শিরোনামহীন,পর্বঃ১১+১২
সৌরভে সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ১১
আনতারার বাবার মৃত্যু হয়েছে আজ তিন দিন। বাহির বাড়ি রান্নার আয়োজন চলছে।
যারা কবর খুড়েছে তাদের সহ মসজিদের ইমাম সাহেব এবং এতিম খানার বাচ্চাদের খাওয়ানোর আয়োজন চলছে।
গত দুই রাত এই বাড়িতে রাতে আলো তো জ্বলেছে তবে সবার মুখে ছিল ঘোর অমাবস্যা।
আনতারা জ্বর বাধিয়ে বসেছে। তার মায়ের বয়স দুই রাতের মধ্যে যেন বেরেছে বছর দশেক।
কুমুদ বেগম আড়ালে চোখের জল ফেললেও নিজেকে সামলে নিয়ে এক হাতে সেবা করে চলেছেন পরিবারের সবাইকে।
লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় আনতারার চিৎকারে ভারী ছিল পরিবেশ তবে কুমুদ বেগম এবং আনতারার দুই ভাইয়ের চোখে এক বিন্দু জল ছিল না।
তবে লাশ দাফন শেষে বড় ভাই ফিরলেন তার বন্ধুর গায়ে ভর দিয়ে।
ছোট ভাই এসে পা জড়িয়ে ধরছিল মায়ের।
ততক্ষণে আনতারার মায়ের জন্য কিনে আনা হয়েছে সাদা থান।
আনতারার দুই ভাই কিছুতেই মা কে সাদা কাপড় পরতে দিবে না। না সম্মতি দিয়েছে নাক ফুল, হাতের চূড়ি খোলার জন্য।
এসব হাদীসে উল্লেখ নেই তাহলে এসব করার প্রয়োজন কি?
চোখের সামনে মা এভাবে ঘুরে বেড়াবে, সাদা কাপড়ে। তারা মেনে নিতে পারছে না।
তবে গ্রামের মুরব্বি মহিলাদের কথা ছিল-
“বাবারা ওমন করিস না।তোরা না মানিস, আমরা তো মানি।আমাদের মনের শান্তির জন্য করতে দে। অনন্ত তিন দিন দে।
তারপর ছোটমোটো একটা নাকের ফুল আইনা দিস।”
আনতারা চুপচাপ ভাইদের দেখছিল।শ্বাশুড়ি সাদা কাপড় পরে আসার পর তাকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন কুমুদ বেগম। অন্তঃসত্ত্বা কুমুদ বেগম কে এভাবে কাঁদতে কড়া কন্ঠে না করলেন তার শ্বাশুড়ি।
দূর থেকে দাঁড়িয়ে আনতারা সব দেখছিল।সে দাঁড়িয়ে ছিল তার বাবার পাঞ্জাবী যে গাছে ঝুলানো রয়েছে তার কাছাকাছি।
রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে। বাবার শরীরে কোন কাপর ছিল না।আগে শুনেছে ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মারা গেলে তাদের শরীরে কাপড় থাকেনা। বাবার মাথার খুলি ছিল না। নাক থেকে পেট অবধি ঠিক ছিল।তারপর পেট থেকে হাটু।
হাত- পা কয়েক খন্ড হয়েছিল।
আনতারার সামনে এখনো তার বাবার পরনের লুংগি, পাঞ্জাবি।
যে চাটাইয়ের উপর রাখা ছিল মাংসের স্তুপ, সেই চাটাই।
ধীর পায়ে আনতারা এগিয়ে গেল সে সবের দিকে। আশ্চর্য! যে মেয়ে মুরগীর রক্ত দেখে ঠোঁট কামড়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়, সে মেয়ে আজ রক্তে শুকিয়ে যাওয়া পাঞ্জাবী হাতে নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
পুরো বাড়ি কিছুটা নিস্তব্ধ ছিল।আশেপাশের মানুষ কিছু যার যার বাড়ি চলে গিয়েছে।
হঠাৎ আনতারার চিৎকারে ছুটে এলো সবাই।
বাবার পাঞ্জাবী ধরে সে অনবরত চিৎকার করছে।
