#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_০৮,০৯
#অধির_রায়
০৮
ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে৷ আফসানা চৌধুরীর চোখের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছি না৷ গম্ভীর হয়ে বসে আসেন৷ শ্রুতি ভাবী সবার চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও আল্লাহর চোখ ফাঁকি দিতে পারবে না৷ আল্লাহ দেখেছে, ‘আমি শ্রুতি ভাবিকে ফেলে দেয়নি৷’ আমি কোন অন্যায় কাজ করিনি৷ আমি পুষ্প হয়ে সুবাস ছড়ানোর আগেই কি ঝড়ে পড়ব? আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি৷ আফসানা চৌধুরী গম্ভীর গলায় বলল,
“তুমি শ্রুতিকে ধাক্কা দিয়েছো কেন? তুমি কি শ্রুতিকে সহ্য করতে পারো না?”
আমি কি বলব? ম্যাডাম আমার কথা বিশ্বাস করবে কি? আমি তো শ্রুতি ভাবিকে ফেলে দেয়নি৷ আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“ম্যাডাম আমি সত্যি কথা বলছি৷ আমি শ্রুতি ভাবীকে ফেলে দেয়নি৷ শ্রুতি ভাবী তো…।”
আমার পুরো কথা শুনলেন না৷ আমাকে থামিয়ে দেন৷ বড়লোক মানুষ গরিবের কথার মর্যাদা দিতে পারেন না৷ আমাদের কথা শোনার মতো সময় নেই তাদের৷ ভারী গলায় বলল,
“আমি আজ সকালে খেয়াল করছি তুমি শ্রুতির রুমে কফি নিয়ে যেতে চাওনি৷ শ্রুতির সাথে তোমার এতো কিসের শত্রুতা?”
শ্রুতি ভাবী সকাল বেলা আমাকে তাদের রুমে যেতে মানা করেছেন৷ আমি কিভাবে বলব ম্যাডামকে? চোখের দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না৷ রক্তিম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন৷ আমার ভয় হচ্ছে আমাকে বিনা কারণে ভুল বুঝছেন৷ পৃথিবীতে সবাই আমাকেই কেন ভুল বুঝে? আমার উপর কেন সবার এতো ক্ষোভ? আল্লাহ আপনি আমার উপর সহায় হোন৷ আপনি ছাড়া আমাকে কেউ বুঝতে পারবে না৷ আমাকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দেখে পুনরায় প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল আমার দিকে। তবুও কোন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি না৷ ওষুধের বক্স থেকে কি যেন নিল? আমাকে কি ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে বিক্রি করে দিবে নাকি! আমি জানি যারা বড়লোক হয় তারা অসহায় মেয়েদেরকে বাহিরের দেশে বিক্রি করে৷ আমি আর কোনদিন মা বাবার মুখ দেখতে পারব না৷ শাকিলাকে জড়িয়ে ধরতে পারব না৷ ভাবতেই চোখের কোণে অশ্রু চলে আসল৷ বুকের মাঝে সূক্ষ্ম ব্যথা শুরু হলো। আমার চারদিকে ঘুরে ঘরে বলল,
“সামনে হাত বাড়াও৷”
আমি হাত কাচুমাচু করছি৷ হাত বাড়ানোর সাহস হচ্ছে না৷ দরজার দিকে তাকালাম ফুপি দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচলে চোখের জল মুছে যাচ্ছে। আমি ভয়ে ভয়ে নিজের হাত সামনের দিকে এগিয়ে দিলাম৷ খিঁচে চোখ বন্ধ করে আছি৷ আমার হাতে একটা মলম দেন৷ মিষ্টি মধুর স্বরে বলল,
“যেখানে ব্যথা পেয়েছো সেখানে মলম লাগিয়ে নাও৷ আমি সবটাই দেখেছি উপর থেকে৷ মিম পাতা যতই তিতা হোক পান করতে পারলে মধুর সন্ধান পাওয়া যায়৷ আমি চাই তুমি নিম পাতা অংশ পান করো। শ্রুতি একদিন তোমাকে নিজের বোনের জায়গা দিবে৷”
আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল৷ এই বুঝি এখনই মা*রা যাব৷ আমি ভাবতেই পারিনি ম্যাডাম আমার সাথে এমন করবেন৷ আমি ভাবছিলাম আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবেন৷ না হয় বাহিরের দেশে প্রচার করে দিবেন৷ চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না৷ টু*প করে চোখ থেকে নোনা জল গড়িয়ে পড়ল।
ইহান ভাইয়ার কথামতো বই নিয়ে ইহান ভাইয়ার রুমে চলে গেলাম৷ একটা অ*স*ভ্য লোক ইহান ভাইয়া৷ চারিদিকে ঠান্ডা হাওয়া বইয়ে৷ ইহান ভাইয়ার রুম এসির জন্য আরও ঠান্ডা। তবুও অ*স’ভ্য লোকের মতো টু কোয়াটার পড়ে বসে আছেন৷ খালি গায়ে থাকতে লোকটার কি ভালো লাগে? একটা মেয়ের সামনে কিভাবে এভাবে খালি গায়ে থাকে? গ্রামে অনেক ছেলেকে খালি গায়ে দেখেছি কখন লজ্জা পাইনি৷ আজ কেন এতো লজ্জা লাগছে? লজ্জার মাথা খেয়ে বই নিয়ে ফ্লোরে বসতে নিলেই ইহান ভাইয়া বলল,
“টেবিলে দুইটা চেয়ার রাখা আছে৷ যেকোন একটা চেয়ারে বসতে পারো। আমি ফ্লোরে বসার অনুমতি দেয়নি৷”
আমি জানি, ইহান ভাইয়ার কথা অমান্য করলে আজ আমাকে শেষ করে দিবে৷ সেদিন শপিং মলে বলছিলাম এতোগুলো পোশাক আমি নিবো না৷ লোক সমাজের সামনেই হাত তুলতে নিছিল৷ ফর্সা মুখাটা লাল বর্ণের মতো হয়ে গেছিল। আমি চেয়ার টেনে বসলাম৷ অন্য চেয়ার টেনে ভাইয়া বসতেই ভাইয়ার পায়ের সাথে আমার পা লাগে৷ সারা দেহে কারেন্ট বয়ে যায়৷ তিনি সাথে সাথে পা সরিয়ে বলেন,
“সরি৷ আমি খেয়াল করিনি৷ পড়াগুলো বের করো৷ অনেকদিন থেকে পড়ার সাথে তোমার যোগাযোগ নেই৷ সেজন্য সবকিছু নতুন৷ তাই মন দিয়ে পড়তে হবে৷”
একে একে সব পড়া কমপ্লিট করে ভাইয়াকে দিলাম৷ চলে আসতে নিলে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“ম্যাথ বই বের করো! রেগুলার পড়ার পর এক অধ্যায় করে ম্যাথ করতে হবে৷”
আমার এখন কান্না আসছে৷ রাত প্রায় এগারোটা বাজে৷ আমি কখন যাব? ঘুমের জন্য বইয়ের পড়া দেখতে পারছি না। সকল পড়া ঝাপসা হয়ে আছে৷ আমি এখন কিভাবে ম্যাথ করব? বাধ্য মেয়ের মতো ম্যাথ বই বের করে কয়েকটা ম্যাথ করেই টেবিলে ঘুমিয়ে পড়লাম৷
ফজরের আজান কানে আসতে আমার ঘুম ভাঙে৷ ঘুম থেকে উঠে নিজেকে ফুপির পাশে আবিষ্কার করি৷ আমার ঠিক মনে আছে আমি ভাইয়ার ঘরে ছিলাম। আমি এ ঘরে কিভাবে আসলাম? আমি চারদিক মাথার পাশেই আমার বই রাখা আছে৷ আমাকে কি ইহান ভাইয়া এখানে রেখে গেছে৷ মনে হয় ঘুমের মাঝে এখানে এসেছি৷ ফুপিকে ডাক দিলাম৷ একসাথে সালাত আদায় করলাম৷ ফুপি কুরআন পড়তে পারত না৷ আমি রোজ সকালে ফুপিকে কুরআন পড়তে সাহায্য করি৷ এভাবে কেটে যাচ্ছে দিন। সেমিস্টার পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পেরেছি বলে বাড়িতে সবাই খুশি৷
শ্রুতি ভাবী নিজের বাবার বাড়িতে ঘুরতে গেছেন৷ আমি কফি নিয়ে ইমন ভাইয়ার রুমে গেলাম। টি টেবিলে কফি রেখে চলে আসতে নিলেই ইমন ভাইয়া পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরেন৷ ঘটনা এতো দ্রুত ঘটে কিছুই বুঝতে পারিনি৷ চিৎকার করতে নিলেই মুখ চেপে ধরেন৷ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি৷ কিন্তু ছাড়াতে পারছি না৷ ইমন ভাইয়া আমার কানে ফিসফিস করে বলল,
“বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমি বাসার সবাইকে ডেকে বলব তুই আমার সাথে নোং*রা*মি করতে চাস৷ আমি কি বলি চুপচাপ শোন?”
