#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_২৪,২৫
#অধির_রায়
২৪
ছোঁয়াকে বিদায় দিয়ে আনমনে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছি। মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে৷ ফুপি, দাদীর কথা খুব মনে পড়ছে৷ আমার জন্য তাঁরা পরকালে গমন করেছেন৷ কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না৷ চোখ দু’টো ঝাপসা হয়ে আসে৷ সামনে কি হচ্ছে দেখার কোন ইচ্ছায় নেই? হুট করেই সামনে তাকাতেই নেত্রদ্বয় আটকে যায়৷ ইমন ভাইয়া আরও অন্য একটা মেয়ের হাত ধরে হেঁটে হেঁটে পার্কে যাচ্ছেন৷ পড়ন্ত দুপুরে এমন দৃশ্য দেখে মাথায় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে৷ ইমন ভাইয়া এতোগুলো মেয়ের সাথে চলাফেরা করেন৷ এখন তো ইমন ভাইয়া অফিসে থাকার কথা৷ অফিস ফাঁকি দিয়ে গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে আসছেন৷ আমি কাউকে কিছু বললে কেউ বিশ্বাস করবে না৷ আজ আমি তাদের কার্যকলাপ ভিডিও করে রাখব৷ আজই আমি ইমন ভাইয়ার মুখোশ টে’নে হিঁ*জ*ড়ে খুলব৷
চুপি চুপি ভাইয়ার পিছন পিছন পার্কে যায়৷ ভালোভাবে চোখ মুখ ওড়না দিয়ে ডেকে নিয়েছি৷ কিছুতেই যেন ইমন ভাইয়া আমাকে চিনতে না পারে৷ ইমন ভাইয়া দেখতে দেখতে রমনা পার্কে ঢুকে গেল। আমি পিছন থেকে তাদের কার্যকলাপ ফোন বন্ধি করতে ব্যস্ত৷ এখানে শুধু ইমন ভাইয়া নয়৷ তার মতো হাজারও ছেলেমেয়ে এসেছেন৷ ছি! পরিবার পরিজনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব কাজ করছে৷ এখানে দাঁড়িয়ে থাকতেই ঘৃণা হচ্ছে৷ যতটুকু করতে পেরেছি ততটুকুই যথেষ্ট। আজ ডিনারে নীলার মাকে ইনভাইট করব। শ্রুতি ভাবী, নীলা এদের ঠকিয়ে আরও একজনকে ঠকাতে আসছেন৷
পুরো দমে কাজ করে যাচ্ছি। তবুও ইমন ভাইয়ার কার্যকলাপ চোখে ভাসছে৷ রান্না ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে থেকে শ্রুতি ভাবী চোখের জল ফেলছেন৷ আমি কলেজ থেকে ফেয়ার পরই শ্রুতি ভাবীকে এই ভিডিও দেখায়৷ মায়া ফুপি উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
“শ্রুতি তুমি কান্না করছো কেন? তোমার কি মন খারাপ?”
শ্রুতি ভাবী অনবরত কান্না করে যাচ্ছে। মায়া ফুপিকে কোন উত্তর দিলেন না৷ আমি চূলার আঁচ কমিয়ে বললাম,
“ফুপি শ্রুতি ভাবী মিথ্যা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন৷ উনার অনুভূতি গলা টি*পে মা*রা হয়েছে৷”
আমার কথায় মায়া ফুপি আকাশ থেকে পড়লেন৷ বিচলিত কন্ঠে বলল,
“শালিক তুই কি বলতে চাইছিস? আমি তোর কথা কিছুই বুঝতে পারছি না৷ তুই আবারও শ্রুতির গায়ে হাত তুলছিস৷ আমার তো তোকে সন্দেহ হচ্ছে৷”
“ফুপি ধৈর্য ধারণ করেন৷ ডিনারের সময় সব দেখতে পাবেন৷ আমি যতটুকু জানি নীলার বাবা পুলিশ কমিশনার। তিনি কাউকে ছাড়বেন না৷ অন্যায় কাছে কিছুতেই মাথা নত করেন না৷ ভাবী চোখের পানি মুছে ফেলেন৷ ম*রি*চী*কা*র পিছনে এতোদিন ছু*টে চলেছেন৷ আজ ম*রি*চী*কা ভেঙে ফেলার দিন।”
শ্রুতি ভাবী চোখের জল মুছে বলল,
“শালিক আমাকে একা থাকতে দাও৷ আমার কিছু ভালো লাগছে না৷ আমার পায়ের নিচে মাটি সরে গেছে৷ নিজেকে পা*গ*ল পা*গ*ল লাগছে৷ আমি কোনদিন পারব না ক্ষমা করতে৷”
শ্রুতি ভাবী কথা না বাড়িয়ে নিষ্পলক দৃষ্টি মেলে নিজের রুমে চলে যান৷ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কাজ মন বসানোর চেষ্টা করলাম। ডিনারের পর সবাই বসে খুশগল্পে মুগ্ধ। সবাইকে উপেক্ষা করে বললাম,
