#শিশিরের কহিনুর,পর্বঃ৩৮
#লেখিকাঃআরোহী নুর
তখন দিলারা মা জ্ঞান হারিয়ে পরে গিয়েছিলেন মাটিতে,তারপর উনাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো,আমরা কেবিনের বাইরে বসে আছি,ডাক্তার অনেকক্ষণ ধরে উনার চেক আপ করছেন,যাক এতোসময়ে ডাক্তার বেড়িয়ে এলেন,উনি অস্থির হয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলেন।
ডাক্তার আমার মা কেমন আছেন? ডাক্তার মুখটা পানসে করে বললেন।
সরি মি.এসআরকে আপনার মা এ পৃথিবীতে এখন আর মাত্র কয়েক মুহুর্তের মেহমান,উনার ব্রেন টিউমার যার কখনো কোনো চিকিৎসা করাই হয় নি,আর এখন অনেক দেড়ি হয়ে গেছে আমাদের আর কিছুই করার নেই,আপনারা সবাই চাইলে শেষবারের জন্য উনার সাথে দেখা করতে পারেন।
কথাটা শুনে উনি বাকহীন অবস্থায় দুকদম পিছিয়ে গেলেন,তারপর মা বলা চিৎকার করে ছুঁটে কেবিনে ঢুকে গেলেন,আমিও উনার সাথে ছুঁটলাম,বাকিরাও এলেন আমাদের সাথে সেখানে।উনি ছুঁটে গিয়েই উনার মাকে তুলে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।
মা তুমি আমায় ছেঁড়ে যেও না মা,এতোবছর পর আমি তোমায় ফিরে পেয়েছি মা,আমি আর তোমায় হারাতে পারবো না,তুমি আমায় ছেঁড়ে যেও না মা,ওই তিক্ত অতীত ভুলে আমরা সবাই খুশি খুশি একসাথে থাকবো তবুও তুমি আমায় ছেঁড়ে যেও না,আমরা নতুন করে জীবন গড়ে তুলবো মা আমাদের সাথে থাকো,যেও না আমায় ছেঁড়ে।আমি বড় থেকে বড় ডাক্তার হায়ার করবো,আমি তোমাকে বাঁচাবো,দেখো তোমার কিছুই হবে না।
এবার দিলারা মা উনার চোখের জল মুছে দিয়ে বলতে লাগলেন।
তা আর হয় না রে বাবা,এটা যে আমার পাপের শাস্তি,আমার ব্রেন টিউমার আমি দুবছর আগেই জানতে পারি কিন্তু কোনো চিকিৎসাই করাই নি,কারন বেঁচে থাকার যে আর কোনো স্বাদ নেই আমার,শুধু মরার আগে তোকে দেখার,আমার ভোরকে দেখার,তোমাদের সবাইকে দেখার,তোমাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার একটা সুযোগ চাইছিলাম, খোদা যে আমায় সে সুযোগটা দিয়েছেন এটাই অনেক,এবার শান্তিতে মরতে পারবো।
তুমি কেনো এমন করলে মা,কেনো আমার কাছে ফিরে এলে না,কেনো নিজেকে একা একা সাজা দিলে,এ সাজা যে তুমি নিজেকে না আমাকে, আমাদের সবাইকে দিয়েছো,তোমাকে ছাড়া যে আমরা কেউই ভালো ছিলাম না মা,তুমি চলে যেও না মা,আমার যে তোমাকে চাই ,প্লিজ আর হারিয়ে যেও না মা।
তা যে আর হয় না রে বাবা,আমার যে এবার যেতেই হবে।মা কহিনুর তোমার হাতটা দাও।
