শিশিরের কহিনুর,২২,২৩

0
807

#শিশিরের কহিনুর,২২,২৩
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ২২

শিশির তেড়ে গিয়ে রিভালভারটা উঠালো আর আবারও তাক করলো দাদিজানের দিকে,আকাশ অনিল ওকে আটকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না,ওরা বলিষ্ঠ হলেও শিশির ওদের থেকেও বলিষ্ঠ, শিশিরকে আটকাতে এসে ওদেরও মার ক্ষেতে হচ্ছে শিশিরের হাতে।

উনি যে পরিমান ক্ষেপে আছেন আজ মনে হয় এরা সবার লাশ না দেখে শান্ত হবেন না,উনাকে যে এই মুহুর্তে আমি ছাড়া আর কেউ শান্ত করতে পারবে না ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম আমি,আমি ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলাম উনাকে আর সবাইকে বললাম।

আপনারা প্লিজ এখান থেকে চলে যান,রোদেলা তুমি সবাইকে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যাও আর হ্যাঁ বেড়িয়ে গিয়ে রুমটা পিছন থেকে লক করে দিও।

রোদেলা তাই করলো,ওই অজ্ঞাত লোকটাকেও নিয়ে গেলেন আকাশ আর অনিল ভাইয়া,এদিকে উনাকে কোনো মতে আটকানো যাচ্ছে না,দরজায় জোরে জোরে লাথি মারছেন আর চিৎকার করে করে বলছেন,তোরা দরজা খোল আজ আমি একেকটার লাশ দেখবো,এমনভাবে দরজায় লাথি মারছেন যে যখন তখন দরজা ভেঙে চৌঁচির হবে আর তারপর ঘটবে অঘটন যা আমি একদম চাই না,কতো কিছু বলছি আমি উনাকে আটকানোর জন্য, উনার কানে যেনো আমার কোনো কথাই যাচ্ছে না, উনাকে আমি কি করে আটকাবো,কোনো কিছুই মাথায় আসছে না,শুধু এটা জানি এই সাইক্লোনটাকে আমিই থামাতে পারবো,তাই আর এদিক ওদিক না ভেবে নিজের পাজোড়া উঁচু করে এক হাত দিয়ে উনার কাঁদে ধরলাম আর আরেক হাতে উনার মাথার পিছনের চুল আঁকড়ে ধরলাম আর উনার অধরে নিজের অধর জমিয়ে দিলাম,মিনিট খানিক এমনই ছিলাম তারপর উনাকে ছেঁড়ে দিলাম,এখন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি আমি,লজ্জায় উনার দিকে তাকাতেও পারছি না,উনাকে শান্ত করার জন্য এটা আমি কি করে বসলাম,যাই হোক উপায়টা কাজে দিয়েছে উনি শান্ত হয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন অনুভব করতে পারছি,হাতের রিভালভারটা আমার অধরের ছোঁয়া পাওয়ার সাথে সাথেই ছেঁড়ে দিয়েছিলেন তাও অনুভব করতে পেরেছিলাম তখন,এবার উনি আমায় জড়িয়ে ধরে শান্ত স্বরেই বলতে লাগলেন।

আমরা এখানে আর থাকবো না কহিনুর আমরা চলে যাবো কিন্তু যারা তোমার সাথে এমন করেছে কহিনুর আমি তাদের কাউকেই ছাড়বো না,সবাইকে শেষ করে ফেলবো আমি,সবাইকেই শেষ করে ফেলবো।

আমি এবার লজ্জা শরম একসাইড করে উনাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উনার হাত ধরে এনে উনাকে বিছানায় বসালাম তারপর উনার দুই গালে নিজের দুই হাত রেখে উনাকে শান্ত করার সুবিধার্তে বলতে লাগলাম।

মি.খান আমি জানি না এসব কি করে হয়ে গেলো,কেউ এসব কেন করিয়েছে বা কে করিয়েছে আর আমি তা জানতেও চাই না,যা হবার তা হয়ে গেছে মি.খান এর জন্য তো আপনি কারো খুন করতে পারেন না তাও নিজের পরিবারের সদস্যদের।

