শিশিরের কহিনুর,২৬,২৭

0
689

#শিশিরের কহিনুর,২৬,২৭
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ২৬

তখন শিশিরের মা লুকিয়ে গিয়েছিলেন ঝোঁপের আড়ালে আর তখনি নুরের এক্সিডেন্ট হয়ে যায়,উনি ঝোঁপের আড়াল থেকে সব দেখতে পেলেন উনার ছেলে কি করে পাগল হয়ে পরেছিলো নুরের জন্য,তারপর একটা গাড়ি দাঁড় করিয়ে ওদের পিছন ধরে জানতে পারেন নুর কোন হাসপাতালে আছে আর তারপর ওখানে থাকা উনার এক পরিচিত নার্সকে অনেক মিনতি করে ওর ড্রেস পরে নুরের সাথে দেখা করতে আসলেন উনি,উনার বড্ড খারাপ লাগছিলো যে নুরের আর নিজের ছেলের জন্য তাই।

আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেলো,এতোদিন হাসপাতালে ছিলাম আর আমার বেস্ট নার্স হিসেবে ছিলেন আমার বর সাহেব,এর মধ্যে আমার রেজাল্টও বেড়িয়েছিলো আমি নাকি ৪.২৫ পাইছি শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো,সব সময় আমার সাথে এরকমই হয় কতো পড়াশুনা করি ক্লাসেও সবার আগে থাকি আর রেজাল্টেই এ প্লাস টিকে না,তবে যাই আল্লাহ দিয়েছেন তাতেই আলহামদুলিল্লাহ বললাম, কান্না আসছিলো কাঁদি নি এ ভয়ে যদি ব্যাঙটা আমার কান্নার কারন জেনে যায় তবে না আবার শিক্ষা মন্ত্রনালয় ভাঙতে চলে যায়,তাই মুখে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে রাখলাম,এদিকে উনি সেদিন হাসপাতালকে মাথায় তুলে নিয়েছিলেন আমার রেজাল্টের খুশিতে, আমার মনে হচ্ছিলো আমি যেনো এ না গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছি,বাড়িতে মা বাবা এ পেলেও গালি দেয় যে প্লাস কেনো পাই নি আর এই লোকটা আমার এই রেজাল্টেও এতো খুশি করছে,পুরো হাসপাতালকে মিষ্টি খাওয়ালো,সবাইকে জোড় গলায় বলছে আমার কহিনুর এ পেয়েছে কতো খুশি করছে,আমার কেবিনটাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে,আমার সব বন্ধুবান্ধবকেও খবর করে আনিয়ে ওদের কি খাতিরদারিই না করলো,সারাটাদিন হৈ-হুল্লোড় করে ছু্টে বেড়ালো,উনার এসব দেখে আমার মনটাও ভালো হয়ে গেলো মনে হলো আমি যেনো সত্যিই গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছি, আমার এ সাতদিন মোটেও এমন মনে হলো না আমি রোগী,লোকটা যে আমায় তা অনুভব করতেই দেয় নি,সত্যিই কি কেউ কাউকে এতোটা ভালোবাসতে পারে,উনি কি সত্যিই আমায় এতোটা ভালোবাসেন।