“ইমন ভাইয়া নীলাকে মনে আছে৷ ওই যে বৃষ্টির দিকে তাদের বাড়িতে আটকে যান৷”
আমার কথা শুনে ইমন ভাইয়ার গলা শুকিয়ে যায়৷ টেবিল থেকে পানি নিয়ে এক নিঃশ্বাসে পান করেন৷ শরীফ চৌধুরী তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন আমার দিকে৷ বিচলিত কন্ঠ বলল,
“নীলা কোথা থেকে আসল? বৃষ্টির মাঝে ইমন নীলাদের বাসায় যাবে কেন? বৃষ্টি বাদলের দিনে ইমন তো বাড়িতেই থাকে৷”
আমি উজ্জ্বল হাসি দিয়ে বললাম,
“স্যার আপনার ছেলের অন্যরুপ দেখতে পাবেন৷ ইমন ভাইয়ার প্রথম বউ হলো নীলা আপু৷ উনার মা বাবা এসেছেন এখানে। উনাদের সাথে কথা বলেন৷”
ইমন ভাইয়া চিৎকার করে বলল,
“বাবা শালিক সব মিথ্যা কথা বলছে৷ আমি নীলা নামে কাউকে চিনি না৷”
ইমনের কথা শেষ হওয়ার আগে শ্রুতি ভাবী নীলা আপু আর উনার মা বাবাকে নিয়ে আসেন৷ তাদের দেখে ইমন ভাইয়া বসা থেকে দাঁড়িয়ে যান৷ শ্রুতি ভাবী ক্ষোভ নিয়ে বলল,
“ইমন তোমার নাটক শেষ করো৷ আর কিছুই লুকাতে পারবে না৷ আমরা সব জেনে গেছি৷ নীলা আপু তুমি তোমার স্বামীকে যা ইচ্ছা শাস্তি দিতে পারো৷ আমি ইমনের সাথে সংসার করতে পারব না৷”
নীলা আপু ধীর পায়ে ইমন ভাইয়ার সামনে দাঁড়ান৷ দেহের সমস্ত শক্তি দিয়ে কষিয়ে থা’প্প’ড় মা’রে’ন৷ ঘৃণার সাথে বলে উঠল,
“তুমি এতোটা খারাপ জানা ছিল না৷ তুমি আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলছো৷ তোমাকে বিশ্বাস করে বাবার অনুমতি না থাকাও সত্ত্বেও তোমাকে বিয়ে করেছি৷ তোমার নামে অলরেডি থানায় ডায়েরি করে এসেছি৷ তোমার শাস্তি আইন দিবে৷ আমি এমন ব্যবস্থা করব তোমার অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকানোর সাহস পাবে না৷”
ইমন ভাইয়া চোখ পাকিয়ে বলল,
“তোর কাছে কি প্রমাণ আছে? তোকে হাত তোলার সাহস কে দিয়েছে? আমি তোকে খু’ন করে ফেলব৷”
নীলা আপু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
“তোমার আর তোমার মায়ের অপকর্মের প্রমাণ আমাদের কাছে আছে৷ আজ প্রমাণ নিয়েই তোমার মুখোশ খুলতে এসেছি৷”
নীলা আপু ভিডিওটা শরীফ চৌধুরীকে দেখান৷ তিনি কিছুতেই পরকীয়া মেনে নিলেন না৷ তিনিও ইমনের গালে ক*ষি*য়ে থা*প্প*ড় বসিয়ে দেন৷ ক্ষোভ নিয়ে আফসানা চৌধুরীকে বলল,
“তোমাকে একজন আদর্শ মা হিসাবে জানতাম৷ তুমি তোমার ছেলের অপকর্মের সাক্ষী হয়েও তাকে শাসন করো নি৷”
শ্রুতি ভাবীকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“এদের পুলিশের হাতে তুলে দাও৷ আমি এদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য আবেদন করব৷”
শরীফ চৌধুরী সোফায় লাথি দিয়ে রুমে চলে যান৷ নীলা আপু আগে থেকেই পুলিশকে বলে রেখেছিল৷ তার উপর নীলা আপুর বাবা পুলিশ কমিশনার। উনাকে বলে সব ঠিক করে রাখেন৷ পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যান৷ শ্রুতি ভাবী এতোক্ষণ নিজের কান্না আটকিয়ে রাখতে পারলেও এখন আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলেন না৷ আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিল৷ হেঁচকি তুলে বলল,
“আমি কাকে নিয়ে বাঁচব? আমি ইমনকে ছাড়া বাঁচব না৷ আমি তাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি৷ তুমি ইমনকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসো৷”
নীলা আপুর চোখ থেকে টুপটুপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখার চেষ্টা করছে৷ শ্রুতি ভাবীর কাঁধে হাত রেখে বলল,
