শালিক_পাখির_অভিমান #পব_১৪,১৫

0
434

#শালিক_পাখির_অভিমান
#পব_১৪,১৫
#অধির_রায়
১৪

বেনারসি শাড়ি পড়ে বসে আছি৷ সোনার গহনা দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছেন আমাকে৷ এতো ভারী সোনার গহনা আমার কাছে অসহ্য লাগছে৷ আমার চোখ থেকে অনবরত অশ্রুর ধারা গড়িয়ে পড়ছে৷ নেই কোন আয়োজন। শুনতে পেলাম কাজী সাহেব চলে আসছে৷ মালী কাকার ফোন নিয়ে একের পর এক ফোন করে যাচ্ছি ইহান ভাইয়াকে। ভাইয়া এখনও ফোন তুলছে না৷ ভাইয়া বলেছে দুপুর বারোটার মাঝে চলে আসবে৷ দূরন্ত দুপুরের একটা ছুঁই ছুঁই। ইহান ভাইয়া কি আসবে না? বুকের মাঝে তীব্র ব্যথা হচ্ছে৷ ধম বন্ধ হয়ে আসছে৷ শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। পারব না আমি কিছুতেই এ বিয়ে করতে৷ আফসানা চৌধুরী রুমে কখন এসেছেন জানা নেই। চোখের জল মুছে বলল,

“কান্না করো না৷ মেয়েরা কখনও স্বামী ছাড়া একা এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকতে পারেনা৷ কি অদ্ভুত নিয়ম বানিয়েছে? ডাইনিং রুমে সবাই বসে আছে। তারা চাচ্ছে তাড়াতাড়ি বিয়ে পড়াতে৷”

বাল্যবিবাহ নিয়ে পুলিশকে ফোন দিয়ে জানানো হয়েছে৷ তারাও তো আসল না৷ টাকা দিয়ে কি পুলিশ কিনে নিয়েছে? আজ গরিবের পাশে কেউ কি দাঁড়াবে না? আমার বিয়ে হলে আমি কিভাবে ইমন ভাইয়ার মুখোশ টে’নে হি’জ’ড়ে খুলব? যার জন্য আমার জীবনে ভ’য়া’ব’হ সময় যাচ্ছে৷ তাকে ছেড়ে দিলে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন না৷ আল্লাহ সকল ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করেতে বলেছেন৷ সকল পরিস্থিতিতে আমাকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে৷ আমি কিছুতেই ধৈর্যহারা হবো না৷ আফসানা চৌধুরী গম্ভীর গলায় পুনরায় বলল,

“কি হলো শালিক! এখনও সেই একইভাবে বসে আছো৷ সবাই অপেক্ষা করছে তোমার জন্য৷ অবাধ্য হওয়ার কোন পথ নেই৷ আমরা কথা দিয়ে ফেলেছি৷”

আফসানা চৌধুরীর হাত ধরে ভেজা গলায় বললাম,

“ম্যাডাম আমার মা বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। আমার শুভ কাজে তাদের কাউকে পাশে পেলাম না৷ আমার মতো অপয়া, হতভাগ্য সম্পুর্ন মেয়ে পৃথিবীর দ্বিতীয় কেউ নেই৷”

আফসানা চৌধুরী আলতো করে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার কন্ঠে বলল,

“জন্ম, মৃ’ত্যু, বিয়ে তিন আল্লাহ হাতে৷ সেখানে আমাদের কোন হাত নেই৷ আল্লাহ তোমার মা বাবাকে অনেক ভালোবাসাতেন। সেজন্য তিনি তাদের তাড়াতাড়ি নিজের কাছে নিয়ে গেছেন৷”

এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে শান্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। ভেজা আহত কন্ঠে বললাম,

“ম্যাডাম আমি দুই রাকাত সালাত আদায় করতে চাই ৷ আমার মা বাবার কাছে দোয়া চাবো৷ আমাকে দুই রাকাত সালাত আদায় করার সময় টুকু দেন৷”

আফসানা চৌধুরী মুচকি হেঁসে জবান দেন,

“তুমি সালাত আদায় করে চলে আসো। শুভ কাজের আগে সালাত আদায় করা অতি জরুরি। যার সাথে তোমার বিয়ে হবে তাকেও আমি বলি সালাত আদায় করতে।”

আফসানা চৌধুরী চলে গেলেন৷ সবাই আমাকে নিরাশা করলেও মহান আল্লাহ আমাকে নিরাশা করবেন না৷ আমি এই বিয়ে আটকানোর সমস্ত দায়িত্ব আল্লাহ হাতে ছেড়ে দিলাম৷ সালাতে বসে আল্লাহ কাছে অঝোরে কান্না করতে করতে ভেজা গলায়,

“হ্যাঁ আল্লাহ! আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না৷ আমার স্বপ্ন পূরণে সহায় হোক৷ আপনার ভরসায় আমি এতদূর এসেছি৷ মাঝপথে আমার স্বপ্ন ভেঙে দিবেন না। আমি আজ নিজ থেকে বিয়ে ভেঙে দিব৷ আমি আর উপেক্ষা করতে পারব না কারোর জন্য৷”

