শত_তারার_দেশে?
Part-5
#Nusrat_Jahan_Abida
.
.
বাসার সামনে রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। পরনে মেরুন রঙের একটা লেহেঙ্গা। লেহেঙ্গার এক হাতে উঁচু করে অন্য হাতের মোবাইলে সময় দেখছি। ধ্রুব ভাইয়া কি এখনো রেডি হয় নি। কি জানি! সকালের পরে আমার আর তার সাথে দেখা হয় নি। ব্যান্ডেজ করা শেষ করে তার হাতে চামচ দিতেই ধ্রুব ভাইয়া মুখ ফুলালেন। তিনি নাকি চামচ দিয়ে খাবেন না? ভ্রু কুঁচকে বললাম,
– তাহলে কিভাবে খাবেন?
.
.
তিনি এখনো মুখ ফুলিয়ে বসে আছেন। কোন কথাই বলছেন না। শেষে বাধ্য হয়ে আমাকেই খাইয়ে দিতে হলো। কথাটা ভেবে হালকা হাসলাম। এখনো বাচ্চার মতো স্বভাব আছে তার। এই মুহূর্তে কি করছে কে জানে! বাসার সব মহিলা পার্টি গিয়েছে পার্লারে। আমি বলেছিলাম বাসা থেকে রেডি হয়ে সোজা সেন্টারে চলে যাবো। সেই উদ্দেশ্যেই বাসার নিচে আসা। কিন্তু নিচে নামার পর মনে হলো, ধ্রুব ভাইয়ার সাথে গেলে মন্দ হয় না। এখানে দাঁড়িয়ে থাকি, আসলে এমন ভাব করবো যেন মাত্রই নিচে এসেছি। কিন্তু আমি চাইলেই তার রুমে গিয়ে বলতে পারি যে আমি তার সাথে যাবো। কিন্তু কেন জানি তা করতে মন চাইছে না। মনে মনে কথাগুলো ভাবছি এমন সময় সামনে একটা বাইক এসে দাঁড়ালো। হেলমেট খুলতেই বুঝলাম কালকের সেই ছেলেটা। আমাকে দেখে হাসিমুখে বলল,
– বিয়েতে যাচ্ছো?
.
.
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম। আমার উত্তর শুনে ছেলেটি হাসি হাসি মুখে বলল,
– আমিও সেখানেই যাচ্ছি।
.
.
যেতেই পারে। বাসার পাশেই তার বাসা। দাওয়াত তো অবশ্যই পাবে। কথাগুলো ভাবছি এমন সময় তিনি লিফট অফার করলেন। কিন্তু যাওয়ার মন আমার নেই। তাই হাসিমুখে বললাম,
– তার প্রয়োজন নেই। আমি যেতে পারবো।
.
.
ছেলেটি আমার উত্তর শুনে কি মনে করলো জানা নেই, তবে চেহারা আগের মতোই হাসি হাসি। হাসিমুখে বলল,
– তা তো পারবেই, তবে আমার সাথে গেলে আমি অনেক খুশি হবো।
.
.
কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। একটু ভেবে বললাম,
– আচ্ছা, চলুন তাহলে।
.
.
বাইকে উঠতে যাবো এমন সময় কেউ বলে উঠলো,
– তুই আমার সাথে যাচ্ছিস।
.
.
পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখলাম ধ্রুব ভাইয়া দাঁড়িয়ে। ছেলেটার সাথে একটু কথাবার্তা ছেড়ে আমার কাছে এসে হাত চেপে ধরলো। আমি তার দিকে তাকাতেই তিনি বলল,
– চল আমার সাথে।
.
.
কথাটা বলে আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তার বাইকের কাছে নিয়ে গেলেন। নিজে বাইকে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– বস!
.
.
আমি অবাক হয়ে বললাম,
– আপনি এই হাত দিয়ে বাইক চালাবেন?
.
.
উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
– বস বলছি!
.
.
দেখলাম ধ্রুব ভাইয়া রেগে গিয়েছেন। কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলেও এটা জানি যে বাইকে না উঠলে উনি আরো রেগে যাবেন। তাই চুপচাপ বাইকে পিছনে গিয়ে বসলাম।
.
.
.
.
.
সেন্টারে একটা চেয়ারে বসে আছি এমন সময় কালকের ছেলেটা আসলো। যাহ, ছেলেটার নামই তো জানা হলো না। এখন কি ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করবো তার নাম কি? কিন্তু ছেলেটাই বা কি ভাববে। এতবার কথা বললাম অথচ তার নামই জানি না। ছেলেটি কাছে এসে বলল,
– একা একা বসে এসো কেন?
