শিশিরের কহিনুর,২৪,২৫

0
740

#শিশিরের কহিনুর,২৪,২৫
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ২৪

হাসপাতালে তোলপাড় চলছে,একা শিশিরই ভারী পরেছে একটা হাসপাতালে, গত দু’ঘন্টা ধরে কহিনুরের অপারেশন চলছে শিশির ওটির সামনে বসে আছে দেয়ালে মাথা ঠেকে,পাশেই বসে আছে ডা.হাসান চৌধুরী, আজকে হাসানই জানে শিশিরকে কি করে একটু শান্ত করেছে ও,হাসান শিশিরের ছোটবেলার বন্ধু,শিশিরের মায়ের বান্ধবীর ছেলে হাসান,আকাশ শিশির হাসান ছোটবেলায় একসাথে পড়েছে,তিনজনই বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো আর এখনও আছে,তখন নুরকে কোলে নিয়ে পাগলের মতো হাসপাতালে প্রবেশ করে শিশির,ডাক্তারেরা নুরকে ওটিতে নিয়ে যেতে চাইলে শিশিরও ওর কহিনুরের সাথে যাওয়ার জেদ ধরে,ও নাকি ওর কহিনুরকে একা ছাড়বে না,ওর কহিনুর ওকে ছেড়ে চলে যাবে,ডাক্তারেরা ওকে নিতে না চাইলে ওখানেই ডাক্তারদের মারতে শুরু করে,হাসান অনেক কষ্টে ওকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে ওপারেশনের সময় বাইরের লোক ভিতরে গেলে রোগীরই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,ওর কহিনুরের ক্ষতি হবে ভেবে আর ভিতরে গেলো না,বার বার ওটির দরজায় লাথি দিচ্ছে,চিৎকার দিচ্ছে ওর কহিনুরকে তাড়াতাড়ি ঠিক করে বাইরে নিয়ে আসার জন্য,হাসপাতালের সকল মানুষ অনেক রোগীসহ সেখানে ভির জমা করেছে শুধু শিশিরের কান্ডে,শিশির চিৎকার করে করে বলছে আল্লাহ আমার কহিনুরকে ফিরিয়ে দাও নইলে আমাকেও ওর সাথে করে নিয়ে যাও,অনেক চেঁচামেচি করে এখন শান্ত হয়ে বসেছে একটু দেয়ালে ঠাস দিয়ে উপরের দিকে মুখ করে চোখ বেয়ে জল বইছে বাঁধাহীন হয়ে,হাসান পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রাখলো,শিশির এবার শান্ত স্বরেই বললো।

আমার কহিনুর বাঁচবে তো হাসান,ওকে ছাঁড়া যে আমার বাঁচা দায়,ওর কিছু হয়ে গেলে আমি মরে যাবো রে হাসান।

এবার শিশির হাসানের দিকে তাকালো আর পাগলের মতো বলতে লাগলো।

জানিস আমার নুরের না অনেক আঘাত লেগেছে,অনেক ব্যাথা পেয়েছে ও,আমার কহিনুর না আমাকে এই, এই যে আমার পরনে যে শার্টটা দেখছিস এটা সিলেক্ট করে দিয়েছিলো পরবো বলে,ও কতো খুশি ছিলো আমার সাথে কিন্তু ওই গাড়িটা তখন আমার কহিনুরকে ওভাবে আঘাত করলো,দেখ না এখন আমার কহিনুর আমার সাথে কথা বলছে না,আমার কহিনুর কি রকম শান্ত হয়ে পড়ে ছিলো তুই দেখেছিস,আমার কহিনুর মোটেও শান্ত না,ও অনেক কথা বলে, অনেক দুষ্টুমি করে তবে আজকে কেনো আমার সাথে কথা বলছে না,বল না আমার কহিনুর কথা বলবে আমার সাথে,বল না আমার কহিনুর আমাকে ছেড়ে যাবে না।

তোর কহিনুরের কিছুই হবে না শিশির প্লিজ একটু শান্ত হো তোর কহিনুর একদম ঠিক হয়ে যাবে।

