শালিক_পাখির_অভিমান #পর্ব_১০,১১

0
437

#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_১০,১১
#অধির_রায়
১০

ইহান ভাইয়া পরম যত্নে আমার অবাধ্য কেশগুলো কানের কাছে গুছে দিলেন৷ প্রতিটি স্পর্শে ভালোবাসার ছোঁয়া নিহিত। ইহান ভাইয়ার ভালোবাসা আমার চোখে ধরা পড়ছে না৷ আমি নিজের মতো চোখের অশ্রু ফেলে যাচ্ছি৷ ইহান ভাইয়া আহত কন্ঠে বলল,

“শালিক কান্না থামাও৷ তোমাকে কান্না করতে দেখলে আমার ভীষণ কষ্ট হয়৷”

আমার কান্নায় ইহান ভাইয়ার কেন কষ্ট হবে? আমি অশ্রুসিক্ত চোখে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। আমার চোখের জল মুছে দিলেন৷ মিষ্টি স্বরে বলল,

“এখন আর কান্না নয়৷ তোমার থেকেও অনেক খারাপ অতীতের সাথে কেউ না কেউ জড়িত৷ আমি বলব না তুমি অতীতের স্মৃতি ভুলে যাও৷ অতীতকে আগলে রেখে সামনের পথে এগিয়ে চল৷ তুমি চাইলে আমি তোমাকে তোমাদের বাড়িতে নিয়ে যাব৷”

ভাইয়ার কথা শুনে আমার মনের সূক্ষ্ম ব্যথা তীব্র ব্যথায় পরিণত হলো৷ যে বাড়ি থেকে রাতের আঁধারে চো*রের মতো বেরিয়ে আসছি সে বাড়িতে কিছুতেই যাব না৷ আমার জীবন চলে গেলেও আমি সে বাড়িতে যাব না৷ ভেজা গলায় বললাম,

“ভাইয়া আমার খারাপ লাগছে৷ আমি বাড়িতে যাব৷ আর হ্যাঁ আমি কোনদিন গ্রামের বাড়িতে যেতে পারব না৷ যে গ্রামে আমার কোন মর্যাদা নেই সে গ্রামে আমি যাব না৷ আমি সেদিনই ওই গ্রামে ফিরবো যেদিন সবাই আমার কদর বুঝতে পারবে৷”

সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসলাম। বাড়িতে মায়া ফুপি ছাড়া কেউ নেই৷ সমস্ত বাড়ি খাঁ খাঁ করছে৷ বাড়ির প্রাণ আফসানা চৌধুরী বাড়িতে নেই। যিনি সব সময় বাড়িতে নিজের আদেশ বজায় রাখেন৷ মায়া ফুপি রান্না বাদ দিয়ে সিরিয়াল দেখছে৷ আমি স্কুল ড্রেস পরিবর্তন করে সাধারণ পোশাক পড়লাম৷ ফুপির পাশে বসতে বসতে বললাম,

“ফুপি আপনার শরীর ঠিক আছে৷ ম্যাডাম বাড়িতে নেই৷ আপনি তো এমন সময় রান্না করেন৷”

ফুপি মুচকি হেঁসে বলল,

“আজ কোন রান্না করতেই হবে না৷ আফসানা চৌধুরী আমাদের জন্য শপিং করতে গেছেন৷ আমাকে রান্না করতে মানা করেছেন৷ আজ বাহির থেকে সকল খাবার নিয়ে আসবে৷”

আফসানা চৌধুরী বাহিরে পা রাখলেই রান্না করতে হয় না৷ সেদিন ফুপির ছুটি৷ তিনি বাহির থেকে সবার জন্য খাবার নিয়ে আসেন৷ কিছুটা চমকে বললাম,

“কিছুদিন আগে কুরবানির ঈদ গেল। তখনও তো আমাদের অনেক পোশাক কিনে দিয়েছেন৷ দুই ঈদে আমি যেগুলো থ্রি পিচ পেয়েছি তা দিয়ে অনায়াসে দুই বছর পার করে দিতে পারব৷”

আমার কথার কোন পাত্তা না দিয়ে ফুপি ফ্রীজ থেকে মিষ্টি এনে আমার মুখে ভ*র*তি দিলেন৷ মুখে মিষ্টি থাকার জন্য কথাও বলতে পারছি না৷ ফুপি বলল,

“ইহান বড় চাকরি পেয়েছে৷ ম্যাডাম ইহানকে একটা মটর বাইক কিনে দিয়েছেন৷ আজ তুই সবগুলো মিষ্টি খাবি৷ মিষ্টি খেতে কোন মানা নেই।

