শালিক_পাখির_অভিমান #পর্ব_০৪,০৫

0
716

#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_০৪,০৫
#অধির_রায়
০৪

ঘন অন্ধকারে হেঁটে হেঁটে বাসস্ট্যান্ডে আসলাম৷ পা চলছে না। দেহ ক্ষীণ হয়ে আসছে৷ ঠিকমতো না খাওয়ার জন্য শরীর খুব দুর্বল৷ মাঝ রাস্তায় এসে টিউবওয়েলের পানি পান করার ফলে একটু শক্তি পেয়েছি৷ বাসের সি-১ সিটে বসে আছি৷

বাড়িতে কান্নার ধুম পড়ে গেল৷ বিয়ে বাড়ি হয়ে উঠল শোকের বাড়ি৷ দাদীর খবর পেয়ে শাকিলা, সাদাফ ভাই চলে আসছেন৷ শাকিলাকে থামানো যাচ্ছে না৷ তার কান্নার বেগ ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে৷ তাকে কেউ শান্ত করতে পারছে না৷ মা, বাবা, ভাই, বাড়ির সকলেই কান্না করে যাচ্ছে৷ তবুও অনেকের মুখে শোনা যাচ্ছে চো’র, চো*রের মা এক সাথেই মারা গেছে৷ আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে৷ সবার মৃত্যু হলেও এই অপয়ার মৃত্যু নেই কেন? আল্লাহ এই অপয়া মেয়ের শাস্তি দিচ্ছেন না কেন?
ইহকালের প্রতি সমস্ত মায়া কেটে গেছে৷ নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে৷ আমি ভীতু হওয়ায় আ*ত্ম*হ*ত্যা করতে পারছি না৷ তার উপর মা দিব্যি দিয়েছে, আমি যদি আত্মহত্যার চেষ্টা করলে মা সেদিন নিজেকে শেষ করে দিবেন৷ সন্ধ্যার দিকে ফুপি আর দাদীকে জোড়া কবর দেওয়া হয়৷ বাড়িতে খাঁ খাঁ বিরাজ করছে৷ শাকিলার কান্না দেখে চোখের অশ্রু ধরে রাখতে পারলাম না৷ সারাদিন অনেক চেষ্টা করে চোখের অশ্রু ধরে রেখেছি৷ বুক ফেটে কান্না চলে আসল৷ বাবার হরমুর করে ঘরে ঢুকেন৷ গম্ভীর কন্ঠে বলল,

“চো*রের মুখে কান্না শোভা পাইনা৷ তোর জন্য আমার মা, বোন আজ পৃথিবীতে নেই৷ তোর কোন বেঁচে থাকার অধিকার নেই৷ বাবা টানতে টানতে আমারে উড়ানে নিয়ে আসেন৷ শাকিলা বাবার পায়ে পড়ল। শাকিলার কোন কথা বাবার কান অব্ধি যাচ্ছে না৷ শাকিলাকে বড় খালা টেনে ঘরে নিয়ে যান৷ আমাকে টানতে টানতে বাবা বড় সড়কের মাথায় নিয়ে আসেন৷ বাবার পিছন পিছন কাউকে আসতে মানা করে৷ বাবা পকেট থেকে কিছু একটা বের করে আমার হাতে দেন৷ অশ্রুসিদ্ধ নয়ন ভেজা গলায় বলল,

” মা তুই গ্রাম থেকে চলে যা৷ তুই গ্রামে থাকলে সবাই তোকে পাথর নিক্ষেপ করে মে*রে ফেলবে৷ আমি বাবা হয়ে সহ্য করতে পারব না৷ এখানে কিছু টাকা আর বাসের টিকেট আছে৷ তোর দাদীর কাফনের কাপড় কিনার সময় তোর জন্য ঢাকা যাওয়ার টিকেট কাটছি৷ এখানে একটা ঠিকানা আছে৷ তার কাছে গেলে তোর কোন একটা ব্যবস্থা করে দিবে।”

আমার উত্তর না শুনে বাবা চোখের অশ্রু হাতের উল্টো পীঠ দিয়ে মুছতে মুছতে চলে গেল৷ আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে আছি। আমি কালো বলে বাবা কোনদিন মন খুলে আমায় আদর করেনি৷ বাবার আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন শাকিলার মতো আমাকেও বাবা মনের গহীন থেকে ভালোবাসেন৷ আমার বিয়ের যৌতুকের জন্য বাবা সর্বত্র হারিয়েছে৷ তবুও আক্ষেপ ছিল না৷ আরও টাকার জন্য যখন আমাকে শারিরীক, মানসিক নির্যাতন করত তখন ভেঙে পড়তেন৷ কখনও বুঝতে দিতেন না৷ বিয়ের কাবিননামায় বেশি টাকা উল্লেখ না থাকায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেও কোন ফল পাইনি৷ বাবা মিশে অন্ধকারের সাথে একাকার হয়ে গেল৷ বাবার একটু আদর ভালোবাসা পেলেই সব ব্যথা ভুলে যায় মেয়ে মানুষ৷

