শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক #পর্বঃ০২,০৩

0
1423

#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ০২,০৩
#Arshi_Ayat
০২

বহুকষ্টে চোখের পানি লুকিয়ে ফেললো স্বর্ণ।সবার নাস্তা খাওয়া শেষ হবার পর সবকিছু গুছিয়ে স্বর্ণ বের হতে যাবে সে সময়ই সিমা বলল,’কোথায় যাচ্ছো?’
‘এইতো ভাবি,একটু কাজ ছিলো।’
‘এখন কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।তোমার ভাইয়া বলেছে তোমাকে নিয়ে পার্লারে যেতে।’
‘কিন্তু ভাবি আমার জরুরি কাজ আছে ভার্সিটিতে।’
‘কালকে যেও আজকে না।’
স্বর্ণ আর কথা বাড়ালো না।চুপচাপ সোফায় বসে রইলো।কিছুক্ষণ পর সিমা সেজেগুজে এসে বলল,’চলো।’
স্বর্ণ বিনাবাক্যে সিমাকে অনুসরণ করলো।

পার্লার থেকে বেরিয়ে স্বর্ণকে বাসায় যেতে বলে সিমা চলে গেলো ছেলের স্কুলের দিকে।বেলা প্রায় ১.০০ টা বাজায় স্বর্ণ আর ক্লিনিকে গেলো না।ভাবলো কাল গিয়ে গর্ভপাত করবে।এখন বাসায় গিয়ে রান্না করাই শ্রেয় তা নাহলে ভাবি তুলকালাম করে ফেলবে।বাসায় ফিরে রান্না ঘরের দরজায় গিয়ে দেখলো নিহারিকা খানম রান্না করছেন।মা’কে দেখে সামনে যাবে কি না তাই ভাবছে স্বর্ণ।দেখে যদি রেগে যায়!স্বর্ণ এসব ভাবতে ভাবতেই নিহারিকা খানম শান্ত কন্ঠে বললেন,’ভাতের মাড়’টা ফেলে দে।’
স্বর্ণ মায়ের আদেশ পেয়ে তাড়াতাড়ি চলে এলো মাড় ফেলতে।উত্তেজনায় গরম পাতিলের ছ্যাঁকা লাগছে হাতে তবুও সেদিকে ভ্রূক্ষেপও করলো না।নিহারিকা খানম আলুভর্তা স্বর্ণের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,’দেখ লবণ হয়েছে কি না!’
স্বর্ণ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে।সব জানার পর মা যে কথা বলবে এটা বিশ্বাসই করতে পারছে না স্বর্ণ।কোনোমতে ভর্তায় লবণ চেখে নিয়ে মাথা নাড়ালো।নিহারিকা খনম এবার ধীর কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,’কি সিদ্ধান্ত নিলি?কি করবি বাচ্চাটা?’
‘এবোরশন করবো।’
নিহারিকা খানম হঠাৎই চড় মারলেন স্বর্ণের গালে।স্বর্ণ গালে হাত দিয়ে কান্না চোখে মায়ের দিকে তাকালো।নিহারিকা খানম আগুন কন্ঠে মেয়েকে বললেন,’নষ্টামি করার সময় মনে পড়ে নি?এখন কেন এই নিষ্পাপ বাচ্চাটা কে মারবি?তোদের অপরাধের ফল ও কেন ভুগবে?ওর কি দোষ?দোষ তোর আর ওই ছেলের।ওই ছেলের ফোন নাম্বার দে।কথা বলবো আমি।’
স্বর্ণ ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।ভাঙা ভাঙা স্বরে বলল,’মা ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।ও এই বাচ্চাকে অস্বীকার করছে।আমাদের নিতে চাচ্ছে না।’
‘ওর বাসা চিনিস?ওর বাবা মায়ের সাথে কথা বলবো।এভাবে একটা মেয়ের সর্বনাশ করে দায়িত্ব এড়াবে পারবে না।’
‘না মা আমি জোর করে ওর জীবনে থাকতে চাই না।’
নিহারিকা খানম কঠিন চোখে চেয়ে বললেন,’তাহলে কি চাস?’
