#শিশিরের_কহিনুর,০৭,০৮
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_০৭
উপরে তাকাতেই দেখলাম বজ্জাতটার চিন্তিত চোখখানা আমার দিকেই দৃষ্টিমান,বাহুডরে শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ করে আমাকে কোলে নিয়ে বসে আছে,ওর কোলে থাকা অবস্থায় একজন ডাক্তার আমায় চেক আপ করছেন।আমার ওকে দেখতেই সেই ক্ষনের কথা মনে পরে গেলো আর আমি ওর থেকে ছিটকে দূর হয়ে গেলাম।
কি হয়েছে লক্ষিটি এমন করছো কেনো,তোমার শরীর খারাপ করছে বুঝি।
নো এস আর কে সাহেব আমি চেক আপ করে যা বুঝলাম উনি একদম ঠিক আছেন।
ওই ডাক্তার তোর শরীর আর আমার কহিনুর এর শরীর কি এক নাকি যে ঠাস করে বলে দিলি যে ও ঠিক আছে,আগে ও বলবে ও এখন কেমন ফিল করছে,আর যদি ও বলে ওর শরীর খারাপ করছে তবে তোর শরীর আর ভালো থাকবে না এই বলে দিলাম।
কথাটা শুনে ডাক্তার একটা শুকনো ঢোক গিললো,আমি নিজের ভয় এখনও কাটিয়ে উঠতে পারছি না,না জানি ছেলেটির এখন কি হাল,আর এসব শুধুই আমার জন্য হয়েছে,তাই খারাপ লাগছে অনেক,এখন আর এই উন্মাদকে ক্ষেপাতে চাই না আমি তাই স্বাভাবিক স্বরে বলার চেষ্টা করলাম।
আমি একদম ঠিক আছি,বাট আমি এখন বাড়ি যেতে চাই,প্লিজ আমায় বাড়ি নিয়ে দিয়ে আসেন।
আমার ময়নাটা বাড়ি যেতে চায়,আচ্ছা ঠিক আছে চলো।
কথাটা বলেই আবার কোলে তুলে নিলো,সামনেই নিজের বাবার – চাচার বয়সী ডাক্তার দাঁড়িয়ে আছে একটু লজ্জাশরম দেখালে কি যেতো এর,কথায় কথায় কোলে নেয় যেনো আমি হাঁটতে পারি না।শয়তান লোক একটা,আল্লাহ যে কখন আমায় এর থেকে মুক্তি দিবেন একমাত্র উনিই জানেন,উনি ছাড়া যে আমাকে বাঁচানোর আর কেউ নাই।যাকগে বাড়ি নিয়ে এলো আমায়,তারপর আবার কোলে করে বেডরুমে নিয়ে এসে আমাকে বেডে বসালো,তারপর আমার পাশে বসে আমার হাত ধরতে চাইলে আমি হাত সরিয়ে নিলাম,এরপর আমার হাতটা জোর করে টেনে নিয়ে নিজের হাতে আবদ্ধ করলো আর বললো।
আমি জানি তুমি আমাকে ভয় পাও,আমাকে হিংস্র মনে করো,কিন্তু কি করবো মায়াবতী,আমি যে তোমার পাগল,কেউ তোমার কাছে আসবে একথা ভাবলেই আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়,তুমি যে শুধুই আমার,অন্য কাউকে কখনোই আমি তোমার পাশে সহ্য করতে পারবো না,শেষ করে দিবো আমি সবকিছুই,৷। আচ্ছা যাকগে এসব হয়েছে এবার রেস্ট করো তারপর পড়াশোনা করবে কেমন,এবার আমি চলি।
কথাটা বলে উনি চলে যেতে নিলে আমি উনার হাত ধরে নিলাম,উনি আশ্চর্য হয়ে পিছন ঘুরে তাকালেন,আমি থরফরিয়ে উনার হাত ছেড়ে দিলাম আর কাঁপা কন্ঠে বললাম।
আমি চাই না আপনার আর আমার কথাটা আমার পরিবার জানুক,ঘরের কাজের বুয়া আন্টি তো আপনাকে আমার সাথে দেখে ফেলেছেন যদি আপিকে বলে দেন।এবার উনি ঠোঁটের কোনে আলতো হাসি ঝুলিয়ে বললেন।
ও তুমি চিন্তা করো না,যতোদিন না তুমি আমাদের সম্পর্ককে মেনে না নিচ্ছো ততদিন তোমার পরিবার কিছুই জানবে না,তবে হ্যাঁ যেদিন তুমি মেনে নিবে সেদিন কিন্তু বিয়ের সানাই বাজবে,আর কাজের বুয়াকে নিয়ে তুমি চিন্তা করো না,টাকা সব করাতে জানে,হা হা,আচ্ছা তবে চলি সুইটহার্ট
