#শিশিরের কহিনুর,৩৫,৩৬
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ৩৫
কিছুদিন কেটে গেলো সবকিছু ভালোই চলছিলো,আকাশ রোদেলা তো জমিয়ে প্রেম করছে,আর শিশির কহিনুরের তো কথাই নেই,এদিকে বাতাসে এ চারজনের বিয়ের ধুম পরেছে,আকাশ বাড়ির সবাইকে ওদের ব্যাপারটা বলেছে,আর এটাও বলেছে যে ও রোদেলাকে খুব জলদি বিয়ে করতে চায়, তারপরই আকাশ রোদেলার বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে সবাই,কিন্তু রোদেলা আর আকাশ চাইছিলো ওদের সাথে শিশির নুরেরও আবার বিয়ে দেওয়া হোক যাতে সবাই সাড়াদিলো,তাই বিয়ের সব ব্যাবস্থা শুরু করে দিয়েছে সবাই,সামনের মাসেই ওদের বিয়ে,এদিকে বিয়ের আগে কহিনুর বাপের বাড়ি যেতে চাইছিলো যাতে শিশির ওখান থেকে ওকে নিয়ে আসে বিয়ে করে কিন্তু শিশির মানলো না ও এক সেকেন্ডের জন্যও নিজের ময়নাপাখিকে চোখের আড়াল করবে না,ওর এক কথা বাড়িতে থেকে বাড়িতেই বিয়ে হবে,ওর কহিনুর সবসময় ওর পাশেই থাকবে। সব মিলিয়ে সবার দিন ভালোই কাটছে কিন্তু দিন ভালো যাচ্ছে না একজনের,আর সে হলো অনিল,দিনের পর দিন নিজের জীবনে ভোরের কমতি খুঁড়ে খাচ্ছে ওকে,ও যে চেয়েও ভুলতে পারে না ভোরকে,নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে দিনের পর দিন অন্য কারো সাথে মেনে নিতে হচ্ছে,পারছে না যে নিজেকে সামলে নিতে আর,প্রতিরাতেই দুবছর আগে ঘটে যাওয়া সে তিক্ত অতীত কল্পনার মাধ্যমে ফুঁটে উঠে ওর চোখের সামনে,যা প্রায় রাতেই ওকে ঘুমাতে দেয় না,এই যন্ত্রণা যে ওকে বেঁচে থাকতে দিচ্ছে না ভালো মতে।
ছোটবেলা থেকেই অনিল ভোরকে পছন্দ করতো কিন্তু কখনো বলার সাহস হয়ে উঠে নি ওকে,অবশেষে দুবছর আগে রোদেলার জন্মদিনে ওকে একটা শাড়ী গিফ্ট করলো,তারপর সেদিন সন্ধ্যায় ভোরকে সেই শাড়িটা পরে রেডি থাকতে বললো ওকে কোথাও নিয়ে যাবে বলে,ভোরও তাই করলো,তারপর অনিল ভোরকে একটা সাজানো সুন্দর জায়গায় নিয়ে গেলো,যেখানে সবকিছু ভোরের মন মতো করে ডেকোরেশন করা হয়েছিলো,সেখানে নিয়ে গিয়ে নিজের মনের কথা ব্যক্ত করলো অনিল,ওর সামনে হাটু গেড়ে হাতে একটা ডায়মন্ড রিং নিয়ে ওকে বিয়ের প্রস্তাব দিলো,তখন ভোরের রিয়াকশন ছিলো।
সরি অনিল,আমি সবসময় তোকে বন্ধুর নজরে দেখেছি,কখনো তোকে নিয়ে ওরকম কিছুই ভাবি নি,তাও যদি তুই আরও আগে এই প্রস্তাব নিয়ে আসতি তবে হয়তো আমি তা মেনেও নিতাম,কিন্তু এখন আর তা সম্ভব না।
কেনো সম্ভব না ভোর?
কারন এখন আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি,আর আমি ওর কথা খুব জলদি বাড়িতে বলতে যাচ্ছি,ওকে আমি খুব শিগ্রই বিয়ে করবো,তুই প্লিজ কষ্ট পাস না,তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলে আর সমসময় থাকবি।
কথাটা বলে ভোর চলে গেলো সেখান থেকে ফিরেও তাকালো না অনিলের দিকে,এদিকে কথাগুলো তীরের মতো বিধলো অনিলের বুকে,চোখ টপকে বেড়িয়ে এসেছিলো তখন অনেক জল।
পরদিনই ভোর বাড়ির সবাইকে অভ্রের কথা বললো,বাড়ির সবাই ওদের ব্যাপারে জানার পর আর অমত করলেন না,ওদের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেলো,যা একেবারে অনিলের সহ্য সীমার বাইরে ছিলো,তাই আর সহ্য করতে না পেরে ওদের বিয়ের দিনই কাউকে কিছু না জানিয়ে অন্যদেশে পারি জমালো অনিল,অবশ্য রোদেলা ব্যাপারটা ভালোই জানতো,অনিল বলেছিলো ওকে তাই।
________________
শিশির অফিস চলে গেছে নুরের একা ভালো লাগছিলো না তাই আড্ডা দেওয়ার জন্য রোদেলাকে খুঁজছিলো,এজন্যই রোদেলার রুমে গেলো,গিয়েই দেখতে পেলো রোদেলা বেডে বসে কাঁদছে,নুর ঘাবড়ে গেলো ওর কান্না দেখে তাই ছুঁটে গেলো ওর কাছে।
রোদেলা কি হয়েছে? তুমি কাঁদছো কেনো?