যারা আমার কহিনুরকে আমার থেকে আলাদা করতে চায় তারা আর যাই হোক আমার পরিবার হতে পারে না,আমি ছাড়বো না কাউকেই,আমরা চলে যাবো আমাদের বাড়ি তবে এর আগে সবাইকে নিজেদের কর্মের ফল দিয়ে যাবো।

ওকে আমায় আপনি যেখানেই নিয়ে যেতে চাইবেন আমি সেখানেই যাবো কিন্তু আপনাকে আমার দিব্যি আপনি আজকের এই অবস্থার জন্য আপনার পরিবারের কাউকেই কিছু করবেন না।

আমার মাথায় উনার হাত দিয়ে উনাকে দিব্যি দিয়ে দিলাম,আমি জানি উনি এসব কসম মানেন না তবে আমায় নিয়ে কোনো চান্স নিবেন না তাও আমি জানি,এমনটা করায় উনি অনেক রেগে গেলেন আবার, আমার কসম দেওয়ায় উনি এখন কাউকেই কিছু করতে পারবেন না তাই উঠে গিয়ে ওদের সবার রাগ ঘরের জিনিসপত্রের উপর বার করছেন আমি শুধু বসে বসে দেখছি,ভেঙে টেঙে আমার এতো সুন্দর সাজানো রুমটাকে ধ্বংস্তুপ বানিয়ে আমারই পাশে এসে বসলো ব্যাঙটা,রাগে এখনও যথারীতি ফুস ফুস করছে হিংস্র বাঘের মতো,জিনিসপত্র ভাঙতে গিয়ে নিজেও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, আমি লক্ষি বউয়ের মতো বিছানা থেকে নেমে গিয়ে ফাস্ট এইড বক্স এনে আলতো হাতে উনার আঘাতগুলোতে ওষুধ লাগাতে লাগলাম,একপর্যায়ে উনি আবারও আমায় জড়িয়ে ধরলেন আর আবারও বলতে লাগলেন।

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি কহিনুর,কোনো রাগ অভিমান, অবিশ্বাস কোনো কিছুকেই কখনো আমি আমাদের সম্পর্কের মধ্যে আসতে দিবো না,তুমি যে আমার আত্নার সাথে মিশে আছো কহিনুর আর আত্মার সাথে মানুষের সম্পর্ক তখনি ভাঙে যখন মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে,আর তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে যে আমার মৃত্যুও নিশ্চিত হবে কহিনুর।আই লাভ ইউ কহিনুর,ছেড়ে যেও না কখনো আমায়।

উনি এসব বলে আমায় বুকে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়লেন,নিজের বুকের সাথে আঁকড়ে ধরে আছেন আমায়,আমারও মনে কেনো যেনো উনাকে এই মুহুর্তে ছাড়ানোর কোনো আগ্রহ নেই,স্পষ্ট আমার কানে ভেসে আসছে উনার হৃৎস্পন্দন,জানিনা কেনো তবে উনার সেই হৃৎস্পন্দন অনুভব করতে ভালোই লাগছে আমার,এদিকে মাথায় আমার চড়ে বসেছে অসীম ভাবনা,কেনো আমি তখন উনাকে আটকাতে এমনটা করে বসলাম,আমার কথা না হয় এই মুহুর্তে ছাড়লাম উনি যে আমাকে এতোটা বিশ্বাস করেন আমার ভাবতেও অবিশ্বাস্য লাগছে, এমন একটা মানুষ যে কিনা একটা বস্তুকেও আমার পাশে সহ্য করতে চায় না সে আজ পুরো একটা পুরুষ আমার পাশে শায়িত অবস্থায় পেয়েও আমাকে অবিশ্বাস করলো না,এমনকি আমার জন্য আজ নিজের পরিবারকেই শেষ করতে চলেছিলো,এমনকি লোকটার হিংস্রতাও আমার কাছেইল জব্দ,কেউ কি কাউকে কখনো এতোটাও ভালোবাসতে পারে,আমি লোকটাকে অপছন্দ করি কারন লোকটা হিংস্র,কিন্তু লোকটার এমন হওয়ার পিছনে যথেষ্ট কারনও তো আছে,আর যেভাবেই হোক এটাই সত্য লোকটা আমায় অনেক ভালোবাসে,যে ভালোবাসাতে কোনো খাদ নেই,নেই কোনো অপবিত্রতা,এমন ভালোবাসা যে সবাই বাসতে পারে না,আর সবার কপালে থাকেও না,আমি কি পারি না লোকটার এই অসীম ভালোবাসার বদলে উনাকে খনিক ভালোবাসা দিতে।