কথাটা বলে উনি আমার কপালে আলতো করে নিজের ঠোঁটজোড়া ছুঁইয়ে দিয়ে চলে গেলেন,আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম উনার যাওয়ার পানে,কি যে করি এভাবে কিভাবে বেঁচে থাকবো আমি,আমার নিশ্বাস নেওয়াই যে দূরুহ হয়ে পড়েছে,যাকগে সন্ধ্যায় আপি দুলাভাইকে নিয়ে ফিরলেন,বেচারা দুলাভাইয়ের সে কি হাল করিয়েছে বজ্জাতটা,ডাক্তার উনাকে রেস্ট করতে বলেছেন তাই উনি রেস্টে আছেন,আপির কান্নাকাটি এখনও থামে নি আমি যথাসাধ্য উনাকে শান্তনা দিলাম,আপি নাকি জিডি করতেও গিয়েছিলেন থানায়,কিন্তু কেউ না কি উনার জিডি নেয় নি নি,নিবে কেমনে শালা খচ্চরের সাথে যে টক্কর পড়েছে, বেচারি আপি তো আর জানে না সে কথা,আপিকে শান্তনা দিয়ে খাইয়ে নিজের রুমে এসে বিছানায় চিং হয়ে পড়লাম,তারপর মনে হলো ছেলেটির কথা, ফোন করলাম কনিকাকে আমার জ্ঞান গেলেও ওর তো জ্ঞান ছিলো ও হয়তো জানে ওই ছেলেটার কি অবস্থা হয়েছে শেষ পর্যন্ত, ওকে ফোন করলে ও আমার হালচাল জিজ্ঞেস করলো,আমাকে নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলো ওর কথায় বুঝলাম,ওকে সব জিজ্ঞেস করলে ও বললো যে কালকে সকালেই না কি সামনাসামনি সব বলবে,তারপর আর কি ফোন রেখে ঘুমের পৃথিবীতে পারি জমালাম, মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভাঙলো আমার,নিজেকে কারো বুকে আবিষ্কার করলাম,চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি ওই ব্যাঙটা,অনেক রাগ হলো আমার,এখন কি আমি ঘুমটাও স্বাধীনভাবে ঘুমাতে পারবো না,অসহ্য,হঠাৎ নিখুঁতভাবে খেয়াল করলাম ওই লোকটার চেহারার দিকে,ঘুমন্ত অবস্থায় লোকটাকে কতো বিমোহিত লাগছে দেখতে,কাউকে ঘুমন্ত অবস্থায় এতোটা মায়াবী লাগতে পারে ওকে না দেখলে হয়তো জানতামই না,লোকটাকে এখন যে একদমই হিংস্র মনে হচ্ছে না আমার কাছে ,হঠাৎ ইচ্ছে করলো লোকটার ফর্সা গালের হালকা দাঁড়ির উপর হাত বুলাই,এমন অদ্ভুত ইচ্ছা এর আগে কখনো হয়নি আমার,সব লজ্জা শরম এক সাইড করে হাত বাড়াচ্ছি এই হিংস্র মানবের মায়াবী মুখের পানে,হঠাৎ মনে পড়লো এর কিছু হিংস্রতা,ভাবলাম এখনই চান্স এর থেকে একটু হলেও প্রতিশোধ নেওয়ার,আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলো না এবার দেখবি বজ্জাত থাপ্পড় কাকে বলে,তারপর গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে দিলাম বেটার গায়ে ঠাস করে একটা বসিয়ে আর ঝটপট এর বুকে আবারও ঘুমের বাহানায় পরে রইলাম।
এদিকে আরোহীর থাপ্পড়ে শিশির জেগে গেলো,বুঝতে পারলো না কিছু,আশপাশ তাকিয়ে আর কিছু বুঝতেও চাইলো না,বরং আরোহীকে নিজের বুকে দেখে ওর মায়াবী মুখের পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে একটা মৃদ্যু হাসি দিয়ে ওর কপালে অধর ছুঁয়ালো আর আবারও শুয়ে পড়লো ওকে বুকে নেওয়া অবস্থায়। এদিকে আরোহী।
আরে এ কি বজ্জাতটার কি থাপ্পড় টা লাগে নি,ধুর এজন্যই মা বেশি বেশি দুধ খেতে বলতো যাতে শক্তি বাড়ে,মায়ের কথা কখনোই শুনি নি তাই আজ পস্তাতে হচ্ছে আমায়,ধুর কি যে করি,কোথায় যে যাই,বর্তমানে তো ঘুমের দুনিয়ায় যাই অনেক ঘুম আসছে আমার,।
পরদিন সকালে উঠে আর বজ্জাতটাকে পেলাম না পেলাম গত দিনের মতো একটা চিরকুট,সাথে কিছু ফালতু রোমান্টিক ডায়লগ,আর একটা তাজা গোলাপ পেলাম,যটপট ফুলটা ছিঁড়ে ফেলে দিলাম ডাস্টবিনে, তারপর রেডি হলাম কোচিং-এর জন্য,আজকে আসতে দেড়ি হওয়ায় কনিকার সাথে কালকের কথা আর বলা হলো না,ভাবলাম কোচিং শেষে যাওয়ার সময় কথাটা তুলবো,এখন কোচিং করছি,ক্লাসে গল্প করা এটা ওটা দুষ্টুমি করার স্বভাব আমার এখনও যায় নি,আজও তাই করছি,হঠাৎ স্যারের চোখে বাঁধলাম,স্যার সোজা বাক্যে বললেন।