ভাবি,অভ্র ভাইয়া,অভ্র ভাইয়া লোকটা ভালো না ভাবি অনেক খারাপ।
কি হয়েছে রোদেলা, তুমি আমায় ক্লিয়ারলি বলো,লোকটা কি তোমার সাথে কিছু করেছে?
না ভাবি আমার সাথে কিছু করে নি,কিন্তু আমি ওকে কারো সাথে কথা বলতে শুনেছি।
কি কথা খুলে বলো আমায়?
আমি ছাঁদে যাচ্ছিলাম,হঠাৎ শুনলাম অভ্র ভাইয়া কারো সাথে ফোনে কথা বলছেন,তখন যে কথাগুলো আমার কানে ভেসে আসলো সে কথাগুলো শুনার পর আমার কান যে ওগুলাতে বিশ্বাসই করতে পারছে না।
কি কথা বলো আমায়?
তবে শুনো।তখন উনি একটা লোককে বলছিলো ভোর আপুর সম্পত্তি উনি নিজের নামে করে নিয়েছেন,আর এই সম্পত্তি আজ রাত ১২ টার মধ্যে কাউকে বিক্রি করবে,তার জন্য ওই লোকটাকে একটা জায়গার নাম বললো ওই জায়গায় আসার জন্য ,উনি নাকি আপুর সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে ওই লোকটার নামে লিখে দিবে।
কথাটা বলে উনি ফোনটা কেটে দিলেন,তারপর একা একা হাসতে হাসতে বললেন,আমার ১৭ তম শিকার তুমি ভোরপাখি,আসলেই মেয়েরা অনেক বোকা না হলে ঝটফট কি করে সব আমার জালে পা দিয়ে ফেলে,হা হা হা,যাক এ দুবছর তোমায় নিয়ে অনেক ফুর্তি করেছি কিন্তু এখন আর তোমার প্রতি আমার কোনো মোহ নেই,মন ভরে গেছে, তবে তুমি মাল ভালোই ছিলে কিন্তু কি করবো বলে আমার মন যে আবার বেশিদিন কারো উপরই টিকে না,তোমার সম্পত্তি পেয়ে গেছি এখন আর আমার তোমাকে কি দরকার।এবার তোমাকেও একটা ঠিকানায় পৌঁছাতে হবে।
ভাবি আমার খুব ভয় করছে,ওই লোকটা যদি ভোর আপুকে কিছু করে বসে,লোকটা যে এমন আমি কখনো কল্পনায়ও ভাবি নি।
লোকটা এমনই,এর একটা বিহিত তো দেখছি করতেই হবে।
মানে?তুমি কি লোকটাকে আগে থেকে চেনো?
হুম—- তারপর নুর চারবছর আগে ঘটে যাওয়া সবকিছু খুলে বললো রোদেলাকে।
এ কি বলছো ভাবি তুমি,লোকটা এতো জগন্য,এবার যদি লোকটা ভোর আপুর সাথেও কিছু করে বসে।
আমি বেঁচে থাকতে এমন কিছুই হতে দিবো না,তুমি কি ভোর আপুকে এ বিষয়ে কিছু বলেছো?
না ভাবি,ভোর আপু লোকটাকে অনেক বিশ্বাস করে,যাকে বলে অন্ধ বিশ্বাস,আমি কেনো, ওই লোকটার বিরুদ্ধে কোনো কথা কারো মুখ থেকেই আপু কখনো সহ্য করবে না,তাই আমি বলি নি।আমি বলছি কি ভাবি কথাটা শিশির ভাইয়াকে জানালে ভালো হতো না।
আরে না না,উনাকে জানালে ক্যালেঙ্কারি হয়ে যাবে,তুমি তো উনার রাগটা জানো, জিনিসটা জানার পর পরই অভ্রকে কিছু একটা করে বসবে,আর উপযুক্ত প্রমানের অভাবে পরে না ভোর আপু আর মি.খানের সম্পর্কে ফাঁটল ধরে,যেহেতু ভোর আপু লোকটাকে অনেক বিশ্বাস করে তাই।
তবে ভাবি আমরা এখন কি করতে পারি?
আমার কাছে একটা প্লান আছে।
কি প্লান ভাবি?
