#শিশিরের কহিনুর,০৯,১০
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ০৯
উনি রুমে ঢুকলেন,সাথে কয়েকটা গার্ড তিনচারটে সুন্দর সুন্দর ডিজাইন করা বড় বাক্স নিয়ে ঢুকলো,তারপর বাক্সগুলো রেখে ওরা চলে যায়,উনি একটা বক্স ওপেন করে ওটা থেকে একটা শাড়ী বার করলেন,বেগুনী কালারের হালকা ডিজাইন করা খুব সুন্দর শাড়ী,উনি ওটা নিয়ে আমার পাশে এসে বসলেন আর ওটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন।
যাও শাড়ীটা পড়ে আসো,আর কতোসময় এসব হেবি শাড়ী আর মেকআপ নিয়ে বসে থাকবে,যাও এবার সুন্দর করে শাড়ীটা পড়ে আসো আমি তোমায় দেখবো।
আমি এই মুহুর্তে শাড়ী পড়বো না।
দেখো আমাকে রাগিয়ো না,শাড়ী পড়তে বলেছি ঝটফট গিয়ে পড়ে আসো রাইট নাও গো।
উনার ছেঁড়া ধমকে আমি ভয় পেয়ে দৌঁড় দিলাম ওয়াসরুমে শাড়ীটা নিয়ে।
ইচ্ছে করেই অনেক দেড়ি করে বের হলাম ওয়াসরুম থেকে যাতে খবিশ ব্যাঙটার হাতে না পরি বাট এখন বাহির থেকে চেচাঁচ্ছে বাহিরে যাবার জন্য,আমি না গেলে দরজা ভেঙেই যে ভিতরে এসে পড়বে একে দিয়ে কোনো বিশ্বাস নেই,তাই আমারই চলে যাওয়া ভালো,তাই নিজেক ঠেলেঠুলে বের হলাম ওয়াসরুম থেকে,আমি বের হতেই খপ করে এসে কোলে নিলো আমায় আর ভ্রুজোগল কুঁচকে রাগি স্বরে বললো।
যতো দুরে থাকার চেষ্টা করবে ততোই আমি তোমার পাশে আসবো কথাটা মনে থাকে যেনো,আমি আর কিছু রিপ্লাই করলাম না,উনি আমার নিয়ে গেলেন উনার রুমে থাকা হিয়া বড় বারান্দায়, বারান্দার চারিদিকেই অজস্র ফুলের গাছ,তাছাড়া আজকে আমাদের বাসর রাত বলে হয়তো আরও সুন্দর করে ডেকোরেশনও করা হয়েছে,যতোই এসব ডেকোরেশন দেখছি,যতই বাসর রাত ফিলিংস আসছে ভিতরে ততোই ভয় হচ্ছে আমার,বজ্জাতটা না আমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করে বসে,সবকিছুই অসহ্য লাগছে আমার কাছে,ব্যাঙটা আমাকে নিয়ে গিয়ে বারান্দার দোলনাতে বসালো আর আমার পাশে নিজেও বসলো,অবশ্য আমাকে নিজের সাথে চেপে ধরে আছে যদি আমি পালিয়ে যায় হয়তো এটা ভেবে।
জানো কহিনূর আমি কখনো এখানে আসলে একদিনও থাকতাম না,রুমটা আমারই সেই ছোটবেলা থেকে,কিন্তু মা চলে যাবার পর আর কখনো আমি এই রুমে থাকতে চাই নি,যখনি এখানে আসতাম মায়ের স্মৃতি মনে পড়তো,মায়ের সাথে এ রুমে জড়িয়ে রয়েছে আমার অনেক স্মৃতি, মা চলে যাবার পর দাদিমার সাথেই থেকেছি,কিন্তু মাকে ভুলতে পারি নি,তাই দাদিমাকে অনেক জোর করে বলি আমাকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিতে সব কিছু থেকে অনেক দূরে তারপর দাদিমা আমায় অনেক দূরে পাঠিয়ে দেয় সেই সূদুর লন্ডনে,চারবছর আগেই ফিরি,এখানে অনেকবার আসলেও কখনো আর এই রুমে আসি নি,আর আসলেও থাকি নি।
কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন উনি,উনার চোখের কোনায় জল চিকচিক করছে যা হয়তো উনি বইতে দিতে চাইছেন না,আমারও কেনো যেনো উনার ব্যাথাময় অনুভুতির সাথী হবার ইচ্ছা হলো,একটু উনাকে বুঝার চেষ্টা করলে কি যাবে আমার,কিন্তু পরক্ষণেই মনকে শক্ত করে নিলাম,কেনো আমি উনাকে বুঝার চেষ্টা করবো, উনার মতো হিংস্র মানুষের সাথে যতো খারাপ হবে ততোই ভালো,হ্যাঁ ঠিক তাই।উনি আবারও বলতে লাগলেন।
কিন্তু জানো কহিনুর আজকে আর এই রুমে কোনো হাহাকার অনুভুতি হচ্ছে না আমার,জোর করে হলেও আমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের জীবনে নিয়ে এসেছি,আমার কহিনুরকে,তুমি জানো কহিনুর তোমাকে দেখার পর আমার মনে সেই শান্তি চলে এসেছিলো যেটার খোঁজ না জানি আমি সেই কবে থেকে করছিলাম,আমি সেই শান্তিটা আর হারাতে চাই না লক্ষিটি,তুমি কি দিবে না আমায় সেই শান্তি,সেই ভালোবাসা।
আমি কিছু বললাম না নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি।
হুম তো তুমি দিবে না,তাই তো,ঠিক আছে দিতে হবে না আমি নিজেই নিয়ে নেবো কেমন।
কথাটা বলে উনি আমার কপালে নিজের অধর ছুঁয়ালেন,আমি ভয়ে খনিক কেঁপে উঠলাম।উনিও হয়তো আমার এই ভয় পাওয়ার কারন বুঝতে সমর্থ্য হলেন।তাই মুখে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বললেন।
ভয় পেয়ো না লক্ষিটি, যতোদিন না তুমি চাইবে ততোদিন আমি নিজের স্বামীর অধিকার নিতে আসবো না,বাই দ্যা ওয়ে রুমের ডেকোরেশন টা কেমন হলো,আমি আপুকে বলিয়ে লোক দিয়ে তোমার পছন্দ মতোই ডেকোরেশন করিয়েছি,সুন্দর হয় নি।
আমি এখনও কিছু বললাম না।উনি হয়তো আমার এসব ব্যবহারে যথারীতি কষ্ট পাচ্ছেন কিন্তু আমায় বুঝতে দিচ্ছেন না,কিন্তু আমি ঠিকই তা বুঝতে সমর্থ্য হচ্ছি,তারপর কিছু সময় উনিও চুপ থাকলেন, আকাশে জ্বলজ্বল করতে থাকা চাঁদের পানে মুখ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে শান্ত স্বরে বললেন।
তোমায় আমি আমার জীবনের সব কিছু খুলে বলতে চাই,তুমি কি শুনবে কহিনুর।
এবার আমি বললাম,আসলে আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমোতে চাই,কথাটা বলে একনজর উনার দিকে তাকালাম,উনিও আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন তখন,আমি দেখতে পেলাম খনিকে উনার চোখের কোনে আবারও পানি চিক চিক করতে শুরু করে দিয়েছে,হয়তো আমায় নিজের বুকে জমে থাকা ব্যাথা, রাগ অভিমান সব জানাতে চাইছিলেন কিন্তু আমার এমনটা করায় উনার সেই ব্যাথাময় বুকটা যেনো আরও ব্যাথাময় হয়ে পড়লো,আমারও বুকটা খচ করে উঠলো তখন উনার সেই অসহায় মুখটা দেখে কিন্তু তবুও নিজের জেদের কাছে হারলাম না,উনাকে যথারিতী এরিয়ে চলে গেলাম,গিয়েই বিছানায় শুয়ে পড়লাম।কখন ঘুমালাম জানি না হঠাৎ ঘুম ভাঙলো আমার তখনি কানে ভেসে আসলো কিছু কথা,কথাগুলো বারান্দার দিক থেকে আসছে,শব্দ না করে সেদিকে গেলাম,বারান্দার দরজার সামনে দাঁড়াতেই দেখতে পেলাম উনি বারান্দার এককোনে দাঁড়িয়ে আছেন,হাতে একটা জ্বলন্ত সিগারেট, বেসামালভাবে উনি সেটা টানছেন আর বিধাতার কাছে নিজের সব মা অভিমান ব্যাক্ত করছেন।