ফিরলাম বাড়িতে,উনি আমায় কোলে করে বেডে শোয়ালেন,তখনি উনার ফোন এলো উনি ফোন বের করলে আমার চোখে স্পষ্ট ফুঁটে উঠলো স্ক্রিনের উপর ভেসে থাকা মিতালি নামটা, উনি নামটা দেখতেই ফোন নিয়ে সোজা বাইরের দিকে চলে গেলেন,উনার এমনটা করায় আমার মনটা খক করে উঠলো,কোনো মেয়ের সাথে উনি কথা বলছেন ভাবলেই আমার গা টা কেমন জ্বলে উঠে, কেমন জানি ভয় কাজ করে মনে উনি যদি আমায় ছেঁড়ে অন্যত্র গমন করেন,কেনো এমন ভয় হয় আমার ভিতর আমি জানি না,তবে কি আমিও উনাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি,আমি কি উনার উপর থাকা নিজের অধিকার অন্য কাউকে পেতে দিতে চাই না?
আমার সাথে চারজন নার্স রেখেছে বজ্জাতটা,সেই যে বেড়িয়ে গিয়েছিলো এখন অব্দি ফিরে নি,আমাকেও অতি আদর করে মাথায় তুলে রেখেছে, জীবনেও রাগের র আর অভিমানের অ না জানা আমি এখন ওই ব্যাঙটার উপর রাগি আর অভিমানও করি,এখনও অভিমান করে বসে আছি কথা বলবো না ওই বজ্জাতের সাথে,নার্সগুলো হাজার বলে কয়েও আমায় খাওয়াতে পারে নি খাই নি যে খাই নি,উনি আসলেন একদম রাতে,উনাকে দেখতেই নার্সগুলো মাথা নিচু করে বললো।

স্যার ম্যাম কিছু খান নি আমরা অনেক করেও খাওয়াতে পারি নি।

কথাটা শুনতেই যেনো লোকটার মাথায় আগুন ধরলো,রেগে বম হয়ে নার্সগুলোকে হুংকার দিয়ে বলে উঠলো।

তোমাদের কেনো রেখেছি আমার কহিনুর রাত ১০ টা অব্দি এখনও কিছু খায় নি একেকটাকে জমের ঘাটে পাঠাতে হবে দেখছি,এবার নার্সদের বাঁচানোর সুবিধার্থে আমি বলে উঠলাম।

আমি নিজে থেকেই খাই নি ওদের কি দোষ,সবসময় নিরীহদের উপরই রাগ ঝাড়া ঠিক না একদম।

কথাটা আমি অভিমানি স্বরে অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,উনি হয়তো বুঝতে পারলেন আমি রেগে আছি,আড়চোখে দেখলাম হাত দিয়ে ইশারা করলেন নার্সগুলোকে চলে যাওয়ার জন্য,ওরাও তাই করলো তারপর উনি খাবার প্লেটটা নিয়ে আমার পাশে এসে বসলেন,আমি এখনও অন্যদিকে মুখ করে আছি,উনি এবার মধুময় স্বরে আমায় বললেন।

কি হয়েছে আমার ময়নাপাখিটা রাগ করেছে আমার সাথে?খাবে না বুঝি?

না খাবো না আমি,আমি না খেলে কার কি,সেদিন মরে গেলেই ভালো হতো আমার।

কহিনুর৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷ কথাটা শুনে উনি আমাকে ধমক দিলেন,তারপর জড়িয়ে ধরলেন আর বলতে লাগলেন।

কখনো এমনটা বলবে না তুমি জানো না তুমি আমার জন্য কি?তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো কি করে বলো?

এতোই যখন আপনার ভালোবাসা উতলাচ্ছে তবে তখন ওই মিতালির ফোন আসতেই চলে গেলেন কেনো আর সারাদিন মনে পরে নি বুঝি আমার কথা।

হুম তাহলে এই ব্যাপার,তবে আমার ময়নাপাখিটা জ্বেলাস হচ্ছিলো সারাদিন।

আমি মোটেও জ্বেলাস হই নি,আমি কেনোই বা জ্বেলাস হবো?

তুমি জ্বেলাস হও কারন তুমি আমাকে ভালোবাসো,তা তুমি মানো না মানো আমি ঠিকই জানি সুইটহার্ট, নাও এখন খাবারটুকু খেয়ে নাও আর ওই মিতালির সাথে আমি না হয় কালকে তোমাকে সশরীরে পরিচয় করিয়ে দেবো কেমন,শুধু এটা জেনে রাখো এ মনে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই আর আসবেও না।তারপর উনি আদর করে খাইয়ে দিলেন আমায় আমিও খেয়ে নিলাম লক্ষি মেয়ের মতো,উনার উপর যতই রাগ অভিমান করে থাকি না কেনো উনার মধুর কথাগুলো আমার সব রাগ অভিমান মুহুর্তেই জল করে দেয়।

