শিশিরের কহিনুর,পর্বঃ৩৭

0
722

#শিশিরের কহিনুর,পর্বঃ৩৭
#লেখিকাঃআরোহী নুর

সাত সকালে নুর কান্না জমিয়ে দিয়েছে,শিশির হকচকিয়ে ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে এলো ওর কহিনুরের কান্না শুনে,ছুঁটে গেলো ওর প্রাণের কাছে।পাগলপ্রায় হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলো।

কি হয়েছে লক্ষিটি কান্না কেনো করছো?

ওরে খোদা আমি তো শেষ,এবার আমার কি হবে গো?আমার স্বামী আমায় চিট করলো,ধোকা দিলো,এই ছিলো আমার কপালে,এবার আমি কোথায় যাই?এ্যা হে হে।

কি হয়েছে লক্ষিটি, আমি তোমায় কখন চিট করলাম,আমি তোমায় কখনো চিট করতে পারি না,আমি যে তোমায় অনেক ভালোবাসি।

ভালোবাসা,এতোই যখন ভালোবাসেন তবে এটা কি,অন্য মেয়ের ঠোঁটে দেওয়া লিপস্টিক এর পরশ আপনার শার্টে কি করছে।

হোয়াট, দেখি তো।শিশির দেখতে পেলো ওর একটা সাদা শার্টে লিপস্টিক দিয়ে কারো পুরো ঠোঁটের ছাঁপ দেওয়া,ও এবার অবাক রিয়াকশন দিয়ে বললো।

এটা কে করলো,আমি জানি না,লক্ষিটি তুমি সত্যি বিশ্বাস করো আমি কিছু করি নি।

এ্যা হে হে,আপনি জানেন না তো কে জানে,দ্যা গ্রেট মিস্টার এসআরকে এর শার্টে কি আর পেত্নি এসে কিস করে গেছে,ওরে আমার কি হবে রে।লোকটা আমার জীবন তেজপাতা করে দিলো রে।

লক্ষি সোনা বউ আমার,আমি কিছুই জানি না ময়না বিশ্বাস করো,প্লিজ কেঁদো না তোমার কান্না যে সহ্য হয় না আমার,নয়তো পরে নিজের সাথে কি করে বসবো,সত্যিই বিশ্বাস করো আমি কিছু করি নি, বিশ্বাস করো।

কে শুনে কার কথা,আমি তো কেঁদেই যাচ্ছি,ইচ্ছে করেই এমন করেছি,ব্যাঙটার সাথে এমন মসকরা করতে আমার ভালোই লাগে,ভাবতেই ভালো লাগে মাফিয়া কিংটা আমার কাছে জব্দ, এর পুরো পৃথিবী এক সাইডে আর এক সাইডে আমি,আমিই সব,তাই একে জ্বালাতন করার অধিকার একমাত্র আমারই,কতো ভাবে আমার কাছে কাকুতি মিনতি করছে আমাকে মানানোর জন্য, বুঝানোর চেষ্টা করছে আমায়,এদিকে আমার এসব ভালোই লাগছে,হু হু।এবার ব্যাঙটা আমায় নিজের বুকের সাথে একদম মিলিয়ে ধরে নিয়ে বলতে লাগলো।

বিশ্বাস করো ময়না এ বুকে শুধু তুমি আছো,আমার প্রতি নিশ্বাসে আমার আত্নায় মিশে আছো তুমি,শুধু তুমি,তুমি প্লিজ আমায় ভুল বুঝো না।

এবার আমি বললাম,আমি তো জানি আপনি কখনোই আমাকে ছেঁড়ে যাবেন না,হু হু।উনি আমাকে ঝট করে ছাড়ালেন,আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম জল চিকচিক করছে,ব্যাঙটা আমায় কতো ভালোবাসে, উনার চোখে জল দেখে খারাপ লাগলো এবার আমার,উনি আমায় জিজ্ঞেস করতে লাগলেন।

আমাকে যখন বিশ্বাস করো তবে এটা নিয়ে কান্না করছো কেনো?

