শিরোনামহীন,পর্বঃ৭+৮
সৌরভেসু বাসিনী(moon)
পর্বঃ৭
এ গ্রামে কখনো সূর্য উঠে না,সূর্য আসে। এক ফালি রোদ এসে রাঙিয়ে দিয়ে যায় পুরো গ্রাম।
ভোরবেলায় বৃষ্টি হয়েছে। ঝুম বৃষ্টি। গাছের পাতায় এখনো জমে আছে বিন্দু বিন্দু জল। ঘরের সামনেই জবা গাছ৷ জবা গাছের গা এখনো ভেজা। চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে পানি।
ঘরের বারান্দায় বসে সেদিকেই তাকিয়ে আছেন আনতারার বৃদ্ধ মা।
বয়স ষাটের মোহনায়। স্বামী গত হয়েছে বছর সাতেক আগে।
তারপর দুই পুত্র,পুত্রবধূ এবং দুই নাতীনাতকুর নিয়েই তার বাস। এক মেয়ে সে তো চোখের সামনে থাকবে বলেই সাবেতের কাছে বিয়ে দিয়েছে।
উঠোনের দক্ষিণ পাশটায় শ্যাওলা জমেছে। যেকোন সময় আছাড় খাবে যে কেউ।
সেদিকটায় এক টুপড়ি গোবর এনে ফেললেন বাড়ির রাখাল ছেলে।
এরা তিন পুরুষ ধরেই কাজ করছে আনতারাদের বাড়ি।বাধা কাজের লোক বলা চলে, তবে এ ছেলেটা শুধু গরুর দেখাশোনা করে বলেই নিজেকে রাখাল বলে দাবী করে।মাঝেমধ্যে বাঁশিও বাজায়।
পনেরো কি সতেরো বছর বয়সের হবে তবে কাজে বেশ দুরন্তর।
উঠোনে গোবর লেপ দিচ্ছে সে। এক হাতে বাঁশের ঝাড়ু অন্য হাতে একটা প্লাস্টিকের মগ।
মগ দিয়ে একটু পানি গোবরের মধ্যে ঢালছে অন্য হাতে ঝাড়ু দিয়ে গোবর পানি ছড়িয়ে দিচ্ছে পুরো উঠোনে।
আনতারার মায়ের দৃষ্টি তখন ঝাড়ুর দিকে।পানি,গোবর এবং ঝাড়ুর প্রতিটি সংঘর্ষ মনে করিয়ে দিচ্ছে মস্তিষ্কের কোথাও ধুলো জমে যাওয়া এক পশলা স্মৃতি।
সেবার আনতারা দশে পা দিয়েছে। জৈষ্ঠ্যমাস, পুরো বাড়ির উঠোন জুড়ে জমা হয়েছে ধানের আঁটি।
তখন বাড়ির কর্তা জীবিত ছিলেন। বাড়ি ভর্তি কাজের জন্য আনা লোক। যাদের কেউ ধান আনছে আবার কেউ মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত।
আনতারার মা-ভাবী তখন ব্যস্ত পাক ঘরে।
এক এলাহী কান্ড বলা চলে। বড় ভাইয়ের সাইকেলে করে স্কুল থেকে ফিরলো আনতারা।
ফিরেই ঢুকেছে পাকঘরে ভাবীর কাছে। ঘামে ভেজা কুমুদের পিঠে বুক ঠেকিয়ে গলা আকড়ে ধরে আদায় করে নিলো তার পাওনা।
পাওনা আদর নিয়ে বেরিয়ে আসতেই পা দিলো উঠোনে রাখা গোবরে।
কয়েকদিনের বাসী গোবরে জন্মেছে কিছু সুর্দশন। আস্তে-ধীরে তারা জায়গা করে নিয়েছিলো আনতারার পায়ে।
যখন আনতারা বুঝতে পারলো পায়ে কিছু একটা লাফাচ্ছে, মেয়ে সে কি কান্না!
ভয়ে এতটুক হয়ে গিয়েছিলো তার মুখ।
এরপর থেকে উঠোনে গোবর দেওয়ার সময় সে ঘর থেকেই বের হতো না।এতদিনেও সে অভ্যেস মেয়ে ছাড়তে পারেনি।
মেয়ের ওমন ছেলে মানুষীর স্মৃতি মনে হতেই এক চিলতে
হাসি দেখা দিলো ভদ্রমহিলার ঠোঁটের কোণে তবে দীর্ঘ স্থায়ী হলো না সে হাসি।
সাবেতকে তো কম আদর করেনি তারা, আনতারাও কম ভালোবাসেনি সাবেতকে। তাহলে এমন কেনো করলো সে?
