শিশিরের কহিনুর,১৫,১৬

0
701

#শিশিরের কহিনুর,১৫,১৬
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ১৫

শিশির অফিস থেকে ঘরে এসেছে মাত্র,ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই মাহেরা এসেই ওর সামনে ঠাস করে পরে গেলো,হয়তো ইচ্ছে করেই।

আহ মরে গেলাম গো,শিশির প্লিজ তুল না আমায়।

তখন আশেপাশে কেউ ছিলো না,আর মাহেরা শিশিরের ছোট বেলার ফ্রেন্ড তাই ওর সাহায্য করতে নাখোঁজ করলো না শিশির, সরল মনে ওর দিকে হাত বাড়ালো,ও হাত ধরে উঠে কি ন্যাকামোই না করতে শুরু করলো।

আহহ, শিশির আমি না হাতটে পারছি না,প্লিজ আমায় একটু রুম অব্দি দিয়ে আসবি।

একটুতেই তোর পায়ে আবার কি হয়ে গেলো,ওকে চল।

শিশির ওকে কোলে নিলো না,বরং ওর এক হাত ওর ঘাড়ের পিছন দিকে নিয়ে ওকে হাঁটতে সাহায্য করলো,আর ও হাঁটতে শুরু করলো ল্যাংচি দিয়ে,আঁড়চোখে উপরে থাকা রমনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো,উপরে থাকা রমনি আর কেউ নয় নুর,তখন নুর সিঁড়ি দিয়ে নামতে আসছিলো,তখনি শিশির আসে আর মাহেরা নুরকে দেখেই এহেন কান্ড ঘটায় ইচ্ছে করেই,শিশির নুরকে খেয়াল না করলেও নুর ঠিকই সব খেয়াল করলো।

উনি মাহেরা আপুকে হাঁটতে সাহায্য করছেন,এটা তো খারাপ কিছু না কিন্তু মাহেরা আপুর পাশে উনাকে দেখে আমার খারাপ লাগছে কেনো, কারনটা আমি জানি না,কারনটা না জেনেই কোনো যেনো কিছু না ভেবেই আমি চলে গেলাম উনাদের পিছন।

মাহেরাকে শিশির রুমে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিয়ে চলে আসবে তার আগেই মাহেরা বলে উঠে।

শিশির প্লিজ পায়ে একটু ওষুধ লাগিয়ে দে না অনেক ব্যাথা করছে।

দেখ আমি তোর চাকর না,আর আমি এখন বিবাহিত আমার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবি,আমি চাই না কহিনুর কোনো দিক থেকে আমায় ভুল বোঝুক,আমি চাকরদের পাঠিয়ে দিচ্ছি যা করানোর ওদের দিয়েই করিয়ে নিস,কথাটা বলে শিশির চলে যেতে নিলে মাহেরা দেখতে পেলো নুর আসছে এদিকে,কারন দরজাটা পুরো ফাঁক করা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো তাই সুযোগ বুঝে ফাঁদ পাতলো।

আহ,শিশির আমার চোখে কিছু পড়ে গেছে প্লিজ হেল্প কর।

শিশির এবার একে হেল্প করতে গেলো সরল মনেই,কিন্তু পিছন থেকে পুরো দৃশ্যটা চোখে পড়লো নুরের,খনিকেই জল গড়াতে শুরু করলো নুরের চোখ দিয়ে,নুর আর সেখানে দাঁড়ালো না ছুঁটে চলে গেলো।

রুমে চলে আসলাম ছুঁটতে ছুঁটতে, চোখ দিয়ে জল গড়ানো থামছেই না,কেনো তা জানি না,তবে সে ক্ষনের দৃশ্যটা চোখের সামনে থেকে যাচ্ছে না,উনি কি তখন মাহেরা আপুকে কিস করছিলেন,আর উনি যদি কিস করেও থাকেন তবে আমার কি,আমার কেনো খারাপ লাগছে কেনো কান্না পাচ্ছে,আমার এসব ভাবনার মাঝে উনি রুমে প্রবেশ করলেন আমি যটফট কান্না মুছে ফেললাম,উনার চোখকেও আজকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হলাম আমি,উনি রোজকার মতো আমার পাশে এসে বসলেন,তারপর ব্যাগ থেকে বেলী ফুলের মালা বের করে আমার চুলে লাগিয়ে দিলেন,তারপর ব্যাগ থেকে রেশমি চুড়ি বের করে আমায় পড়িয়ে দিলেন,উনি রোজই এমন কিছু না কিছু আমার জন্য নিয়ে আসেন,তারপর রোজকারের মতোই আমার কপালে অধর ছুঁইয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলেন।