আমি মানা করতে পারলাম না। বরাবর মিষ্টি আমার ভীষণ প্রিয়৷ আমি প্রায় রেগুলার চু*রি করে মিষ্টি খাই৷ নাম হয় স্যারের। কেননা স্যারও চু*রি করে মাঝে মাঝে মিষ্টি খান৷ উনার ডায়বেটিস আছে তিনি ভুলে যান৷ মিষ্টি উনার প্রাণপ্রিয় খাবার৷ উনাকে প্রতি সপ্তাহে একবার হলেও মিষ্টি খেতে হবে৷
দু*ষ্টু মিষ্টি সম্পর্কগুলো ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে৷ কেটে গেল আরও কয়েকটি দিন৷ ইহান ভাইয়া অফিস থেকে ফিরেন সন্ধ্যায়৷ কোন ক্লান্তি উনাকে গ্রাস করতে পারেনি অফিস থেকে ফিরতে রাত হলেও আমি জেগে থাকি৷ আমার জেগে থাকা বাধ্যতামূলক৷ উনি অফিস থেকে এসে আগে আমাকে পড়া ধরবেন৷ ম্যাথ বুঝিয়ে দিবেন৷ গ্রামারের বিভিন্ন নিয়ম আমাকে রেগুলার রিভিশন দেওয়াবেন। আমি রেগুলার পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেছি৷ কিন্তু ইহান ভাইয়ার মাঝে কোন ক্লান্ত নেই৷ তিনি দিব্যি সব কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

আমার বিপরীতে কেউ ক্যাপ্টেন দাঁড়ানোর সাহস দেখাল না৷ আমি এককভাবে নির্বাচিত হতে চাইনা৷ স্যারের কথামতো নিহাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল৷ একপ্রকার একক ভোটে আমি জয়ী লাভ করি৷ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিনিয়ে আনা৷ ইমন ভাইয়ার নাম না বললে কেউ আমাকে ভোট দিত না৷ সবাই ভোট দিত নিহাকে৷ দেখতে কেটে গেল আরও কয়েকটি মাস৷ নিহার মাঝে এখন কোন অহংকার নেই৷ ক্লাসের কারোর মাঝে তেমন কোন অহংকার নেই৷ সবাই আমার সাথে কথা বলে। কেউ আমাকে ভয় করে না৷ সবার মন জয় করেছি ভালোবাসা দিয়ে৷ কারো কোন কিছু হলে ঝাপিয়ে পড়তাম৷ সকলের বিপদে পাশে থেকেছি৷ কাউকে ছোট বললে তার হয়ে প্রতিবাদ করতাম৷ বর্তমানে স্কুলে প্রতিবাদী শালিক নামে পরিচিত। আমি নিজের দিকে নিজেই তাকাতে পারিনা। আমি ছিলাম গ্রামের অতি সাধারণ একজন মেয়ে৷ আজ নিজেকে দেখে মনে হচ্ছে আমি একজন অসাধারণ মেয়ে৷ সকল গরিব দুঃখীদের বন্ধু। অ’ত্য’চা’রী’দের শ*ত্রু। দেখতে দেখতে আমার পরীক্ষা চলে আসল৷ প্রতিটি পরীক্ষার দিন ভাইয়া বাইকে করে আমাকে পরীক্ষার কেন্দ্রে নামিয়ে দেন৷ পরীক্ষার শেষে বন্ধুদের সাথে চলে আসি৷ দেখতে দেখতে পরীক্ষা শেষ৷ আল্লার রহমতে ভালো পরীক্ষা দিয়েছি৷ ফুপিকে কোন কাজই করতে দেয়না৷ এখন আমিই সব কাজ করি৷ সবাইকে ভালো করতে পারলেও ইমন ভাইয়া আর শ্রুতি ভাবীর স্বভার পরিবর্তন করতে পারলাম না৷ দুপুরে শ্রুতি ভাবী আমাকে ডাক দিল৷ এক প্রকার দৌড়ে উনার রুমে গেলাম৷ উনি বিছানায় বসতে বসতে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

“আমাকে দেখে চিড়িয়াখানার জ*ন্তু মনে হয়৷ আমার রুমের দিকে তোর নজর থাকে না৷”

আমি আমতা আমতা করে বললাম,

“ভাবী আমি একটু আগেই আপনার ঘুর পরিষ্কার করেছি৷ ময়লা হলো কিভাবে জানি না?”