শিশিরের অবস্থা দেখে হাসানেরও চোখে জল খেলা করছে,সেখানে উপস্থিত সবাই শিশিরের এমন অবস্থা দেখে নিজেদের চোখের পানি আটকে রাখতে পারছে না,কেউ কাউকে এতোটাও ভালোবাসতে পারে শিশিরকে না দেখলে হয়তো কারোই তা জানা হতো না,সবাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে যেনো আল্লাহ শিশিরের জন্য হলেও নুরকে বাঁচিয়ে দেন,নুরের কিছু হলে শিশিরও যে নিজেকে শেষ করে দিবে,এদিকে হাসান যথেষ্ট পরিমান শিশিরকে শান্ত করার চেষ্টা করছে,অবশেষে ওটি থেকে ডাক্তার বের হয়ে নুরকে বিপদমুক্ত বললেন,শিশির ঝাপটে ধরে ডাক্তারকে থ্যাংকস বললো,ডাক্তার হাসিমুখে বললেন ধন্যবাদ আমাকে না উপরওয়ালাকে বলেন উনি না চাইলে আপনার স্ত্রীকে বাঁচানো সম্ভব হতো না,তারপর উনি সেখান থেকে চলে গেলেন,একটু সময়ের মধ্যে কহিনুরকে কেবিনে শিফ্ট করা হলো,কহিনুরের জ্ঞান ফিরতে দেড়ি হবে ডাক্তার বলে দিয়েছেন,শিশির বসে আছে ওর কহিনুরের পাশেই চোখ দিয়ে চল পড়া কমেনি এখনও, ওর পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলাচ্ছে বার বার, তখন নুর রাস্তার অনেক পাশে ছিলো তাছাড়া নুর সরে যেতে নিয়েছিলো তাই ধাক্কাটা ওর বেশি লাগে নি,কপালের সাইডে অনেকটা যখম হয়েছে ওর তাছাড়া হাত ও পায়ে অনেকটা কেটে গেছে,আর গুরুতর আঘাতও পেয়েছে ডান পায়ে ভাঙে নি তবে,তাছাড়া আর বেশি কিছু হয় নি,ডাক্তার বলেছেন ভালোভাবে খেয়াল রাখলে ও খুব জলদি সুস্থ হয়ে উঠবে।

‌_______________

প্রায় ৫ ঘন্টাপর জ্ঞান ফিরলো কহিনুরের, আলতো করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো ওর পাগলটা ফ্লোরে জায়নামাজ বিছিয়ে নামায পড়ছে,মোনাজাতে অনেক কান্না করলো শিশির,আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো ওর কহিনুরকে ফিরিয়ে দেবার জন্য, ওকে জলদি সুস্থ করে দেওয়ার আর্তনাদও করলো,কহিনুর ওর প্রার্থনার কথাগুলো শুনতে না পেলেও অনুভব করতে পারলো ঠিকই যে শিশির হয়তো ওর জন্যই মোনাজাতে কান্না করছে।

নামায শেষ করে উনি আমার পাশে এসে বসলেন,আমার জ্ঞান ফিরেছে দেখে ডাক্তার ডেকে আনলেন,ডাক্তার আমায় চেক আপ করে বললেন বর্তমানে আমি একদম ঠিক আছি চিন্তার কোনো কারন নেই,আমি এদিকে হাত পা নাড়াতেও পারছি না,এখনও যেনো পুরো অবশ হয়ে আছি,উনাকে দেখেও আমার অনেক খারাপ লাগছে, চোখ দুটি অনেক ফুলে আছে উনার,মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে কয়েকঘন্টার ব্যাবধানে,উনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক কান্না করেছেন উনি হয়তো আমারই জন্য,এবার আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আমার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ত্যাগ করতে করতে উনি বললেন।

আজ তো ভেবেছিলাম মরেই জাবো আমি,মনে হচ্ছিলো কেউ আমার প্রাণ ছিনিয়ে নিতে চাইছে,তুমি যতোসময় ওটিতে ছিলো ততোসময় যেনো আমার বুকে ছুড়ি চলছিলো,আমায় ছেড়ে যেও না কহিনুর সত্যিই মরে যাবো আমি তুমি ছাড়া।