আমি ঠিক উনার পাশে বসে ছিলাম,মায়ের কথায় আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম এবার মা উনার হাত আমার হাতে রাখলেন আর বললেন।
আমার এই পাগলটাকে তোমার হাতে সপে গেলাম মা সবসময় আগলে রেখো ওকে,তারপর মাথা ঘুরিয়ে ভোর আপুর দিকে তাকালেন,উনিও মায়ের পাশে বসে কাঁদছিলেন তখন।উনি ভোর আপুর হাত ধরে বললেন।
মা রে জানিনা শেষবার কখন তোর সাথে কথাও বলেছিলাম,নিজের স্বার্থপরতার সাজা যে এতোটা নিষ্ঠুর হবে তা জানলে হয়তো কখনো তা করতাম না,আজ বড্ড ইচ্ছে করছে সেই অতীতে ফিরে গিয়ে সবকিছুই ঠিক করে দিতে কিন্তু তা যে আর সম্ভব নয়।
এবার উনি দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে বললেন।
ভালো থাকিস রে মা,আর পারলে এই স্বার্থপর মাকে ক্ষমা করে দিস,রুশানা আর আশরাফের কাছে তো আমার ক্ষমা চাইতেও লজ্জা করছে, আমি জানি আমি ক্ষমার যোগ্য না তাও পারলে সবাই আমায় ক্ষমা করে দিও দয়া করে।
কথাটা বলেই উনি অনেক কষ্টে আরেকটি দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করলেন আর তারপর আর নিশ্বাস নিলেন না,নিস্তেজ হয়ে পড়লেন,উনি কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া না করায় ডাক্তার এগিয়ে এসে উনাকে চেকআপ করে বললেন,উনি আর আমাদের মাঝে নেই,কথাটা শুনে আমরা সবাই কান্নায় ভেঙে পরলাম,মি.খান মা বলে চিৎকার করে উনাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।
এভাবেই কেটে গেলো কিছুদিন,দিলারা মায়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিলো সবাই,উনার অবস্থা বেশি খারাপ ছিলো,আমি উনাকে কিভাবে সামলিয়েছি তা শুধু লআমি জানি,উনি তো নাওয়া খাওয়া ছেঁড়েই দিয়েছিলেন কিন্তু আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে ঠিকই উনাকে স্বাভাবিক করে তুলেছি,কেটে গেছে বেশ কয়েকদিন,সেদিন দিলারা মায়ের মৃত্যুতে বিয়ের ডেইট আবার স্থগিত হয়,এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক, সবাই কষ্টের রেশ কাটিয়ে উঠতে পেরেছে,প্রায় আরও তিন মাস যে কেটে গেছে,এবার বাড়িতে আবার বিয়ের তোড়জোড় পড়েছে,এবার আর বিয়ের ডেইটের আগে যাতে কোনো অঘটনের ডেইট না পড়ে এ দোয়া এবার সবারই,আশা করি এবার আর কোনো অঘটন হবে না,যাক অবশেষে অনেক ধুমধামে আমাদের সবার বিয়ে সম্পন্ন হলো,আমরা তিনজনই চেয়েছিলাম অন্যান্য মেয়েদের মতো আমাদের বরেরাও আমাদের বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসুক,বাড়িতে থেকে বাড়িতে বিয়ে কেমনটা দেখায় না তাই,যাক অবশেষে উনাকে অনেক মিনতি করার পর বিয়ের জন্য উনি উনার ভুতিয়া মহল পর্যন্ত আমাকে যাওয়ার পারমিশন দিলেন,আমরা তো চেয়েছিলাম সিলেট থেকে এরা আমাদের বিয়ে করে নিয়ে আসুক কিন্তু এমনটা হতে দেয় নি আমার মিনি ব্যাঙের বাপ,এটা কেনো বললাম তা না হয় একটু পর জানবেন,হু হু।