শিশিরের কহিনুর,৩৩,৩৪

0
636

#শিশিরের কহিনুর,৩৩,৩৪
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ৩৩(বোনাস পার্ট)

উনাকে পুরো এক সপ্তাহ পর হাসপাতাল থেকে ছাঁড়া হলো,তারপর আমরা সবাই উনাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম,একদিন আমিই উনার সেবা যত্ন করেছি কাউকেই করতে দেই নি আর দিবোও না,বাড়িতে এসে সবাই উনার জন্য নার্স রাখার জেদ করলেন কিন্তু আমি দেই নি,আমি একাই উনার খেয়াল রাখবো বলে দিয়েছি কারন আমি উনার স্ত্রী, আমি থাকতে অন্য মেয়ে কেনো আসবে উনার পাশে যত্তসব, আমিই উনার খেয়াল রাখি,ব্যাঙটার এ অবস্থাতেও রোমান্টিক মুড যায় না,যখন তখন আমাকে ভাঙা হাতে টান দিয়ে আমার ঠোঁটজোড়া দখল করে নেয়,লজ্জা শরম পুরো বিক্রি করে দিয়েছে বজ্জাত কোথাকার,নিজের লজ্জা শরম নাই বুঝলাম এর মানে কি আমারও থাকবে না,শয়তান ব্যাঙ।ওষুধ খেতে চায় না,ঘুমাতে চায় না,খাবারও খেতে চায় না সবকিছুর বদলে আমার কাছ থেকে এক একটা কিস আবদার করে আমিও লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে দিয়ে দেই,যতোই হোক ভালোবাসি এই ব্যাঙটাকে।যাক এবার খাবার খাইয়ে ওষুধ সামনে নিয়ে গিয়ে বললাম।

এই নিন ওষুধটা খেয়ে নিন।

খাবো না ওষুধ গুলো তিতা,আমার ওগুলার আগে মিষ্টি কিছু চাই,আগে তোমার ঠোঁটের মধু দাও তারপর ওষুধ।

দেখেন বাদরামো করবেন না, আগে ওষুধ তারপর অন্য কিছু।

তুমিও আমার সাথে ধোঁকাবাজি করবে না,খাবার আগে বলেছিলে খেয়ে নিলে দিবে আর এখন বলছো ওষুধ খেলে দিবে,কিন্তু তারপরও যদি না দেও।

প্রতিবার যখন দেই তবে এবারও দিবো এবার চুপচাপ ওষুধ খান।

ওকে বাট এরপর কিন্তু ছাঁড়বো না।

আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে।এবার হা করেন।

উনাকে ওষুধ খাইয়ে দিলাম,এবার উনি আমার ঠোঁটের পানে এগুতে লাগলেন আমিও কিছু বলছি না ঠায় বসে আছি নিজের জায়গায় চোখগুলো নিচু করে,যখনি উনি আমার পাশে আসলেন তখনি আমি উনাকে আলতে ধাক্কা দিলাম আর উঠে ছুঁটে যেতে চাইলাম রসিকতা করে তখনি উনি উনার ক্ষত হাতেই টান দিয়ে আমাকে নিজের একদম পাশে নিয়ে আসলেন।উনি এমনটা করায় আমি পাগলপ্রায় হয়ে গেলাম উনার চিন্তায়।

আপনি ঠিক আছেন তো? আপনার হাতে লাগে নিতো?কাউকে ডেকে আনি আপনার কোনো অসুবিধা করছে না তো?বলেন না আমায় ঠিক আছেন তো আপনি?কেনো এমন করলেন বলেন তো,আমি এমনি একটু ফাজলামোই তো করছিলাম।

নুর পাগলপ্রায় হয়ে গেছে শিশিরের চিন্তায়,আর শিশির এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ওর কহিনুরের পানে,যে মেয়েটা একসময় ওকে সহ্যই করতে পারতো না আজকে সেই মেয়েটা ওর জন্য পাগল হয়ে আছে,তাই ঠোঁটের কোনে প্রশান্তির হাসি ফুঁটিয়ে নুরের চোখের জল মুছে দিলো আর বললো।

তোমার আমার জন্য সত্যিই এতো কষ্ট হয় কহিনুর,তুমি সত্যিই আমাকে এতো ভালোবাসো?