শুনো আমরা আজকে রাত ওই লোকটার পিছন যাবো,ওই জায়গায়,তারপর ওই লোকটার সব কার্যকলাপ আমরা নিজেদের ফোনে ভিডিও করবো প্রমাণ হিসেবে,তারপর ওখানে পুলিশকে ডাকবো আর আমরা চলে এসে ভিডিওটা আপুকে দেখাবো,আর আগে থেকে থানায় জিডি করে রাখবো যাতে অভ্র পালানোর কোনো পথ না পায়,ধরা পরলে যাতে কোনো উপায়ে বাঁচতে না পারে।আর যদি দেখি সিচুয়েশন খারাপ তবে মি.খান, আকাশ ভাইয়া আর অনিল ভাইয়াকেও ওখানে ডেকে নিবো।
প্লেনটা তো ভালোই,কিন্তু যদি আমরা ব্যার্থ হই।
কিছু হবে না,আল্লাহ আছেন তো আমাদের সাথে।
হুম,ইনশাআল্লাহ।
___________________
রাত ৯ টা, নুরের রুমে বসে আছে রোদেলা।
ভাবি বারোটা বাজতে তো বেশি সময় না,আমার ভয় করছে অনেক।
আরে ভয় পেয়ো না,আমরা লোকটার পিছন এভাবে লুকিয়ে চলে যাবো লোকটা টেরই পাবে না দেখো।
তখনি রুমে প্রবেশ করলো শিশির,নুরের কথা কিছুটা ওর কানে গেলো,ও ভ্রুযোগল কুঁচকে নুরকে জিজ্ঞেস করলো।
কি টের পাবে না,কে টের পাবে না?কি হয়েছে কহিনুর।
শিশিরকে তখন সেখানে দেখে দুজনই বিষম খেলো,রোদেলা নুরের দিকে তাকালে নুর ওকে চলে যেতে ইশারা করলো,রোদেলাও তৎক্ষনাৎ রুমের বাইরে ছুঁটলো,শিশির ওর সাথে যেতে চাইলে নুর ঝট করে গিয়ে দরজা আটকে দিলো আর শিশিরকে আবদ্ধ করে নিলো নিজের বাহুডোরে, পাদ্বয় উঁচু করে শিশিরের গলার উভয়দিকে নিজের দুহাত ঝুলিয়ে শিশিরের মুখোমুখি হলো।
কি করছো এসব তুমি?আমায় আটকালে কেনো?রোদেলার সাথে কি কথা বলছিলে তুমি?আমায় ওকে কিছু জিজ্ঞেস করতে দিলে না কেনো?কি হয়েছে কি লুকাচ্ছো তুমি?
আরে ধুর,আপনিও না কি লুকাবো আমি?আপনার কাছ থেকে আপনার কহিনুর কি কিছু লুকাতে পারে?ছাড়েন না ওসব ফাউল কথা,নিজের ময়নাপাখিকে একটু আদর করতে মন চায় না বুঝি আপনার?
এখন তো আমি পুরো কনফার্ম তুমি কিছু লুকাচ্ছো আমার কাছ থেকে,এমন রোমান্টিক মুডে আমি ছাড়া তো কখনো তুমি থাকো না,কথাটা চাঁপা দেওয়ার জন্য এমন করছো তাই না? বলো কি লুকাচ্ছো?কেউ তোমার সাথে কোনো মিস বিহেব করে নিতো যা তুমি আমার কাছ থেকে লুকাতে চাইছো?বলো আমায়।
এই রে মরেছি,এবার কি বলি ব্যাঙটাকে,যে করেই হোক ব্যাঙটাকে আমি কিছুতেই জিনিসটা এই মুহুর্তে বুঝতে দিতে পারি না,যে করেই হোক ব্যাঙটাকে হ্যান্ডেল করতেই হবে আমাকে।
কি হয়েছে বলো।
কি আর হবে কিছু না।আপনি এটা বলেন আপনার মন ভরে গেছে আমার উপর থেকে তাই আমার কাছ থেকে পালানোর পথ খুঁজছেন।যান যান যেখানে যাওয়ার যান,আমি আর আটকাবো না আপনাকে।
কথাটা বলে শিশিরকে ছেঁড়ে মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।এবার শিশির এগিয়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো।
আর কখনো এমন কথা বলবে না এই বলে দিলাম,তুমি আমার কাছে কোনো খেলনা নয় যে মন ভরে উঠবে তোমার থেকে,আমি ভালোবাসি তোমাকে,তুমি আমার নিশ্বাস,আমার আত্নায় মিশে আছো, তোমার থেকে দূরে যাওয়ার কথা যে আমি কখনো ভাবতেও পারি না,তোমাকে সারাজীবন ভালোবাসলেও যে মন ভরবে না ময়নাপাখি ।
কহিনুর এবার নিজেকে ছাঁড়িয়ে আবারও আগের ন্যায় শিশির মুখোমুখি হলো আর বললো।
তাই বুঝি।
একদম তাই।
কথাটা বলে ব্যাঙটা আমার ঠোঁটের পানে এগুতে লাগলে আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম,যাক ডোজটা কাজে দিয়েছে,এবার ব্যাঙটাকে কোনোরকম ঘুম পাড়িয়ে বেরুতে হবে আমার।
প্রায় ২ ঘন্টা পর।
ঘড়িতে ১১ টা বেজেগেছে,ব্যাঙটা একটু আগেই ঘুমিয়েছে,এখন গভীর ঘুমে আছে,এই সুযোগে আমার বেরুতে হবে,সুযোগটা আর হাতছাড়া করলাম না কাপড়চোপড় পরে বেড়িয়ে গেলাম।বারান্দায় গিয়ে দেখলাম রোদেলা দাঁড়িয়ে আছে।
আরে ভাবি কই ছিলে তুমি,লোকটা যেকোনো সময় বেড়িয়ে যাবে তো?