কথাটা বলে উনি আমার কপালে একটা গভীর চুমু আঁকলেন,আমার বড্ড ইচ্ছে করছে উনার চোখের পানি মুঁছে দিতে কিন্তু পারছি না কোনো মতেই হাতে যে অনেক ব্যান্ডেজ করা,ব্যাথায়ও করছে অনেক।তারপর উনি আমার মাথায় আবার হাত বুলাতে শুরু করলেন আর আমি আবারও ঘুমিয়ে পরলাম।

চোখ খুলতেই আবারও পাশে বসা অবস্থায় পেলাম উনাকে,চারপাশে আমার পরিবারের সবাইকেও হয়তো উনি সবাইকে খবর দিয়েছেন,তাছাড়া আমার শ্বশুরবাড়ির তরফ থেকে ভোর আপি, আকাশ ভাইয়া আর অনিল ভাইয়াকে দেখছি,উনাদের উনি ডাকিয়েছেন বলে মনে হয় না,তবে জানিনা কে ডাকিয়েছেন,আমি শুয়ে আছি সবার মাঝে,সবাই কম বেশি এখনও কান্না করছে আমায় নিয়ে,আমি সবাইকেই বলছি আমি একদম ঠিক আছি আমাকে নিয়ে এতো কষ্ট না পেতে,উনাকে ডাক্তার হঠাৎ ডাকলেন হয়তো আমাকে নিয়ে কিছু বলবে বলে,উনি চলে যাবার পর সবাই আমাকে জ্ঞান বাক্য দিতে লাগলেন,আমার পরিবারের সবাই বলছে আমি নাকি কপালগুনে স্বামী পেয়েছি,বউয়ের জন্য এমন দেওয়ানা স্বামী আজকাল নাকি পাওয়া যায় না,আমার পরিবারতো আছেই সাথে হাসপাতালের কোনো লোকও কম যাচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে না,একটু পর পর কেউ না কেউ আমাকে দেখতে আসছে আর বলছে উনি নাকি আমায় নিয়ে রাতে অনেক পাগলামি করেছেন,উনাকে কখনো ছেঁড়ে না যেতে এমনটা হলে না কি উনাকে বাঁচানোও যাবে না সবার এই একই কথা,আমার কাছে এখন নিজেকে সেলিব্রিটি হিরোইন মনে হচ্ছে আর উনাকে আমার সাইকো হিরো, যে হারে লোক আমাকে দেখতে আসছে আর সাথে আমার শোয়ামীর পাগলামির লিস্ট বলে যাচ্ছে আমায়,সবাই আমাকে এক নামেই ডাকছে কহিনুর,কেমনটা লাগে বলুনতো সাধারণ এক্সিডেন্ট হয়েছিলো আমার এতে এতো পাগলামি করার কি ছিলো হে,লোক তো লোক নার্সগুলোও পাগল করে তুলছে,সবার একই কথা এমন স্বামী কপালগুনে মিলে,লোকটার পাগলামি তো আর এরা সহ্য করে না সারাদিন তাই এসব বলাটা স্বাভাবিক সবার জন্য,হুহ,সারাটাদিন আমার এভাবেই উনার তারিফ শুনতে শুনতে গেলো,আমার কাছে ওই নার্সগুলো থেকে দক্ষ উনাকেই মনে হচ্ছে সারাদিন ধরে আমার কি খেয়াল করছে, আমার তো মনে হয় উনিও এককালে নার্স ছিলেন হা হা হুহু,কিন্তু নার্সগুলোকে দেখে আমার অনেক রাগ হচ্ছে যখনি আসছে উনার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে যেনো ওরা কখনো আর সুন্দর, হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে নি,কেমনটা লাগে বলুনতো এভাবে কেউ নিজের স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকলে?আমি উনাকে স্বামী মানি না মানি এটাই সত্য যে উনি আমার স্বামী, মনে মনে রাক্ষসীদের অনেক গালমন্দ করছি,একটারও বিয়ে হবে না কখনো এই অভিশাপ দিলাম,হুহ।মজার বিষয় এটা যে উনি কারো দিকেই চোখ তুলেও তাকাচ্ছেন না,হা হা।