বাস চলছে আপন গতিতে। পাশের সীটে বসেছেন এক ভদ্র মহিলা৷ উনার ছোট বাচ্চার খুব লাফালাফি করছে৷ মাঝে মাঝে জোরে লাথি দিচ্ছে আমায়৷ পেটে জোরে লাথি দেওয়ার অগ্নি দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম৷ গম্ভীর কন্ঠে বললাম,

“আপনার ছেলে আমাকে আর একবার লা’থি দিলে আমি তাকে জানালা দিয়ে ফেলে দিব৷ সন্তান সামলাতে পারেন না জন্ম দিছেন কেন? আপনি সন্তান নিয়ে ঢাকা যাবেন দুই সিট নিতে পারলেন না!”

ভদ্র মহিলা আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন৷ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন৷ তিনিও খুব বিরক্ত। রেগে ভদ্র মহিলা নিজের বছর তিনেক খাচ্চাকে জোরে থা*প্প*ড় বসান৷ আমার খেলাল হলো আমি খারাপ ব্যবহার করেছি৷ আমি বাচ্চাকে হাত বাড়িয়ে নিতে চাইলাম৷ তিনি সরিয়ে নিলেন৷ মলিন মিহি কন্ঠে বলল,

“আমার বাচ্চাটা খুব দুষ্টু৷ আপনার দিকে আর হাত পা ছুঁড়ে মা*র*বে না৷ আমি তাকে ঘুম পাঠিয়ে নিচ্ছি৷”

কথা বলার শক্তি পাচ্ছি না৷ মহিলার সাথে আর কথা বাড়ালাম না৷ বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি এক ধ্যানে৷ শীতল বাতাসে অবাধ্য চুল গুলো উড়ছে। সমস্ত দেহ ঠান্ডা হয়ে গেছে৷ জানালার কাঁচ বন্ধ করার শক্তি পাচ্ছি না৷ ভদ্রমহিলা আমাকে দুইবার বলেছেন জানালা বন্ধ করতে৷ উনার কথা কান অব্ধি পৌঁছালেও জানালা বন্ধ করার শক্তি নেই৷ উনি আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললেন,

“আপনার কি হয়েছে? উদাসীন মন নিয়ে বসে আছেন৷ দুনিয়ায় দিকে কোন খেয়াল নেই৷ শীতে গুটিশুটি হয়ে গেছেন৷ তবুও জানালা বন্ধ করছেন না৷”

কথা বলতে ইচ্ছা করছে না৷ ভদ্রতার খাতিরে বললাম,

“তেমন কিছু হয়নি৷ ঝড় বয়ে গেলে প্রকৃতি শান্ত হয়ে যায়৷ আমি ঝড়ের কবল থেকে মুক্ত শান্ত পাখি৷ ঝড় সবকিছু কেঁড়ে নিয়েছে৷ কিন্তু বাঁচিয়ে রেখেছে আমাকে৷ নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আমাকে একা করে সবাই চলে গেছে৷”

মহিলাটি চোখ বুঝে দুঃখ প্রকাশ করল। জোরে শ্বাস নিয়ে কথা বলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করল৷ চোখে ভয় নিয়ে মলিন কন্ঠে বলল,

“আমার আত্মীয় স্বজন কেউ নেই৷ না মানে একা মেয়েকে এতো রাতে একা আসতে দিল৷”

মহিলার কথা শুনে চোখ ভিজে উঠল। কোন জবাব না দিয়ে পুনরায় দক্ষিণা বাতাস উপভোগ করতে লাগলাম৷ কিছু বলতে গিয়েই থেমে গেল। আধ ঘন্টার জন্য বাস বিরতি দিয়েছে৷ বাসের সকল যাত্রী যে যার মতো প্রাকৃতিক কাজ সেরে আসছে৷ কেউ ঠান্ডা হাওয়ায় ধোঁয়া উঠা চা খাচ্ছে৷ কেউ কেউ তাদের অমৃত সিগারেট খাচ্ছে৷ উপরে ধোঁয়া উঠিয়ে প্রশান্তি পাচ্ছে। ধোঁয়ার মতো আমার জীবন। ধোঁয়া ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে৷ আমিও মানুষের মন থেকে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাব৷ শাকিলা, আরাফ ভাই আমায় কি মনে রাখবে? তারা ভুলে যাবে না তো শালিক নামে তাদের একটা বোন ছিল৷ ভাবনার মাঝে ভদ্র মহিলার ছেলেটি হাতে আমের জুস নিয়ে বলল,

