শুকনো_পাতার_বৃষ্টি,০৪,০৫

0
585

#শুকনো_পাতার_বৃষ্টি,০৪,০৫
#ফারজানা_আক্তার
০৪

অন্তরীক্ষে আজ তারার মেলা। চাঁদ টাও বেশ গোলাকার আকৃতি ধারণ করেছে। আলোকিত হয়ে আছে সর্বত্র। ঝিরিঝিরি ঠান্ডা বাতাস বইয়ে চলেছে আপন মনে। জ্যোৎস্না মাখা এই রাতে উঠানে শীতল পাটি বিছিয়ে শুইয়ে আছে আহান সিয়াকে নিয়ে। বেশ জমে উঠেছে বাপ বেটির সম্পর্ক আবার। খুনসুটি করছে দুজন আর খেলছে। সিয়া আহানের নিজের মেয়ে না হলেও সিয়াকে অসম্ভব রকম ভালোবাসে আহান। যেনো পূর্বে কোনো সম্পর্ক ছিলো আহানের সাথে সিয়ার। ওদেরকে এভাবে আনন্দ করতে দেখে আদিবা আর ওদের কাছে গেলোনা। কিছুক্ষণ একা সময় কাটাতে দিয়েছে আদিবা বাবা মেয়েকে কারণ আদিবা জানে ওরা দুজন একে অপরকে অনেক ভালোবাসে। জন্ম থেকে নিজের বাবাকে কাছে পাইনি সিয়া তাই আহানকে বাবা রুপে পাওয়ার পর থেকে সিয়া ভীষণ দূর্বল হয়ে পরেছে আহানের প্রতি। সিয়ার জন্যই আজ আহান আর আদিবা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে পেরেছে। আদিবা এক নজরে তাকিয়ে আছে আহান আর সিয়ার দিকে। আঁড়াল থেকে বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখে নিজের মনকে শান্তনা দিচ্ছে এই বলে যে “বিধাতা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। সাইমন যদি আমার জীবন থেকে চলে না যেতো তাহলে এই মানুষটাকে পাওয়া হতোনা আমার। হাজার শুকরিয়া খোদার কাছে।”

মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় আদিবার। তখন সে অনেক চেষ্টা করে আবার ঘুমানোর কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসেনা। মনটা হঠাৎ কেমন চটপট করছে আদিবার। “জানিনা আগামীকাল সিয়াকে নিয়ে খান বাড়িতে গেলে কি হবে। আল্লাহ গো আমার মেয়েটাকে কেঁড়ে নিওনা আমার কাছ থেকে, সিয়া আমার বেঁচে থাকার শেষ সম্বল।” নিজে নিজেই এসব কথা বলছে বিড়বিড় করে আদিবা, চোখে জলও জমাট বেঁধেছে, অনুমতি পেলেই বুঝি গড়িয়ে পরবে জলগুলো কান্না হয়ে। কপাল ভাজ হয়ে গেছে চিন্তায় আদিবার। শুইয়ে থাকতে আর ভালো লাগছেনা ওর তাই ও উঠে বসে আছে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে মাত্র বাজে ১ঃ৪৪টা। বুকটা কাঁপছে আদিবার। খালেদা খাতুনের বলা কথাগুলো যেনো বারংবার কানে বাজছে ওর। পুরো রুম জুড়ে পায়চারি করছে ও।
“আমি যা করেছি নিজের স্বার্থে করলেও তোমাদেরকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি, প্লিজ ছেড়ে যেওনা আমায় তোমরা। তোমাদেরকে ছাড়া আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো।”
আহান ঘুমের মধ্যেই বিড়বিড় করে এসব বলছে। লক্ষ করেছে আদিবা কিন্তু কথাগুলো খুব আস্তে গুন-গুন করে বলায় আদিবা বুঝতে পারেনি কিছু। আদিবা এসে আবার শুইয়ে যায় নিজের জায়গায় এসে।