‌_______________________

এক সপ্তাহ হলো রোদেলা আকাশের ধার কাছেও ঘেষে নি,নিজের মতোই আছে ও,এদিকে আকাশের ভিতর ঝড় বইছে, রোদেলার ওকে যথারীতি দেখেও না দেখার ভান করা একেবারেই মেনে নিতে পারছে না আকাশ,এদিকে রিয়ার সাথে কথা বলা যথারীতি বাদ দিয়ে দিয়েছে আকাশ,হাসপাতালে গেলে ভুলেও ওর সামনে পরে না কেনো যেনো সারাদিন ওর মস্তিষ্ক আর মনে রোদেলাই ঘুরাফিরা করে,কোনো মতেই ভুলে থাকতে পারে না রোদেলার স্মৃতি, রোদেলার পাগলের মতো ওর পিছন পরে থাকা,ওর জন্য এটা ওটা করা সবকিছুই আজ বার বার চোখের সামনে স্মৃতি হিসেবে এসে ওকে জ্বালাতন করে,আবারও যে পেতে চায় আকাশ সে ভালোবাসা,যে পাগলামিগুলো একদিন সহ্য করতে পারতো না সে পাগলামিগুলো এখন মিস করছে আকাশ,এখন আকাশের হৃদয় আবারও চায় যে রোদেলা ওকে নিয়ে অধিকার দেখাক ওকে নিয়ে পাগলামি করুক।তা কি আর আদোও সম্ভব কে জানে।

সেই মিতালি আর কেউ না আমার কোচিং টিচার,উনার সাথে আরও চার থেকে পাঁচজন শিক্ষিকাও আছেন,জীবনে শুনেছেন কেউ ভার্সিটির কোচিং লোক বাড়িতে করে,আমি অসুস্থ তাই বলে আমার লেখাপড়া গোল্লায় তো যেতে পারে না এই কথার প্রেক্ষিতে অভিজ্ঞ কজন মেডাম এনেছেন আমার জন্য,তাও স্যার আনেননি মেডাম এনেছেন, কোনো ছেলে উনার স্ত্রীকে কেনো পড়াবে এটাই কারন উনার,এই মেডামদের সাথেও পড়ালেখা ছাড়া অন্য আলাপ করতে বারন করেছে আমায়,আমি নাকি ভর্তি পরীক্ষা পর্যন্ত উনাদের কাছে পড়বো সব বিষয়, কোচিংয়ের সব ব্যাবস্থা এখন আমার ঘরেই বলেনতো কেমন লাগে,এখন নিজের বেডে বসেই সারাদিন বই পত্র নিয়ে পড়ে থাকতে হয় আমায়,এভাবেই এক মাস কেটে গেলো আমি এখন হাঁটতে পারি কিন্তু দৌঁড়াতে পারি না,ডাক্তারকে হাবার মতো জিজ্ঞেস করলাম দৌঁড়াতে আমার কতোদিন লাগবে,উনি অনেক আত্নবিশ্বাসে বললেন যে অতি শিগ্রই দৌঁড়াতেও পারবো,আমার বর সাহেবের যে সেবা আমার প্রতি আমি তো ভাবছি অতি জলদি উড়তেও পারবো হা হা হু হু।আমি এর মধ্যে অনেকবার উনাকে বুঝিয়েছি বাড়ি চলে যেতে উনার একটা কথাই ওখানে যাওয়া ছাড়া আমি যা চাইবো তাই দিবে আমায়,কেমনটা লাগে বলেন তো আপনারা, তারপরও প্রতিদিন একবার করে কথাটা স্বরন করাই কোনো কাজ হয় না,এদিকে দাদিজান আর আমার শ্বশুরমশাই পরে ওই বাড়ির সবাই আমার সাথে দেখা করতে আসে প্রায় রোজ,রোদেলাকে উনি প্রথম প্রথম দেখা করতে দেন নি তবে আমার আর অনিল ভাইয়ার জোড়াজোড়িতে ওকেও দেখা করার পারমিশন দিলেন,তবে মিষ্টি মাকে দেখা করতে দেননি,এদিকে উনার মা সম্পর্কে আমি উনাকে কিছুই বলি নি তবে এই রহস্যটার মায়াজাল আমি বেধ করেই ছাড়বো মনে বেঁধে নিয়েছি, এখন আমার মাথায় চেঁপে আছে অন্য চিন্তা ওই যে অভ্র শয়তানের দেওয়া হুমকি,হুমকি দেওয়ার পর এখন অব্দি কিছু করে নি তাই ভয় করছে না জানি কি করবে।

