#শিশিরের কহিনুর,পর্বঃ৩০
#লেখিকাঃআরোহী নুর
আমরা বাড়ি চলে আসার পর থেকে দাদিজান আর বাবা দুজনই আমার সাথে এখন ভালো ব্যবহার করছেন,মাহেরাকে আর ওর বাবামাকে আমি আর এই বাড়িতে দেখি নি,রোদেলার কাছে শুনলাম দাদিজান বর বাবা নাকি ওদের বলেছেন নিজেদের বাড়ি চলে যেতে,উনারা যেহেতু আমাকে মেনে নিয়েছেন সেহেতু মাহেরা আপিকে আর মি.খানকে পাওয়ার আশা না করার জন্য পরিষ্কারভাবে বলে দিলেন দাদিজান,তারপর নাকি উনারা নিজেদের মুখ বাংলা পাঁচের মতো করে এখান থেকে প্রস্থান করলেন।অভ্র বজ্জাতটা আছে এখনও এই ঘরে,অবশ্য এখন অব্দি আমার সামনে আসে নি আমিও ভুলেও ওর সামনে যাই না,রোদেলার কাছ থেকে শুনেছি লোকটা সেদিন নাকি মাথায় ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় বাড়িতে প্রবেশ করলে ভোর আপির কেঁদে কেঁদে খারাপ অবস্থা হয়ে গেছিলো,তারপর লোকটা না কি বলেছে যে ও নাকি ভুলবশত কোথাও পড়ে গেছিলো তা থেকেই এসব হয়েছে,বজ্জাত লোকটা কি যে করবে আল্লাহ মালুম,এদিকে কয়েকদিন কেটেই গেলো হঠাৎ খবর এলো আমার নানুর নাকি শরীরটা খুব খারাপ,কথাটা শুনে যে কান্নায় পরেছি আর বন্ধ করার নাম নেই এদিকে যেই উনি আমায় কাঁদতে দেখলেন সেই পাগলপ্রায় হয়ে পড়লেন আমার কান্না থামানোর জন্য,কান্নার কারন আমার নানু শুনে উনি ঝটফট ফ্লাইটের টিকিট কেটে আমাকে প্লেনে করে ঢাকা থেকে সিলেট নিয়ে আসলেন একটু সময়েই,এদিকে উনার গার্ডদের বললেন গাড়ি নিয়ে বাইরোড আসতে।আমরা নানুবাড়িতে পৌঁছে গেলাম,নানুর হার্টে একটু ব্যাথা হয়েছিলো এখন ঠিক আছেন,সবাই মনে করেছিলেন হার্ট অ্যাটাক তবে তা ছিলো না,সেখানে আমার মা বাবা আত্নীয় স্বজন সবাই এসেছেন,হৃদয়ও এসেছে,হৃদয় আমার মেজো খালার ছোটে ছেলে, পড়ালেখায় তেমন ভালো ছিলো না আর ওর পারিবারিক অবস্থা একটু খারাপ থাকায় ওকে অল্প বয়সেই প্রবাস পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, ও আমার সমবয়সী,দুই বছর আগে প্রবাস গেছিলো দুদিন আগেই ফিরেছে,যেহেতু সমবয়সী তাই আমরা দুজন সবসময়ই একে ওপরের সাথে দুষ্টামিতে মেতে থাকতাম সেই ছোটবেলা থেকেই,দুজনে একসাথে খেলেছি বড় হয়েছি,ওকে আমি আমার নিজের ভাই আর ও আমাকে নিজের বোনই মনে করে,ওর শুধু শুধু ফাজলামো করার অনেক বদ অভ্যাস,আর ফাজলামোটা আমার সাথেই বেশি করে,আমাকে দেখতেই ফাজলামো শুরু করবে আমি জানি আর মি.খানকেও তো আমি ভালো করে জানি তাই জেবিন আপিকে আসার আগেই ভালো করে বললাম ওকে বুঝিয়ে বলতে যাতে আমার সাথে ফাজলামো না করে,জানিনা আপি বলেছে কি না,তবে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে থাকছি যাতে ওর চোখে না পরি।এদিকে আসার পর থেকে আমার চৌদ্দগুষ্টি আমার স্বামী সাহেবের খাতিরদারিতে মগ্ন হয়ে পরলেন,যাকে বলে জামাই আদর,যেখানে আমি এখন অব্দি স্বামী মানি নি সেখানে উনারা একে নিজেদের জামাই মেনে নিয়েছেন।কথায় আছে না যার বিয়ে তার খবর নাই আর পারা পরশীর ঘুম নাই হুহ,এদিকে উনার সবার সিলেটি ভাষা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে আর আমি উনাকে সে ভাষা ট্রান্সলেট করতে ব্যস্ত হয়ে আছি।রাতের খাবারের পর সিনিয়রেরা পরে সব ছোটরা একসাথে বসে অনেক গল্পগুজব করছিলো,উনি বাইরের দিকে গিয়ে ফোনে কথা বলছেন সেই কভে থেকে,এখানে নেটওয়ার্কের অনেক সমস্যা তাই,হয়তো অফিসের অনেক কাজ ফেলে এসেছেন আমার জন্য তাই এখন ফোনের পর ফোন আসছে,এদিকে গল্প আসরে বসে আছি,আর চারিদিকে তাকাচ্ছি কোথাও থেকে যেনো হৃদয় না আসে,কিন্তু বলে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়,শয়তানটা হুট করে এসে আমার পাশেই থপ করে বসলো বসে আমার কাধের অপর দিকে নিজের হাতটা লম্বা করে টাঙিয়ে দিলো।আমি চট করে ওর হাতটা ফেলেদিলাম আর বললাম।
এই তোর বাঁদরামো গেলো না বুঝি এই, সবাইকে রেখে আমার সাথেই লাগতে আসিস কেনো?