কেনো খোদা,কি পাপ করেছিলাম আমি,ছোটবেলায় এই অবুঝের থেকে তার মা দূর করে দিলে,একা করে দিলে আমায়,তারপর নিজেকে একাই ঘুটিয়ে নিয়েছিলাম,কখনো কাউকে চাই নি পাশে,তখন তুমি আমার জীবনে কহিনুরকে নিয়ে এলো,নিজের অজান্তেই ওকে ভালোবেসে ফেললাম,ওর মাঝেই নিজের সব শান্তি খুঁজতে লাগলাম,নিজের সবকিছুর সাথী ওকে বানাতে চাইলাম কিন্তু ও যে আমার কোনো কিছুরই সাথী হতে চায় না খোদা,যার জন্য সব মেয়েদের নেশা,মদ্যের নেশা,সব কিছুর নেশা ছাড়লাম সেই আমাকে ছেড়ে দিতে চায়,ও কখনোই আমাকে বুঝতে চায় না,শুধুই ভুল বুঝে যায়,কেনো খোদা কেনো?
কথাটা বলে উনি পাশে থাকা শক্ত কিছুতে ঘুষি দিয়ে ভেঙে দিলেন ওটা,সাথে সাথে উনার হাতটাও অনেক কেটে গেলো,উনি তা তোয়াক্কা না করেই সিগারেটে চুমুক দিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন।
আমার এবার অনেক খারাপ লাগলো,তখন কথাগুলো শুনে নিলে কি যেতো আমার,হ্যাঁ মানছি লোকটা রাগী,হিংস্র,কিন্তু সবকিছুর পিছনে তো একটা কারন থাকে,উনারও থাকাটা স্বাভাবিক, তবে কারনটা আমি জানতে চাইলে কি খুব বড় ক্ষতি হয়ে যেতো আমার,এখন আর নিজেকে দোষে কি লাভ,যখন যা মাথায় আসে তখন তাই করি আর পরে পস্তাই।পস্তাতে পস্তাতে বেডে এসে শুয়ে পড়লাম,একটু সময়ে অনুভব করলাম উনিও আমার পাশে এসে শুয়ে পড়েছেন,আমি আর নড়াচড়া করলাম না।
সকালের মিষ্টি রোদ এসে আমার মুখশ্রীতে হাতছানি দিলে পিটপিটিয়ে চোখ খুললাম আমি মুখে একটা আলতো হাসি টানিয়ে,অজস্র ফুলের ঘ্রাণ মন মাতিয়ে দিলো আমার এই সাত সকালে,অনেক ফুরফুরে মন নিয়ে উঠে পড়লাম শোয়া থেকে,চোলগুলো খোঁপা করে পাশে তাকালাম দেখলাম উনি নেই,কেনো যেনো উনার বালিশটায় হাত বুলাতে ইচ্ছা করলো,কিন্তু এ কি বালিশটায় হাত দিতেই বুঝতে পারলাম ওটা খনিক ভিজে আছে,কিন্তু কেনো?উনি আবার রাতে কান্না করেন নি তো?না না উনার মতো এতো কঠিন মানবও আবার কান্না করতে পারে না কি।হঠাৎ চোখ পড়লো রাতে উনার আনা সেই বক্সগুলোতে,গিয়ে ওগুলা ওপেন করলাম,ওগুলোর ভিতর অনেক শাড়ী জুয়েলারী,কসমেটিকস ,ড্রেস আরও অনেক কিছু যেনো পুরো একটা কাপড়ের আর জুয়েলারির দোকান কিনে আনা হয়েছে আমার জন্য,এখানে আমার ব্যবহারে লাগবে এমন কিছুই বাদ যায় নি,সবকিছু ওপেন করার পর একটা বক্সের নিচে একটা চিরকুট পেলাম ওটাতে লিখা,
এসবকিছুই আমার কহিনুর এর জন্য,বিয়েটা এভাবে করায় যে তোমাকে তোমার কোনো কাপড়চোপড়ও আনার সুযোগটা দিলাম না ময়না তাই ভাবলাম আর তোমায় সেসব পুরাতন কাপড় আনতেও হবে না,আমার ময়নাটা যাই পড়বে সব নিত্য নতুন হবে,আমার প্রিয়সী যেমন সব থেকে আলাদা ওর সবকিছুও আলাদাই হবে।
এদিকে রোদেলাকে গাল ঠাসিয়ে কানের নিচে বসিয়ে দিলো আকাশ একটা,রোদেলা গালে হাত দিয়ে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছে।
তোর সাহস কি করে হলো আমাকে জড়িয়ে ধরার,কতোদিন বলবো তোকে আমার আশেপাশে না ঘেঁষতে, এতো ছেঁছড়া কেনো তুই?