না আমি বাসি না,আমি কেমনে ভালোবাসবো আমি তো মানুষ না এলিয়েন,আমি কি করে ভালোবাসতে পারি।

হুম, আমার ময়নাপাখিটা বুঝি রাগ করেছে?আমার কিছুই হয় নি লক্ষিটি আমি একদম ঠিক আছি,কি করবো তুমি বার বার পালাই পালাই করো।

তাই বলে ভাঙা হাতে টান দিবেন আপনি আমায়?

তোমার দূরত্ব যে আমি মেনে নিতে পারবো না,ভাঙা হাতে টান দেওয়াতো কিছু না তুমি দূরে গেলে যে মরেই যাবো।

এবার নুর চট করে শিশিরের মুখ চেঁপে ধরলো।

খবরদার এমন কথা আর দ্বিতীয়বার বলবেন না,কখনোই যাবো না আমি আপনাকে ছেঁড়ে,কখনোই না।

কথাটা বলেই নুর শিশিরকে আর কিছুই বুঝার সুযোগ না দিয়ে ওর দুগালে ধরে নিজের অধরজোরা জমিয়ে দিলো শিশিরের অধরে,প্রায় ৫ মিনিট পর ছেঁড়ে দিলো ওকে,দুজনেই হাঁপাতে লাগলো, নুর নিজের চোখজোড়া নিচু করে আছে,লজ্জায় তাকাতেই পারছে না এবার শিশিরের দিকে,শিশির দুষ্টু চাহনিতে তাকিয়ে আছে ওর কহিনুরের দিকে,এবার মসকরা করে বলে উঠলো।

বাহ আমার বউটা দেখছি কম না,আমাকে বজ্জাত বলে আর এখন নিজে কি করলো।

বজ্জাতের বউ তো বজ্জাতনিই হবে,তাই এই বজ্জাতনিটা আপনাকে নিজের বজ্জাতি দেখালো একটু, বুঝেছেন।

কথাটা বলেই নুর খিক করে হাসি দিয়ে লজ্জায় লাল হয়ে পালিয়ে গেলো সেখান থেকে,শিশির নিজের জায়গায় বসে হাসছে।

__________________

রোদেলা কোচিং থেকে বেড়িয়ে দেখলো বাড়ি থেকে আজ গাড়ি এসেছে বটে তবে সেটা কোনো ড্রাইবার নিয়ে আসে নি বরং আকাশ নিজের গাড়ি নিয়ে এসেছে।রোদেলাকে দেখে আকাশ বললো।

চল বাড়ি যাওয়া যাক।

আমি তোমার সাথে বাড়ি যাবো কেনো,বাড়ি থেকে গাড়ি আসে নি?

আমি আসতে দেই নি,ওই আজকে কাজের চাপ একটু কম তাই ভাবলাম তোকে কোচিং থেকে নিয়ে যাই,চল।

আমি তোমার সাথে যাবো না ভাইয়া,তুমি চলে যাও আমি একা ম্যানেজ করতে পারবো।

দেখ রোদেলা সব কিছুতে জেদ ভালো না,সন্ধ্যা হয়ে এসেছে এই মুহুর্তে বাহিরের গাড়িতে যাতায়াত করা তোর জন্য সেইফ না।

আমি আগেই বলেছি তোমায় ভাইয়া আমার নিয়ে অযতা চিন্তা না করতে, আমি নিজের খেয়াল নিজেই রাখতে পারি।এই যে অটো……..

রোদেলা সাথে সাথে একটা অটো দাঁড় করিয়ে সেটাতে উঠো চলে যায়।আকাশও আর দু’কথা না ভেবে ওটোটার পিছন নিজের গাড়ি নিয়ে ছুটে যায়,মাঝ রাস্তায়ই ওটোটা খারাপ হয়ে যায়।রোদেলা বুঝতে পারে ওটা এখন আর ঠিক হবে না তাই হাঁটতে শুরু করেছে,আর কোনো গাড়িই আসছে না এই রাস্তা দিয়ে,রোদেলার এখন অনেক অসহ্য লাগছে সবকিছু, মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে হাঁটছে।আকাশও একদম আস্তে আস্তে ওর পিছন গাড়ি চালিয়ে আসছে আর বলছে।