হায়রে আমার পুরা কপাল আমার প্রিয়তমা আরু আজকে অন্যের ঘরে গিয়ে আমাকেই ভুলে গেলো,কি করো লুকোই আমি আমার জ্বলন্ত বুকের ধাও ধাও করা আগুন,ইশ।
কি শুরু করেছিস তুই,ফাজলামোর একটা সীমা থাকে বুঝেছিস।জেবিন আপি তুমি ওকে বলো নি কিছু?
বলেছিলাম তো, তুই তো জানিস ও কিরকম যেটা মানা করবো সেটাই করবে।
হ্যাঁ হ্যাঁ আমি সত্য বলছি বলেই সবাই আমাকে এবার চাঁপানোর চেষ্টা করছিস।
তারপর শয়তানটা কানে কানে আমায় বললো,আজ দেখিস তোর ওই গুন্ডা স্বামীকে কিভাবে জ্বালাতন করি,শুনেছি তোকে নিয়ে অনেক পজেজিব,অনেক পাগলামো করে কিন্তু সেটা যে নিজের চোখে দেখার আগ্রহটা মন থেকে যাচ্ছেই না আমার।
এবার আমি একটু জোরে বললাম।
দেখ ভাই আমার, এমনটা করিস না তুই, জানিস না অনেক বড় অঘটন ঘটে যাবে এখানে।
আবার উল্লুকটা ফাজলামো করে আমার হাতটা ধরে জোড়ে করে চিৎকার করে বললো।
ভালো যখন বেসেছি তবে অঘটনের কি ভয় হবে রে পাগলি,ভালোবাসি তোকে আর সারাজীবন বাসবো তুই শুধুই আমার আর আমারই থাকবি, আই লাভ ইউ আরোহী,আই লাভ ইউ।
শিশির তখন দরজার দিয়ে ভিতরে ঢুকছিলো,আসলে হৃদয় ওকে আসতে দেখেই এমনটা ইচ্ছে করে করলো, তখনি সিনটা চোখে পড়লো শিশিরের , কানে ভেসে আসলো সেই অতৃপ্ত কথাগুলো,আর নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না শিশির, ওর প্রিয়তমার হাত ধরে আছে অন্য পুরুষ, তাও জোর গলায় ওর কহিনুরকে নিজের বলে দাবি করছে অপ্রিয় এই কথাটা কি করে মেনে নিবে এই পাগলপ্রেমিক,তাই নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলো না ছুঁটে গিয়েই মারতে শুরু করলো হৃদয়কে,সেখানের কেউ আটকাতে পারছে না শিশিরকে,কহিনুরও আটকানোর চেষ্টা করছে পারছে না আজ যেনো শিশির হৃদয়কে মেরেই ফেলবে।
সাহস কি করে হলো আমার কহিনুরকে ভালোবাসি বলার ও শুধুই আমার, শুধুই আমার, আমার কাছ থেকে ওকে যেই কেঁড়ে নিতে আসবে তাকেই আমি শেষ করে দিবো,মুছে দিবো তার নাম পৃথিবী থেকে,শিশির কথাগুলো বলছে আর মারছে। এদিকে সেখানে ঘরের সবাই জড়ো হলেন মুহুর্তেই,বলিষ্ঠ এক শিশিরকে আটকাতে পারছে না কেউই।
কি করবো আমি ভেবে পাচ্ছি না,উনি থামার নাম নিচ্ছেন না,মারতে মারতে আমার ভাইটার অবস্থা খারাপ করে দিয়েছেন,অবশেষে কোনো রাস্তা না পেয়ে আমি কান্নারত অবস্থায় লুটে পরলাম উনার পায়ে।আর কান্না করতে করতে বললাম।
প্লিজ আমার ভাইকে আর মারবেন না, ও এসব ফাজলামো করেছে, ওর কোনো দোষ নেই,ওকে মারবেন না প্লিজ।
নুরের কান্নাময় কথাগুলো বুকে লাগলো শিশিরের, ওর প্রিয়তমা কান্না করছে অন্যকারো জন্য জিনিসটা ভাবলেই কেমন অন্তরটা মোচড় দিয়ে উঠছে ওর,এবার শিশির স্বাভাবিকভাবে ওর কহিনুরকে উঠালো আর পাগলের মতো বলতে লাগলো।
লক্ষিটি তোমার ওই, ওই ছেলেটার জন্য কষ্ট হচ্ছে বুঝি?তুমি ওর জন্য কান্না করছো?না কহিনুর তা তো হতে পারে না,তুমি শুধুই আমার,তুমি কষ্ট পাবে আমার জন্য,আর কান্না করার হলে তাও করবে আমারই জন্য, সে জায়গা আমি কখনোই কাউকে পেতে দেই নি আর দিবোও না,কখনোই না,আজকে এই ছেলেকেও সরিয়ে দিবো তোমার জীবন থেকে কারন তুমি শুধুই আমার।
কথাটা বলে শিশির আবারও মারতে লাগলো হৃদয়কে,একপর্যায়ে হৃদয় অজ্ঞান হয়ে পরলো,এদিকে নুর প্রাণপণে চেষ্টা করছে পারছে না শিশিরকে থামাতে অবশেষে শিশির পিছন থেকে রিভালভার বের করলো হৃদয়কে স্যাুট করবে বলে,সবাই ছুটে আসছিলো শিশিরকে আটকাবে বলে তখনি নুর সবাইকে অবাক করে দিয়ে শিশিরের হাত থেকে রিভালভারটা কেঁড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে ওপর হাতে শিশিরের গালে থাপ্পড় মেরে বসলো,তারপর চেঁচিয়ে বলতে লাগলো।
