শব্দহীন_বৃষ্টি (৩০)

0
1021

শব্দহীন_বৃষ্টি
(৩০)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
__________________________
রাতের খাবার খেতে বসে মন আনন্দে ভরে গেল সাগরের বাবা শহিদুল ইসলামের। আজ বহুদিন পর পুরো ডাইনিং টেবিল ভরে উঠেছে। লম্বাকৃতি টেবিলটির বারোজনের চেয়ারে আজ শুধু সৈকত আর সমুদ্রের কমতি। পড়াশোনার জন্য সমুদ্র না হয় দূরে। ছুটি পেলেই বাড়ি চলে আসবে কিন্তু সৈকত? হয়তো আর একসাথে হবে না আগের মতন আবার হতে ও পারে রিয়াদুল যেভাবে এক হয়েছে সেভাবেই। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন শহিদুল সাহেব। খেতে খেতেই সমুদ্রের বাবা জিজ্ঞেস করলো, ” আম্মা আজ না আপনারা সাগরের বিয়ের কথা বলতে গেলেন। কি বলল চামেলি ভাবি?” কথাটা শুনতেই হাওয়া বেগম মুখ খোলার আগেই তিথির আবার কান্না শুরু হয়ে গেছে। হাওয়া বেগম বিরক্ত হলেন দিনের বেলায় ও কতক্ষণ ঘ্যানঘ্যানানি শুনেছেন এখন আবার। তিনি বুঝে পান না এতটুকু বাচ্চা মেয়ে বিয়ের কি বোঝে। এখনই বলে তার বর! কি আশ্চর্যজনক ব্যাপার। সাগর কেমন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে তিথির কান্ডে। তার এই মজা করা বউটা ও তার জন্য কাঁদছে মাহিয়ার সত্যি একটা সতীন জুটে গেল বিয়ের আগেই। সাথী আর যুথি মুখ টিপে হাসছে আর ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছে। দু’বোনেতে আবার ফুসুরফুসুরও চলছে। মাহিপু যদি সত্যিই সাগর ভাইয়ার বউ হয় তবে তারা আজকের ঘটনা বলবে তাকে।

শহিদুল ইসলাম তিথিকে নিজের পাশে বসিয়ে বললেন, ” সাগর ভাইয়া তো ইয়া বড় আর তুমি তো ছোট তাই সাগর ভাইয়াকে অন্যকারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো। তুমি যখন বড় হবে তখন তোমাকেও বিয়ে দিবো। ”

–” বড় বাবা আমি সাগর বর মশাইকেই বিয়ে করবো বড় হয়ে।”

–” ওমা, ততদিনে তো তোমার বর মশাই বুড়ো হয়ে যাবে। লোকে হাসবে না তখন? ”

ক্লাস টু’ তে পড়ুয়া তিথি অতোটা ও ছোট নয়। তবুও এ কেমন অবুঝপনা তাহমওনা বুঝতে পারলো না। রাগ হলো কিছু বলতে চাচ্ছিলো মেয়েকে কড়া করে কিন্তু তার আগেই তার বড় চাচা সামলে নিলো। তিথি বুঝতে পারলো তার বর মশাই অনেক বড় আর সে ক’দিন পর বুড়ো হয়ে যাবে৷ লাগবে না তার বুড়ো বর সাদা পাকা চুল হলে তো বর মশাই একদম বড় বাবার মত হয়ে যাবে। রাতের খাবারে হাসি,আনন্দ সবটাই ভরপুর আজ হাওয়া বেগমের বাড়িটিতে। চেয়ারম্যান এর ছেলে নিহানকে মরধরের কারণে যে আতঙ্কটুকু হয়েছিলো এখন সেটা ও কেটে গেছে মন থেকে। চেয়ারম্যান সাহেব কোন প্রকার একশন নেন নি আর না কোন প্রকার ঝামেলা সৃষ্টি করেছে। সাগর চৌকশ বাড়িতে এ বিষয়ে কোন আওয়াজ না করলেও মনে মনে ঠিকই সজাগ রইলো। বিশ্বাস নেই ওসব রাজনৈতিক নেতাদের তারা ক্ষমতার দাপটে অন্যায়কেও প্রশ্রয় দিতে জানে। সাগরের ঠিক করা লোকটা নজর রাখে সবসময় সাথী,যুথির বাড়ির বাইরের সময়টুকু। মাহিমকেও বলেছিলো যেন একটু খেয়াল রাখে কোন কিছু বিপদজনক চোখে পড়লেই যেন সাগরকে বলে। রাতের খাওয়ার পর শামসুন্নাহার জানালেন চামেলি কাল জানাবে তাদের মতামত। মাহির বাবার সাথে কথা বলে পরেই জবাব দিতে পারবেন। শামসুন্নাহার যথেষ্ট বুদ্ধিমতি তিনি শ্বাশুড়ির মত আগেই কোন পজিটিভ উত্তরের অপেক্ষা করছেন না। একটা দিক নেগেটিভ আগেই জানা হয়ে গেছে আর সেটা হলো মাহির বয়স। বাড়ির বড়রা সবাই এখনও তেমন আশা রাখছেন না তবে ছোটরা সবাই ধরে নিয়েছে মাহিই হবে এ বাড়ির মেজো বউ। অন্তত দাদুনী যে জোর দিয়ে বলছে তাতে তেমনই মনে হয়।