দেখ রোদেলা রাত হয়ে এসেছে আশেপাশে কোনো গাড়িও তো দেখা যাচ্ছে না,দেখ যেকোনো বিপদ হয়ে যেতে পারে আমার সাথে চল।

রোদেলা আকাশের বলা কোনো কিছুতেই কান দিচ্ছে না আপন মনে হাটঁছে,ঠিক তখনি দুজন নেশাখোর মাস্তান সে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো,তখন ওরা রোদেলাকে দেখে নানা খারাপ মন্তব্য করতে শুরু করলো,রোদেলা ওদের দিকে তাকাচ্ছিলো না আপন গতিতে হাঁটছিলো মাথা নিচু করে,এদিকে এসব একদমই সহ্য হলো না আকাশের,নাকের ডগায় খনিকে রাগ ধরা দিলো ,যটফট গাড়ি থামিয়ে নেমে গেলো গাড়ি থেকে আর এগিয়ে গিয়েই ওদের দুজনকে দুইটা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো,আর ওদের উদ্দেশ্য করে বললো।

সাহস কি করে হলো আমার রোদেলাকে নিয়ে এমন বাজে মন্তব্য করার।

বাজে কথার তুই দেখেছিস কি,আমাদের উপর হাত তুলেছিস আজ তোকে আসতো রাখবো না।

কথাগুলো বলে লোকগুলো নিজেদের ধারালো ছুরি বের করে আকাশের আশেপাশে ঘুরতে শুরু করলো,এদিকে আকাশ ওদের একচুলও ভয় পাচ্ছে না ওদের সাথে লড়াই করার জন্য একদম প্রস্তুত হয়ে আছে।

তারপর ওদের মধ্যে শুরু হলো লড়াই,আকাশ ডাক্তার হলেও নিজের ফিটনেস নিয়ে যথেষ্ট সচেতন তা ওর বলিষ্ঠ শরীর দেখেই বুঝা যায়।ওদের মধ্যে লড়াই শুরু হয়ে গেছে রোদেলা ভেবে পাচ্ছে না কি করবে,বার বার আকাশকে বলছে ওদের ছেঁড়ে চলে আসতে,মার পিট না করতে কিন্তু কে শুনে কার কথা,আজ যেনো আকাশ ওদের মেরেই ফেলবে।সামনাসামনি কিছু করতে না পেরে হঠাৎ একটা লোক পিছন থেকে এসে আকাশকে ছুরি মেরে দেয়,তখনি চিৎকার করে উঠে রোদেলা আকাশ ভাইয়া বলে,তারপর ছুঁটে যায় আকাশের কাঁছে,আকাশ ছুরির আঘাতে রাস্তায় পরে যায়,রোদেলা গিয়ে ওকে ধরে পাগলপ্রায় হয়ে বলতে থাকে।

আকাশ ভাইয়া,এটা তুমি কি করলে আমি মানা করেছিলাম না ওদের সাথে লড়াই না করতে,কেনো তুমি এমন করলে ভাইয়া,আমি তোমাকে কিছুই হতে দিবো না,তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো,তখনি পিছনের একটা শয়তান লোক শয়তানি হেসে রোদেলার দিকে হাত বাড়ায়,রোদেলার গায়ে হাত দিবে তার আগেই আকাশ ওর হাতে ধরে নেয়।

যতোসময় আমার এ শরীরে এক ফোঁটা রক্ত আছে ততোসময় আমার রোদেলার গায়ে আমি ফুলের টোকাও লাগতে দিবো না।

কথাটা বলে আকাশ আবারও উঠে ওদের সাথে লড়াই করতে শুরু করে,যেহেতু ও জখমি অবস্থায় আছে সেহেতু এবার লড়াই করার ক্ষমতা কম তাও কড়া টক্কর দিচ্ছে ওদের, ওরাও মার খাচ্ছে আর আকাশকে মারছেও,এদিকে রোদেলা পাগল হয়ে আশেপাশে ছুঁটে মানুষ ডাকছে কেউ এগিয়ে এলে ও আকাশকে বাঁচাতে পারবে।হঠাৎ দুতিনটা ভালো লোক সে পথ দিয়ে যাচ্ছিলো,রোদেলার চিৎকারে ওরা এগিয়ে এলো,ওদের দেখে শয়তান লোকগুলো পালালো,এবার রোদেলা আবার ছুঁটে এলো আকাশের কাছে,আকাশ এবার ভালো করে খাঁড়া থাকতেও পারছে না,পরে যেতে নিলো আবারও রাস্তায়,রোদেলা ওকে ধরতে গিয়ে রাস্তায় বসে পরলো আর আকাশ ওর কুলে শায়িত হলো,রোদেলা কাঁদতে কাঁদতে পাগলপ্রায় হয়ে বলছে।