বিয়ের ঠিক আগের দিন উনারা আমাদের এসআরকে ম্যানশনে রেখে এলেন,বাকিদুজন রেখে চলে গেলেও আমার জন যান নি,আমার সাথেই থাকলেন,সকালেই উঠে বাড়িতে গেলেন বর হয়ে আবার আমায় নিতে আসবে বলে।লোকটার পাগলামি যে আমার জন্য দিন দিন বাড়ছেই।যাক অবশেষে বিয়ে হয়ে গেলো আমাদের, আজ আবারও বসে আছি বাসর ঘরে উনার বউ সেজে,কিন্তু আজকে মনে উনার জন্য কোনো ক্ষোভ নেই,আছে শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা।
______________________
ভোর বসে ছিলো বিছানায়,অনিল রুমে ঢুকতেই ভোর উঠে যায় ওকে সালাম করতে,তখনি অনিল ওর হাত ধরে নেয়।
আরে আরে কি করছিস,আমি তোর দাদু হই নাকি যে সালাম করছিস।
বাসর রাতে বরকে সালাম করতে হয় তুই জানিস না।
হুম,বুঝেছি অভ্রের সাথে থেকে এসব ন্যাকামি শিখেছিস তুই।
কথাটা শুনতেই ভোর মুখটা পানসে করে নেয়,অনিল এবার ওকে পাজকোলে তুলে নিয়ে গিয়ে বেডে বসিয়ে দেয়,তারপর ওর কপালে চুমু এঁকে দেয় আর বলতে লাগে।
আসলে আমি মজা করছিলাম, আমার তোর মনে আঘাত করার কোনো মোটিভ ছিলো না,ক্ষমা করে দে আমায়।
ভোর এবার অনিলকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে আর স্বাভাবিক কন্ঠে বলে।
তুই আমাকে কখনো কোনো আঘাত করিস নি আর করবিও না আমি জানি,তুই যে নিঃস্বার্থ ভাবে শুধু ভালোবেসেছিস আমায় সবসময়,আর এখন আমিও তোকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে চাই,অভ্র নামক কালো অতীত আমার জীবন থেকে চলে গেছে, আমি মুছে ফেলেছি সে অধ্যায় আমার জীবন থেকে,এখন যে আমার জীবনে আছিস শুধু তুই,আর আমি তোর সেই ভালোবাসার ছোঁয়া নিয়ে তোর বুকে মাথা রেখে কাটিয়ে দিতে চাই নিজের বাকিটা জীবন, তুই সবসময় এভাবে আগলে রাখবি তো আমায় অনিল।
যতোদিন এ দেহে প্রাণ আছে ততোদিন আগলে রাখবো তোকে এই বুকে।
______________
আকাশ রুমে ঢুকতেই রোদেলা ওকে সালাম করতে যায়,আকাশও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে,রোদেলা ওকে সালাম করলে আকাশ ওকে দোয়া করে।
তুমি একশত বাচ্চার জননি হও।কথাটা শুনতেই রোদেলা আকাশের পেটে একটা চিমটি কেটে দেয়।
আহ, এ কি করছিস?চিমটি কাটলি কেনো?তুই পোকা নাকি?
