শিরোনামহীন,পর্বঃ৯+১০

0
2829

শিরোনামহীন,পর্বঃ৯+১০
সৌরভে সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ৯

হিমু গ্রামেই থাকবে পরীক্ষার পূর্বের এই সময়। কয়েকদিন পর প্রি-টেস্ট এক্সাম। হিমুর নানা স্কুল কমিটির প্রধান৷ সাবেতের পড়ানোর ধরন সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবগত ভদ্রলোক।
তাই নাতনীকে এই বছর খানেক সময় গ্রামেই রাখবেন বলে মনস্থির করেছেন তিনি।

আনতারা- হিমু পরস্পর পরস্পরের সাথে কোন ব্যক্তিগত আক্রোশ নেই। নিরিহ প্রজাতির মানুষ আনতারা। পড়ার বই বাদেও এটা ওটা পড়তেই থাকে। কারো সাথে শত্রুতা করার মতোন মেয়ে সে নয়৷
আনতারার এই স্বভাবের জন্য সম্পূর্ণ কৃতিত্ব হচ্ছে কুমুদ বেগমের৷
কুমুদ বেগম যখন আনতারার বড় ভাইয়ের স্ত্রী হিসেবে বাড়ি এসেছিলেন, তখন আনতারা ছোট্ট একটা মেয়ে। সারাদিন মায়ের আঁচল, বাবার পাঞ্জাবী ধরে থাকত।দুই ভাইয়ের সাথেও বেশ খুনসুটির সম্পর্ক ছিল আনতারার।
আনতারার বড় ভাইয়ের সাথে আনতারার বয়সের পার্থক্য প্রায় আঠারো বছরের।
এজন্যই বোধহয় আনতারা সবার এত প্রিয়।

সপ্তদশী কুমুদ যখন প্রথম এ বাড়ি এলেন তখন আনতারার বয়স হবে হয়ত বছর পাঁচ কি ছয়।
নিজের ছোট ভাই-বোনকে ফেলে আসা কুমুদ বেগম নিজ হাতে গড়তে লাগলেন আনতারা কে।
কুমুদ বেগম কাঁদা মাটি পেয়েছিলেন, এবার নিজ হাতে কাঠামো দিলেন, একটু ধৈর্য, সাহস এবং অনেকটা আত্নসম্মান নিয়ে ধীরেধীরে তৈরী হচ্ছে আনতারার চরিত্র, স্বভাব এবং ব্যবহার।

একমাত্র মেয়ে বলে তাকে রান্নাঘরে যেতে দিবে না? এ নিয়মনীতি অনুসরণ করেনি কুমুদ বেগম কিংবা উনার শ্বাশুড়ি। মেয়ে মানুষকে সব দিকেই পটু হতে হয়। বিশেষ করে ঘরের কাজে। কেননা সারাদিন চাকুরী করে এলেও সন্ধ্যেবেলা তোমাকে তোমার সংসারের হাল ধরতেই হবে।
পুরুষ কখনো নারীর মতোন সংসারের হাল ধর‍তে পারবে না। পুরুষ জাত আল্লাহ্-তালার এক অনন্য সৃষ্টি। পুরো পরিবারকে বাইরের সকল ঝড়-ঝঞ্ঝা হতে রক্ষা করবে, সামান্য আঁচ লাগতে দিবে না কিন্তু এরা নারীর মতোন সংসার গুছিয়ে রাখতে পারে না।
এজন্য হয়ত নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক।

তিন দিনের দিন যখন আনতারা পড়তে এলো না তখন সাবেত আনতারার কথা বাকী সবাইকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারে,

সামনে ওদের প্রি-টেস্ট তাই আনতারা না কি বাড়িতেই পড়তেছে, বাকী যা বুঝতে পারে না বা সমস্যা হয় সব স্কুলের স্যার-ম্যাডামদের জিজ্ঞেস করে নেয়।