তোমাকে ভালোবাসি বলে তো তোমার পাশে আসার চেষ্টা করি,ভালো না বাসলে হয়তো এমন ছ্যাঁচড়ামি করতাম না,কতো ছেলে আমার সাথে কথা বলার জন্য উল্টে পড়ে মরে আর আমি আছি শুধু তোমার পিছন পরে ভালোবাসি বলেই তো।
ভালোবাসা, বড় পাঁকা পেঁকে গেছিস না,কি বুঝিস ভালোবাসার,যতোসব বাঁদরামো,যা ভাগ আমার সামনে থেকে।
তারপর আর রোদেলা আকাশের সামনে দাঁড়ালো না ছুঁটে চলে গেলো সেখান থেকে চোখের অবাধ্য জল মুছতে মুছতে।আকাশের মনে একটুও দয়া হলো না ওর জন্য।
সেই কখন থেকে রুমে বসে আছি উনি তো সকাল থেকেই ঘায়েব,কিছু কাজের লোক একটু পর পর এসে আমার হালচাল জিজ্ঞেস করছে আমায় এটা ওটা দিচ্ছে,আমার এতো আধিখ্যেতাও ভালো লাগছে না,চোখগুলো কেনো যেনো ব্যাঙটাকে খুঁজছে,বেড়িয়ে গেলাম রুম থেকে,হেঁটে চলেছি দেখি বাড়ির কোনো কোনায় কি সেই কুনোব্যাঙটা আছে,এতো বড় বাড়িতে কোনোব্যাঙটাকে যে কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না আমার এই অবলা চোখগুলো,হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই কারো সাথে ধাক্কা খেলাম,কিন্তু লোকটা আমায় ধরে নিলো আমি পরে যাবার আগেই,চোখ তুলে যেমনি লোকটার মুখশ্রীতে আমার নজর পড়লো ভয়ে কুঁচকে গেলাম আমি,ঝট করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম,শয়তান ব্যাক্তিটা নিজের প্যান্টের পকেটে দু হাত ঢুকিয়ে মুখে বাকা হাসি ঝুলিয়ে ভদ্রতার সহিত আমায় অভদ্র কথা বলতে শুরু করলো।
কি হয়েছে লক্ষিটি,আমায় চিন্তে পারো নি,মাত্র চার বছরেই ভুলে গেলে আমায়।
আমি ভয়ে তোঁতলাতে তোঁতলাতে বললাম।
দেখেন আমি আপনাকে একদম ভয় পাই না,আপনি বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমি কিন্তু সব মি.খানকে বলে দিবো আর তারপর আপনার হাঁড়গুড় একটাও থাকবে না।
হা হা হা হা,হাসালে নুর হাসালে,তুমি আর ওসব আবার আমার শালা সাহেবকে বলবে,হা হা হা,তবে যাও গিয়ে বলে দাও,তবে বলার আগে চার বছর আগের ঘটনাটা মনে করে নিও,ওই ঘটনা ভালো করে মনে থাকলে আমার মনে হয় না তুমি সে ভুল আবার করবে বলে,আর মনে রেখো ভোর কিন্তু এখন দুমাসের প্রগনেন্টও,তোমাকে আমি যতদূর চিনি তুমি এমন কিছু আর কারো সাথেই ঘটুক তা আর চাইবে না,হা হা হা।