এমন দোয়া করেছো, শুকরিয়া করো যে চিমটি দিয়েছি কামড় দেই নি।এবার ন্যাকামি বন্ধ করে আমার সালামি দাও।
আকাশ ভ্রু কুচকে বললো।
কিসের সালামি,আমি তোকে সালামি দেবো কেনো,হুহ।তোর মতো অকর্মাকে বিয়ে করেছি এটাই বড়।
কি আমি অকর্মা দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা তোমাকে,কথাটা বলে রোদেলা ওকে দৌঁড়াতে শুরু করে।অনিল হেসে হেসে ছুঁটছে।
আরে আরে কি করছিস পাগল হলি না কি,বাসর রাতে কেউ বরকে দৌঁড়ায় না কি,আরে দাঁড়া কি করছিস,ওরে কেউ বাঁচাও আমায়,বাসর রাতে আমার বউ পাগল হইছে,হা হা হা।
একবার ধরি তখন তোমার হাসি বার করবো, দাঁড়াও।
রোদেলা ছুঁটে আসছিলো আকাশের পিছন,আকাশ এবার ইচ্ছে করেই দাঁড়িয়ে গেলো আর রোদেলা তৎক্ষনাৎ ব্রেক কষতে না পেরে আকাশের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলে আকাশ ওর কোমড়ের পিছন দিকে ধরে ওকে টান দিয়ে একদম নিজের সাথে মিলিয়ে নেয়,আকাশের হঠাৎ এমন স্পর্শে রোদেলা পাথরের মতো জমে যায় লজ্জায়, আকাশ এবার আস্তে আস্তে রোদেলার ঠোঁটের পানে এগুতে নিলে রোদেলা নিজের চোখগুলো বন্ধ করে নেয়,হঠাৎ রোদেলা নিজের মাথায় একটা হালকা বারি অনুভব করে,চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আকাশ ভ্রযোগল কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,রোদেলা বুঝতে পারলো ওকে আকাশ নিজের হাতে মাথায় একটা বারি দিয়েছে।রোদেলা খনিক রেগে বললো।
এই যে তুমি আমার মাথায় বারি দিলে কেনো?
এমন পেত্নির মতো সেজে এখনও বসে আছিস কেনো?
কি তুমি আমাকে পেত্নি বললে,জানে তুমি আমি এই সাজে শুধু মাত্র একটা ছবি এফবিতে পোস্ট করেছিলাম,১ঘন্টায় পুরো ২ হাজার লাইক পাইছি,আর ছেলেরা কমেন্টে আমার রূপের চর্চা করে করে শেষ হয়ে যাচ্ছে আর তুমি আমায় পেত্নি বললে।
কি ছেলেরা তোর রুপের প্রশংসা করেছে,ওদের সাহস কি করে হয় আমার বউয়ের দিকে নজর দেওয়ার,কাল থেকে তোর এফবিতে ছবি ছাড়া বন্ধ, আর ওই ছেলেগুলোকে তো আমি দেখে নিবো,এবার যা চুপচাপ গিয়ে এসব ভারী কাপড় চেঞ্জ করে মেকআপগুলো ধুয়ে সুন্দর একটা শাড়ী পড়ে আমার সামনে আয় তোকে মন ভরে দেখবো।
মন ভরে দেখবো, হুহু।
রোদেলা আকাশকে ভেংচি কেটে চলে গেলো ওয়াসরুমে, কিছুক্ষণ পর রোদেলা একটা লাল রঙের শাড়ী পড়ে বেড়িয়ে এলো ওয়াসরুম থেকে,ঘন লম্বা চুলের নিচ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে,শাওয়ার নিয়েছে তো তাই।এমনিতেই দুধে আলতা গায়ের রং তার উপর লাল রংটা যেনো আলাদা ভেসে উঠেছে ওর পড়নে,আকাশ বিমোহিত হয়ে তাকিয়ে আছে ওর মায়াপরীর দিকে,আকাশের রোদেলাকে যেনো সদ্য ফোঁটা একটা গোলাপ মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে, এই গোলাপকে যে ওর ভালোবাসায় ভড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে বড়,মনে খনিকে নেশাক্ত একটা ভাব চলে এসেছে আকাশের,হা হয়ে তাকিয়ে রইলো রোদেলার দিকে।রোদেলাও বেশ ভাবভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসলো আকাশের পানে,কিন্তু আকাশের একদম পাশে এসেই ওর রোমান্টিক ভাবনাতে এক বালতি জল ঢেলে ওর পাশ কাটিয়ে বেডের ওপর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
এটা কি হলো?
কি আবার আমি শুয়ে পড়লাম,তুমিও শুয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে।
রাত হয়েছে মানে কি?বাসর রাতে কেউ ঘুমায় না কি?