মুনাজাত শেষ করে পিছনে ফিরে ইহান ভাইয়াকে দেখতে পেলাম৷ ঘেমে একাকার হয়ে গেছে৷ ফর্সা দেহ লালচে বর্ণ ধারণ করেছে৷ সাদা শার্ট ঘেমে দেহের সাথে মিশে আছে৷ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি উনার দিকে৷ আমার কাঁধে হাত রেখে বলল,

“শালিক তোমাকে কোন চিন্তা করতে হবে না৷ আমি একা আসিনি৷ আমার সাথে অনেক পুলিশ এসেছে৷ এখন যা করার তোমাকেই করতে হবে৷ আমি তোমার পিছন পিছন আসতেছি৷”

সাহস জুগিয়ে রুম থেকে বের হলাম৷ আমাকে মাঝ বয়সী একজন লোকের সাথে বসিয়ে দেওয়া হলো৷ তার মানে এই লোকের সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে৷ এর আগে কখনও উনাকে দেখিনি৷ উনাকে দেখে আমার বাবার বয়সী লাগছে৷ কাজি সাহেব বিয়ের কাজ শুরু করার আগে আমি বললাম,

“আমি মাঝবয়সী ব্যক্তিকে বিয়ে করতে পারব না৷ আপনার লজ্জা করে না মেয়ের বয়সী অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে আসছেন৷”

আমার কথায় ইমন ভাইয়ার চোখ লাল হয়ে যায়৷ হুংকার দিয়ে বলল,

“তোকে এ বিয়ে করতেই হবে৷ তোর জন্য আমি যাকে ঠিক করেছি তাকেই বিয়ে করতে হবে৷ আমার কথার অমান্য কিছুতেই হতে দিব না৷”

ইমন ভাইয়ার রিয়েক্ট দেখে বুঝতে পারলাম সবকিছু। ইমন ভাইয়া আমাকে নিয়ে খেলতে চান৷ আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লাম৷ গম্ভীর কন্ঠে,

“আমার জীবন নিয়ে খেলা করার দায়িত্ব আপনার নেই৷” মাঝবয়সী লোকটার কলার ধরে উঁচু স্বরে বললাম,

“এই মিয়া কতো টাকা যৌতুকের বিনিময়ে বিয়ে করতে আসছেন৷ পাঁচ লক্ষ টাকার এক টাকা কম হলে বিয়ে হবে না৷ জেলে বসে তুই টাকা হিসাব কর৷ যৌতুকের অপরাধে তোকে জেলে যেতে হবে৷ আমি তোদের সব কথা শুনে নিয়েছি৷”

ইমন ভাইয়া তেড়ে আমার কাছে আসতেই ইহান ভাইয়া পুলিশ নিয়ে ভিতরে আসেন৷ চিৎকার করে বলল,

“ভাইয়া সাবধান। শালিকের গায়ে হাত তুললে তোমার হাত ভেঙে দিব৷ যৌতুকের অপরাধে ছেলে আর ছেলের মাকে গ্রেফতার করেন৷”

ছেলের মা দৌড়ে পুলিশের পা ধারে বলল,

“স্যার আমাদের ক্ষমা করে দেন৷ আমরা সব টাকা ফিরিয়ে দিব৷ এক টাকাও যৌতুক নিব না৷ আমরা যৌতুকের কানা কুড়িও নেই নি। শালিককে আমার ছেলে বিয়ে করবো না৷ আমার ছেলের বউ আছে। আমাদের কোন দোষ নেই৷ সব দোষ ইমন সাহেবের৷ উনি আমাদের টাকা দিয়ে এখানে নিয়ে এসেছেন৷”

সকলের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল৷ ইমন ভাইয়া বুঝতে পারেনি তার দিকে তীরের ভান ছুটে আসবে৷ ইমন ভাইয়া চিৎকারে করে বলল,

“এই মহিলা সব মিথ্যা কথা বলছে৷ আমি তাদের এর আগে কোনদিন দেখিনি৷ আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে৷ মা বিশ্বাস করো৷ শালিক আমাকে ফাঁসাচ্ছে৷ আমি শালিককে কিছুতেই ছাড়ব না৷”

মহিলাটি আফসানা চৌধুরীর পা ধরে বলল,

“বিশ্বাস করেন ম্যাডাম আমাদের কোন দোষ নেই৷ আমাদের ফোনের কল রেকর্ড চেক করলেই বুঝতে পারবেন৷ আমরা কোন মিথ্যা কথা বলছি না৷ আমরা গরিব মানুষ৷ টাকার জন্য আমরা এসব করতে রাজি হয়েছি৷ ইমন সাহেব বলেছেন শালিককে বিয়ে করে বাড়ি থেকে বের করতে৷ তারপর শালিককে কোথায় জানি পাঠাবে? তাঁকে বাড়িতে তুললে হবে না৷ আমার ছেলের বউ সন্তান আছে৷ আমার ছেলেকে জেলে দিবেন না৷”