পড়তে বসে পড়ায় মন নেই মাহিয়ার। আজ ছুটির সময় জুনায়েদ স্যারের সাথে দেখা হয়েছিলো। খুব মিষ্টি করে স্যার জিজ্ঞেস করেছিলো, ” কেমন আছো মাহি?”মাহি সালাম দিয়ে জবাব দিয়ে আবার বলল, ” আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই আমার বিয়ে দাওয়াত করতে চাই। তুমি কি আসবে?” স্যারের এই কথাটায় কি একটু ক্লেশ মিশ্রিত ছিলো! কি আশ্চর্য আজ তার স্যারের কথায় কেমন যেন যন্ত্রণার রেশ চোখে পড়লো। সে শুনেছিলো জুনায়েদ স্যার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে বোনরা বিবাহিত। বাড়িতে ছেলের বউয়ের জন্য নাকি খুব আহাজারি করেন উনার মা কিন্তু এতে মাহির করার কি আছে? স্যারের বাবা এসেছিলেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কয়েক মাস আগেই। মাহির বাবা ফিরিয়ে দিয়েছেন মেয়ের বয়স হয়নি বলে। বয়স ঠিক থাকলেও মাহি স্যারকে কখনও বিয়ে করতো না তার ভাষ্যমতে জুনায়েদ স্যার ক্যাবলা টাইপ মানুষ যা মাহির একদমই পছন্দ নয়৷ তার পছন্দ তার সাদা টিশার্ট ভাইয়া। কিন্তু তবুও আজ স্যারের দিকে তাকিয়ে খারাপ লেগেছে খুব৷ জবাবে সে বলেছে চেষ্টা করবে বিয়েতে যেতে৷ স্যার খুব শিগ্রই কার্ডও পাঠাবে বাড়িতে৷ এই যে জুনায়েদ স্যার, নিপা এরা তাদের ভালোবাসার মানুষটিকে না পেয়ে যেমন কষ্ট পাচ্ছে মাহিও কি সাগরকে না পেলে এমন কষ্ট পাবে? কষ্ট পেয়েও কি মাহি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবে? অসম্ভব! হঠাৎ যেন মাহি নিজের ভেতর থেকেই জবাবটা পেল। সাগরকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করা তার পক্ষে অসম্ভব । সাগরকে বিয়ে না করতে পারলে বিয়েই করবে না কখনো তবুও অন্য কাউকে করা তার পক্ষে সম্ভব নয়৷ আবার মনে প্রশ্ন এলো সাগর নিশ্চয়ই অন্য কাউকে বিয়ে করে নেবে? চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো মাহি। বুকের ভেতর জ্বালা করছে খুব। সাগর কখনও বলেনি সে মাহিকে ভালোবাসে কিংবা পছন্দ করে। সাগরের আজ নয়তো কাল বিয়ে ঠিকই হয়ে যাবে মাহির কি হবে তখন! রাত ক’টা বাজে? মুঠোফোনে সময় দেখে নিলো মাহি৷ দশটা পার হয়েছে। সাগরতো দশটার দিকেই থাকে ছাঁদে একটু কি যাবে?
মাকে একবার দেখে নিলো ডাইনিং এর লাইট নিভিয়ে নিজের ঘরে গেলেন। দরজা লাগিয়েছেন সবে তবে কন্ঠ শোনা যাচ্ছে তার মানে বাবার সাথে কোন কিছু নিয়ে আলোচনা করছেন তাই কথাগুলো অস্পষ্ট শোনা যাচ্ছে । পা টিপে টিপে সামনের জায়গা পেরিয়ে মেইন দরজাটা খুলে নিলো সে। দরজাটা বাহির থেকে আটকে চুপচাপ সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদে উঠে এলো।
আকাশে অর্ধচাঁদ তবুও বেশ আলোকিত চারপাশ।, চাঁদের শুভ্র স্নিগ্ধ আলোয় যে কারো মন ভালো হয়ে যাবার কথা অথচ মাহির এমন পরিবেশে মন আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল। সাগর নেই ছাঁদে আজ। কোথাও কেউ নেই মাহি একা আর সাথে একা তার মনের অজানা ভয় গুলো। সত্যিই কি জুনায়েদ স্যার আর নিপার মত তারও ভবিষ্যৎ হবে এমন? সাগরবিহীন তৃষ্ণার্ত থাকতে হবে সারাজীবন নাকি ওই সাগরের বুকে অন্যকেউ আছড়ে পড়বে ঢেউ হয়ে! ভেতর থেকে কান্নারা দলা পাকিয়ে আসছে মাহির। দম বন্ধ লাগছে কেন? সমুদ্র তো বলেছিলো দাদুনী আর তার পরিবার কথা বলবে তাদের বিয়ে নিয়ে৷ তবে এখনও কেন প্রস্তাব আসেনি? আজ জুনায়েদ স্যারকে দেখার পর থেকেই মনের ভেতর ভয় ঢুকেছে মাহির৷