মিস আরোহী চৌধুরী নুর সেই কখন থেকে দেখছি আপনি ক্লাসের রুল্স ভাঙছেন,আমি আপনাকে আরও দুবার সতর্কও করেছি আপনি তারপরও থামেন নি,এবার আর আপনাকে চান্স দেওয়া যাবে না, প্লিজ আপনি বাইরে যান,পেটলা স্যারের কথা শুনে মুখটা অসহায় বানিয়ে ক্লাস থেকে বেরুচ্ছিলাম,যেনো আমি ভাজা মাছ উল্টিয়ে খেতে পারি না।তখনি খেয়াল করলাম একটা উড়ন্ত স্টিলের স্কেল এসে হাতে বিধলো স্যারের,সাথে সাথে স্যার চিৎকার করে উঠলেন,তখনি রুমে প্রবেশ করলো সেই ব্যাঙটা একটা ডেবিল লুক নিয়ে,সবাই সাথে সাথে খাঁড়া হয়ে গেলো আবাক স্বরে এস আর কে বলে,ব্যাঙটা স্কেলটা যেখানে ঢুকেছে সেখানে নিজের হাতে আরও চেপে ধরলো আর ঘাড় বেকিয়ে শান্ত স্বরেই বললো।
জানিস মাস্টার লোকে বলে, অনেক লোককেই না কি সুখে থাকতে ভুতে কিলায়,আরে মাস্টার সাহেব আপনি কোচিং-এর জন্য যথেষ্ট টাকাপয়সা পাচ্ছেন,সে অনুযায়ী পড়াবেন,সবাইকে শাসাবেন নিজের কথা শুনাবেন ভালো কথা,কিন্তু আপনি শুধু শুধু কেনো আমার প্রাণের দিকে যেতে গেলেন,আরে ও তো আমার প্রাণ ওর যথেষ্ট ক্ষমতা আছে নিজের যা ইচ্ছা তা করার,কিন্তু ওকে শাসানোর ক্ষমতা যে কোনো মানুষের নেই,কেনো বুঝলি না রে মাস্টার,এর জন্য যে তোকে অনেক রাত পোহাতে হবে।
এদিকে মাস্টার মশাই মানে স্যার চিৎকার করে করে বলতে লাগলেন, আর হবে না এস আর কে সাহেব,আমি জানতাম না উনি আপনার কিছু হন,আমায় মাফ করে দিন,বলতে বলতে উনি জ্ঞান হারালেন,উনার হাতের যেখানে স্কেলটা ঢুকেছিলো সেখানটার চারিদিক নীল বর্ণ ধারন করেছে,হয়তো স্কেলে বিষ জাতীয় কিছু ছিলো আমি সন্দেহ করছি,ব্যাঙটা ইশারা করলে দুজন গার্ড এসে স্যারকে নিয়ে গেলো,তারপর ব্যাঙটা নিজের হিংস্র লুকের উপর হাসির ছাঁপ এনে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো।
কেউ চিন্তা করবেন না,আসলে আপনাদের স্যার নিজের সীমা ভুলে গেছিলেন উনাকে নিজের সীমায় আনার ছোট্ট চেষ্টা করলাম আরকি,চিন্তা করো না উনি মরবেন না দু এক মাসের মধ্যে উনি আবারও তোমাদের জয়েন করবেন,ততোদিন তোমাদের নতুন এবং উনার থেকেও অনেক ভালো স্যার পড়াবেন উনার পরিবর্তে,তবে নতুন স্যার আসার আগে আপনাদের উদ্দেশ্যে একটি কথা।এই যে সামনে দাঁড়িয়ে আছেন উনি হচ্ছেন তোমাদের সবার ভাবি,দ্যা ফিউচার মিসেস এস আর কে,তাই কাউকে যাতে উনার সাথে মিস বিহেব করতে বা ওকে পটানোর চেষ্টা করতে না দেখি,না হলে মাস্টার সাহেবের হালের চেয়েও আরও ভয়াবহ হাল হবে আপনাদের মনে রাখবেন কথাটা।কথাটা বলে ব্যাঙটা প্রস্থান করলো সেখান থেকে,সাথে সাথে কয়েকটা মহিলা গার্ড এসে আমার আশপাশ ঘেরাও করে দাঁড়ালো,নতুন স্যারও ক্লাসে এসে পড়লেন,সবাই এখনও আমার দিকে তাকিয়ে আছে,ছেলেরা অসহায় ভঙ্গিতে আর মেয়েরা হিংসাময় ভঙ্গিতে, মেয়েগুলো যেনো আমাকে গিলে খাবে,যতোক্ষণ ওই ব্যাঙটা ছিলো একএকটা হা হয়ে তাকিয়ে ছিলো ওর দিকে,এদিকে স্যারের যে এ হাল করেছে বজ্জাতটা এটা নিয়েও কারো মাথা ব্যাথা অনুভব করলাম না আমি,এরা তো শুধু ওই শালা বজ্জাতকে দেখতে পাগল ছিলো,এখন কয়েকটা মেয়েকে এস আর কে এর হবু বউয়ের কথায় আফসোস করতেও শুনলাম,এমনকি আমার পাশে থাকা কনিকাও বললো।
ইশ, যে এস আর কে কে বর বানাবো ভেবেছিলাম সে অবশেষে আমার জিজু হয়ে বসলো।
এস আর কে?