আফসানা চৌধুরীর মুখে কোন কথা নেই৷ তিনি মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছেন৷ কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন৷ ইমনকে এতো করে বুঝানোর পরও সে এমন কাজ কিভাবে করল? ধপাস করে সোফায় বসে পড়ল। ইহান ভাইয়া বলল,

“স্যার এদের তিনজনকেই গ্রেফতার করেন৷ তিনজনই যৌতুকের সাথে জড়িত৷ একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে তিনজন৷ আপনারা নিজেদের কাজ করেন৷”

ইমন ভাইয়া আমার সামনে হাত জোর করে বলল,

“শালিক বোন আমার৷ আমাকে পুলিয়ে ধরিয়ে দিও না৷ শ্রুতি জানলে অনেক কষ্ট পাবে৷ আমার সংসার ভেঙে যাবে৷ আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি৷ আর কোন অন্যায় করব না৷ তোমার সব কথা মেনে চলব৷ আমাকে ধরিয়ে দিও না৷”

ঘৃণায় বলে উঠলাম,

“আপনাদের মতো লোকদের একটু শাস্তি না হলে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবে না৷ আপনি সব সময় আমাকে..। থাক আমি কিছু বলতে চাইনা৷ নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে৷ স্যার এদের নিয়ে যান৷”

বাড়ির মালিক শরীফ চৌধুরী সোফার এক কোণে বসে আছেন৷ উনার মুখে কোন কথা নেই৷ উনি সকল বিষয়ে যথেষ্ট ভালো সিদ্ধান্ত নেন৷ সকল পরিস্থিতিতে তিনি তার বুদ্ধি মত্তার পরিচয় দিয়েছেন৷ আজ কেন এভাবে চুপচাপ বসে আছেন? উনি ছেলের অপরাধ নিজ চোখে দেখবে ভাবতেই পারেনি৷ পুলিশ ইমন ভাইয়াকে ধরে নিয়ে গেল৷ ইমন ভাইয়া অনেক আকুতি মিনতি করল৷ কেউ তার কথা শুনল না৷ কাজি সাহেব চলে যেতে নিলেই ইহান ভাইয়া বলল,

“কাজি সাহেব আমি শালিককে বিয়ে করতে চাই৷ শালিকের স্বপ্ন পূরণের সঙ্গী হতে চাই৷ আমি শালিককে নিজের স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করব৷”

শরীফ চৌধুরী আর চুপ থাকতে পারলেন না৷ এবার মুখ ফুটিয়ে বলল,

“আমি এ বিয়ে কিছুতেই মানব না৷ তুমি শেষে কিনা কাজের মেয়েকে বিয়ে করবে৷ সমাজে আমাদের একটা মান সম্মান আছে৷ আমি কিছুতেই নিজের মান সম্মান নিয়ে তোমাকে খেলা করতে দিব না৷ ফর্সা হলেও একটা কথা ছিল৷ এমন কালো মেয়েকে আমার বাড়ির বউ হিসেবে মানব না৷”

ভাইয়ার কথা শুনে আমি স্তব্ধ। ভাইয়া আমাকে বিয়ে করতে চান৷ আমি নিজস্ব কানকে নিশ্বাস করতে পারছি না৷ আমার সাথে আমার কানও প্র*তা*র*ণা শুরু করল৷ ফ্লোরে মাথা নিবদ্ধ করে ভেবে যাচ্ছি৷ ভাইয়া দেখতে মাশাল্লাহ খুব সুন্দর। সুদর্শন যুবক আমার মতো অপয়া কালো মেয়েকে বিয়ে করতে চান কেন?আফসানা চৌধুরী গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিল,

“শালিকের জন্য আমার সংসারে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে৷ আমি শালিকের মুখটাও দেখতে চাইনা৷ আজ গুরুজনদের কথা মনে পড়ছে খুব৷ যাদের চেহারা কালো তাদের মনটাও কালো৷ আমি শালিককে সাদা মনের মানুষ ভাবছিলাম।”

আফসানা চৌধুরী হন হন করে সিঁড়ি বেয়ে চলে যান৷ কথার তীর মানুষকে আহত করতে সময় নেয় না৷ বুকের মাঝে তীব্র ব্যথা হচ্ছে৷ বুক ফেটে অঝোরে কান্না চলে আসছে৷ ভেজা আহত গলায়,

“ভাইয়া আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না৷ আমি এই বাড়ি থেকে অনেক দূর চলে যাব৷ এদের চোখে এখনও বিশাল পর্দা বিরাজ করছে৷ আমি কিছুতেই এ বাড়িতে থাকতে পারব না৷ পৃথিবীতে সবাই চামড়া দিয়ে মূল্য বিচার করে৷”

আমি দ্রুত পায়ে রুমে চলে আসি। কপাট বন্ধ করার আগেই ইহান ভাইয়া রুমে ঢুকে পড়েন৷ আহত কন্ঠে বলল,