“আপু কান্না করো না৷ তোমার ইমন তোমারই থাকবে৷ আমি কোনদিন ইমনের সামনে আসব না৷ আমি অনেক দূরে কোথাও চলে যাব। ইমনের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকব৷ আল্লাহ ইমনকে সংশোধন করে ফিরিয়ে দিবেন৷ তোমার ভালোবাসা মিথ্যা হতে পারে না৷”
শ্রুতি ভাবী ভেজা গলায় বলল,
“না আপু৷ আমি ইমনকে ডিভোর্স দিব৷ তুমি উনার প্রথম ওয়াইফ তুমিই ইমনের সাথে থাকবে৷ আমি তোমাদের ভালোবাসাকে অসম্মান করেছি৷ আমি তোমাদের ভালোবাসার মাঝে চলে এসেছি৷ পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও৷”
আবহমান নদীর মতো সময় চলে যেতে থাকল৷ কেটে গেলে কয়েকটি মাস৷ আজ আফসানা চৌধুরীকে জামিন দিয়েছেন৷ ইমন ভাইয়া এখনও জেলে আছেন৷ উনার জামিন হতে আরও তিনমাস বাকী৷ মাথা নিচু করে শরীফ চৌধুরীর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন৷ শরীফ চৌধুরী ক্ষোভ নিয়ে বলল,
“চৌধুরী বাড়িতে তোমার কোন জায়গা হবে না৷ আল্লাহ তোমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিলেও আমি তোমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিতে পারব না৷ আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও৷”
আফসানা চৌধুরী শরীফ চৌধুরীর পায়ে ধরে ভেজা গলায় বলল,
“আমার যাওয়ার কোন জায়গা নেই৷ মেয়েদের কাছে স্বামীর ঘরই আসল ঘর৷ আমি ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে তার অন্যায়গুলো মেনে নিয়েছিলাম৷ আমাকে বলেছিল আমি তার অন্যায় আবদার পূরণ না করলে সে মা*রা যাবে৷ মা হয়ে ছেলের মৃত্যু কিভাবে কামনা করি?”
আমি হাত কাচুমাচু করে বললাম,
“বাবা ক্ষমা করা মহৎ গুণ। ম্যাডাম যেহেতু নিজেকে দোষ স্বীকার করেছেন এবার ম্যাডামকে ক্ষমা করে দেন৷ মহানবী (স) উনার চি’র’শ’ত্রু’কেও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও৷ ম্যাডামকে ক্ষমা করে দেন৷ শেষবারের মতো একটা সুযোগ দেন৷”
গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“তুমি চাইলে এ বাড়িতে থাকতে পারো৷ কিন্তু আগের মতো তোমাকে সম্মান, বিশ্বাস করতে পারব না৷ তুমি নিজের জায়গা নিজেই হারিয়ে ফেলেছ। আজ শালিকের কথায় তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম৷”
ঘড়ির কাটা আপন গতিতে ঘুরে যাচ্ছে। এখনও ইহান বাড়ি ফিরেনি৷ হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে৷ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নিস্তব্ধ আকাশের দিকে উদাসীন হয়ে তাকিয়ে আছি৷ চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছি ইহানের৷ কখন উনার মায়ায় এতোটা জড়িয়ে পড়েছি জানা নেই৷ বার বার ফোন দিয়ে যাচ্ছি৷ ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে৷ চিৎকার করে কান্না পাচ্ছে৷ উনার কোন বিপদ হলো না তো৷ ঘড়ির কাটা দু’টোর ঘরে পৌঁছাতেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারলাম না৷ শীত চলে গেলেও বাহিরে এখনও অনেক শীত৷ বসন্ত ফুল ফুটেছে চারদিকে। গায়ে চাদর জড়িয়ে বেরিয়ে আসতে নিলেই ক্লান্ত দেহে ফিরে আসেন ইমন৷ হাফ ছেড়ে বাঁচলাম৷ ধম ফিরে পেলাম৷ উনাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম৷ অভিমানী স্বরে বললাম,
“আপনি এতো দেরি করে ফিরলেন কেন? আমার ধম বন্ধ হয়ে আসছিল৷ আপনার ফোন বন্ধ কেন?”