আমার কথা শুনে আমার দিকে টেডিবিয়ার ছু*ড়ে মা*রেন৷ অগ্নি দৃষ্টিতপ আমার দিকে তাকিয়ে আছেন৷ চোখের আগুনে আমাকে পুড়িয়ে মা*র*তে চান৷ আমি উনার এমন দৃষ্টি দেখে অনেক ভয় পাই৷ উনাকে ভয় পাই না৷ উনার বাজে চিন্তা ধারণাকে ভয় পাই৷ ঘৃণামিশ্রিত ক্ষোভ নিয়ে বলল,

“আমাকে দেখে মনে হয় এসব কাজ আমি করেছি৷ নবাবজা’দীর মতো দাড়িয়ে না থেকে ফ্লোর থেকে এগুলো পরিষ্কার কর৷”

শ্রুতি ভাবী সমস্ত ফ্লোরে বালি ছিটিয়ে রাখছে৷ কিন্তু কিছুই করার নেই৷ শ্রুতি ভাবী আামকে সহ্য করতে পারেন না আমি জানি৷ দাঁড়িয়ে বুঝার চেষ্টা করছি এমন কাজ কে করতে পারে৷ মুখের উপর ছুঁ*ড়ে বলল,

“আমার কথা কানে যাচ্ছে না৷ আমি তোকে ফ্লোর পরিষ্কার করতে বলছি৷ এখন তোকে দেখে মনে হয় তুই এই বাড়ির মালকিন আমরা কাজের লোক৷ ম্যাডাম আমিই করে দিব৷”

শ্রুতি ভাবীর কথা সব সময় তীরের মতো লাগে৷ মু্খে কখনও মিষ্টি কথা শুনতে পারলাম না৷ আমি বালতি নিয়ে ফ্লোরে স্লিপ খেয়ে পড়ে গেলাম৷ চিৎকার করতেই ফুপি, আফসানা চৌধুরী দৌড়ে আসেন৷ মায়া ফুপি আমার কাছে এসে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

“তোর কি হয়েছে? এভাবে পড়ে গেলি কিভাবে? কোথাও লাগেনি তো।”

আমি কোমরে হাত দিয়ে উঠার চেষ্টা করলাম৷ কিন্তু উঠতে ব্যর্থ হলাম৷ আবারও পড়ে গেলাম৷ ফ্লোরে তেল ফেলে রেখেছে ভাবী৷ ভাবীর মুখে শয়তানি হাসি৷ আমি ফুপিকে বললাম,

“ফুপি পা স্লিপ করে পড়ে গেছি৷ কিভাবে পড়ে গেলাম জানি না? আমি ফ্লোর পরিষ্কার করতে আসছিলাম৷”

শ্রুতি ভাবী ন্যাকামি করে বলল,

“শালিক ব্যথা পাওনি তো বেশি৷ আমার সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে৷ আমি কেন যে বলছিলাম ফ্লোর মুছতে? শালিক বোন আমাকে ক্ষমা করে দাও৷”

শ্রুতি ভাবী উপর থেকে অনেক ভালো৷ মুখে মধু অন্তরে বি*ষ। শ্রুতি ভাবীকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না৷ আমি মিথ্যা হাসি দিয়ে বললাম,

“না না ভাবী৷ আমি খেয়াল করে হাঁটলে এমন হতো না৷ আপনার কোন দোষ নেই৷ আমি একটু ধরে তুলেন৷”

আফসানা চৌধুরী গম্ভীর গলায় বলল,

“শালিক তোমাকে আমি অনেক দিন বলেছি বেখেয়ালি ভাবে কোন কাজ করবে না৷ সব দিকে খেয়াল রাখতে হয়৷ আজ যদি বড় কিছু হয়ে যেত৷”

আমি মাথা নিচু করে রইলাম৷ কোন কথা বললাম না৷ ফুপির কাঁধে হাত রেখে নিচে চলে আসলাম৷ ফুপি পায়ে তেল মালিশ করছেন আর চোখের জল ফেলে যাচ্ছেন৷ পা ম-চ’কে যাওয়া ফুলে গেছে৷ ব্যথার পা নাড়াতে পারছি না৷ আমি গম্ভীর গলায় বললাম,

“ফুপি চোখের জল মুছেন৷ আপনি কান্না করলে আমার ভালো লাগে না৷ আপনি ভুলে যান কেন, কান্না করলে আপনার প্রেশার কমে যাবে?”

রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেন৷ ফুপি অগ্নির ন্যায় ধারণ করে বসে আছেন৷ আহত রাগী গলায় বলল,

“পা ভেঙে রাস্তায় বসিয়ে দেয় ভিক্ষা করতে পারবি৷ এই বাড়িতে কাজ করতে হবে না। তুই ভিক্ষা করবি আমি বাসায় থাকব৷ আমাদের দিন ভালোই চলে যাবে৷”

আমি শুয়ে ছিলাম। ফুপি কথা শুনে শুয়ে থাকা হলো না৷ কষ্ট করে উঠে বললাম৷ আফসোসের সাথে বললাম,

“এই যে কান ধরছি৷ এমন আর হবে না৷ আমি সব সময় দেখে শুনে কাজ করব৷”

“মনে থাকবে তো৷ তুই ছাড়া আমার কেউ নেই৷”

ফুপি রাতের রান্না করতে চলে যান৷ শ্রুতি ভাবী আমাদের রুমে আসেন। দুই বছরের বেশি হলো আমি এই বাড়িতে থাকি৷ শ্রুতি ভাবী ভুলেও আমাদের রুমে আসেন নি৷ নাক ছিটকে বলল,

