শব্দহীন_বৃষ্টি (২৯)

0
924

শব্দহীন_বৃষ্টি
(২৯)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
__________________________
সপ্তাহের পুরো সাত দিন যশোরে কাটিয়ে বাড়ি ফিরেছে চামেলি। শিউলিও তাই করেছে আর এই এক সপ্তাহের মাঝেই দু’বোনের মধ্যকার মনোমালিন্যতা দূর হয়ে গেছে। এরই মাঝে ডক্টর আয়ান একবার শিমুল মামার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। বলতে গেলে মাহির খোঁজ রাখছে মাহির বয়সের খোঁজ রাখছে। প্রায় দেড় বছর আগে যখন বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলো তখন বয়স আঠারো হয়নি বলে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলো। লোকটা বিদেশে থেকে এখনও অপেক্ষা করছে কবে মাহির আঠারো হবে কবে সে আবার আসবে প্রপোজাল নিয়ে। তার আত্মবিশ্বাস প্রবল নিজেকে নিয়ে। নিজেই ভাবে কোন কমতি নেই তার মাঝে একমাত্র মাহির বয়সের জন্যই বিয়েটা আটকেছে।

বাড়ির পরিবেশ অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। চারদিন সাথী স্কুলে যায়নি এমনকি খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়নি। এখন যায় স্কুলে সাথে যায় তার বাবা কখনো কখনো সাগর নিজেই। সৈকতও খুব চেষ্টা করছে বাড়ি ফিরে আসতে কিন্তু শিলা কোনভাবেই রাজী হচ্ছে না। সাগর আজকাল বাড়ির সব ব্যাপারেই নজর রাখছে। তার কেন যেন মনে হয় তাদের পরিবারটার বাঁধন আলগা হয়ে আসছে আর তাই তাকে সেই বাঁধন মজবুত হাতে নতুন করে বাঁধতে হবে। হচ্ছে ও তাই যে সাগর কখনো বাবা, মা, চাচা, চাচীর মুখের ওপর কথা বলেনি সে আজকাল সবাইকেই কিছু না কিছু কঠোর কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। এই তো সেদিনও ছোট চাচুর ব্যবসায় লসের জন্য হা হুতাশ করছিলো। তখন খারাপ লাগার পাশাপাশি রাগও হচ্ছিলো। বউয়ের কথায় তো সব আলাদা করেছে তবে এখন কেন কান্নাকাটি আলাদা করছো না। কেন আমাদের জানতে হবে তোমার সমস্যাগুলো? সকল পুঁজি খুঁইয়ে এখন কেন বড় ভাইয়ের কাছে মাথা নত করছো? সাগরের বাবা সেদিন চুপ ছিলেন শুধু ভাবছিলেন ছেলেটা বড় হয়েছে এখন ভালমন্দ সবটা বুঝে।

ছোট চাচুর চলার ক্ষমতা শেষ হয়ে গিয়েছে। চাচীর লোভের কারণে জমা কিছু টাকা পয়সা শেয়ারে লাগিয়ে তাতেও হাত সাফ হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত আবার ভাইদের কাছেই আসতে হলো। থালাবাটি এক করতেই হলো। এদিকে হাওয়া বেগমের মনে সন্দেহের বীজে এখন শিকর বেরিয়েছে। কাল রাতে তিনি সাগরকে ছাঁদে যেতে দেখে পিছু নিয়েছিলেন। অনেক কষ্টে সিঁড়িগোড়ায় দাঁড়িয়ে শুনেছে মাহির গলা। ধরে নিয়েছেন সাগর আর মাহির মধ্যে লুকায়িত কোন সম্পর্ক আছে।আর তাই দেরি না করে আজই বড় বউমাকে নিয়ে গেলেন চামেলির কাছে। রাত বিরাতে বিযের যোগ্য ছেলেমেয়ের এমন মেলামেশা লজ্জার বিষয় তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চার হাত এক করে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