সাবেত স্বাভাবিক ভাবে নিতে চাচ্ছিল বিষয়টি তবে ওদের মাঝেই একজনের কথায় বেশ অনুতপ্ত হয় সে।

“সাবেত ভাই, সেদিন আপনাকে আমি পিথাগোরাসের বিপরীত উপপাদ্য বুঝিয়ে দিতে বলছিলাম, আনতারা বুঝে না ওইটা। কিন্তু সেইদিন আপনি আমাদের বুঝান নাই, স্কুলের জয়নুল স্যার উপপাদ্য লিখতে দিছিলেন পরদিন। আনতারার ভুল হইছিল তাই স্যার ওর ডান হাতে কাঠের স্কেল দিয়া সাতটা বারি দিছে।পরের দিন ও একশো বার ওইটা লিখছে, মুখস্ত করছে স্যাররে পড়া দিছে৷ আপনি বুঝাই দিলে সেদিন মাইর দিত না স্যার ওরে।
তাই ও আপনার কাছে আর আসে না।”

দুইদিন আগে আনতারার হাত দেখে কুমুদ বেগম শিউরে ওঠেন। শ্বাশুড়ি পইপই করে না করে দেন একথা ঘুনাক্ষরে যেন তার ছেলেরা না জানে। বিশেষ করে ছোট ছেলে।

” সে বোনের জন্য রাজনীতি ছাড়ছে তবে এখনো তার তেজ কিন্তু চার আনা কমে নাই। সে তো এটা দেখবে না বোনে পড়া পারে নাই, সে যাইবে মাস্টাররে মাইর দিতে৷ তাই চুপচাপ থাকো তোমরা। হাতে হলুদের লেপ লাগায় দেও বৌ। কইমা যাইবো।”

আনতারার হাতে হলুদের প্রলেপ লাগিয়ে দেওয়ার সময় কুমুদ বেগমের দুচোখ ছাপিয়ে পানি ঝরতে থাকে।
হাত লাল হয়ে আছে৷ ডান হাতে কেউ মারে?
সেরাতে আঘাত প্রাপ্ত হাত নিয়েই আনতারা পুরো খাতা ভর্তি করে উপপাদ্য লিখেছে। ফলস্বরূপ হাতের অবস্থা এখন আরো করুণ।
ব্যাথার প্রতিদান স্বরুপ জ্বর এসেছে।
বাহিরের ঘরে পাতা বিছানায় বসে আনতারা পড়ায় মগ্ন।
ডান হাতে মলম লাগানো তাই লিখতে পারছে না, তবে পড়তেছে। ছোট ভাই এসে কিছুক্ষণ আগে চার্জার লাইট, চিপ্স দিয়ে গেছেন। ভাইয়েরা জানে গরম পানিতে এমন হয়েছে। এজন্য একদফা কথা শুনতে হয়েছে তাদের মা কে।

বাহিরে থেকে বড় ভাইয়ের গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ভাইজান কাউকে বলতেছেন,

“আনা তো ঘরেই, যাও পড়তেছে মনে হয়।”

আনতারা পিঠ ফিরে বসে আছে।পুরো পিঠে ছড়ানো চুল।বালিশের উপর ডান হাত রাখা, বাম হাতে কলম।দৃষ্টি বইয়ের দিকে।

সাবেত খাটের কিনারায় বসে নিজের বাম হাতে আলতো করে মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় আনতারার হাত।পিছন থেকে হঠাৎ এমন স্পর্শের উৎস খুঁজতে পিছনে তাকাতেই ধাক্কা লাগে সাবেতের বাহুর সাথে আনতারার নাকের। নাকফুলের সাথে লেগে খানিকটা ব্যাথা পায় আনতারা। চোখ মুখ কুঁচকে কিছুটা সরে এসে তাকিয়ে দেখে সাবেত বসে আছে।
খানিকটা ঘাবড়ে আনতারা হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে আলতো স্পর্শ দৃঢ় হয়।
দৃষ্টি হাতের দিকে রেখে শান্ত তবে রুক্ষ কন্ঠে আনতারার উদ্দেশ্যে সাবেত বলল,