“শালিক বোন আমার, বেশি ব্যথা পাওনি তো৷ আমি তো ভেবেছিলাম তোমার কোমর ভেঙে যাবে৷ কিন্তু পা ম’চ’কা’বে ভাবতেই পারিনি। পা ভাঙলে ভালো হতো৷”

“ভাবী আমি জানতাম আপনি এসব কাজ করেছেন৷ আপনার মাথায় এ ধরনের শয়তানি বুদ্ধি ঘুরে৷ ভাববেন না আপনি মুক্তি পাবেন৷ আপনাকে শাস্তি আল্লাহ দিবে৷ এমন অত্যচার আল্লাহ সইবে না৷”

শ্রুতি ভাবী আমার কথায় আরও রেগে যান৷ আমার মুখ চেপে ধরে বলল,

“চাকর চাকরের মতো থাকবি৷ মুখ বন্ধ রাখবি৷ কিছু দেখলেও বলতে পারবি না৷ মা তোকে ভালোবাসে বলে তুই এ বাড়িতে টিকে আছিস৷ না হলে তোকে অনেক আগেই আমি বাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতাম৷”

ভাবী এতো জোরে চেপে ধরায় চোখের কোণে পানি জমতে থাকে৷ মাথায় রক্ত উঠলেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসলাম৷ আহত কন্ঠে,

“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ভাবী৷ আমাকে ছেঁড়ে দেন৷ আমি আপনার নামে ম্যাডানকে কিছুই বলিনি৷”

“মা কিভাবে জানল আমি কাশবনে ঘুরতে গেছিলাম? আমি মেহেদীর সাথে আরও অনেক জায়গায় ঘুরতে যাই। তোর কারণে মা আমার হাত থেকে ফোন কেঁড়ে নিতে চেয়েছে৷ মেহেদীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিছেন।”

শ্রুতির ভাবী কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম৷ শ্রুতি ভাবী উনার বন্ধুর সাথে কাশবনে ঘুরতে গেছেন আমি কিছুই জানি না৷ আমি সেদিন নিহা আর আশার সাথে কাশবনে গেছিলাম৷ আমি গেছিলাম এটা কেউ জানে না৷ ফুপিকে বলছি শুধু৷ সেদিনই কি ভাবী কাশবনে ঘুরতে গেছিল? নাকি ইহান ভাইয়ার সাথে দেখেছে৷ ইহান ভাইয়ার সাথে দেখেনি। ইহানে ভাইয়ের সাথে ঘুরতে গেছি জানে কিনা৷ অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম,

“ভাবী আমি এসব কিছুই জানি না৷ আমি তো কাশবনে কোনদিন ঘুরতে যায়নি৷ আপনাকে কিভাবে আমি কাশবনে দেখব?”

চোখ পাকিয়ে বলল,

“তুই তোর বান্ধবীদের সাথে দিয়া বাড়ি কাশবনে ঘুরতে যাসনি৷ তুই সবার চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও আমার চোখ ফাঁকি দিতে পারবি না৷ তুই আমার নামে আর কি কি বলছিস?”

চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করলাম৷ ইহান ভাইয়ার সাথে আমাকে দেখলে খু*ন করেই ফেলত৷ আমি যেতে চাইনি।ইহান ভাইয়া জোর করে কাশবনে নিয়ে গেছেন। সেদিন বিকেলে ইহান ভাইয়া অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসেন৷ ফুপি বাজার করতে গেছেন৷ ইহান ভাইয়া আমার রুমে আসেন৷ হাতে একটা ব্যাগ দিয়ে বলল,

“এখানে সাদা রঙের শাড়ি আছে৷ পড়ে আসো৷ তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাব৷”

আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,

“ভাইয়া আমি কোথাও যেতে পারব না৷ বাড়িতে অনেক কাজ পড়ে আছে৷”

আমার কথায় ভাইয়া রেগে যান৷ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

“আমি এক কথা দুইবার বলতে পছন্দ করিনা৷ দুই মিনিট সময় দিলাম, এগুলো পড়ে গেইটের বাহিরে আসো৷”

লক্ষী মেয়ের মতো সাদা শাড়ি, কাঁচের সাদা চুড়ি, কপালে ছোট টিপ পড়ে চলে গেলাম গেইটের বাইরে৷ ভাইয়ার আমার দিকে আপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন৷ আমি ভাইয়াকে ডাক দিলে ভাইয়ার ধ্যান ভাঙে৷ আমতা আমতা করে বললাম,

“আমি নিহা আর আশার সাথে দিয়া বাড়িতে গেছিলাম৷ কিন্তু আপনাকে দেখতে পাইনি৷ ভাবী আমাকে বিশ্বাস করেন। আমি ম্যাডামকে কিছুই বলিনি৷ ম্যাডাম কিভাবে জানতে পেরেছেন আমি জানি না?”