মাহি আজ কলেজে গিয়েছে সাগরের সাথে । সাগর বাইক নিয়ে বের হচ্ছিল তখনই মাহি কল করেছে সাগরকে। অবাকের চেয়ে বেশি কিছু থেকে থাকলে সাগর সেই মুহুর্তে তাই হয়েছে। মাহি নিজের জন্য বাবার কাছ থেকে ফোন নিয়েছে প্রায় এক বছর হলো। আর সাগরের নাম্বার সে নিয়েছে এক বছর আগেই এবল নিজের ফোন নম্বরটা ও দিয়ে এসেছিলো তখন। কিন্তু কল সে এই প্রথম করেছে। চোখে ভুল দেখছে কিনা ডাউট হলো। দু ‘ তিন বার চোখ কচলে আবার দেখলো নাম্বার ঠিকই আছে।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শোনা গেল, ” আজ রিকশা দিয়ে গেলে হয় না?” কথাটায় কিছু ছিলো বুঝি সাগর জবাবে শুধু “হুম” বলতে পারলো। কেন তা জিজ্ঞেস করতে পারেনি। সম্মোহিতের মত কোন দিকে খেয়ালই ছিলো না তার শুধু গলার টাইয়ের নট’টা ঠিক করতে করতে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। গেইটের বাইরে এসে রিকশা ঠিক করেছে ততক্ষণে মাহিও নিচে নেমে এসেছিলো৷ আজ তার পরনে সাদা কামিজ যার নেক আর হাতের দিকটায় আকাশি রঙের সুতোর কাজ। ওড়নাটা আকাশি রঙের , চুল গুলো বিনুনি করা। আজ চোখে একটু কাজল ও লাগিয়েছে খুব শখ করে। হাত দু’টোতে চুড়ির শূন্যতা। সাগর এক রিকশায় মাহি আরেক রিকশায়। গন্তব্য দু’জনের দু’দিকে অথচ মনের চলা আজ এক দিকেই । কলেজ রোডে আসতেই মাহি আবার কল করলো সাগরকে।

–” কেমন মানুষ আপনি?” সাগর কল রিসিভ করতেই মাহি বলল কথাটা৷

–” খুবই ভালো,ভদ্র আর অবশ্যই হ্যান্ডসাম।”

–” গাধা,গোবর গনেশ আর একনম্বরের জাহিল আপনি সেটা কেউ বলেনি “?

–” বলা জরুরি ছিলো বুঝি?”

–” হ্যা, এবার দয়া করে রিকশা থামান।”

–” রিকশায় বসেছো তুমি আমি কি করে বলবো রিকশা থামাতে!”

–” এ্যাই ফাইজলামি করবেন না একদম কথা আছে নামুন রিকশা থেকে আমি কলেজের সামনে নামছি। ” বলতে বলতেই মাহি কলেজের সামনে এসে গেছে। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে অপেক্ষা করলো সাগরের। সাগর নামেনি রিকশা থেকে অফিসেই চলে গেছে সে। মাহির খুব রাগ হলো কিন্তু নিপাকে দেখে সব রাগ নিমেষেই বাষ্পীভূত হয়ে গেল। বিয়ের পর আজই প্রথম এলো কলেজে নিপা। মাহি অবাক হয়ে দেখছে তাকে। তার কি একটু চেহারা পাল্টেছে? হবে বোধ হয় নয়তো নিপার রং এতোটা উজ্জ্বল আগে কেন লাগেনি তার? কেমন যেন নতুন নতুন লাগছে খুব। বড়রা বলতো বিয়ের পর নাকি চেহারার সৌন্দর্য বেড়ে যায় । নিপারও কি তাই হয়েছে?

–” কেমন আছিস?”

–” ভালো। তুই?”

–” দেখে বল কেমন মনে হচ্ছে?”

নিপার কথাটায় কি শ্লেষ মিশ্রিত ছিলো! মাহি ধরতে পারলো না।

–” তমাল ভাইয়া কে কেমন দেখলি এ ক’দিন? ” মাহি যেন একটু জানতে চাইছে নিপার নতুন জীবনে সুখ কতটুকু।

–” উনি মানুষ হিসেবে খুবই ভালো।” নিপার কথায় কোন আনন্দ উত্তেজনা খুঁজে পেল না মাহি।

–” তুই কি খুব কষ্ট পাচ্ছিস?”