এটা তুমি কি করলে ভাইয়া,আমার জন্য কেনো ওই লোকগুলোর সাথে লড়াই করতে গেলে,দেখো না ওরা তোমার কি হাল করেছে।

আকাশ হাত তুলে রোদেলার চোখের জল মুছে দিয়ে বললো।

আমি বেঁচে থাকতে যে কাউকেই তোর কোনো ক্ষতি করতে দিতে পারবো না রে রোদেলা,তোকে যে অনেক ভালোবাসি, তুই আমার জন্য কান্না করছিস বুঝি রোদেলা,বল না?আমি জানিতো তুই আমাকে ভালোবাসতি,বাসিস আর আজীবন বাসবিও।মান অভিমানের জন্য যে সত্য ভালোবাসা কখনো বিলুপ্ত পায় না রে রোদেলা,এবার না হয় ক্ষমা করে দে আমায়,শেষ বারের জন্য হলেও বল না আমায় ভালোবাসিস, না হলে যে মরেও শান্তি পাবো না।

ভাইয়া,ভাইয়া,ভাইয়া।

কথাটা বলেই আকাশ জ্ঞান হারালো,রোদেলা ওকে অনেক ডেকেও যখন জ্ঞান ফিরাতে সক্ষম হলো না তখন ওকে বুকের সাথে মিশিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো।

আই লাভ ইউ আকাশ ভাইয়া,আই লাভ ইউ,আমি কখনোই আর তোমাকে অবহেলা করবো না,ছেঁড়ে যেও না আমায় তুমি, আমি বাঁচবোনা তুমি ছাঁড়া।

______________

উনি আমার কোলে শুয়ে আছেন,আমি উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি ,কতো মিষ্টি লাগছে উনার সেই ঘুমন্ত মুখখানা,এই কঠিন লোকটার ভিতর যে একটা ছোট্ট বাচ্চা লুকিয়ে আছে তা এখন আমি খুব ভালো করে বুঝতে পেরে গেছি,এই বাচ্চাটার যে শুধু একটু ভালোবাসা চাই আর সেই ভালোবাসা আমি উনাকে সারাজীবন দিয়ে যাবো,কখনো উনাকে আর একটু ভালোবাসার কাঙালি করতে দিবো না,ভাবলেই অবাক হই আমি,কতো সুদর্শন এই লোকটা,কি নেই এর মাঝে,এর পিছন তো মেয়েদের লাইন লেগে আছে যারা নাকি আমার থেকে হাজারগুণ বেশি সুন্দরী কিন্তু এই লোকটার যে শুধু আমাকেই চাই,দিনশেষে আমার কাছেই শান্তি খুঁজে, শুধু আমাকেই ভালোবাসে, আর আমি জানি এই ভালোবাসা অফুরন্ত,অসীম,কখনোই ফুঁড়াবে না,এখন সত্যিই নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হয় এমন একটা লোককে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে,রোজ প্রতিওয়াক্তের নামাযের সাথে নফল নামায পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি উনাকে আমার জীবনে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আর আজীবন শুকরিয়া আদায় করবোও,উনার ছোট থেকে ছোট ব্যাথাও এখন পীড়া দেয় আমায়,কারন ভালোবাসি উনাকে আমি অনেক,আমি সারাদিন উনার খেয়াল রাখি,কোনো ঘাতটি যেতে দেই না কোনো দিক দিয়ে যদি উনার কিছু হয়ে যায় সে ভয়ে,বিভিন্ন ফাজলামো করে উনাকে সবসময় হাসিখুশি রাখি কারন ডাক্তার বলেছেন উনাকে কোনোপ্রকার টেনশন না করতে দিতে,উনাকে সারাদিন আগলে রাখি আমি,আর জীবনভর আগলে রাখবো এটাই আমার পণ।