আমি ইমন ভাইয়ার কথার কোন গুরুত্ব না দিয়ে নিজেকে সারানোর চেষ্টা করি৷ ইমন ভাইয়া আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরেন৷ আমার আমার ধম বন্ধ হয়ে আসছে৷ আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি৷ ধা*ম*রা ছেলের সাথে পেরে উঠতে পারছি না৷ ইমন ভাইয়া এতো খারাপ আমি ভাবতেও পারিরি৷ বাড়িতে এতো সুন্দর বউ থাকতেও আমার দিকে নজর দিয়েছেন৷ ইমন ভাইয়াকে আমার স্বামীর মতো মনে হচ্ছে৷ আমাকে সব সময় এভাবে ভো*গ করত। চোখ পাকিয়ে বলল,
“শালিক পাখি তুই আমর সাথে রাত কাটাবি৷ কেউ কিছু জানবে না৷ আমি তোকে সোনা দিয়ে মোরে দিব৷ আমার চাহিদা তুই পূরণ করবি৷”
এসব বা*জে কথা আমার কাছে বি*ষের মতো শোনাচ্ছে৷ হাতের বাঁধন হলকা হতেই ইমন ভাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসি৷ ইমন ভাইয়ার রুম থেকে দৌড়ে ইহান ভাইয়ার রুমে চলে যাই। ইহান ভাইয়া এখনও ঘুমাচ্ছেন৷ চোখ থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে৷ কতোটা অ’স’ভ্য হলে মানুষ এমন কাজ হতে পারে৷ অঝোরে কান্না করতে থাকলাম৷ আজ মানুষ রুপি পশুর দেখা পেলাম৷ আমি উনাকে নিজের বড় ভাইয়ের মতো দেখি৷ উনি আমার সাথে এসব কি করে করলেন? ইহান ভাইয়ার ঘুম ভেঙে যেতে পারে৷ তাই নিজেকে শক্ত করে রুমে চলে আসলাম৷
রান্না ঘরের দিকে আর নজর দিলাম না৷ ফুপি একা একা সব রান্না করলেন৷ বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে ইমন ভাইয়ার পশুর রুপ। কি করে করতে পারল আমার সাথে এমন কাজ? যারা পরকীয়া করে তাদের কাছে এসব কিছু কিছুই না৷ চোখের জল বাঁধ মানছে না৷ স্কুলে যাওয়া হলো না৷ ফুপিকে বলেছি ‘মাথা ব্যথা স্কুলে যেতে পারব না৷’ সারাদিন রুম থেকে বের হলাম না৷ খাবার গলা দিয়ে নামল না৷ রাতে ইহান ভাইয়ার কাছে পড়তেও গেলাম না৷ ইহান ভাইয়া নিজে থেকে আমার রুমে আসলেন৷ গম্ভীর গলায় বলল,
“শালিক আমার রুমে আয়৷ পড়তে হবে না৷ তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
আমি জবাবে বললাম,
“ভাইয়া আমার শরীর ভালো লাগছে না৷ আমি আজ যেতে পারব না৷ বেশি দরকার থাকলে এখানেই বলেন৷”
চোখ রাঙিয়ে বলল,
“আমি এক কথা দুইবার বলতে পছন্দ করিনা৷ ১ মিনিটের মাঝে তোমাকে আমার রুমে দেখতে চাই৷”
ইহান ভাইয়া হনহন করে চলে যান৷ না চাওয়া সত্ত্বেও আমি ধীর পায়ে ইহান ভাইয়ার রুমে যায়৷ আমি রুমে যাওয়ার পর ইহান ভাইয়া রুমের দরজা বন্ধ করে দেন৷ সাথে সাথে মনে পড়ে সকালের ঘটনা। ইহান ভাইয়া আমার সাথে কিছু করবে না তো৷ ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলাম৷ গম্ভীর ভারী গলায় বলল,
“আজ সকালে কি হয়েছিল? তোর ঘাড়ে এভাবে খা*ম*চি কাটছে কে?”