‌___________

রাত প্রায় দুটো আমার ঘুমের কোনো খোঁজ নেই,উনি পাশেই শুয়ে আছেন আমার,আমি তাকিয়ে আছি একধ্যানে উনার ওই ঘুমন্ত নিষ্পাপ চেহারার দিকে,চোখ দিয়ে বইছে অজস্র জল,যা কোনো বাঁধাই মানছে না আজ,মনে উকি দিচ্ছে হাজারো প্রশ্ন,উনি কি তখন মাহেরা আপুকে কিস করছিলেন।উনি কি আমায় ধোকা দিচ্ছেন,উনি কি সত্যিই শুধু আমাকে ইউজ করবেন, উনি কি আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করছেন,কেনো উনি এমন করছেন আমার সাথে,আর আমারই বা উনার এমনটা করায় কেনো কষ্ট হচ্ছে,কেনো ভুলতে পারছি না আমি সেই ক্ষনটাকে,কেনো কষ্ট হচ্ছে আমার,কেনো কান্না পাচ্ছে এতো,এসব অতিরিক্ত ভাবনা ভাবতে ভাবতে উনার মুখপানে তাকানো অবস্থায়ই কখন ঘুমিয়ে পড়লাম আমি জানি না,পরদিন সকালে উনি অফিস চলে গেলেন,আমি একমনে বসে ছিলাম বাগানের দোলনায়,কিছুই ভালোলাগছে না আমার আজ,কালকের কথাটা এখনও মাথা থেকে যায় নি,মন খারাপ নিয়ে বসে ছিলাম তখনি দোলনায় কারো উপস্থিতি অনুভব করতে পারলাম,পাশে তাকাতেই দেখলাম মাহেরা আপু,উনি দোলনায় বসে সামনের দিকে একমনে তাকানো অবস্থাতেই বলতে লাগলেন।

জানো আরোহী শিশির এমনই, মুহুর্তেই যে কারো হৃদয় কেঁড়ে নেয়,তার জন্য পাগলামি করে ওকেও নিজের প্রেমে পাগল করে দেয়,আর যখন নিজের মন ভরে আসে তখন তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়,তখন সেই মানুষটার কি হাল হবে সেটা নিয়ে ও কখনো ভাবে না,জানো একসময় আমার আর ওর মধ্যেও অনেক ভালো সম্পর্ক ছিলো,ও আমাকে নিয়েও অনেক পাগলামি করতো,কিন্তু দেখো না আজ আমায় ভুলে গেছে তোমাকে পেয়ে,কালকে অন্য কেউ আসলে তোমায়ও ভুলে যাবে।দেখো আমি এসব কথা চাইলেও তোমায় না বলতে পারতাম,কিন্তু ভাবলাম একটা মেয়ে হিসেবে তোমাকে এটা জানানো আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে,যতোই হোক আমি একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের ক্ষতি কখনো চাইতে পারি না।আচ্ছা চলি আমার অনেক কাজ আছে।

কথাটা বলে মাহেরা চলে গেলো সেখান থেকে ঠোঁটের কোনে শয়তানি হাসি টানিয়ে।নুর পরে গেলো গভীর ভাবনায়।কথাগুলো শোনার পর নুরের মনের অশান্ত ভাব আরও বেড়ে গেলো।

‌___________

আমি মাহেরা আপুর রুমে যাচ্ছিলাম কি জানি একটা কাজে উনি মেসেজ করে ডাকলেন আমায়,কিন্তু উনার দরজা আজানো দেখে নক না করেই ঢুকে গেলাম আর তারপর যা দেখলাম তা দেখে আমি আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না,হাত পা কাঁপতে শুরু করলো আমার রাগে,কান্না আসলো প্রচুর।সেখানে আর না দাঁড়িয়ে জোরে জোরে কান্না করতে করতে চলে গেলাম নিজের রুমে।