চলবে………

#শিশিরের কহিনুর
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ৩৪

রোদেলা বসে আছে আকাশের পাশে,আকাশের জ্ঞান এখনো ফিরে নি,রোদেলার চোখের জল এখনও থামে নি।তখন লোকগুলো আর রোদেলা আকাশকে ওদের হাসপাতালে নিয়ে আসে,তারপর রোদেলা ওর বাড়ির সবাইকে খবর দেয়,যতোসময় আকাশের চিকিৎসা চলছিলো ততসময় রোদেলা ছটফট করছিলো,ওর চোখের পানি কেউ থামাতে পারছিলো না,সবাই ওকে শান্ত রাখার অনেক চেষ্টা করেও কেউ সফল হলেন না,এবার আকাশের পাশে বসে ওর মাথায় ক্রমাগত হাত বুলাচ্ছে, আকাশের জ্ঞান এবার ফিরলো,আলতো করে চোখ খুললো আকাশ।চোখ খুলেই রোদেলাকে দেখে ঠোঁটের কোনে প্রশান্তির হাসি ফুঁটিয়ে তুললো।আকাশের জ্ঞান ফিরেছে দেখে রোদেলা আর নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখতে পারলো না শোয়া অবস্থায়ই আকাশকে ঝাপটে ধরলো আর কান্না করতে করতে বলতে লাগলো।

কেনো তুমি এমন করলে, বলো?আজকে তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কি করতাম? কি নিয়ে বাঁচতাম,আছে জবাব তোমার কাছে?

এবার আকাশ ঠোঁটের কোনের সেই প্রশান্তির হাসিটা আরও বড় করে ফুঁটিয়ে তুলে বললো।

তুই তো আমায় ভালোবাসিস না,তবে আমি মরে গেলেও তোর কোনো যায় আসতো না,তাই না?

কে বলেছে আমি তোমায় ভালোবাসি না, আমি তোমায় ভালোবাসতাম,বাসি আর সারাজীবন বাসবো,আই লাভ ইউ আকাশ ভাইয়া।

আই লাভ ইউ টু রোদেলা।

কখনোই ছেঁড়ে যেও না আমায়।

কখনোই যাবো না, শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত সাথে থাকবো, তুই শুধু একটু ভালোবাসা দান করিস আমায়।

আমি যে নিজের ভালোবাসায় আগলে রাখবে তোমায় সারা জীবন।
_________________

কেটে গেলো তিনটা মাস,এখন উনি সম্পূর্ণ সুস্থ,এ কদিন ধরে উনি অফিস যাওয়াও শুরু করেছেন,এখন উনি অফিসে, আজকে ব্যাঙটা অনেক অভিমানে আছে আমার সাথে,সকালে একটা কিস আবদার করেছিলো আমার কাছ থেকে,তখন পাশের বাড়ির কয়েকটা মহিলা এসেছিলো এমনিতেই গল্পগুজব করতে,আমাকে ঘিরেই বসে ছিলো,আমি উনাকে নাস্তাটা করিয়ে একটা কাজে নিচে এসেছিলাম যাওয়ার আগে একটু আদর দিবো এই আশ্বাস দিয়ে কিন্তু নিচে আসার পর মহিলাগুলো আমায় ঘিরে বসে রইলো,আমাকে উপরে যেতেই দিচ্ছিলো না,আমাকে টেনে বসিয়ে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছিলো,সাথে দাদিজান ভোর আপু আর মিষ্টি মাও ছিলেন,এদিকে উনার ডাক শুরু হয়ে গেছিলো,আমি একডাকে উঠে যেতে চাইলে এক আন্টি আমার হাতে ধরে টান দিয়ে আমায় আবার বসিয়ে মসকরা বলতে লাগলেন।

আরে আরে স্বামীর এক ডাকেই দেখি শুরশুর করে দৌঁড় দিচ্ছো,আরে স্বামীর সাথে তো সারাদিন সময় পার করতে পারবে আমাদেরও একটু সময় দাও।