‘বাচ্চাটা এবোরশন করে ফেলবো।’
‘লজ্জা লাগে না তোর?মা নামের কলঙ্ক তুই।তুই যদি বাচ্চাটা মেরে ফেলিস তাহলে আল্লাহ যেন কখনো তোকে সন্তানের মুখ না দেখায়।’
স্বর্ণ আর্তনাদ করে উঠে বলল,’মা!’
নিহারিকা খানম নিজের রাগকে শান্ত করতে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,’স্কলারশিপের আবেদন কর।চলে যা দেশ ছেড়ে।নিজের মত বাচঁ।বাচ্চাটাকেও বাঁচা।ও কোনো দোষ করে নি স্বর্ণ।দোষ করেছিস তুই আর তোর প্রেমিক।এবার একটু নিজেকে শুধরে নে।’
‘কিন্তু মা…’
‘তোর ভাই যে ছেলেটার সাথে তোর বিয়ে দিতে চাচ্ছে ওই ছেলেটা ভালো না।আমি মা হয়ে তোর আর সর্বনাশ দেখতে পারবো না।তুই চলে যা স্বর্ণ।কিন্তু মনে রাখিস আমি তোকে কখনো মাফ করবো না।’
কথাগুলো বলেই রান্নাঘর ছেড়ে চলে গেলেন নিহারিকা খানম।স্বর্ণ নিজের চোখের পানি মুছে বাকি রান্নাটুকু শেষ করলো।এরমধ্যেই সিমা ছেলেকে নিয়ে চলে এলো,আজ ভাইও তাড়াতাড়ি আসবে তার বন্ধুকে নিয়ে।সিমা বাসায় এসেই বলল,’খেয়ে,তৈরি হতে শুরু করে দাও।’
‘ওরা একটু পরই আসবে।’
‘আচ্ছা ভাবি।’
স্বর্ণ কোনোরকম খেয়ে ঘরে চলে গেলো।একটু পর নিহারিকা খানম এসে ঘরের দরজাটা আঁটকে দিয়ে ওর সামনাসামনি এসে বলল,’তুই ছেলের কাছে সময় চাইবি বিয়ের জন্য।পিড়াপিড়ি করলে এঙ্গেজমেন্ট করে রাখ কিন্তু বিয়ে করিস না।’
স্বর্ণ মায়ের কথায় প্রাণ ফিরে পেলো।মা যে এভাবে সাপোর্ট করবে ভাবতে পারে নি।মায়ের মুখের দিকে তাকাতেই বুক ফেটে যাচ্ছে স্বর্ণের কি করে মা’কে এতবড় কষ্ট দিলো সে?কেন দিলো?কেন প্রতারকটাকে ভালোবাসলো?স্বর্ণের কান্না চলে এলো।নিহারিকা খানম ওকে শাড়ি পরাতে পরাতে বললেন,’কাঁদিস না।শক্ত হ,আরও অনেক বিপদ আসবে।সেগুলো মোকাবিলার করার মত মানসিক ভাবে শক্ত হতে হবে।’
তিনি থেমে আবার বললেন,’আমি আমার ভাগের জমিটুকু বেঁচে দিয়েছিলাম।তোর বিয়তে খরচ করবো বলে কিন্তু এখন এই টাকাটা তোর বিদেশ যাওয়ার জন্য দিবো।’
‘কিন্তু মা তুমি?’
