শব্দহীন_বৃষ্টি (২৬)

0
916

শব্দহীন_বৃষ্টি
(২৬)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
_________________________
একটা ছোট্ট বাচ্চা যেমন প্রিয় কোন জিনিসের জন্য কান্না করে আর সেটা পেয়ে গেলে মুহুর্তেই কান্না থেমে যায়।ঠিক তেমন করেই মাহির কান্না হঠাৎ করেই থেমে গেছে সাগরের মুখে বিয়ের কথা শুনে। সাগর হতবিহ্বল এমন অবস্থা দেখে।

–“তুমি তো আচ্ছা নির্লজ্জ মেয়ে।”

–” নির্লজ্জ মানে!”

–” নির্লজ্জ মানে বোঝ না? বেহায়া,লজ্জাহীন । ”

–” আপনি আমাকে এসব বলছেন কেন।” নাক টানতে টানতে বলল মাহি।

–” মাত্রই কেমন মামার কথা শুনে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদছিলে আর যেই না বিয়ের কথা শুনলে অমনি কান্না বন্ধ একেবারেই স্টপ। হাউ ইজ পসিবল “! ভারী আশ্চর্যান্বিত গলায় বলল সাগর।সাগরের কথা শেষ হতেই মাহির কান্না আবার শুরু হলো। এ কি অবস্থা সাগর বুঝে পায় না৷ আসলে মাহি এমন ভাবে সাগরের মুখে বিয়ের প্রস্তাব শুনে চমকে গিয়ে ক্ষনিকের জন্য ভুলে গিয়েছিলো মামার কথা। দিলো সাগর আবার মনে করিয়ে। মনে মনে নিজেকেই কিছু গালি দিলো সাগর। তারপর ভাবলো মাহির কান্নার জন্য গাড়ি থামিয়ে রাখলে রাতটা তাদের রাস্তায়ই কাটবে। তাই আর মনযোগ দিলো না তার দিকে গাড়ি স্টার্ট দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাড়ি ফিরে ও অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করেছে মাহি। সাগরের প্রায় পুরো পরিবারই তাকে সান্ত্বনা দিলো। খুব স্নেহে রাতে খাইয়ে সাথীদের সাথে ঘুমুতে ও পাঠালো। রাত প্রায় বারোটার পরে নিরব কল দিয়েছে সাগরকে। মাহির খবরাখবর নিতে। সাগর ও তার মামার খবর জেনে নিয়েছে।

সকালে ঘুম ভাঙে সমুদ্রের কল পেয়ে। রাত যেমন তেমন কেটেছে ঘুম তো সকালেই ঠিকঠাক এসেছিলো মাহির। ঘুম ঘুম কন্ঠে কিছুটা রাগ দেখিয়েই বলল, ” এত সকালে ফোন দেওয়ার কি দরকার পড়লো।”

–” নিপার কি হয়েছে?” খুব সতর্ক গলায় প্রশ্ন করলো সমুদ্র । চোখের ঘুম এবার জোর করেই পালিয়ে গেল মাহির৷ মনে পড়লো কালকে নিপা কল দিয়েছিলো সমুদ্র কে বলেছিলো ভালোবাসার কথা।

–” কাল বিয়ে হয়েছে নিপার৷ সাগর সাহেবের বন্ধুর ভাইয়ের সাথে।”

–” তা আমি জানি। বরং তোমার আগেই জেনেছিলাম নিপার বিয়ের খবর। কিন্তু,, ” সমুদ্র একটু দ্বিধায় ভুগলো কালকে নিপার বলা কথা গুলো জানাবে কিনা।

–‘ কিন্তু কি? নিপা তোমাকে ফোন করেছিলো তাই তো।”?

–” হ্যা।”

–” সমুদ্র তুমি হয়তো জানো না নিপা তোমাকে খুব ভালোবাসে৷ সেই ক্লাস নাইন থেকে। ” কিছুটা ধরে এলো মাহির গলা।

–” হাসালে মাহি। নিপা আমাকে ভালোবাসে তা আমি অনেক আগে থেকেই জানি৷ না, নিপা কখনো বলেনি তবে বুঝতে পারতাম। স্বাভাবিকভাবেই সে থমকে যেত আমায় দেখলে, লুকিয়ে আমায় দেখতো, আমার সাথে কথা বলতে জড়তা ঘিরে থাকতো তাকে। এমনকি অন্য আর দশজনের সহপাঠীর মত আচরন সে চাইলেও করতে পারতো না আমার সাথে। যেখানে আমি তুমি ঝগড়া করতাম অবলীলায় সেখানে নিপা একটা ওয়ার্ড ও বলতে পারতো না। আর ও আমায় ভালোবাসে তা স্পষ্টতই লেখা ছিলো তারই ব্যাগের উপরের পকেটে৷ ”

–” সিরিয়াসলি!” মাহি অবাকের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেল। আবার বলল, ” তোমাকে কে বলল?”