এক সময় ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল। দু হাতে মাটিতে আঘাত করে চিৎকার করে বলল,
“বাবার ছোট্ট জায়গায় দম আটকে যায়। তোমরা কেন বাবারে রাইখা আসলা?জানো না? বাবা খোপের মধ্যেই থাকবার পারত না। বাবার গলায় কেমন লাগত? বাবার কষ্ট হইতেছে। বাবা রে আইনা দেও। আমি কিছু জানি না।”
আনতারার চিৎকারে আবার মানুষ একত্র হয়েছে। মনে হচ্ছে খুব মজার কিছু দেখাচ্ছে আনতারা। কিছু দূরেই স্কুলের হেড স্যার, চেয়ারম্যান সাহেব, সাবেত, মাহির সহ কয়েকজন ছিলেন।আনতারার চিৎকারে তারাও এসে দাঁড়ালেন।
আনতারার মা -ভাইয়েরা আনতারা কে ধরতে যাচ্ছিলেন।এতে আনতারা আরো গলা ফাটিয়ে চিৎকার শুরু করলো,
“মা তুমি তো জানো বাবা কেমনে থাকব? একটু চাপা জায়গায় বাবা বসলেই কেমন কেমন করত? বলত, মা আমার বুকের ভিতর চাপা দেয়, আমি গুমোট জায়গায় থাকবার পারি না। তাও তুমি চুপ?
মেয়ের অভিযোগে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন আনতারার মা রওশন বেগম।তাকে সামাল দিয়ে তার ভাইবৌ ভিতর বাড়ি নিয়ে গেলেন। এদিকে কুমুদ বেগম সবে মাত্র ঘুমিয়েছেন।এ অবস্তায় এত মানসিক টান পোড়ন নিতে পারবেন না।অনাগত বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর।
গ্রামের মানুষ হায় হায় করে দুঃখ প্রকাশ করতেছে। শেষ বয়সকালের মেয়ে আনতারা তার বাবার।
মেয়ের ভবিষ্যৎ নিজের হাতে গড়তে চেয়েছিলেন।
কত আশা, ইচ্ছা ছিল, মেয়েকে ডাক্তার বানাবেন। তারপর পরিচয় দিবেন ডক্টর আফিয়া আনতারার বাবা হিসেবে।
মেয়েও পড়ায় বেশ ভালো। আদরের কমতি করেন নি। এই মেয়ে কাঁদব না তো কে কাঁদব?
চেয়ারম্যান সাহেব, হেড মাস্টার সহ কেউ আনতারা কে ধরতে যায় নি। আনতারার দুই ভাই চেষ্টা করছে। সে সময় আনতারা বলল,
” আপনারা আমারে ধরবেন না। আপনারা ভাই না আমার। আমার ভাই হইলে আমার বাবারে শেষ দেখা দেখতে দিতেন। আমারে দেন নাই আমার বাবারে দেখতে। রাইখা আসছেন নিয়া। আপনাদের কি এমন ক্ষতি করছি আমি? আমারে একবার দেখতেও দিলেন না।”
ঠিক সে সময় আসর ওয়াক্তের আজানের স্বর ভেসে এলো। আনতারা চিৎকার আর্তনাদে পরিনত হয়েছে। আনতারার সহপাঠী, বান্দুবীরা দাঁড়িয়ে ছিল। এবার তারাও কাঁদতে শুরু করে। কারণ আনতারা তখন বলছিল,
“কাল এমন সময় বাবা আমার কাছে ওযুর পানি চাইছিলেন। আমি দিছি। আমি এখন কারে পানি দিমু? কে আমার কাছে ওযুর পানি চাইবে? কে আমারে মা বলে ডাকব?”
আনতারা এসব বলছিল আর প্রচন্ডভাবে কাঁপতে ছিল।সবাইকে অবাক করে দিয়ে হিমু এগিয়ে এসে আনতারা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। নিজের ওড়না দিয়ে আনতারার চোখ মুখ মুছে দিয়ে বলল,
“আনা, তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতী মেয়ে। পাগলামি কেনো করতেছ? তোমার বাবার সাথে যা হয়েছে সম্পূর্ণ দূর্ঘটনা। আর মৃত্যুতে তো আমাদের কারো হাত নেই। তুমি না কত সুন্দর, সুন্দর কথা বলো?