‘আমার চিন্তা করার দরকার নেই।আমার চিন্তা করলে তুই কাজটা করতি না।’
শাড়ি পরানো শেষে নিহারিকা খানম চলে গেলেন।স্বর্ণের বুক ভেঙে যাচ্ছে।মায়েরা এতো মায়াবতী হয় কেন?কই তার পেটেও তো একটা সন্তান বড় হচ্ছে ওরজন্য তো মায়া হচ্ছে না স্বর্ণের।তাহলে কি সে স্বার্থপর মা!নাহ!মায়েরা কখনো স্বার্থপর হয় না।স্বর্ণ নিজের পেটে হাত রাখলো।এখানেই সুন্দর তুলার মত একটা নিষ্পাপ বাবু বড় হচ্ছে,যে তাকে মা মা বলে ডাকবে।হঠাৎ ই গভীর মমতা অনুভব করলো স্বর্ণ।মনে হলো এই বাচ্চাটাকে বাঁচাতেই হবে।পেটে হাত রেখেই মনে মনে বলল,’মা’কে মাফ করে দিস বাবু।তোকে আমি বাঁচাতে চাই নি কিন্তু হঠাৎই মনে হলো তুই নাহলে আমি শূন্য হয়ে যাবো,তোকে ঘিরে আমার সুখ।আমি তোকে বাঁচাবো ময়না।’
স্বর্ণ চোখের পানি মুছে হালকা সাজগোছ করলো।একটু পর সিমা আসলো।ওকে দেখে হালকা হেসে বলল,’বাহ!তোমাকে তো সুন্দর লাগছে ভিষণ।আজ পছন্দ করেই ফেলবে সুমন ভাই।চলো,ওরা চলে এসেছে।’
স্বর্ণ মাথা নেড়ে সিমার সাথে চলল।ড্রইং রুমে স্বর্ণের ভাইয়ের সাথে একটা ছেলে বসে কথা বলছে।এটাই সুমন।এর আগে একবার দেখেছিলো স্বর্ণ লোকটার আগের বিয়েতে।সিমা সামনাসামনি ওকে বসালো।সুমন চওড়া হেসে সালাম দিলো।স্বর্ণ নিচু স্বরে সালামের জবাব দিলো।এরপর কিছুক্ষণ কথা বার্তা চলল।সুমন একপর্যায়ে স্বর্ণের ভাইকে বলল,’আশরাফ তোর বোনের সাথে আলাদা একটু কথা বলবো।’
‘হ্যাঁ সেটা বলার কি আছে।যা বল।’
আশরাফ বোনের দিকে ইশারা করলো।স্বর্ণ সুমনকে সাথে করে ছাঁদে উঠলো।সুমন ওর দিকে চেয়ে চওড়া হেসে বলল,’তুমি আগের থেকে আরও সুন্দর হয়ে গেছো।সেবার আমার বিয়তে অতো সুন্দর লাগে নি।’
স্বর্ণ’র মোটেও ভালো লাগছে না লোকটাকে কিন্তু কিছু বলতেও পারছে না।সুমন আবারও বলল,’আগে প্রেম করেছো?’
স্বর্ণ ওর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো।সুমন আবারও জিজ্ঞেস করলো,’কয়টা?’
‘একটা।’
‘মাত্র আমার বিয়ের আগে অনেকগুলো প্রেম করেছি।বিয়ের পরও তো জানো কি হয়েছে এক কলিগের মেয়েকে পছন্দ হয়ে গিয়েছিলো।তারপর ওর…’
কথা বলতে বলতেই স্বর্ণর দিকে চোখ পড়তেই সুমনের হুশ আসলো।বুঝতে পারলো আসলে এ কথাটা বলা উচিত হয় নি।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য হালকা কেশে আবার বলল,’এখন বলো,বিয়ে কবে করতে চাও?’
‘আমার সময় প্রয়োজন।’
‘কেনো?’
‘আমি এম.বি এ র পর বিয়েটা করতে চাই।’
‘বিয়ের পরও তো এম.বি এ করা যাবে।’
‘কিন্তু আমি বিয়ের আগে করতে চাই।বিয়ের পর শুধ সংসার করবো।’
সুমন স্বর্ণের কথায় হেসে বলল,’ওও আচ্ছা ঠিকাছে তাহলে এম.বি এর পরই বিয়ে করবো আমরা কিন্তু এঙ্গেজমেন্ট তো করে রাখতেই পারি তাই না?নাকি এটাও এম.বি এর পর।’বলেই খিলখিলিয়ে বিদঘুটে হাসলো সুমন।
‘এঙ্গেজমেন্ট করে রাখা যায়।’স্বর্ণ থমথমে গলায় বলল।
‘আচ্ছা বেশ।সামনের সপ্তাহে আমার পরিবারসহ এসে এঙ্গেজমেন্ট করে যাবো।আজকে তবে আসি।টেইক কেয়ার ডার্লিং।’
এটা বলেই সুমন হাসতে হাসতে চলে গেলো নিচে।স্বর্ণ রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখলো।

চলবে….