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“সরি! এমন ভুল আর হবে না৷ প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও৷”
উনার কাছ থেকে সরে এসে গম্ভীর কন্ঠে বললাম,
“আপনার সাথে কোন কথা নেই৷ আপনার ফোন বন্ধ করে ছিল৷ এখন আহ্লাদ দেখাতে আসলে পা ভেঙে দিব৷ কাছেও আসার চেষ্টা করবেন না৷ আমি বিরক্ত করি বলে ফোন বন্ধ করে রাখছিলেন।”
রাগ দেখিয়ে ফোন বিছানায় ছুঁ’ড়ে বেলকনিতে চলে আসলাম৷ আমার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আলমারি থেকে টাউজার, টি শার্ট নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলেন৷ উনার এমন অবহেলায় চোখে অশ্রু চলে আসল৷ আমার রাগ না ভাঙিয়ে তিনি ওয়াসরুমে চলে গেলেন৷ বেশ কিছুক্ষণ পর শাওয়ার নিয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হোন৷ আমি উদাসীন হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি৷ রাগে কষ্টে ম*রে যেতে ইচ্ছা করছে৷ ইহানকে ছাঁদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে ইচ্ছা করছে৷ বেলকনিতে গ্রিল না থাকলে উনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতাম৷ আকাশে চাঁদের ছিঁ’ড়ে ফোটাও নেই৷ আজ আকাশ আমার মতো বিষণ্ণ। না চাওয়া সত্ত্বেও চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে৷ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“শালিক পাখি অভিমান করেছে৷ আমাকে কি শালিক পাখি ক্ষমা করবে না? আমি অনেক বিজি ছিলাম৷ তোমার কথা মাথায় ছিল৷ অফিসে অনেক চাপ ছিল।”
গম্ভীর কন্ঠে বললাম,
“আমি কোন কফৈয়ত দিতে বলিনি৷ আপনি আপনার কাজ নিয়ে থাকেন৷ আমাকে টার্চ করার চেষ্টা করবেন না। দূরে যান৷”
আমার এলোমেলো কেশে মুখ লুকিয়ে নেশা ভরা কন্ঠে বলল,
“আমার কিন্তু অনেক ক্ষুধা লাগছে৷ এখন খেতে না পারলে একটু পর আমাকে খুঁজে পাবে না৷ অতলে হারিয়ে যেতে পারি৷”
ধাক্কা দিতেই একটু দূরে সরে গেল। রাগ নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললাম,
“খাবার নিয়ে খান৷ আমি কাউকে খাবার দিতে পারব না৷ কেউ না খেয়ে আমার কি? আমিও খাবার খাইনি৷”
উনি নিজেই রান্না ঘর থেকে খাবার নিয়ে আসেন৷ আমাকে উনার কোলে বসিয়ে জোর করে খাইয়ে দেন৷ মনে মনে খুশি হলেও মুখে গম্ভীরতা বজায় রাখলাম৷ খাওয়া শেষ করে বেলকনিতে আবার চলে আসলাম৷ উনি আমাকে পাঁজা কোলা করে বিছানায় নিয়ে আসেন৷ চলে আসতে নিলেই জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে ভালোবাসার উষ্ণ একে দেন৷ নিজের পরাজয় স্বীকার করে নিলাম৷
চলবে….