ভাইয়ার চোখ দু’টো লাল৷ ভাইয়াকে এভাবে রাগ করতে কখন দেখিনি৷ আমার ঘাড়ে খা*ম*চির দাগ ভাইয়া কিভাবে দেখল? আমি তো মাথা থেকেই কখন ওড়না সরাই না৷ আমি মনে সাহস জুগিয়ে বললাম,
“জানি না ভাইয়া৷ রাতে ঘুম থেকে উঠে এমন দেখতে পাই৷ সেজন্য আমি আজ স্কুলে যায়নি৷ যদি কারোর নজর পড়ে সে ভয়ে৷”
“তোর চোখে মুখে ভয় দেখতে পাচ্ছি৷ সত্য করে বল, তুই ভয় পাচ্ছিস কেন?”
আমি চড়া গলায় বললাম,
“আমি ভয় পেতে কেন যাব? আমি কি করছি না করছি সেসব বিষয়ে আপনার জানা লাগবে কেন?”
আমায় কথায় ইহান ভাইয়া আরও রেগে যান৷ আমার হাত চেপে ধরে বলল,
“শালিক আমার থেকে তুই কিছুই লুকাতে পারবি না৷ তুই সত্য কথা বলবি? আর সত্য কথা কিভাবে আদায় করতে হয়? আমার ভালো করেই জানা আছে।”
ভাইয়া আমাকে কখনও তুই করে বলেন না৷ আজ কেন তুই করে বলছে? তার মানে ভাইয়া খুব রেগে আছেন আমার উপর৷ আমি ভয়ে ভয়ে মাথা নিচু করে বললাম,
“আপনি কখনও কপাট বন্ধ করেন না৷ আজ কপাট বন্ধ করাতে আমি কটু ভয় পেয়ে গেছিলাম৷ আমি সত্য বলছি৷ আমি কিছুই করিনি৷ আমার ঘাড়ে কখন খামচির দাগ আসল জানি না৷”
আমি কান্না করে ফেললাম৷ আমাকে কান্না করতে দেখে ভাইয়া বলল,
“ন্যাকামি করবি না আমার সামনে। তুই এখন যেতে পারিস৷ আমি তোর মুখ থেকে অন্য সময় সত্য কথা বের করব।”
আমি দ্রুত পায়ে চলে আসলাম। আমি ইমন ভাইয়ার রুম থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসার সময় ইমন ভাই আমাকে ধরতে চান৷ উনার হাত আমার ঘাড়ে পড়ে৷ আমি উনাকে উপেক্ষা করে চলে আসলে আমার জামার কিছু অংশ উনার হাতে রয়ে যায়৷ তখনই ঘাড়ে খা’ম’চি দেয়৷ সেটা দাগ হয়ে গেছে আমিই জানলাম না৷ ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আমি সত্য কথা কখনও আপনাকে বলতে পারব না৷ আমি জানি, আপনি ইমন ভাইয়াকে অনেক শ্রদ্ধা করেন, ভালোবাসেন৷ আপনি কখনো আমার কথা বিশ্বাস করবেন না৷ আমি নিজেকে বাঁচানোর জন্যই সবকিছু আড়াল করে গেলাম৷ আপনাকে কথা দিচ্ছি, আমি ইমন ভাইয়াকে দীনের পথে নিয়ে আসব। ইমন ভাইয়া যেগুলো কাজ করে ইসলামের দৃষ্টিতে সব গুণা৷ ইসলামের পথে এসে নিজেকে সংশোধন করলে ক্ষমা করে দিব৷ নাহলে আমার অপমানের শাস্তি আমি সময় বুঝে দিব৷ বুঝিয়ে দিব মেয়েরা অবহেলার পাত্রী নয়৷ রুখে দাঁড়ালে সবকিছু করতে পারে৷ প্রতিটি মেয়েই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা। মেয়ে জাতিই পারে নিজের সাথে যুদ্ধ করে সন্তান জন্ম দিতে৷ আর সে মেয়ের জাতির কাছে এসব তুল্য৷ আমি আগের শালিক নেই৷ নিজেকে তৈরি করছি ধীরে ধীরে৷
চলবে….