#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ০৩
#Arshi_Ayat

সুমন যাওয়ার পর স্বর্ণ ছাঁদ থেকে নামলো।ও নামতেই সিমা বলল,’কি গো!সুমন ভাই তো তোমাকে দেখে খুব পছন্দ করেছে।বলেছে আগামী সপ্তাহে এসে এঙ্গেজমেন্ট করে যাবে।’
স্বর্ণ দায়সারা কন্ঠে বলল,’ও আচ্ছা।’
‘হ্যাঁ আর এই পাঁচ হাজার টাকা তোমাকে দিয়েছিলো।আমার কাছে রাখছি।আয়োজন করতেও তো টাকা লাগে নাকি!’
স্বর্ণ মাথা নেড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।মনটা বিষিয়ে আছে।শাড়ি,গহনা চেন্জ করে মেক-আপ ধুয়ে চুলগুলো হাত খোঁপা করে ফোনটা হাতে নিলো জেরিনকে কল করার উদ্দেশ্যে।কল কেটে যাওয়ার পূর্বেই জেরিন রিসিভ করলো।স্বর্ণই প্রথমে জিজ্ঞেস করলো,’কেমন আছিস?’
‘এইতো ভালো।তুই?’
‘ভালো।আচ্ছা শোন স্কলারশিপের জন্য আবেদনের ডেট কি শেষ?’
‘না।কাল লাস্ট ডেট।কেনো বল তো?’
‘আমি আবেদন করবো।’
‘উচ্ছ্বাস ভাইয়া জানে?’
‘ওকে জানতে হবে কেন?ওর সাথে আমার আর কোনো লেনাদেনা নেই।’মৃদু উষ্ণ কন্ঠে বলল স্বর্ণ।
‘মানে?কি হয়েছে?’
‘ব্রেকাপ।’
‘আরে এমন তো কতোই হয়।দেখিস ঠিক হয়ে যাবে আবার।’
‘না আর কিছু ঠিক হওয়ার নেই।এসব বিষয়ে আর প্রশ্ন করিস না।এখন বল কাল ভার্সিটিতে আসবি?’
‘হ্যাঁ আসবো।’
‘আচ্ছা দেখা করিস।’
‘আচ্ছা।’
স্বর্ণ ফোন রেখে দরজা বন্ধ করে ভার্সিটির কাগজপত্র,সার্টিফিকেট সবকিছু একত্রে করলো।কাল প্রয়োজন হবে।সবকিছু এমনভাবে করতে হবে যেনো যাওয়ার আগেরদিনও কেউ জানতে না পারে।

স্বর্ণ মাগরীবের নামাজ পড়ে উঠতেই সিমা এসে বলল,’সুমন ভাই তোমাকে ফোন দিচ্ছে।রিসিভ করছো না কেনো?’
‘সাইলেন্ট ছিলো ভাবী।’
‘ফোন রিসিভ করো তাড়াতাড়ি।’সিমা কঠিন স্বরে বলে চলে গেলো।স্বর্ণ অনিচ্ছায় টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা তুলে দেখলো আননোন নাম্বার থেকে পাঁচবার মিসডকল এসেছে এবং ইতিমধ্যে আবারও এসেছে।স্বর্ণ ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সুমন বলল,’ফোন রিসিভ করছিলে না কেনো?’
‘সরি!সাইলেন্ট ছিলো আর নামাজ পড়ছিলাম।’
‘ফোন আর সাইলেন্ট রেখো না ডার্লিং কারণ এখন থেকে আমি তোমাকে যখনই মসি করবো তখনই কল করবো।’
‘আচ্ছা।’স্বর্ণ নিরস কন্ঠে জবাব দিলো।
‘কাল দেখ করবে?’