আসলে আমি লিপস্টিক দিয়েছিলাম,তারপর আপনার শার্টটা চোখে পড়লো,ভাবলাম একটা উম্মাহ দিয়ে দিই,দেখেন তো শার্টের দাগ আর আমার ঠোঁটের লিপস্টিক এর কালার সেইম কি না।

দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে কথাটা বললো নুর,শিশির বুঝতে পারলো নুর ওর সাথে ফাজলামো করছিলো।

আজকে তোমাকে।

ওরে কেউ বাঁচাও আমায়।

শিশির রেগে উঠলে নুর ওকে ভেংচি কেটে পালিয়ে যায়,শিশির ওকে দৌঁড়াতে শুরু করে,দুজনই হেসে হেসে ছুটাছুটি করছে,হঠাৎ শিশির নুরকে ধরতে গিয়ে ব্যালেন্স বিগড়ে নুরকে নিয়ে বিছানায় পরে যায়।নুর নিচে শিশির উপরে,শিশির দুষ্টু হাসি ঠোঁটের কোনে ঝুলিয়ে নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নুরের পানে।

কি করছেন ছাঁড়েন আমায় কাজ আছে।

কাজের চিন্তা আমাকে জ্বালানোর আগে ভাবা উচিত ছিলো মিসেস এসআরকে,আমাকে জ্বালানোর মাসুল যে এবার তোমায় দিতেই হবে।

কথাটা বলে শিশির কহিনুরের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো,কহিনুরকে ভালোবাসতে শুরু করলো নিজের মতো করে।

___________________

এদিকে ভোরকে আজকেও একটা শাড়ী গিফ্ট করলো অনিল আর তা পড়ে রেডি হতে বললো,ভোরও রেডি হলো,এবার ভোরকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো কোথাও।

অনিল তুই আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?

একটু পরেই জানতে পারবি।

তারপর অনিল ভোরকে ঠিক আগের সেই জায়গার মতো একটা সাজানো জায়গায় নিয়ে এলো,ভোর নিচে নেমে জায়গাটা দেখতে লাগলো,জায়গাটা যে ওর খুব পছন্দ হয়েছে,ওর মন মতোই যে সাজানো হয়েছে জায়গাটা,কিন্তু ভোরের মনে ভয়ও জমা হলো খনিকেই কারন ভোর আন্দাজ করতে পারছে অনিলের ওকে এখানে নিয়ে আসার কারনটা।ভয়টা যে ভোরের রয়েই গেলো,অনিল আজকেও ঠিক সেদিনের মতো একইভাবে হাতে ডায়মন্ডের একটা রিং নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো ভোরের সামনে,আর বলতে লাগলো।

আমি তোকে অনেক ভালোবাসি ভোর,সবকিছু ভুলে গিয়ে আমরা কি জীবনের একটা নতুন সূচনা করতে পারি না।

কথাটা শুনে ভোরের চোখ দিয়ে জল বেয়ে পরতে শুরু হলো,কান্না মুছে বলতে লাগলো।

আমি যে তোর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না অনিল,সেদিনও তোর মতো হিরে পেয়েও মরিচিকার পিছন দৌঁড়েছিলাম আমি যার মাসুল আমায় দিনের পর দিন দিয়ে যেতে হচ্ছে, আমার মতো মেয়ে যে তোর যোগ্য না রে,আমার পিছন ঘুরে নিজের জীবনটা এভাবে শেষ করে দিস না,ভালো একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে নে।

কথাটা বলে ভোর চলে যেতে নিলে অনিল ওর হাতটা পিছন থেকে ধরে নেয় আর বলতে লাগে।

যদি পারতাম তবে হয়তো অনেক আগেই নতুন জীবন শুরু করে নিতাম,কিন্তু এ মন যে তোকে ছাড়া আর কিছুই বুঝে না,তুই যে আমার আত্নার সাথে মিশে আছিস,চাইলেও তোকে নিজের অস্তিত্ব থেকে মুছে ফেলতে পারবো না,আমার যে তোকে খুব প্রয়োজন ভোর,আমার জীবন যে শুধু তুই গোছাতে পারিস ,প্লিজ আজ আমায় ফিরিয়ে দিস না।