.
.
আসলেই তো! বোনের বিয়েতে এভাবে মন খারাপ করে বসে আছি কেন? আসলে ধ্রুব ভাইয়া তখন থেকে রাগ করে আছে, একটা কথাও বলছে না। আর তার এমন ভাব দেখে আমার মনটাও খারাপ হয়ে আছে। ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আসলে একটু খারাপ লাগছিলো তাই…
.
.
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই ছেলেটি ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
– বেশি খারাপ লাগছে নাকি!
.
.
আল্লাহ! ছেলেটি কি ভাবছে আমার শরীর খারাপ! ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললাম,
– না, না, একটু খারাপ লাগছিল, তবে এখন ঠিক আছি।
.
.
ছেলেটি কাছে এসে বলল,
– আর ইউ সিওর? যদি বেশি খারাপ লাগে বলতে পারো!
.
.
আমি মুখে হাসি এনে বললাম,
– আমি ঠিক আছি!
.
.
কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ালাম। এখানে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না। সবাই যদি জানে আমার শরীর খারাপ থাকলে শুধু শুধুই চিন্তা করবে। তাই ছেলেটির কাছ থেকে দ্রুত চলে আসলাম।
.
.
.
.
.
ধ্রুব ভাইয়ার রাগ এখনো কমে নি। কেন রেগে আছেন তাও জানা নেই। কোন কথা তো বলতেই হবে। কথা না বললে যে আমার ভালো লাগবে না। ধ্রুব ভাইয়ার কাছে গিয়ে বসতেই তিনি একটু সরে বসলেন। আমি সেটাকে অগ্রাহ্য করে বললাম,
– আচ্ছা, ছেলেটার নাম কি?
.
.
প্রশ্নটা করতেই ধ্রুব ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। তবে কোন উত্তর দিলেন না। আমি আবার বললাম,
– বলুন না!
.
.
ধ্রুব ভাইয়া একনজর আমাকে দেখলেন। তারপর বললেন,
– কোন ছেলে?
.
.
উনি প্রশ্নটা করতেই কথা বলার উৎসাহ পেলাম। হয়তো উনার রাগ কমেছে! উৎসাহ নিয়ে বললাম,
– ঐ যে পাশের বাসারটা!
.
.
কথাটা বলতেই উনার চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল। কিন্তু পরক্ষণেই হেসে বলল,
– ওহ, ওর নাম! কিন্তু তুই নিজেই তো ওর থেকে জিজ্ঞেস করে নিতে পারিস।
.
.
আমি মুখ ছোট করে বললাম,
– পারি তো, তবে কি না কি মনে করে!
.
.
ধ্রুব ভাইয়া ভ্রু উঁচু করে বললেন,
– কি মনে করবে!
.
.
একটু ভেবে বললাম,
– বাদ দিন। আমি না হয় অন্যভাবে নাম জেনে নিবো!
.
.
ধ্রুব ভাইয়া হয়তো জানতে চাইছিলেন কিভাবে নাম জানবো! তবে তার কথা না শুনেই পারি জমালাম স্টেজের দিকে। বোনের বিয়েতে বসে থাকা মোটেও মানানসই নয়। এতক্ষণ বসে থাকার কারণ শুধুই ধ্রুব ভাইয়া! এখন তার রাগ কমেছে সুতরাং বিয়েটা ইনজয় করতে পারবো।
.
.
.
.
.
স্টেজে দাঁড়িয়ে অনেকগুলো ছবি তুলে চলে গেলাম আম্মুর কাছে। বিয়ের ব্যস্ততার জন্য আম্মুর সাথে ঠিকমতো কথা বলতেই পারছি না। স্টেজের পাশে বসে থাকা আম্মুর কাছে যেতেই শুনলাম, কেউ আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে। বিষয় এটা না যে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে, বিষয় এটা যে বিয়ের প্রস্তাব কে দিচ্ছে! বিয়ের প্রস্তাবটা আর কেউ না বড়মা দিচ্ছে। তাও আবার আমার আর ধ্রুব ভাইয়ার বিয়ের। এই মুহূর্তে আমার কি রিয়েক্ট করা উচিত তাই বুঝতে পারছি না।
.
.
Continue…………………..