–” বুঝতে পারছি না। উনার ভালোবাসার পরিমাণটা খুব বেশি মনে হয় আমার। কেমন যেন ওভারলোডেড৷ সব কিছুতেই কেমন একটু বেশি কেয়ার। আমি হয়তো একটু খুনসুটি,ভুল-ত্রুটি চাই কিন্তু তার ভালোবাসায় তেমন কিছু পাওয়ার সুযোগ নেই। না চাইতেই সব ঠিকঠাক পাই। এতোটাও ভালোবাসা আমার ভালো লাগে না।”

নিপার কথার কি জবাব দেবে তা যেন খুঁজে পেল না মাহি। নির্ভেজাল ভালোবাসা সবারই কাম্য কিন্তু সেই ভালোবাসায় মাত্রা ঠিক কতটুকু হওয়া উচিত মাহি জানে না। সাগরকে তো সে ওই আধো আলোছায়ায় দেখেই প্রেমে পড়েছিলো। সেই প্রেম ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে৷ সময়ের কারসাজি হোক কিংবা নিজের বোকামিতে সাগরের স্পর্শ ও পেয়েছে তবুও কখনো মনে হয়নি সাগর তাকে খুব ভালোবাসে । আদৌও বাসবে কিনা তাও জানা নেই। আচ্ছা অতিরিক্ত ভালোবাসা কি বিস্বাদ লাগে!

–” মাত্র তো কয়েকদিন হলো এখনই ভালোবাসা সহ্য হচ্ছে না তোর?”

–” কয়েকদিন বা বহুদিনের ব্যাপার নয়। ব্যাপার হলো একঘেয়ে ভালোবাসা চাই না আমি। মানুষটা চাওয়ার আগেই সব দেয় এমনকি আদরটাও। ভালোবাসায় আদর থাকবে,যত্ন থাকবে সাথে খুনসুটিও।” নিপা থেমে গেছে। আসলেই কি তার একঘেয়ে ভালোবাসা সহ্য হচ্ছে না? নাকি মনের মধ্যে সমুদ্র নামক বুকের ভেতর জমে থাকা ভালোবাসার আস্তরণ তমালের ভালোবাসাটা ঠেলে দিচ্ছে দূরে।

–” মন খারাপ করিস না আমি শুনেছি তমাল ভাইয়া মানুষটা খুব ভালো। ”

–” সাগর ভাইয়া বলেছে?”

–” হ্যা। কথার ছলে বলেছিলো। ”

–” তোদের সম্পর্ক কতদূর?” নিপার এই কথায় মাহি কি একটু লজ্জা পেল? তার ফর্সা গালের রঙ কি একটু পরিবর্তন হলো? হবে হয়তো একটু লাজে রাঙা লাল মনে হলো।

–” উনি একটা বদ লোক। আজ বলেছিলাম একটু কলেজের সামনে দাঁড়াতে তিনি দাঁড়ায়নি। ”

–” তাই বলে বদ হয়ে গেল?”

–” হ্যা, বদই তো। একটু ভালোবাসি বললে কি হয় না উনি পড়ে আছেন উনার খুঁজে পাওয়া স্বপ্নকুমারীকে নিয়ে, হুহ।” মাহি মুখ ভেংচি কেটে বলল কথাটা। নিপা চমকে উঠলো বিষ্ময়ে তাকালো মাহির দিকে কি বলল মাহি? “স্বপ্নকুমারী”?

সাগর ভাইয়া স্বপ্নকুমারীর প্রেমে পড়েছে!

চামেলি কি করবে কি করবে না ভেবে পাচ্ছে না। হাওয়া বেগম আর শামসুন্নাহার এসেছে।আসার উপলক্ষ জানার আগ পর্যন্তও চামেলি বেশ স্বাভাবিক ছিলো। হাওয়া বেগম যখন মাহির বিয়ের কথা বললেন তখন থেকেই কেমন হড়বড়ে অবস্থা । সাগরের মত ছেলেকে অপছন্দ করার কোন কারণই নেই তবুও একটু ভয় করছে। মাহি যখন ক্লাস টেইনে তখনই তো ডক্টর ছেলের জন্য বিয়ের প্রপোজাল এসেছিলো। মেয়ের বয়স হয়নি বলে সেটা ক্যান্সেল করতে হলো। এখন কি সাগরের মত চোখের সামনে থাকা এত ভাল ছেলেটাকেও হাতছাড়া করতে হবে?চামেলি একবার ভাবলো আমিই মত দিয়ে দেই তারপর নিশ্চয়ই মাহি না করতে পারবে না। আবার ভাবলো যদি মাহি এবারেও মানা করে তাহলে প্রতেবেশীর সম্পর্কটাও নষ্ট হবে সারাজীবনের জন্য ।

–” মনজুরের বউ কিছু কইলা না?”