কি মনে করেন আপনি নিজেকে মি.এসআরকে?আপনি নিজের পাওয়ারে সব করতে পারবেন,আপনি সুখ শান্তি ভালোবাসা সব নিজের টাকা আর শক্তির বলবশত নিজের জীবনে নিয়ে আসতে সক্ষম হবেন তবে শুনে রাখেন মি.এসআরকে আপনি তা কখনোই পারবেন না। যদি আপনার এতোটাই শক্তি থাকতো তবে আপনার মা আজ আপনার পাশেই থাকতেন,চলে যেতেন না আপনাকে ছেড়ে,হয়তো উনিও বুঝতে পেরে গেছিলেন আপনি একটা বদ্ধ পাগল তাই ছেঁড়ে চলে গিয়েছিলেন আপনাকে,কারন একটা পাগলকে কেউ ভালোবাসে না, আপনার মাও আপনাকে ভালোবাসেন নি আর আমিও বাসি না,শুনেছেন আপনি বাসি না ভালো আমি আপনাকে,শুধু ঘৃণা করি, শুধুই ঘৃণা,আপনার জীবনে কখনোই সুখ শান্তি আসবে না মি.খান কারন আপনি তা টাকা দিয়ে কিনতে চান, কিন্তু সেগুলাতে টাকার কোনো জোর থাকে না,হয়তো ধরে বেঁধে আমাকে সারাজীবন নিজের ঘরে বন্ধি করে রাখতে পারবেন আপনি কিন্তু এটাও মনে রাখবেন আপনি এই আরোহী কখনো আপনাকে ভালোবাসে নি আর বাসবেও না।আমি তো শুধু একটা রাস্তা খুঁজে যদি কখনো পারি আপনাকে মেরে হলেও নিজেকে স্বাধীন করতে তবে হয়তো তাই করবো।
শিশিরের চোখ মুহুর্তেই ছলছল করে উঠলো,করুন কন্ঠে বলে উঠলো এবার।
তুমি আমাকে ভালোবাসো না কহিনুর?আমার প্রাণের বদলে হলেও তুমি নিজের স্বাধীনতাকেই বেঁছে নিবে?তুমি আমাকে এতোটাই ঘৃণা করো?আমি মরে গেলে বুঝি কষ্ট হবে না তোমার?
না না না হবে না,আপনি মরে গেলে যে আমি খুশিই হবো,হয়তো সেদিন সবাইকে নিয়ে পার্টি করবো যে আপদটা বিদেয় হয়েছে,সত্যিই আমি চাই আপনি চলে যান আমার জীবন থেকে, স্বাধীন করে দেন আমাকে,চাই না আমি আপনাকে,ভালোবাসি না আপনাকে,যে ভালোবাসাতে মানুষের রক্ত মিশে আছে চাই না আমার এমন কৃত্রিম ভালোবাসা,চলে যান আপনি আমার জীবন থেকে,প্লিজ চলে যান,চলে যান।ফিরিয়ে দিন আমাকে নিজের সুন্দর জীবন।
কথাটা বলতে বলতে কান্নায় লুটে পরলো নুর ফ্লোরে,নিজের ভাইটার এমন অবস্থা দেখে মাথা ঠিক ছিলো না কহিনুরের, অনেক রাগ চেঁপে বসেছিলো ওর মাথায়,আর রাগের মাথায় মুখে যাই এসেছে তাই বলে দিয়েছে,হয়তো নুর আন্দাজও করতে পারছে না ওর সেই কথাগুলো কতোটা ক্ষতবিক্ষত করেছে শিশিরের অসহায় সে বুকটাকে,টপটপ করে জল গড়াতে শুরু হয়েছে সে কঠিন পুরুষের আঁখিযোগল পেড়িয়ে,কন্ঠে হাহাকার ভাবটা টেনে এনে করুন স্বরে বললো এবার।
আমি চলে গেলে সত্যিই খুশি হবে তো কহিনুর?তবে যে বেঁচে থাকতে তোমাকে স্বাধীন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়,কিন্তু হ্যাঁ তোমাকে স্বাধীন করে দেওয়ার ব্যবস্থা আমি করবোই কহিনুর,তুমি চিন্তা করো না লক্ষিটি আমি তোমাকে তোমার সুন্দর জীবন ফিরিয়ে দেওয়াতে কোনো ঘাতটি রাখবো না,কখনোই না।
কথাটা বলে শিশির আঁখিযোগল মুছতে মুছতে বেড়িয়ে গেলো,প্রায় অনেকেই ওর পিছন ছুঁটে গেলেন,কিন্তু কারও পিছুডাক শুনলো না শিশির চলে গেলো কোথাও গাড়ি ছুটিয়ে, গার্ডগুলোকে ওর পিছন আসতে বারন করলো,কিন্তু শিশিরের অবস্থা দেখে একটা কিছু মনে করে ওগুলা কথা মানলো না শিশিরের বের হবার পরই ওরাও অন্য গাড়িতে শিশিরের পিছন গেলো।
এদিকে নুর এখনও ফ্লোরে পরে কাঁদছে,হৃদয়কে দুতিনজন ধরাধরি করে নিয়ে গেলেন হাসপাতালে , এদিকে জেবিন আপি বলে উঠলেন।
এবার খুশিতো তুই আরু,চলে গেলো লোকটা,মনে তো হচ্ছে আর ফিরবে না,এবার আর কাঁদছিস কেনো পার্টি কর চল।