আজকে শুক্রবার পড়ালেখার চাঁপ নেই কি যে ভালোলাগছে আমার,উনি জুমার নামাযে গেছেন,শুনেছি আগে নামায কালাম পড়তেন না কিন্তু আমি জীবনে আসার পর থেকেই নামায কালাম সব পড়েন,কুরআনও তেলাওয়াত করেন,তেলাওয়াতের কন্ঠস্বরটা কিন্তু উনার অসাধারণ, আজকাল আমিও যেনো উনার সব আচরণে ফিদা হয়ে পরছি,জানিনা কেনো তবে সবকিছুই এখন উনার ভালোলাগে আমার।আমিও নামায পড়ে গার্ডদের চোখে ফাঁকি দিয়ে একা একটু বাইরে ঘুড়তে বেরুলাম,অনেকদিন হলোতো একটু স্বাধীনভাবে হাঁটতে ইচ্ছে হলো আমার,উনাকেও একটু রাগাতে ইচ্ছে হলো,উনাকে রাগাতে আমার ভালোই লাগে,এখন আমি সব দুষ্টুমি উনার সাথেই করি হু হু,বাড়ি এসে যখন দেখবে আমি নেই পাগলের মতো বলবে আমার কহিনুর কোথায় তুমি, তুমি ছাড়া বাঁচবো না এটা ওটা,হু হু।আমি হাঁটছিলাম মনের সুখে তখনি আমার সামনে একটা কালো গাড়ি থামলো আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকগুলো আমায় জোড় করে গাড়িতে তুলে নিলো।

চলবে…………

#শিশিরের কহিনুর
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ২৭

চোখ খুললাম পিটপিটিয়ে,খুলতেই নিজেকে একটা বন্ধ কুটিরে আবিষ্কার করলাম,রুমটা চারদিক থেকে বন্ধ শুধু একটা দরজা আছে মাত্র,আর রুমের মধ্যে একটা খাট,তাছাড়া এদিকে ওদিকে কয়েকটা ইট পাথরের টুকরো পরে আছে,মনে হলো এটা একটা পরিত্যক্ত গোডাউনের একটা বন্ধ রুম,বুঝে উঠতে পারছি না কে বা কারা নিয়ে এলো আমাকে এখানে,অনেক ভয় করছে আমার,বার বার মনে পড়ছে উনার কথা,কোথায় উনি,উনি আসবেন না কি বাঁচাতে উনার কহিনুরকে,আমি জানি উনি আসবেন তবে উনি আসা পর্যন্ত আমিওতো আর হাতে হাত রেখে বসে থাকতে পারি না তাই রুমের দরজাটা খুলে পালানোর চেষ্টা করছি কিন্তু দরজাটা খুলছে না বাহির থেকে বন্ধ আর এই দরজা ছাঁড়া রুম থেকে বেরুনোর কোনো উপায় নেই,দরজা টানতে টানতে হঠাৎ বুঝতে পারলাম কেউ একজন বাহির থেকে দরজা খুলছে তাই সরে আসলাম দরজার সামন থেকে,অনেক ভয় খেলা করছে আমার বুকের ভিতর,দরজাটা টান দিয়ে খুলে আমার সামনে প্রকট হলো অনেক আগ থেকেই চেনা কেউ একজন,এমন কাজ এই ঘৃণ্য লোকের কাছ থেকেই যে আশা করা যায়।