‘না,কাল তো ব্যস্ত আছি।ক্লাস আছে ভার্সিটিতে আর দুপুরে টিউশনি আছে।’
‘টিউশনি গুলো ছেড়ে দাও।কেনো এত কষ্ট করতে হবে আমি তো আছি।’
স্বর্ণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল,’যার থাকার কথা সেই রইলো না,বাকি সবাইকে দিয়ে কি করবো আমি।কাউকে লাগবে না আমার।এখন থেকে নিজের জন্য আমি নিজেই যথেষ্ট।’
কথাগুলো মনে মনে বললেও মুখে বলল,’না,মাসের মাঝখানে তো এখন ছাড়া যাবে না।গার্ডিয়ান’রা ছাড়তে দিবে না।মাস শেষে ছেড়ে দেবো।’
সুমন কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলল,’এত ব্যস্ত থাকলে তোমার সাথে সময় কাটাবো কখন?ব্যস্ততা কি আমার নেই?আমিও তো ব্যস্ততা ফেলে তোমার সাথে দেখা করতে চাইছি তুমি কেনো পারবে না?’
‘সরি!কি আর করার চাপ যাচ্ছে ভিষণ।বিয়ের পর আপনাকেই সময় দেবো।’
‘বিয়ের পর দিয়ে কি হবে?বিয়ের আগেই দিতে হবে।তোমাদের মেয়েদের যতসব বাহানা।কাল সন্ধ্যায় দেখা করবে?’
‘সন্ধ্যায় তো বের হতে পারবো না।আপনি চাইলে বাসায় আসতে পারেন।’
‘উফ!তুমি এতো ব্যাকডেটেড কেনো?বাসায় এত্ত মানুষের সামনে আমরা কিভাবে সময় কাটাবো?আমি কিছু জানি না তুমি কাল সন্ধ্যায় দেখা করবেই আমার সাথে।’
‘কিন্তু ভাইয়া….’স্বর্ণর কথা থামিয়ে সুমন বলল,’আশরাফ কিছু বলবে না।আমি ওর সাথে কথা বলে নিবো।ওকে,বাই।’
স্বর্ণ’র আর কোনো কথা না শুনেই ফোন রেখে দিলো সুমন।স্বর্ণ ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে চোখবুঁজে রইলো বালিশে।হঠাৎই কারো হাতের স্পর্শ পাওয়ায় চোখ খুললো স্বর্ণ।নিহারিকা খনম মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে বললেন,’স্কলারশিপের আবেদন করবি কবে?’
‘লাস্ট ডেট কাল।কালই করবো।’
‘কাগজপত্র সব ঠিকঠাক আছে?’
‘হ্যাঁ সব ঠিক করে রেখেছি।’
‘আচ্ছা,খুব সাবধানে।’
স্বর্ণ মাথা দোলালো।মা’কে পেয়ে চোখের পানিগুলো বাঁধ মানছে না।টইটুম্বুর করছে অক্ষিকোটরে।যেকোনো সময়ে ঢল নামবে।নিহারিকা খানম উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললেন,’কি হয়েছে তোর?’
‘মা,এত কষ্ট হচ্ছে কেনো আমার?’
নিহারিকা খানম মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,’ধৈর্য ধর মা।এখন তোর যেটা দরকার সেটা হলো প্রচুর ধৈর্য।দাঁতে দাঁত কামড়ে থাকে।সময় তোরও ফিরবে,বিশ্বাস রাখ।’
স্বর্ণ চোখের পানি মুছে দৃঢ় কন্ঠে বলল,’মা তোমার মেয়ে পারবেই।’
‘আমি জানি।’
নিহারিকা খানম মেয়ের সাথে কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলেন।মা যাওয়ার পর স্বর্ণ রান্নাঘরে গেলো রাতের খাবারের আয়োজন করতে।আজ ভাইয়া,ভাবি আর আজমান বাসায় খাবে না।ওদের দাওয়াত আছে কলিগের বিয়েতে।তাই শুধু মায়ের জন্য আর নিজের জন্য রাঁধবে।স্বর্ণ অল্প করে খিচুড়ি বসালো।মরিচ আর শুটকি ভর্তা আর সাথে বড়ইয়ের আচার।রান্না শেষ করে মায়ের রুমে গেলো।এশার নামাজ পড়ছে নিহারিকা খানম।নামাজ পড়তে দেখে স্বর্ণ আর ডাকলো না।ডাইনিং এ খাবার সাজিয়ে আরেকটু পর গিয়ে মা’কে ডেকে বলল,’মা,খাবে এসো।’
‘কি করেছিস আজ?’