নুর এবার মাথা তুলে তাকিয়ে বললো।
তুই আমাকে এসব বলছিস আপি,তুই দেখলি না ওই লোকটা হৃদয়ের কি হালটাই না করেছে।
হ্যাঁ করেছে মানছি, ও এটা অন্যায় করেছে ওর এমন করা ঠিক হয় নি,কিন্তু একবার ভেবে দেখ এমন করার জন্য হৃদয় ওকে উসকানি দিয়েছে,আমরা তো জানতাম ও এরকমই,আর এর জন্য তো হৃদয়কেও আগে থেকে ওয়ার্ন করা হয়েছিলো,আসার পর তো আর সবার উপর এমনিতেই ঝাপিয়ে পরে নি ও কতো ভালো ব্যবহার করেছে সবার সাথে,এ কথা আমাদের সবার জানা আছে ওর দূর্বলতা একজনই আর সেটা হলি তুই,আর হৃদয়কেও সে কথা ভালো করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিলো,কিন্তু ও জেনেশুনেও এমনটা করলো তাই পর্যাপ্ত দোষ ওরও ছিলো।ওর সবকিছুই তো তোকে নিয়ে,তোকে নিয়েই পাগল ও আর সেই তুই আজকে ওকে এভাবে আঘাত করতে পারলি আরু,চলে যেতে বলতে পারলি,ওর দূর্বল জায়গায় আঘাত করতে পারলি,বল?জবাব দে?আজকে যদি ওই পাগল ছেলেটা যার পাগলামি শুধু তোকে নিয়ে তার যদি কিছু হয়ে যায় মাফ করতে পারবি তো নিজেকে বল?পারবি তো?
এবার হৃদয়ের মা ই সয়ং বলে উঠলেন।
হৃদয় যথেষ্ট ভুল করেছে কিন্তু তুই কোনোদিক বিবেচনা না করে এভাবে ছেলেটাকে কষ্ট দিয়ে একদম ঠিক করিস নি আরু,ছেলেটির চোখে আমি সত্য ভালোবাসা অনুভব করতে পেরেছি,যে ভালোবাসার যার সর্বাঙ্গে শুধু তুই আর তুই।
এক এক করে সবাই আমায় এসব কিছুই বলছে,এবার আমি বিরক্ত হয়ে কানে হাত দিয়ে চিৎকার করে বললাম।
স্টপ স্টপ স্টপ,প্লিজ স্টপ ইট,আর শুনতে চাই না আমি কোনো কিছুই,প্লিজ আমাকে সবাই একা ছেঁড়ে দিন,আমি একটু একা থাকতে চাই,প্লিজ।
সবাই স্থান ত্যাগ করলো খনিকে আমি এখনও ফ্লোরে বসে আছি,চোখ দিয়ে জল গড়ানো কমে নি, তখন রাগের মাথায় কি না কি বলে দিয়েছি আর এখন মনের কোনে খারাপ লাগা কাজ করছে,সাথে ভয়ও,যদি উনি কিছু করে বসেন,যদি উনার কিছু হয়ে যায়,উনি তো বলে গেলেন আমায় স্বাধীন করে দিবেন,তবে কি উনি সত্যিই আমাকে ছেড়ে দিবেন,আমি কি আদোও স্বাধীন হতে চাই,উনি আমার জীবন থেকে চলে গেলে কি আমি আদোও খুশি হবো?ভালো থাকবে?মন থেকে যেনো আজ উত্তর বেড়িয়ে আসছে,মনটা যেনো আজ আমায় ডেকে ডেকে বলছে আরোহী তুই পারবি না ওই পাগলকে ছাঁড়া থাকতে, ফিরিয়ে আন ওকে,নিজের করে নে ওকে,মন খুলে ভালোবাসা দে।তবে কি আমার তাই করা উচিৎ? এদিকে চোখ আমার দরজা থেকে সরছে না,চোখজোড়া যেনো উনার অপেক্ষায়ই আছে,উনি তো সেই কবেই বেড়িয়ে গেছিলেন এখনও আসছেন না কেনো?না উনি আর কখনো ফিরবেনই না,যদি উনি আর কখনো না ফিরেন,কথাটা ভাবনা থেকে যাচ্ছেই না, আর উক্ত ভাবনা যে আমার মনে বার বার ঝড় বয়ে আনছে।হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো আমার, দেখলাম মাহদী ভাইয়া উনার বিশ্বস্ত গার্ড উনার ফোন,চট করে ফোনটা তুললাম।ফোনটা তোলার পর যা শুনলাম তা শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি,কথাটা শুনে একটুর জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি,হাত থেকে পরে গেলো ফোনটা,তারপর চিৎকার করে উঠলাম আমি মি.খান বলে,আমার এই আর্তনাদ ভরা চিৎকারে কেঁপে উঠলো সারা বাড়ি,ছুটে যেতে শুরু করলাম বাইরের দিকে।
চলবে……
#শিশিরের কহিনুর
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ৩১