দু-চোখ উপচে নোনাস্রোত নেমে এলো গাল বেয়ে।
দুই গ্রামের সীমানা নির্ধারণ করেছে চেয়ারম্যান বাড়ি।সাবেতদের বাড়ি তাদের গ্রামের শেষ প্রান্তে, আনতারাদের গ্রামের শুরুতে। মাঝে রয়েছে চেয়ারম্যান বাড়ি,সাবেতদের ফলের বাগান,একটা পুকুর এবং কবরস্থান।
আনতারাদের বাড়ি সইসই রয়েছে সাতটা পুকুর। সাত পুকুরে মাছ চাষ হয়। পুকুরের মালিকানা কারো নামেই নেই কারণ যার জমি ছিলো মতিন মিয়া, সে যুদ্ধের সময় নিহত হয়। বেঁচে ছিলো তার বৃদ্ধা মা।মারা যাওয়ার আগে সাত পুকুর গ্রামের মসজিদ,মাদ্রাসার নামে দিয়ে যান বৃদ্ধা।মৃত্যুর আগে ভদ্রমহিলা গ্রামের চেয়ারম্যানের হাত ধরে শুধু বলেছিলেন,
“বাবা পুকুর ভরাট করিস না।আমার পুকুরে মাছ হবে অনেক, তোরা নিস, তয় আমার পুকুর একবেলার বেশি নির্জলা রাখিস না।”
এমন নয় যে সবাই বৃদ্ধার কথা মেনেছে। বৃদ্ধার মৃত্যুর পর পুকুর সেঁচে মাছ তোলার পর পুকুর পানিশূন্য হওয়ার ঘন্টা দুয়েক পর একজন মানুষ মারা যায়। তারপর কোথা থেকে পানি এসে যেনো টইটম্বুর হয় পুকুর। পরপর তিন বছর যখন এমন হলো, তারপর থেকে এই সাত পুকুরকে গ্রাম বাসী কখনো নির্জলা রাখেনা।
একটা পুকুরের পাড়ের উপর শুয়ে আছে মাহির।
সাবেতের এমন করার কোন মানে সে খুঁজে পাচ্ছে না। মুখে সিগার রেখেই ডান হাত দিয়ে ফোন বের করে নিজের পকেট থেকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে এতটা এক্টিভ না হলেও নাম মাত্র একাউন্ট আছে৷
লগিন করেই সাবেতের নামে সার্চ করলো মাহির।
তার কোন অধিকার নেই ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলার তবে মনে হচ্ছে কোন একটা কারণে সাবেত – আনতারা পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না।
কয়েকজোড়া বুনো তিতির ঘুরাঘুরি করছে আনতারার চারপাশে। ছোট ভাই এনে দিয়েছিলো আনতারা কে। দুই জোড়া, সেই দুই জোড়া ডিম দিয়েছে, বাচ্চা ফুটেছে। এবার অনেকগুলো ছোট ছোট বাচ্চা ফুটেছে।
ঘরের কাজ বা কিছুতেই মন বসাতে পারছে না সে। আজ মনে হচ্ছে শ্বাশুড়ি কিছুটা উল্টো পথে চলছে।
হয়তো এমন একদিন আসবে সাবেত ফিরে আসবে গ্রামে, সাথে নিয়ে আসবে মারিয়াকে।
বাড়ি এসে বলবে তাদের জন্য, মারিয়ার জন্য ঘর ছেড়ে দিতে। শ্বাশুড়িও নতুন বউয়ের মান রাখতে আনতারাকে তার সাথে থাকতে বলবে।
তারপর তার চোখের সামনেই চলবে মারিয়া- সাবেতের প্রেমের সংসার।
এসব ভাবতেই একরাশ কষ্ট দলা পাকিয়ে বুক বেয়ে উঠে এলো আনতারার গলার দিকে।
প্রচন্ড ব্যথা করছে কন্ঠনালীতে। কয়েকটা ফাকা ঢোক গিলে কান্না গিলতে চাইলেও পারলো না।আঁচলে মুখ ঢেকে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো সে।
পাকঘর থেকে আনতারার শ্বাশুড়ি দেখে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে আপন মনেই ভাবলো,
“নারীর জীবন ব্যর্থ যদি সে তার স্বামীকে আগলে রাখতে না পারে।আর তুই সে অভাগী ব্যর্থ নারী বৈ কিছুই না।”
হায়রে নারী, হায়রে মা। পরের মেয়ের দোষ শুধু চোখে লাগলো, নিজের ছেলের দোষ দেখেও দেখলো না।
সময়ে সময়ে সমুদ্রের পানি এসে পা ভিজিয়ে দিচ্ছে সাবেতের। আনতারা তাকে ব্লক কেনো দিলো? সে কি সত্যি মায়ের সাথে এদেশে আসবে? এলে যদি মারিয়াকে মেনে না নেয়? যদি ছেড়ে দিতে বলে মারিয়াকে? তাহলে কি করবে সে?মারিয়াই বা কি করে মেনে নিবে আনতারা কে?