_________

একমাস থেকেও বেশি হয়ে গেলো রোদেলা নিজেকে একদমই গুটিয়ে নিয়েছে,সবার সাথেই হাসি খুশি ভাবে কথা বলে শুধু আকাশকেই অবহেলা করে,আকাশ এর মধ্যে অনেক বার নিজে থেকে ওর সাথে কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু রোদেলা ওকে সময় দিতে নারাজ অথচ দিনের পর দিন অনিলের সাথে পরে আড্ডা দেয়,রোদেলার এমন আচরন মেনে নিতে পারছে না আকাশ,তবে কি রোদেলার মনে থাকা আকাশের জন্য ভালোবাসা ফুঁড়িয়ে গেলো নাকি রোদেলা কখনো ওকে ভালোই বাসে নি উভয় কথাই বড্ড আঘাত করছে আকাশের ব্যাথার্ত হৃদয়কে,আকাশের বেহায়া মন যে রোদেলার ছোঁয়া আবারও ফিরে পেতে চায়,কখনো কি আসবে রোদেলা আকাশের বুকটা আলোকিত করে দিতে,প্রশ্নটা অনেক জ্বালাতন করছে আকাশকে।আকাশ আর মেনে নিতে পারছে না এসব আর মানবেও না ভেবে নিয়েছে।

রোদেলা বসে ছিলো বাগানের দোলনায়,আকাশ তখন ওর ঠিক সামনে গিয়ে প্রকট হলো,ওকে দেখে রোদেলা উঠে চলে যাবে তখনি আকাশ খপ করে ওর হাতে ধরে নিলো।

কি হয়েছে ভাইয়া এভাবে হাত ধরলে কেনো হাত ছাড়ো আমার কাজ আছে।

আমাকে দেখলেই যতো কাজ মনে পরে তোর নয়তো সারাদিন অনিল ভাইয়ার সাথে আড্ডা দেওয়া ছাড়া তোর আর অন্য কোনো কাজ থাকে না।

আমার যা ইচ্ছা তা করবো,যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে আড্ডা দিবো তাতে তোমার কি।

আমার অনেক কিছু, তুই কথাও বলবি আমার সাথে আড্ডাও দিবি আমার সাথে,তোর যা করার সব করবি আমার সাথেই।

আমার বয়েই গেছে হুহ।

কথাটা বলে রোদেলা চলে যেতে নিলে আকাশ খপ করে ওকে কোলে তুলে নিলো।

কি করছো কি ভাইয়া, কি অসভ্যতা শুরু করেছো নামাও আমাকে।

কোনো মহাপুরুষ বলেছিলেন সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকাতে হয়,তাই আমিও আজকে সুত্রটা এপ্লাই করার ছোট্ট চেষ্টা করলাম আরকি।

কথাটা বলে আকাশ রোদেলাকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলো রোদেলা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না,আকাশ ওকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো রোদেলা নেমে যাওয়ার আগেই আকাশ ওপর পাশ দিয়ে ঝটফট এসে গাড়িতে বসলো আর গাড়ি স্টার্ট করে দিলো।

এসব কি করছো ভাইয়া,কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়,থামাও গাড়ি আমি তোমার সাথে কোথাও যাবো না।

তুই যাবি তোর ঘাড়ও যাবে।

দেখো ভাইয়া গাড়ি থামাও নয়তো আমি লাফ দিবো।

ট্রাই করে দেখতেই পারিস।

রোদেলা দরজা খোলার চেষ্টা করলো পারলো না,রাগি লুকে তাকালো আকাশের দিকে দেখলো আকাশ বাঁকা হেসে ড্রাইব করছে,বুঝতে পারলো আকাশ গাড়ি লক করে দিয়েছে,জানালার কাচও বন্ধ করে দিয়েছে,রোদেলা রেগে গিয়ে আকাশকে কিল ঘুষি মারতে লাগলো, আকাশ এদিকে রোদেলার এমন অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে নেই,হাসছে আর ড্রাইব করছে।

‌__________________‌‌__

লোকটা আর কেউ না অভ্র শয়তান।শয়তানটা কক্ষটাতে ঢুকেই দরজা আটকে দিলো।এবার আমার ভয়ের মাত্রাটা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

আপনি,তারমানে আপনি আমাকে কিডনাপ করেছেন?