“পিথাগোরাসের বিপরীত উপপাদ্য কি? ”

অকপটে আনতারা বলে দিলে সাবেত দৃষ্টি স্থির হয় আনতারার চোখের দিকে।ততক্ষণে আনতারা দৃষ্টি নামিয়ে নিয়েছে।সময় হিসেবে সাবেতের এখন হিমুদের পড়ানোর কথা তাহলে এখানে কি করছে সে?
ভাবতেই চিন্তার রেখা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে আনতারার চোখেমুখে।

সাবেত নিশ্চিত মনে আনতারাকে পড়ানো শুরু করে। এদিকে হিমুরা অপেক্ষা করছিল। আনতারাকে ঘন্টা খানেক পড়িয়ে বেরিয়ে যায়।

এভাবেই চলতে থাকে কয়েকদিন।প্রতিদিন সকালে এসে সাবেত আনতারা কে পড়িয়ে যায়। স্কুল বন্ধ থাকায় সাবেতের পুরো সকাল আনতারার সাথেই কাটে। যতদিন অবধি আনতারার হাত এবং জ্বর কমছে সাবেত এভাবে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এমনি এক সকালে আনতারা দাঁড়িয়ে ছিল তাদের বাহির বাড়িতে।
বই হাতে এ ঘর থেকে ও ঘরে যাওয়ার সময় কিছু একটা দেখে দাঁড়িয়ে যায় সে৷

একটা ভ্যান এসে থেমেছে তাদের বাড়ি থেকে হাত দশেক দূরে।
ভ্যানের পিছন পিছন হেটে আসছে আনতারার ছোট ভাই, মাহির , সাবেত সহ গ্রামের আরো ছেলেরা। সবার মুখ বড্ড বিষাদময়, মনে হচ্ছে কিছু একটা হচ্ছে।
এবার আনতারার চোখ যায় ভ্যানের দিকে।
সাদা বস্তায় লাল লাল ছোপ।স্পষ্ট রক্তের দাগ। টুপ টুপ করে ঝরছে রক্ত।

যখন ভ্যান এসে থামলো তখন মাহির এবং সাবেত মিলে আনতারার বাড়ির সামনে বাঁশের চাটাই বিছিয়ে দেয়। তারপর দুজন মিলে বস্তা খুলে আস্তেধীরে বের করে নেয় বস্তায় থাকা টুকরো টুকরো মাংস৷
স্পষ্টত্ব একজন মানুষের দেহাংশ।
গা গুলিয়ে উঠে আনতারার। এ কে? কাকে এনে তাদের বাড়ির সামনে রাখছে?
যখন লাশের মাথা বস্তা থেকে বেরিয়ে এলো, আনতারা চিৎকার করে লুটিয়ে পড়ল তার ছোট ভাইয়ের ডান হাতের উপর।

মৃত্যু! সত্যি এভাবে মৃত্যু কি কারো কাম্য? হয় যদি সে আপনার সব থেকে কাছের মানুষের?

চলবে

শিরোনামহীন
সৌরভে সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ১০

মোঘল সম্রাট আকবরের দরবারে অন্যতম সভাসদ ছিলেন বীরবল।বীরবল ব্রাহ্মণ দিক্ষায় দীক্ষিত থাকার পরেও সম্রাট আকবরের কাছে ছিলেন অত্যন্ত প্রিয় একজন ব্যক্তি৷
কারণ ছিল বীরবলের চতুরতা। প্রশিক্ষণহীন হওয়া স্বত্বেও তিনি যুদ্ধ বিদ্যায় বেশ পারদর্শী ছিলেন।
তো একদিন সম্রাট আকবর সভায় বসে বীরবলের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলেন,

“আচ্ছা বীরবল, তোমার মতে কোন বাণ সব থেকে বেশি মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে? এমন কি মৃত্যু অবধি হতে পারে?”