অন্য কারো কথা জানি না আমি তো ঘুমাবো।আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমুচ্ছি তোমার একা একা যা করার তা করো।
কথাটা বলে রোদেলা চাদর দিয়ে নিজেকে ঢেকে মুখ চেঁপে হাসতে লাগলো,আকাশও বুঝতে পারলো রোদেলা ওর সাথে বাদরামো করছে,তাই এবার আকাশও একটা দুষ্টু ফন্দি আটলো।
ওকে তোর যখন এতোই ঘুম পাচ্ছে তবে তুই ঘুমিয়ে পর,আমার তো ঘুম পাচ্ছে না তবে আমি না হয় রিয়ার সাথে কথা বলি,অনেক দিন হলো তোর চক্করে বেচারি রিয়াকে পাত্তাই দেই না,আজকে ওর সাথে কথা বলবো অনেক সময়।
কথাটা বলে দুষ্টামী করে আকাশ ফোনটা হাতে নিলে রোদেলা চট করে উঠে আকাশের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়।
এই তুই ফোনটা নিলি কেনো?
বেশ করেছি নিয়েছি,আমি তোমার স্ত্রী আমার অধিকার আছে তা করার।সাহস কি করো হলো তোমার আবার ওই রিয়ার নাম নেওয়ার,শাঁকচুন্নি মাথার সব কয়টা চুল ছিঁড়ে নিবো আমি।
বেচারিকে যে চুল ছাড়া দেখতে একদমই ভালো লাগবে না রে রোদেলা।
রোদেলার রাগের মধ্যে আকাশের এমন ফাজলামো শুনে ওর বুকে কিল ঘুষি মারতে শুরু করে রোদেলা,আকাশ হাসতে হাসতে শুয়ে পড়ে রোদেলা এখনও মারছে,হঠাৎ আকাশ রোদেলাকে চট করে ধরে নিয়ে ওকে টান দিয়ে শুইয়ে ওর উপর চলে আসে,রোদেলা এবার লজ্জা জমে গেছে পুরো।
এতো জেলাস কেনো হস বলতে পারিস?
তোমাকে অনেক ভালোবাসি তাই।
আকাশ এবার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুঁটিয়ে রোদেলার ঠোঁটের পানে এগুতে থাকে,রোদেলাও পরম আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়,আর তারপর দুজন দুজনার ভালোবাসায় মেতে উঠে।
______________
উনি আসার আগেই আমি ভারী সাজসজ্জা খুলে হালকা গোলাপি রঙের একটা শাড়ী পড়ে বসে রয়েছি বিছানায়, উনার যে আমাকে বিনা সাজেই দেখতে বেশি ভালো লাগে তাই,উনি এবার ঘরে প্রবেশ করে এসে আমার পাশে বসলেন,তারপর আমার থুতনিতে ধরে আমার মুখটা উঁচু করে বললেন।
মাশাআল্লাহ, হয়তো রোজ আকাশের ওই চাঁদটা জ্বলেপুড়ে মরে তাই না।
কেনো?