কথাটা শুনে সবাই হু হু করে হেসে উঠলো,এদিকে ভোর আপু, দাদিজান আর মিষ্টি মাও মুখ চেঁপে হাসছেন,আমিতো তখন লজ্জায় পানি পানি হয়ে গেছিলাম,কারো দিকে তাকাতেই পারছিলাম না,কেমন মহিলা এভাবে সবার সামনে আমায় লজ্জা দিতে পারলো।তাই আর লজ্জায় উঠে গেলাম না এদিকে চিন্তায় ছিলাম যদি উনি উল্টাপাল্টা কিছু করেন,আমার ভাবনাটাই রয়ে গেলো,উনি চার ডাক দিয়ে আর পাঁচ ডাক পুরন করলেন না সোজা নিচে চলে আসলেন,উনার চোখ আগুনের মতো লাল হয়ে আছে বুঝতে পারলাম,উনি রাগি স্বরে আমাকে বললেন।

তোমাকে ডাকছি শুনোনি?
তখনি একজন মহিলা বলে উঠলেন।

আরে এতো ডাকাডাকি কিসের, বউ তো সারাদিন তোমার সাথেই থাকে এখন একটু আমাদের সময় দিলে কি এমন হয়ে যাবে,কথাটা শুনেই উনার মাথায় চেপে থাকা রাগের পরিমান আরও বেড়ে গেলো আমি তা উনার দিকে তাকিয়ে আন্দাজ করতে পারলাম, উনি তৎক্ষনাৎ সেখান থেকে পানির জগ তুলে আঁছড়ে মারলেন ফ্লোরে আর পাগলামি করতে শুরু করলেন,খ্যাপা ষাঁড়ের মতো চেঁচিয়ে মহিলাগুলোকে বলতে লাগলেন।

তোদের সাহস কি করো হলো আমার কহিনুরের সাথে কথা বলার?শুধু তাই নয় তোরা তো এর থেকেও বড় ভুল করেছিস আমার কহিনুরকে আমার পাশে আসতে না দিয়ে,সাহস হলো কি করে তোদের?কি করে করলি তোরা এতো বড় স্পর্ধা?তোরা জানিস না কহিনুর শুধু আমার, জানিস না তোরা?আমি কাউকে ছাড়বো না আমার কহিনুরকে আমার কাছ থেকে যারা কেঁড়ে নিতে চায় তাদের আমি বাঁচতে দিবো না, কিছুতেই না। কথাটা বলে উনি টেবিলের অনেক কিছু তুলে তুলে মহিলাগুলোর দিকে ছুঁড়তে লাগলেন ওরা অনেক কিছু করে সেগুলো থেকে নিজেদের রক্ষা করলো, অবশেষে উনি উনার রিভালভার বের করেই নিলেন,তারপর মহিলাগুলোর দিকে তাক করার আগেই ওগুলা পালালো,উনিও ওদের পিছন ছুঁটতে লাগলেন,আমি এদিকে অনেক কিছু করে টেনেটুনে উনাকে রুমে নিয়ে এলাম,শান্ত করার জন্য অনেক আদর দিলাম,অধরে অধর জমিয়ে দিলাম অনেক সময়ের জন্য,উনি তারপর শান্ত হলেন বটে তবে অভিমান করে চলে গেলেন আমার সাথে,এদিকে অভিমানে থাকলেও একটু পর পর ফোন করে কিন্তু কথা বলে না,আমি হ্যালো হ্যালো করতে থাকি ফোন কাটি না,সরিও বলি কতো কিছু বলি উল্লুকটা কথা বলে না এদিকে আমার কথা শুনে নিজের মন ভরে,কতোসময় পরে ফোন কাটে,আবার দশ মিনিটের মাথায় ফোন করে এমন করে সারাদিনটা এমনভাবেই কাটালো উল্লুকটা,এমন অভিমান আমি আমার জন্মেও কাউকে করতে দেখিনি,এদিকে সারাদিন উনার কথা না শুনে আমার শান্তি হচ্ছে না,বার বার ভাবছি কি করা যায়,তারপর মাথায় একটা কটু বুদ্ধি চাপলো,আসলে কটু না রোমান্টিক বুদ্ধি,হি হি হু হু।

রাত ১২ টার দিকে হঠাৎ শিশিরের ফোনে ফোন আসলো কহিনুরের ওটা রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে কহিনুরের আওয়াজ ভেসে এলো।