আমার কথা শ্রুতি ভাবীর বিশ্বাস হলো না৷ তিনি রেগে আমার পা উপরে তুলে বিছানায় ছেড়ে দিলেন৷ কেউ কিছু দেখার আগে তড়িঘড়ি করে ঘুর থেকে চলে যান৷ পা বিছানায় পড়তেই যেন জীবন বেরিয়ে আসল৷

চলবে….

#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_১১ ( শালিক ইহানের খুনসুটি)
#অধির_রায়

অঝোরে অশ্রু ঝড়ে যাচ্ছে অনবরত দুই নয়ন থেকে৷ নিজেকে শাক্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি৷নিজেকে শান্ত রাখা তো দূর, মন খুলে কান্নাও করতে পারছিনা৷ পায়ে হাজারও ব্যথা কষ্ট সহ্য করে নিজের চোখের জল মুছে ফেললাম৷ ইচ্ছা করছে শ্রুতি ভাবীর পা ভেঙে দিতে৷ রাতে ফুপি নিজ হাতে খাইয়ে দিলেন৷ মায়া ফুপি মা বাবার অভাব বুঝতে দেননি৷ নিজের মেয়ের মতো আমাকে সব সময় ভালোবাসেন৷ কখনও অন্য চোখে দেখেননি৷ এই মানুষটা যখন জানতে পারবে আমার মা বাবা বেঁচে আছেন তখন উনি কি আমায় আগের মতো ভালোবাসতে পারবে? ভাবতে পারছি না অন্য কিছু। বা*জে চিন্তায় মগ্ন হয়ে বসে আছি৷ ইহান ভাইয়া কখন আমার সামনে এসেছেন খেয়াল নেই৷ কয়েকবার কাশি দিয়ে জানানোর চেষ্টা করছেন৷ আমি এক ধ্যানে আকাশ পাতাল ভেবেই যাচ্ছি৷ আমার কাঁধে হাত রাখতেই চমকে উঠলাম৷ ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালাম৷ আহত কন্ঠে,

“আপনি এখানে কখন আসছেন? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”

ইহান ভাইয়ার মুখে বিরক্তর ছাপ। ক্ষোভ নিয়ে অগ্নিমূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছেন৷ চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ! সাথে মায়াভরা ভালোবাসা। চোখের অগ্নিতে জ্বালিয়ে দিবে মনে হচ্ছে৷ গুরু গম্ভীর কন্ঠে বলল,

“দেখে কাজ করতে পারো না৷ তোমাকেই কেন সব কাজ করতে হবে? বাড়িতে আর কোন লোক নেই৷”

ভাইয়ার কথা শুনে মনে হচ্ছে বাড়িতে হাজারটা কাজের লোক আছে৷ আমি আর মায়া ফুপি ছাড়া বাড়িতে তেমন কোন কাজের লোক নেই৷ আফসানা চৌধুরী মাঝে মাঝে নিজে রান্না করেন৷ বাড়ির সকল কাজ আমি আর মায়া ফুপি করি৷ শ্রুতি ভাবী এক গ্লাস পানি ঢেলেও খান না৷ প্রশ্ন সূচক দৃষ্টি ইহান ভাইয়ার দিকে৷ আহত কন্ঠে বললাম,

“বাড়ির সকল কাজ আমি আর মায়া ফুপি করে থাকি৷ বাড়িতে বেশি কাজের লোক দিয়ে কি করবেন? আমাকে তাড়িয়ে দিতে চান৷”

আমার কথায় ইহান ভাইয়ার ভীষণ রাগ হলো৷ তিনি চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ লুকানোর চেষ্টা করলেন৷ ভালোবাসা মিশ্রিত রাগী গলায় বলল,

“বেখালিভাবে কাজ করলে পা ভেঙে রেখে দিব৷ তোমার জায়গা হবে বাড়ির বাহিরে৷ নিজের পায়ে কখনও দাঁড়াতে হবে না৷ ভাঙা পায়ে ঘরে বসে মানুষের উপর নির্ভর করবে৷ মানুষের মনোভাব ভাঙতে হবে না৷ কালো মানুষ অপয়ার কারণ হতে পারে না৷”