আরে তুই এস আর কে কে চিনিস না,চল বেঞ্চে বস আমি বলি,শুন এবার,ইনি হলেন এস আর কে,শিশির রায়হান খান,খান গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি এর একমাত্র মালিক, চার বছর আগে উনি লন্ডন থেকে পড়ালেখা করে দেশে ফিরেছেন, তারপর উনি নিজের প্রচেষ্টায় কোম্পানিটা গড়ে তুলেন,আর মাত্র চার বছরেই উনি কোম্পানিটাকে উন্নতির শীর্ষে নিয়ে গেছেন,উনি এখন দেশের মোস্ট সাকসেসফুল বিজনেসম্যান,শহরের কেই বা উনাকে না চিনে,বাট উনার তোর সাথে পরিচয় কেমনে,আর তুই দেখি উনার বিষয়ে কিছুই জানিস না।
ওসব পরে বলবো আগে তুই বল,তুই এতো কিছু উনার বিষয়ে কেমনে জানিস,
আরে খবরের কাগজে,তাছাড়া দেশের বিজনেস নিউজের শির্ষেই যে উনারই অবস্থান থাকে এখন,তুই এসব কোথা থেকে জানবি সারাদিন আছিস তো ওই টিকটক লাইকি নিয়ে,আর তা না হলে ভিডিও গেইমস আর টিভিতে তামিল মুভি।
কনিকার এসব খোঁটা মার্কা কথা শুনে মুখটা ত্যাড়া করে ক্লাসে মনোযোগী হলাম।
তারপর ক্লাস শেষে ভাবলাম ওকে সবকিছু বলবো আর ওর কাছ থেকে সব জানবো কিন্তু ওই ব্যাঙের এক ঝাঁক কাকের দল কি আর তা হতে দিচ্ছে,এগুলোকে ব্যাঙটা রেখে গেছে আমার দেখাশোনার জন্য,এই লেডি গার্ডগুলো আমার আশপাশ ছাড়ছেই না,এবার অনেক অসহ্য লাগলো,আমি চেঁচানো কন্ঠে ওদের বললাম।
আপনারা প্লিজ আমায় একটু স্পেস দেন হাত জোর করে বলছি নয়তো আপনাদের বসকে বলবো আপনারা আমায় মেরেছেন,তারপর আপনাদের একজনেরও হাড়গুড় পাওয়া যাবে না,আপনারা না হয় এখানে দাঁড়ান,আমি কোথাও যাচ্ছি না এই তো আমার বান্ধবীটার সাথে একটু আলাদা করে কথা বলতে চাইছি,প্লিজ।
তারপর কাকগুলো সেখানে দাঁড়ালো হয়তো ব্যাঙটার ভয় দেখিয়েছি বলো,আর কি করতাম আপনারাই বলেন,তবে ওরা থামলেও চোখগুলো আমার উপরই ন্যাস্ত,কি অসহ্য লাগছে রে বাবা,যাকগে কনিকাকে আড়ালে আনলাম আর শুনতে লাগলাম কালকের ঘটনা,তারপর কনিকা বললো কালকে আমি জ্ঞান হারাতেই ব্যাঙটা ছেলেটিকে ছেঁড়ে আমার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলো,আসলে তখন আমি অজ্ঞান হওয়ায় হয়তো ছেলেটি বেঁচেছে নয়তো কালকে ওই বজ্জাতটা ওকে যে মেরেই ফেলতো,বজ্জাতটা না কি তৎক্ষনাৎ আমাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে করে চলে যায়,কনিকা কিছু বুঝতে না পারায় সেখানে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো,কিছু লোক নাকি ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে যান,কনিকা জানতে পেরেছে ছেলেটির বিষয়ে এখনও কিছু বলতে পারছে না ডাক্তারেরা,জ্ঞান নাকি ফিরে নি এখনও,কথাটা শুনে অনেক খারাপ লাগলো আমার,প্রতিটা মুহুর্তে যে আমার মনে গড়ে উঠছে ঘৃণার পাহাড় ওই ব্যাঙটার জন্য,তারপর কনিকা কিছু বুঝতে না পারায় আমাকে সবটা জিজ্ঞেস করলো আমি এস আর কে কে কিভাবে চিনি এসব,তারপর শুরু করলাম প্রথম থেকে আমার দুঃখের কাহানী শুনানো,কিন্তু বেয়াদবটা সব শুনে বলে কি জানেন।