“শালিক আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তোমাকে নিয়ে আমার খুব ভয় হয়৷ আমি তোমাকে হারাতে পারব না৷ আমি তোমাকে হারালে মা*রা যাব৷ একটু আগে তোমাকে হারাতে বসেছিলাম৷ আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছিল৷ আমি দুনিয়ার সবকিছু ভুলে গেছিলাম৷”

আমি হাত জোড় করে বললাম,

“আপনি আমার কালো অতীত জানেন না৷ আমার কালো অতীত জানলে আমাকে আপনি কখনও বিয়ে করতে রাজি হবেন না৷ আমি কিছুতেই আপনাকে বিয়ে করতে পারব না৷”

“তোমার অতীত যেমনই হোক৷ আমি তোমার ভবিষ্যৎ হবো৷ অতীতের কোন কষ্ট তোমার ধারের কাছেও আসতে দিব না৷ সব সময় তোমাকে আগলে রাখব৷ তোমার সুখ হবে আমার সুখ৷ তোমার চোখে দেখব আমি বিশ্ব।”

“আমি আপনার পায়ে পড়ি৷ আপনাকে আমি ভাইয়ের নজরে দেখি। আপনাকে কখনও আমি স্বামীর নজরে দেখতে পারব না৷ আপনি আমার পথ নির্দেশক।”

“আমি তোমার পথ চলার সাথী হব। তোমার মন ভালোবাসা দিয়ে জয় করব৷ যেদিন তুমি নিজ থেকে আমার কাছে আসবে সেদিন আমার ভালোবাসা পূর্ণ হবে৷ আমি তোমাকে কোন জো*র জব*র*দ*স্তি করব না৷”

“আপনি আমার অতীতের কোন কিছুই জানেন না৷ আমার অতীত খুব ভ*য়া*ন*ক। ভাবতেই ম*রে যেতে ইচ্ছা করে৷ আ*ত্ম*হ*ত্যা ম’হা’পা’প না হলে আজ শালিক বেঁচে থাকত না৷ অনেক আগেই আল্লাহর কাছে চলে যেত৷ শালিকের অস্তিত্ব পৃথিবীতে বিলীন হয়ে যেত৷ শালিক পাখি নামে কেউ আর পৃথিবীতে জন্ম নিত না৷”

কথাগুলো আটকে আসে৷ কথা বলতে খুব কষ্ট হয়৷ আমার চোখের জল মুছে দিয়ে ভেজা করুন কন্ঠে বলল,

“তোমার অতীত নিয়ে আমি কোন কথা বলব না৷ অতীত যেমনই হোক। আমি তোমার বন্ধু হয়ে সব সময় পাশে থাকব৷ আমিও জানতে চাই তোমার অতীত কি? আমি তোমার অতীত জেনেই তোমাকে বিয়ে করতে চাই৷”

আমি ভেজা গলায় বললাম,

” আমি ডিভোর্সী নারী৷ আমার বিয়ে হয়েছিল৷ স্বামীর চাহিদা মেটানো আমার প্রধান কাজ ছিল৷ প্রতি রাতে নরপশুর মতো আমাকে দা’ন’ব, কু’কু’রে’র মতো ছিঁ’ড়ে খে’য়ে’ছে৷ পি’রি’য়’ড কালীন আমাকে ছাড় পর্যন্ত দেয়নি৷ আপনাকে দেওয়ার মতো আমার কাছে কিছুই নেই৷ আমি আমার সতীত্ব হারিয়ে ফেলেছি৷ যার সতীত্ব নেই তার জীবনে কোন মূল্য নেই৷ আমি কিভাবে আপনার মতো ছেলেকে আমার নিজের জীবনের সাথে জড়াবো? পারব না আমি আপনাকে নিজের জীবনে জড়াতে। আপনি চলে যান৷ আপনি আমার থেকে ভালো কাউকে পাবেন৷ আমাকে বিয়ে করলে আপনাকে সমাজে মাথা নিচু করে চলতে হবে৷ আমি আপনার মাথা কিছুতেই নিচ হতে দিব না৷ স্যারের মান সম্মান আমি তলানীতে আসতে দিব না৷ স্যারকে আমি বাবার নজরে দেখেছি৷ আমি আমার বাবাকে ভুলে স্যারকে বাবার আসন দিছি৷ যদিও নিজের বাবাকে ঘৃনার নজরে দেখি৷”

আর বলতে পারলাম না৷ হু হু করে কান্না শুরু করলাম৷ ইহান ভাইয়া আমার চোখের জল মুছে দিয়ে আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেন৷ মায়া ভরা কন্ঠে বলল,

“আমি তোমার অতীত জেনেই তোমাকে বিয়ে করতে চাই৷ বাকী পথ তোমার সাথে চলতে চাই৷ আমি তোমাকে কখনও একা ছেড়ে যাব না৷”

সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। ইহান ভাইয়াকে আর ফিরিয়ে দিতে পারলাম না৷ মহান আল্লাহ তায়ালাকে সাক্ষী রেখে আমার নাম ইহান ভাইয়ার সাথে জড়িয়ে নিলাম৷ হয়ে গেলাম সারা জীবনের জন্য ইহান ভাইয়ার অর্ধাঙ্গিনী। প্রতিজ্ঞা করলাম সারা জীবন পাশে থাকব৷ কখনও হাত ছেড়ে চলে যাব না৷ সর্বকালের সঙ্গী হয়ে থাকব৷ বিপদে মুখ ফিরিয়ে নিব না৷ সম্মুখে আসা সকল বিপদের সাথে মোকাবেলা করব ইহান ভাইয়ার হাত ধরে৷ জন্ম জন্মান্তরের আবদ্ধ হলাম৷ পৃথিবীকে হাসাতে না পারলেও মায়া ফুপি আর ইমন ভাইয়াকে হাসাতে পেয়েছি৷ আমার কাছে মানুষ দু’টোর মুখের হাসি সবচেয়ে দামী৷ তাদের এক ফোঁটা হাসির জন্য সবকিছু করতে পারি৷

চলবে….
শালিক আফসানা চৌধুরী ও শরীফ চৌধুরীর মন কিভাবে জয় করবে? আরও একটা যু*দ্ধ শুরু হলো শালিক পাখির৷ ইমনকে আরও গুরুত্বর শা*স্তি দেওয়া হবে৷

#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_১৫
#অধির_রায়

আমি চুপচাপ বসে আছি ইহান ভাইয়ার রুমে৷ বেলকনিতে আনমনে দাঁড়িয়ে আছেন ইহান ভাইয়া৷ বাড়িতে শোকের ছায়া ভরপুর করছে। বাকশক্তি হারাতে বসেছে বাড়ির প্রতিটি মানুষ৷ নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে সমস্ত বাড়িতে৷ নিরবে নিভৃতে চোখের জল মুছে যাচ্ছি আমি৷ আমার চোখের জল ইদানীং একটু বেশিই হচ্ছে৷ নেত্রদ্বয় সব সময় একটু ভালোবাসার পরশ খুঁজে। ইহান ভাইয়া এসে বলল,

“ভারী গহনা শাড়ী চেঞ্জ করে আসো৷ এখন মধ্যরাত৷ সারারাত এভাবে বসে থাকলে শরীর খারাপ করবে৷ আমার জন্য তোমার শরীর খারাপ হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না৷”

ভাইয়ার কথা আমার কর্ণধারে পৌঁছাল না৷ আমি এক ধ্যানে বিছানায় বসে আছি৷ আমার সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা বারংবার চোখে ভেসে উঠছে৷ ইমন ভাইয়ার কথা মনে পড়তেই ইমন ভাইয়াকে খু*ন করতে ইচ্ছা করছে৷ ভদ্র সমাজে ভদ্রতার মুখোশ পড়ে থাকলেই মানুষ আদর্শ মানুষে পরিণত হতে পারে না৷ ইমন ভাইয়া তার জলন্ত প্রমাণ৷ ইমন ভাইয়ার শাস্তি আমি নিজ হাতপ দিব৷ উনাকে পুলিশ কত টুকু শাস্তি দিবেন জানা নেই৷ ইহান ভাইয়া পুনরায় বলল,

“কি হলো শালিক! এক ধ্যানে বসে আছো কেন? আমার কথা তোমার কানে যাচ্ছে না৷ আমি তোমাকে ফ্রেশ হতে বললাম৷ সবার উপর তোমার অভিমান জমেছে৷ তাই বলে তুমি সালাত আদায় করা বন্ধ করে দিবে৷ তুমি তো এমন মানুষ ছিলে না৷ তুমি নিজেকে বিচক্ষণ মানুষ হিসেবে তৈরি করেছো। আজ কেন সালাত আদায় করলে না?”

ভাইয়ার কথা শুনেও না শুনার ভান করে বসে আছি৷ কোন জবাব দিতে ইচ্ছা করছে না৷ আমি উদাস হয়ে ইহান ভাইয়ার দিকে এক পলক তাকালাম৷ ফর্সা মুখটা মলিন হয়ে গেছে৷ আমার থেকে উনার শোকের অংশ বেশি৷ উনার কষ্ট দেখে কষ্ট হলেও নিজেকে সামলিয়ে নিলাম৷ উনার প্রতি দুর্বল হওয়া যাবে না৷ দুর্বলতা মেয়ে মানুষের বড় শত্রু। একবার দুর্বল হলে সেটা পুরুষ মানুষের মস্তিষ্কে গেঁথে যায়৷ ইহান ভাইয়া আমার পাশে বসলেন৷ কোমল কন্ঠে বলল,

“তুমি মা বাবার কথায় রাগ করেছো? উনাদের কথায় রাগ করো না৷ উনারা গুরুজন। মা বাবা ঠিক একদিন এই বিয়ে মেনে নিবেন৷ আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা রাখো।”