সংকোচ নিয়েই মাহির কাঁধে হাতটা রাখলো সাগর। খুব ধীর স্বরেই ডাকলো, “মাহি”!

পেছন ফিরেই সাগরকে জাপটে ধরলো মাহি। কান্নারা আর বাঁধ মানলো না। আছড়ে পড়লো চোখ বেয়ে মাহির গালের উপর।

–” আমি পারবো না অন্য কাউকে বিয়ে করতে। আপনাকেও দেবো না অন্য কারো হতে।লাগবে না আপনার ভালোবাসা। আপনাকে আমি জোর করেই করবো বিয়ে। খুন করে ফেলবো অন্য মেয়েকে বিয়ে করলে।” হাউমাউ করে কাঁদছে আর এক নাগাড়ে কত কিছু বলছে মাহি৷ সাগর হতভম্ব হয়ে জড়িয়ে ধরেছে মাহিকে৷ কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে শুধু শুনেছে মাহির বলা কথা গুলো। তারপরই গা কাঁপিয়ে শব্দহীন হাঁসলো সে। তখনও সম্বিত ফেরেনি মাহির সে কান্না চালিয়ে যাচ্ছে। সাগরের হাসির তোড়ে কাঁপুনি টের পেতেই সাগরকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো একটু দুরত্বে।

–” আপনি কি হাসছেন?” ফ্যাচফ্যাচ করে কান্না করতে করতেই প্রশ্ন করলো।

–” কই না’তো আমি তো হাসছি না ” বলেই আবার হাসলো সাগর।

–” আপনি আসলেই একটা বদ লোক। ”

–” হ্যা আর তুমি একটা নির্লজ্জ ” সাগর আবারও হেসে উঠলো। মাহি কিছু বললো না আর। চুপচাপ চাঁদের আলোয় দেখতে লাগলো সাগরকে। আজ গায়ে তার কালো শার্ট , কালো জিন্স বরাবরের মতোই বড় বড় চুলগুলো এলোমেলো৷ ঠোঁটের হাসি স্পষ্টই চোখে পড়ছে৷

–” কথায় কথায় নির্লজ্জ বলেন কেন এত আপনি?”

–” তো কি বলবো এই যে রাত বিরাতে তুমি আমাকে হুটহাট ধরাশায়ী আক্রমণ করো সেটা তো শুধু নির্লজ্জরাই করে। “সাগরের মুখে দুষ্টুমির হাসি লেগেই আছে।

–” তবে আপনিও নির্লজ্জ এতরাতে কাঁধে হাত রাখলেন কেন? ”

–” আচ্ছা একটু আগে কি যেন বলছিলে তুমি? আমাকে বিয়ে,,,” মাহি মুখে চেপে ধরলো সাগরের৷ লজ্জা লাগছে এখন তার একটু আগে কিসব বলে দিলো। কিন্তু যা বলেছে সবটাই মনের কথা সত্যিই সহ্য করতে পারবে না সে।

–” কিছুই বলিনি। ”

–” আমি তো শুনলাম।”

–” ভুল শুনেছেন। ”

–” ঠিক শুনেছি।”

–” নাহ”। বলেই মাহি উল্টো ঘুরলো। ছাঁদ থেকে নেমে যাবে ভাবছিলো সাগর এবার নিজে থেকে মাহির হাত ধরলো।

–” একটু দাঁড়াও।”

মাহি সত্যিই দাঁড়িয়ে গেল সাগরের মুখের দিকে চেয়ে রইলো।

–” তোমার অপেক্ষা শেষ হয়েছে তা কি তুমি জানো না?”