কি করবো তোমার ওই বজ্জাত ভাইকে ঘুম না পাড়িয়ে কি করে আসতাম।
ঘুম পাড়াতে!এই প্রথম শুনলাম কাউকে ঘুম পারাতে ২ ঘন্টা লাগে,হা হা হা।হুম বেবি সোনাকে ঘুম পাড়াতে তো সময় লাগবেই আমি সব বুঝি,হা হা।মসকরা করে কথাটা বললো রোদেলা।
হেসে নাও হেসে নাও,আমিও দেখবো বিয়ের পর আকাশ ভাইয়াকে ঘুম পাড়াতে তুমি কতো সময় নাও।
ওফ ভাবি তুমিও না,আমার লজ্জা করে না বুঝি।
হুম তোমার লজ্জা করে আর আমার তো লজ্জা শরম কিছুই নেই তাই না।
তারপর দুজনই একসাথে হেসে উঠে,তখনি খেয়াল করে অভ্র আসছে,দুজন লুকিয়ে পরে ওকে দেখে,তারপর অভ্র বেড়িয়ে গেলে ওরা দুজনও গাড়ি নিয়ে পিছু করে,রোদেলা ড্রাইব করছে।হঠাৎ অভ্র নেমে গেলো একটা বেশ বড় অর্ধনির্মিত বিল্ডিং এর সামনে, তারপর ওটার ভিতর ঢুকে গেলো,রোদেলা নুরও সাথে গেলো,দুজন একটা জায়গায় ঘাপটি মেরে লুকিয়ে রইলো,তখনি আরো দুজন লোক প্রবেশ করলো সেখানে।লোকগুলো আসতেই অভ্রকে প্রোপার্টির পেপারসগুলোর কথা জিজ্ঞেস করলো,অভ্র বললো সব ঠিক আছে পেপার্সগুলো দেখে নিয়ে যেতে,লোকগুলো পেপার্স হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো,তারপর দেখা শেষে লোকগুলোর একজন বললো।
আপনি আপনার একাউন্ট চেক করে নিন টাকাগুলো গেছে কি না?
অভ্র ফোনে কি যেনো চেক করে বললো, হুম এসেছে।
এদিকে নুর রোদেলা দুজনই ভিডিও করছে,ওরা পুলিশকেও ফোন করে দিয়েছে,ওরা দিনের বেলায় গিয়ে অভ্রের নামে জিডি করে এসেছিলো যে ও জালিয়াতি করে ভোরের প্রোপার্টি নিজের নামে করে অনত্র বিক্রি করতে যাচ্ছে,তাই ওরা ভিডিও এর মাধ্যমে উপযুক্ত প্রমাণ রেখেছে,যাতে পুলিশ এবং ভোরকেও দেখাতে পারে,এই মুহুর্তে কাউকে এখানে না ডেকে নিজেদেরই পালিয়ে যাওয়া সুবিধার মনে হলো ওদের কাছে,দুজনই পালিয়ে যাবে তখনি দেখলো লোকগুলো চলে গেছে আর তখনি সেখানে প্রবেশ করলো ভোর,ভোরকে তখন ওখানে দেখে নুর রোদেলা দুজনই চমকে গেলো,ভোর প্রবেশ করতে করতে বললো।
অভ্র তুমি আমাকে এখানে ডাকলে কেনো,তাও এতো রাতে,আর ওই লোকগুলো কে?
আরে ভোরপাখি তুমি এসেছে,শেষবার তোমাকে দেখে মনটায় অনেক শান্তি পেলাম পাখি।
শেষবার!?
ওহ তোমার মনে হয় বুঝতে সমস্যা হচ্ছে,তবে চলো বেবি ক্লিয়ার করে দেই।আসলে মরার আগে তোমার সব জানার অধিকার আছেই,তবে শুনো।আসলে সেদিন তোমার ওইভাবে অনিলকে ফিরিয়ে দেওয়া ঠিক হয় নি,অনিলই তোমার জন্য ঠিক ছিলো,কিন্তু কি করবো আজ কালকার মেয়েগুলার টেস্টই এমন,হিরে ফেলে মরিচিকার পিছন ছুঁটে,ফোর এক্সামপল তুমি নিজেকেই দেখে নাও ভোর পাখি,তুমি যাকে হিরা ভেবেছো সে হিরা নয় মরিচিকা,আসলে জানো সেই ছোটবেলা থেকে আমি টাকা আর মেয়েদের শরীরের প্রতি আলাদা টান অনুভব করতে শুরু করি,তাই এসবের টানে প্রথমে মেয়েদের ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়ে করি তারপর ওদের নিয়ে কয়েকদিন ফুর্তি করি,আর পরে নিজের মন ভরে এলে ওদের মা-বাবার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা বা ওদের সম্পত্তির ভাগটা নিয়ে বিক্রি করে ওদের মেরে ফুস করে উড়ে যাই হা হা হা,আসলে এখন এটা আমার নেশায় পরিনত হয়েছে ভোরপাখি।দেখো না তোমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে কি করে তোমার সম্পত্তি নিজের নামে করে নিলাম আর এখন তা বিক্রিও করে দিয়েছি এখন আর আমার তোমাকে দরকার নেই,হা হা হা।
কথাগুলো শুনে ভোরের চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু হলো,ও যে বিশ্বাসই করতে পারছে না এসব,বেহায়ার মতো বলতে লাগলো।
এসব কি বলছো তুমি, বলো তুমি মিথ্যে বলছো,তুমি তো আমায় অনেক ভালোবাসো তাই না?বলো না?