পাগলামো করো না৷ উঠো। ”
আশ্চর্য হলেও হিমুর এক কথায় আনতারা উঠে দাঁড়ায়। তারপর হিমু নিজে আনতারার হাত পায়ের ধুলো-ময়লা পরিষ্কার করে।
পুরো সন্ধ্যে আনতারার পাশে থেকে রাতে চলে যায় নানার বাড়ি।
সেরাতেই ছাপিয়ে জ্বর এলো আনতারার। রাত-বিরেতে দুই ভাই চলল উপজেলায়। মৃত বাড়ি বলে রাতে তাদের বাড়ির পাশেই ছিল সাবেত, মাহির সহ অনেকে।
সে সন্ধ্যের পর আনতারা আর একটি শব্দ করেনি। চুপচাপ হয়ে গেছে।
দুদিনের জ্বরে কাহিল করে ফেলেছে মেয়েটাকে৷
গতকাল সবাই এসেছিল।কত কথা বলল আনতারা চুপচাপ তাকিয়ে ছিল বাড়ির বাহিরে।
দুপুরে মানুষ খাওয়ানোর পর ছোট ফুপু এক প্রকার জোড় করেই নিয়ে বের হলেন আনতারাকে।
দূর থেকে বাবার কবর এক পলক দেখলে কি হবে?
আনতারা যখন কবর স্থানের পাশাপাশি জায়গায় দাঁড়ায় তখন খেয়াল হয় এখান থেকে কবর দেখা যাচ্ছে না। কবর দেখতে হলে হয় ভিতরে যেতে হবে না হয় খানিকটা দূরে সাবেত ভাইদের বাগানে। ধীর পায়ে আনতারা এগিয়ে চলল সাবেতদের বাগানের দিকে৷ সেখানে স্ব-মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে একটা বকুল গাছ৷ বকুল গাছের পাশে রাখা বাঁশের মাচায় দাঁড়াতেই আনতারা দেখতে পেল তার বাবার কবর।
চলবে
শিরোনামহীন
সৌরভে সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ১২
আনতারা ইদানীং প্রতিদিন সকালে হাটতে বের হয়। পরিধি বেশি নয়। সাবেতদের বাগান অবধি।
বাগানের বকুলতলার পাশেই হাসনাহেনা ফুলগুলো পড়ে থাকে। বকুলের গন্ধ আনতারার ভালো লাগে না। তবে হাসনাহেনার গন্ধ বেশ লাগে।
দিন দুয়েক আগে হেড স্যার এলেন আনতারার বাড়ি। সাথে নিয়ে এলেন পাঁচটি গাছের চারা। আকাশমণি গাছের চারা।
ভ্যানে করে নিয়ে আসার চারা গুলো নামিয়ে রাখতে নির্দেশ দিয়ে ডাকতে লাগলেন আনতারা কে।
আনতারা বসে ছিল রান্নাঘরের পাশে।
জ্বরের কারণে মেয়েটাকে বেশ কাহিল দেখায় আজকাল।বাবার মৃত্যুর কারণে তিনদিন সকল প্রকার আমিষভোজন থেকে বিরত থাকতে হয়েছে তাদের তিন-ভাইবোন কে৷ ভাইয়েরা মানতে নারাজ। কেনোনা এসব তো হাদীসে উল্লেখ নেই,তবে কেনো এসব কু-সংস্কার মেনে নিবে?