কথাটা বলে উনি চলে গেলেন সেখান থেকে হাসতে হাসতে,আমি নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে এখনও কাঁপছি ভয়ে,হ্যাঁ আমি যে সত্যিই চাই না আমার জন্য আর একটি মেয়ের জীবন নষ্ট হোক,কখনোই না,তখনি আমার ঘাড়ে কেউ হা রাখলো,আমি ঘাবড়ে কেঁপে উঠে পিছন তাকালাম।
আরে আরে ময়না কি হয়েছে তোমার? ভয় পাচ্ছো কেনো?আর এখানে কি করছো আমি ঘরের কাজের লোককে যে বললাম ওরা তোমাকে রুমে সবকিছু দিয়ে আসতে,ওরা গালফিলতি করেছে কাজে,দাঁড়াও এখনি দেখছি এক একটাকে।
মুহুর্তে রাগটা নাকের ডগায় এনে চলে যাচ্ছে দেশ স্বাধীন করতে কুলোব্যাঙটা তাই উনার হাত ধরে আটকালাম।
কি আপনি আমায় লোকসমাগমে এনেছেন একা রাখার জন্য বুঝি,এর থেকে তো আপনার ওই ভুতিয়া মহলটাই ভালো ছিলো,হুহ।একা ভালো লাগছিলো না তাই বেড়িয়েছিলাম এর জন্য এতো রাগতে হবে কেনো,হুহ।
বুঝতে পেরেছি আমায় মিস করছিলে তাই হয়তো আমায় খোঁজতে বেড়িয়েছিলে।
মোটেও না,আমি তো মিষ্টি মা রোদেলা আর ভোর আপিকে খুঁজতে বেড়িয়েছিলাম,হয়েছে এবার চলেন আমার সাথে।
কথাটা বলে উনাকে রুমের দিকে নিয়ে যেতে লাগলাম,কারন উনার হাতে রাতের কাটা টা এখনও একদম তাজা আছে, দেখেই বুঝা যাচ্ছে কোনো ওষুধ লাগায়নি জায়গাটায়, বজ্জাত লোক,অনেক রাগ হচ্ছে এর উপর এতো কেয়ারলেস কেউ হয় নাকি,আমাকেও যেনো আজ ভুতে ধরেছে এই প্রথম হয়তো আমি কারো এতো কেয়ার করছি আর কারো উপর এমন করে অধিকার খাটাচ্ছি,রুমে নিয়ে গিয়ে উনাকে বেডে বসিয়ে উনার হাতে মলম লাগাতে শুরু করলাম,এক ধ্যানেই লাগাচ্ছিলাম।
নুর ওষুধ লাগাচ্ছে আর শিশির মুগ্ধ নজরে দেখছে ওকে,কে বলে এই মেয়েটা ওকে ভালোবাসে না,হয়তো নুর নিজের অনুভুতি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে,কিন্তু শিশির যেনো ঠিকই নুরের অনুভুতিগুলোর মানে ধরে ফেলেছে,ওর ময়নাপাখিটা যে নিজের মনের খাঁচায় এই অসহায় ব্যাঙটাকে বন্দি করে নিচ্ছে আর তা থেকে পাখিটা বেখবর থাকলেও ব্যাঙটা ঠিকই সব বুঝতে সমর্থ্য,হঠাৎই মুগ্ধ নজরের চাহনিতে এসব অনুভুতি অনুভব করতে করতে সেই উন্মাদ যুবকটা নিজের অতৃপ্ত অধরজোরা ছুঁইয়ে দেয় রমনীর অধরে আলতো করে।
চলবে…..