–” চাচীআম্মা ভুল কিছু হলে মাফ করবেন।সাগর কে তো চিনি আমি এ বাড়িতে আসার পর থেকেই। যতটুকু সাগর, সৈকতকে চিনেছি দেখেছি তাতে বলা যায় সাগরের মত ছেলেকে মেয়ে জামাই হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার৷ কিন্তু তবুও কথাবার্তা আগানোর আগে পরিবারের সবারই মতামত নেওয়া জরুরি। আর মাহির বাবা এর আগেও মাহির বিয়ের কথা শুনে রাগ করেছিলেন৷ আসলে মাহির বয়স তো জানেনই আপনারা। তাই,,, ”

–” বয়স নিয়া আর কি । মাইয়া ডাঙ্গর হইছে চোখে দেখা যায়। যাই হোক মনজুর এর ও মতের দরকার আছে। তুমি রাইতে একবার আইয়ো আমাগো বাড়ি।” হাওয়া বেগম অনেকটা আদেশের সুরেই বললেন। শ্বাশুড়ির ব্যবহার পছন্দ হলো না শামসুন্নাহারের । তবুও সরাসরি কিছু বলা বাঞ্ছনীয় নয় ভেবে বললেন, ” মনজুর ভাই আর মাহির সাথে আপনি কথা বলে দেখবেন। আমি না হয় সাগরের বাবা কাল ফোন করবো৷”

সাগরের মায়ের কথায় যেন তটস্থ হলো চামেলি। মাথা নাড়িয়ে সায় দিলেন । এরপর চা,নাশতা আরো কিছু গল্প শেষে বাড়ি ফিরলেন হাওয়া বেগম আর শামসুন্নাহার। বাড়ি ফিরেই হাওয়া বেগম সৈকতকে ফোন দিলেন৷ সাগরের বিয়ে ঠিক করে এসেছেন কথাটা বললেন৷ এরপর সাগরের ফুপি সোনালিকেও জানালেন আবার সমুদ্রকেও সবশেষে সাগরকেও ফোন করে বললেন। সাগর দাদুনীর কথা শুনে প্রথমে অবাক হলেও পরে ভাবলো হয়তো মাহির পরিবার জানে মাহি তাকে ভালোবাসে। তাই হয়তো এতদ্রুত বিয়ে ঠিক করেছে তারা। কিন্তু তাই বলে প্রথম আলাপেই এতোটা এগিয়ে? কি ভেবে সাগর কল দিলো মাহিকে। ওপাশ থেকে রিসিভ হলো না।

–“জেঠিমা!”

–” হ্যা তিথি বল।”

–” বরমশাইয়ের কি মাহিপুর সাথে বিয়ে হবে?”

–” হ্যা রে যদি তোর মাহি আপুর বাবা রাজী হন তবেই মাহি তোদের আপু থেকে ভাবী হয়ে যাবে। ” শামসুন্নাহার চা করছিলেন নিজের জন্য । মাথাটা একটু ধরেছে তার তখনি তিথি এসে জিজ্ঞেস করলো । দাদুনীর কাছে শুনেছে তার বর মশাইয়ের বিয়ে হবে মাহির সাথে। আর সেই থেকেই মুখ কালো করে বসেছিলো। এখন এসেছে জেঠিমার কাছে সত্যিটা জানতে।

–” মাহিপুও বউ হয়ে যাবে তখন বর মশাইয়ের “? তিথির গলা কাঁপছে কান্না গলায় আটকে আছে। এক্ষুনি চোখে জল গড়াবে বলে৷ চা বানানো রেখে তিথির দিকে তাকালেন।

–” এ্যাই তুই কাঁদছিস কেন তিথি”?