আমি কি করে তোর জীবন গুছাবো, আমার নিজের জীবনই তো অগোছালো হয়ে গেছে অনিল,আমাকে নিজের জীবনে টেনে এনে তুই তোর জন্য কষ্ট বয়ে আনছিস।

তুই আমার জীবনে না থাকলে যে আমার জীবনে কষ্ট ছাড়া কিছুই থাকবে না ভোর,তোর কষ্ট আমি গুছিয়ে দিবো,তোকে এতো ভালোবাসবো যে তুই জীবনের সব তিক্ত অতীত সহজেই মুছে ফেলবি,শুধু পরিনামে আমাকে তোর একটু ভালোবাসা দিস।আজ আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিস না।

কিন্তু।

আজ আর কোনো কিন্তু শুনবো না আমি,আজ তুই আমাকে ফিরিয়ে দিলে এ মুখ আমি আর তোকে কখনো দেখাবো না,এমন কোথাও চলে যাবো যে তুই আমাকে কখনোই দেখতে পাবি না,তুই কি চাস আমি কোথাও দূরে চলে যাই তোকে ছেড়ে।

ভোর চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো,ভোরের কাছ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে এবার অনিল বললো।

যদি তুই এটাই চাস যে আমি চলে যাই তবে তাই হবে,চলে যাবো আমি অনেক দূরে আর ফিরে আসবো না তোর জীবনে, কখনো আসবো না তোকে আর বিরক্ত করতে,ভালো থাকিস।

কথাটা বলে অনিল চোখের বয়ে পরা অবাদ্য জল মুছে চলে যেতে নিলে ভোর বেশ জোড় গলায় অনিল বলে ওকে পিছুডাক দিলো,অনিল থমকে দাঁড়ালো,ভোর এবার ছুঁটে এসে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো, আর কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো।

প্লিজ তুই কোথাও যাস না আমায় ছেঁড়ে।তুই সবসময় আমার ভালো চেয়েছিস,আমাকে ভালোবেসেছিস নিঃস্বার্থভাবে,আমাকে সকল বিপদ থেকে আগলে রেখেছিস,আমার যন্ত্রনার দিনে আমার শক্তি হয়ে আমার পাশে থেকেছিস,আর আমি কি এসবকিছুর বদলে তোকে একটু ভালোবাসতে পারি না।আমি যে তোকে ভালোবাসতে চাই অনিল,তোর সত্য ভালোবাসার মর্ম তখন দিতে পারি নি কিন্তু আজকে যে সে ভুল আর করবো না,আমি তোকে ভালোবাসবো,সারাজীবন আগলে রাখবো নিজের ভালোবাসা দিয়ে,তুই প্লিজ আমাকে ছেঁড়ে যাস নে।

অনিল এবার পিছন মুড়ে ভোরের চোখের জল মুছে দিলো,তারপর ওর কপালে নিজের অধর ছুঁইয়ে বললো।

ভালোবাসি তোকে অনেক,কখনো তোকে ছেড়ে যাবো না, তোকে ভালোবেলসে যাবো আজীবন।

তারপর দুজন একে ওপরকে জড়িয়ে ধরে থাকলো অনেক্ষন,কিছুক্ষণপর অনিল ভোরের অনামিকা আঙুলে আংটিটা পড়িয়ে দিলো।