#শিশিরের কহিনুর
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ১০
শিশির হিংস্র পশুর ন্যায় চেঁচাচ্ছে আর ঘরের জিনিসপত্র ভাঙছে,নুর সামনে দাঁড়িয়ে ভয়ে টগবগিয়ে কাঁপছে,কান্না আসছে ওর অনেক।
কেনো কহিনুর কেনো,কেনো তুমি এমন করলে,আমি বলেছিলাম না তুমি শুধু আমার,তুমি শুধুই আমার,তোমাকে দেখবো আমি,তোমার সাথে কথাও বলবো আমি,স্পর্শ করবো আমি,তবে কেনো কেনো তুমি তা বুঝতে চাও না,যে শাড়ী তোমাকে ঢাকতে পারে না সে শাড়ী পড়ারও কোনো মানে হয় না।
গর্জন করে কথাটা বলেই এক টান দিয়ে নুরের গায়ে থাকা শাড়ীটা খুলে ফ্লোরে ফেলে দিলো,নুর চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিয়ে নিজের হাত দিয়ে নিজেকে ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে, ভয়ে এখনও যথারীতি কাঁপছে,শিশির ওর পাশে গিয়েই ওকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দিলো আর নিজেও ওর উপর চলে গেলো,শক্ত করে চেঁপে ধরেছে ওকে বেডের সাথে,এক হাত দিয়ে ওর পেটের উপর স্লাইড করছে ওপর হাতে ওর চুলমুঠো করে ধরে আছে,আর ঠোঁটগুলো এক প্রকার কামড়ে চলেছে,নুর শুধু নিজেকে ছাড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টাই করে যাচ্ছে,চিৎকার করে করে কাঁদছে পারছে না এই বিশাল দেহী মানবকে নিজের উপর থেকে সরাতে,শিশির যেনো আজ ওর সব রাগ নুরের উপরই ঢালবে,কিন্তু হঠাৎই শিশির শান্ত হয়ে গেলো,ছেড়ে দিলো নুরকে,উঠে গিয়ে সামনে থাকা একটা কিছুতে ঘুষি দিলো সজোরে,নুর উঠে গিয়ে নিজেকে চাদর দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করলো,ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে এখনও,শিশির আবার ওর পাশে আসলো এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো।
আমি চাই না তোমাকে এভাবে অপবিত্র করতে,চাই না তোমার সাথে জোর জবরদস্তি করতে,চাই না তোমাকে আঘাত করতে কিন্তু কি করবো তা করতে যে তুমি আমায় বাধ্য করো।
কথাটা বলে শিশির নুরকে প্রায় ৫ মিনিটের মতো জড়িয়ে ধরে বসে থাকে কোনো কথা আর না বলে,নুরও নড়ছে না, ও তো এখন ধাতবমুর্তি,এই কঠিন পুরুষের বিরুদ্ধে ওর কোনো কিছু করার ক্ষমতাই নেই,তারপর শিশির ওকে ছাড়লো আর ছুটে গিয়ে ফাস্ট এইড বক্স আনলো,শিশিরের কামড়গুলো স্পষ্ট ভাবছে নুরের গলা ঘাড়ে,ঠোঁটে কামড় দেওয়ায় রক্ত ঝরছে সেখান থেকে অনেক,শিশির এবার পাগলপ্রায় হয়ে ওগুলাতে ওষুধ লাগাতে ব্যাস্ত,নুর ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলে শিশির ওর ক্ষততে ফু দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে,তারপর উঠে গিয়ে নুরকে উঠালো আর একটা শাড়ী এনে ওকে পড়িয়ে দিলো ভালোভাবে পিনআপ করে।তারপর নুরকে আবার বেডে বসিয়ে ওর কপালে একটা চুমু কেটে হন হন করে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে,সেখানে আর থাকলো না কারন ওর রাগ এখন অব্দি কমে নি ও জানে আর এখানে থাকলে হয়তো নুরকে আবারও আঘাত করবে।