‌______________

মাহেরা আর অজ্ঞাত লোকটাকে নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে,এদিকে কারোই বিশ্বাস হচ্ছে না নুর এমনটা করবে,নিশ্চিত কেউ এমনটা করিয়েছে কিন্তু কে?সবাই শিশিরের আজকের অবস্থায় হতবাক,শিশিরের এমন ক্ষেপাটা ওদের কাছে স্বাভাবিক ছিলো কিন্তু এভাবে নুরের জন্য শিশির নিজের পরিবারকে মারতে আসবে কেউ তা ভাবেও নি,আর যাই হোক শিশির নিজের দাদিজানকে অনেক মান্য করতো অনেক ভালোই বাসতো কিন্তু আজকে উনাকেও মারতে আসছিলো ভাবতেই অবাক হচ্ছে সবাই,এখান থেকেই সবাই আন্দাজ করছে শিশিরের নুরের প্রতি অসীম সেই ভালোবাসা, এদিকে দাদিজান হয়রান,উনার করা প্লেন যে এভাবে ভেস্তে যাবে কে জানতো,আসলে উনিই নুরের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলেন,আর অজ্ঞাত লোকটা উনার ভাড়া করা ছিলো।শায়েলা খানের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে টপটপ করে যে শিশির উনাকে একসময় কতোটা মান্য করতো,কতো সম্মান করতো সে শিশির আজকে উনাকে প্রাণে মারতে এসেছিলো,এমনকি উনাকে তুই বলেও সম্বোধন করলো,এসব ভাবনাতে চোখের জল থামার নামই নিচ্ছে না উনার।

সকাল সকাল উনি আমাদের কাপড় চোপড় প্যাক করে রওয়ানা দিলেন নিচের দিকে উদ্দেশ্য উনার ভুতিয়া বাংলা,আমিও উনাকে থামাচ্ছি না ভাবছি এখন চলে যাই তারপর না হয় দু-একদিন পরে যখন উনার মাথা ঠান্ডা হবে তখন উনাকে বলে কয়ে মিনতি করে আবারও নিয়ে আসবো এখানে,এখন উনি এখানে থাকলে অঘটনের সম্ভাবনাও থাকবে তাই এখন উনার যাওয়াই ভালো , উনি আমার হাত ধরে নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন অন্য হাতে কিছু পেপারস জানি না কিসের আমাকে দিয়ে ওগুলাতে সাইন করিয়েছেন একটু আগে আমিও কিছু জিজ্ঞেস না করেই সাইন করেছি, উনাকে অনেক বিশ্বাস করি তাছাড়া ভয়ও পাই তাই হয়তো,নিচে সবাই বসে আছেন উনি আমাকে নিয়ে গিয়ে সবার সামনে দাঁড়ালেন আর উনার বাবার হাতে সেই পেপারস দিলেন,উনার বাবা সোজা প্রশ্ন করলেন।

এসব কিসের পেপারস শিশির?