তারপর আর কি বাড়ি গিয়ে ওরা নিজেদের ব্যাপার সবাইকে জানালো,সবাই তো মহাখুশি,চারিদিকে আবার শুরু হয়েছে বিয়ের তোড়জোড়, একসাথে যে তিন জোড়া জীবনের নতুন সুচনা হতে চলেছে,দুদিন পরেই বিয়ে,সবাই অনেক খুশি,এদিকে আশরাফ রায়হান আজকে হাসপাতাল থেকে ফিরে কেমনটা যেনো করছেন,খুশি মনে হঠাৎ উনার অশান্তি ধরা দিলো,নিজের প্রাক্তন স্ত্রীকে ভিক্ষুকের বেশে দেখে যে নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না,তাই আসল সত্য জানতে এগিয়ে গেলে উনাকে দেখে প্রাক্তন মিসেস রায়হান খান পালিয়ে যান,তখন থেকে উনার মনে ঝড় বইতে শুরু হয়েছে,ঝটফট লোক লাগিয়ে দিয়েছেন দিলারার খোঁজে।হঠাৎ উনার ফোন বেজে উঠলো।উনি ফোনটা কানে নিয়ে ওপরপাশের কথা শুনে বলে উঠলেন।

দিলারার খোঁজ পাওয়া গেছে, আমি এক্ষুনি আসছি।

কথাটা বলে উনি তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে গেলেন বাড়ি থেকে,উনার বলা সে কথা কান এড়ালো না শিশিরের, ও যে তখন সেদিক দিয়ে যাচ্ছিলো,কথাটা শুনে অন্তর আত্তা কেঁপে উঠলো ওর,দিলারা মানে ওর মায়ের খোঁজ পাওয়া গেছে,আর কোনোদিক না ভেবে শিশিরও উনার পিছন গেলো।এদিকে আশরাফ রায়হানের পিছন শিশিরকে এভাবে যেতে দেখে নুরের মোটেও ভালো ঠেকলো না,তাই নুরও বাড়ির একটা গাড়িতে বসে ড্রাইবারকে শিশিরের গাড়ির পিছন যেতে বললো।

আশরাফ রায়হান খানের গাড়ি একটা ছোট্ট কুটিরের সামনে গিয়ে থামলো।

আশরাফ রায়হান তড়িঘড়ি করে ভিতরে গিয়েই দেখতে পেলেন উনার প্রিয়তমা স্ত্রীকে,উনার হাল দেখে আশরাফ রায়হান নিজের চোখের জল আটকাতে পারলেন না,একসময়ের আভিজাত্য পছন্দ করা মহিলাটির পড়নে যে আজকে ছেঁড়া কাপড়,এবার ব্যাথার্ত কন্ঠে অবাকত্ব ভাব নিয়ে এসে উনাকে ডাকলেন।

দিলারা।

দিলারা তখন ওপর দিকে মুখ করে কিছু রান্না করছিলো,চিরচেনা সেই কন্ঠ শুনে পিছন ফিরে তাকান উনি,তারপর অবাক হয়ে উঠে বললেন।

তুমি এখানে?

হ্যাঁ আমি দিলারা।

তুমি কেনো এখানে এসেছো,তুমি চলে যাও এখান থেকে।

আগে বলো তোমার এ হাল কি করে হলো,তুমিতো…….

হ্যাঁ আমি,আমার এ হাল আজ আমার নিজেরই জন্য,স্বার্থপর মানুষগুলোর পরিণতি যে এরকমই হয়ে থাকে,আজকে আমার স্বার্থপরতার কারনেই আমার এ হাল।নিজের হাতে নিজের ছোটবোনের সংসার ভেঙে দিলাম,নিজের বাচ্চাদের কথাও ভাবলাম না একবারও, নিজের কথাই ভাবলাম সবসময় তাই আজকে আমার এ হাল করে রেখেছেন আল্লাহ,এটা যে আমার পাপের শাস্তি।

এ কি বলছো তুমি,শুনেছিলাম নিহান তোমাকে ধোকা দিয়ে অন্য কারো সাথে দেশ ছেড়ে চলে গেছে তারপর আমি তোমার খোঁজ নিয়েছিলাম কিন্তু তোমায় পাই নি,তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে বলো?