আনতারাকে আগেই সবটা বলা উচিৎ ছিলো।উচিৎ ছিলো মারিয়ার সম্পর্কে সব জানানোর। ধীরেধীরে সাবেতের
দুচোখে জমছে পানি। তবুও সাবেতের দৃষ্টি তখন সমুদ্রের পানির দিকেই।
আবছা চোখে সেখানে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তার অতীত কাল।
ষোড়শী আনতারা প্রতিচ্ছবি।
(শুরু হলো আনতারা-সাবেতের অতীত রোমন্থন)
চলবে
শিরোনামহীন
সৌরভে সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ৮
“চত্রুান্তের খল বুকে কামড় বসাই।
আমারও ইচ্ছে করে
টুকরো টুকরো কোরে কেটে ফেলি তোমার শরীর।”
কোন নারীকন্ঠে কথাটা শুনে বিস্ফোরিত চোখে সামনে তাকায় সাবেত।
সাত পুকুরের পাড়ে বসে হ্যানরী রাইডার হ্যাগার্ড এর লেখা “শী” উপন্যাসে ডুবে ছিল সে।
নিয়াজ মোর্শেদ জনাবের অনুবাদে বেশ রোমাঞ্চকর উপন্যাস।
উপন্যাসের শুরুতে হ্যানরী বলেছেন, এই উপন্যাস উনাকে উনার ক্ষণিকের পরিচয়ে পরিচিত ব্যক্তি পাঠিয়েছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। যদিও ব্যক্তির নাম হ্যানরী সাহেব জানতেন তবুও বই প্রকাশিত কিংবা অন্যাদি সকল বিষয়ে নাম প্রকাশ করেনি।এই উপন্যাসের ভিত্তি কাল্পনিক নয়, সম্পূর্ণ বাস্তবিক ছিল বলেই দাবী করেছেন উক্ত ব্যক্তি।
রহস্যময় নারীর চিন্তায় বিভোর সাবেতের মস্তিষ্কে যখন উক্ত নারীর কন্ঠ স্পর্শ করে তখন সামনের দিকে চোখ তুলে তাকায় সে।
স্কুলড্রেস পরনে কয়েকজন মেয়ে হেটে চলেছে বাড়ির দিকে। এদের সবাইকে সাবেত চিনে তবে কথাটা কে বলল সঠিক ভাবে বুঝতে পারেনি সে।
কোমল ঘাসের উপর ডান হাত মাথার নিচে দিয়ে চুপচাপ গা এলিয়ে দেয় সাবেত। মস্তিষ্কে কোথাও একটা এখনো সেই কন্ঠস্বরের ছাপ স্পষ্ট। থেকে থেকে অনুভূব করছে সেই কন্ঠস্বর।খানিকক্ষণ চোখ বুজে রইল সে। হঠাৎ মনে পড়লো
কিছুক্ষণ পর তার কাছে পড়তে আসবে এবার মাধ্যমিক দিবে এমন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
তাদের কথা মনে হতেই একদল আলস্য চেপে বসেছে সাবেতের শরীরে।
নেহাৎ প্রধান শিক্ষক স্যার করিম মিয়া বলেছেন তাই রাজি হয়েছে। না হলে ইচ্ছে ছিল না।
বিকেল হতে না হতেই একদল মেঘ এসে জড়িয়ে নিয়েছে পুরো গ্রাম।ঝুপঝুপ করে ঝরছে বৃষ্টির পানি। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই একদল এলো সাবেতের বাড়ি। তাদের বসতে দিয়ে সাবেত বেরিয়ে যায় মোমের উদ্দেশ্যে। বিদ্যুৎ চলে গেছে৷
পাঁচজন মেয়ে, চারজন ছেলে নিয়ে শুরু হলো সাবেতের পড়ানো।
আনতারা ছিল তাদের মধ্যে একজন। চুপচাপ নিরীহ প্রজাতির মানুষ যাকে বলে। তবে অসম্ভব বুদ্ধিমতী কিশোরী। পড়ার সময় কোন আজেবাজে কথা নয়, চুপচাপ পড়বে, পড়া শেষ ছোট ভাই অথবা বাবা এসে নিয়ে যায় আনতারাকে।