হাসান আকাশকে সকালে ফোন করে বললো নুরের কথা তারপর আকাশ সবাইকে বলে নিয়ে এলো এখানে,হাসান এতো রাতে বলে সবাইকে আর ডিসটার্ব করতে চায় নি তাই সকালে বললো,শিশির কারো দিকেই তাকালো না,ওদের তো নুরের সাথেও দেখা করতে দিতো না কিন্তু ডাক্তার বলেছেন নুরের সামনে কোনো চিৎকার চেঁচামেচি না করতে ওকে যথেষ্ট পরিমান হাসিখুশি আর চিন্তামুক্ত রাখতে তাই শিশির আর কোনো আতঙ্ক সৃষ্টি করলো না তখন তাছাড়া এখানে উপস্থিত কেউই ভোরের ক্ষতি চায় বলে মনে হলো না শিশিরের, শুধু রুশানা খান, রোদেলা আর অভ্রকে নুরের সাথে দেখা করতে বারন করলো শিশির।গার্ডগুলোকে অনেক মেরেছে শিশির,তারপর সবার দিকে বন্ধুক তাক করলে সবাই নিজেদের প্রাণের শেষ ভিক্ষা হিসেবে আরও একটা চান্স চাইলো,তখন শিশির চান্স হিসেবে ওদের ওই গাড়ির ড্রাইবারকে খুঁজে এনে দিতে বললো ২৪ ঘন্টার মধ্যে না হলে কারোই প্রাণের রক্ষা হবে না,সবাই হন্তদন্ত হয়ে খুঁজতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।

‌__________________

রোদেলা হাসপাতালের বাইরের একটা বেঞ্চে বসে কান্না করছিলো,তখনি কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ তুলে তাকালো দেখলো অনিল,তারপর ঝাপটে ধরলো ওকে।

ভাইয়া কেনো শিশির ভাইয়া আমায় সহ্য করতে পারে না,একটিবারের জন্যও আমাকে ভাবির সাথে দেখা করতে দিলো না,তুমি বলো না আমি কি ভাবির ক্ষতি করতে পারি?আমি কি এতোই খারাপ?

আরে না তুই কি করে কারো ক্ষতি করতে পারিস তুই তো কতো সুইট,আসলে জানিস তো তুই শিশিরকে ও এমনই,আমি ওর সাথে কথা বলছি ও নিশ্চয়ই তোকে নুরের সাথে দেখা করতে দিবে।

ধন্যবাদ ভাইয়া,কথাটা বলে খুশিতে আবারও রোদেলা অনিলকে ঝাঁপটে ধরলো,এদিকে মুহুর্তটা চোখ এড়ালো না আকাশের,রাগে চোখগুলো রক্তিম বর্ণ ধারন করলো ওর খনিকে,তেঁড়ে এসেই ধাক্কা দিয়ে অনিলকে রোদেলার কাছ থেকে ছিটকে সরিয়ে দিলো যাতে অনিল পরতে পরতে বাঁচলো,আকাশ বর্জ্য কন্ঠে বলতে লাগলো।

তোমার সাহস কি করে হয় ভাইয়া বার বার রোদেলার পাশে আসার,বার বার একটা মেয়েকে আকঁড়ে ধরতে ভালোই লাগে না তোমার,ইউ এনজয় দিস, এম আই রাইট।

কথাটা শুনে অনিলের অনেক খারাপ লাগলো,যে রোদেলাকে কখনো অনিল বোন আর বেস্টফ্রেন্ড ছাড়া অন্য চোখে দেখেনি তাকে নিয়ে অনিলের মনে খারাপ কিছু আছে তা কি করে ভাবতে পারলো আকাশ,আজ পর্যন্ত অনিল কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকায়নি ওর এই নেচার সম্পর্কে সবারই জানা আছে তবে আজ আকাশ কি করে তা বলতে পারলো,এদিকে অনিলকে আরও অবাক করে দিলো রোদেলা, ঝটপট একটা কড়া থাপ্পড় বসিয়ে দিলো আকাশের গালে,আকাশ গালে হাত দিয়ে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রোদেলার দিকে,এদিকে রোদেলা গর্জিয়ে বলতে লাগলো।