হ্যাঁ নিহান আমায় ধোকা দিয়েছে,যে লোক নিজের স্ত্রী সন্তানকে আমার জন্য ছেড়ে দিয়েছিলো সে ব্যাক্তি অন্য মেয়ের জন্য আমাকে ছাড়বে না তার কি গ্যারান্টি ছিলো,আমি তো তখন অধম ছিলাম, বলে না বিনাশের সময় বুদ্ধির বিকৃতি ঘটে,আমারও ঘটেছিলো তাই আজ আমার এই দশা।ছাড়ো এসব আগে বলো আমার শিশির কি করছেতুমি ওকে আমার সত্যটা জানতে দেও নি তো?

তখন উনি ঠিক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শ্রবণ করছিলেন,আমি উনার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছি হয়তো উনি কথাগুলো শুনে এতোটাই আত্মহারা হয়ে গেছেন যে আমি উনার পিছনে দাঁড়িয়ে আছি তাও বুঝে উঠতে পারছেন না,এবার কথাগুলো শুনে উনি আর নিজেকে আটকালেন না একদম,ঝট করে উনাদের সামনে চলে গেলেন যাতে দিলারা মা আর বাবা দুজনের চেহারায় অবাকত্ব দেখতে পেলাম আমি।দিলারা মা অবাক হয়ে বললেন উনাকে।

শিশির বাবা আমার,তুই?

মা,তুমি কি সত্যের কথা বলছিলে বলো আমায়?কি সত্য যা আমার কাছ থেকে লুকানো হচ্ছে?বলো আমায়?

শিশির বাবা শান্ত হো,বাড়ি চল বাড়ি গিয়ে আমি তোকে সব বলবো।

বাড়ি কেনো যাবে বাবা আমি?বাড়ি কেনো যাবো?আমার মাকে আজকে আমি ২১ বছর পর ফিরে পেয়েছি, যিনি না জানি কি কি বলছেন কিছুই বুঝতে পারছি না আর তুমি বলছো কি না বাড়ি চলে যাবো।যে মার জন্য ২১ বছর অপেক্ষা করেছি তাকে ছেড়ে বাড়ি চলে যাবো,অসম্ভব। আমি সত্য জানতে চাই,কে এই নিহান?তোমার সাথে ওই নিহানের কি সম্পর্ক বলো মা বলো?যার জন্য তুমি আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছিলে,বলো মা কে এই লোকটা বলো?বলো না মা?কেনো তুমি ছেড়ে গিয়েছিলে আমায়,বলো মা?বলো,কে ওই লোকটা কি সম্পর্ক ওর সাথে তোমার,বলো?বলো না,আই সেইউ আনসার মি।বলো বলো বলো।

অবৈধ সম্পর্ক ছিলো লোকটার সাথে আমার,শুনেছিস,অবৈধ সম্পর্ক।

শিশিরের পাগলের মতো চিৎকার করে করে সত্যটা জানতে চাওয়ায় দিলারা আর সহ্য করতে না পেরে সত্যটা বলেই দিলো।সত্যটা শুনে শিশির শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,পাথরের মতো জমে গেলো খনিকে,দিলারা এবার মাটিতে লুটে পরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো।