তবুও কোন জবাব দিলাম না৷ আমি ইহান ভাইয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে খালার রুমে চলে আসলাম৷ থ্রি পিচ নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলাম৷ শাড়ি পরিবর্তন করে থ্রি পিচ পড়ে নিলাম৷ এই বিয়ে কেউ মেনে নেয়নি। কিন্তু পরিবারের লোকদের বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য এক প্রকার বাধ্য হয়েই ইহান ভাইয়ার রুমে গেলাম৷ ভাইয়া এখনও কপাটের দিকে নজর রেখেছেন৷ আমাকে দেখে একটু মুচকি হাসলেন৷ টাওজার নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলেন৷ আমি সুযোগ বুঝে ফ্লোরে বিছানা করে শুয়ে পড়লাম। ঘুম আসছে না তবুও চোখ বন্ধ করে আছি৷ ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছি৷ আমি ইহান ভাইয়ার সাথে এক বিছানায় থাকতে পারব না৷ ইহান ভাইয়া ওয়াসরুম থেকে এসে বলল,

“এতো বড় বিছানা আমার একার নয়৷ আমার সমস্ত কিছুতে তোমার অর্ধেক অধিকার আছে৷ তুমি এক পাশে ঘুমাতে পারো৷ ফ্লোরে ঘুমালে শরীর খারাপ করবে৷”

ভাইয়ার কথা কর্ণধার পৌঁছালেও আমি ঘুমের ভান ধরে শুয়ে রইলাম৷ ভাইয়া আমার সামনে এসে আমার ঘুম পরীক্ষা করল৷ আমি কিছুতেই নেত্র খুললাম না৷ ভাইয়ার আমাকে পাঁজা কোলা করে বিছানায় শুইয়ে দিলেন৷ ইচ্ছা করল উঠে আসতে৷ ঘুমের ভান ধরে শুয়ে ছিলাম জানতে না পারে সেজন্য চুপচাপ শুয়ে রইলাম৷ কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে অন্য পাশে শুয়ে পড়ল৷ ভাইয়ার স্পর্শে সমস্ত দেহ কেঁপে উঠল৷ অজানা ভালো লাগার অনুভূতি খুঁজে পেলাম৷ শীতল হাওয়া বয়ে গেল সমস্ত দেহে৷ হাত পা কাঁপাছে৷ তবুও নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছি৷ ভাইয়ার স্পর্শে মুগ্ধ হলাম কেন? পিনপিন করে আঁখি মেলে দেখি ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছেন৷ আমার ঘুম হলো না৷ আমি উঠে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করলাম৷ ফরজের আজানের দিকে চোখ লেগে আসছিল৷ আজানের শব্দ কানে আসতেই ঘুম ভেঙে গেল৷ সালাত আদায় করে কুরআন শরীফ তেলওয়াত করে নিচে নামলাম৷ অনবরত কলিং বেল বেজে যাচ্ছে৷ মায়া ফুপি এখনও উঠেনি৷ মনে হয় সারারাত চিন্তা করতে করতে শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছেন৷ আমি ভয়ে ভয়ে সদর দরজা খুলে দিলাম৷ চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আফসানা চৌধুরী এবং উনার গুনুধর ছেলে ইমন৷ মুহুর্তের মাঝে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল৷ পুলিশ ইমন ভাইয়াকে এতো সহজেই ছেড়ে দিলেন৷ আফসানা চৌধুরী আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন৷ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হন হন করে চলে যান৷ ইমন ভাইয়া শার্টের কলার উঁচু করে চোখ টিপল দেন৷ সমস্ত দেহে আগুন জ্বলে উঠে। ইমন ভাইয়া শিষ বাজাতে চলে যান৷ সিঁড়ির কাছে থেমে বলল,

“শালিক পাখি আমাকে ছেলে পাঠানো সহজ নয়৷ আমি থানা অব্দিও যায়নি৷ আমি আর মা শ্রুতিদের বাড়িতে ছিলাম৷ একটু পর শ্রুতিও চলে আসবে৷ তোমার জীবনে ইতি টানতে আমি আর শ্রুতিই যথেষ্ট।”

মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম৷ বড়লোক বলেই পুলিশ তাদের ছেড়ে দিল৷ যত আইন আদালত, জেল সব আমাদের মতো গরিবদের জন্য বানানো৷ টাকার কাছে সবাই বিক্রি হয়ে যায়৷ রান্না ঘরে যাওয়া হলো না৷ ইমন ভাইয়ার কথা চিন্তা করতে করতে ছাঁদে চলে গেলাম। আজ ছাঁদে আসতে ভয় লাগল না৷ ছাঁদের কপাট হাঁক করে খোলা৷ মাথায় ঘুরছে আমার সম্মুখে বিপদ রোদ পেতে বসে আছে৷
দশটার দিকে শ্রুতি ভাবী আসল বাড়িতে৷ আমি ডাইনিং রুম পরিষ্কার করছিলাম৷ কোন কথা না বলে আমার গালে কষিয়ে থা’প্প’ড় বসিয়ে দেন৷ নিজেকে শান্ত রাখতে পারলাম না৷ আমি যদি প্রতিবাদ না করি শ্রুতি ভাবী মাথা চ*ড়ে বসবেন৷ আমি একটা থা’প্প’ড়ের বদল দুইটা থা’প্প’ড় ফিরিয়ে দিলাম৷ রাগী চোখে বললাম,