সবাইকে নিজের মতো ভেবো না ভাইয়া,অন্যরা নষ্টা খারাপ তবে তুমি কি?তোমার কোন গুণটা আছে বলবে আমায়,তুমি চাইলে যে কারো সাথে সময় কাটাতে পারবে, হাসি ঠাট্টা করতে পারবে তার হাতে খেতে পারবে আর অন্যরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবে,নো ভাইয়া ইট’স নট ফেয়ার,তুমি নিজের চরকায় তেল দাও অন্যরা কি করছে তাতে তুমি নাক না গলিয়েও থাকতে পারো।নাও গো,প্লিজ,আমি আর তোমার ওই মুখটা সহ্য করতে পারছি না,প্লিজ গো।

কথাগুলো শুনে আকাশ হন হন করে সেখান থেকে প্রস্থান করলো,অনিল শান্ত স্বরেই বললো।

তুই এটা ঠিক করিস নি রোদেলা,আকাশকে এভাবে মারা তোর ঠিক হয় নি,যতোই হোক ও বয়সে তোর বড়।

হ্যাঁ বড় কিন্তু তুমিওতো উনার থেকে বড় তোমার সাথে যখন এমন ব্যবহার করতে পেরেছে তবে আমারও এমনটা করা মোটেও ভুল হয় নি ভাইয়া,আমি এতে মোটেও গিল্ট ফিল করছি না আর কখনো করবোও না।

কথাটা বলে রোদেলা ছুটে চলে গেলো সেখান থেকে অনিল তাকিয়ে রইলো ওর যাওয়ার পানে,রোদেলা আর আকাশের ব্যাপারটা যে অনিল ভালো করেই জানে,রোদেলা নিজেই বলেছে।

চলবে………..

#শিশিরের কহিনুর
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ২৫(বোনাস পার্ট)

হঠাৎ একটা ফোন আসলে উনি হন হন করে কোথাও বেড়িয়ে গেলেন, তবে যাওয়ার আগে আমার রুমের বাইরে অজস্র গার্ড রেখে গেলেন,আর নার্সগুলো তো আছেই।উনি যাওয়ার আগে আমায় আদর করে খাইয়ে গেলেন,খেয়েদেয়ে আমার খুব ঘুম পেলো আমি ঘুমিয়েই পড়লাম।

নুর ঘুমিয়ে পড়লো তারপর প্রায় মধ্যেরাতে কেউ একজন নার্সের বেশে নুরের কেবিনে প্রবেশ করলো,ওর পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলালো,নুর কারো উপস্থিতি অনুভব করতে পেরে চোখ খুলে তাকালো দেখলো ওর ঠিক সামনে কেউ একজন বসে আছেন নার্সের বেশে,উনাকে দেখে নুরের চিন্তে মোটেও অসুবিধে হলো না।

এদিকে শিশিরের গার্ডগুলো অনেক খোঁজ করে সেই গাড়িচালককে খুঁজে বের করেছে,তারপর সাথে সাথেই শিশিরকে ফোন করেছে,শিশির খবরটা শুনেই হনহনিয়ে বের হয়ে গেছিলো,তারপর গিয়ে ওই লোকটাকে অনেক মারলো, লোকটা যখন বুঝতে পারলো যে শিশির ওকে প্রাণেই মেরে ফেলবে তখন নিজের প্রাণ বাঁচানোর সুবিধার্থে আসল অপরাধীর নাম বলে দিলো,নামটা শুনে শিশির আর নিজের জায়গায় দমে থাকতে পারলো না,রিভালবার হাতে ছুঁটে গেলো কোথাও।

আশরাফ খান লেপটপে বসে কিছু কাজ করছিলেন তখনি উনি মাথায় রিভালভার তাক করা অনুভব করলেন,মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলেন উনার নিজেরই সন্তান উনার মাথায় বন্ধুক তাক করে আছে।

শিশির তুমি এখানে,আর আমার মাথায় বন্ধুক কেনো তাক করেছো?