আজ থেকে আমার আর আমার স্ত্রীর আপনাদের কারো সাথেই কোনো সম্পর্ক নেই এটা তারই লিখিত দলিল,আজ থেকে আপনারা কেউই আমার বা আমার স্ত্রীর সাথে কোনো রকম সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করলে আপনাদের বিরুদ্ধে আইনত পদক্ষেপ নেওয়া হবে,আমি আর আমার স্ত্রী সাইন করে দিয়েছি আশা করি পেপারসগুলো ভালো করে পড়ে আপনি এবং আপনার মা সাইন করেন দিবেন মি.আশরাফ রায়হান খান।আমার লোক এসে পরবর্তীতে পেপারসগুলো নিয়ে যাবে।

কথাটা বলে উনি আমায় ওখান থেকে নিয়ে আসতে শুরু করলেন আমি হতবাক হয়ে আছি উনার এমনটা করায়,আমি কখনো ভাবি নি উনি এমন কিছু করে বসবেন,আমার জন্য উনাদের সম্পর্ক এভাবে ভেঙে যাক আমি তা কখনোই চাই না।

‌______________

এদিকে রোদেলা কান্না করছিলো নিজের রুমে বসে,অনিল এমনিতেই রোদেলার রুমে যাচ্ছিলো তখন রোদেলার সাথে কিছু কথা বলতে তখনি রুমে এসে দেখলো রোদেলা কান্না করছে,অনিলকে দেখতেই রোদেলা ছুটে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।

কি হয়েছে রোদেলা কাঁদছিস কেনো?

অনিল ভাইয়া, ভাইয়া যে ভাবিকে নিয়ে চলে গেলো,ভাইয়া যে আর ফিরবে না অনিল ভাইয়া,ভাইয়ার আর ভাবির সাথে যে আমাদের সম্পর্ক ভেঙে গেলো।

আরে পাগলি ও বললেই সম্পর্ক ভেঙে যাবে না কি,এখন রেগে আছে পরিস্থিতিটা একটু শান্ত হতে দে আমরা সবাই গিয়ে আবার ওদের নিয়ে আসবো কেমন।

তুমি সত্যি বলছো ভাইয়া।

তিন সত্যি।

কথাটা বলে অনিল রোদেলার চোখের পানি মুছে দিলো,তখন রোদেলা খেয়াল করলো অনিলের গালে হাতে আঘাতের চিহ্ন, রাতে শিশিরের সাথে ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে এসব হয়েছে বুঝতে পারলো রোদেলা।

আরে ভাইয়া তোমার তো দেখি কতো আঘাত লেগে আছে,চলো বেডে বসো আমি দেখছি।

আরে ওসব ঠিক আছে তুই চিন্তা করিস না রোদেলা।

তুমি ওতো কথা বলো না তো বসো আমি দেখছি।

কথাটা বলে রোদেলা ফাস্ট এইড বক্স এনে অনিলের আঘাতগুলোতে ওষুধ লাগাতে লাগলো এদিকে দরজার ফাঁক দিয়ে এতোক্ষণ চলা সকল দৃশ্য চোখে পড়লো আকাশের,মুহুর্তেই গা জ্বলে উঠলো ওর,পারছে না নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে,রাগ উপছে পড়ছে ওর,চলে গেলো হন হন করে নিজের রুমে তারপর অতিরিক্ত রাগে সেখানের একটা ছোট্ট ফুলদানি নিয়ে ভেঙে দিলো নিজের হাতে যাতে সাথে সাথে ওর হাত কেটে রক্ত গড়াতে শুরু হলো,আকাশ এসব তোয়াক্কাও করছে না বরং রাগে ফুসফুস করতে করতে বলছে।

কান্না পাচ্ছে বলে কি অনিলকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে হবে?আমি কি মরে গেছি?ওই অনিলের আঘাত চোখে পড়লো আর আমার আঘাত চোখে পড়লো না আমিও তো আঘাত পেয়েছি,আমার জন্য কি কোনো দরদ হয় না।

আকাশ কথাগুলো বলে আবারও অতিরিক্ত রাগে দেয়ালে সজোরে কয়েকটা পাঞ্চ মারে যাতে ওর হাত ফেঁটে রক্ত ঝড়তে শুরু হয়।