ভালোবাসা,হা হা হা হা।ভালোবাসার মতো তুচ্ছ শব্দ কখনো আমার জীবনে আসে নি আর আসবেও না,আমি ভালোবাসি শুধু মেয়েদের শরীর আর টাকাকে,বুঝেছিস,এবার মরার জন্য প্রস্তুুত হো।
কথাটা বলে অভ্র বন্ধুক তাক করলো ভোরের দিকে।
ভোর নিজের পেটে হাত দিয়ে বলতে লাগলো।
এটা তুমি কি করছো অভ্র,আমি তোমার ভোর,তোমার স্ত্রী, আমার গর্ভে যে তোমার সন্তান বেড়ে উঠছে।
ছাড় তোর ওই সন্তান,এসব সন্তান তন্টান নিয়ে আমার কখনো কোনো ইন্টারেস্ট ছিলো না আর থাকবেও না,তুই পারলে কালিমা পড় মরার সময় এসেছে যে তোর,তখনি একটা উড়ন্ত কাঠের টুকরো অভ্রের হাতে লাগলে অভ্রের হাত থেকে বন্ধুক পরে যায়।
অভ্র চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে ভোরের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রোদেলা আর নুর,অভ্র ছুঁটে গিয়ে বন্ধুকটা তুলতে চাইলে তা নুর নিজের হাতে নিয়ে নেয় আর অভ্রের দিকে তাক করে।
দেখো নুরপাখি ওটা বাচ্চাদের খেলার জিনিস না ওটা আমার কাছে দিয়ে দাও।
নিজের জায়গায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক পাপী,এক চুলও নড়বি না,ভুলিস না আমি মিসেস এসআরকে,সারাদিন বলতে গেলে একটা মাফিয়া কিং এর সাথে থাকি তাই বন্ধুক চালাতে মোটেও হাত কাঁপবে না আমার,দূরে থাক।রোদেলা তুমি ভোর আপিকে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠো বজ্জাতটাকে আমি দেখছি।
চলবে……
#শিশিরের কহিনুর
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ৩৬
ভাবি আমরা তোমাকে ছেড়ে যাবো না।
রোদেলা পাগলামি করো না, ভোর আপু প্রেগন্যান্ট,উনার আর উনার বেবির কোনো ক্ষতি হতে দিতে পারি না আমরা,তুমি উনাকে নিয়ে যাও।
কিন্তু ভাবি।
তুমি যাও রোদেলা।
ভোর পাথরের মতো হয়ে আছে,অভ্রের আসল রুপ জানার পর ও স্বাভাবিক হতে পারছে না,রোদেলা এবার ওকে টেনে নিয়ে যেতে গেলে কোথা থেকে অভ্রের চার পাঁচটা গুন্ডা এসে ওদের ঘেরাও করে,কহিনুর সিচুয়েশন বুঝতে পারলো,অভ্র হেসে বললো।
এবার কি করবে নুরপাখি।
তোকে গুলি করবো শয়তান।
কথাটা বলে নুর গুলি চালিয়েই দিলো,গুলিটা অভ্রের হাত ছুঁইয়ে চলে গেলো,নুর আবার গুলি করলে অভ্র নিচু যুকে গেলে গুলিটা পিছনে চলে গেলো,নুর আবার গুলি চালানোর আগেই অভ্র কোনো একটা কিছু ছুঁড়ে মারলো ওর দিকে যাতে নুরের হাতের রিভালভার পরে গেলো, এই ফাঁকে অভ্র রিভালভারটা নিজের হাতে নিয়ে নিলো আর অপর হাতে নুরকে একটা থাপ্পড় মেরে মাটিতে ফেলে দিলো,যাতে নুরের ঠোঁটের কোন কেটে রক্ত বের হয়ে গেলো,সাথে সাথে অভ্রের ইশারায় ওর দুজন গুন্ডা নুর আর রোদেলাকে জব্দ করে ধরে নিলো,ওরা নিজেদের ছাড়ানোর অসম্ভব চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না,এদিকে অভ্র শয়তানি লুক নিয়ে ভোরের পানে এগিয়ে গেলো,গিয়ে রোদেলা আর নুরকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো।
আগে তোদের এই ভোর আপু আর ওর সন্তানকে জাহান্নামে পাঠাবো তারপর তোদের ভোগ করবো,মজা হবে না।তবে ভোর আপু তুমি তোমার বেবি কে নিয়ে জাহান্নামে যাও,কেমন।
কথাটা বলে অভ্র ভোরের দিকে আরও এগুতে লাগলো,ভোর পিছু হাঁটতে লাগলো আর বলতে লাগলো।
প্লিজ এমনটা করো না তুমি,তুমি আমার বেবিকে মেরো না,আল্লাহর দোহাই লাগে তোমায়।
