শত_তারার_দেশে? Part-1

0
1566

এক গাদা গাদাফুল ঝুড়িতে করে নিয়ে যেতে গিয়ে শাড়িতে পা পিছলে পড়লাম। বিয়ের বাড়িতে পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাটা অস্বাভাবিক হলেও আমার জন্য মোটেও তা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কেননা, অন্য সবাই সমস্যায় পড়লেও সমস্যা পড়ে আমার উপর। কিন্তু সমস্যাটা আরো বহু গুণ বেড়ে গেলো যখন বুঝলাম যার উপর পড়েছি সে আর কারো উপর নয়, বরং ধ্রুব ভাইয়া। তাড়াহুড়ো করে উঠে দাঁড়ালাম। নিশ্চয়ই এখন একগাদা লেকচার হজম করতে হবে। তার চেয়ে বরং ভালোই ভালোই কেটে পড়ি। কথাটা ভেবে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই শব্দ আসলো,
– তোর তো দেখছি মানবতার সাথে সাথে ভদ্রতাও ক্রমশ লোপ পাচ্ছে।
.
.
উনার কথায় শুনলে যে রাগ লাগবেই তা আমার ভালো করে জানা। তবে ভদ্রতার খাতিরে এতকাল যাবৎ চুপ করেছিলাম, কিন্তু এখন সেই আমাকেই বলছে আমার নাকি ভদ্রতা লোপ পাচ্ছে। মন তো চাচ্ছে সোজা আমাজন জঙ্গলে পাঠিয়ে দিই। লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলাম। তারপর জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললাম,
– আপনাকে আমার ভদ্রতা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, তার জন্য আমার শ্রদ্ধেয় পিতা মাতা আছেন।
.
.
কথাটা বলে বিশেষ কোন উপকার হয়েছে বলে মনে হলো না। কেননা, তিনি নিশ্চয়ই আমার কথাটা একটা কান দিয়ে নিয়ে অন্য কান দিয়ে ফেলে দিয়েছেন। আমি মনে মনে কথাগুলো ভাবছে এমন সময় ধ্রুব ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
– তুই জানিস না তোর মা-বাবা তোর দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন?
.
.
আমার দায়িত্ব আমার মা-বাবা ধ্রুবর উপর দিয়েছেন? এই অমহান কাজটা তারা কবে করলেন? ধ্রুব ভাইয়ার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
– তারা মোটেও আপনার মতো মানুষের কাছে তাদের কন্যা দান করবেন না!
.
.
কথাটা বলেই একটা ভেংচি কাটলাম। উনার যে আমার কথা পছন্দ হয় নি তা তার চেহেরা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু তাতে আমার কি! উনি কখনো কিছু বলার আগে চিন্তা করেছেন নাকি যে আমি তার কথা চিন্তা করবো! এখন তিনি নিশ্চয়ই আমাকে ঝেড়ে দিবেন তাই আর না ভেবে সেখান থেকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।
.
.
.
.
.
আমি সন্ধ্যা রহমান। আজ আমার খালাতো বোনের হলুদের অনুষ্ঠান। সবাই শাড়ি পড়েছে তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই আমাকে শাড়িটা পরতে হয়েছে। আর শাড়ি পরার পরিণাম তো সবাই দেখলেনই! একটা কর্ণারে দাঁড়িয়ে নিজের শাড়িটা হালকা ঠিক করে নিলাম। শাড়িটা ঠিক করে আম্মুর কাছে যেতেই তিনি বললেন,
– কি কাজ বাড়িয়েছিস রে?
.
.
আমি আবার কি করলাম! ধ্রুব ভাইয়ার উপর পড়ে যেতে দেখলো নাতো! মনে মনে হাজারো হাবিজাবি ভেবে নিয়ে বললাম,
– আমি আবার কি করলাম?
.
.
আম্মু একনজর আমার দিকে তাকালো। তারপর বলল,
– সারাদিন তো এদিক থেকে ওদিকে ঘুরতে থাকিস, ডাকলেও আসিস না। এখন হঠাৎ এসেছিস তাই মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই কোন অঘটন ঘটিয়ে ভালোমানুষি সাজা হচ্ছে।
.
.
এমন ভাবে বলছে যেন আমার চেয়ে খারাপ মেয়ে দুনিয়াতে নেই। রেগে বললাম,
– হ্যাঁ, সব কাজ তো আমিই বাড়িয়ে বেড়াই, তাই না? ভেবেছিলাম, এতো ভালো পরিবেশে দু চারটা ছবি তুলবো। কিন্তু পুরো মুডটাই নষ্ট করে দিলেন। থাকবোই না এখানে। আর আসবোই না আপনার কাছে।
.
.