#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_২৫
#অধির_রায়
শহরের বুকে ভোর নেমে এসেছে প্রায় তিন ঘন্টা আগে৷ গ্রীষ্মের সোনালী রোদে ঝলমল করে উঠছে ঢাকা শহরের জনকীর্ণ। গুলশান দুই নং সেক্টরে ছোঁয়ার জন্য অপেক্ষা করছি৷ গ্রীষ্মের তান্ডবে ঘেঁমে একাকার হয়ে যাচ্ছি। এইতো কিছুদিন আগে বসন্ত ছিল৷ তখনই মনে নাড়া দিয়েছে কবিদের কন্ঠে,
আহা আজই এই বসন্তে
কতো পাখি ডাকে, কতো ফুল ফুটে।
বাহারি রকমের গাছের ডালপালায়,
কচি পাতা প্রাণ পায়৷
বসন্তের সৌন্দর্যের মুখরিত চিন্তার মাঝে চকচকে টয়োটা গাড়ি আমার সামনে এসে থামে৷ ছোঁয়া লুকিং গ্লাস নামিয়ে বলল,
“চলে আয় শালিক৷”
আমি অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গাড়িতে উঠে বসলাম৷ ছোঁয়ার পীঠে ধু’ম করে একটা থা’প্প’ড় বসিয়ে বললাম,
ছোঁয়াইয়্যার বাচ্চা ছোঁয়াইয়্যা তোর জন্য অপেক্ষা করতে করতে ম*রে যাচ্ছিলাম৷”
ছোঁয়া বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে বলল,
“সরি দোস্ত। আম্মুর হাজারটা উপদেশ শুনতে শুনতে লেট হয়ে গেছে৷ আর কখনও লেট হবে না৷”
“তুই আমাকে গ্রীষ্মের তান্ডব রোদে দাঁড় করিয়ে সরি বলছিস৷ তোকে দুই হাতে পিটাতে পারলে আমি শান্তি পেতাম৷”
“শালিক তুই আমার গায়ে আর একবার হাত দিয়ে দেখ৷ তোর হাত ভেঙে ফেলব।”
দু’জনের মাঝে হয়ে গেল তুমুল ঝগড়া। কেউ কাউকে ছাড় দেওয়ার পাত্রী নয়৷ আমি আহ্লাদী স্বরে বললাম,
“আমার ছোঁয়াইয়্যা কথা বলতে পারে না৷ এই ছোঁয়া এভাবে ঝগড়া করতে জানে আমি জানতাম না৷”
ছোঁয়ার মুখে কোন কথা নেই৷ আমার হাতে কয়েকটা দা*প*দু*প খেয়ে মুখ গোমড়া করে বসে আছে৷ দু’জনে একসাথে ক্লাস রুমে প্রবেশ করলাম৷ ধীরে ধীরে ছোঁয়ার সাথে আমার সম্পর্ক অনেক গাঢ় হয়ে গেছে৷ ছোঁয়া শালিক বলতে পা’গ’ল৷ তেমনই আমারও ছোঁয়াকে ছাড়া ভালো লাগে না৷ কখন দু’জন বেস্ট ফ্রেন্ডে পরিণত হয়েছি জানা নেই৷ ছুটির পর কলেজের চা স্টলে পাশাপাশি বসে আছি চারজোড়া চোখ। বিরক্ত নিয়ে বললাম,
“দিনে দিনে চা খুব বা’জে হয়ে যাচ্ছে৷ এসব চা আমার খেতে ইচ্ছা করে না৷”
তিন জোড়া চোখ আমার দিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ অর্পি ব্রু নাচিয়ে বলল,
“তোকে চা খেতে হবে না৷ তুই আমাকে চা দিয়ে দিতে পারিস৷ আমি কোন কিছু মনে করব না৷”
নীরা ন্যাকামী করে বলল,
“অর্পি তোর কথা শুনে আমার বমি আসে৷ তুই অন্যের মুখের খাবার খাবি৷ তোর থ্রাডক্লাস মনোভাব কবে যাবে?”
ছোঁয়া চায়ের কাপে চুমু দিয়ে বলল,
“নীরা তোকে খেতে হবে না৷ ছেলেদের দেখে শিখ এক সিগারেট দুই তিন জন মিলে খাচ্ছে৷ একসাথে সিগারেট খেতে খুব ভালো লাগে৷ চল আমরাও সিগারেট খাই৷”
ছোঁয়ার কথা শুনে তার দিকে তিন জোড়া ক্ষিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করি৷ ছোঁয়া আবার চায়ের কাপে চুমু দিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
“এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন? আমি কি ভুল বললাম?”