অভ্র আর কোনো দোহাই মানলো না,ভোরকে জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে অনেকটা দূরে ফেলে দিলো,ভোর পরে গিয়ে নিজের পেটে ধরে আমার বাচ্চা বলে চিৎকার করে উঠলো,মাটিতে পরে একপ্রকার কাতরাতে শুরু করলো,নুর আর রোদেলা গুন্ডাদোটাকে কোনোরকম ছাড়িয়ে ভোর আপু বলে ছুঁটে গেলো ওর পানে,ওরা ছুঁটে গিয়ে ভোরকে ধরে ওকে উঠাতে চাইলে, অভ্র এসে ওদের দুজনের চুল মুঠো করে দুজনকে ধরে নিলো।
ছাঁড় শয়তান আমাদের, মি.খান আসলে তোর রেহাই হবে না।
আরে নুরপাখি তোমার তেজ দেখছি কমছেই না,বড়ই পাওয়ার বেড়েছে না তোমার ওই মি.খানকে নিয়ে,তবে শুনো আর তোমার কোনো পাওয়ারই কাজ করবে না,আজকে আর আসবে না তোমার ওই মি.খান তোমাকে বাঁচাতে, অনেক দিন পর তোমাদের মতো দুটি তাজা মাল পেয়েছি আজ দুজনকে একসাথেই ভোগ করবো।
ঠিক তখনি রোদেলা নুর অভ্রের পেটে কনু মেরে নিজেদের ছাঁড়িয়ে নিলো,কিন্তু ওরা আর কিছু করবে এর আগেই অভ্রের দুজন লোক রোদেলা আর নুরকে দুটি থাপ্পড় মেরে মাটিতে ফেলে দিলো,অভ্র আবারও দুজনের চুল মুঠো করে ধরবে তখনি ওর ঠিক হাত বরাবর একটা গুলি পড়লো,অভ্র সাথে সাথে মাটিতে পড়ে কাঁতরাতে লাগলো,নুর আর রোদেলা চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো ঠিক সামনে রিভালভার হাতে দাঁড়িয়ে আছে শিশির, চোখে অসীম রাগের ঝলক,ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ আর অনিল,তিন বলিষ্ঠ দেহী মানবকে দেখে চিন্তা মুক্ত সেই দুই রমনি,ছুঁটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো নুর শিশিরকে আর রোদেলা আকাশকে,দুজনই নিজেদের প্রিয়সীদের গালে ভালোবাসাময় স্পর্শ দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো ওরা ঠিক আছে কি না,উত্তরে ওরাও মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁসুচক সম্মতি করলো,তারপর দুজনই নিজেদের প্রিয়সীদের কপালে ভালোবাসার পরশ দিলো আর ভোরকে দেখার কথা বললো বাকি অভ্রকে ওরা দেখে নিবে বলে দিলো,তাই আর দেড়ি করলো না রোদেলাল আর নুর,ছুঁটে গেলো ভোরের কাছে,তারপর ওরা ভোরকে ধরাধরি করে গাড়িতে নিয়ে উঠালো।অনিল আকাশকে বললো,
আকাশ তুমি ওদের সাথে যাও,এর সাথে আমরা হিসাবকিতাব শেষ করে আসছি।আকাশ চলে গেলো ওদের সাথে।তারপর অভ্রের গুন্ডারা ওদের উপর আক্রমন করলে ওরা ওদের ইচ্ছেমতো ধোলাই করলো,অভ্র এ ফাঁকে পালিয়ে যেতে নিলে ওরা অভ্রকে ধরেও অনেক মারধর করলো,অভ্র এবার হাসতে হাসতে বললো।
মারো মারো ইচ্ছেমতো মারো,কিন্তু আমি জানি তোমরা আমায় প্রাণে মারবে না,কারন যতই হোক তোমরা তো আর আইন নিজেদের হাতে তুলে নিবে না,আর চাইলেও তোমরা আমাকে আইনের হাতে তুলে দিতে পারবে না কারন তোমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই,এছাড়া আমি তো ভোরের সম্পত্তিও বিক্রি করে দিয়েছি,সব টাকাতো আমার একাউন্টে চলে এসেছে, তাই একটু মারধর দেওয়া ছাড়া তোমরা আমার আর কিছুই করতে পারবে না,হা হা হা হা।
হা হা হা হা হা।
নিজের সাথে অনিল শিশিরের হাসি দেখে বিষম খেলো অভ্র।এবার অনিল বললো।
কি আমাদের হাসির মানে বুঝতে পারছিস না তো?তোর মতো হাবা বুঝবেও বা কি করে।নিজেকে মাস্টারমাইন্ড মনে করা উল্লুক তোর তো জানাই ছিলো না চোরের উপরও বাটপার থেকে থাকে,তোর এসব প্লান পার্ফেক্টলি এজন্য চলছিলো কারন আমরা চলতে দিচ্ছিলাম।জানি কথাগুলো তোর সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তবে আয় ক্লিয়ার করি।