কথাটা বলেই রেগে চলে আসলাম। কিন্তু আমি জানি, ঘুরে ফিরে আমাকে তার কাছেই যেতে হবে। কথাটা ভেবেই মুচকি হেসে ছাদের এক কর্ণারে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
.
.
.
.
.
– এভাবে ছাদে দাঁড়িয়ে কোনো ছেলের সাথে টাংকি মারছিস নাকি!
.
.
কথাটা কানে আসতেই ফিরে তাকালাম। ধ্রুব ভাইয়া দরজার সামনের দেয়ালে ঠেস দিয়ে বুকে দুহাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ফিরে তাকাতেই উনি একনজর আমাকে দেখে এগিয়ে এসে আমার পাশে দাঁড়ালো। তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,
– দেখি তো! কোন ছেলের উপর টাংকি মারছিস!
.
.
এভাবেই উনার জন্য আমার মন মেজাজ ভালো নেই, তার উপর এমন কথা মেজাজের বারোটা থেকে তেরোটা বাজাচ্ছে। তবে এখন ঝগড়া করারও কোন মুড আমার নেই। তাই আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলাম। দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ পড়লো অন্য একটা ছাদে একটা ছেলে ব্যাডমিন্টন খেলছে। হালকা হেসে বললাম,
– দেখুন তো, ছেলেটা কি সুন্দর ব্যাডমিন্টন খেলছে!
.
.
ধ্রুব ভাইয়া আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে ছেলেটার দিকে তাকালেন। সাদা টি-শার্ট পড়ে সোডিয়ামের আলোতে ছেলেটা বেশ খেলছে। ব্যাডমিন্টন খেলতে না পারলেও খেলাটা আমার দারুণ লাগে। তাই রেলিংয়ের উপর হাত ছড়িয়ে খেলা দেখতে লাগলাম।
.
.
কিছুক্ষণ দেখার পর ধ্রুব ভাইয়ার দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলাম তিনি বেশ রেগে আছে। কিন্তু এখানে রাগার কি হলো! তার কি মেয়েদের মতো জেলাসি টাইপ রোগ আছে নাকি! মেয়েদের সামনে নাকি অন্য মেয়ের প্রশংসা করতে নেই, তাহলে কি তারও অন্য ছেলের প্রশংসা তার হজম হচ্ছে না। পরীক্ষা করে দেখতে হয়! ধ্রুব ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– ছেলেটা আসলেই বেশ খেলে। দেখলে মন চায় খালি দেখতেই থাকি!
.
.
আমার কথা ধ্রুব ভাইয়া চুপ করে শুনলো। তারপর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
– এটা কোন খেলা হলো নাকি! এর চেয়ে ভালো তো আমিই খেলতে পারি।
.
.
তাহলে আমার ধারণাটাই ঠিক ছিল। উনি ছেলেটার প্রশংসা হজম করতে পারছেন না। হাসি চেপে জিজ্ঞেস করলাম,
– তাই নাকি?
.
.
ধ্রুব ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– সন্দেহ আছে?
.
.
আমি একনজর ছেলেটার দিকে তাকালাম। তারপর বললাম,
– ভালো খেলতে পারেন তা বুঝলাম। কিন্তু এমন স্টাইল, এমন স্পিড হবে নাকি তাতে একটু সন্দেহ আছে।
.
.
কথাটা বলেই মুচকি মুচকি হাসতে লাগলাম। এতদিন আমাকে অনেক অপমান করেছে, এখন বুঝুক কাউকে ছোট করলে তার কেমন লাগে! ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছি এমন সময় ধ্রুব ভাইয়া বলল,
– খেলার কোর্ট রেডি কর! আজ রাতেই এই ছেলের সাথে আমার ম্যাচ হবে!
.
.
কথাটা কানে আসতেই চোখ দুটো বড় হয়ে গেল। মুখ অজান্তেই বেড়িয়ে আসলো,
– হোয়াট?
.
.
আজ হলুদসন্ধ্যা, কাল বিয়ে আর তিনি নাকি এখন ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট খেলবেন! কথাটা ভেবেই আমার মাথা চক্কর দিচ্ছে। ধ্রুব ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
– কি ভাবছিস? যা, খেলার কোর্ট রেডি কর!
.
.
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
– আপনি কি সত্যি এখন ম্যাচ খেলবেন?
.
.
ধ্রুব ভাইয়া আমার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালো। আমি আর কিছু না বলে নিচে চলে আসলাম। আমার দ্বারা যে কোন কাজ ঠিকমতো হবে না, তা আমার বেশ বুঝা হয়ে গেছে।
.
.
Continue…………………
.
.
শত_তারার_দেশে?
Part-1
#Nusrat_Jahan_Abida

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here