একটু পরে হাসপাতালে যাচ্ছিলো অনিল,ওর হঠাৎ একটা এমারজেন্সি পড়ে গেছে তাই যাচ্ছিলো তাড়াহুড়ো করে তখনি চোখ পড়লো বাগানের দোলনার দিকে,দেখলো অভ্রের বুকে মুখ গুজে আছে ভোর,ভোরের অবস্থা দেখে তখন অনিল বুঝতে পারলো হয়তো ভোর কান্না করছে,আর সাহারা হিসেবে ভোর বেছে নিয়েছে অভ্রের বুক,সেই বুকখানা যদি অনিলের হতো তবে কি খুব বড় অন্যায় হয়ে যেতো,দীর্ঘ এই নিরাশায় খনিকেই ব্যাথীত হলো অনিলের অসহায় মন,একটুতেই মনে পড়লো দুই বছর আগের ঘটনা চোখের কোনে জল বাসা বাঁধলো খনিকে,সে জল আর বইতে দিলো না অনিল নিজেকে যথেষ্ট শক্ত করে স্থান ত্যাগ করলো।

চলবে…….

#শিশিরের কহিনুর
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ২৩

শায়েলা খান আর আশরাফ খান বসে আছেন পাশাপাশি শায়েলা খানের রুমে,উনারা শিশিরের ওই পেপারস গুলোতে সাইন করেন নি,এভাবে উনারা কি করে নিজেদের রক্তের বন্ধন ভেঙে দিতে চাইবেন, শায়েলা খান তো কেঁদে নেয়ে একাকার।

না আমি আমার দাদুভাইকে এভাবে হাতছাড়া করতে পারি না,আমি ওকে ফিরিয়ে আনবোই।এখন সেটা যে করেই হোক।

আপনাকে কিছু করতে হবে না মা,এবার যা করার আমিই করবো,যতো নষ্টের গোড়া ওই মেয়েটি এবার যে এই গোড়া উপড়ে ফেলতেই হবে।

এখন রাত প্রায় ৮ টা, উনার সাথে একটা সপিংমলে এসেছি উনি নিয়ে এসেছেন,ওখান থেকে চলে আসার পর থেকে আমার মনটা খারাপ ছিলো আমি ওখানেই হেপি ছিলাম সবার সাথে,উনি আমার মুড হেপি করার জন্য আমার পরিবারকে এনে দিতে চাইলেন আমি ডিরেক্টর না করলাম,আমি শ্বশুরবাড়ির লোকের কমতি নিজের বাড়ির লোকদের দিয়ে কি করে করবো আপনারাই বলেন,শুধু শুধু আমার পরিবারের লোকজনকে প্যারা দেওয়া,তাই অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে মত পাল্টালাম ব্যাঙটার, এখন মন ভালো করার জন্য এদিক ওদিক নিয়ে ঘুরছে, অবশ্য ঘোরাঘোরি করে মনটা অনেক ভালোই হয়েছে আমার,শপিং করেছি অনেক,উনাকে আমি একটা শার্ট সিলেক্ট করে দিয়ে বললাম সেটা পরে আমার সামনে আসতে উনি সেটা পরতে ট্রায়ালরুমে গেলেন,আমি বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম,কয়েকজন গার্ড মলের বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে,হঠাৎ মলের স্বচ্ছ আয়না দিয়ে বাহিরে নজর গেলো আমার,দেখতে পেলাম একটি মহিলা ভিক্ষে করছে আর সেই মহিলাটি আর কেউ নয় সেই দিনের সেই মহিলাটি,আমি আর দুদিক না ভেবে চলতে লাগলাম বাইরের দিকে,গার্ডেরা হয়তো আমায় বের হতে দেখে নি,আমি আসলাম মহিলাটির সামনে,মহিলাটি আমায় বললো।

মা রে আজ দুদিন ধরে ঠিক মতো খাই নি কিছু দিয়ে যাও মা।

মহিলাটি সেই দিনের মহিলাই,উনাকে দেখে আর উনার কথা শুনে উনাকে জন্মগত গরিব মনে হলো না আমার,বরং যথেষ্ট শিক্ষিত আর ভদ্রপরিবারের মনে হলো,আমি উনাকে ৫০০ টাকা দিলাম আর বললাম।

মা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি বলবেন?