“আন্টি এটা আপনার জন্য৷”

ছেলেটির মুখ প্রাণে এক পলক তাকিয়ে ভদ্রমহিলার দিকে তাকালাম৷ মিষ্টি মধুর স্বরে বলে উঠলেন,

“জুসটুকু খেয়ে নাও৷ ভালো লাগবে৷ আমি তোমার উদরে এক ফোঁটা দানাও পড়েনি৷”

মি*থ্যা হাসি দিয়ে বললাম,

“না আপু৷ আমার ক্ষেতে ইচ্ছা করছে না৷ আমি কিছু খাবো না৷”

মিনতি স্বরে বলল,

“প্লিজ খেয়ে নাও৷ তুমি জুস না খেলে কান্না শুরু করবে৷ এখন কান্না শুরু করলে তাকে আর থামানো যাবে না৷ সে দুষ্টামি করলে বাসের সকল যাত্রীর অসুবিধা হবে৷”

আমি মুচকি হেঁসে ছেলেটার হাত থেকে জুস নিলাম৷ ভালোবাসার মায়াজালে যেন ফেঁসে যাচ্ছি। সে তার মায়ের হাত থেকে অন্য জুস নিয়ে খেতে থাকে। তাকে মাঝখানে বসিয়ে বললাম,

“তোমার নাম কি?”

ভালোবাসার মায়াভরা কন্ঠে বলল,

“আমার সীমান্ত। আপনার নাম কি?”

সীমান্ত শব্দটা শুনে মনের মাঝে শীতল হাওয়া বয়ে গেল। নিমিষেই যেন সকল দুঃখ লাগাম হলো৷ আমিও স্বপ্ন দেখতমা৷ আমার একটা ছোট রাজপুত্র হবে৷ তার নাম রাখব সীমান্ত। নিজের দিকে তাকিয়েই মনটা খারাপ হয়ে গেল৷ আমার স্বপ্ন আদোও পূরণ হবার নয়৷ দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে জানালা বন্ধ করে দিলাম৷ কখন চোখ লেগে এসেছে জানি না? মহিলার ডাকে ঘুম ভাঙে৷ তিনি বললেন,

“আমরা ঢাকা এসে পড়েছি৷ আপনি কোথায় যাবেন?”

ঘুম ঘুম চোখে হাই তুলে বললাম,

“জানি না৷ আমার নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য নেই৷ যেদিকে দু’চোখ যায় সেদিকেই যাব৷”

চকিত হলে বলল,

“এসব কি বলছো? ঢাকা শহর একদম ভালো নয়৷ তোমাকে একা পেলে জানোয়ারের মতো ছিঁড়ে খাবে৷”

হাতের কাগজটা এগিয়ে দিয়ে বললাম,

“আমাকে এই ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন৷ এ অচেনা শহরে আমার আপন বলতে কেউ নেই৷ উনি বাবার পরিচিত। আমার কাছে অচেনা অজানা শহর ঢাকা৷”

ভদ্রমহিলার ঠিকানা নিয়ে ইশারায় যেতে বলল। আমি উনার ছেলের হাত ধরে উনার পিছন পিছন যাচ্ছি৷ উনি একটা সিএনজি ডেকে আনেন৷ সিএনজি ওয়ালাকে বাসার ঠিকানা দেন৷ সাথে গাড়ি ভাড়াও দিয়ে দেন৷ আমাকে সিএনজিতে উঠতে বলেন৷ আমি উঠতেই হাতে একটা কার্ড দিয়ে বললেন,

“কোন দরকার পড়লে এই নাম্বারে ফোন দিবে৷ কাজ না পেলে তেমার কাছের ব্যবস্থা হয়ে যাবে৷”
সিএনজি ভাইয়াকে বলেন,
“একদম গেইটের সামনে নামিয়ে দিবেন ভাই৷”

সিএনজি ভাইয়া মাথা নাড়িয়ে জবার দেন৷ আপন গতিতে গাড়ি চলছে৷ সকাল বেলা অন্য কোন গাড়ির চলাচল নেই৷ ইয়া বড় বড় বিল্ডিং। দয়া দরুদ পড়তেছি৷ আমার উপর যেন ভেঙে না পড়ে৷ উনি আমাকে ইয়া বড় বাড়ির সামনে নামিয়ে দিলেন৷ কাগজটা আমার হাতে দিয়ে বললেন,

“আফা নামেন৷ চলে আসছি৷”