বাহ এমন আশিক কজন পায়,তুই তো খুব ভাগ্যবতীরে আরু।
আমার উঠলো রাগ, তাই রাগে গজ গজ করতে করতে বললাম,
এমন মানুষকে পেয়ে না কি কেউ ভাগ্যবতী ফিল করবে,আর যেই করুক আমি করবো না কোনোদিন,আমি যে ওকে শুধু ঘৃণা করি,শুধুই ঘৃণা।
দেখিস আজকে ঘৃণা করছিস, কিন্তু একদিন হয়তো পৃথিবীতে সব থেকে ভালো তুই ওকেই বাসবি।
তা কখনোই হবে না।
আচ্ছা দেখবো নে,এবার বাড়ি চল।
তারপর দুজন রিক্সায় চড়লাম,গার্ডগুলোও একটা কালো প্রাইবেট কারে চেঁপে বসে রিক্সার পিছনে আছে,উফ কি যে করি আমি যে মুক্ত হয়েও বন্ধি হয়ে আছি,এর থেকে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে।
চলবে…….
#শিশিরের কহিনুর
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ০৮
গাড়িটা হঠাৎ ব্রেক কষলে বেড়িয়ে এলাম অতীত থেকে,পরে না হয় আবার অতীত শুনবেন,এখন আমার বর্তমানের সাথে থাকেন,যাকগে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইবার সাহেব আমার ফালতু বর সাহেবকে ডাকলেন,উনিও ঘুম থেকে উঠলেন আরমোড়া ভেঙে,আমিও এবার উনার হাতের চিপা থেকে রেহাই পেলাম,তারপর উনি নেমে আমার হাত ধরে ভিতরের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করলেন,বিশাল সুদীর্ঘ বাড়িটা,কোনো রাজমহল থেকে কম মনে হচ্ছে না,এই বাড়িতে আমি আরও একবার এসেছিলাম মাত্র,তবে আর আসতে চাই নি,কিন্তু আজ থেকে এটাই মনে হয় আমার আসল ঠিকানা হবে,সুযোগ বুঝে কোথাও পালিয়ে যাবো ভেবে নিয়েছি মনে মনে,যাকগে বাড়ির কলিংবেলটা বাজাতেই একজন বৃদ্ধ লোক সদর দরজাটা খুলে দিলেন,খুলতেই দেখলাম কয়েকজন হাসিমুখে আর বাকিরা দাবানল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে,দৃষ্টিটা আমার দিকেই প্রখরভাবে নিক্ষেপ করা আছে,তৎক্ষনাৎ একটা মেয়ে নিজের লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে ছুঁটে এসে জড়িয়ে ধরলো আবার কুনোব্যাঙটাকে,উক্ত ঘটনা দেখে আমার কেনো যেনো একটু খারাপ লাগলো,আমি আবার পতীব্রতা মেয়ে হয়ে যাচ্ছি না তো,খারাপ লাগাটা আমার তখন বাড়লো যখম মেয়েটি ন্যাকা কান্না করে বলা শুরু করলো।
এস আর কে তুই এতোসময় কোথায় ছিলি,সেই কবে থেকে তোর পথ চেয়ে বসে আছি,সবাই বলেছে তুই নাকি বিয়ে করে বউ নিয়ে আসছিস,বাট বেবি আমি ওগুলাতে একটুও বিশ্বাস করি নি,তুই তো শুধুই আমার,বল?ওই মেয়েটা নতুন কাজের লোক তাই না,দেখতে তো কাজের লোকই মনে হচ্ছে।
কথাটা শুনে আমার অনেক খারাপ লাগলো,চোখ বেয়ে পড়লো দুফোঁটা জল,মাথা নিচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি আমি,উনি ধাক্কা দিয়ে মেয়েটিকে নিজের থেকে সরালেন আর কানের নিচে বসিয়ে দিলেন নিজের হাতে একটা আর অন্য হাতে আমার হাতখানা আকরে ধরে বললেন।