তখন শিশির বাড়ি থেকে বেড়িয়ে তুফান বেগে গাড়ি চালাতে শুরু করেছিলো আর ওর কানে ভেসে আসছিলো ওর কহিনুরের বলা তিক্ত সে কথাগুলো, যা কিছুতেই ভুলতে পারছিলো না শিশির,হাওয়ার বেগে গাড়ি ছুটাচ্ছিলো তখন,চোখের অশ্রুধারা বয়েই যাচ্ছিল,কানে বার বার ভেসে আসতো থাকা কহিনুরের কঠোর বানি কিছুতেই আটকাতে পারছিলো না,শিশিরের মা ওকে ছেড়ে গেছে কারন ওর মতো পাগলের ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা নেই, আর ওর কহিনুরও ওকে এর জন্য ভালোবাসে না আর বাসবেও না,কি করে মেনে নিবে কহিনুরের বলা এই অপ্রিয় বাক্য,ওর মরে গেলে ওর কহিনুর খুশি হবে,ওর প্রাণের বদলে যে ওর কহিনুর নিজের স্বাধীনতা চায়,কথাটা যেনো মাথায় চেপে বসেছে শিশিরের, বার বার কথাটা মাথায় ঘুরছে,আজ যে আর শিশির ওকে আটকে রাখতে চায় না,স্বাধীন করে দিতে চায় নিজের প্রাণপাখিকে কিন্তু তা যে বেঁচে থাকা সত্তে পারবে না এই পাগলপ্রেমিক,তাই অসহায়ত্ব স্বরে কঠোর ভাব এনে বললো।
আমার প্রাণের বদলে যখন তোমার স্বাধীনতা চাই তবে তাই ভালো, দিলাম তোমায় স্বাধীনতা কহিনুর। ভালো থেকো।
সামনে আসছিলো একটা বড় ট্রাক,শিশির কথাটা বলে ইচ্ছে করে গাড়িটা এগিয়ে নিয়ে ট্রাকটির সাথে ধাক্কা দেয়,শিশির হঠাৎ গাড়ি নিয়ে সামনে চলে আসায় ট্রাকের ড্রাইবার আর তৎক্ষনাৎ ব্রেক কষতে গিয়েও ব্যার্থ হয় আর ট্রাকটার সাথে প্রবল বেগে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় শিশিরের কার, সাথে সাথেই শিশিরের গাড়িটা উলোটপালোট হতে শুরু করে,পাঁচ থেকে ছয় বার গাড়িটা উলোটপালোট হবার পর উল্টো অবস্থাতে থেমে যায়,খনিকে গাড়িটা চূর্ণবিচূর্ন হয়ে গেছে,ট্রাকটা নিয়ে ড্রাইবার পালিয়ে যায়, যেহেতু শিশিরের গার্ডগুলো ওর গাড়ির পিছনেই ছিলো তাই মুহুর্তটা চোখ এড়ালো না ওদের,ছুঁটে এসে ওরা গাড়িটাকে সোজা করলো তারপর ভিতর থেকে শিশিরকে বার করলো,শিশিরের অবস্থা অনেক নাজেহাল ছিলো তখন,জ্ঞান ছিলো না ঠিকমতো যতোটুকু জ্ঞান ছিলো ততটুকু জ্ঞানেই মুখ দিয়ে শুধু একটা নাম বার করছিলো কহিনুর।গার্ডগুলো ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসলো আর তারপর নুরকে ফোন করে সবকিছু বললো,কথাটা শুনে নুর ছুঁটতে শুরু করলো,একটা ওটোতে বসে আছে নুর,গাড়িওলাকে বার বার বলছে জোড়ে চালাতে,এখন যেনো নুরের পাখা থাকলে উড়ে চলে যেতো ওর মি.খানের কাছে,চোখের জল থামছে না ওর,শুধু ধমে ধমে আল্লাহকে ডাকছে, হঠাৎ গাড়িটা জ্যামে আটকা পরলো,কিন্তু নুর যে অপেক্ষা করতে নারায আজ,জ্যাম দেখে বুঝতে পারলো সহজে ছাড়বে না তাই ছুঁটতে শুরু করলো,আশেপাশে কোনো রিক্সাও পাচ্ছে না,না কোনো ওটো তাই ছুঁটছে আজ যে করেই হোক ও শিশিরের কাছে পৌঁছাবেই,নুরের প্রাণ যে ছটফট করছে শিশিরকে এক নজর দেখার জন্য,বার বার কানে ভেসে আসছে গার্ডের বলা কথা ওর মি.খানের নাকি গুরুতর এক্সিডেন্ট হয়েছে অবস্থা ভালো না,মনে ওর ভয় কাজ করছে যদি ওর মি.খান ওকে ছেঁড়ে চলে যায়, না আর পারছে না নিজেকে ধরে রাখতে ছুঁটে চলেছে শুধু,এদিকে দৌঁড়াতে গিয়ে জুতো ছিঁড়ে গেলেও খালি পায়ে ছুঁটছে,এতে পায়ে রাস্তার ছোট ছোট কঙ্কর বিধছে কিন্তু এতে যেনো নুরের কোনো কিছুই আসে যায় না ও তো আপন গতিতে ছুঁটছে,আজ কোনো কিছুই ওকে ওর মি.খানের কাছে যাওয়া থেকে আটকাতে পারবে না।অবশেষে পৌঁছে গেলো নুর সেই হাসপাতালে, ছুঁটে গেলো ভিতরে, হঠাৎ দেখতে পেলো গার্ড মাহদীকে।পাগলপ্রায় হয়ে ওর পাশে গেলো আর জিজ্ঞেস করতে লাগলো।
মাহদী ভাইয়া উনি কোথায়?কি হয়েছে উনার?