দুবছর আগে আমি সবাইকে ছেঁড়ে চলে গিয়েছিল কারন আমি নিজের চোখের সামনে ভোরকে অন্য কারো হয়ে যেতে দেখতে পারতাম না তাই,ভেবেছিলাম একাই দূরদেশে থেকে নিজের জীবন পার করে দিবো,বিদেশ থেকে প্রায়ই ভোরের খবর নিতাম,কিছু লোক লাগিয়েছিলাম তোর পিছন তুই আমার ভোরকে সত্যিই ভালোবাসিস কিনা ওকে খুশি রেখেছিস কি না তা জানতে,কিন্তু কথায় আছে না কেঁচো খুঁড়তে গেলে কখনো কখনো সাপ বেড়িয়ে আসে,ঠিক এমনটাই হলো,আমি ভোরের ভালো-খারাপ খবর নিতে গিয়ে তোর শয়তানির খবর পেয়ে গেলাম,তুই ভোরকে বলেছিলি তুই অনাথ তোর কেউ নেই,তুই অনেক কষ্টে নিজের পায়ে খাঁড়া হয়ে এ পর্যায়ে এসেছিস,এসব ফুসলানো, ইমোশনাল কথা বলে তুই আমার ভোরকে ফাঁসিয়েছিস নিজের জ্বালে,কিন্তু আমি জানতে পারলাম তোর বাবা মা আর দুই ভাইকে তুই নিজেই মেরেছিলি, কারন তোর মা বাবা সম্পত্তির তিন ভাগ করতে চেয়েছিলেন, তাই ওদের মেরে মা বাবার সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নিয়েছিলি,তারপর থেকে এই অনাথ ট্যাগ দিয়ে বড়লোকের ভালো মেয়েদের ভুলিয়ে বিয়ে করে ওদের থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা খেয়ে ওদের মেরে পালিয়ে যেতি,এসব খবর আমার কাছে আসলে আমি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারি না চলে আসি দেশে,নিজের কাছে উপযুক্ত প্রমাণ ছিলো না তাই এতোদিন কিছু বলি নি, শুধু চুপচাপ তোর বিরুদ্ধে প্রমাণ জমা করেছি।
তুই কি মনে করেছিস অভ্র কেউ আমার কহিনুরকে কিডনাপ করবে আর আমি জানবোই না,তোর হয়তো আমার ক্ষমতা সম্পর্কে ভালো করে জানা নেই,কেউ আমার কহিনুরকে আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিতে চাইবে আর আমি তাকে খুঁজবোও না এটা তো হওয়ার নয় অভ্র,সেদিন কহিনুরকে নিয়ে আসার অনেক্ষণ পরে আমার লোকের মাধ্যমে জানতে পারলাম এই কাজটা তুই করেছিস,আমি হনহন করে তোকে মারতে গেলাম,হয়তো সেদিনই তোর শেষ দিন হতো যদি অনিল ভাইয়া আমায় না আটকাতো।
হ্যাঁ অভ্র আমি সেদিন শিশিরকে খান ম্যানশনে ওভাবে ঢুকতে দেখে ওকে আটকাই তারপর ওর কাছ থেকে আসল সত্য জেনে ওকে শান্ত করি,কারন সেদিন যদি ও মাথা গরম করে তোকে মেরেও ফেলতো তবে ভোর ওকে কখনো মাফ করতো না,তাই আমরা ভেবে চিন্তে তোকে আমাদের ফাঁদে ফেলেছি,আমরা ভালোই জানতাম তোর নজর ভোরের সম্পত্তির দিকে আর তুই সেটা পাওয়ার জন্য অনেক প্লানিং এ আছিস,আর আমরাও তোর প্লানকে উকসানি দিলাম,ওই যে তোর জায়গা কিনার লোকগুলো ওগুলো আমাদেরই লোক,তাছাড়া ওই যে তোর একাউন্টে টাকা গেছে দেখিয়েছে ওটাও ভোয়া মেসেজ,এটাও আমরা করিয়েছি,কিন্তু তুই ভোরকে এভাবে ডেকে এনে এমনটা করবি আমাদের তা জানা ছিলো না,আজ তোকে ছাড়বো না, তোর সাহস কি করে হলো আমার ভোরের উপর হাত তোলার।
কথাটা বলে অনিল ওকে একটা ঘুষি মেরে ফেলে দিলো মাটিতে,এবার অভ্র পাগলপ্রায় হয়ে বলতে লাগলো।
না না এ হতে পারে না,বলে দাও এসব কিছু মিথ্যে, আমি হেরে যেতে পারি না,এতোটা টাকা আমার হাতছাড়া হতে পারে না।আমার এতোদিনের পরিশ্রম জলে যেতে পারে না।আমি কাউকে ছাড়বো না,মেরে ফেলবো তোদের।