কাগজটা হাতে দিয়েই সিএনজি ওয়ালা চলে গেল৷ বিশাল বাড়ির বিশাল গেইট৷ গেইটটা সিলভারে মোড়ানো স্টিল দিয়ে তৈরি৷ পাশে ছোট একটা গেইট আছে৷ সে গেইট খেলা৷ ঢুকতে নিলেই দাড়োয়ান আমার পথ আটকায়। সন্দেহ চোখে বলল,

“কে আপনি? আপনাকে এখানে ঢুকতে দেওয়া যাবে না৷”

আমি কাঁপা কাঁপা হাতে উনার দিকে কাগজটা বাড়িয়ে দিলাম৷ মধ্য বয়সী একজন লোক দৌড়ে আসলেন৷ তিনি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললেন,

” করিম চাচা উনি আমার পরিচিত৷” আমার দিকে ঘুরে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

” তোমার নাম শালিক?”

আমি মাথার ওড়না ঠিক করে নিচু স্বরে বললাম,

“জ্বি। আমার নাম শালিক৷ বাবা আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছে৷”

ভদ্রলোক আমার হাত ধরে একটু দূরে নিয়ে গেলেন৷ ফিসফিস করে বললেন,

“কাউকে কিছু বলতে হবে না৷ আমি বলেছি তেমার মা বাবা মা*রা গেছে৷ তোমার বাবা বেঁচে আছে জানতে তোমাকে কাজ দিবে না৷ আমি এখানে বাগান দেখাশোনা করি৷”

ভদ্রলোকটির পিছন পিছন যেতে লাগলাম৷ বাড়ির কলিং বেল বাজালেই একজন ধবধবে ফর্সা সুন্দর মহিলা দরজা খুলেন৷ আমাকে দেখে একটু নাক ছিঁটকালেন৷ অহংকারী স্বরে বলল,

“এসব রাস্তার মেয়ে কোথায় পাও জুবায়ের। পোশাকের কি অবস্থা?
তোমার স্যার না বললে আমি এই মেয়েকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতাম৷”

উনার কথা শুনে মনে হলো উনি বাড়ির মালকিন৷ আঙ্কেল মাথা নিচু করে বলল,

“ম্যাডাম তার মা বাবা সবাই মা*রা গেছে৷ সে বেঁচে আছে আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া। যে কাজ দিবেন মন দিয়ে করবে৷”

উচ্চ স্বরে মায়া মায়া বলে ডাক দিলেন৷ একটা মাঝ বয়সী বৃদ্ধ মহিলা দৌড়ে আসেন৷ মিহি কন্ঠে বলল,

“মায়া এই মেয়কে কিছু পড়ার জন্য জামাকাপড় দাও৷ এমন নোংরা পোশাকে যেন আমার সামনে না আসে৷ আজ থেকে তোমাকে রান্নার কাজে সাহায্য করবে৷”

আনন্দের সাথে বলে উঠলেন,

“আমি তাকে সব কাজ বুঝিয়ে দিব৷”

আমি উনার পিছন পিছন গেলাম৷ উনি আমাকে নতুন কয়েকটি থ্রি পিচ দিলেন৷ সবগুলো বানানো৷ একদম আমার মাপের৷ আমি এখানে আসবো জেনেই আগে থেকে নতুন থ্রি পিচ বানিয়ে রেখেছে৷ বাহ বাহ৷ ভদ্রতার সাথে বললেন,

“আমাকে আজ থেকে খালা বলে ডাকবি। আমারও কেউ নেই৷ তুই এখন থেকে আমার সাথে থাকবি৷”

খালা ডাকটা বুকের মাঝে তীরের মতো লাগল৷ সকল ঘনটা চোখের সামনে প্রতিছবি হয়ে ভেসে উঠল৷ সারা দেহ কেঁপে উঠল৷ আমি তড়িঘড়ি করে বললাম,

“আমি খালা ডাকতে পারব না৷ আমি আজ থেকে আপনাকে ফুপি বলে ডাকব৷”

“তোর যা ইচ্ছা তাই বলতে পারিস৷ এখান থেকে একটা পোশাক পড়ে রান্না ঘরে আয়৷ আমি চা বসিয়ে রেখেছি৷ সবাইকে চা দিতে হবে৷”

কিছু সময়ের জন্য নিজেকে সুখী মনে হলো৷ একটু পরেই প্রমাণ পেলাম আমার জীবনে সুখ নামের শব্দটা নেই৷ মনে হচ্ছে বর্তমানে নরগে বাস করছি৷ বড়লোক হলেও মানুষগুলোর মাঝে ভদ্রতা নেই৷
বর্ণ পরিচয়ে মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহন করে না। কিন্তু লোক সমাজে ফর্সা ত্বকের দাম বেশি৷ কালো ত্বকের চেহারা মানেই পৃথিবী অন্ধকার।

চলবে….