মাহদী কিছু বলবে এর আগেই একজন ডাক্তার বেড়িয়ে এসে বলতে লাগলেন।
এখানে কি কোনো কহিনুর আছেন?
এই তো আমি কহিনুর,উনি কেমন আছেন ডাক্তার সাহেব,উনি কোথায়?
দেখেন উনার অবস্থা অনেক ক্রিটিকাল,উনি বার বার কহিনুর বলে ডাকছেন,আমরা এখনই উনাকে ওটিতে নিয়ে যাবো উনার যে অবস্থা ওখান থেকে ফিরার আর না ফিরার সম্ভাবনা সমান তাই আপনার উনার সাথে দেখা করে নেওয়া উচিত।
কতাটা শুনে আর কহিনুর সেখানে দাঁড়াতে পারলো না ছুঁটে চলে গেলো কেবিনের ভিতর মি.খান বলে চিৎকার করে।
শিশির শুয়ে আছে,খাটের সাদা চাদর লাল বর্ন ধারন করেছে ওর রক্তে,চোখজোড়া ওর বন্ধ তবে মুখ দিয়ে বার বার একটা নাম বার করছে কহিনুর,দৃশ্যটা দেখে কহিনুর আর নিজেকে সামলাতে পারলো না ছুটে গিয়ে আকঁড়ে ধরলো শিশিরকে নিজের বুকের সাথে মিলিয়ে ,তারপর ওর গালে নিজের হাতে ভালোবাসাময় স্পর্শে ধরে ব্যাথার্ত কন্ঠে বলতে লাগলো।
এই তো আমি এসে গেছি আপনার কাছে,আর কোথাও যাবো না, কথা বলেন আমার সাথে,তাকান আমার দিকে।
এবার শিশির চোখজোড়া অনেক কষ্টে টেনে খুললো,ভালো করে যে তাকাতেও পারছে না,চোখ খুলেই দেখলো ওর কহিনুরকে,ব্যাথার্ত বুকটা যেনো মুহুর্তে খুশির ছোঁয়ায় চলে গেলো,জোর করে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটিয়ে অনেক কষ্টে তোঁতলাতে তোঁতলাতে বলতে লাগলো।
তুমি এসে গেছো কহিনুর,আমার টানে এসেছে বুঝি?নাকি এটা দেখতে যে সত্যিই কি মরে যাচ্ছি? তুমি কান্না করছো কেনো?কান্না করো না কহিনুর,আর তোমায় কষ্ট দিবো না আমি,তোমার জীবনের সেই খুশি ফিরিয়ে দিবো আমি,ফিরিয়ে দেবো তোমার স্বাধীনতা,আর কষ্ট দিবো না আমি তোমাকে,চলে যাবো তোমার জীবন থেকে মুক্ত করে দিবো তোমায়,আর আসবোনা ফিরে শুধু শেষ চাওয়া তোমার কাছে তোমার কোলে শান্তিতে মরতে দাও,আমি যে চাই আমার শেষ নিশ্বাস টা যেনো তোমার কোলেই ত্যাগ করার সৌভাগ্য হোক আমার,জানিনা সেই সৌভাগ্য হবে কি না।দয়া করে আমায় শান্তিতে মরতে দাও তোমার কোলে।
কহিনুর এবার ওকে বুকে জড়িয়ে নিলো শক্ত করে আর বলতে লাগলো।
এসব কি বলছেন আপনি? আপনার কিছুই হবে না,আপনি একদম ঠিক হয়ে যাবেন,আমি আপনাকে কিছুই হতে দিবো না।।
শিশির এবার খুব কষ্টে নিশ্বাস টেনে আলতো করে বলে উঠলো।
আই লাভ ইউ কহিনুর।
কথাটা বলার পরপরই শিশির নিস্তেজ হয়ে গেলো যা বুঝতে বাকি রইলো না নুরের,নুর এবার পাগলপ্রায় হয়ে শিশিরের গালে হাত দিয়ে ওকে ডাকতে শুরু করলো।
মি.খান,মি.খান চোখ খোলেন,কথা বলেন আমার সাথে,কথা বলেন না,এই তো আমি আপনার পাশেই আছি,বকেন আমাকে,রাগ করেন,মারতে ইচ্ছে হলে তাই করেন তবুও অভিমান করে থাকবেন না আমার সাথে, চোখ খুলেন না কথা বলেন আমার সাথে মি.খান কথা বলেন,মি.খান।
মি.খান বলে চিৎকার করে আবারও বুকে টেনে নিলো ওকে কহিনুর আর আঁকড়ে ধরে বলতে লাগলো।