কথাটা বলে অভ্র শিশিরকে মারতে নিলে শিশির ওকে ধরে অনেক মারলো আর বললো।
তুই আমার আপুকে কষ্ট দিয়েছিস,ওকে মারতে চেয়েছিস,আমার কহিনুরের উপর হাত তুলেছিস,আজ তোকে আমি ছাড়বো না আজ তোকে আমি মেরেই ফেলবো,কথাটা বলে নিজের বন্ধুক তাক করলো অভ্রের দিকে,অভ্র হেসে বললো।
তুই আমায় মারবি না শিশির আমি জানি,আমায় মেরে জেলে তো আর জীবন কাটাতে পারবি না।
হা হা হা,তোর কি মনে হয় তোর মতো মশা মারতে আমি জেলের বন্ধি দেওয়াল ভয় পাবো,তবে শুনে রাখ শিশির রায়হান খান কিছুই ভয় পায় না কখনো,গুড বাই দুলাভাই সাহেব।ল
এবার অনিলও একটা রিভালভার তাক করলো অভ্রের উপর।
আমারও যে তোর সাথে অনেক হিসাব বাকি আছে অভ্র, নিয়ে যা।
কথাটা বলার পর অনিল শিশির একসাথে গুলি চালাবে তখনি সেখানে পুলিশ চলে আসে,তারপর অনিল শিশিরকে আটকায় ওরা।
আপনারা আইন নিজেদের হাতে তুলে নিবেন না,আমরা উনাকে দেখছি।
তারপর পুলিশ ওকে নিয়ে গেলো,ভোরকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বাঁচানো গেলেও ওর বাচ্চাকে বাঁচানো গেলো না,ভোর এরপর একদম ভেঙে গিয়েছিলো,অভ্রের উপর বিভিন্ন চার্জ লাগিয়ে ওকে জেলে দিয়ে দেওয়া হলো,ওর ফাঁসির সাজা হয়ে গেলো,ওর বাঁচার আর কোনো পথ রইলো না,এদিকে ভোরকে সবাই মিলে স্বাভাবিক করতে লেগে গেছে,বিশেষ করে অনিল,অনিল সারাদিন ভোরের সাথে সেই আগের মতো খুনসুটি আর দুষ্টামিতে মেতে থাকে, সবার প্রচেষ্ঠায় এখন ভোর অনেকটা স্বাভাবিক আছে,এভাবেই কেটে গেলো চার মাস,ভোরের অবস্থার জন্য ওদের বিয়ের ডেইট ওফ করে রাখা হয়েছে বর্তমানে, এদিকে শিশির কহিনুর।
শিশির ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিলো আর নুর ওর কোলে বসে শিশিরের উন্মুক্ত বুকে নিজের আঙুলে কাল্পনিক কিছু আঁকিবুঁকি করছিলো,এমনিতেই খেলা করছিলো,হঠাৎ নুর ওকে জিজ্ঞেস করলো।
আপনার আর অনিল ভাইয়ার সব কথা শুনে আমি তো পুরো হা,আপনারা সবকিছু জানতেন আর আমাদের কিছু বললেনই না,আপনিও তো পারতেন আমায় বলতে?আপনি আমায় বললেন না কেনো?
তুমিও তো সব জানতে তবে আমায় বললে না কেনো?
কি করে বলতাম,শুনার পরপরই যে আপনি বন্ধুক নিয়ে তাঁড়া করতে যেতেন অভ্রকে কোনোদিক ভাবতেনই না।
তাই বলে ওমন পাকনামি করে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে ওই অভ্রের পিছন ছুটবে তুমি?
তো কি করতাম আমি,আমার সেদিন এটা ছাড়া আর কোনো বুদ্ধি আসছিলো না মাথায়।
আসবে কি করে মাথায় যে কুবুদ্ধিতে ভরা।কথায় কথায় পাকামি করে নিজেকে বিপদে ফেলো, আমার তোমাকে ভালোই চেনা আছে তাই ওসব বলি নি তোমায় বুঝেছো।
হুহ,কি মাস্টারমাইন্ড উনি।
আচ্ছা বাদ দেন আর আগে বলেন সেদিন তো আপনি ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন তবে তারপর আপনি আমার পিছন আসলেন কি করে।
সেদিন আমি ঘুমোই নি ঘুমানোর নাটক করছিলাম,তুমি বের হবার পরপরই আমরা বের হই,কারন অভ্রের প্লান আমাদের জানা ছিলো,কিন্তু সেদিন ট্রাফিকে আটকা পড়ায় আমাদের ছুঁটে সে জায়গায় যেতে হয় তাই দেড়ি হয়েছিলো,কিন্তু হ্যাঁ তোমার ঘুম পারানোর ট্রিকটা কিন্তু সেই ছিলো।আমার প্রাণপাখিটা এতো ট্রিক জানে আমার জানা ছিলো না।
কথাটা বলে শিশির দুষ্টু চাহনিতে তাকিয়ে রইলো কহিনুরের দিকে,কহিনুর লজ্জায় লাল হয়ে বললো।
ইশ,আপনিও না।
তারপর মুখ লুকালো শিশিরের বুকে।
চলবে………….