#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_০৫
#অধির_রায়

আমি ধীর পায়ে রান্নার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম৷ ফুপি আমাকে দেখে মিষ্টি মধুর হাসি দিলেন৷ আমার দিকে একটা চায়ের কাপ এগিয়ে দিলেন৷ সাথে গোড়া কয়েক বিস্কুট। মিষ্টি স্বরে বলল,

“খেয়ে নে৷ তোর চায়ে আদার পরিমাণ একটু বেশি৷ সারারাত জার্নি করে এসেছিস৷ আদা চা খেলে ভালো লাগবে৷”

আমি মুচকি হেঁসে হাত বাড়িয়ে চা নিলাম৷ চায়ের কাপে চুমু দিয়ে বুঝতে পারলাম মায়া ফুপি দুর্দান্ত চা বানান৷ চা খাওয়ার মাঝে মাঝে আমি পুরো রান্না ঘর দেখতে লাগলাম। রান্নাঘরটা অনেক বড়৷ সব থেকে বড় অবাক হলাম গ্যাসের চুলা দেখে। গ্যাসে রান্না করেন ফুপি৷ বইয়ে পড়েছি বড়লোকেরা গ্যাসে রান্না করেন৷ প্রথম নিজের চোখে দেখতে পেলাম৷ আমাদের বাড়ির রান্নাঘর ছোট। মাটির চূলায় খড়, ভুসি, নাগরি দিয়ে রান্না করেন৷ এখানে এসব নেই৷

খাওয়ার শেষে ফুপি বলল,

“শালিক মা! ইহানকে চা দিয়ে আয়৷ মনে হয় ঘুম থেকে উঠে গেছে৷”

ইহান কোথা থেকে আসল? অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মিহি কন্ঠে বললাম,

“ফুপি ইহান কে? আমি তো এই বাড়িতে আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না৷”

“ইহান এই বাড়ির ছোট ছেলে৷ বড় ছেলে অফিসে চলে গেছে৷ সকলের খাওয়ার পর চা খায়৷ আর এই ছেলেটা ঘুম থেকে উঠে চা খাবে৷ তুই চা দিয়ে আয়৷ আমরা এক সাথে বসে খাবার খাবো৷”

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সকাল দশটা বাজে৷ কখন এতো বেলা হয়ে গেল। আমি তো আসলাম সবে মাত্র। এখনই এতো বেলা৷ হাতে চা নিয়ে টিপ টিপ পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উড়ছি৷ সিঁড়িতে পা রাখতেই মনে পড়ে গেলে স্কুলের কথা৷ আমাদের স্কুলও তিনতলা ছিল৷ আমাদের ক্লাস হতো তিন তলায়৷ প্রতিদিন বান্ধবীদের সাথে প্রতিযোগিতা হতো৷ কে সিঁড়ি বেয়ে আগে উঠতে পারে? ছুটির ঘন্টা পড়তেই আবারও প্রতিযোগিতা হতো৷ কে সিঁড়ি বেয়ে আগে নামতে পারে৷ আমি ফুপির কথামতো সিঁড়ির পাশের রুমটাকে প্রবেশ করলাম৷ বিছানায় খালি গায়ে উবুড় হয়ে শুয়ে আছে ইহান৷ সাদা ফর্সা দেখে আমার একটু মন খারাপ হলো৷ আমাকে কেন আল্লাহ এখান থেকে একটু ফর্সা দান করল না৷ একটু ফর্সা দান করলে কি এমন ক্ষতি হতো৷ শীত শুরু হয়েছে অথচও এই ছেলে খালি গায়ে৷ এর গায়ে কি শীত নেই? রুমটা তো এমনি অনেক ঠান্ডা। আমাদের দিকে প্রচুর গরম পড়লে ছেলেরা খালি গায়ে পুকুর পাড়ে বড় গাছটার নিচে বসে থাকে৷ সবাই এক সাথে সুর মিলিয়ে অনেক গান গায়৷ আমি পায়ের পাশে রাখা ছোট টেবিলের উপর চা রাখলাম। আস্তে করে বললাম,

“মায়া ফুপি আপনার জন্য চা পাটিয়েছে৷”

আমার কথা শুনে পিছনে ঘুরে তাকালো৷ ভুত দেখার মতো ভয় পেয়ে উঠল৷ আমতা আমতা করে বলল,

“তুমি কে? আমার রুমে আসার তোমাকে পারমিশন কে দিয়েছে? এতো কালো কেন তুমি?”