আমি না লক্ষিটি আমার লোক,হা হা হা।

আপনি জানেন না আপনি বাঘের মুখে হাত দিয়েছেন,মি.খান আপনার হাঁড়গুড় একটাও রাখবে না।

হা হা হা হা৷৷৷৷ মি.খান তোমার ওই মি.খান এখানে কখনোই আসতে পারবে না আর যদিও নিজের ক্ষমতা বশত এখানের এড্রেস পেয়েও যায় তবে আর কি এসেও তোমাকে তো আর আসতো পাবে না, পাবে শুধু তোমার নিথর দেহ,হা হা হা।

কথাটা বলে অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়লো লোকটা,তারপর শকুনের নজর আমার উপর অটল রেখে আমার দিকেই এগোতে লাগলো,আমি ভয়ে পিছাচ্ছি আর চিৎকার করছি মি.খান বলে বলে।

চিৎকার করো ময়না মনের সুখে চিৎকার করো এখানে কেউ তোমার চিৎকার শুনবে না তোমার মি.খানও না,বলেছিলাম না থাপ্পড়ের শোধ নিবে আজ যে সে সময় এসে গেছে হট বেবি,সেই ৪ বছর ধরে তোমার শরীরের লোভে আছি আজ তা মন ভরে মেটাবো তারপর আমার লোকদের দেবো,ওরাও নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে নিলে ক্ষতি হবে কি তাতে,হা হা হা হা।

লোকটির কথাগুলো শুনে আমার অন্তর আত্না কেঁপে কেঁপে উঠছে,কোথায় আপনি মি.খান,আপনি আসবেন না আপনার কহিনুরকে বাঁচাতে,আল্লাহ আমাকে কোনো রাস্তা দেখান আল্লাহ,লোকটা আমার অনেক পাশে এসে গেছে কি যে করি যাক অবশেষে নজর গেলো পাশে থাকা একটা ইটের বেশ বড় টুকরার দিকে,বেশ ওটা উঠিয়ে ঠাস করে দিলাম বজ্জাতটার মাথায় বারি,তৎক্ষনাৎ লোকটা ফ্লোরে পড়ে কাতরাতে লাগলো মাথা থেকে বেড়িয়ে আসছে অনেক রক্ত আমি সেই সুযোগে দরজা খোলে পালাতে লাগলাম,লোকটা চেঁচিয়ে বলতে লাগলো ওর লোকদের, মালটা পালিয়ে যাচ্ছে ওকে কেউ আটকাও।

আমি নেমে দৌঁড়াচ্ছি,ভালো করে দৌঁড়াতে পারছি না তাও দৌঁড়াচ্ছি ,গোডাউনটা অনেক বড়,কোন দিকে গেলে বাইরে বের হতে পারবে ভেবে পাচ্ছি না,এদিকে গুন্ডাগুলো আমার পিছনে পরে আছে,অনেক দৌঁড়েও যখন বাইরে যাওয়ার রাস্তা পেলাম না তখন একটা বড় কিছুর আড়ালে লুকালাম,ভাবলাম গুন্ডাগুলো আমাকে খোঁজে অন্যদিকে গেলে আমি সুযোগবুঝে বাহিরে যাওয়ার রাস্তা খুঁজে পালিয়ে যাবো,কিছুক্ষণ এভাবেই লুকিয়ে থাকলাম,লোকগুলো আমাকে সেখানে কিছুক্ষণ খুঁজলো তারপর আমাকে সেখানে না পেয়ে অন্যত্র গেলো আমিও সুযোগ বুঝে বের হলাম,একি বের হতে না হতেই লোকগুলো আমার সামনে এসে প্রকট হলো,আমি ভয়ে পিছাতে লাগলাম আর লোকগুলো আমার দিকে ডেবিল স্মাইল দিয়ে এগুতে লাগলো,একসময় পিছনের কিছুর সাথে হোঁচট খেয়ে পরে গেলাম আমি,লোকগুলো শকুনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে,আমায় ছিঁড়ে খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বুঝতে পারলাম,একটা লোক আমার ওড়না কেঁড়ে নিতে হাতটা এগিয়ে আনছে,মুখে ওর দাঁত কেলানো হাসি,আমি বার বার বলছি না প্লিজ আমার কোনো ক্ষতি করবেন না,প্লিজ না,লোকটা আমার কথা শুনেও না শোনার ভান করে আমার ওড়নাটার একদম পাশে হাতটা নিয়ে এলে আমি মি.খান বলে সজোরে চিৎকার করলাম,তখনি একটা জোড়ালো ঘুষি পড়লো লোকটার গালে,পাশ থেকেই একটা ডায়লগ আমার কানে ভেসে এলো।