ইহান ভাইয়া আমার জবাব না নিয়েই হনহন করে চলে যান৷ ভাইয়ার ভাবনা দেখে আমি নিজেই অবাক হয়ে যায়৷ ভাইয়া আমার জন্য একটু বেশিই চিন্তা করেন৷ আমি গরিব বলে আমাকে দয়া দেখান না তো৷ আমি বিছানার নিচ থেকে নুপুর নিয়ে বসে পড়লাম৷ ভাইয়া সেদিন নিজ হাতে আমাকে নুপুর পড়িয়ে দিয়েছে৷
আমার ডাকে ভাইয়ার ধ্যান ভাঙে৷ আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ ভাইয়ার চাহনি দেখে কেমন নেশাক্ত মনে হচ্ছে৷ আমি মাঝে মাঝে ভুলে ভাইয়া নাকি অন্য কেউ৷ ইহান ভাইয়াকি আমার প্রতি দুর্বল? পরক্ষণে ভাইয়ার মেজাজ দেখে মনে হয় আমার ভাবনা ভুল৷ ভাইয়া নেশা ভরা দৃষ্টিতে আমার খুব অস্বস্তি লাগছে৷ ভাইয়া এগিয়ে এসে আমার খোপা খুলে দিলেন৷ ঘন কালো কেশ কোমর পর্যন্ত ছড়িয়ে গেল৷ অপলক দৃষ্টিতে মেলে বলল,

“এখন ঠিক আছে৷ একদম পারফেক্ট লাগছে৷ খোলা কেশে তোমাকে বেশ ভালো লাগে তোমাকে সব সময় খোলা কেশে দেখতে চাই৷”

ভাইয়ার কথায় লজ্জা পেয়ে গেলাম৷ ভাইয়া সব সময় আমার নামে একটু বাড়িয়ে প্রশংসা করে৷ আমার কন্ঠ শালিক পাখির মতো সুন্দর। আমার সুর কোলিক পাখির মতো৷ আমি বাইকে উড়ে আলতো করে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম৷ কড়া নির্দেশ বাইকে বসলে ভাইয়াকে আলতো করে জড়িয়ে ধরতে হবে৷ বাতাসে উড়ছে আমার কেশ৷ লুকিং গ্লাসে মাঝে মাঝে নিজেকে দেখছি৷ কখনও কখনও অবাধ্য কেশ মুখে আসছে৷ বি’র’ক্ত লাগলেও ভাইয়ার কথা ভেবে ভালো লাগছে৷ আজ প্রাণ খুলে বলতে ইচ্ছা করছে “KK” এর সেই বিখ্যাত গানটি,

❝আকাশের নীড়ে
নেঘে ঢাকা তাঁরা
খুঁজে পাওয়া
মুখের মিছিলে ধীরে ধীরে
ধরা পড়ে যাওয়া
বল আর…..
কী হলে বেশ হয়
ঠিক মনের মতো।

ওওও..
এই পথ
যদি শেষ না হয়
তবে কেমন হতো৷❞

ভাইয়ার সাথে চলে আসলাম দিয়া বাড়ির বিখ্যাত কাশবনে৷ চারিদিকে সাদা কাশফুল৷ প্রকৃতির এক অপরুপ সৌন্দর্য বিরাজ করছে এখানে৷ সবাই প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিচ্ছে৷ একে অপরের হাত ধরে হাটাহাটি করছে৷ ফুল ছিঁড়ে বিভিন্ন ভাবে ছবি তুলছে৷ আমারও খুব ইচ্ছা হলো অবাধ্য হাত দিয়ে ফুলগুলো স্পর্শ করতে৷ আমি কিছু ফুল আলতো ভাবে ছুঁয়ে দিলাম৷ আমাদের গ্রামে কাঁচা রাস্তার দুইপাশে কাশফুলের গাছ ছিল৷ তখন কাশফুল দেখার তেমন ইচ্ছা ছিল না৷ রেগুলাই প্রায় কাশফুল দেখতাম৷ কাশফুল তুলে এনে বাচ্চাদের দিতাম৷তেমন ভালো লাগত না৷ কিন্তু এখানে কাশফুলের সমাহার। মন ভয়ে যায় এতো কাশফুল দেখে৷ কাশফুলের পাতা হুট করেই হাতে লেগে কেটে গেল। রক্ত ঝরতে থাকল৷ ভাইয়া দৌড়ে এসে আমার আঙ্গুল মুখে নিলেন৷ ভাইয়ার এমন আচরণে আমি চমকে উঠি৷ হাত সরিয়ে নিতে চাইলে আরও চেপে ধরে৷ উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

“অনেকটা কেটে গেছে৷ একটু সাবধানে চলতে পারো না৷৷ সব সময় বেখালিভাবে চলাচল করা ঠিক নয়৷ কতোটা কেটে গেছে৷”

আমি ভাইয়ার কাছ থেকে হাত সরিয়ে নিলাম৷ হাত থেকে রক্ত ঝড়ে যাচ্ছে৷ হাত চেপে ধরে বললাম,

“সামান্য একটু কেটে গেছে৷ এখনই রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷ রান্না করার সময় এর থেকে কতো বেশি কাটে৷”

আমার কথায় ভাইয়ার চোখ বড় হয়ে গেল৷ ব্রু নাচিয়ে বলল,

“হাত কেটে পড়ে গেলেও তো কিছুই হয়নি বলবে৷ কবে নিজের দিকে খেয়াল রাখা শিখবে? তোমার খেয়াল রাখার জন্য অন্য কাউকে লাগবে? চল ফুসকা খেতে যাই৷ ফুসকা খাওয়ার পর তোমার জন্য নিশাল একটা সারপ্রাইজ আছে৷”

আমি চকিত হয়ে বললাম,

“সারপ্রাইজ! আমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। আমার মন উরুউরু করছে জানার জন্য৷ দয়া করে বলেন কিসের সারপ্রাইজ?”