রুমের বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলো রুশানা খান আর ভোর,ওরা শিশিরকে দেখে কিছু বলবে তখনি শিশির বললো।
আমি আসার আগে যেনো কেউ আমার কহিনুরের কাছে না যায়,না হলে পরিনামটা ভালো হবে না।
চলে গেলো হনহনিয়ে,রুশানা আর ভোর একে ওপরের দিকে তাকালো অসহায় দৃষ্টিতে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি,আমার কান্না যেনো থামছেই না,গলা ঘাড়ে স্পষ্ট কামড়ের দাগগুলো ভাসছে,ঠোঁটগুলোও খনিক ফুলে গেছে,এমন একটা হিংস্র মানুষের সাথে কেউ কি করে বেঁচে থাকতে পারে,কেনো ওই হিংস্র শিকারীটা আমার মতো মুক্ত পাখিকে খাঁচায় বন্দী করে রাখতে চায়,কি ক্ষতি করেছি আমি ওর,কিন্তু আর না আর সহ্য করবো না আমি ওসব,পালিয়ে যাবো আমি দূরে কোথাও,আগের বারের মতো আত্নীয় স্বজনের কাছে যাবো না এমন কোথাও যাবো যেখান থেকে এই হিংস্র পশুটা আমায় কখনো খুঁজে বের করতে না পারে,আর আমি নিজের মতো করে বাঁচতে পারি,আজ আর পারবে না এই বজ্জাত কোনো খাঁচায় আমায় আটকে রাখতে।দৃঢ় প্রতিঙ্গা করে নিলাম মনে,খনিকে মাথায় একটা বুদ্ধিও চেপে গেলো এই খাঁচা ভেঙে উড়াল দেওয়ার।
আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন এমন কি সব ঘটে গেলো,তবে চলে যাওয়া যাক ফ্লাসবেকে।
তখন শিশির নুরের অধরে অধর ছুঁয়ালে নুরকে অস্বাভাবিকতা আর লজ্জা দুটোয় গ্রাস করে ফেলো মুহুর্তে, সে আর সেখানে থাকতে পারে না,শিশিরকে আলতো ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে ছুঁটে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।
তৎক্ষনাৎ শায়েলা খান রুমে এসে শিশিরকে জানান শায়েলা খান শিশিরের বিয়ে উপলক্ষে পার্টি রেখেছেন আজকে সন্ধ্যায়,ওখানে না কি উনি শহরের নামী দামী লোককে ইনবাইট করেছেন ওখানে শিশির আর নুরকে বাধ্যতামুলক থাকতেই হবে বললেন।শিশির স্পষ্ট কথা ওর স্ত্রী কোনো সপিছ না যে লোক জমা করে ওকে দেখাতে হবে,শিশির সরাসরি মানা করে দিলো,কিন্তু শায়েলা খান খুব আকুতি কাকুতি করে ওকে মানালেন,হয়তো উনার এখানে অন্য ফন্দিও ছিলো তাই ,শিশির মেনে গেলো বাট ওর শর্ত ওর স্ত্রীর দিকে কেউ তাকাবে না,কেউ কথা বলবে না,ওর স্ত্রী শুধু একটু সময়ের জন্য নিচে গিয়ে তারপর চলে আসবে,শায়েলা বেগমও একটুতেই মেনে নিলেন,কারন উনার এইটুকুতেই অনেক কিছু হয়ে যাবে,তারপর সন্ধ্যায় শহরের গণ্যমাণ্য সব ব্যক্তিত্ব এলেন সেখানে,অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো,নুর নিচে নামার আগেই শিশির সবার উদ্দেশ্য এনাউন্সমেন্ট করে দিলো ওর স্ত্রী নামলে যেনো কেউ ওর দিকে হা করে না তাকিয়ে থাকে তাতে কারো জন্যই ভালো হবে না,সবাই কথাটা শুনে কতো মুখ মুড়ামুড়ি করতে থাকলো, কতো এনাখোচা কথা বলতে শুরু করলো,বাট শিশিরের এতে কোনো যায় আসে না,আর শিশিরের সামনে কারো কিছু বলার কোনো সাহসও নেই,যাকগে শিশির তারপর রুমে গিয়ে নুরকে নিয়ে এলো,নুর একটা মেরুন কালারের শাড়ী পড়েছিলো,ভালো করেই নিজেকে কাভার করে রেখেছিলো শাড়ীটা দিয়ে,শিশির ওকে নিজের সাথে