জি বলো মা।

উনি হাসিমুখে কথাটি বললেন,তারপর আমি জিজ্ঞেস করলাম।

আপনি কি এসআরকে,মানে বিশিষ্ট বিজনেসম্যান শিশির রায়হান খানকে চিনেন,উনার সাথে কি আপনার কোনো সম্পর্ক আছে।

কথাটা বলতেই মহিলাটি কেমন জানি হকচকিয়ে উঠলো আর কাঁপা কন্ঠে বললো।

আমি কেনো চিনবো উনাকে,কে উনি আমি চিনি না,আর আমার সাথেই বা উনার কি সম্পর্ক হবে, কোনো সম্পর্ক নেই,আমি উনাকে চিনি না আমি বরং চলি।

কথাটা বলে মহিলাটি চুরের মতো পালাতে লাগলো,আমিও কিছু না ভেবে উনার পিছন ছুটতে লাগলাম,উনাকে বার বার বলছি দাঁড়াতে,উনি আমার ডাক যেনো শুনেও না শোনার ভান করে আছেন,আমার সন্দেহ আস্তে আস্তে যেনো আরও বেড়ে উঠছে,উনার সাথে নিশ্চয়ই মি.খানের কোনো সম্পর্ক আছে,নয়তো মহিলাটি এমন বিহেব করবে কেনো,সেদিনও মি.খানকে দেখে এভাবে চোরের মতোই পালিয়ে গেলো,তাছাড়া ওই এলবামের মহিলাটির চেহারা এই মহিলার মতোই তো,আজকে আমাকে এসকল প্রশ্নের উত্তর জানতেই হবে এই মনোভাব নিয়েই ছুঁটছি মহিলাটির পিছনে।

শিশির শার্টটা পরে হাসিমুখে বাহিরে আসতেই খনিকে ওর মুখের হাসি উদাও হয়ে যায়,চেহারায় দেখা দিলো একরাশ দুশ্চিন্তা, কহিনুর বলে বলে ছুঁটতে শুরু করলো চারিদিক,কহিনুরের ফোনটা ভুলবশত শিশিরের কাছে রয়ে গেছে,শিশির ওকে ভিতরে খুঁজে না পেয়ে বাইরের দিকে দৌঁড়াতে শুরু করে,ওর গার্ডেরাও ওর সাথে আছে,ওরা ভালো করেই জানে আজ কহিনুরকে খুঁজে না পেলে ওদের কারোই প্রাণের শেষ রক্ষা হবে না,শিশির ছুঁটতে ছুঁটতে অবশেষে দেখতে পেলো ওর কহিনুরকে,শিশির তখনকার অবস্থা বুঝতে পেরে কহিনুর বলে বলে ওর দিকে দৌঁড়াতে শুরু করলো।

আমার ধ্যান শুধু মহিলাটির দিকে ছিলো,মহিলাটি খনিকে কোথায় যেনো হাড়িয়ে গেলো,আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না শুধু উনাকে খুঁজছি,রাস্তাটা অনেক ফাঁকা ছিলো, তাই আমি তেমন গাড়ি ঘোড়ার চিন্তা না করে আপন মনেই মহিলাটির খোঁজ করছিলাম,তখনি মি.খানের ডাক শুনতে পেলাম পিছনের দিকে,উনি কহিনুর বলে বলে চিৎকার করে আমার দিকে আসছিলেন ছুঁটতে ছুঁটতে, আর বার বার বলছিলেন সরে যাও কহিনুর,উনার কথার প্রেক্ষাপটে আমি পিছনে মাথা ঘুড়িয়ে তাকাতেই দেখলাম একটা গাড়ি আসছে আমার পানে প্রবল বেগে,আমি মোটেও রাস্তার মধ্যখানে ছিলাম না তখন রাস্তার এক প্রান্তেই ছিলাম অনেকটা রাস্তার ঘা ঘেষে কিন্তু গাড়িটা যাওয়ার জন্য যেনো এতো বড় রাস্তা দেখছিলো না আমার দিকেই প্রবল বেগে আসছিলো যেনো আমাকেই মারতে এসেছে,আমি তৎক্ষনাৎ নিজের প্রাণ বাঁচাতে সরে যেতে নিলেও পারলাম না অনেক জোঁড়ে আঘাত করলো গাড়িটা আমায় আমি ছিঁটকে গিয়ে পড়লাম রাস্তার অপর পাশে,কানে ভেসে আসলো মি.খানের কহিনুর বলে বুক ছেঁড়া আর্তনাদ,আমি আর বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারছি না,হাত পা অবশ হয়ে এসেছে আমার,চোখ দিয়েও ভালো করে তাকাতে পারছি না,চোখের সামনে ফুঁটে উঠছে মি.খানের ব্যাথার্থ মুখখানা,অনুভব করতে পারছি উনি আমায় জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো এটা ওটা বলছেন কান্না করছেন,আমি আর বেশিক্ষণ কিছুই অনুভব করতে পারলাম না, না দেখতে পেলাম আসতে আসতে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম।