রাতে খাবারের পর শিশিরকে মাহেরা একটা জরুরি কাজ বলে নিজের রুমে ডাকলো,নিজের রুমে নিয়ে শিশিরকে কি সব ওর আজগুবি বিজনেস প্লেন বলতে লাগলো,এক ফাঁকে নুরকেও মেসেজ করলো ওর রুমে আসার জন্য খুব জলদি,শিশির ওর আজগুবি বিজনেস প্লেন শুনতে আগ্রহী না হয়ে যেতে নিলে ও একটু ন্যাকামো করে কিছুতে হোঁচট খেয়ে পড়ার ভান করে শিশিরের উপর পড়ে গেলো হঠাৎ এমনটা করায় শিশিরও টাল সামলাতে পারলো না বিছানায় পড়ে গেলো, মাহেরা উপরে শিশির নিচে,দুজনই মুখোমুখি আর উক্ত সিনটা চোখ এড়ালো না নুরের,শিশির তৎক্ষনাৎ মাহেরাকে উপর থেকে সরালো আর নুরের পিছন ছুঁটে গেলো।নুর রুমে ঢুকে ফ্লোরে পড়ে অনেকটা জোড় গলায় কাঁদছে,শিশির পাগলপ্রায় হয়ে ওর সামনে এসে বসলো আর ওকে শান্ত করার চেষ্টা করতে শুরু করলো।

কহিনুর তুমি আমার কথা শুনে তুমি যেমনটা দেখেছো তেমন কিছুই নয় আমাদের মাঝে,আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি কহিনুর,আসলে ও এক্সিডেন্টলি আমার উপর পড়ে গেছিলো আর আমি টাল সামলাতে না পেরে বিছানায় পড়ে যাই,তুমি প্লিজ আমায় ভুলবোঝো না কহিনুর,প্লিজ কান্না বন্ধ কর।

কথাটা বলে শিশির নুরকে ধরতে চাইলে নুর ওকে ধাক্কা দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।

ডন্ট টাচ মি মি.এস আর কে।
কি মনে করেছেন আপনি আপনি যা বলবেন আমি সব মেনে নিবো আপনাকে বিশ্বাস করবো, আর আপনি আমার বিশ্বাসের ফায়দা উঠাবেন,অন্য মেয়েদের মতো আমাকেও ব্যাবহার করবেন,নিয়ে যাবেন নিজের বিছানায় কেঁড়ে নিবেন আমার সর্বস্ব আর ছুঁড়ে ফেলে দিবেন আমায় রাস্তায়।

কহিনুররররররররর,ঠাস।

শিশির ওর কথাগুলো সহ্য করতে না পেরে ওর গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো,কহিনুর আজ আর ধমলো না।

বেশ করেছেন,মারেন না থেমে গেলেন কেনো,কেনো থেকে গেলেন,মারেন আমায় আঘাত করেন,বন্ধ করে দেন আমার মুখ,তারপর ব্যবহার করেন আমায় নিজের ইচ্ছে মতো,যা ইচ্ছা তাই করেন,আমি তো আপনার খেলার পুতুল,খেলার জন্য এনেছেন,মন ভরলে তো ফেলে দিবেন,তবে খেলা করেন তারপর ফেলে দিন,আপনি তো তাই করতে জানেন তাই না,তবে শুনে রাখেন দ্যা গ্রেট মি.এস আর কে,আপনি যাই করেন আমি কখনোই আপনাকে ভালোবাসি নি আর বাসবোও না,আই হেইট ইউ মি.খান আই হেইট ইউ,আমি অন্যান্য আট দশটা মেয়ের মতো আপনার পিছন পরে থাকবো না কখনোই,আপনি জোর করে আমার শরীর পেয়েও যেতে পারেন তবে আমার মন কখনোই পাবেন না,এই মনে আপনাকে নিয়ে আছে শুধু ঘৃণা,শুধুই ঘৃণা যা কখনো ভালোবাসায় পরিণত হবে না কখনোই না,কখনোই না।আমার মনে আপনাকে নিয়ে যে সম্মানটা ছিলো তাও আজ শেষ হয়ে গেলো,একদম শেষ।

কথাটা বলে নুর ফ্লোরে লুটে পরে কান্না করতে লাগলো,শিশিরের কানে বাজতে শুরু করলো কথাগুলো বারবার,চোখ বেয়ে জল বইতে শুরু হলো ওর,আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না সেখানে হন হন করে বেড়িয়ে গেলো বাড়ির বাইরে।

