শত_তারার_দেশে?
Part-2
#Nusrat_Jahan_Abida
.
.
ব্যাডমিন্টন খেলার বিষয়টি যতটা ভেবেছিলাম তার চেয়ে বেশি ছড়িয়ে গিয়েছে। সবাই হলুদ সন্ধ্যা বাদ দিয়ে ছাদে চলে এসেছে খেলা দেখতে। এমন কিছু কেউ দেখছে কখনো যে হলুদ সন্ধ্যা না করে খেলার আয়োজন করে! ধ্রুব ভাইয়া যেমন পাগল, তেমনি বাকি সবগুলোও পাগল। কোন পরিবারে যে এসে পড়েছি আল্লাহ মালুম।
.
.
ছাদের একপাশে কোর্ট রেডি করা হচ্ছে। তার পাশেই লাগানো হয়েছে সাদা ধবধবে এনার্জি লাইট। লাইটটার জন্য বেশ বিরক্তি লাগছে। বারবার চোখ দুটো ঐদিকেই যাচ্ছে কিন্তু লাইটের জন্য তাকাতেও পারছি না। মন তো চাচ্ছে লাইটটা নিয়ে গিয়ে ধ্রুব ভাইয়ার মাথায় ফাটাই। কিন্তু পরে জেলে যাওয়ার চান্স আছে তাই আইডিয়াটা ছাদ থেকে ছুড়ে ফেললাম। শেষে কি করবো ভেবে না পেয়ে নিচের দিকে যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরলাম। কিন্তু কিছুদূর যেতেই ধ্রুব ভাইয়া আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই বলল,
– কোথায় যাচ্ছিস?
.
.
কথাটা বলেই আমাকে কিছু না বলতে দিয়ে বললেন,
– তোর জন্য এতো আয়োজন হচ্ছে আর সেই তুই চোরের মতো কোথায় পালিয়ে যাচ্ছিস?
.
.
আমার জন্য আয়োজন! আমি কি বলেছিলাম নাকি যে হলুদ সন্ধ্যা বাদ দিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলো! আজব! দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
– আমি মোটেও চোরের মতো পালাচ্ছি না।
.
.
ধ্রুব ভাইয়া আমার কোন কথার উত্তর না দিয়ে কোর্টের পাশে নিয়ে দাঁড়া করালেন। তারপর একনজর আমাকে দেখে নিয়ে কোর্ট লাগানোতে লেগে পড়লেন। আম্মু এসব দেখে আমার কাছে এগিয়ে এসে বললেন,
– নিশ্চয়ই এসবের পিছনে তোর হাত আছে? তুই-ই জোর করেছিস খেলার জন্য।
.
.
আজব! দুনিয়াতে যাই হোক তাতে আমার দোষ হতে হবে নাকি! আসলেই আমার পুরো খানদানই পাগল। বড়মা এগিয়ে এসে বললেন,
– ওকে বকা দিচ্ছো কেন? ওর কি দোষ? আমার ছেলেটাই পাগল একদম! কখন কি ভেবে বসে বলা যায় না।
.
.
আম্মু বড়মার কথা শুনে বলল,
– ছেলেটার দোষ কি! সবাই মিলে খেলবে, মজা করবে এটার জন্যই তো কোর্টটা বসাচ্ছে। আর এভাবেও হলুদ করতেই হবে তার কোন নিয়ম আছে নাকি!
.
.
বাহ! ভাতিজা করলে প্রশংসা আর আমি করলে দোষ! ভালোই! বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
– তুই যা না, মা। ছেলেটাকে বুঝা গিয়ে! হলুদ বাদ দিয়ে কেউ এসব করে নাকি!
.
.
আমি বুঝাতে গেলে নিশ্চয়ই দু তিনটা থাপ্পড় খাবো। ছাদ থেকেও ফেলে দিতে পারে, কোনো ভরসা নেই। কথাটা ভেবেই একটা ঢোক গিললাম।
– আমি কিছু বলতে গেলে নিশ্চিত ছাদ থেকে ফেলে দিবে।
.
.
আনমনেই কখন যে কথাটা মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে নিজেও বুঝতে পারি নি। বড়মা আমার অবস্থা দেখে হেসে ফেললো। হেসে বলল,
– যত যাই হোক না কেন, ধ্রুব তোকে কিছু বলবে না। তুই যে ওর খুব আদরের।
.
.
কথাটা বলেই বড়মা চলে গেলেন, তার সাথে আম্মুও গেলেন। আমাকে নাকি ধ্রুব ভাইয়া কিছু বলবেন না! এসব আমি কি শুনলাম! যাই হোক, বড়মা যে আমাকে ভীষণ ভালোবাসেন তা আমার জানা। বড়মা সম্পর্কে আমার কাকিমা, আমি আদর করে ডাকি বড়মা। তিনিও আমাকে একদম নিজের মেয়ের মতোই ভালবাসেন। তাই তার কথার মান রাখতে ধ্রুব ভাইয়ার কাছে গেলাম। একটা ঢোক গিলে বললাম,
– ভাইয়া, আজকে না খেললে কি হয় না!
.
.
কথাটা বলতেই ভাইয়া এমন ভাবে তাকালেন যেন আস্ত গিলেই ফেলবেন। তাই আর কিছু না বলে দূরে সরে দাঁড়ালাম। এতো কম বয়সে মরা শখ নেই আমার!
.
.
.
.
.
কোর্ট রেডি করা হয়ে গেছে। পাশেই কয়েকটা চেয়ার সাজানো হয়েছে বসার জন্য। রোজা কয়েকটা চিপস নিয়ে আমার কাছে আসলো। রোজা আমার মামাতো বোন, আমার সমবয়সী। চিপস দেখিয়ে বলল,
– চিপস খেতে খেতে খেলা দেখবো, কি বলিস?
.
.
এখানে ধ্রুব ভাইয়া আমার মাথা খাচ্ছে, আর ইনি এসেছেন চিপস খেতে। রেগে ওর হাত থেকে চিপসের প্যাকেটগুলো নিয়ে বললাম,
– এগুলো আমি খাবো, তুই নিজের জন্য নিয়ে আয়!
.
.
রোজা ভ্রু কুঁচকে বলল,
– এর মানে কি?
.
.
আমি টেডি স্মাইল দিয়ে বললাম,
– এটাই সাইন্স, এখন যা।
.
.
রোজা মুখ ছোট করে বলল,
– তুই অনেক খারাপ, দেখিস একটা জল্লাদ মার্কা জামাই পাবি বলে দিলাম!
.
.
আমি ভেংচি কেটে বললাম,
– উকুনের দোয়ায় গরুর মরে না!
.
.
রোজা একটু ভেবে বলল,
– এখানে উকুন না, শকুন হবে!
.
.
দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
– তোর সাথে উকুন বেশি স্যুট করে।
– আর তোর সাথে গরু!
– তোকে তো!
.
.
আর কিছু বলার আগেই রোজা ছাদ থেকে নিচে চলে গেল।
.
.
.
.
.
সবকিছু রেডি হয়ে গেছে। খেলা কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে। কিন্তু কথা হলো, যার সাথে ম্যাচ হবে তাকে কিভাবে আনবে? আর ধ্রুব ভাইয়া যা রেগে আছে, যদি তাকে আনতে যায় তবে কি থেকে কি বলবে বলাও যায় না। এখন নিজের উপরই জিদ হচ্ছে, কেন এতো বড়াই করতে গেলাম! আসলেই এক নম্বরের গরু!
.
.
Continue……………………..