দেখ মাহেরা তুই আমার ছোটবেলার ফ্রেন্ড তাই আমার স্ত্রীকে কাজের মেয়ে বলায় তোর বেশি কোনো শাস্তির ব্যবস্থা করি নি,তবে সেকেন্ড চান্স আমি দেই না কথাটা যেনো মনে থাকে,ও আমার স্ত্রী,এখানে উপস্থিত সবার উদ্দেশ্য বলছি ও হচ্ছে মিসেস এস আর কে আর ওর সাথে কারো কোনো ধরনের মিস বিহেব আমি সহ্য করবো না কথাটা যেনো সবার মনে থাকে,আর তোকেও যেনো আলাদা করে বুঝাতে হয় না মাহেরা।আমি ওকে এখানে নিয়ে আসতাম না কিন্তু ও একা থাকতে পছন্দ করে না তাই ওকে তোমাদের মাঝে নিয়ে এসেছি,আর আশা করি কেউই ওকে নারায করবে না,ও নারায হলে কিন্তু আমি নারায হবো আর আমি নারায হলে কি হবে সবার তা জানাই আছে।
উনার কথা শুনে পিছন থেকে দাদিমা যাকে আমার বাংলা সিনেমার রিনা খানের থেকে একটুও কম মনে হয় না উনি চেঁচালো কন্ঠে প্রতিবাদ করলেন ব্যাঙটার।
দাদুভাই তুমি আমার গর্ব,আমার অহংকার তুমি এমন কিছু করবে আমি কখনোই ভাবি নি,মাহেরা তোমাকে সেই ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসে,ওর সাথে তোমার বিয়ে আমরা সেই ছোটবেলাই ঠিক করে রেখেছি আর তুমি কি না ওই দুটাকার মেয়েকে বউ করে ঘরে নিয়ে এসেছো।
কথাটা শুনা মাত্রই ব্যাঙটা রেগে তেঁড়ে গিয়ে টেবিল থেকে ভারী কিছু নিয়ে দেয়ালে ছুঁড়ে মারলো আর রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলতে লাগলো।
আমিও তোমাকে অনেক সম্মান করি দাদীমা,আজ তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে আমার স্ত্রীকে দুটাকার মেয়ে বলার প্রতিদান অনেক ভারী ভাবে দিতে হতো ওকে, আজ বলেছো ভালো কথা আর যেনো এ ঘরের কাউকে আমি আমার স্ত্রীর অমর্যাদা করতে না দেখি,এই বলে দিলাম,নয়তো জিনিসটা কারো জন্যই ভালো ঠেকবে না।
হয়েছে ভাই এখন আর মাথা গরম করিস না তো,নতুন বউকে এরকম কতোসময় দরজায় দাঁড় করিয়ে রাখবি চল ওকে ঘরে নিয়ে চল।
ওকে তুই ভালো ভাবে আমার রুমে নিয়ে যা আপু,আমার একটু কাজ আছে আমি আধ ঘন্টার মধ্যে আসছি,এতোসময়ে যেনো আমার কহিনুর এর কোনো কষ্ট না হয় সেটা দেখার দায়িত্ব কিন্তু তোর,ওকে আমি কোলে করে রুমে নিয়ে যেতে চাইছিলাম কিন্তু হয়তো ঘরের কিছু সিনিয়র সিটিজেন তা সহ্য করতে পারবে না,তাই সাদাসিধা ভাবেই ওকে রুমে নিয়ে যা আমি আসছি।
তারপর উনি চলে গেলেন আমার গালে নিজের হাতে মমতাময়ী একটা স্পর্শ দিয়ে,ভোর আপু আমায় ভিতরে নিয়ে গেলেন,ঘরের সিনিয়র সিটিজেনেরা আর সাথে মাহেরাও স্থান ত্যাগ করলো মুখ আঁকাবাঁকা করে,মিষ্টি মা,রোদেলা আর বড় আপি মানে ভোর আপি সেখানে আছেন হাসিমুখে,কিন্তু হঠাৎ এদের পিছনে থাকা কারো উপর আমার নজর পড়লো,উনাকে দেখে আমার চিনতে একটুও সময় লাগলো না,উনাকে দেখার পর আমি ভয়ে দুকদম পিছিয়ে গেলাম,হাত পা যেনো কাঁপতে শুরু করলো আমার।