রাত ২ টা বাজে উনার আসার কোনো খবরই নেই,তখন রাগের মাথায় একটু বেশিই বলে দিয়েছিলাম উনাকে যা এখন উপলব্ধি করতে পারছি,আমার এতো রাগ আর কখনো হয় নি,বরাবরই আমার রাগ কম,তবে তখন কেনো এতো রাগ হলো এতো রিয়েক্ট করলাম জানি না,উনার সাথে এতোদিন ধরে একা এক ঘরে থাকি উনি চাইলে তো আমার সাথে অনেক কিছু করতে পারতেন কিন্তু উনি কখনো আমার দিকে খারাপ নজর দেন নি,উনাকে দেখলে কখনো মনে হয় না যে উনি কাউকে ইউজ করতে পারেন,বড়লোকের একমাত্র ছেলে মা ছাড়া বড় হয়েছে একটু বিগড়ে যাওয়া স্বাভাবিক ছিলো কিন্তু তার মানে তো এটা নয় যে উনি খারাপ,আমার তখন এমনটা বলা একদম ঠিক হয় নি,কোথায় গেছেন কে জানে,রাত ৮ টার দিকে বেড়িয়েছিলেন এখনও কোনো খবর নেই,কি যে করি,এদিকে একবার ঝড় এসেও চলে গেছে, উনার কোনো খোঁজই নেই,কতো ফোন করছি ফোন বন্ধ আসছে,না জানি কোথায় আছেন কি করছেন,রাগের মাথায় যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে বসেন,আমার মনে ভয় আর সংশয় বাসা ভেদেছে অনেক,উনাকে নিয়ে অনেক দুঃচিন্তা হচ্ছে আমার।

‌________

রোদেলা এই কাঁপুনি দেওয়া শীতের মধ্যেও শাওয়ার ছেড়ে বসে আছে এক ধ্যায়ানে তাঁকিয়ে,চোখের নোনাজল ধুয়ে যাচ্ছে শাওয়ারের জলের সাথে সঙ্গ দিয়ে,চোখের সামনে ভেসে উঠছে একটু আগে হয়ে যাওয়া ঘটনা।রোদেলা আজকে আকাশের পছন্দের একটা ডিস রান্না করে নিয়ে গেছিলো হাসপাতালে কারন হলো আজকে আকাশ বাড়ি আসতে পারবে না হাসপাতালে এমারজেন্সি আছে ,আর তাই রোদেলা ভাবলো ওর জন্য ওর পছন্দের খাবার রান্না করে নিয়ে যাবে,রোদেলা রান্নাই শিখেছে একমাত্র আকাশের জন্য,খাবার নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে আকাশের কেবিনে ঢুকতেই রোদেলার চোখ আটকে গেলো সামনে চলা অমান্যকর দৃশ্যতে,রিয়া নিজের হাতে আকাশকে খাবার খাওয়াচ্ছিলো আর আকাশও মন ভরে খাচ্ছিলো,রোদেলা আর তা মেনে নিতে পারলো না,নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে হন হন করে ভিতরে গেলো আর খাবারের প্লেটটা উপড়ে ফেলে দিলো রিয়ার হাত থেকে আর রিয়ার গালে বসিয়ে দিলো চরম একটা।

তোর সাহস কি করে হলো আমার আকাশ ভাইয়াকে নিজের হাতে খাওয়ানোর।

তৎক্ষনাৎ রোদেলার গালে পড়লো আকাশের শক্ত হাতের থাপ্পড়,রোদেলা ছিঁটকে পড়লো ফ্লোরে।

তোর সাহস কি করে হলো রোদেলা রিয়ার উপর হাত উঠানোর,ও আমায় খাওয়াবে ওকে আমি বলেছি খাওয়াতে,তুই এতে নাক গলাবার কে,বেহায়া মেয়ে,তোর মতো বেয়াদব মেয়ের মুখে আমার নাম শুনেও আমার ঘৃণা করে,সারাদিন এতো এভোয়েড করার পরও আমার পিছন ছাড়িস না,সারাদিন কুকুরের মতো পড়ে থাকিস আমার পিছন,তুই কি বুঝতে পারিস না আমার তোকে পছন্দ না,ভালোবাসি না আমি তোকে,সহ্য করতে পারি না,আমি তোকে শুধু ঘৃণা করি,তোর মতো গায়ে পড়া মেয়েকে কেই বা ভালোবাসবে,কেই বা সহ্য করবে,আমার তো তোকে একটা নষ্টা মেয়ে ছাড়া কিছুই মনে হয় না,তুই একটা নষ্টা মেয়ে আর তোর মতো মেয়েকে আমি কখনোই ভালোবাসতে পারি না কখনোই না,দূর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে।

কথাগুলো শুনে হতভম্ব হয়ে যায় রোদেলা,ওর কানে যেনো কেউ গলন্ত সিসা ঢেলে দিয়েছেন,এর থেকে বড় অপমান ওর জন্য আর কি হতে পারে ওর ভালোবাসার মানুষ ওকে নষ্টা বললো,আর কিছুই বললো না রোদেলা সেখান থেকে ছুঁটে বেড়িয়ে এলো।