ইহানের কথা শুনে মাথার ওড়না ঠিক করলাম৷ ভয়ে হাত পা কাঁপতেছে৷ কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

“আমার নাম শালিক৷ আমি আপনাদের বাসার নতুন কাজের লোক৷ আজ থেকে রেগুলার আপনাকে আমি চা দিব। মায়া ফুপির পা নিয়ে সিঁড়ি বাইতে কষ্ট হয়৷”

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে এক পলক আমার দিকে তাকায়৷ নরম স্বরে বলল,

“কালো হলে কি হবে? তোমার গলা শালিক পাখির মতোই মিষ্টি মধুর।”

কেউ প্রথম আমার গলার প্রশংসা করল৷ আমি মাথা নিচু করে চলে আসতে নিলেই পিছন থেকে আমাকে ডাক দেন৷ ভয়ে ভয়ে পিছনে ঘুরলাম৷ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

“আমার সামনে এসে দাঁড়াও৷”

উনার চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায়।ভয়ে ভয়ে সামনে গেলাম৷ তিনি কর্কশ কন্ঠে বলল,

“তোমার হাতটা দাও!”

ভয়ে দু’হাত পিছনে নিলাম৷ তিনি আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছেন৷ কোন কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না৷ আমার হাত ভেঙে দিবে না তো৷ একটু আগেই আমাকে কালো বলে মনে করিয়ে দিল আমি অপয়াদের মাঝে পড়ি৷ তিনি আমারও বলল,

“হাত দিবে নাকি চা মুখে ছুঁড়ে মারব৷”

আমি ভয়ে ভয়ে ডান হাত উনার দিকে বাড়িয়ে দিলাম৷ উনি আমার ডান হাতের একটা আঙ্গুল স্পর্শ করতে সারা দেহ কেপে উঠল৷ আঙুল চায়ের মাঝে চেপে ধরল৷ মান সম্মানের ভয়ে চিৎকার করলাম না৷ একজন যুবক ছেলের ঘরে কোন যুবতী মেয়ে চিৎকার করলে বা*জে কিছু ভাবনা মানুষের মাঝে নাড়া দিবে৷ চোখ থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে৷ হুংকার দিয়ে বলল,

“আমার চায়ে তুমি লবণ দিয়েছো কেন? লবণ চা তুমি খাবে?”

আমি হাতটা সরিয়ে থু*থু দিলাম৷ সমস্ত আঙ্গুল জ্বলে যাচ্ছে৷ আমার চায়ে চিনি কম হয়েছিল বলে আমি আলাদাভাবে চিনি নিয়েছি৷ ফুপি লবণকে চিনি ভেবেই চা বানিয়ে দিয়েছে৷ কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

“আমি আবার নতুন করে চা বানিয়ে আনছি৷ লবণ আর চিনির মাঝে পার্থক্য বুঝতে পারিনি৷”

আমার দিকে বা*জে চাহনি নিক্ষেপ করে বলল,

“আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও৷ তোমার মুখও দেখতে ইচ্ছা করছে না৷ আমি আর চা খাব না৷ সকাল বেলা মেজাজটা খারাপ করে দিল।”

আমি তাড়াতাড়ি কাপ নিয়ে এক প্রকার দৌড়ে রান্নাকরে চলে আসলাম৷ খুব দ্রুত লবণ পানি মিশিয়ে হাত ভিজিয়ে রাখলাম৷ ফুপি বলল,

“হাত কিভাবে পুড়ল? ফোসকা পড়ে যাবে তো৷”

ফুপিকে কিছুই বললাম না৷ ফুপি দৌড়ে মলম এনে আমার হাতে দিয়ে দেন৷ ফুপির কথা সত্য হলো৷ আঙুলে একটা ফোসকা পড়ে গেছে৷ আমি সাথে সাথে ফোসকা গলিয়ে ফেললাম৷ হাতটা অনেক জ্বলছে৷ চোখের অশ্রুর ধারা বাঁধা মানছে না৷ একটু সুখের আশায় এখানে আসা। শালিকের জীবনে জীবনে সুখ নামের জিনিসটা নেই৷ ইহান আবারও মনে করিয়ে দিল শাকিলের সুখ নেই৷ শালিক সব সময় নরগে থাকে৷ শালিক পাখিকেও মানুষ খাঁচায় বন্ধি করে রাখে৷ শালিক নামের কোন স্বাধীনতা নেই৷

ফুপি নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দিলেন৷ আমি যেন আমার নিজের ফুপিকে খুঁজে পেলাম৷ আমার ফুপি কোনদিন নিজ হাতে খাইয়ে দেননি৷ কিন্তু ভালোবাসায় কোন কমতি রাখেনি৷ ফুপির কথা মনে পড়তেই চোখ থেকে দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল৷ মায়া ফুপি চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,