একদম লাগিয়েই রেখেছিলো,যাতে ওর স্ত্রীর আশেপাশেও কেউ না আসতে পারে,ভালোভাবে চলছিলো পার্টিটা,হঠাৎ শায়েলা খান শিশিরকে ডাকলেন উনার পাশে বললেন নুরকে রেখে আসতে উনার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে,প্রথমে শিশির নুরকে একা রেখে যেতে চায় না কিন্তু ওর দাদিমা এমনভাবে বলছেন যে ওকে যেতেই হলো,কিন্তু যাওয়ার আগে নুরের পাশে ওর লেডি গার্ডগুলো রেখেই গেলো,তখনি সুযোগ হলো ওই বদলোকেদের নিজেদের প্লেন সাকসেসফুল করার,শায়েলা খান কিছু একটা ইশারা করলেন মাহেরাকে,মাহেরাও সে অনুযায়ী মাথা নেড়ে নুরের পাশে গেলো,যেহেতু মাহেরা এই ফেমেলিরই একটা অংশ সে অনুযায়ী গার্ডগুলোও মাহেরাকে নুরের পাশে যাওয়া থেকে আটকালো না,মাহেরা এবার নুরের সাথে ভালোভাবে কথা বলতে শুরু করলো,কথা বলতে বলতে ওকে ওর সাথে করে অন্যত্র নিয়ে গেলো গার্ডদের চোখের আড়ালে আর কথা বলার ভানে কখন যে নুরের পিছনের দিকে শাড়ী কাভার করা পিন টা খুলে দিলো ও তা বুঝতেও পারে নি নুর,যার ফলে নুরের কোমড়খানা শাড়ী ভেদ করে দেখা যাচ্ছিলো,তখনি একটা ছেলে আসলো সেখানে আর নুরের কোমড়ের যে অংশ দেখা যাচ্ছিলো সেখানে একটা চিমটি কেটে দিলো,এমনটা করায় নুর অস্বাভাবিক বোধ করলো আর কিছু না ভেবেই ছেলেটির গালে কষিয়ে দিলো একটা থাপ্পড়,আসলে এটা শায়েলা খানের প্লেন ছিলো,উনি ভেবেছিলেন এরকম করলে নুর নিজের আত্মসম্মানবোধে ছেলেটির উপর হাত উঠাবেই আর তারপর উনি নুরকে অপমান করবেন আর শিশিরকে এটা বুঝাবে যে নুর উনার আসা গেস্টদের অসম্মান করেছে ও মোটেও এ বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্য না,কিন্তু উনার সব প্লেনে জল ফেলে দিলো শিশির,তৎক্ষনাৎ একটি মদ্যের বোতল ভেঙে ছুঁড়ে মারলো ছেলেটির দিকে,যা গিয়ে ছেলেটির ঠিক হাতে বিধলো,তারপর আরেকটা মদ্যের বোতল ভেঙে এনে ছেলেটির এক চোখ বরাবর ঢুকিয়ে দিলো,ছেলেটি ফ্লোরে পরে কাতরাতে শুরু করলো,তারপর নিজের রিভালভারটা এনে পর পর ছেলেটির পেটে দুটি গুলি করলো,লেডি গার্ডগুলো যেগুলোকে নুরের পাহারায় রেখেছিলো ওদের সবার পায়ে গুলি করলো,ওরাও ফ্লোরে পড়ে কাতরাতে লাগলো,ওদের গুলি করার কারন ওরা থাকতে ওর কহিনুরের সাথে এমনটা হবে কেনো,তারপর ওখানে থাকা সবকিছু ভেঙে চুড়ে মুহুর্তে ধ্বংস্তুপ বানিয়ে দিলো, ওকে আটকানোর সামর্থ্য এখানে উপস্থিত কারো নেই,সবাই টগবগিয়ে কাঁপছিলো তখন ওর ভয়ে,তারপর নুরের হাত ধরে টানতে টানতে ওকে নিয়ে এলো রুমে আর তারপর যা হলো সব তো আপনাদের সামনে।
কিছুক্ষণ পর শিশির রুমে এলো,কিন্তু রুমে ঢুকতেই ওর মাথা আর ঠিক থাকলো না,কারন নুর রুমে নেই,সারারুম খুঁজে যখন নুরকে খুঁজে পেলো না তখন বারান্দার দিকে গেলো,বারান্দার এক কোলে শাড়ী ঝুলন্ত অবস্থায় পেলো,শিশিরের মাথায় তৎক্ষনাৎ আগুন ধরলো।কহিনুর বলে গর্জন করে উঠলো।
কহিনুররররররররর,কি ভেবেছো আমার থেকে পালিয়ে বাঁচবে,পারবে না কহিনুর পারবে না,তুমি পাতালে গেলেও তোমাকে খুঁজে আনতে সক্ষম তোমার এই মি.খান ওরফে কুনোব্যাঙ।
চলবে…..