শাওয়ারের নিচে বসা অবস্থাতে রোদেলার সেই করুন চাহনি দেখে বুঝাই যাচ্ছে রোদেলা এবার অনেক বড় কোনো ডিসিশন নিতে চলেছে।

চলবে……

#শিশিরের কহিনুর
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ১৬

কলিংবেলের শব্দে ছুটে গেলাম বাইরের দিকে,মনে হয় উনি এসেছেন,দরজা খুলে তাই দেখলাম,প্রাণে প্রাণ এলো আমার কিন্তু উনাকে দেখে মনটা খচ করে উঠলো আমার,উনার হাত পা শরীরে ক্ষতের চিহ্ন,উনার দুজন গার্ড উনাকে ধরে নিয়ে এসেছে,উনার দু হাত দুজনের ঘাড়ের দুদিকে,উনি ভালো হয়ে দাঁড়াতেও পারছেন না,অনেক ড্রিংক করে এসেছেন,গার্ডগুলোকে বার বার বলছেন উনাকে ছেড়ে দিতে উনি একাই সব করতে পারবেন,ওদের যথারীতি মারার চেষ্টায় আছেন,অবশেষে ওদের ছাড়িয়ে একা হাঁটতে গিয়ে পড়ে যাবেন তখনি আমি উনাকে ধরে নেই,উনার কাপড় চোপড় পুরো ভিজা,হয়তো ঝড়ের সময় বাইরেই ছিলেন,আমি উনাকে ধরে রুমে নিয়ে বেডে শুয়ালাম,তারপর দুজন গার্ড ডেকে আনলাম উনার কাপড় চেঞ্জ করানোর জন্য,ওরা উনার কাপড় চেঞ্জ করে চলে গেলো,আমি উনার পাশে গিয়ে উনার মাথায় হাত বুলিয়ে উনার গায়ে চাদর টেনে দিতে লাগলাম,তখনি আমার হাতটা ধরে উঠে বসলেন আমাকেও বসালেন নিজের পাশে,তারপর আমায় জড়িয়ে ধরে নেশালো কন্ঠে বলতে লাগলেন।

কহিনুর তুমি আমায় ভুল বুঝো না লক্ষিটি,বিশ্বাস করো আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি,শুধু তোমায় ভালোবাসি,আমি শুধুই তোমার,মানুষ হাজারজনকে একসাথে মনে জায়গা দিতে পারে না,মনে জায়গা একজনেরই হয়ে থাকে আর আমার মনে শুধু তোমারই বসবাস কহিনুর,আমি তোমায় ভালোবাসি কহিনুর,অনেক ভালোবাসি,তুমি আমায় ছেড়ে যেও না প্লিজ,আমি তোমায় ছাড়া বাঁচতে পারবো কহিনুর,তুমি যে আমার নিশ্বাসের সাথে মিশে গেছো ।

কথাগুলো বলার পর উনি কেমন শান্ত হয়ে পড়লেন, আমি বুঝতে পারলাম উনি ঘুমিয়ে পড়েছেন,উনাকে আমি আবারও বালিশে শোয়ালাম,তারপর উনার শরীরে চাদর টেনে দিলাম,শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন সাথে রক্ত ফুটে আছে,সেগুলোতে ক্লিন করে ওষুধ লাগাতে লাগলাম আমি,কেনো যেনো উনার ক্ষতগুলো দেখে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে,উনি এই নেশালো ঘুমের মধ্যেও বিড়বিড় করছেন,কহিনুর আমি শুধুই তোমার আমাকে ছেড়ে যেও না কহিনুর,আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না,মিথ্যে কথা তো লোক স্বজ্ঞানে বলতেই পারে,কিন্তু নেশার ঘোরে লোক যা বলে তা তো সত্যই হয়ে থাকে,তবে উনার বলা কথাগুলো আমি মিথ্যে মানবো কি করে,এমনও তো হতে পারে উনি আমায় সত্যিই ভালোবাসেন,হয়তোবা উনার জীবনে আমি আসার আগে অনেকজন ছিলো,কিন্তু আমি আসার পর তো আমি উনাকে কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতেও দেখি নি,তবে কি উনি সত্যিই আমাকে ভালোবেসে ফেলেছেন,আর মাহেরা আপুর বলা কথাগুলো কি মিথ্যে ছিলো,হতেও তো পারে মাহেরা আপু মিথ্যে বলছেন,আমিও কেমন করে সো কোল্ড হিন্দি সিরিয়ালের নাইকাগুলোর মতো কানকথায় কান দিলাম,এমনও তো হতে পারে তখন উনি মাহেরা আপুকে কিস করেন নি হয়তো মাহেরা আপুর চোখে কিছু পড়ে গিয়েছিলো আর উনি তা ক্লিন করছিলেন,আরে উনি কখনো কিছুই লোকিয়ে করেন না,যা করেন সামনাসামনি করেন কাউকেই ভয় পান না,তবে যদি উনার কারো সাথে রিলেশন করার হতো সবার সামনে আমার সামনে বুক ফুলিয়ে করতেন এভাবে লুকোচুরি করতেন না,এর মানে মাহেরা আপুই এসব সাজিয়েছিলো,এমন যদি না হতো তবে মাহেরা আপু তখন উনার সাথে থাকাকালীন আমাকে মেসেজ করে ডাকলেন কেনো?হুম আমি তো এতোও বোকা না তবে এটা কি করে বুঝলাম না যে মেয়ে প্রথম দিন আমায় এতো অপমান করলো সে মেয়ে হঠাৎ করে আমার এতো আপনজন হলো কি করে,শুধু শুধু ওই শাঁকচুন্নির কথায় এসে আমি উনাকে কষ্ট দিলাম,না জানি কি করেছেন নিজের সাথে,কিভাবে আঘাতের চিহ্ন পড়ে আছে শরীরে দেখে কতো খারাপ লাগছে।