“আমি মিসেন ইহান শালিক চৌধুরী। এরপর আমার গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করলে হাত ভেঙে ফেলব৷ অনেক অন্যায় সহ্য করেছি৷ এখন থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করব৷”

শ্রুতি ভাবীকে এতোটাই জোরে আঘাত করি শ্রুতির ভাবীর ঠোঁট ফেটে রক্ত চলে আসে৷ ছিঁটকে কিছুটা দূরে সরে যান৷ আমার দিকে তেড়ে আসতে নিলেই আমি শ্রুতি ভাবীর সামনে পানি ফেলে দেয়৷ পা স্লিপ করে ফ্লোরে পড়ে যান৷ শ্রুতি ভাবীর চিৎকারে বাড়ির সবাই জড়ো হয়৷ আমি মুচকি হেঁসে বললাম,

“আমাকে দুর্বল ভেবে ভুল করবেন না৷ আমি গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ৷ আমার প্রতি অন্যায় আমি কিছুতেই মেনে নিব না৷ আমাকে যে ভালোবাসবে তাকে মাথায় তুলে রাখব৷ আমার সাথে বা আমার স্বামী ইহানের সাথে কেউ অন্যায় করলে তার জায়গা আমি ভালো করে বুঝিয়ে দিব৷”

ইমন ভাইয়া কর্কশ কন্ঠে বলল,

“শালিক তোকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিব৷ তুই আমাকে চিনিস না৷ তুই শ্রুতির গায়ে হাত তুলে সমস্ত সীমা অতিক্রম করছিস৷”

বাঁকা হাসি দিয়ে বললাম,

আমার গায়ে ফুলের টুকা দেওয়ার চেষ্টা করেন৷ আপনাকে খু’ন করতে না পারলে আমি শালিক নয়৷ এমন অবস্থা করব কোন প্রমাণ থাকবে না৷”

সেখানে দাঁড়িয়ে তাদের নাটক দেখার ইচ্ছা নেই৷ আমি সাইট কাটিয়ে ইহান ভাইয়ার রুমে চলে আসলাম। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িই হয় মেয়েদের নিজের বাড়ি৷ মেয়েদের নিজস্ব কোন বাড়ি নেই৷ নিজস্ব বাড়ি হলো একমাত্র কবর৷

রাগ অভিমানে কেটে গেল এক সপ্তাহ৷ আজ আমার রেজাল্ট বের হয়েছে৷ আমার থেকে ইহান ভাইয়া বেশি খুশি হয়েছেন৷ আমার জিপিএ ৪.৬৭। আমি ভাবতেও পারিনি আমি এতোটা ভালো রেজাল্ট করব৷ ভাইয়া বলেছেন আমাকে নিয়ে আজ ঘুরতে যাবেন৷ আমি রাজি ছিলাম না৷ আমাদের কথার মাঝে আফসানা চৌধুরী চলে আসেন৷ উনাকে দেখে বাধ্য হয়ে রাজি হয়েছি৷ বাসার মায়া ফুপি ছাড়া অন্য কেউ আমার সাথে কথা বলেনি৷

এক রিক্সায় পাশাপাশি বসে অজানা গন্তব্যে যাচ্ছি মোরা৷ আমাদের যাওয়ার কোন নির্দিষ্ট গন্তব্য নেই৷ আমি যথেষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে বসেছি৷ ভাইয়া মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছেন৷ আমি এক ধ্যানে অতিবাহিত হওয়া ল্যামপোস্টের আলো দেখে যাচ্ছি৷ রিক্সা ওয়ালা মামা এক ধ্যানে রিক্সা চালিয়ে যাচ্ছে৷ ইহান ভাইয়া আমার হাতের উপর হাত রাখেন৷ সমস্ত দেহ কেঁপে উঠে। ভাইয়ার দিকে তাকাতেই আমাকে চোখ টিপল দেয়৷ আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলি৷ ভাবতেই পারছি না আমার পাশে সুদর্শন স্বামী বসে আছেন৷ আমার কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন৷ আমার মাথা উনার কাঁধে রাখলেন৷ আমার ভিতরে শুরু হলো উ*তা’*ল*পা*তা*ল ভূ*মি*ক*ম্প। আমি ইহান ভাইয়ার শরীরের সাথে মিশে যাচ্ছি৷ ভালো লাগার অনুভূতি কে*টে বের হতে পারছি না৷ রিক্সা থামে একটা মেলার সামনে৷ শহর থেকে কিছুটা দূরে জন মানবের ভিড় অনেক কম৷ আমার হাত ধরে মেলার মাঝে নিয়ে গেলেন৷ আমার জন্য হরেক রকমের কয়েক জোড়া কাঁচের চুড়ি কিনলেন৷ সাদা শাড়ি পড়নে৷ সেজন্য নিজে যত্ন করে আমার হাতে সাদা চুড়ি পড়িয়ে দিলেন৷ ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম৷ আমতা আমতা করে বললাম,