অর্পি উৎসাহের সাথে বলল,
“ছোঁয়া একদম ঠিক কথা বলছিস৷ আমরাও আকাশ প্রাণে ধোঁয়া উড়িয়ে বলব ❝আহা কি শান্তি।❞ সিগারেটের স্বাদটাও নেওয়া যাক।”
আমি অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম ছোঁয়া এবং অর্পির উপর৷ আমি কিছু বলার আগেই নীরা মুখ ছি’ট’কে বলল,
“ছি! ছি! তোরা মেয়ে হয়ে সিগারেট খাবি৷ তোদের থ্রাড ক্লাস চিন্তা ভাবনা বাদ দে ভাই৷ আমার মম জানতে পারলে আমাকে পি*টা*বে৷ এমনি মম বলে তোদের সাথে বন্ধুত্ব না করতে৷”
অর্পি নীরাকে রাগানোর জন্য বলল,
“তুই এখানে আর একবার ম্যা ম্যা কর৷ লা*থি দিয়ে অন্যদেশে পাঠিয়ে দিব৷ শা*লা বলদ৷”
অর্পির কথা নীরা তেমন বুঝতে পারল না৷ তবে রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
“তোর কথা শুনলে যে কেউ বমি করে দিবে৷ শালিক হোয়াটস ইস বলদ।”
অর্পি ক্ষিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
“তুই আবার ইংরেজি কস৷ আর একটা কথা কহ তোরে আমি কি করি? তোর লাইগ্যা আমি শুদ্ধ বাংলা বলি৷”
নীরা, অর্পির ঝগড়া দেখে আমরা দু’জন উচ্চস্বরে হাসি দিলাম৷ চায়ের স্টলের অনেকের দৃষ্টি আমাদের দিকে৷ তাদের পাত্তা না দিয়ে চার জোড়া চোখ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে উচ্চ হাসি দিলাম৷
কলেজ গেইটে পা রাখতেই দৃষ্টি পড়ে ইহানের উপর৷ বারবার হাতের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন। দেখে মনে হচ্ছে কোন বিষয়ে চিন্তিত। আমি ছোঁয়াকে তাড়াতাড়ি বিদায় দিয়ে উনার সামনে দাঁড়ালাম৷ চোখ থেকে কালো চমশা মাথা রেখে ক্ষোভ নিয়ে বলল,
“তোমার মোবাইল কই? কতবার ফোন দিয়েছি। একটি বার রিসিভ করার প্রয়োজন মনে করলে না৷”
ক্লাস করার সময় মোবাইল সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম৷ আড্ডার মাঝে সবকিছু ভুলে যায়৷ এখন কি বলব? হাত কাচুমাচু করছি৷ মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না৷ তিনি পুনরায় প্রশ্ন করল,
“কি হলো শালিক? আমার কথা তোমার কানে যাচ্ছে না৷ আমি তোমার সাথে কথা বলছি৷ ফোন তোলার প্রয়োজন মনে করলে না৷”
ভয়ে ভয়ে বললাম,
“ক্লাস করার সময় ফোন সাইলেন্ট ছিল৷ সেজন্য বুঝতে পারিনি৷”
ফোন বের করে দেখি সতেরো টা মিসকল৷ শালিক তুই সত্যিই একটা গাধা। তোর তো খেয়াল রাখার কথা ছিল ইহানের কথা৷ আমাকে ঘড়ি দেখিয়ে বলল,
“ক্লাস শেষ হয়েছে প্রায় দুই ঘন্টা আগে৷ এক মিনিটের জন্য ফোন বের করার প্রয়োজনবোধ করনি৷”
অসহায় দৃষ্টি মেলে বললাম,
“বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিছিলাম। পাবলিক প্লেজে কান ধরে ক্ষমা চাইব? আপনি যা বলবেন তাই করব৷ ওকে আমি কান ধরছি৷”
ইহান মুচকি হেঁসে বলল,
“হয়েছে। অপেক্ষা করতে করতে আমি ক্লান্ত৷ তোমাকে নিয়ে আজ একটু ঘুরবো৷ অনেকদিন হলো তোমাকে সময় দিতে পারিনি৷ আজ তোমার সাথে ঘুরব বলে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি৷”
উনার ভালোবাসা দেখে আমি খুবই মুগ্ধ। রিক্সায় পাশাপাশি বসে আছি আমরা৷ পড়ন্ত দুপুর৷ সন্ধ্যার আবির্ভাব ঘটবে ধরনীর বুকে৷ গোধুলি বেলায় কনে দেখানোর উপযুক্ত সময়৷ আমি উনার কাঁধে মাথা রেখে প্রশান্তি খুঁজার চেষ্টা করলাম৷ মুচকি হেঁসে বলল,
“তোমাকে আজ খুব খুশি খুশি লাগছে৷ তোমার সাথে আরও একটা মেয়েকে দেখলাম৷ বিদায় দিয়ে আমার কাছে আসলে।”
সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম উনার মুখ প্রাণে। গম্ভীর কন্ঠে বললাম,
“আপনি আমার বান্ধবীর দিকে নজর দিছেন কেন? লুকিয়ে লুকিয়ে এসব দেখা হচ্ছে৷ লজ্জা করে না ঘরে বউ থাকতে অন্য মেয়ের দিকে তাকাতে৷”
আমার কোমরে হাত দিয়ে নিজের দিকে ঘুরান৷ মিষ্টি মধুর স্বরে বলল,