মি.খান আপনি কোথায়?আমায় বাঁচান মি.খান,আমি আপনার এসআরকে ম্যানশনে আছি,আমায় বাঁচান,মি.খান,আহহহহহহহহহহহহহ।

কহিনুর কি হয়েছে তোমার? কহিনুর কথা বলো লক্ষিটি,কহিনুর।

শিশির পাগলপ্রায় হয়ে গেলো কহিনুরের কথা শুনে,নুর সাথে সাথে ফোন কেটে দিলো,শিশির আবার ফোন করলে ফোনটা অফ যাচ্ছিলো,শিশির এবার ওর প্রাণপাখির চিন্তায় অস্থির হয়ে বেড়িয়ে পড়লো হনহনিয়ে,২০ মিনিটের রাস্তা ১০ মিনিটে কি করে পার করেছে তা শুধু ওই জানে,এদিকে নিজের গার্ডদের ফোন করছে কেউই ফোন ধরছে না,ওই বাড়িতে ঢুকে কোনো গার্ড পেলো না শিশির, না দারোয়ান, পাগলপ্রায় হয়ে ভিতরের দিকে ছুঁটতে লাগলো শিশির, মেইন ডোর খুলাই পেলো তবে পুরো ঘর অন্ধকার,হঠাৎ শিশির শুনতে পেলো কহিনুর ওর রুম থেকে একটা চিৎকার করে উঠলো মি.খান আমায় বাঁচান বলে, শিশির অস্থির হয়ে কহিনুর বলে চিৎকার করতে করতে নিজের রুমের দিকেই গেলো, রুমের সামনে গিয়ে দেখলো রুমটার দরজা আজানো,দরজায় ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই দেখলো পুরো রুমে বড় বড় মোমবাতি জ্বালানো,পুরো রুমে লাল গোলাপের ফুলের পাঁপড়ি বিছানো,বেডটা অনেক সুন্দর করে সাজানো, এমনকি পুরো রুম অনেক সুন্দর করে ডেকোরেইট করা,বিছানায় ফুলের পাঁপড়ি দিয়ে বড় করে লিখা শিশিরের কহিনুর, অনেকগুলো মোমবাতির স্পষ্ট আলোয় যে এসব কিছু ভালোই দেখা যাচ্ছিলো,শিশির এবার কহিনুর বলে বলে ডাকতে শুরু করলো হঠাৎ ওর পিছনে দরজা বন্ধ করার শব্দ পেয়ে পিছনে তাকালো,তখন দেখতে পেলো ওর ময়নাপাখিটা বেগুনী কালারের একটা শাড়ী পড়ে দাঁড়িয়ে আছে,চুলগুলো ছেঁড়ে দিয়েছে,ঘন লম্বা চুলগুলো নুরের কোমড় ছুঁয়ে পড়ে আছে,নুর চোখে গাঁঢ় করে গাজল দিয়েছে,ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক, তাছাড়া শাড়ীর সাথে মেচিং করে জুয়েলারিও পড়েছে বটে,সব মিলিয়ে শিশিরকে ঘায়েল করার সমস্ত ব্যবস্থা করে নিয়েছে ওর কহিনুর,এছাড়াও ঠোঁটের কোনে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে,মোমবাতির আলোতে নিজের প্রিয়সীর এমন রুপ যে ঘায়েল করছে শিশিরকে,নেশাগ্রস্ত হয়ে গেছে খনিকে শিশিরের সেই প্রেমিক হৃদয়খানা,নুর এবার একটা তাজা লাল টকটকে ফুল নিয়ে এসে শিশিরের সামনে হাটু গেঁড়ে বসে ফুলটা ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো।

একদিন ঠিক এই বাড়িতেই এভাবেই আপনি আমার সামনে এসেছিলেন আমাকে নিজের জীবনে পাবার আশা নিয়ে,আমাকে নিজের জীবনের অংশ করে নেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে, সেদিন আমি আপনাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম,কিন্তু আজকে যে আমিও ঠিক একইভাবে আপনার সামনে প্রস্তাব নিয়ে এসেছি,আজকে যে আমি নিজে থেকেই আপনার জীবনের আসতে চাই,সারাজীবন আপনার জীবনের অংশ হয়ে থাকতে চাই, আপনার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে বেঁচে থাকতে চাই মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত, আপনার অংশ নিজের গর্ভে ধারণ করতে চাই,আপনার বাচ্চাদের মা হতে চাই, আপনার ছেলে বউ আর মেয়ে জামাইদের শ্বাশুড়ি আর আপনার নাতি-নাতনীদের দাদি/নানি হতে চাই, দিবেন কি আমায় সে সুযোগ।