–” কেউ বলেনি ।মনে আছে ক্লাস টেনে উঠার পর আমরা প্রায়ই এসেম্বলিতে যেতাম না।”

–” হ্যা তোমরা কয়েকটা ছেলে খুবই ফাঁকিবাজ ছিলে৷ আর প্রায় প্রতিদিনই বাথরুমে ঘাপটি মারতে৷ ”

–” হ্যা আর এসেম্বলি শুরু হয়ে গেলে লুকিয়ে ক্লাসে আসতাম আর তখন ক্লাসের মেয়েদের ব্যাগে হামলা করে দেখতাম কার ব্যাগে কি কি মেকআপ কিট আছে।”

–” ওমা কত্তো খারাপ তোমরা।”

–” রাখো তোমার খারাপ আগে শোনো ক্লাসে কমার্স এর মেয়ে নিধির কথা মনে আছে?” সমুদ্র এমন ভাবে বলছে যেন কত জরুরি আলাপ করছে সে৷ মাহিও খুব মনযোগে শুনছে।

–” ওই তো জুনায়েদ স্যারকে পছন্দ করতো সেই নিধি না?”

–” হ্যা ওই মেয়ের ব্যাগে হাত দিলেই লিপস্টিক পাওয়া যেত আর নুরি ছিলো আমাদের সাইন্স গ্রুপেরই। ” সমুদ্র কে থামিয়ে মাহি নিজেই বলল ” নুরির তো ব্যাগ ভর্তি শুধু খাবার থাকতো।” হেঁসে উঠলো মাহি সমুদ্র দু’জনেই৷ তারা আসলে কি নিয়ে কথা শুরু করেছিলো তাই যেন ভুলে গেছে। পুরনো সময় খুব করে স্মৃতির পাতা উল্টে দিয়েছে তাদের। এক অবর্ণনীয় আনন্দ জেঁকে বসেছে স্কুলের কথা মনে হতেই৷ বলতে বলতে তারা প্রায় অনেক কথাই বলল। সাথী, যুথি আগেই উঠে গেছে। স্কুল আছে তাদের কিন্তু মাহির কোন কাজ নেই। মাহিম ও সাথীদের সাথে চলে যাবে৷ কথার ফাঁকে জানা গেল নিপার ব্যাগে খুব সুন্দর করে একটা অংশ জুড়ে সমুদ্র নামটা লিখা ছিলো৷ এমনকি তার সকল জিনিসেই ছোট্ট করে সমুদ্র লেখা থাকতো। কিন্তু করার কিছুই ছিলো না সমুদ্রের আর না এখন আছে। সমবয়সী সম্পর্ক আমাদের দেশে একটু বেশিই অশোভন লাগে সবার চোখে। সমুদ্রের সাথে কথা শেষ করে বাবাকে কল দিলো। মামার অবস্থা এখন একটু ভালো। সুবিধা মত ঢাকায় নিয়ে আসবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এ বাড়িতে আগে ও এসেছে মাহি বহুবার। কিন্তু আজকের মত এত লজ্জা কখনো লাগেনি। কাজের মেয়েটি মাহিকে নাস্তার জন্য ডেকে গেছে একটু আগেই৷ পা টিপে টিপে দোতলা থেকে নিচে নেমে এলো। আসার সময় অবশ্য বারবার সাগরের ঘরের দিকে তাকাচ্ছিলো কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হলো না। ডাইনিং রুমে আসতেই জানতে পারলো সাগর বাড়িতে নেই। কথা ছিলো বৌভাতে যাবে অফিসের কাজের জন্য তা সম্ভব হলো না।

নাস্তা করে একেবারে ফাঁকা হাতেই বসে ছিলো মাহি। তার সাথে কথা বলার মত কেউ ছিলো না। যারা ছিলো তারা সবাই সংসারের কাজে ব্যস্ত।

–” মামার অবস্থা কিরুম কোন খবর পাইছোনি?” হাওয়া বেগম মাহির পাশে বসতে বসতে কথাটা জিজ্ঞেস করলেন।

–” হ্যা দাদুনী। মা বলল খুব শিগ্রই মামাকে নিয়ে তারা ঢাকা ফিরবে।” মাহি জবাব দিলো

–” হেইডা ভালা হইবো৷ ওই গেরামেনা রাইখা লইয়া আইতে কও।” হাওয়া বেগম কথার মাঝেই মাহিকে একটু গভীর দৃষ্টিতে দেখে নিলেন। বয়স একেবারে বেমানান হবে না সাগরের সাথে। বরং ভালোই মানাবে দু’জনকে। আর দাদুনীর এমন চাহনিতে অস্বস্তি হচ্ছে মাহির।

চন্দ্রবিলাস করা যায় এমন আলো নেই আজ আকাশে। তবুও আলোর কমতি ও নেই। ছাঁদের আলুটুকু নিভিয়ে রেখেছে সাগর। বড় উলট পালট হচ্ছে সব মাহি সামনে এলেই। মেয়েটা একদম বিপদ হয়ে সামনে দাঁড়ায় সবসময়। কাল রাতেই কেমন এক ঘোর লেগেছিলো সাগরের। গাড়িতে বসে মাহির কান্নামাখা মুখে তাকিয়ে ভয় পেয়েছিলো৷ কি অদ্ভুত মায়াময়ী লাগছিলো কান্নারত অবস্থায় তাকে। বারবার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাচ্ছিলো সাগর। বহু কষ্টে সামলেছে। ডায়েরির মুখাবয়বটির কোথায় যেন মাহির সাথে মিল আছে।আর সেই মিলটাই বোধ হয় একটু বেশি করে টানছে তাকে মাহির দিকে। আজ আবার এই মুহুর্তে এই অন্ধকার ছাঁদে ঠিক ঘাড়ের পেছনেই তার তপ্ত নিঃশ্বাস টের পাচ্ছে এই মুহুর্তে।

চলবে

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here