তখন শিশির ঘর থেকে হন হন করে বেড়িয়ে যায়, তারপর সোজা পাবে যায়,গিয়ে একের পর এক ড্রিংক করতে শুরু করে,বার বার নুরের বলা কথাগুলো ওর কানে বাজছিলো,সহ্য করতে না পেরে একের পর এক ড্রিংক করছিলো,তখনি কয়েকটা মেয়ে ওর ধার ঘেষতে চাইলো,ও ওদের পাত্তা দিলো না বরং পিছন থেকে রিভালভার বের করে মেয়েগুলোর পায়ের দিকে স্যুট করতে শুরু করলো,মুহুর্তেই পাবটা খালি হয়ে গেলো,শিশির চেঁচিয়ে বলতে লাগলো আমি শুধুই কহিনুরের, আমার উপর শুধুই ওর অধিকার আছে শুধুই ওর,ওকে আমি কোথাও যেতে দেবো না আমায় ছেড়ে,কথাটা বলে ও সেখানের সবকিছু বাঙতে শুরু করলো,নিজেকে ইচ্ছেমতো আঘাত করলো,নুরের উপর জমে থাকা রাগ নিজের উপর বার করলো,তারপর সে স্থানকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে দুটি মদ্যের বোতল নিয়ে বেড়িয়ে গেলো,তখন ঝড় বইছিলো আর সেই ঝরের মধ্যে ভিজে ভিজে রাস্তায় হেঁটে হেঁটে মদ্য পান করছিলো আর বিড়বিড় করে বলছিলো কহিনুর আমি শুধুই তোমার,কেনো তুমি আমায় বুঝো না,তোমার বলা কথাগুলো যে আমার হৃদয়ে লেগেছে,পারছি না তার ব্যাথা মেনে নিতে,পারছি না কহিনুর।তারপর চলতে চলতে একসময় রাস্তার এক পাশে পড়ে গেলো মাতাল হয়ে,ওর লোক ওকে খোঁজতে গিয়ে রাস্তার পাশে পড়ন্ত অবস্থায় পেয়ে নিয়ে আসে ওকে।

আমি বসে আছি উনার মাথার পাশে,জল পট্টি দিচ্ছি উনার মাথায়,অনেক জ্বর এসেছে উনার,বার বার কাঁপুনি দিয়ে উঠছেন,কেউ বাড়িতে নেই আজ সবার হাসপাতালে আজকে এমারজেন্সি পড়েছে শুধু মিষ্টি মা ছিলেন,উনাকে ডেকে আনলাম আমি, উনি এসে উনাকে চেক আপ করে উনার জন্য ওষুধ দিয়ে গেছেন আর উনার খেয়াল রাখতে বলে গেলেন,উনিও এখানে থাকতে চাইলেন কিন্তু আমি বললাম আমি উনার খেয়াল রাখতে পারবো উনি কষ্ট না করতে,তাও উনি কিছু সময় থেকে গেলেন,উনি ঘুমের মধ্যেই বিড়বিড় করছেন বারে বারে, কহিনুর ছেড়ে যেও না কহিনুর, মাঝে মাঝে মা, মা বলে বলে ডাকছেন,আমার হাত ধরে আছেন শক্ত করে,আমিও কেনো যেনো উনাকে নিয়ে অনেক দুঃচিন্তায় পড়ে গেছি,বার বার আল্লাহর কাছে দোয়া করছি উনাকে সুস্থ করে দেওয়ার জন্য,উনার মুখ পানে তাকাতে তাকাতে কখন ঘুমিয়েছি কে জানে।

‌__________

সকাল থেকেই আমার সাথে ভালো করে কথা বলা তো দূর বজ্জাতটা ভালো করে তাকাচ্ছেই না আমার দিকে,আমার এতে অনেক খারাপ লাগছে জানি না কেনো আর এই মুহুর্তে জানতেও চাই না।বজ্জাতটা ঘুম থেকে উঠেই রেডি হতে শুরু করেছে অফিসের জন্য।

এই যে কোথায় যাচ্ছেন?