নুর তুমি ভয় কেনো পাচ্ছো,আরে উনাকে ভয় পেয়ো না,উনি তো আমাদের মতোই তোমাকে পছন্দ করে,উনি হলেন তোমার দুলাভাই,মানে।
আরে আরে দাঁড়াও আপি আমি বলি,উনি হলেন আমাদের ভোর আপির প্রণণাথ,হা হা হা।
দেবো একটা শয়তান কোথাকার।
ভোর আপির লজ্জা মাখা মুখ আর রোদেলার কথায় আমি বুঝতে পারলাম লোকটা বড় আপির স্বামী, কিন্তু এই শয়তান লোক উনার মতো ভালো আপুর স্বামী কি করে হতে পারে,আপি আমার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে বললেন।
আরে চলো তো অনেক জার্নি করে এসেছো এবার রেস্ট করবে,তাছাড়া আজ তো আবার বাসর রাত,চলো চলো রুমে চলো।এসব কথা বলে সবাই আমাকে লজ্জা দিয়ে দিয়ে রুমে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমার যেনো কোনো কথাই কানে যাচ্ছে না আমি শুধু ওই লোকটার দিকে বার বার মাথা ঘুড়িয়ে তাকাচ্ছি,আর লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে যাচ্ছে।যাকগে রুমে নিয়ে ভোর আপি আমায় বেডে বসালেন।
আসলে ভাই লাস্ট মোমেন্টে বললো তাই তাড়াহুড়ো করে রুমটা এতো সুন্দর করে সাজাতে পারি নি,হয়তো তোমার ভালো লাগবে না।
বলে কি এই আপু,আমার মনে হচ্ছে পুরো একটা বড়সড় ফুলের দোকানে বসে আছি,এমন সুন্দর বাসর ঘর আমি এর আগে জন্মেও দেখি নি আর উনি কি না বলছেন সুন্দর করে সাজাতে পারেন নি।উনি আবার বললেন।
আমি জানি নুর ভাই তোমাকে জোর করে নিজের জীবনের সাথে বেঁধে রেখেছে, তুমি হয়তো ওকে ভুলভাবছো,ওর ইনটেনশন কিন্তু খারাপ না,ও তোমাকে ভালোবাসে,আর যেকোনো মুল্যে ও তোমাকে নিজের কাছে ধরে রাখতে চায় আর তাই এমন করে।
হ্যাঁ রে মা,বড় আপু চলে যাবার পর ওই ছেলেটাকে কখনো কারো কাছে ভালোবাসার অধিকার চাইতে দেখি নি,সব ভালোবাসা সব সম্পর্কও থেকে নিজেকে ঘুটিয়ে নিয়েছিলো,যাকে আমি সবসময় ছেলের চোখে দেখেছি সে কখনোই আমাকে মায়ের মর্যাদা দেয় নি।আমি ওকে পেটে না ধরলেও ওকে আমি নিজের ছেলে থেকে কম ভাবি নি কখনো,সব সময় এই আশায় থাকি একদিন না একদিন হয়তো ও আমায় মা বলে ডাকবে।
কথাটা বলে মিষ্টি মা কান্নামিশ্রিত চোখগুলো মুছলেন, আর আবারও বললেন,
ওকে তুমি কখনো কষ্ট দিও না মা,এই প্রথম ছেলেটার চোখে আমি ভালোবাসার কাঙালি দেখতে পেলাম বড় আপু চলে যাবার পর,আর তোমার কাছ থেকেও যদি ও ভালোবাসাটা না পায় তবে যে পাগল হয়ে যাবে রে মা।ছেলেটাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।
ইশ আপু মা তোমরা কি শুরু করেছো এসব,আমার পাঁচটা না দশটা না একটা মাত্র ভাবী কতো দূর থেকে এসেছে উনাকে একটু রেস্ট করতে দেবে না বুঝি,কিন্তু ভাবি তুমি জানো ভাইয়া আমায় একটুও ভালোবাসে না,বলে আমি নাকি সৎ,কিন্তু এক মায়ের গর্বে না জন্মালে কি ভাইবোনের সম্পর্কের মতো মধুর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় তুমি বলো?