কেনো আবার,ওর থেকেও সুন্দরী কেউ যে আমার ঘর আলো করে রাখে প্রতিদিন।
যা,আপনিও না,আমি ওতোটাও সুন্দর না,আমার থেকে হাজারগুণ সুন্দর মেয়ে আপনার পিছন লাড্ডু হয়ে আছঁড়ে পড়ে মরে।
তা হয়তো মরতে পারে,কিন্তু এই পাগলটা যে শুধু তোমার পিছন আছঁড়ে পড়ে মরে,তুমি যে আমার কাছে এ পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরী মেয়ে, যার সাথে পৃথিবীর অন্য কোনো মেয়ের তুলনা হয় না,তুমি যে অতুলনীয় কহিনুর,তুমি যে অমুল্য।
আমি এবার অভিনয় করে মুখটা পানসে বানিয়ে বললাম।
আপনি আমায় কতো ভালোবাসেন মি.খান,কিন্তু আমি যে এখন আর আপনাকে আপনার মতো করে ভালোবাসার প্রতিদান দিতে পারবো না,আপনার আর আমার মধ্যে যে এখন চলে এসেছে অন্য কেউ,আপনাকে যে ওর সাথে আমাকে ভাগাভাগি করতে হবে।
কথাটা শুনে উনার রোমান্টিক মাথায় আগুন ধরলো খনিকে আমি তা ভালোয় আন্দাজ করতে পারলাম,উনি রেগে গিয়ে আমায় জিজ্ঞেস করলেন।
কে সে,আমি ওকে মেরে ফেলবো প্রাণে,আমার কহিনুরকে আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিবে এমন কাউকে আমি এই পৃথিবীতে থাকতেই দিবো না।
সে এমন কেউ হয়তো তার ব্যাপারে শুনলে আপনিও তাকে ভালোবেসে ফেলবেন।
আমার কহিনুরকে আমার কাছ থেকে কাড়তে আসা ব্যাক্তিত্বকে আমি ভালোবাসবো অসম্ভব, আমি ওকে প্রাণে মেরে ফেলবো,তুমি শুধু ওর নাম আর ঠিকানা বলো আমায়।।
ওর নামতো এখনও রাখি নি আমি,কিন্তু হ্যাঁ ওর ঠিকানা আমি বলতে পারবো।
কথাটা বলে নুর নিজের পেটে শিশিরের হাত রাখলো,তারপর দুষ্টু একটি হাসি ঝুলালো ঠোঁটের কোনে।শিশির কিছুই বুঝতে পারলো না হাবার মতো তাকিয়ে আছে নুরের দিকে,নুর এবার হাসিটা আরও প্রখর করে জোর গলায় বললো।
আপনি বাবা হতে চলেছেন মি.এসআরকে।
কথাটা শুনে প্রায় এক মিনিট শিশির স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো,তারপর নিরবতা ভেঙে কহিনুরকে চট করে কোলে নিয়ে ঘুরাতে শুরু করলো।
আরে আরে কি করছেন আপনি?
কহিনুর তুমি জানো না তুমি আমাকে কতো বড় পাওয়া পাইয়ে দিয়েছো,আমি বাবা হতে চলেছি,কথাটা শুনে আমার যে কতো ভালো লাগছে আমি কি করে যে তোমাকে বুঝাবো,আমি বাবা হতে চলেছি কহিনুর,তুমি মা হবে,আমরা বাবা-মা হবো।আমাদের কোল আলো করে লক্ষি একটা সোনাবাবু আসবে,আমাদের পাপা মাম্মাম ডাকবে,কতো ভালো লাগবে না তখন?
হুম,সব হবে।কিন্তু এবার আস্তে বলেন,এতো রাতে সবাইকে জাগাবেন না কি।
হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি আজকে পৃথিবীর সবাইকে জাগিয়ে দিবো,চিৎকার করে করে বলবো আমি বাবা হতে চলেছি,সবাই জানবে আমি বাবা হতে চলেছি,হ্যাঁ আমি বাবা হতে চলেছি।
কথাটা শুনার পর থেকে যে উনি কি পাগলামি শুরু করেছেন,বেবি হলে উনি এটা করবেন ওটা করবেন,এই নাম রাখবেন ওই নাম রাখবেন,তাছাড়া উনার নাকি একটা মেয়ে বেবি চাই ঠিক আমার মতো কিউট,আরও না জানি কি কি আবদার,আমাকে বুকে জড়িয়ে এসব পরিকল্পনা করছেন আর আমি মন ভরে সেসব শুনছি আর ভাবছি হয়তো জীবনে কখনো অনেক বড় কোনো পুণ্য করেছিলাম যার বদৌলতে আমি এই লোকটাকে জীবনে পেয়েছি।আমি যে এই ব্যাঙটাকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি এখন,বড্ড ভালোবাসি আমি উনাকে।
চলবে…………