রুশানা আমার আপন ছোট বোন ছিলো,নিহান ওর স্বামী ছিলো,ওর স্বামী বেসরকারি একটা কোম্পানিতে কাজ করতো,সংসার ওদের ভালোই চলছিলো,হঠাৎ ওর স্বামীর চাকরিটা চলে যায়,তারপর আরেকটা চাকরি পায় আমাদের বাড়ির অনেকটা পাশের একটা কোম্পানিতে,আর সেজন্যই আমাদের পাশের বাড়িতেই ভাড়া থাকতে এসেছিলো ওরা দুজন,তোর বাবা আত্নীয়তার খাতিরে ওদের আমাদের বাড়িতে থাকার অনুমতি দেন,তোর বাবা প্রায়ই কাজের চাপে বাইরে থাকতেন আমি বড্ড একা হয়ে পরেছিলাম কিন্তু নিহান আসার পর থেকে ওর সাথে আমার ভালো সখ্যতা গড়ে উঠে,রুশানাও তখন প্রেগন্যন্ট ছিলো তাই প্রায় সময় ঘরে শুয়ে থাকতো আর বাড়িতেও কেউ তেমন থাকতো না সবাই কাজে থাকতো আর বাচ্চারা সব স্কুলে সেই ফাঁকে আমাদের সম্পর্ক অবৈধ সম্পর্কে রুপ নেয়,বিষয়টা তোর বাবা আন্দাজ করতে পেরে ওদের বাড়ি থেকে বের করে দেন,কিন্তু তোর বাবা আমার সাথে এ নিয়ে কোনো সমস্যা করে নি,আমাকে যে বড্ডা ভালোবাসতো তাই আমার দোষ,ভ্রুলত্রুটি ও সব সময়ই একসাইড করে রাখতো,কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই যে মরিচিকা প্রিয়,আমিও যে তাদেরই একজন ছিলাম,তাই কয়েকদিন পর আমরা দুজন ডিসাইড করলাম আমরা পালিয়ে যাবো,কিন্তু পালানোর আগে এমনভাবে পালাতে চাইছিলাম যে পালিয়ে গেলেও যেনো সবাই আমাকে ভিকটিম আর রুশানা আশরাফকে দোষী ভাবে,তাই আমি আশেপাশের সবাইকে এমনকি মিডিয়া পর্যন্ত বলে বেড়িয়েছি যে বিশিষ্ট সার্জন আশরাফ রায়হান খানের অবৈধ সম্পর্ক উনারই শালির সাথে,যাতে আশরাফ আর রুশানাকে নিয়ে অনেক কথাবার্তা শুরু হয় সমাজে,সবাই মনে করতে শুরু করেছিলো রোদেলা আশরাফেরই মেয়ে,তারপর সুযোগ বুঝে আমরা পালানোর ডেইট ফিক্স করলাম কিন্তু বিষয়টা রুশানা জেনে যায়,তারপর ও নিজে থেকেই সেদিন নিহানকে ছেড়ে চলে এসেছিলো আমাদের বাড়িতে শুধু এটা জানাতে যে ও ঐ দিন নিহানকে ডিবোর্স দিয়ে এসেছে,ও ওর বাচ্চাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে,আমি এখন অনায়াসে নিহানের সাথে যেতে পারি,কিন্তু সেদিনও আমি ওকে ছাঁড়লাম না বরং চলাকালীন মুহুর্তের সুযোগ নিয়ে রুশানার বাচ্চাকে আশরাফের বাচ্চা বললাম,ওর অবৈধ সন্তান বললাম,যাতে সেখানে আশরাফের সাথে আমার অনেক কথা-কাটাকাটি হলো আর আমি সেখানে নিজেকে ভিকটিম বানিয়েই চলে গেলাম,যাতে কেউ আমাকে দোষী করতে না পারে,সেদিন তুই আমার পিছন বার বার মা মা বলে ডাকছিলি কিন্তু তোর ওসব ডাক যেনো আমার কাছে তখন অসহ্য লাগছিলো,কোনোরকম চলে গেছিলাম পালিয়ে,সব মায়া মমতা ভুলে অন্ধ হয়ে গেছিলাম আমি,কিন্তু তারপর কি হলো,ওই লোকটা আমাকে বিয়ে করলো ঠিকই কিন্তু কিছুদিন পর নিজের আসল রুপ দেখালো,অন্য কারো ধান্দায় পরে আমাকে অবহেলা করতে লাগলো,তারপর একদিন আমাকে ছেড়ে ওই মেয়ের হাত ধরে বিদেশ পাড়ি জমালো,সেদিন আর আমার যাওয়ার কোনো পথ ছিলো না,আশরাফের কাছে ফিরতে চেয়েছিলাম কিন্তু পরে শুনলাম আমার দেওয়া বদনামের কারনে রুশানাকে বিয়ে করতে হয়েছে ওকে,আমার নিজের জীবন নিজেই শেষ করে দিলাম আমি,তারপর ভাবলাম এটাই হয়তো আমার কর্মের সাজা,তোমাদের কাছে ফিরে গিয়ে তোমাদের কষ্ট বাড়ানোর থেকে নিজে কষ্ট নিয়ে বাঁচাই ভালো,কোন মুখে ফিরতামই আমি তোমাদের কাছে,যাদের সুখ আমি নিজের স্বার্থের জন্য কেঁড়ে নিয়েছিলাম,তাই নিজেকে আড়াল করে ফেলেছিলাম সবার কাছ থেকে,আর তারপর থেকেই আমার এ হাল।