একদম না ময়না,তুমি কান্না করো না দেখো একদিন তোমার ভাই তোমাকে ঠিকই আদর করবে,আর না করলে কি তোমার ওই গুন্ডা ভাইয়ের বদলে আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসবো ওকে।
ইয়ে,আমার লক্ষি ভাবি।
হয়েছে এবার চল,মেয়েটাকে একটু রেস্ট করতে দে অনেক দূর থেকে এসেছে।
হুম আমিই তোমাদের মানা করে আমিই এসব সেন্টি কথা শুরু করে দিলাম না,ওকে এখন আর নো সেন্টি কথা অনলি রেস্ট,তবে ভাবি তুমি রেস্ট করো আমরা আসি,আর একটা কথা ভাইয়া কিন্তু একটু সময়েই চলে আসবে কেমন।হা হা হা
কথাটা বলে আমায় লজ্জার সাগরে ডুবিয়ে ফাজিলটা ভাগলো,বড় আপু আর মিষ্টি মাও হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলেন রুম থেকে।
এদিকে ড.শায়েলা খানের রুমে বসে আছেন ড.আশরাফ খান,মি.আজাদ রহমান,মিসেস আয়েশা আজাদ রহমান,আর মাহেরা মি.এন্ড মিসেস রহমানের একমাত্র মেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে নেকা কান্না করছে,মেয়ের অবস্থা দেখে আজাদ রহমান বললেন।
এটা কি হলো খালাজান,আপনি তো কথা দিয়েছিলেন আমাদের মেয়ে আপনাদের ঘরের বউ হবে কিন্তু মাঝপথে শিশির এটা কি করলো,একটা রাস্তার মিডিলক্লাস মেয়েকে বউ বানালো,দেখেন আমার মেয়েটার কি হাল হয়েছে কান্না করতে করতে,ওই ছোটলোক মেয়ের জন্য সবার সামনে শিশির আমার মেয়ের উপর হাত উঠাতে পারলো খালাজান?কথাটার সাথে তাল মিলিয়ে আশরাফ খানও বললেন।
এটা একদম ঠিক করে নি শিশির,ও দিন দিন নিজের সব লিমিট ক্রস করে যাচ্ছে,এভাবে ও যা ইচ্ছা তা তো আর করতে পারে না,আমি ওর সাথে কথা বলবো।
কথাগুলো শুনে শায়েলা খান গম্ভীর কন্ঠে বললেন।
তোমাকে কোনো কথা বলতে হবে না আশরাফ,এমনিতেই তোমার আর দিলারার করা ভুলের কারনে আজকে শিশির এইরকম,ওই ছোট্ট শিশিরকে আমি তখন কেমনে শামলিয়েছি তা শুধু আমিই জানি,সারাদিন মা মা বলে কাঁদতো,আমার প্রাণটা তখন বেড়িয়েই যেতো,যখন থেকে বুঝতে পারলো ওর মা আর ফিরে আসবে না তখন থেকে নিজেকে একাই ঘুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে,সব কিছুতেই নিজে নিজেকে প্রাধ্যান্য দিয়ে গেছে,তাই ওর অন্যের কথা সহজে মেনে নেওয়া মোটেও সহজ নয়,দাদুভাইটা আমার আমাদের সাথে থাকতো না এ ব্যাথা যে আমায় রোজ কুঁকড়ে খেতো,আজ যে কারনেই হোক ও আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে,আর ওকে এবার আমি সহজে হাতছাড়া করবো না,আর যেখানে কথা ওই রাস্তার মেয়ের,ওর স্থান এই আলিশান খান ম্যানশনে না নিজের ছোট্ট কুটিরেই হবে,তোমাদের কোনো কিছুই নিয়ে চিন্তা করতে হবে না,যা করার সব আমিই করবো,শিশিরের ওয়াইফ শুধু মাহেরাই হবে,মিসেস মাহেরা শিশির রায়হান খান।
ড.শায়েলা খান দেশের বিশিষ্ট সার্জনদের একজন,উনার একমাত্র ছেলে ড.আজাদ খান উনিও বিশিষ্ট সার্জন,উনাদের নিজস্ব হসপিটাল রয়েছে,এছাড়াও মেডিক্যাল কলেজও আছে,উনারা সবাই মিলে তা দেখাশোনা করেন,সবাই বলতে মিসেস রুশানা খানও একজন ডাক্তার,তাছাড়া ভোর আর ওর স্বামীও ডাক্তার, আর ওদের ফুফাতো ভাই আকাশ, যার মা-বাবা ওর ছোটবেলাই মারা গেলে ও উনাদের সাথেই থাকা শুরু করে আর আকাশও একজন ডাক্তার,ওরা সবাই মিলে এসব দেখাশোনা করে,দেশে ওদের আর ওদের হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজের অনেক নাম,শুধু শিশিরই ওদের থেকে ভিন্ন রাস্তায় আছে,একাই নিজের পথ বেঁছে নিয়েছে,চার বছর আগে লন্ডন থেকে পড়ালেখা করে এসে বিজনেসে জয়েন করেছিলো আর চার বছরেই অনেক খ্যাতি লাভ করে নিয়েছে।
রাত ৩ টা প্রায়,
আমি এখনও বিয়ের সাজে বসে আছি বিছানায়,চারিদিকেই অজস্র ফুলের ঘ্রাণ বিমোহিত করছে আমায়,রুমটা খুব সুন্দর করে ডেকোরেট করা হয়েছে,তাছাড়াও দেয়ালে আমার অজস্র ছবি লাগানো হয়েছে,রুমের কালার কম্বিনেশনটা সেই হয়েছে,যেনো রুমটাকে নতুন করে সাজানো হয়েছে আমারই পছন্দমতো,শুধু এখানে আমি আসবো বলে,বিছানা থেকে উঠে রুমের সাজটা হাত নাড়িয়ে দেখতে যাবো তখনি দরজা খোলার শব্দে চুপ করে বসে পরি আবার বিছানায়,বুঝতে পেরেছি বজ্জাতটা এসেছে,এবার কি হবে আমার,যদি আমার সাথে কিছু করে বসে,সেই ভয়ে ইতিমধ্যে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে আমার।
চলবে….