চোখে দেখতে পাও না অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি।(আমার দিকে না তাকিয়েই এটিটিউড নিয়ে বললো ব্যাঙটা)

চোখে আমি ভালোই দেখি,কিন্তু আপনি এই অবস্থা নিয়ে অফিস যেতে পারবেন না।

আমার অবস্থা ভালোই আছে আপনাকে আমায় নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

আমি আবার তুমি থেকে আপনি হলাম কবে,ব্যাঙটা এমন করছে কেনো,জানতাম শুধু রাগ করতে জানে কিন্তু অভিমানও করে কে জানতো,ব্যাঙটা কতো সুন্দর করে যাওয়ার জন্য রওয়ানা দিলো,আমিও ঠায় সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম উনার।

কি হয়েছে পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?

আমি আপনাকে যেতে দিবো না?

দেখেন আমার অফিসে যেতে দেড়ি হচ্ছে।

দেড়ি কিসের,আমি বলি দেড়ি কিসের,আজকে অফিসে আপনাকে যেতেই দেওয়া হবে না তো আবার দেড়ি কিসের।আপনি যাবেন না এটাই ফাইনাল।

আমি তো যাবোই।

কথাটা বলে ব্যাঙটা আমায় আলতো ধাক্কা দিয়ে সরালে আমি ইচ্ছে করেই একটু ড্রামা করলাম,আমি এখন ভালোয় জানি এর রোগটা যেমন আমি ওষুধও আমি তাই এর ফায়দা উঠালাম,ঠং করে পড়ে গেলাম ফ্লোরে আর চিৎকার দিলাম।

মা গো মরে গেলাম?যাক ডোজ টা কাজে দিলো ব্যাঙটা পাগলপ্রায় হয়ে আমার পাশে আসলো।

কহিনুর কি হয়েছে তোমার,কোথায় লেগেছে,তোমার কিছু হয় নি তো কহিনুর,চলো আমি দেখছি তোমার কি হয়েছে।

তারপর ব্যাঙটা আমায় কোলে করে বেডে নিয়ে আসলো।আমার হাত পা দেখতে শুরু করলো কিছু হয় নিতো আবার।

এই যে মি.আশিক আমি একদম ঠিক আছি, আমার কিছুই হয় নি।

তবে আপনি ওসব ড্রামা করছিলেন,এটা ঠিক নয়,আমি এবার চলে যাবো।

এবার আমার রাগ উঠে গেলো,তাই সিলেটি ভাষায় গালি দিতে শুরু করলাম।

উঙ্গা কুত্তা আইজকে তোর অফিছো যাওয়া ছাড়াই লাইমু,তাফর মাজে তাইন আবার অফিস যাইতা,কি ফাওয়ার তান,আমারে আবার আফনে কইন তাইন,তান নানি লাগি আরকি আমি।

কি বললে তুমি?আবালটা কিছু না বুঝে আবালের লুকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো ভ্রযোগল কুঁচকে।

মানে আর বুঝতে হবে না,চুপচাপ এখানে বসেন,নইলে কপালে দুঃখ আছে,এমন মার দিবো আপনাকে হয়তো কখনো আপনার মাও আপনাকে মারে নি এমন।চুপচাপ বসেন আমি আসছি।

কথাটা বলে আর উনার দিকে তাকালাম না সোজা চলে গেলাম নিচে।

শিশির অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

কিছুক্ষণ পর নুর ওর জন্য খিচুড়ি নিয়ে এলো।

হুম নিন হা করেন।

আমি খিচুড়ি খাই না,আর আমার খিদেও নেই।

চুপচাপ হা করেন নইলে এই খিচুড়িটা মাথায় ঢালবো এই বলে দিলাম।

শিশির চুপচাপ হা করলো আর নুর ওকে খাইয়ে দিলো।তারপর ওষুধও খাওয়ালো,শিশির প্রথমে খেতে চাইলো না পরে নুর জোর করেই খাওয়ালো।