#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_৯
#অধির_রায়
ফাস্ট বেঞ্চে বসে আছি৷ চোখে কালো চশমা৷ এটা ইহান ভাইয়ার চশমা। মানুষটা যেমন সুন্দর চশমাটাও খুব সুন্দর। আমার খুব ভালো লাগে এই চশমা৷ ইহান ভাইয়াকে এক প্রকার কথার মায়াজালে ফাঁসিয়ে চমশা নিজের করে নিয়েছি৷
“ভাইয়া আপনার কালো চশমাটা আমাকে একটু পরতে দিবেন৷”
আমার কথায় ইহান ভাইয়া আকাশ থেকে পড়ল৷ কোনদিন ইহান ভাইয়ার কাছে কিছু চাইনি৷ সন্দেহের চোখে বলল,
“তুমি আমার চশমা নিয়ে কি করবে? তুমি তো চশমা পড়ো না৷”
ঠোঁট ভিজিয়ে ইমোশনাল হয়ে বললাম,
“আমি কোনদিন চশমা পড়িনি৷ আপনি যখন এই চশমা চোখে দিয়ে বের হোন তখন আপনাকে একদম নায়কের মতো লাগে৷ আমি আপনার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকি৷ আপনাকে কতোটা সুন্দর লাগে বলে বুঝাতে পারব না৷”
আমার কথা শুনে ইহান ভাইয়ার কাশি উঠে। আমি দৌড়ে পানি এনে দেয়৷ পানি পান করে নিজেকে স্বাভাবিক করে৷ চোখ ছোট করে বলল,
“আমার অনেকগুলো চশমা আছে৷ তোমার যেটা পছন্দ নিতে পারো৷ আমি এ চমশাটা তোমাকে দিতে পারব না৷ আমার পছন্দের চশমা এটা৷”
ইহান ভাইয়া চশমা নিয়ে শার্টের বাটনে গুছে রাখে৷ বুকের উপর রাখাতে ইহার সৌন্দর্য দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়৷ আমিও মনে মনে বললাম, ‘আমি যেভাইকে হোক চশমা নিব৷’ মিথ্যা হাসি দিয়ে বললাম,
“আমি আপনার কাছে কোনদিন কিছু চাইনি৷ আজ একটা চশমা চেয়েছি৷ আপনি না হয় আর একটা এমন কিনে দিবেন৷ আমাকে দিলে কোন সমস্যা হবে না৷ বুঝতে পারছি আজ আপনার সমতুল্য নয় বলে আমায় চশমা গিফট করতে পারছেন না৷”
কথা বলার মাঝে এমন ভাব করলাম চোখে জল এসে পড়ল৷ ভাইয়া আমার প্রতি ইমোশনাল হয়ে চশমা আমাকে গিফট করেন৷ আশাও আমার পাশে বসে আছে৷ আজ আমরা দু’জন একটু আগেই ক্লাসে এসেছি৷ একে একে আসতে থাকে সবাই৷ ক্লাস ক্যাপ্টেন নিহা বলল,
“কাক যতই ময়ূরের পাখা ছিঁড়ে গায়ে লাগিয়ে ঘুরে বেড়ালে কাক কাকই থেকে যায়৷ কা*লা শালিককে কালো চশমাতে কিন্তু কোকিল লাগছে। আমার ঘুম ভাঙাইয়া গেল রে ম*রা*র কোকিলে।
নিহার কথায় চারিপাশ হেঁসে ঘড়া ঘড়ি খাচ্ছে৷ আমি জানতাম, আজ তোরা এমন কথায় বলবি৷ তোদের ভয় দেখাতেই আমি এটা পড়ে এসেছি৷ আমাকে পিছন বেঞ্চে বসার জন্য একবার বলে দেখ৷ তোর কি অবস্থা করি? নিহা আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। ঘৃণামিশ্রিত ক্ষোভ নিয়ে উঁচু গলায় বলল,
“তোকে আমার সিটে বসার অনুমতি কে দিয়েছে? তুই এখনই পিছন সিটে বসবি৷ কা*লা মেয়ে হয়ে সামনে বসতে আসছে৷
আমি মুচকি হেঁসে বললাম,
“নিহা বেবি এটা তোমার বাবার স্কুল নয়৷ তোমার কথামতো আমি চলবো না৷ আমি এখানে বসেছি আর এখানে বসেই ক্লাস করব৷”
আমার কথার ধরণ দেখে আশার মুখ অ আকৃতির হয়ে যায়৷ আশা ভাবতেই পারেনি আমি এমন কথা বলবো৷ নিহার প্রচন্ড রাগ হয় আমার উপর৷ আমার দিকে একটা ব্যাগ ছুঁ*ড়ে মা*রে৷ আমিও কম নয়। আমি ব্যাগ থেকে বই বের নিহার দিকে ছুঁ*ড়ে মা*রি৷ নিহা রেগে আমার দিকে এগিয়ে আসে৷ আমাকে থা*প্প*ড় মা-রার জন্য হাত তোলার আগে আমি নিহার পেটে বসিয়ে দেয় এক ঘু*শি৷ চশমাতে ফু দিতে দিতে বললাম,