“হুম তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে৷ চল ফুসকা খাই৷ ফুসকা খাওয়ার পরই বলব।”

ইহান ভাইয়া এক প্লেট ফুসকা অর্ডার করল৷ ইহান ভাইয়া কখনও এক প্লেট ফুসকা অর্ডার করে না৷ আজ কি ভাইয়ার কাছে তেমন টাকা নেই? টাকা সব সময় মানুষের কাছে থাকে না৷ আমার জানা মতে ভাইয়ার কাছে সব সময় অনেক টাকা থাকে৷ বাড়িতে টাকা ফেলে আসেনি তো৷ আমি মামাকে বললাম,

“মামা ফুসকা খাবো না৷ আমাদের জন্য ফুসকা বানাতে হবে না৷”

“না মামা এক প্লেট ফুসকা বানান৷”

ভাইয়া আমাকে একটু দূরে টেনে নিয়ে গেলেন৷ আমি ভাইয়াকে ফিসফিস করে বললাম,

“আপনি কি ফুসকা খাবেন না? আমি একা একা ফুসকা খেতে পারব না৷ অর্ডার করলে দুই প্লেট অর্ডার করেন৷ না করলে নাই৷”

ভাইয়া অহংকারী ভাব নিয়ে বলল,

“আমি শুধু নিজের জন্য ফুসকা অর্ডার করেছি৷ তোমাকে এখানে ঘুরতে নিয়ে এসেছি এটাই অনেক৷ বাসায় কি খাবার কম দেওয়া হয়? বাহিরে এসেও হাজার টাকা খেতে হবে৷”

ভাইয়ার কথা বি*ষা*ক্ত তীরের মতো লাগল৷ আপনার মানুষের কথা ভীষণ গায়ে লাগে। আমি এতোটাই নাছোরবান্দা হয়ে গেছি৷ আমি কেন বার বার ভুলে যায়! একজন কাজের লোকের কখনও শখ আহ্লাদ থাকে না৷ টুপ করে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। ভাইয়ার চোখ আড়াল করে চোখের জল মুছে নিলাম। আমি সদূরে দাঁড়িয়ে আছি৷ ভাইয়া হাতে ফুসকা নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন৷ আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

“শালিক পাখি রাগ করো না৷ তোমাকে সব সময় দয়া দেখাতে পারব না৷ আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি তোমাকে দরদ দেখাতে দেখাতে। আমি ফুসকা শেষ করে তোমার সাথে কথা বলছি৷”

চোখের অবাধ্য অশ্রু আর বাঁধ মানল না৷ অঝোর ঝড়ে যাচ্ছে৷ ইহান ভাইয়া কখনও আমার সাথে এমন করতো না৷ আজ ইহান ভাইয়া আমার জায়গা ভালো করেই বুঝিয়ে দিল৷ বরাবর শ্রুতি ভাবীকে দো*ষী ভাবতাম৷ শ্রুতি ভাবীর মনে যা আছে তিনি সেটাই আমার সামনে দেখান৷ কিন্তু ইহান ভাইয়া সামনে এক পিছনে অন্য৷ হুট করেই আমার মুখে ফুসকা ভ*রে দিল৷ সাথে চোখ রসে গোল্লার মতো হয়ে গেল৷ আমি ফুসকা খাবো না৷ ভাইয়া আমার মুখ ধরে রেখেছেন৷ রাগী গলায় বলল,

“ভালোভাবে ফুসকাটা খেয়ে নাও৷ জোর করে ফুসকা খাওয়ালে খারাপ কিছু হবে৷”

না চাওয়া সত্ত্বেও ফুসকা খেয়ে নিলাম৷ আমার হাতে প্লেট দিয়ে বলল,

“এবার তুমি নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দিবে৷ আমি তোমাকে খাইয়ে দিছি৷”

ভাইয়ার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। ভাইয়া আমার মতো অপয়ার হাতে খাবার খাবেন৷ চকিত দৃষ্টি ভাইয়ার মুখ প্রাণে৷ ভাইয়া পুনরায় বলল,

“কি হলো আমি সারাক্ষণ হা করে বসে থাকব? আশেপাশের লোকজন দেখছে৷”