ইনোসেন্ট সাজার ডং করবেন না মি.আশরাফ রায়হান খান,সেই ২১ বছর আগেও আপনি এমন ডং করে আমার মাকে আমার কাছ থেকে দূর করে দিয়েছিলেন আর আজ আমার কহিনুরকেও আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিতে চাইছেন,বাট আমি তা হতে দিবো না,আপনি আর আমার কাছ থেকে কখনোই আমার প্রিয় জিনিস কেঁড়ে নিতে পারবেন না, কখনোই না,কথাটা বলে শিশির রিভালভারটা চালিয়ে দিবে তখনি শায়েলা খান এসে শিশিরের হাতটা সরিয়ে দিলে গুলিটা অন্য দিকে চলে যায়,তারপর শায়েলা খান বলতে শুরু করেন।

জানিনা কহিনুরের সাথে আশরাফ কিছু করিয়েছে কি না তবে করিয়ে থাকলেও সেটাতেও তোমার ভালোটা ভেবে করিয়েছে হয়তো, সে তোমার বাবা কোনো জল্লাদ নয় যে নিজের বাচ্চার সাথে খারাপ করতে ভাববে না একবারও।

আর ইউ সিরিয়াস দাদিজান,বাবা যদি আমার ভালোই চাইতো তবে ২১ বছর আগে ওভাবে আমার মাকে আমার কাছ থেকে দূর করে দিতো না,আর আজ মানুষ ভাড়া করে আমার কহিনুরকে গাড়ি চাঁপা দিয়ে মারতেও চাইতো না,তুমি কি এখনও বলবে যে এই লোকটা আমার ভালো চায়,না দাদিজান,একদম না। এই লোকটা শুধু আমার কাছ থেকে আমার সুখ কেঁড়ে নিতে চায়,এ লোকটার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই,এই লোকটাকে আমি মেরেই ফেলবো।

তুমি কাকে মারতে চাইছো দাদুভাই তাকে যে শুধু তুমি কষ্ট পাবে বলে তোমার কাছ থেকে তোমার মায়ের আসল সত্য লুকিয়ে রেখেছে,কারন আসল সত্যটা জানলে, যে মাকে তুমি নিজের সর্বশ্ব মনে করো সে মাকে তোমার মা বলতেও লজ্জা হবে।

মানে তুমি কি বলতে চাইছো দাদিজান,আমার মায়ের আসল সত্য,কি এমন আসল সত্য যা শুনলে আমি আমার মাকে ঘৃণা করবো, ক্লিয়ারলি বলো দাদিজান,আমার ঘুড়ানো প্যাঁচানো কথা ভালোলাগে না তুমি তা ভালো করেই জানো।

দাদিজান কিছু বলতে যাবে এর আগেই আশরাফ রায়হান উনার হাত ধরে নিলেন,শিশির রাগী দৃষ্টিতে তাকালো আশরাফ খানের ধরে রাখা শায়েলা খানের সেই হাতের দিকে আর বললো।

কি হয়েছে কি লুকাচ্ছো তোমরা আমার কাছ থেকে,না এটাও তোমাদের নতুন চাল আমার কাছ থেকে আমার খুশি কেঁড়ে নেওয়ার।

বেশি কিছু তোমাকে আর বলতে চাই না দাদুভাই আর হয়তো বললেও তোমার বিশ্বাস হবে না আশা করি সত্যটা তুমি একদিন নিজেই জানতে পারবে,আর তুমি চিন্তামুক্ত থাকতে পারো তোমার আর তোমার কহিনুরের মধ্যে আর আমরা আসতে যাবো না,দয়া করে তুমি এখানে আর কোনো আতঙ্ক সৃষ্টি করো না।

করছি না আর আতঙ্ক তবে আমার দেওয়া ওই পেপারসগুলোতে সাইন করে দিও আর হ্যাঁ তোমার ছেলেকে বুঝিয়ে বলে দিও আমার কহিনুরের যেনো কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা না করে কারন যদি আমার কহিনুরের কিছু হয়ে যায় তবে আগে আমি সবাইকে মারবো তারপর নিজে মরবো কথাটা যেনো মনে থাকে।

শিশির আবার তুফান বেগে বেড়িয়ে গেলো সেখান থেকে।

আশরাফ তুই আমাকে আটকালি কেনো? এভাবে আর কতো ওকে ওর মায়ের আসল সত্য জানতেই হবে আশরাফ।