“খাবারের সময় কান্না করত নেই৷ তোর মা বাবার কথা খুব মনে পড়ছে৷ মন খারাপ করিস না৷ আল্লাহর মা*ল আল্লাহ নিয়ে গেছো৷ জানিস ভালো মানুষ দুনিয়াতে কম থাকেন৷ আল্লাহ তাদেরকে অনেক পছন্দ করেন৷”

আমি ভেজা গলায় বললাম,

“ফুপি আপনার ছেলেমেয়ে নেই৷”

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

“নারে মা৷ আমার কোন ছেলেমেয়ে নেই৷ আমার ছেলের মতোই মানুষ করেছি ইহানকে৷ ছোট বেলায় আমি খাইয়ে না দিলে সে খেতো না৷ তোর মতো আমিও অনাথ ছিলাম৷ বিয়ের পর স্বামী আমাকে তালাক দেয়৷ যৌতুক নিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে।”

কথাগুলো বলার মাঝে চোখের পানি টলমল করছিল৷ যৌতুক প্রথা মানুষের জীবনে স*’র্ব*’না*শ ডেকে আনছে৷ খাবার শেষে বাড়ির মালকিন আফসানা চৌধুরীর রুমে গেলাম৷ তিনি বসে বসে টিভি দেখছেন৷ ইয়া বড় টিভি৷ আমাদের বাড়িতে টিভি ছিল না৷ কাকাদের বাড়িতে টিভি দেখতে গেলাম৷ আমি দেখতে গেলেই কাকি টিভি বন্ধ করে দিতেন৷ আমি জানালার কপাট ধরে টিভি দেখতাম৷ আমি খালার পিছনে দাঁড়িয়ে আছি৷ আফসানা চৌধুরী আমাকে নিজের কাছে ডাকল। আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“তোমার নাম কি?”

আমি ঠোঁট দিয়ে শুকনো ওষ্ঠদ্বয় ভিড়িয়ে নিলাম। নরম কোমল গলায় বললাম,

“আমার নাম শালিক৷ আমার বাবা মা দুজনই মারা গেছেন৷ আমি এতিম৷ আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবেন না৷”

উনার চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যাই৷ কিছু জানার আগেই আমি সব বলে দেয়৷ আঙ্কেল বলে দিয়েছেন, ‘আমার মা বাবা বেঁচে আছে বললে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবে৷’ আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলে আমি কোথায় যাব৷ আমি ঢাকা শহরের কিছুই চিনি না৷ ভয়ে হাত কা কাঁপা কাঁপি করছে৷ উনির আমার হাত ধরে নিজের পাশে বসালেন৷ ভালোবাসার কন্ঠে বললেন,

“ভয় পাওয়ার কিছু নেই৷ আমি মানুষ৷ আমি কোন জানোয়ার নয়। যারা মানুষ দেখে ভয় পাই তারা মানসিকভাবে পা*গ*ল৷”

মুচকি হেঁসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম৷ উনি আবার বলতে শুরু করলেন,

“তুমি এখনও বাচ্চা৷ আমরা চাই তুমি লেখাপড়া করো৷ লেখাপড়ার পাশাপাশি বাড়ির কাজ করবে৷ তুমি কি লেখাপড়া করতে চাও? তোমার স্যারের সাথে এ নিয়ে কথা বলব?”

উনার কথা শুনে চোখ পানিতে ভরে উঠল৷ জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছা করছে’ হ্যাঁ আমি লেখাপড়া করতে চাই৷’ আল্লাহ কি আমাকে প্রমাণ করার সুযোগ দিব? আমি কালো হয়ে জন্ম নিয়ে কোন ভুল করিনি৷ এটা প্রমাণ করতে পারব শুধু লেখাপড়া করে৷ মুখে বলার সাহস হলো না৷ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম৷ আমি লেখাপড়া করতে চাই৷ আমি অনেক পড়তে চাই৷ ফুপির দিকে তাকিয়ে দেখি ফুপির মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। অল্প সময়ের মাঝে ফুপি আমাকে খুব আপন করে নিয়েছে৷ তিনি আবারও বললেন,

“তুমি কোন ক্লাসে পড়তে চাও৷”

“দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমার বি.(বিয়ের কথা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম৷ বিয়ের কথা আড়ালে রেখে বললাম) আমার বাড়িতে সমস্যা দেখা দেয়৷ তখন লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়৷ তারপর তো একটা ঝড় এসে সবকিছু তছনছ করে দেয়৷ বাঁচিয়ে রাখে আমাকে৷ সমাজে অবহেলিত লাঞ্ছিত কালো মেয়েকে আল্লাহর চোখে পড়ল না৷ কালো বলে সবাই দূর দূর করত৷ বাধ্য হয়ে ঢাকা শহরে আসি কাজের খুঁজে। গ্রামে থাকলে তো না খেয়ে মারা যেতাম৷ জীবন বাঁচানোর তাকিয়ে কাজ খুঁজতেই ঢাকা আসি। আঙ্কেলের সাথে বাবার আগে পরিচয় ছিল সেজন্য তিনিই আমাকে এখানে নিয়ে আসেন৷”

“আমি উনার কাজ থেকেই শুনেছি তুমি অনেক ভালো স্টুডেন্ট। আমি চাই, তুমি লেখাপড়া করে নিজের যোগ্যতা অর্জন করো। যোগ্যতার মাঝে গায়ের রং লেখা থাকেনা৷ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই মানুষ৷ নামাজ পড়বে৷ আল্লাহর উপর ভরসা রাখবে। সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন৷”

আফসানা চৌধুরীকে দেখে যতটা গম্ভীর মনে হয়েছিল ততটা গম্ভীর নয়৷ ভালোবাসা দিয়ে পরিপূর্ণ উনার মন৷ একটু কঠোর না হলেও সমস্যা৷ কঠোর আছেন বলেই সব দিকে খেয়াল রাখতে পারেন৷ সবার উপর নজরদারি করতে গেলে কঠোর হতে হয়৷ আমি ড্যাবড্যাব করে উনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি৷ উনি পুনরায় বললেন,

“তোমাকে ইহান স্কুলে ভর্তি করে দিবে৷ এখানে থেকে পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নাও আগে৷”

আমাদের কথার মাঝে কম বয়সী একজন মেয়ে প্রবেশ করতে করতে বলল,

“মা কাজের লোকদের প্রতি এতো মায়া ভালো নয়৷ দেখবেন একদিন ঘাড়ে চড়ে বসবে। কালো মেয়েরা লেখাপড়ার কি বুঝে? যার চেহারা কালো তার মনটাও কালো৷ কালো মনে লেখাপড়া ল অক্ষরটাও নেই৷
ছোটলোকরা লেখাপড়া করে কি করবে?”

অগ্নিমূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে৷ এতো সুন্দর মেয়েটা তাও মুখে হালকা মেকআপ। চুলগুলো স্পাইক করা৷ একদম শাকিলার মতো লাগছে৷ শাকিলার সমবয়সী হবে মেবি৷ উনার চোখের দিকে তাকানোর সাহস হলো না৷ উনাকে একবার সবার সাথে বসে চা খেয়ে দেখেছি৷ ম্যাডাম বলল,

“শ্রুতি এসব কি ধরনের কথা? শালিক লেখাপড়ায় অনেক ভালো।আমরা তার কাছ থেকে তার মানবাধিকার কেঁড়ে নিতে পারিনা৷”

আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ক্ষোভ নিয়ে বলল,

“মা আপনার যা ইচ্ছা তাই করেন৷ একদিন দেখবেন এই ছোটলোক শালিক আপনার জীবন নাজেহাল করে ছাড়বে৷ বেশি কথা বললে বলবেন বাড়ির বউ শ্বাশুড়ির মুখে মুখে কথা বলে৷ মা আমি ভার্সিটিতে যাচ্ছি৷”

রাগ দেখিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন৷ উনি হলেন ইহানের বড় ভাই ইমনের স্ত্রী৷ ইমন ব্যবসার করেন৷ লেখাপড়া শেষ করে ইমন ভাইয়ার সাথে ব্যবসার হাল ধরবেন৷ ম্যাডাম মলিন কন্ঠে বললেন,

“আমি লেখাপড়া নিয়ে পরে কথা বলব। আমাকে ভেবে দেখতে হবে৷”

আমি মন খারাপ করে রুম থেকে চলে আসলাম। রাতে ঘুমানোর সময় বাবা মায়ের কথা ভীষণ মনে পড়ছে৷ দাদীর কারণে অকারণে ডাকা খুব মনে পড়ছে৷ ফুপা, ফুপির কথা মনে পড়ছে৷ মায়া ফুপি ঘুমিয়ে পড়েছেন অনেক আগেই৷ সারাদিন অনেক কাজ করে ক্লান্ত৷ বিছানা গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়েছেন৷ শাকিলার মায়াভরা মুখটা খুব মনে পড়ছে৷ আমাকে আসতে দিবে না বলে বাবার পায়ে পড়া শাকিলা এখন কি করছে?

চলবে…..

শালিক কি লেখাপড়ার সুযোগ পাবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here