“আমার দৃষ্টিতে তোমাতে লিপ্ত। অন্য কাউকে দেখার জন্য দৃষ্টি যায়না৷”
অভিমানী স্বরে বললাম,
“আমি কোথাও যাব না৷ আমি বাড়িতে যাব৷ আমি বাড়িতে না থাকলে মায়া ফুপির উপর অনেক চাপ যাবে৷ বয়সের তুলনায় মানুষটা অনেক কাজ করেন৷”
আমাদের রিক্সা থামে একটা শপিংমলের সামনে৷ আমাকে নিয়ে শপিংমলে প্রবেশ করেন৷ আমার জন্য কয়েকটা থ্রি পিচ কিনেন৷ সাথে কিনেন সাথে চারটা জামদানী শাড়ি৷ চকিত হয়ে বললাম,
“এতগুলো শাড়ি দিয়ে কি করবেন? আমার তো অনেকগুলো শাড়ি আছে৷”
মুচকি হেঁসে বলল,
“এগুলো তোমার জন্য নয়৷ তোমাকে অন্যদিন কিনে দিব৷”
সন্দিহান দৃষ্টিতে বললাম,
“এগুলো কাকে দিবেন? অন্য কোন মেয়েকে এসব দিলে আমি আপনাকে খু*ন করে ফেলব৷ আমি চ’রি’ত্র’হী’নে ঘৃ*ণা করি৷
“এগুলো মা, মায়া খালা, শ্রুতি ভাবীর জন্য। অন্যটা স্পেশাল কাউকে দিব৷ তোমাকে বলতে পারব না৷”
“আপনার চ’রি’ত্র যদি ইমন ভাইয়ার মতো হয় আমি আপনাকে খু’ন করব। আপনাকে খু*ন করে জেলে বসে থাকব৷”
উনি কোন জবাব দিলেন না৷ মুচকি হেঁসে অন্যদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন৷ উনার এতটুকু অবহেলায় আমি মেনে নিতে পারছি না৷ বুকের কোণে সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করলাম৷ চোখ থেকে দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল৷ উনি এখনও আমার দিকে তাকালেন না৷ অন্যদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই আমার কোমরের হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে নেন৷ নুন ছিঁ*ড়ানো যোকের মতো ছটফট করলাম৷ একটুও নড়াচড়া করতে দিলেন না৷ খুব জোরে চেপে ধরে আছেন৷ বাড়িতে এসে একটা শাড়ি আমার হাতে দিয়ে বলল,
“যাক মাকে এই শাড়ি দিয়ে আসেন৷ বাকিটুকু আমি ভাবী আর খালাকে দিয়ে দিব৷”
আমার হাত কাঁপছে। পা স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি নেই৷ মুচকি হেঁসে আমতা আমতা করে বললাম,
“আমি ম্যাডামের সামনে যেতে পারব না৷ আমাকে ম্যাডাম আস্ত গি’লে খাবেন।”
“মা আপনার উপর ক্ষিপ্ত। আমাদের বিয়ের প্রায় ১ বছর হতে চলল। এখন মা আমাদের উপর রেগে আছেন৷ আপনি মায়ের সামনে দাঁড়ালে মা আপনাকে ফিরিয়ে দিবেন না৷ মা সব ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত।”
“ম্যাডাম যদি… ”
“কোন কথা নয়৷ আর হ্যাঁ বাবাকে পাঞ্জাবিটা তুমি দিবে৷”
“কিন্তু… ”
আমার কথা শোনার সময় হলো না৷ তিনি হনহন করে চলে গেলেন৷ আমি দু-টানায় পড়ে গেলাম৷ সামনে খা’দ পিছনে কুমির। কোনদিকে যাব কিছুই বুঝতে পারছি না৷ দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাটিয়ে ধীর পায়ে স্যার ম্যাডামের রুমের দিকে অগ্রসর হলাম৷ কাঁপা কাঁপা হাতে দরজায় নক করি। ম্যাডাম মৃদু স্বরে বলল,
“কিছু বলবে? ভিতরে আসো৷”
কাঁপা কাঁপা হাতে আফসানা চৌধুরীর হাতে শাড়ি দিলাম৷ শরীফ চৌধুরীর হাতে পাঞ্জাবি দিলাম৷ শরীফ চৌধুরী সাথে সাথে পাঞ্জাবি বের করে বলল,
“বাহ খুব সুন্দর হয়েছে৷ তোমার পছন্দ খুব ভালো৷”
এলোমেলো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আফসানা চৌধুরীর দিকে৷ তিনি শাড়ি হাতে নিয়ে বসে আছেন৷ কোন কথা বলছেন না৷ শাড়ি কি উনার পছন্দ হয়নি? অসহায় দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে আছি৷ আমি মাথা নিচু করে বললাম,
“আমি আসছি৷ মায়া ফুপি একা একা রান্না করছেন৷ উনাকে হাতে হাতে কাজ করে দিলে একটু স্বস্তি পাবেন৷”
আমি কপাটের কাছে আসতেই আফসানা চৌধুরী গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“আমি তোমাকে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি৷ গুরুজনের কথা শেষ না হওয়ার আগে স্থান ত্যাগ করার স্প’র্ধা কিভাবে হলো?”