‘খিচুড়ি খেতে মন চাচ্ছিলো তাই খিচুড়ি,মরিচ,শুটকি ভর্তা আর আচার।’
নিহারিকা খানম হালকা হেসে বললেন,’চল খেতে খেতে কোনো মুভি দেখি।অনেকদিন হয় কোনো মুভি দেখি না।’
‘আসো।’
স্বর্ণ আর নিহারিকা খানম খেতে খেতে টিভি তে শাহরুখ খানের ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জাইয়েঙ্গে’ দেখতে লাগলো।

খাওয়া শেষে সবকিছু গুছিয়ে আসতেই সিমা ফোন দিয়ে বলল ওরা আজ আসবে না।কাল সকালে আসবে।সিমার সাথে কথা বলে স্বর্ণ মায়ের ঘরে চলে গেলো আজ মায়ের সাথে ঘুমাবে।নিহারিকা বেগম বিছানা তৈরি করছিলেন ঘুমানোর জন্য।স্বর্ণকে দেখে বললেন,’তুই জেগে থাকিস না।ঘুমিয়ে যা।ওরা আসলে আমি খুলবো।’
‘ওরা আজ আসবে না,মা।’
‘ফোন করেছিলো?’
‘হ্যাঁ।ভাবী ফোন করে বলেছিলো।’
‘আচ্ছা তাহলে যা শুয়ে পড়।’
‘মা,আমি আজ তোমার কাছে ঘুমাই।’
নিহারিকা খানম মেয়ের দিকে তাকিয়ে কোমলস্বরে বললেন,’চলে আয়।’
স্বর্ণ খুশি মনে মায়ের সাথে শুয়ে পড়লো।মা’কে জড়িয়ে ধরে রাখলো।নিহারিকা খানম দোয়া-দরুদ পড়ে মাথায় ফু দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন।স্বর্ণ মায়ের স্নেহের পরশে সহজেই ঘুমিয়ে পড়লো।নিহারিকা খানম মেয়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,’হে আল্লাহ আমার মেয়েটাকে তুমি মাফ করে।ওর সহায় হও,ওকে ধৈর্য দাও,অনেক ধৈর্য দাও।ও যেনো ভেঙে না পড়ে।’
নিহারিকা খানম স্বর্ণের মাথায় চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখলেন।

সকালে মা,মেয়ে মিলে নাস্তা বানিয়ে একসাথে নাস্তা করলো।নাস্তা শেষে নিহারিকা খানম বললেন,’তুই গিয়ে স্কলারশিপে আবেদনটা সেরে আয়।আমি এদিকটা সামলে নিচ্ছি।’
‘আচ্ছা,মা।’
স্বর্ণ কাগজপত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।ক্যাম্পাসে হাঁটতে হাঁটতেই খেয়াল করলো অদুরেই উচ্ছ্বাস আর ওর বন্ধু বান্ধব মিলে আড্ডা দিচ্ছে।স্বর্ণ নিজেকে সামলে নিলো,ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ করলো নিজেকে।সেদিকে আর তাকালোও না।জেরিনের সাথে দেখা করে আবেদনের কাজ সম্পন্ন করলো।তারপর ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার সময় আবারও উচ্ছ্বাসকে দেখলো।এখন একটা মেয়ের সাথে।এই মেয়েটা বেশ জুনিয়র।এবার অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে।স্বর্ণ চেনে,উচ্ছ্বাসের নাকি পরিচিত।আজ সেই মেয়ের সাথে ওকে দেখে স্বর্ণের ভেতরটা কেমন জ্বলছে।ঘৃণার দৃষ্টিতে চোখজোড়া ফিরিয়ে নিয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলো।নিজেকে স্বাভাবিক করে টিউশনিতে গেলো।সুমন ফোন করেছে দু’বার ইচ্ছে করেই রিসিভ করে নি স্বর্ণ।সুমন এবার টেক্সট করলো,’পিক আপ দ্য ফোন।’
স্বর্ণ দেখেও ফেলে রাখলো।ভালে লাগছে না কিছুই।পৃথিবীতে ভালোবাসা বলতে কিছু নেই।সব মোহ,মোহ কেটে গেলে সব শেষ।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here