কথাগুলো শুনে উনি দুকদম পিছিয়ে গেলেন,উনি যেনো নিজের ব্যালেন্সই ধরে রাখতে পারলেন না,ঠাস করে মাটিতে বসে গেলেন,আমি ছুটে গিয়ে উনাকে ধরলাম।

মি.খান সামলান নিজেকে।উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন,আর বলতে শুরু করলেন।

কহিনুর এই স্বার্থপর মহিলার জন্য আমি নিজের জীবনের ২১ টা বছর কেঁদে কেঁদে কাটিয়েছি,নিজের আপনজনদের ঘৃণা করেছি, ওই নিষ্পাপ রোদেলা যে ভাইয়া ভাইয়া বলে আমার পিছন পিছন ঘুরতে থাকে তাকে অবহেলা করেছি,রুশানা খান যিনি আমাকে সবসময় নিজের ছেলের মতো করে ভালোবাসতে চেয়েছেন তাকে আমি অসম্মান করেছি,নিজের নির্দোষ বাবাকে দোষী ভেবে বাবা বলে ডাকাই ছেড়ে দিয়েছি।সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি শুধু ওই স্বার্থপর মহিলার জন্য,নিজেকে একটা পাথরে পরিণত করেছি শুধু ওই স্বার্থপর মহিলার জন্য,ছি। আজকে আমার লজ্জা হচ্ছে নিজেকে এই তুচ্ছ মহিলার ছেলে হিসেবে মেনে নিতে,এই মহিলার ছেলে হয়ে পৃথিবীতে আসার থেকে না আসাটাই ভালো ছিলো,আল্লাহ কেনো আমাকে এমন জালিম মায়ের ঘরে জন্ম দিলেন কহিনুর কেনো।

নিজের নাড়ি ছেঁড়া ধনের মুখে নিজেকে নিয়ে এমন বানী মেনে নিতে পারলেন না দিলারা,তাই ব্যাথার্থ কন্ঠে বলে উঠলেন।

তোর এই পাপী মাকে কি মাফ করা যায় না বাবা,জানি তো পাপ করেছি,খোদা এর জন্য আমাকে যথেষ্ট সাজা দিয়ে দিয়েছেন শুধু মরার আগে তোর কাছ থেকে ক্ষমাটা যে নিয়ে যেতে চাই,এতোটুকু কি দিবি না তোর এই কলঙ্কিনী মাকে।

মা,এক্সকিউজ মি, আপনি আমার মা হলেন কবে থেকে,আপনার মতো একজন অপবিত্র, স্বার্থপর মহিলা আমার মা হতে পারে না কখনোই না,আই হেইট ইউ,আমি কখনোই তোমাকে ক্ষমা করবো না, কখনোই না।

চেঁচিয়ে কথাটা বলে উনি আমার হাতটা ধরে নিয়ে যেতে নিলে হঠাৎ পিছনে থেকে একটা শব্দ আমাদের কানে ভেসে আসে,তৎক্ষনাৎ আমরা পিছনে তাকাই,পিছন তাকিয়েই উনি মা বলে চিৎকার করে উঠেন।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here