একটা গাড়ি এসে নুরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চলে গেলো,শিশিরের চোখের সামনেই এসে ছিঁটকে পড়লো নিজের প্রিয়তমার রক্তাক্ত শরীর,শিশির কহিনুর বলে বুক ছেঁড়া আর্তনাদ দিয়ে গিয়ে জাপটে ধরলো নুরকে,আর পাগলের মতো ওর হালে হাত দিয়ে বলতে লাগলো।

কহিনুর কথা বলো কহিনুর,এই যে তোমার মি.খান,তোমার মি.খান তোমায় কিছু হতে দেবে না কহিনুর,কথা বলো আমার সাথে।তাকাও আমার দিকে।

নুর কিছু বলার আগেই জ্ঞান হারালো,শিশির নুরকে বুকে জড়িয়ে কহিনুর বলে চিৎকার করে উঠলো।

‌________________

রোদেলা বসে ছিলো ছাঁদের দোলনায় তখনি আকাশ এসে বসলো ওর পাশে,রোদেলা আকাশকে দেখে উঠে চলে যেতে নিলে আকাশ খপ করে ধরে নিলো ওর হাতে,রোদেলা খিটখিটে মেজাজে আকাশের ধরে থাকা ওর হাতের সেই স্থানের দিকে তাকালেও পরক্ষণেই ওর মনটা খচ করে উঠে আকাশের হাতের অবস্থা দেখে,হাতটায় অনেকখানি কেটে আছে কিন্তু কোনো ওষুধ লাগানো হয় নি দেখেই বুঝা যাচ্ছে, রোদেলা স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করলো।

হাতে কি হয়েছে ভাইয়া?

আঘাত পেয়েছি অনেক, ব্যাথা হচ্ছে,কষ্ট হচ্ছে না বুঝি তোর আমার জন্য?

তোমার জন্য আমার কষ্ট বা দরদ হতে যাবে কেনো ভাইয়া, তোমার হয়ে দরদ দেখানোর জন্য তো রিয়া আছে,যে অনেক মেচোয়ার, একদম পার্ফেক্ট তোমার জন্য,তবে কেনো দরদ আমার হবে,তোমার জন্য উনার দরদ হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত বলে আমার মনে হয় ভাইয়া।

কথাটা বলে রোদেলা যেতে নিলে ওখানে পড়ে থাকা একটা কাঁচের টুকরোয় পা পড়ে রোদেলার, যাতে ওর পায়ে কাঁচটা ঢুকে যায় রোদেলা ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলে আকাশ ছুঁটে যায় ওর পাশে,ওকে ধরবে ঠিক সেই সময় আকাশকে নিজের কাছে আসতে আটকায় রোদেলা,ওর ঠিক বুকে হাত দিয়ে ওকে ঠেলে নিজের থেকে দূর করে আর বলে।

স্ট্যে এওয়ে ড.আকাশ হায়দার,আমি একাই নিজেকে সামলাতে জানি,আমার কারোই দরকার নেই নিজের জীবনে, বিশেষ করে আপনার কোনো দরকার নেই।

কথাটা বলে রোদেলা ল্যাংচি দিয়ে দিয়ে রুমে চলে যায়,রুমে গিয়ে অনেক কষ্টে পায়ের কাঁচটা বের করলো রোদেলা তারপর কোনোরকম রক্ত পড়া বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লো।

ঘুমের মধ্যে রোদেলা অনুভব করতে পারলো কারো স্পর্শ, হকচকিয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়লো রোদেলা,দেখতে পেলো মলম হতে ওর পায়ের কাছে বসে আছে আকাশ,এতোসময় ওর পায়ে আকাশ ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছিলো হয়তো।

তুমি এখানে কি করছো আকাশ ভাইয়া?