“আজ থেকে নিহার দিন শেষ৷ আবার ক্লাস ক্যাপ্টন নির্বাচন হবে। এবার আমি হবো ক্লাস ক্যাপ্টন৷ আমাকে যে ভোট না দিবি তার অবস্থা নিহার মতো করব৷”
নিহা ক্ষোভ নিয়ে রাগী চোখে বলল,
“তোর কি যোগ্যতা আছে ক্লাস ক্যাপ্টন হওয়ার? তোকে কেউ ভোট দিবে না৷ আমি ছিলাম ক্লাস ক্যাপ্টেন৷ আর এ বছর আমিই হবো ক্লাস ক্যাপ্টন৷ শালিক তুই জানিস মনে হয়, পিপীলিকার পাখা গজায় ম*রি*বা*র কালে। আমার সাথে শ*ত্রু*তা করে তোর বিপদ ডেকে আনলি৷
আমি অভিনয় স্বরে বললাম,
“আহারে আমার ধ*লা বিলায়ের বাচ্চা। এখনও তুই আমার পায়ের কাছে বসে আছিস৷ কাকে ভয় দেখাস? আমি তোকে কোনদিন ভয় পাইনি৷ বরং আমার সাথে লাগতে আসলে তোর অবস্থা এমনই হবে। আমাকে এতদিন দুর্বল ভেবে আমার সাথে যা অন্যায় করেছিস তার শাস্তি হিসেবে আজ থেকে তুই ক্লাসের সব কাজ করবি৷”
সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
“আজ থেকে তোরা কাউকে চেহারা নিয়ে অবহেলা করলে তোদের অবস্থা নিহার মতো করবো। আমি চৌধুরী ভিলা থেকে প্রতিদিন আসি৷ ইমন ভাইয়ার বোন৷ কোন কথা বললে ভাইয়াকে বলে তোদের এমন অবস্থা করব, তোরা ভাবতেও পারবি না৷”
আমাদের স্কুলের সামনে ইমন ভাইয়ার ইয়া বড় ছবি টানানো৷ স্কুল এবং কলেজ এক সাথে হওয়ায় এখানে অনেক ছাত্রছাত্রী। কলেজ লাইফে ভাইয়া লিডার ছিল৷ কথায় কথায় সবাইকে মারত। তখন থেকে ইমন ভাইয়া মেয়েদের দেহের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন৷ আমি ইমন ভাইয়ার সামনে সেদিনের পর থেকে আর যায়নি। উনাকে সব সময় এড়িয়ে গেছি৷ তবে তার নাম করে সবাইকে একটু ভয় দেখালাম৷ সবাই নিজ নিজ জায়গায় বসে পড়ল৷ আশা হাত তা*লি দিয়ে বলল,
“আজ থেকে ক্যাপ্টের সমস্ত দায়িত্ব পালন করবে শালিক। আমাদের নতুন ক্যাপ্টেন শালিক।
নিহা ক্ষোভ নিয়ে আবারও বলল,
“আমি ক্যাপ্টেন থাকতে শালিক কেন দায়িত্ব পালন করবে? আমি ক্যাপ্টেন ক্লাস নাইন থেকে৷ সবাই আমার কথা শুনবে৷”
শালিক মুচকি হেঁসে বলল,
“জীবনের মায়া থাকলে তুই আজই স্যারকে বলবি আমি শালিকের হাতে ক্লাস ক্যাপ্টের দায়িত্ব তুলে দিব৷ নাহলে ইমন ভাইয়াকে বলতে হবে৷”
আমি নিজের জায়গায় বসে পড়লাম৷ ক্লাসের বেল পড়ে গেছে৷ মিনিট দুইয়ের মাঝে স্যার চলে আসল ক্লাসে৷ আমি নিহাকে চোখের ইশারায় বলতে বললাম। নিহা আমার চোখের ইশারা বুঝতে পেরে স্যারকে আমার কথা বলে। নির্বাচন হওয়ার আগ পর্যন্ত আমার হাতেই দায়িত্ব চলে আসে৷ ঢাকার মেয়েরা ভয় কমই পায়। একমাত্র মৃ*ত্যু*র ভয় দেখালেই একটু ভয় পায়৷ আমাদের সেকশনে ছেলে না থাকার নিজেকে অতি সহজেই প্রধান বানিয়ে তুললাম৷ আমি এতোদিনে শিখে গেছি জোরের উপর দুনিয়া চলে৷ অবহেলিত মানুষের উপর নিজের জো*র খাটাতে পারলেই নিজেকে ক্ষমতাবান মনে করে এসব মানুষ৷ আমিও আজ একটু জো*র দেখিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করলাম৷ আমি ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু বুঝিয়ে দিব৷ ক্ষমতা দিয়ে ময়নুষের মন জয় করা যায় না৷ ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হয়৷
স্কুল গেইটে ইহান ভাইয়াকে দেখে অবাক হলাম৷ ছুটির পর ভাইয়া আমাকে নিতে আসছে৷ আমাকে দেখে ইহান ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসলেন৷ মুচকি হেঁসে বলল,
“ক্লাস কেমন হলো? মন দিয়ে সব ক্লাস করছো তো?
আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না৷ ইহান ভাইয়া আমার চোখের সামনে৷ আমি কোন স্বপ্ন দেখছি নয়তো৷ নিজ হাতে চিমটি কাটলাম৷ স্বপ্ন নয় ইহান ভাইয়া সত্যি সত্যি আসছে৷ আমতা আমতা করে বললাম,
“আপনি এখানে কেন? স্কুলে আপনার কোন কাজ ছিল?”
“না কোন কাজ ছিল না৷ আমি তোমাকে নিতে আসছি৷”
“আমি একাই চলে যেতে পারি৷ এক বছর থেকে এই স্কুলে৷ কোনদিন আমাকে নিতে আসেন নি তো। বাড়িতে কোন সমস্যা হয়েছে৷”
ইহান ভাইয়া বুঝতে পেরেছেন আমাকে চার ছয় বুঝাতে পারবেন না৷ বুদ্ধি খাঁটিয়ে বলল,
“হ্যাঁ। সেজন্য তোমাকে নিতে আসছি৷ চল তাড়াতাড়ি। বাড়িতে অনেক বড় সমস্যা হয়েছে৷
ইহান ভাইয়া বাইক নিয়ে এসেছেন৷ ইহান ভাইয়ার তো বাইক ছিল না৷ বাইক দেখে মনে হচ্ছে আজই কিনেছে৷ ভাইয়া কি বাইক কিনেছে? আমার ভয় হচ্ছে বাড়িতে মায়া ফুপির কিছু হয়নি তো৷ চিন্তা করতে পারছি না৷ তড়িঘড়ি করে বাইকে চে’পে বসলাম ৷ ভাইয়া দ্রুত গতিতে বাইক ছাড়াতেই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম৷ ভয়ে চোখ বন্ধ করে বললাম,
“ভাইয়া আস্তে চালান৷ আমার অনেক ভয় লাগছে৷”
ভাইয়া দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
“তুই যদি এভাবে জড়িয়ে ধরিস আস্তে আস্তে চালাব৷ আর দূরত্ব বজায় রেখে বসলে তোকে বাইক থেকে ফেলে দিব৷”
বাইকে উঠা হয়নি তেমন। গ্রামের দুই তিনবার কাকার বাইকে উঠেছিলাম৷ ঢাকা এসে প্রথম ভাইয়ার পিছনে উঠলাম৷ ভাইয়া বাড়ির সামনে এসে বাইকের গতি বাড়িয়ে দিলেন। চোখের পলকেই বাড়ির গেইক ছেড়ে আসলাম৷ আমি তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম,
“ভাইয়া বাড়িতে যাবেন না৷ বাড়ি তো ছাড়িয়ে আসলাম৷”
ইহান ভাইয়া ধমকের স্বরে বলল,
“কথা না বলে চুপচাপ বসে থাক। আর একটা কথা বললে তোকে ফেলে দিব৷”
আমি ভয়ে কোন কথা বাড়ালাম না৷ ইহান ভাইয়া বাইক থামাল একটা পার্কের সামনে৷ আমি বাইক থেকে নামলাম৷ ভাইয়া বলল,
“আজ বাইকটা নতুন কিনছি৷ সেজন্য তোকে ফুসকার ট্রিট দিতে এখানে নিয়ে আসলাম৷”
খুশির ঠে’লায় চকিত হয়ে বললাম,
“সত্যি ভাইয়া, আপনি বাইক কিনেছেন! খুব সুন্দর হয়েছে৷”
আমি আর ইহান ভাইয়া বেঞ্চে বসে বসে ফুসকা খাচ্ছি৷ আজ খুব ভালো লাগছে৷ ইহান ভাইয়া নিজে থেকে আমাকে ফুসকার ট্রিট দিয়েছেন৷ গ্রামে থাকতে শুধু ফুসকার নাম শুনেছি৷ শুনেছি বাজারে ফুসকা ওয়ালা আসতো৷ কিন্তু কখনও ফুসকা খাওয়া হয়নি৷ নবম শ্রেণিতে উঠতেই বিয়ে হয়ে যায়৷ বিয়ে হতে না হতেই শুরু হয় নির্মম অত্যাচার৷ এতো খুশির মাঝেও নিজের মনটা খারাপ হয়ে গেল। চোখ থেকে টুপ করে জল পড়ল৷ ইহান ভাইয়া ভয়ে পেলে গেল৷ আমার কষ্ট হচ্ছে না৷ আমার থেকে বেশি কষ্ট ইহান ভাইয়ার হচ্ছে৷ উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
“কি হয়েছে তোমার? তুমি কান্না করছো কেন?”