–” কিসের অপেক্ষার কথা বলছেন?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো মাহি৷ সাগর ভেবেছিলো বিয়ের প্রপোজাল দেওয়া হয়েছে মাহি তা জানে৷

–” তোমার আব্বু, আম্মু তোমায় কিছু বলেনি?”

–” কি বলবে? ” মাহি এবার কৌতুহলী হলো কি বলছে সাগর!

–” মা গিয়েছিলেন আজ তোমাদের বাড়ি।”

তমাল কফি মগে চুমুক দিতে দিতে নিপাকে দেখছে খুব মনযোগে। চুপচাপ তমালের কাপড় গুলো গুছিয়ে আলমারিতে রাখছে আর নিজের গুলো বিছানায় রাখছে। কাল সে বাবার বাড়ি যাবে তাই এখনি গুছিয়ে রাখছে। একমনে সে কাপড় রাখছে তো রাখছেই তমাল যে কতক্ষণ ধরে তার দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে একটুও খেয়াল নেই৷ নিপার মনযোগ আকর্ষণ করতে এবার তমাল গলা খাঁকড়ি দিলো৷

–” সাগর ভাইয়ার ছোট ভাই সমুদ্রকে কি একটু বেশিই ভালবাসতে?” তমালের এমন প্রশ্নে নিপার হাতে থাকা কাপড় নিচে পড়ে গেল। একপলক তমালকে দেখে চোখ নামিয়ে রাখলো। ভয় লাগছে তার খুব হাত পায়ে একটু কম্পনও বোধ করছে৷ এটা কিসের ভয়? স্বামীর মুখে ভালোবাসার মানুষটির নাম শুনে ভয় পাচ্ছে! নিপার সকল ভয়কে দূর করে তমাল আবার বলল, ” স্যরি, তোমার মোবাইলটা চেক করেছিলাম তোমায় না জানিয়েই। জানি না স্বামী হয়ে স্ত্রীর পারসোনাল চ্যাট পড়া অন্যায় হয়েছে কিনা? তুমি যখন কফি আনতে গিয়েছিলে আমি ফোনটা নিয়েছিলাম তোমার। বিশ্বাস করো সন্দেহবশত নয় এমনিতেই নিয়েছিলাম আর তখনই তোমার মেসেঞ্জার টোন বাজলো। তোমার কোন ক্লাসমেট এর মেসেজ আমি সেটা চেক করিনি। অথচ আমার চোখে পড়লো নিচের দিকে মাহিয়া নুর একাউন্টের মেসেজ ।

” সমুদ্রকে ভালোবাসি তাতে কি,,, এরপরের আর দেখা যাচ্ছিলো না। তাই কৌতূহলবশত চ্যাট ওপেন করে ফেলেছি৷ ” এতটুকু বলেই তমাল থামলো। নিপা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে আগেই৷ এখন সে মাথানিচু করেই আছে৷ হয়তো লজ্জা পাচ্ছে অথবা কষ্ট । তবুও মুখ খোলা দরকার ভেবে নিপা বলল, ” ভুল বুঝবেন না দয়া করে। আমার কোন রিলেশন ছিলো না কারো সাথে। সমুদ্র আমার ক্লাসমেট ছিলো তাকে ভালো লাগতো একসময় তা ভালোবাসা….” তমাল থামিয়ে দিলো নিপাকে।