“আমি এতোগুলো চুড়ি নিয়ে কি করব? শুধু টাকা নষ্ট করা৷ কোন চুড়ি কিনতে হবে না৷”

ইহান ভাইয়া আনন্দের সাথে মায়া ভরা কন্ঠে জবাব দিল,

“আমি আমার শ্যামলতাকে একটু নিজের মতো করে সাজাতে চাই৷ আমার ভালোবাসা চুড়িগুলো যখন পড়বে আমার কথা ভেবে মুখে হাসি রেখা ফুটে উঠবে৷ আমি আমার শ্যাম সুন্দরী শ্যামলতার জন্য কিনেছি৷ আমি তোমাকে কোন কিছু গিফট করতে পারব না৷ আমার ভালোবাসা শ্যামলতা এসব পড়বে৷”

আমার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছেন মেলার ভিতরে৷ বেলি ফুল কিনে আমার কালো ঘন ক্যাশে গুছে দিলেন পরম যত্নে৷ কপালে পড়িয়ে দিলেন লাল রঙের ছোট টিপ৷ ভালোবাসার অন্যরকম অনুভূতি মনের দুয়ারে নাড়া দিচ্ছে৷ এই মানুষটা আমাকে উজাড় করে ভালোবাসেন৷ অথচও ভালোবাসা কখনও প্রকাশ করেন না৷ ফুসকা খেয়ে আবার রিক্সায় করে চৌধুরী ভিলার উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করলাম৷ উনার কন্ঠে ধ্বনিত্ব হলো

❝আকাশের নীড়ে
নেঘে ঢাকা তাঁরা
খুঁজে পাওয়া
মুখের মিছিলে ধীরে ধীরে
ধরা পড়ে যাওয়া
বল আর…..
কী হলে বেশ হয়
ঠিক মনের মতো।

ওওও..
এই পথ
যদি শেষ না হয়
তবে কেমন হতো৷❞

বাড়িতে এসে ফ্রেশ হলাম৷ ইহান ভাইয়া আহত কন্ঠে বলল,

“শালিক তুমি আমার সাথে কথা বলো না কেন? আমি তোমার যোগ্য নয় বলে৷ আমি তোমাকে কষ্ট দিয়ে থাকলে বলতে পারো৷ আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি৷ আমি তোমার বিহনে তিলে তিলে মা*রা যাচ্ছি। আজ আমার প্রশ্নের জবাব তোমাকে দিতে হবে৷”

ইহান ভাইয়ার কথা বুকের মাঝে তীব্র বেগে গেঁথে গেল৷ কথা না বলে থাকতে পারলাম না৷ জবাবে বললাম,

“আপনি মা*রা যাওয়ার কথা বললে আর কোনদিন কথা বলব না৷ আমি আপনার সাথে প্রয়োজনী সকল কথাই বলি৷ আপনি আমার স্বামী৷ আমি এমন কোন কাজ করব না যাতে আপনার সম্মান হয়৷”

আমার কাঁধে হাত রেখে বলল,

“কেন আমাকে এড়িয়ে চল? আমি তোমার বন্ধু হয়ে সারাজীবন পাশে থাকতে চাই৷ আমাকে একটি বার বন্ধু বানিয়ে দেখো৷ কখনও বন্ধুত্বের অসম্মান করব না৷ জীবন দিয়ে বন্ধুত্ব রক্ষা করব৷”

“আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে৷ এসব নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না৷ আমি আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করি৷ আপনাকে পৃথিবীর সব থেকে বেশি ভালোবাসি৷ আপনি আমার জীবনে প্রথম অভিমানের ভালোবাসা। আমার প্রতিটি শ্বাসপ্রশ্বাস সাক্ষী আমি আপনাকে সম্মান করি। আপনার প্রতি আমার অসীম ভালোবাসা কখনও কমবে না৷”

কথা না বাড়িয়ে বিছানার অন্য পাশে শুয়ে পড়লাম৷ ইহান ভাইয়া আমার কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনলেন৷ পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি। অনেক আগেই তোমার কোমল মন আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছে৷ তোমার ঠোঁটের সেই মায়া ভরা হাঁসি। সে হাসির কলকল ধ্বনি ঝিলের জলকেও হার মানায়। তোমার সেই বিশুদ্ধ চাহনির প্রেমে পড়ি বারবার৷”

ভাইয়ার কথা কোন কথা কান অব্ধি আসল না৷ তার আগেই আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছি।

চলবে….

আগামী পর্বে প্রতিবাদ করবে আফসানা চৌধুরী আর শরীফ চৌধুরীর সাথে৷ ভদ্রতা বজায় রেখে প্রতিবাদ করবে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here