আমি ভেজা গলায় বললাম,
“আজ বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে৷ মা, বাবা, ভাই, বোন, ভাবী তারা কেমন আছেন, জানি না?”
না চাওয়া সত্ত্বেও মুখ থেকে সত্য কথা বেরিয়ে আসল৷ সত্য কখনও চাপা থাকেনা৷ তার আরও একটা প্রমাণ পেলাম৷ ইহান ভাইয়া চকিত হয়ে বলল,
“তোমার মা-বাবা, ভাই-বোন বেঁচে আছে! তুমি যে বলছিলে তারা মৃ’ত। স্কুলে তুমি তাদের নামের আগে মৃত লিখছো৷ তার মানে তুমি আমাদের সবাইকে মিথ্যা কথা বলছো?”
আমি চোখের জল মুছে ভেজা গলায় বললাম,
“হ্যাঁ। আমি আজ কিছুই লুকাব না আপনার কাছে৷ আমি আপনাকে সব বলব। আপনি কাউকে কিছু বলবেন না৷”
আমি ভাইয়ার হাত ধরে ফেলি৷ মাথা নাড়িয়ে ভাইয়া সম্মতি জানান৷ ফুসকা ওয়ালাকে টাকা দিয়ে আমরা একটা নির্জন জায়গায় বসি৷ আমি শুকনো ঠোঁট জিহ্ব দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে বললাম,
“আমার মা বাবা, বড় ভাই আরাফ আর ছোট আদরের বোন শাকিলা বেঁচে আছে। আমাকে বড় খালা চো*রের অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন৷ আমার কাছে মা বাবা মৃ*ত৷ কারণ আমার পাশে তারা কেউ বিপদের দিনে এগিয়ে আসেননি৷ আমার বোনের চোখের জলকেও তারা অবহেলা করছে৷ চো*রের অপবাদ নিয়ে বাঁচতে চাইনি বলে আমার ফুপি আর দাদি বি*ষ পান করে মা*রা গেছেন৷ আমার ভালোবাসার মানুষ ছিল আমার দাদী, আর ফুপি৷”
কথা বলতে পারছি না৷ চোখের অবাধ্য নোনা জল বাঁধ মানছে না৷ অনিচ্ছা সত্ত্বেও অঝোর ঝড়ে যাচ্ছে৷ ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি ভাইয়ার চোখেও অশ্রু টলমল করছে৷ ভাইয়ার চোখের জল দেখে বুকের কোণে সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করলাম৷ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম,
“আমি কালো বলে গ্রামের কেউ আমাকে ভালোবাসাতো না৷ সকাল বেলা আমার মুখ কেউ দেখতো না৷ এখন শ্রুতি ভাবী যেমন সকাল বেলা উনার রুমে যেতে মানা করেছেন৷ আমি অপয়া৷ আমার মুখ দেখলে কারোর দিন ভালো যায়না৷ আমার বিষয়ে সবকিছু জানেন মালী কাকা৷ উনি আমার জীবনে ফেরেশতার মতো এসেছেন৷ আমাকে তাদের হাত থেকে বাঁচিয়ে সুন্দর একটা জীবন দিয়েছেন। আমি সারাজীবন উনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব৷ উনি না থাকলে শালিক নামের কোন মেয়ে আপনাদের বাসায় আসতো না৷ অনেক আগেই আল্লার কাছে চলে যেতাম৷”
আর কিছু বলতে পারলাম না৷ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম৷ ভাইয়ার চোখেও ভিজে উঠল৷
চলবে….