কহিনুরের প্রথম কথাগুলো শুনে সুখে শিশিরের চোখে জল চলে এসেছিলো আর শেষ কথাগুলো শুনে হাসি,শিশির ফুলটা হাতে নিয়ে কহিনুরকে উঠালো,তারপর ফুলটা কহিনুরের চুলে গুঁজে দিলো, এরপর কহিনুরকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো।

আই লাভ ইউ কহিনুর,সারাজীবন পাশে থাকবে তো এভাবে।

আজীবন থাকবো,কখনোই ছেঁড়ে যাবো না।

এভাবে একে ওপরকে জড়িয়ে ধরে দুজনই অনেকসময় চুপচাপ থাকলো,তারপর শিশির দুষ্টামি করে বলে উঠলো।

তা এতো ডেকোরেশন কিসের জানতে পারি।

এবার কহিনুর শিশিরকে ছাঁড়িয়ে ভ্রুযোগল কুঁচকে মুখে খনিক রাগী ভাব এনে বললো।

আপনি কি কচি খোকা নাকি?কিছুই বুঝতে পারেন না?

না আসলেই আমি কিছুই বুঝতে পারছি না,এতো সাজসজ্জা কিসের?

কহিনুর বুঝতে পারলো শিশির ইচ্ছে করেই ওর সাথে ফাজলামো করছে তাই এবার মুখ ফুলিয়ে বললো।

বুঝতে হবে না আপনার কিছু,আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমিয়ে যাচ্ছি,আপনি বসে বসে বিড়াল মারেন।

কথাটা বলে কহিনুর মুখ ফুলিয়ে যেতে নিলে শিশির এক টানে ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো আর বলতে লাগলো।

আমার বিড়ালনিটা ঘুমিয়ে গেলে আমি একা একা বিড়াল মারবো কি করে।

উফ কি লজ্জা বজ্জাত ব্যাঙটা আমায় কথায় কথায় লজ্জা দেয়,নিজের তো লজ্জা শরম কিছুই নেই,ব্যাঙ কোথাকার। লজ্জায় এবার আমি কিছুই বলছি না লজ্জা রাঙা চেহারা নিয়ে চোখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকালো আমি ভয়ে চট করে আকঁড়ে ধরলাম উনাকে,সাথে সাথে বৃষ্টি নামলো,বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়া যেনো আজকে আমাদের দুজনের প্রেমে নেশাক্ত মনকে আরো নেশাময় করে তুলছে,এবার উনি আমাকে নিজের থেকে ছাঁড়িয়ে আমাকে নিজের দিকে একটু উঁচু করে ধরলেন,আমিও পাদ্বয় উঁচু করে নিলাম,তারপর উনি আমার ঠোঁটের পানে এগিয়ে এসে আমার ঠোঁটদ্বয় নিজের দখলে করে নিলেন, আমিও শিহরিত হয়ে উনার মাথার চুল পিছন দিক থেকে মুঠো করে ধরে নিলাম,মিনিট খানিক পরে উনি আমায় ছেড়ে দিলেন আর আমায় কোলে তুলে নিলেন,তারপর বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিলেন,সাথে সাথে উনি নিজের শার্টটা খুলে ফ্লোরে ফেলে দিলেন,আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম উনার বলিষ্ঠ শরীরের দিকে,উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে আবারও আমার ঠোঁটদ্বয় নিজের দখলে করে নিলেন,তারপর আমাকে নিজের মতো করে ভালোবাসতে শুরু করলেন,উনার প্রতিটা স্পর্শে শিহরিত হয়ে উঠছি আমি,বার বার উনার চুল আর শরীর খামছে ধরছি,বৃষ্টি আমাদের অনুভূতিগুলো আরো প্রখরভাবে ফুটিয়ে তুলছে,অবশেষে দুজনই হারিয়ে গেলাম সুখের এক রাজ্যে।পূর্ণতা পেলো আমাদের ভালোবাসা।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here