হয়েছে এবার রেস্ট করেন অফিস যাওয়া হবে না।

আমি শুবো না আমার ঘুম আসছে না।

আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে ঘুম আসবে।

তুমি দিবে(আশ্চর্য হয়ে)

কেনো দিবো না।চলেন আসেন আমার কোলে।

আমি এমন কেনো করছি জানি না,কিন্তু উনার খেয়াল রাখতে ভালোই লাগছে আমার,আমি উনার মাথার নিচ থেকে বালিশ সরিয়ে উনার মাথা নিজের কোলে নিয়ে উনার মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম।উনি আমায় বলতে লাগলেন।

মায়ের পর এই প্রথম কেউ আমার উপর অধিকার খাটাতে সমর্থ্য হলো,সত্যিই নুর তোমার মধ্যে আলাদা এক টা জাদু আছে,যা বার বার আমাকে তোমার পানে টানে,দেখো না আমি চেয়েও তোমার উপর একটুখানি অভিমান করে থাকতে পারলাম না,কখনো কারো কথা আমি মানি নি কিন্তু তোমার কথা কেনো যেনো ফেলতেও পারি না,কখনো ফেলে যেও না আমায় কহিনুর, আমি পাগল হয়ে যাবো তুমি বিহীন।আমি একটু সময় চুম থেকে বললাম।

কাল রাতের জন্য সরি মি.খান।আমি একটু বেশিই বলে ফেলেছিলাম।

ইটস ওকে মাই লাভ,তোমার অধিকার আছে আমাকে যা তা বলার,কথাটা বলে উনি চট করে উঠে আমার গালে উনার ঠোঁটের আলতো পরশ দিয়ে আবার আমার কোলে শুয়ে পড়লেন আমাকে জড়িয়ে ধরে, আমি স্ট্যাচু হয়ে রইলাম কতো সময়ের জন্য উনার এহেন কাণ্ডে।

উনি ঘুমিয়ে গেলেন খনিকে,আমি উনাকে ঘুম পাড়িয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসছিলাম তখনি মাহেরা আপুর রুমের দিকে নজর গেলো,দরজা আজানো ছিলো,ভিতর থেকে ন্যাকা ন্যাকা কয়েকটা কথা ভেসে আসছিলো কানে তাই রুমের দিকে উঁকি দিলাম,আমার আবার মানুষের রুমে উকি দিয়ে উনাদের কর্মকান্ড দেখার বড় শখ,আমি দেখলাম মাহেরা ম্যাম কি একটা নোংরা টাইপের ড্রেস বের করেছে আলমারি থেকে আর বলছে।

ইয়েস,এই ড্রেসে আমায় একদম এটম বোমা দেখা যাবে, এসআরকে চোখ সরাতে পারবে না আমার থেকে,ওই কহিনুরকে দু মিনিটে ছুঁড়ে ফেলবে।

কথাটা শুনে আগুন ধরে গেলো আমার মাথায়,আমাকে সরানোর যুক্তি চলছে,কি না কি শয়তানি করে কালকে কতো বড় ক্যালেঙ্কারি করলো বজ্জাতনিটা আজ দেখাবো মজা।বজ্জাতনিটা ওয়াসরুমে গেলো হয়তো শাওয়ার নিতে তখনি সুযোগ বুঝে আমি আমার কাজ করে শয়তানি হাসি দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম,রুমের বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলাম,হঠাৎ শুনলাম বজ্জাতনিটার চিৎকার, আবারও রুমের মধ্যে উকি দিলাম,বজ্জাতনিটা নিজের শরীর চুলকাতে চুলকাতে বেহাল হয়ে গেছে,নোংরা ড্রেসটা চুলকাতে চুলকাতে ছিঁড়ে ছাঁড়ে দিয়েছে,মা গো বাবাগো বলে চুলকাচ্ছে, সারা শরীর লাল হয়ে গেছে শাঁকচুন্নিটার,আমি তো হাসতে হাসতে নেই,বেশ হয়েছে এসেছিলো আমার সাথে পাঙ্গা নিতে।

হাসতে হাসতে গেলাম রোদেলার রুমের দিকে উদ্দেশ্য ওর সাথে আড্ডা দেওয়া,ওর রুমের দরজা আজানো দেখে ধাক্কা দিলাম,কিন্তু ভিতরের দৃশ্যটা দেখে রোদেলা বলে চিৎকার করে উঠলাম, যাতে হয়তো পুরো বাড়িটাই কেঁপে উঠেছে।

চলবে.………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here