বীরবল জবাব দিলেন,

“হুজুর বাক্যবান।”

সম্রাট আকবর কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করে বললেন,

“আমার সাথে মশকরা করার স্পর্ধা দেখাচ্ছ?”

“আজ্ঞে না হুজুর, আপনি আমাকে দুটো দিন সময় দিন, আমি আপনার কাছে উদাহরণ সমেত ফিরিবো।”

সেদিন বীরবল সম্রাটের কন্যাকে তার গৃহে ভোজন করার নিমন্ত্রণ করে যায়৷ সম্রাট কন্যা আনন্দের সাথে নিমন্ত্রণ গ্রহন করে। পরদিন যথা সময়ে সম্রাট কন্যা বীরবলের গৃহে উপস্থিত, তাকে রাজকীয় অভ্যর্থনা দিয়ে আপ্যায়ন করলেন বীরবল।
এত এত খাবারের পদ রান্না করা হয়েছিল, যে সম্রাট কন্যা প্রতিটি পদ খাওয়া তো দূর স্পর্শ করবার উপায় নেই। তখন বীরবল সাহেব সম্রাট কন্যার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললেন,

“এই শয়তানের বাচ্চা, তোর জন্য আমার কত টাকা নষ্ট হলো আর তুই বলছিস খাবি না? তুই খাবি, তোর বাপেও খাবে। ”

বীরবলের কথায় সম্রাট কন্যা রেগে লাল হয়ে গেলেন। ফিরে এলেন নিজ রাজ প্রাসাদে।বাবার কাছে গিয়েই বললেন,

“আব্বুজান কালই বীরবল কে শূলে চড়াবে, যদি না চড়াও তো আজ থেকে আপনার সাথে আমার কথা নেই। ”

কন্যাকে বার বার কারণ জিজ্ঞেস করেও কোন লাভ হয়নি। এদিকে সম্রাটের পুরো রাত কাটে বেশ উত্তেজনায়।সব তো ঠিক ছিল,কি এমন হলো যে মেয়ে বীরবল কে শূলে চড়ানোর কথা বলছে?

পরদিন যথারীতি বীরবল সভায় এলেন। সম্রাট জিজ্ঞেস করলেন,

“কি হে বীরবল? কি করেছো তুমি আমার কন্যাকে? যার ফলস্বরূপ তোমাকে শূলে চড়ানো কথা বলেছে? ”

মৃদু হেসে বীরবল জবাব দিলেন,

“হুজুর আপনি আমায় শূলে চড়াবেন,আমার আপত্তি নেই।তবে আমার কথা পুরোটা শুনে নিবেন দয়া করে। ”

“ঠিক আছে বলো তাহলে? ”

তারপর বীরবল গতকালের গঠনা এবং কারণ বললেন। বীরবল প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন বাক্যবাণ সব থেকে মারাত্মক বাণ। যা দ্বারা মানুষের মৃত্যু অবধি সম্ভব।

আজ সকালবেলা নামাজ শেষে আনতারার বাবা আনতারা কে এই গল্পটা বলেছিলেন। সাথে একটি হাদীস,

– যে ব্যক্তি চুপ থাকে সে ব্যক্তি নাজাত প্রাপ্ত হয়।

আনতারা যেন কখনো কাউকে এমন কিছু না বলে যাতে সামনের ব্যক্তিটি কষ্ট পায়। কারণ আমরা সবাই নিজের কথা ভেবে, সামনের পক্ষকে ছোট দেখাতে দশ জনের সামনে একটি কথা হুট করে বলে তো ফেলি, সামনের ব্যক্তি চুপ থাকলে আমরা মনে করি ও হেরে গেছে, তাই জবাব দিচ্ছে না। কিন্তু এটা চিন্তা করি না যে হয়ত ও আমার মতোন এত নোংরা স্বভাবের নয় যে অন্যের কাজে দখল দেওয়া পছন্দ করে না।