নো মিনস নো।শুনতে পাস নি আমার কহিনুর না বলেছে

তারপর লোকগুলোকে শুরু করলো উড়ুম ক্যাদানী,মনে হচ্ছে যেনো আমি হিরোপানতি মুভির ওই সিনটা দেখছি যেখানে নাইকা ক্রীতিকে গুন্ডারা ঠিক আমারই মতন আক্রমন করেছিলো আর তারপর হিরো টাইগার এসে ওদের যে কি স্টাইলে উড়ুম ক্যাদানী দিয়েছিলে ঠিক তেমনটাই যেনো এখন সত্যি আমার সামনে চলছে,শুনেছিলাম উনি কারাতে জানেন,আজকে দেখেও নিলাম,একে তো ফিল্মে হিরো হিসাবে নিলে আলাদা স্যান্ড ম্যান লাগবে না একাই সব করে নিবে,সে কি মারটাই না দিচ্ছে আমার তো ভালোই লাগছে নিজেকে নাইকা নাইকা ফিল হচ্ছে,উনি ওদের মারছেন আর বলছেন। তোদের সাহস কি করে হলো আমার কহিনুরের দিকে চোখ তুলে তাকানোর,আজ তোদের আমি ছাড়বো না,কখনোই না।

একাই উনি ভারী পড়েছেন ওই পাঁচটা পান্ডার উপর,ওদের মেরে সবগুলোকে ফ্লোরে চিৎ করে ফেলেছেন কারোই যেনো নড়াচড়ার ক্ষমতা আর নেই,তারপর পিছন থেকে উনি সেই চিরচেনা রিভালভারটা বার করলেন আর সবগুলোর হাতে পায়ে গুলি করলেন।সবগুলো ফ্লোরে পড়ে কাতরাচ্ছে,ওগুলাকে মেরে উনি আমার কাছে আসতেই আমি অতি আবেগে মি.খান বলে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম,উনিও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছেন আমাকে নিজের বুকের সাথে মিলিয়ে।তারপর এভাবে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় উনি বললেন।

আমি থাকতে তোমার কিছুই হবে না ময়নাপাখি,তোমাকে যে হাত ছুঁতে আসবে সে হাত আমি উপড়ে ফেলবো।কথাটা বলে উনি আমার কপালে চুমু কাটলেন তারপর আমায় কোলে তুলে নিয়ে হাতটে লাগলেন,উনার গার্ডগুলো সামনেই দাঁড়িয়ে আছে উনি ওদের উদ্দেশ্য করে বললেন।

এদের এমন অবস্থা করো যাতে এরা কখনো বিয়ে করার এবং বাচ্চা জন্ম দেওয়ার যোগ্য না থাকে।

গার্ডগুলো জবাবে সম্মানের সহিত বললো।

ওকে স্যার।

তারপর উনি আমায় কোলে করেই নিয়ে আসতে লাগলেন।কি আজব লোকরে বাবা মানুষকে সাজা দেওয়ার নতুন নতুন পদ্ধতি খুঁজে বার করে,এতো গার্ড সাথে ছিলো তবে একা গুন্ডাগুলোর সাথে লড়াই করার কি ছিলো,হয়তো আমায় ইমপ্রেস করছিলো হু হু।তবে লোকটা জানলো কি করে যে লোকগুলো আমায় কোথায় নিয়ে এসেছে প্রশ্নটা আমার মাথায় চড়ে বসলো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here