ভয়ে ভয়ে উনার দিকে ঘুরলাম৷ শুকনো ঠোঁট জিহ্ব দিয়ে ভিজিয়ে নিলাম৷ ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম,
“ম্যাডাম কোন দরকার ছিল৷ আমাকে বলেন আমি সব করে দিচ্ছি৷”
আমার হাত ধরে বিছানায় বসালেন৷ তীব্র দৃষ্টি আমার দিকে। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসচ্ছে। অস্থিরতা ঘাড়ে চেপে বসেছে৷ প্রাণ পাখি যায় যায় অবস্থা। আজ শালিকের দিন শেষ৷ শাকিল পাখি আর কথা বলবে না৷ আফসানা চৌধুরী গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“শ্বাশুড়িকে ম্যাডাম ডাকতে কে বলেছে? শ্রুতি আমাকে ম্যাডাম ডাকে?”
ভেজা গলায় বললাম,
“না। শ্রুতি ভাবী ‘মা’ বলে সম্মোধন করেন৷”
“তুমিও আমাকে আজ থেকে মা বলে ডাকবে৷ তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই৷ তোমাকে ইহানের বউ হিসাবে অনেক আগেই মেনে নিয়েছি৷ আমি তোমার সাথেও অনেক অন্যায় করেছি৷ আমাকে ক্ষমা করে দাও৷”
“মা আমার সাথে এমন করবেন না৷ আপনি তো কোন দোষ করেননি৷ আপনি কেন আমার কাছে ক্ষমা চান? আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন৷ আমার জন্য ইহান আপনার সাথে কথা বলেন না৷”
আফসানা চৌধুরী মুচকি হেঁসে বলল,
“ছেলের অভিমান ভাঙলে আমার কাছে আসবে৷”
আফসানা চৌধুরী বিছানা থেকে উঠে আলমারি খুলেন৷ আমার হাতে গহনার বক্স ধরিয়ে দেন৷ মিষ্টি মধুর স্বরে বলল,
“এগুলো সব তোমার গহনা৷ আমি এগুলো ইহানের বউয়ের জন্য বানিয়েছিলাম৷ এখন থেকে এসব গহনার উপর তোমার অধিকার।”
চোখের কোণে পানি টলমল করছে৷ আবেগে ঝিলের ঝরনার মতো টুপ করে গড়িয়ে পড়ল। উনি আমার চোখের অশ্রু মুছে দিয়ে বলল,
“চোখে কান্না শোভা পাইনা৷ চোখে আমি প্রতিবাদের আগুন দেখতে চাই৷ সব সময় প্রতিবাদ করে যাবে৷”
“আমার গহনা লাগবে না৷ আপনি এগুলো আপনার কাছে রেখে দেন৷ আমার লাগলে আপনার কাছে চেয়ে নিব৷”
“না এগুলো তোমার কাছে রাখো। এসব গহনার উপর আমার কোন অধিকার নেই৷ তুমি না নিলে ভাববো তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও নি৷”
আর একবার ‘না’ বলার আগে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন৷ উনার চাহনি দেখে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম৷ আজ আমি এতোটা খুশি হয়েছি বলে বুঝাতে পারব না৷ মনের মাঝে ডাক ঢোলের বাজনা বাজছে৷
চলবে…
চতুর্থ জামদানী শাড়ি নিয়ে শালিক ইহানের মাঝে ভুল ঝড় তুলবে কি? কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না৷