না মা,ও ওর মাকে অনেক ভালোবাসে আর আমিও,হ্যাঁ দিলারা চলে গেছে,জানিনা কোথায় আছে কিন্তু যতটুকু জানি বিধাতা ওকে ওর শাস্তিটা দিয়েছেন,আর আমি চাই না ও আর শাস্তি পাক,শিশির ওর মায়ের সত্য জানেনা তাই মায়ের জন্য পাগল,কিন্তু যখন জানতে পারবে তখন ওকে ঘৃণা করবে আর আমি চাই না শিশির দিলারাকে ঘৃণা করুক,ও যেমনটাই হয়ে থাক, ও আমার মনে এখনও সেই জায়গায় আছে যেখানে ২১ বছর আগে ছিলো আর আমি চাই ও সেভাবে শিশিরের জীবনেও অমূল্য হয়ে থাকুক।

‌__________________

মহিলাটিকে দেখে আমি অবাক হয়ে বললাম।

আপনি?

হ্যাঁ আমি।

আপনি এখানে কি করছেন,আর তখন ওভাবে পালাচ্ছিলেন কেনো?

মহিলাটি মুখটা একপাশ করে চোখের পানি মুছলো, তারপর আমার মাথায় হাত বুলালো আর আমার কপালে ভালোবাসাময় চুমু খেয়ে বললো।

আমি যে অনেক খারাপ রে মা,কখনো কাউকে ভালো কিছু দিতে পারি না,দেখ না আজ আমার জন্যই তোর এই হাল হলো,আমি যে সত্যিই অলুক্ষুনি।

কথাটা বলে উনি আবারও নিজের কান্না মুছে দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন,তারপর মুখে হাসি ফুঁটিয়ে বললেন।

তা আমার ছেলের পছন্দ আছে বটে,বউ তো দেখি আমার লাখে একটা,এই চাঁদমুখে কখনো যেনো কারো নজর না লাগে।

কথাটা শুনে একরকম বিষম খেলাম আমি,উনার ছেলে বউ তাও আমি,কিছুই বুঝতে পারছি না আমি তাই জিজ্ঞেস করেই বসলাম।

ছেলে বউ মানে?

উনি আবার মুখে বিষন্নতা সৃষ্টি করে বললেন।

তোর ওই কপালপুরো বরটা আর কেউ নয় রে মা আমারই গর্ভে লালিত আমার নাড়ি ছেঁড়া ধন,যার কদর আমি সঠিক সময়ে করতে পারি নি আর খোদা এখন আমাকে তার সাজা গুনে গুনেই দিচ্ছেন।

আমি কিছুই বুঝতে পারছি না উনার কথার আগাগোড়া কিছুটা বোঝার সুবিধার্থে আবার প্রশ্ন করবো তখন উনি বলে উঠলেন।

আর কিছুই জিজ্ঞেস করিস না রে মা, আর কিছুই যে বলতে পারবে না তোর এই অভাগী মা,শুধু এটা জেনে রাখ আমি মা না মা নামের কলঙ্ক, আমি কখনোই নিজের পেটের সন্তাননের মর্ম দিতে পারি নি,না পেরেছি নিজেকে ভালোবাসার মানুষগুলোর অনুভুতির মর্ম দিতে,পাগল হয়ে মরিচিকার পিছন দৌঁড়াতে গিয়ে হাত বাড়িয়ে যে ধোকা,কষ্ট আর নিরাশা ছাড়া কিছুই পেলাম না রে মা,জানি না আমার ছেলে আমার আসল সত্য কি আদোও জানে,তবে এক না একদিন তা জানবেই তখন ও আমায় ঘৃণা করবে আর আমি পারবো না ওর ঘৃণা নিয়ে ওর সামনে বেঁচে থাকতে তাই ওর থেকে দূরে থাকাতেই ওর আর আমার দুজনের জন্যই ভালো।

উনি আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তারপর হাসিমুখে বললেন,তবে আজ চলি রে মা,আমি যে এসেছিলাম তুই দয়া করে বলিস না তোর ওই পাগলটাকে,ও অনেক ভালোবাসে রে মা তোকে,শুধু একটু সত্য ভালোবাসার কাঙাল আমার ছেলেটা, পারলে এক মুঠো সত্য ভালোবাসা দান করিস ওকে,চলি রে মা ভালো থাকিস।

কথাটা বলে উনি চলে গেলেন আর এক মুহুর্তও থাকলেন না,আমি তাকিয়েই আছি উনার যাওয়ার পানে হাবার মতো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here