তারা দুই ভাই মানে নি। সাবান মেখে গোসল করেছে, তেল ব্যবহার করেছে। মাছ মাংস খেয়েছে।
শুধু ওসব করেনি আনতারা। সাত পুকুরে তিনটে করে ডুব দিয়ে গোসলের পাট চুকিয়েছে। জ্বর গায়ে গোসল করতে নিষেধ করলেও বাবার আত্নার শান্তির জন্য নামাজ তাকে পড়তেই হবে।তাই গোসল করে, পাঁচ ওয়াক্ত ওযু করে নিজেকে পবিত্র রেখেছে সে।
গ্রামের কু-সংস্কার মেনেই তেল-সাবান মাখেনি। না খেয়েছে আমিষ।
এই কয়েকদিন আনতারা আজান পড়ার পরেই ওযুর বদনা হাতে শুধু নিরবে চোখের জল ফেলেছে। ভাইদের সাথে কোন কথা বলে না। দুই ভাই প্রতিদিন নানা ভাবে চেষ্টা করেও পারেনি কথা বলতে।
আনতারার অভিযোগ এখনো একই। তার দুই ভাই তার বাবাকে শেষ বারের মতোন দেখতে দেয়নি।
এসব কথাই আক্ষেপের সুরে হেড স্যার কে বলেছিলেন আনতারার ভাই। আজ ভদ্রলোক ভর দুপুরে এলেন আনতারাদের বাড়ি।
হেড স্যারের ডাকে আনতারা এগিয়ে যায় বাহির বাড়ি৷ পিছন পিছন হেটে এলেন কুমুদ বেগম।
স্যার কে বসতে বলে, শরবতের ব্যবস্থা করতে ভিতরে চলে যান সে।
হাত পাখা দিয়ে স্যার কে বাতাস করছে আনতারা।ঘামে ভিজে পীঠের সাথে লেগে আছে হেড স্যারের শার্ট।বয়স তার চল্লিশের মোহনায়।
কাজের লোক শরবত এনে নিলে ঢকঢক করে পুরোটা শেষ করে নিলেন।
এ অবধি একটি কথাও বলেনি হেড স্যার। চোখের ইশারায় এবার আনতারাকে পাশে বসতে বললেন হেড স্যার। তারপর আনতারার উদ্দেশ্যে বললেন,
“জানো তো তারা মা, গাছের জীবন আছে?”
আনতারা উপরনিচ দুই দিকে মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়।
“আমরা মা কেউ আল্লার ঘর বাইন্ধা আসি নাই। আমাগো মরতে হবেই। দুইদিন আগে আর পরে। তুমি এভাবে কানলে তো আর বাস্তব পাল্টাই যাব না। বরং তুমি এই গাছ গুলানের সেবা করো। মনে করো এই গাছের মাধ্যমেই তোমার বাবারে তুমি পাইতাছো।
পাঁচ ওয়াক্ত তুমি পাঁচটা গাছে পানি দেও, গাছ তোমারে ছায়া দিব, দিব শান্তি। চোখের জল সমাধান না। যাও ভিতর থেকে একটা কোদাল নিয়ে আসো। আমি তুমি মিলা গাছ লাগাই।”
গত দুই দিনে আনতারা আজান পড়লেই ওযুর বদনায় পানি নিয়ে প্রথমে একটা গাছে পানি দেয়,তারপর নিজে ওযু করে নামাজ পড়ে নেয়।
ছোট ভাই আনতারাকে কাঁদতে না দেখে মায়ের কাছে কারণ জিজ্ঞেস করলে সব বলেন রওশন বেগম। তারপর ছোট ভাই নিজে পাশের বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কেটে বড় করে চার পাশে বেড়া দিয়ে দিয়েছেন।
বড়ভাই বাজার থেকে সার কিনে এনে, লোকজন দিয়ে চারপাশের আগাছা পরিস্কার করিয়েছেন। গাছের গোড়ায় দিয়েছে সার।
আনতারা এখন কাঁদে না। নিয়ম করে পাঁচ ওয়াক্ত পাঁচ গাছে পানি দেয়। সকাল বিকেল জ্বর শরীরের যায় সাবেতদের বাগানে।
একপলক বাবার কবর দেখার জন্য।
সাবেত আনতারাকে পড়াতে এলো পাঁচ দিন পর। আনতারাকে দেখে আঁতকে উঠল সে। অসম্ভব রোগা লাগছে আনতারাকে। চোখের নিচে কালি পড়েছে। দুর্বল লাগছে তাকে।
“সকালে কি খেয়েছিস?”
“পানি। ”
“আর?”