–” চমার বর মশাইকে বিয়ে দিবে কেন? আমি তো বউ না মাহিপু কেন হবে। আমার সব চকলেট মাহিপু খেয়ে ফেলবে। আমার খেলনা সব মাহিপু নিয়ে নিবে। আমি দিবো না কিছু । বর মশাইকে বিয়ে দিবো না জেঠিমা তুমি দাদুনীকে বলে দাও।” হেঁচকি তুলে কাঁদছে তিথি। এতো কান্না করছে বাড়ির সবাই একসাথে দৌড়ে এলো প্রায়। শামসুন্নাহার তো তিথির কথা শুনেই হাসবে হাসবে ভাব। তিথির মাও মেয়ের জান্ড দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছেন৷ প্রথমে ভেবেছিলো কি না কি হয়েছে হয়তো ব্যাথা পেয়েছে। পরে যখন শুনলেন সাগরের বিয়ে নিয়ে এমন কান্না তখন আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না। বাড়িসুদ্ধ সবাই হাসিতে ফেটে পরেছে। বাদ রইলো সাগর আর সমুদ্র ।

আজ দু’দিন হলো সৈকত জ্বরে ভুগছে। প্রথম দিন জ্বর নিয়েই অফিসে গিয়েছিলো। আজ অবস্থা তেমন ভালো নয় বলে অফিসে যায় নি। সকাল থেকেই ফ্ল্যাটের এ ঘর থেকে ও ঘরে আসছে যাচ্ছে কখনোবা শুয়ে শুয়ে সময় পাড় করছে৷ শিলা সকালের নাশতা সাথে ঔষধ খাইয়েছিলো। এরপর জরুরি কোন কাজের কথা বলে বাবার বাড়ি গিয়েছে। যাওয়ার আগে অবশ্য দুপুরের খাবার আর ঔষধ ডাইনিং টেবিলে রেখে গিয়েছে সৈকতের জন্য৷ জ্বরের তামপাত্রা তীব্র হওয়ায় সৈকত সে খাবার ছুঁয়ে ও দেখতে পারেনি৷ শুধু দাদুনীর ফোন কল পেয়ে যতোটা সাধ্যে কুলোয় কন্ঠস্বর স্বাভাবিক রেখে কথা বলেছে৷ সাগরের বিয়ে ঠিক করেছে শুনে মন ভালো হয়ে গিয়েছিলো৷ আর সেই মন ভালো হওয়ায় শরীরের জ্বরটাও যেন অনুভব হচ্ছিলো না৷ কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই গা কাঁপিয়ে জ্বর এলো তার। শিলা তখনও বাড়ি ফেরেনি আর না সারাদিন একটিবার খোঁজ নিয়েছে সৈকতের৷ আজকাল বড্ড বিতৃষ্ণা লাগে এই ফ্ল্যাট জীবন সৈকতের। আগেও ভালো লাগেনি তবুও আসতে হয়েছে শিলার খুশির কথা ভেবে৷ তাতে লাভ কি হলো? শিলা তো এতেও সুখী নয়। ইদানীং টাকার নেশায় পেয়েছে তাকে। বিবাহিত জীবনে সুখ বলতে শিলার শুধু টাকা চাই। অনেক টাকা তাই তো এখন সে নিজেও ইনকামের পথে এগোচ্ছে। বাবার বাড়িতে যাতায়াত বৃদ্ধি পেয়েছে তার। মায়ের সাথে মিলে বুটিক হাউজ খুলছে সে।স্ত্রী হিসেবে সৈকতকে তো সে দিচ্ছেই অন্তরঙ্গ হওয়ার সুখ আর কি দ্বায়িত্ব? ভুলেই গেছে শিলা স্বামী স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্কে শুধু দৈহিক নয় আরো অনেক কিছু থাকে চাওয়া পাওয়ার। একাকীত্ব আর নিঃসঙ্গতায় কাবু হয়ে যাচ্ছে সৈকত সেদিকে খেয়ালই নেই যেন শিলার।

চলবে

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here