চারিপাশ তাকিয়ে দেখলাম সবাই ড্যাবড্যাব করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন৷ আমি বাধ্য মেয়ের মতো ভাইয়ার মুখে একটা ফুসকা দিলাম৷ ভাইয়া পরম তৃপ্তি নিয়ে ফুসকা খেলেন৷ চোখ বন্ধ করে অন্য দুনিয়ায় চলে গেছেন৷ ভাইয়ার অভিনয় দেখে মনে হচ্ছে তিনি ফুড রিভিউ দিচ্ছেন৷ আঁখি মেলে বলল,

“আমি তোমাকে খাইয়ে দিব৷ তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে।”

কিছুটা অভিমান নিয়ে বললাম,

“দু’জনে যেহেতু খাব তখন দুই প্লেট অর্ডার কারার দরকার ছিল৷ আমি অনেক সংকোচবোধ করছি৷ আপনাকে খাইয়ে দিতে পারব না৷”

আমার গা ঘেঁষে দাঁড়ান। কানে ফিসফিস করে বলল,

“এখানে এক প্লেট করেই অর্ডার করা হয়৷ এটা প্রেমের ক্ষেত্র। সবার ধারণা এক প্লেটে খেলে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাই”

ভালোবাসার কথা শুনে একটু দূরে সরে দাঁড়ালাম৷ আমরা সেদিন তিন জন আসছিলাম৷ তখন তো আমরা আলাদা আলাদা প্লেটে ফুসকা অর্ডার করেছি। কথা না বাড়িয়ে ভাইয়ার কথা মেনে নিলাম৷ তবে ভাইয়ার উপর ভীষণ অভিমান জমেছে৷ ভাইয়া কিভাবে আমার সাথে এমন করতে পারলেন? আমাকে নিচু করে আমার আহ্লাদ দেখাতে আসছে৷ ফুসকা খাওয়ার পর আমি নির্জন একটা জায়গায় দাঁড়ালাম। ভাইয়া আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসল৷ আমার চোখ কপালে৷ আমার দিকে মুষ্টিবদ্ধ হাত বাড়িয়ে দিলেন৷ হাতে কি আছে জানা নেই? জানার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলাম৷ ভাইয়ার হাতে দুইটা নুপুর৷ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না৷ মিষ্টি মধুর স্বরে বলল,

“নুপুর তোমার পছন্দ হয়নি। আমি শুধু তোমার মুখের হাসি ফুটানোর জন্য নিয়ে এসেছি৷ শালিক পাখির অভিমান আছে আমার উপর?

হাসিমুখে জবাব দিলাম,

“আমার খুব পছন্দ হয়েছে৷ আমার কাছে শ্রেষ্ঠ উপহার হয়ে থাকবে৷”

ভাইয়া আমার পা নিজের উরুতে নিয়ে পরম যত্ন সহকারে পড়িয়ে দিলেন৷ ভাইয়ার স্পর্শে দেহে বিদ্যুৎ বয়ে গেল৷ খিঁচে চোখ বন্ধ করে ফেললাম৷ মনের মাঝে দখিনা বাতাস বইতে লাগল৷ সমস্ত দেহে কম্পন শুরু হলো৷ আমার হাতে আলতো করে ভালোবাসার পরশ একে দিল৷ মায়া ফুপি রুমে আসতে আসতে বলল,

“কি রে শাকিল।চোখ বন্ধ করে নুপুর নিয়ে বসে আছিস কেন? তোকে নুপুর কে দিয়েছে?”

ফুপি নুপুর দেখে ফেলেছে৷ আমি কিভাবে বলব ইহান ভাইয়ার আমাকে নুপুর দিছে? মিথ্যা হাসি দিয়ে ছয় নয় বুঝিয়ে বললাম,

“আমার বন্ধু আশা নুপুর কিনে দিয়েছে৷ ভাবতেছি নুপুর পড়লে আমাকে কেমন লাগবে? কোনদিন নুপুর পড়া হয়নি।”

ফুপি উজ্জ্বল হাসি দিয়ে বলল,

“মাশাল্লাহ। তোকে খুব সুন্দর মানাবে৷”

প্রতিদিন সকালে ফুপির সাথে হাটাহাটি করি৷ পায়ে এখন অনেক জোর৷ নিজ থেকে হাঁটতে পারি৷ ফুপি একা হাঁটতে দেননা৷ রান্নার পর ছাঁদে অনেকক্ষণ হাঁটাহাটি করি৷ রেগুলার পায়ের যত্ন নেওয়াতে পা একদম ঠিক হয়ে গেছে৷ পরীক্ষার রেজাল্ট দিছে। আল্লাহর রহমতে আমার রেজাল্ট খুব ভালো হয়েছে৷ ভালো রেজাল্ট করার জন্য পরিবারের সবাই খুশি৷ শ্রুতি ভাবীর মন জয় করতে পারলাম না৷ ছাঁদে কাপড় নেড়ে চলে আসতে নিলেই….. (দুঃখময় মুহুর্ত)

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here