“কিছু না।”
“পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি খেয়ে আয়। না খেলে পড়া মনে থাকবে না।”
“পরে খাবো।”
এবার সাবেতের গলার স্বর বেশ রুক্ষ হলো। চোখ-মুখে রাগী ভাব এনে আনতারা কে খেয়ে আসতে বলল।
তখন আনতারার মা এগিয়ে এলেন রুটি সাথে আলুভাজি, ডিম সেদ্ধ নিয়ে।
অনেকক্ষণ যাবত মেয়েকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেই চলেছেন উনি। এক ঘেয়ে স্বভাবের মেয়ে কোন কথাও বলে না, খাবার মুখেও তোলে না।
কুমুদ বেগমের ডাকে আনতারার মা খাবার টেবিলের উপর রেখে চলে গেলেন।
যাওয়ার পথের দিকে সাবেত খানিকক্ষণ সময় তাকিয়ে থেকে ডান হাতের শার্টের হাতা গুটিয়ে টেবিলে রাখা পানির গ্লাস নিয়ে হাত ধুয়ে নিল।
তারপর রুটি ছিড়ে এগিয়ে দিল আনতারার মুখের দিকে।
এটা অন্তত আনতারা আশা করেনি। তবে সাবেতের দৃষ্টির কাছে হার মানতে হলো তাকে। সাবেত পরপর তিনটে রুটি খাইয়েছে,সাথে ডিম। আনতারার গলা অবধি খাবার উঠে এসেছে।
শেষ পেট ভরে খেয়েছিল তার বাবার মৃত্যুর দিন।
ধীরেধীরে প্রি-টেস্ট পরীক্ষা চলে এলো। সাবেত, হেড স্যার দুজনে মিলে আনতারাকে কিছুটা স্বাভাবিক করেছে। তবুও ভাইদের প্রতি অভিমান যায়নি। এমনকি কুমুদ বেগমের সাথেও খুব কথা বলে না সে। তার ছোট্ট দুনিয়া হয়ে উঠেছে
পড়ার ঘর, বাবার নামাজের জলচৌকি,গাছগুলো ঘিরেই।
পুরোদমে না হলেও কিছুটা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে আনতারা। এমন এক সকালে,
আনতারা ঘরে বসে পড়ছিল এমন সময় এক ভদ্রমহিলার কন্ঠ শুনতে পায় সে। ভদ্রমহিলা বলতেছিলেন,
“আহারে খালা কি কমু? খালুজান আমার বাড়ির সামিনেই কাটা পড়ছে গো। কত ডাকলাম সরেন,সরেন ট্রেন আইতাছে। কিন্তু হে তো শুনলোই না। বাজ পাখির মতোন ট্রেন আইসা পিষা দিয়া গেল। ট্রেন যাওনের পরেও মাংস গুলান ফাল পারল।জান কি এত সহজে যায়? পিছন থাইক্যা ট্রেন আইছিল। শরীরের কিছুই আছিল না। আমি গিয়া আমার গায়ের উন্না দিয়া লজ্জাস্থান ঢাইকা দিছিলাম।তারপর চেয়ারম্যানের পোলায় তো আমার বাড়িত থাইক্যাই বস্তা আইনা…… ”
সাবেত সবে মাত্র রুমে প্রবেশ করেছে। প্রবেশ করেই দেখল,আনতারার শরীর অনবরত কাঁপছে। ডান হাতের বৃদ্ধাংগুলি অনবরত ঘষে চলেছে বাম হাতের তালুতে। বুঝতে সমস্যা হলো না, আনতারা সব শুনে, চোখের সামনে ওসব কল্পনায় ফুটিয়ে তুলেছে। যার ফলে তার প্যানিক এট্যাক এসেছে।
সাবেত আনতারার কাছাকাছি এসে হালকা স্বরে ডাক দিতেই আনতারা লুটিয়ে পড়ল সাবেতের প্রশস্ত বুকের উপর৷
ভর সামলাতে দুই হাতে আনতারাকে জাপ্টে ধরে সাবেত। মনে হচ্ছে নরম খরগোশ বা বিড়ালের বাচ্চা ঠাই নিয়েছে তার বুকে। ”
চলবে