কুমুদ বেগম ঠায় বসে আছেন, বাহিরের ঘরের দরজার কাছে। ঘরের ভিতর আনতারার মায়ের মাথায় পানি দেওয়া হচ্ছে।
আনতারা যেখানে বসে আছে তার থেকে হাত পাঁচেক দূরে রাখা আনতারার বাবার খন্ড বিখন্ড লাশ।
গ্রামের মহিলারা সামাল দিচ্ছে তাদের।
আনতারা ছোট ভাইয়ের হাত ধরে মাটিতে বসে বসে আজ সকালে বাবার বলে যাওয়া কথাগুলো মনে মনে আওড়াচ্ছে।উপরোক্ত ঐতিহাসিক চরিত্রগুলো ছিল আনতারা এবং তার বাবার শেষ কথোপকথনের বিষয়বস্তু। প্রতিদিনের মতোন ভদ্রলোক আজ সকালেও হাটতে বেরিয়েছিলেন। কথা ছিল গাছ পাকা কাঁঠাল নিয়ে ফিরবেন আনতারা এবং কুমুদ বেগমের জন্য। অথচ ফিরলেন বস্তাবন্দী লাশ হয়ে।

চারপাশে কত কথা!কিছুই প্রবেশ করছে না কানে। হঠাৎ খেয়াল হলো বড় ভাই আসছেন।ভাইয়ের গায়ে জামা রক্তাক্ত। বড় কচুর পাতায় করে কিছু নিয়ে আসছে।

আনতারা দৌড়ে ভাইয়ের কাছে গিয়ে ইশারা করে বলে
“এটা আমাদের বাবা না। তাই না দাদা ভাই? ”

আনতারার বড় ভাই এক হাতে কচুর পাতা ধরে অন্য হাতে বোনকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

“না রে বোন। এটা বাবার লাশ। এই কঠিন সত্য আমাদের মেনে নিতেই হবে।”

ঠিক সে সময় কচু পাতা থেকে গড়িয়ে পড়ে আনতারার বাবার বাম হাত। হাত নয় ঠিক বাম হাতের কবজি।

আনতারার এই হাত চিনতে অসুবিধা হয় না।মধ্যমায় অবস্থান করা আংটি জানান দিচ্ছে এ হাত তাদের বাবার।

কাঁপা কাঁপা হাতে আনতারা তার বাবার দেহাংশ উঠিয়ে নিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগে।

পুরো বাড়ির পরিবেশ তখন আনতারার বাবা,বাবা আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছিল।

তারপর সময় অতিবাহিত হয় খুব দ্রুত।গ্রামের মুরুব্বি, জোয়ান ছেলেরা সবাই মিলে খুব দ্রুত দাফন কাজ শেষ করেন আনতারার বাবার।
কারণ স্বাভাবিক মৃত্যু হলে লাশ রাখা সম্ভব ছিল কিন্তু ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হওয়ায় শরীরের কোন অস্তিত্ব ছিল না।টুকরো টুকরো মাংসে পরিণত হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ দেহ।

শেষ গোসল করানোর সময় জমাট বাধা রক্ত পানির সাথে মিশে লাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ছিল চার পাশে।
টুকরো টুকরো দেহ কোন ভাবে কাফনের কাপরের উপর পর্যায় ক্রমে রেখে জানাজা,দাফন সম্পন্ন করা হয়৷
জানাজার কাপর ভেদ করেও জায়গায় জায়গায় ফুটে উঠেছিল রক্তিম আবছায়া।

আজ পুরোদিন আনতারা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কেঁদেছে। বাবার লাশ যতক্ষণ বাড়ি ছিল তার চিৎকারে ভারী ছিল পরিবেশ।
তবে অদ্ভুত হলেও সত্য দাফনের জন্য লাশ নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ও এক ফোটা পানি ছিল না আনতারার দুই ভাই এবং কুমুদ বেগমের চোখে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here