এমনিতেই একটু ওষুধ লাগাতে এসেছিলাম তোর পায়ে।

তা আমার জন্য এতো দরদ কেনো হচ্ছে জানতে পারি।

জানিনা,কিন্তু তোর পা কেটেছে, তাও অনেকখানি আর আমি জানি তুই কতোটা কেয়ারলেস ওষুধতো লাগাবিই না খেয়াল করে, তাই নিজে আসলাম ওষুধ লাগাতে।

ওহ,থ্যাংকস,আমার এতো কেয়ার করার জন্য তোমার কাছে আমি চিরঋনি হয়ে থাকবো,এবার ওষুধ লাগানো তো শেষ,তবে এবার আসতে পারো তুমি।

হুম আমিও থাকতে চাই না,শুধুই নিজের মনুষ্যত্বের দায়িত্ব পালন করছিলাম।

হুম বললাম তো থ্যাংকস, নাও প্লিজ গো।

আকাশ রাগে গজগজ করে সেখান থেকে প্রস্থান করবে তখনি রোদেলা পিছু ডাক দেয় ওকে, আকাশ থমকে দাঁড়ায় আর পিছন তাকায়,তারপর রোদেলা বলে উঠে।

হয়তো তোমার ক্ষতগুলো রিয়া আপির চোখে পড়েনি তাই নিজেই খেয়াল করে ওষুধ লাগিয়ে নিও।

আমাকে নিয়েও তোমার এতো মাথা ঘামাতে হবে না,আমার খেয়াল আমি নিজেই রাখতে জানি,আর তুমি সত্যিই বলেছো রিয়া দেখে নি কারন দেখলে হয়তো এই ক্ষতগুলো মুহুর্তেই সারিয়ে নিতে চাইতো।

হুম তা তো আমি ভালো করেই জানি আপনাদের কেমিস্ট্রিটা দেখতে সত্যিই জোস লাগে।

আকাশ আর সেখানে দাঁড়ালো না রেগে বম হয়ে বের হয়ে গেলো, আকাশের অনেক খারাপ লাগছে যে রোদেলা রিয়ার সাথে আকাশের নাম শুনেই জ্বলে উঠতো সেই রোদেলা আজ নিজে থেকেই ওকে রিয়ার সাথে ঠেলে দিচ্ছে, কিন্তু আকাশের যে রিয়াকে চাই না সেটা কেনো রোদেলা বুঝতে চাইছে না,আকাশকে জিনিসটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে, তখন রোদেলার বিহেবে ওকে জ্বালানোর জন্য রিয়ার নাম ইউজ করলো আকাশ কিন্তু রোদেলাতো এতে কোনো রিয়েক্টও করলো না বরং এমন ভাব করলে যেনো এতে ওর কোনো যায় আসে না, এতে আরো রাগ হলো আকাশের।

এদিকে রোদেলার কষ্ট হচ্ছে আকাশের হাতের ক্ষতগুলোর কথা ভেবে ভেবে,কিন্তু রোদেলা নিজেকে বার বার ঘুটিয়ে নিচ্ছে এটা ভেবে যে আকাশ রিয়াকে নিয়েই খুশি আছে তা না হলে শেষে রিয়াকে নিয়ে এতো কনফিডেন্টলি এতো ভালো কথা কি বলতে পারতো,তাই আর নিজেকে দূর্বল করতে চাইলে না,বরং আরও শক্ত করার চেষ্টা করলো,আকাশ যখন রিয়াকে নিয়েই খুশি তবে রোদেলাও নিজেকে হেপি রাখবে সবসময় এটাই ওর পন।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here