সাত দিন টানা পড়ানোর পরও সাবেত আনতারার কন্ঠস্বর শুনতে পায়নি।
একদিন সাবেত ক্যাম্পাস থেকে ফিরে সবে মাত্র খেতে বসেছে ওমনি আনতারা এবং দুইজন পড়তে এসেছে। তাদের বসতে দিয়ে সাবেত পাশের রুমে দ্রুত খাবার খেয়ে নিচ্ছিলো। হঠাৎ সেদিন বিকেলবেলা শোনা কন্ঠটি শুনতে পায়৷
একই কন্ঠে কেউ একজন আবৃত্তি করছে….
“দয়া কর, মোরে দয়া কর, আর
আমারে লইয়া খেল না নিঠুর খেলা;
শত কাঁদিলেও ফিরিবে না সেই
শুভ লগনের বেলা।”
সাবেত আধখাওয়া ভাতের প্লেট ছেড়ে দ্রুত ফিরে আসে দরজার কাছে৷ আনতারার ঠোঁটের স্পন্দন বিশ্লেষণ করে বুঝতে বাকী রইল না আনতারাই সেদিনের সেই নারী কন্ঠের একমাত্র অধিকারিণী।
“আচ্ছা আনা তুই এসব কোথায় পাস বলতো? ”
সাবিনার কথায় মুচকি হেসে আনতারা জবাব দেয়,
“এটা কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতার অংশ। ”
“আর সেদিন রাস্তায় যে বলেছিলি? টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলি। ওইটা কার ছিল?”
“রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্।”
“এত সব কই পাস? কিভাবে পড়িস?”
“ভাবীমার কাছে অনেক বই আছে। বড় ভাই এনে দেয়। ভাবীমা আমাকে পড়তে দেয় তাই আমি জানি।”
সাবেতের গলা খাকাড়িতে ত্রস্ত শিক্ষার্থীরা সবাই ঠিক হয়ে বসলে সাবেত পড়ানো শুরু করে। আনতারাকে সে বুঝতে চেষ্টা করেও পারছে না।এমন তো নয় আনতারা ইচ্ছে করেই তাকে এড়িয়ে চলছে? তবে রাত-বিরেতে হুটহাট মস্তিষ্কের কোথাও কোন নিউরনে জমে থাকা স্মৃতিতে মাথা তুলে উঁকি দেয় আনতারার কন্ঠস্বর।
সবার সাথে সম্পর্ক ভালো হলেও সাবেত আনতারার একে অপরের সাথে স্বাভাবিক কথোপকথন হয়ে উঠেনা। একদিন সাবেত তাদের ইংরেজি পড়াচ্ছে৷
আজ না কি স্কুলে হিমু নামের মেয়ের সাথে আনতারার একদফা যুক্তি তর্ক হয়েছে। মেয়েটা শহর থেকে গ্রামে এসে পরীক্ষা দেয়। ক্লাস করে না, শহরে না কি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। মেয়ের খুব ইংরেজির বড়াই৷ আজ ইংরেজি ম্যাম বার্স্ট বলেছিলেন বলে মেয়েটা তৎক্ষনাৎ জবাব দিয়ে বলে,
“ম্যাম বার্স্ট ব্লাস্ট হবে। যার মানে বিস্ফোরণ।”
ম্যাম কিছু বলার আগেই ঘন্টা বাজলে ম্যাম বলে গেলেন কাল বলবেন এ বিষয়ে কারণ রসায়ন স্যার বাহিরে ইতিমধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন।
রসায়ন ক্লাস শেষ হতেই হিমুর শুরু হলো টিপ্পনী কেটে কথা বলা।
সে ম্যাম সম্পর্কে বলে – আগে উচিৎ ইংরেজি শিখে আসা। পারবে না আমার সাথে ইংরেজিতে ৫ মিনিট কথা বলতে আবার আসছে পড়াতে। লল রিয়েলি লল।
