাইছিস না?
.
.
এখন মেজাজ বেশ খারাপ হচ্ছে। একে তো নিজে প্রেম করে বেড়ায়, আর এসেছে আমাকে জিজ্ঞেস করতে! খানিকটা রেগে বললাম,
– হ্যাঁ, করি তো! সমস্যা? আপনি করতে পারলে, আমিও করতে পারি!
.
.
ধ্রুব ভাইয়া তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– আমি প্রেম করি!
.
.
অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,
– তা নয়তো কি!
.
.
কথাটা বলেই একটা ভেংচি কাটলাম। উনি হয়তো এখন আমাকে ঝেড়ে দিবেন তাই দ্রুত নিচের দিকে পা বাড়ালাম।
.
.
.
.
.
সকালে উঠতে দেখলাম টেবিল ল্যাম্পের পাশে একটা চিরকুট রাখা। ঘুমু ঘুমু চোখে চিরকুটটা হাতে নিলাম। কে লিখেছে তা জানা নেই। আলতো হাতে চিরকুটটা খুলে পড়া শুরু করলাম।
.
.
“স্নিগ্ধ সকালের শুভেচ্ছা! আশা করি, আজকের সকালটার মতো তোর জীবনও স্নিগ্ধময় হোক। ভালবাসায় ঘেরা থাকুক প্রতিটি প্রহর। আচ্ছা, আমি কি আসলেই এতো খারাপ যে আমাকে বিয়ে করা যায় না। আমার তো মনে হয় না! আমার মনে হয়, তোর কপাল খারাপ যে আমার মতো ভালো কাউকে জামাইরূপে নিতে পারছিস না। তবে চিন্তার কারণ নেই। তোর দায়িত্ব যখন আমি নিয়েছি তখন তোর ভুলগুলো ঠিক শুধরে নিবো। ভাগ্য হয়তো শুধরাতে পারবো না, তবে ভাগ্য খারাপ হলে একসাথে মিলে খারাপটাকে উপভোগ করবো। খারাপ উপভোগ করা যায় শুনে অবাক হলি! তবে আসলেই কিন্তু খারাপটা উপভোগ করা যায়। ভালবাসার মানুষটি পাশে থাকলে হাতে হাত রেখে প্রতিটি মুহূর্তই উপভোগ করা যায়। আর খারাপ মুহূর্ত উপভোগ করা না গেলেও সহজেই সেই মুহূর্ত থেকে বের হওয়া যায়। তার জন্য শুধু ভালবাসা প্রয়োজন। কিন্তু তোর মতো নির্দয় মানুষের মনে ভালবাসা নেই বলে কিছুই উপভোগ করতে পারিস না। ব্যাপার না! আমি শিখিয়ে দিব যদি রাজি থাকিস। তো বল, রাজি আছিস? রাজি আছিস, আমার সাথে মিলে ভালবাসার সাগরে ডুব দিতে? রাজি আছিস, আমার কাধে মাথা রেখে তারা ভরা আকাশ দেখতে? রাজি আছিস, আমার সাথে #শত_তারার_দেশে যেতে?”
.
.
এমনই কিছু কথা তিনি ডায়রীতে লেখেছিলেন। তাহলে কি সেই মানুষটা আমি? চিরকুটটা বুকে নিয়ে হেলান দিলাম। আজ আমি অনেক খুশি। কিন্তু ভালবাসার কথা কি কেউ এভাবে ধমক দিয়ে বলে নাকি! এটা মোটেও ভালো বিষয় না। তবে ধমক দিয়ে বলুক আর যেভাবেই বলুক, আমি রাজি। রাজি তার সাথে মিলে ভালবাসার সাগরে ডুব দিতে। রাজি তার কাধে মাথা রেখে তারা ভরা আকাশ দেখতে। রাজি তার সাথে #শত_তারার_দেশে যেতে। কথাটা ভেবেই মুখে হাসি ফুটলো। সে হাসিতে লুকিয়ে আছে ভালবাসা প্রাপ্তির আনন্দ।
.
.
—————————————-The End—————————————-