আর কখনোই আপনাকে ছেঁড়ে যাওয়ার কথা বলবো না,সারাজীবন পাশে থাকবো আপনার,আগলে রাখবো আপনাকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে, প্লিজ আমায় ছেঁড়ে যাবেন না আপনি,আমি পারবোনা আপনাকে ছাড়া থাকতে,আপনার কহিনুর যে পারবে না আপনাকে ছাড়া বাঁচতে ফিরে আসেন মি.খান,চলে যাবেন না আমায় ছেঁড়ে,মনের অজান্তে কখন আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি জানিনা,কিন্তু আপনাকে এই হালে দেখে যে আমার নিজেরই মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে,ইচ্ছে করছে আপনাকে বুকের ভিতর লুকিয়ে নেই আর কোথাও যেতে না দেই,যদি এই টানটার নাম ভালোবাসা হয়ে থাকে তবে হ্যাঁ ভালোবাসি আমি আপনাকে,যদি অন্য মেয়ের সাথে আপনাকে দেখে আমার খারাপ লাগা,আপনাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করা,আপনার কষ্ট অনুভব করা ভালোবাসা হয়ে থাকে তবে হ্যাঁ হ্যাঁ ভালোবাসি আমি আপনাকে,অনেক ভালোবাসি,শুনেছেন আপনি আপনার কহিনুর আপনাকে ভালোবাসে,চোখ খুলেন না এবার,কথা বলেন আমার সাথে মি.খান কথা বলেন।
তখনি ডাক্তারেরা চলে এসে শিশিরকে নিয়ে যেতে লাগলেন।কহিনুর ওকে ছারতেই চাইছে না।
না আমার মি.খানকে আমি কোথাও যেতে দিবো না,উনার কিছুই হতে দিবো না আমি,উনি আমায় ছেঁড়ে চলে যেতে চান আমি তা কখনোই হতে দিবো না,আপনারা চলে যান এখান থেকে চলে যান বলছি।
দেখেন আপনি নিজেকে সামলান খুব শিগ্রই উনার অপারেশন শুরু না করলে উনাকে আর বাঁচানোই যাবে না,কথাটা বলে ডাক্তারেরা শিশিরকে নিয়ে যেতে লাগলেন,নুর ওদের পিছন ছুটছে ওর মি.খানকে কোথাও যেতে দিবে না এই আবদার করে,নুর পুরো পাগলের মতো বিহেব করছে তখনি ওর পরিবার চলে আসে সেখানে,নুরকে ধরে নেন ওর মা।আসলে তখন নুর ফোন ফেলে ছুটে আসলে মুহুর্তটা চোখে পরে জেবিনের,জেবিন ফোনটা তুলে দেখলো মাহদী নামে সেইভ করা নাম্বার থেকে ফোন এসেছিলো তখন,তারপর কল ব্যাক করে সবকিছু জানতো পারলো আর সবাইকে নিয়ে চলে আসলো এখানে।
মা আমাকে ছাড়ো মা,আমার মি.খানকে ওরা নিয়ে যাচ্ছে,উনি বলেছেন উনি আমায় ছেঁড়ে চলে যাবেন আর ফিরবেন না,আমাকে উনাকে ফিরাতে হবেল মা,আমার যে উনাকে প্রয়োজন, চাই না আমার মুক্তি,চাই না স্বাধীনতা আমার শুধু উনাকে চাই, উনাকে ফিরিয়ে আনোনা মা।
নুরের মা ওকে শান্তনা দিচ্ছেন, তখন জেবিন আপি বলে উঠলেন।
তুই এতো ড্রামাও করতে পারিস আজকে আমি প্রথম জানলাম আরু,কি পার্ফেক্ট তোর অভিনয়,এই মিছে কান্না না করে গিয়ে পার্টি কর যা,আজকে তো তোর পার্টির দিন।
তুমি এসব কি বলছো আপি,আমি পার্টি কেনো করবো?
এবার নুরের আপন বোন বলে উঠলো।
কেনো করবি না বল?তুই তো নিজের মুখেই তখন বললি যে শিশির মরে গেলে তুই পার্টি করবি,যেদিন শিশির মরবে সেদিন তোর খুশির দিন হবে,তবে তো ছেলেটা আজকে তাই করলো,মরতে গেলো,হয়তো এখন বেঁচে আছে কিন্তু যা অবস্থা বেশিক্ষণ বেঁচে থাকবে বলে মনে হয় না।মরেই যাবে।
আপু,তোমার সাহস হলো কি করে এমনটা বলার?