” তুমি কি জানো বার্স্ট অর্থ কি? তোমার ব্যাগে দেখলাম দামী একটা স্মার্টফোন। গুগলে দেখো না ভাই তারপর ম্যামের ভুল ধরতে এসো। নিজে ব্লাস্টের সমার্থক শব্দ জানো না অথচ এসেছো ম্যামের ভুল ধরতে।”
তর্ক বির্তকের এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক এসে উপস্থিত ক্লাসে৷ পরবর্তীতে দেখা গেল দুই শব্দের মানে একই।
তবুও হিমু নামের মেয়েটা একটুও অনুতপ্ত নয়। সে স্যার-ম্যামদের নামে কুটক্তি করে যেন ভীষণ আনন্দ পায় এমন একটা হাবভাব ছিল তার।
সব শুনে সাবেত বলল,
” আনতারা অঙ্গবিক্ষেপ বা স্টাইলের প্রতি শব্দ কি? ”
“Pose”
“বাংলায় লিখতে কিভাবে লিখবে? মুখে বলো। ”
“পোজ বা পোস।”
“কেনো? বাংলায় লিখলে তো হয় পোসে বা পোষে তুমি ওভাবে কেনো লিখবে? ”
” তাহলে অনেক শব্দের উচ্চারণ অনেক রকম হয়৷ আমরা বাংলা ভাষায় ইংরেজি শব্দ সঠিক ভাবে লিখতে পারি না। যেমন উচ্চারণ অনুসারে কুয়েশ্চন ইংরেজি অক্ষর K দিয়ে শুরু হয় যদি বাংলায় লিখতে যাই, কিন্তু আমরা ইংরেজিতে ব্যবহার করি Q। ”
” এই তো বুঝেছ, তাহলে কেনো মন খারাপ? আমাদের চারপাশে সমাজে অনেক মানুষ আছে যাদের নাই কাজ তো খৈ ভাজ টাইপ সময় কাটে। তারাই আসে এসব করতে। এদের যত পাত্তা দিবা এরা মাথায় উঠে বাঁদর নাঁচ নাঁচবে। তাই এদের কখনো মূল্য দিও না।”
সাবেতের কথায় আনতারা দু দিকে মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানিয়েছিল সেদিন।
বিপত্তি হলো সেদিন, যেদিন আনতারারা এসে দেখে হিমু পড়বে তাদের সাথে।
সবাইকে সাবেত পদার্থ বিজ্ঞানের E =mc^2 সূত্রের সাহায্যে গাণিতিক সমস্যা সমাধান করছিল।এমন সময় আনতারা এক বান্ধুবী সাবেতকে একটা প্রশ্ন করে অথচ সাবেত হিমুর প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যস্ত। পুনরায় একই প্রশ্ন আনতারা অন্য সহপাঠী করলেও হিমু প্রশ্ন কাটিয়ে নিজের প্রশ্নে ব্যস্ত রেখেছে সাবেতকে।
এবার আনতারা টেবিলে স্কেল দিয়ে আঘাত করে একই প্রশ্ন করলেও সাবেত জবাব দেওয়ার সুযোগ পেলেও হিমুর সাথে কথায় ব্যস্তই রইল।
শান্ত মেয়ে আনতারার কি হলো কে জানে? প্রচন্ড রেগে ব্যাগ নিয়ে দ্রুত উঠে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। অথচ পড়ানো শুরু হয়েছে সবে মাত্র ২০ মিনিট হয়েছে।
আনতারার এমন ব্যবহারে রুমে থাকা প্রতিটি মানুষ হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে আনতারার যাওয়ার পথে।
সাবেতের বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না যে আনতারা রাগ করে চলে গেছে৷ সে এ বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দেয়নি।তবে টনক নড়ে তিন দিন পর যখন দেখে আনতারা আর পড়তে আসছে না।
চলবে