–” নিজের বউয়ের মুখে অন্য কাউকে ভালোবাসার কথাটা শুনতে ভালো লাগবে না। তাই এ কথার সমাপ্তি এখানেই হোক আর তোমায় অপরাধীর মত মাথা নিচু করেও থাকার দরকার নেই। আমি সম্পূর্ণ কনভারসেশনই পড়েছি৷ ভালোলাগা, ভালোবাসা অন্যায় কোন বিষয় নয় আর তোমার তো সমুদ্রের সাথে আলাদা সম্পর্কই ছিলো না। কিন্তু হ্যা আমি অবশ্যই চাইবো তোমার মনে ভালোবাসা বলতে আমার নাম আসুক। বিয়ের আগে তোমার জীবনে আমি ছিলাম না তাই সে বিষয়ে আমি কোন প্রকার কথাও বলবো না পরবর্তীতে। তোমার বর্তমান আমি আর ভবিষ্যতেও আমি থাকতে চাই৷” তমালের কথা বলার ধরণ একটু রুক্ষ তবুও নিপার মনের ভয়টুকু আর নেই। সে নিজেও চাইছে তমালকে মন থেকে আপন করে নিতে। সমুদ্র তার প্রথম প্রেম হলেও তমালই যেন হয় তার দ্বিতীয় এবং শেষ ভালোবাসা আর গন্তব্য। সমুদ্রের কথা হওয়ায় নিপার মনে পড়লো মাহির বলা আজকের কথা। সাগর তার স্বপ্নকুমারীকে খুঁজছে । “স্বপ্নকুমারী ” মাহি জেনে শুনেও সাগরকে জানায়নি কোথায় তার স্বপ্নকুমারী। মাহি লুকিয়ে গেছে সত্যিটা৷ কেন?

রাতে দরজা বন্ধ করে বেশ কিছুসময় আলাপ আলোচনা হয়েছে মনজুর আর চামেলির। আলোচনার বিষয় ছিলো মাহির বিয়ে নিয়ে। মাহির জন্য প্রস্তাব এসেছে সাগরদের বাড়ি থেকে। মনজুর নিজেও সাগরকে খুব পছন্দ করেন৷ চামেলি তো চোখ বন্ধ করে রাজী হয়ে আছেন এখানে মেয়ে বিয়ে দিতে৷ কিন্তু মনজুর রাজী নন। সাগরের পরিবার সত্যিই খুব সুন্দর এক পরিবার ছিলো অনেক বছর। অন্তত মনজুর নিজের বাল্যকাল থেকে দু’বছর আগে পর্যন্ত এমন যৌথ পরিবার আর দু’টো দেখেন নি। কিন্তু এখন? এইতো বছরখানেক আগেই শুরু হলো পরিবারের ভাঙন৷ সাগরের বড় ভাই ভাবী আলাদা হয়ে গেল৷ সাগরের ছোট চাচা ব্যবসাসহ আলাদা হলো। তারউপর এত বড় পরিবারে মাহি মানিয়ে নিতে পারবে না। সে ছোট থেকে তাদের ছোট্ট পরিবারটিতে বড় হয়েছে৷ পরিবারের প্রতিকূলতা বিবেচনা করে সংসার করা মাহির পক্ষে সম্ভব হবে না। আর সবচেয়ে বড় কথা মনজুর মেয়েকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবেন না। নইলে ডক্টর আয়ান রশীদ তো এখনও অপেক্ষা করে আছে। মাহির আঠারো হয়নি এখনও। কলেজ জীবন শেষ হয়নি। তাই এখন বিয়ে নিয়ে কথা বলার কোন মানেই হয় না। মনজুর সাহেব নিজে সকালে সাগরের বাবার সাথে দেখা হতেই নিজ থেকে কথা বলেন। খুবই সাবলীল বাংলায় ক্ষমা চেয়ে বিয়ের প্রস্তাবটা ফিরিয়েছেন৷ যেন কেউ কারো প্রতি কখনো ক্ষোভ বা অপমানবোধ না রাখে। শহিদুল ইসলামও হাসি মুখেই বলেছেন কোন প্রকার রাগ থাকবে না৷ মনজুর সাহেবের কথায় ভুল নেই আর না সাগরকে মাহির জন্য অবিবাহিত রেখে দেবেন৷ অন্য কোথাও দেখবেন সমস্যা নেই৷ মনজুর আর চামেলি অবশ্য মনে মনে চাইছিলো সাগরের পরিবার থেকে একটা বার অন্তত বলুক বিয়েটা বছর দু’এক পরে হোক। তবে তারা না করতেন না৷ তারা এমন কিছু বলেনি আর না মনজুর মেয়ের বাবা হয়ে আগ বাড়িয়ে সময় চেয়ে নিতে পারছেন৷ সাগরের বিয়ের বয়স আগেই হয়েছে তাই তারা কেন বসে থাকবেন মাহির জন্য এই ভেবে চামেলি আর কিছু বলতে পারেন নি৷ কিন্তু মনে প্রাণে তিনি কুব করে চাইছিলেন মাহির বিয়েটা এখানে হোক চোখের সামনে এত ভালো একজন পাত্রের সাথে। ভাগ্যের উপর কারো হাত নেই তাই মাহি -সাগরের এক না হওয়া উপরওয়ালারই ইচ্ছা ধরে নিয়েছে চামেলি।

চলবে

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here