চিৎকার করিস না আরু,আজ তোর জন্যই ওই ছেলেটার এই অবস্থা,ভেবে দেখ আরু তুই কোনো অপসরা না, তোর থেকেও হাজার গুন সুন্দর মেয়েরা ওই শিশিরকে এক পলক দেখার জন্য উল্টে পরে মরে,এ বিষয়ে সবথেকে ভালো তুই জানিস,এছাড়াও কি আছে তোর, আছে ওর মতো অর্থ বিত্ত, আছে ওর মতো ক্লাস?না নেই আরু,কিন্তু তারপরও ওই ছেলেটা তোর পিছনই কেনো পরে থাকে বলতে পারবি?কারন একটাই ও তোকে ভালোবাসে,যাকে বলে সত্য ভালোবাসা,যে ভালোবাসা রুপ গুন অর্থ বিত্ত কিছু দেখে না দেখে শুধু মন।আজকাল এমনভাবে ভালোবাসার স্বামী কেউ বছরের পর বছর সাধনা করেও পায় না আরু,আর তুই কপাল গুনে এমন একটা স্বামী পেয়েও এভাবে অবহেলা করলি,মরার রাস্তায় ঠেলে দিলি,তুই এমনকি ওর মাকে নিয়েও কথা বলতে দুবার ভাবলি না।আজ ওর এই অবস্থা শুধু তোর কারনে আরু,আজকে শিশির মরতে যাচ্ছে শুধু তোর জন্য,তোর একটু ভালোবাসা পাওয়ার লোভ ওকে মরার ঘাটে টেনে নিয়ে গেলো ,আজ থেকে তো তুই স্বাধীন, আর কেউ বন্ধি রাখবে না তোকে,যা গিয়ে ফুর্তি কর, বন্ধুদের পার্টি দে।
বন্ধ করো আপি,প্লিজ বন্ধ করো,আমি আর শুনতে পারছি না,আমি তখন রাগের মাথায় উল্টাপাল্টা বলে দিয়েছি কিন্তু আমি কখনো চাই না উনি আমায় ছেড়ে চলে যাক,আমি পারবো না উনাকে ছাড়া থাকতে,উনি পাশে থাকতে তা বুঝতে পারি নি আমি,কিন্তু উনার দূরে চলে যাওয়ার ভয় যে এখন আকঁড়ে ধরেছে আমায়, আমি পারবোনা উনাকে ছাঁড়া বাঁচতে,আমি কিছুই হতে দিবো না উনাকে,উনার কিছুই হবে না।
কথাটা বলে নুর ছুঁটে গেলো নামাযের রুমে,ওযু করে নফল নামাযে বসলো,ওর অশ্রুতে ভিজে যাচ্ছে জায়নামাজ, মোনাজাতে হাত তুলে কান্না করতে করতে বলতে লাগলো।
আল্লাহ এমন কোনো দিন যায় নি যে দিন আমি আপনার কাছে উনার কাছ থেকে মুক্তি চাই নি,প্রতিদিনই চাইতাম উনি যাতে আমার জীবন থেকে দূরে চলে যান,কিন্তু আজকে সত্যিই যখন তা ঘটছে তবে আমি তা আর মেনে নিতে পারছি না খোদা,আমি চাই না মুক্তি,চাই না স্বাধীনতা,আমি উনার ভালোবাসার বন্ধ খাঁচায় বন্দী থাকতে চাই সারাজীবন,উনাকে আপনি কেঁড়ে নিবেন না আমার কাছ থেকে,আমি আমার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইছি আপনার দরবারে, আমাকে ক্ষমা করে দিন মওলা,ইয়া মালিক উনাকে বাঁচিয়ে দিন, আমি রোজ আপনার দরবারে নফল নামায পরে শুকরিয়া আদায় করবো,আপনি উনাকে আমায় ভিক্ষা হিসাবে দিয়ে দেন খোদা,আর নয়তো উনার সাথে আমাকেও নিয়ে যান,যে জীবনে উনি নেই সে জীবনে আমার বাঁচারও কোনো আশা নেই খোদা, খোদা আমায় খালি হাতে ফিরিয়ো না খোদা,আমার মি.খানকে ভিক্ষা রুপে দিয়ে দেন আমায়।
কান্না করতে করতে সেখানেই জ্ঞান হারায় নুর।কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে নুর নিজেকে একটা কেবিনে আবিষ্কার করে আশেপাশে কেউ নেই,হাতের উপর একটা স্যালাইন ঝুলছে, জ্ঞান ফিরতেই মনে পরে ওর মি.খানের কথা,হাতের স্যালাইন খুলে মি.খান বলে চিৎকার করে ছুটে যায় বাইরে।
আশেপাশে ছুঁটছে কোথাও নিজের পরিবারের কাউকে দেখছে না,খুঁজছে সবাইকে তখনি কিছু লোকের কথা কানে ভেসে এলো।
ইশ শুনেছি ছেলেটা নতুন বিয়ে করেছিলো,বউকে নাকি অনেক ভালোবাসতো,কিন্তু নিয়তি দেখো একটা ট্রাক এক্সিডেন্টে মারাই গেলো ছেলেটা না জানি বউটার কি হাল।
লোকগুলো একটা সাদা চাদরে ঢাকা রোগী বহন ট্রলির দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলো,লোকগুলোর কথা শুনে খক করে উঠলো নুরের মন,এক পা এক পা করে এগুতে লাগলো ট্রলিটার দিকে,এগিয়ে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে লাশটার মুখ থেকে চাঁদর সরিয়েই মি.খান বলে চিৎকার করে উঠলো।
চলবে…..