সকালে নামায পড়ে খাওয়া দাওয়া করেই খানবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ওরা। আফজাল খান ফোন করেছে আহানের কাছে, বাবার সাথে কথা বলা শেষ করেই আহান গাড়ি স্টার্ট দেয়। আদিবার মুখটা শুকনো হয়ে আছে। চিন্তার চাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে আদিবার চেহারায়। লক্ষ করে সবটা আহান। আহান সামনের দিকে তাকিয়ে বলে “এতো চিন্তা কিসের তোমার? অসুস্থ হতে হবেনা চিন্তা করে। আমি আম্মুকে বলেছি সিয়া আমার নিজের মেয়ে এবং তুমিও এখন থেকে সবাইকে এটাই বলবে সিয়া আমার মেয়ে। সবাই জানবে সিয়া আমার মেয়ে আর কিছু শুনতে বা বুঝতে চাইনা আমি।”
অবাক হয়ে শুনছে আদিবা আহানের কথা। তবে ভাবছে আবার সাইমনের কথা কারণ ও সিয়াকে দেখলেই বুঝে যাবে যে সিয়া ওরই মেয়ে কেননা ওদের ডিভোর্সের বয়স আর সিয়ার বয়স একই। মনে মনে বড্ড বেশি ভয় পাচ্ছে আদিবা। তবুও নিজের সব ভয় ভীতিকে কন্ট্রোল করে আদিবা বলে “আপনাকে একটা কথা বললে কিছু মনে করবেননা তো?”
“কিছু মনে করার কি আছে। বলো কি বলবে।”
“আসলে আমি তো খান বাড়িতে নতুন, কিছু জানিনা এখনো ওই বাড়ি সম্পর্কে। সানিয়া আপুর ব্যবহার খুব ভালো লেগেছে আমার, মেয়েটা বড্ড নিষ্পাপ কিন্তু আমার মাথায় একটা বিষয় আসতেছেনা।”
“কি বিষয়?”
“সানিয়া আপুর বিয়ের চার বছর হয়ে গেলেও উনি শ্বশুড় বাড়িতে যান না কেনো?”
“এই প্রশ্নের উত্তর আমি নিজেও জানিনা। ওর বিয়ের ছয় মাস আগেই ওর শ্বশুড় শ্বাশুড়ি মারা যায় একটা দূর্ঘটনায়, ওর শ্বাশুড়ি ছিলো আম্মুর বান্ধবী। আম্মুকে সবসময়ই বলতে শুনি যে শ্বশুড় শ্বাশুড়ি নাই আর সাইমনও বেশির ভাগ সময় দেশের বাহিরে থাকে ওখানে নতুন বিজনেস শুরু করেছে নাকি চারবছর আগে তাই সানিয়া ওখানে একা থাকতে পারবেনা বলে যেতে চাইনা। বিয়ের পর সানিয়া শুধু একরাত ছিলো সাইমনের বাসায় গিয়ে এরপর আর কখনো এক মুহুর্তর জন্যও যায়নি আর সাইমনও কখনো জোর করেনি। সাইমন যখনই দেশে আসে আমাদের বাড়িতেই থাকে।”

সাইমনের বাবা মায়ের মৃত্যুর কথা শোনে অজানা এক কষ্ট ভর করে আদিবার বুকে। সাইমন অবহেলা করলেও এই মানুষ দুজন ভীষণ ভালোবাসতো ওকে, সবসময়ই আগলে রাখতো। সাইমনের সাথে বিচ্ছেদের পর ইচ্ছে করেই আদিবা আর তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি কারণ উনাদের সাথে কন্টাক্ট থাকলে সাইমনের মায়া কাটাতে পারতোনা আদিবা কিছুতেই। নিজের অজান্তেই চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পরে আদিবার। আহান ড্রাইভ করছে সামনে তাকিয়ে তাই লক্ষ করতে পারেনি। চোখের জল মুছে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে আদিবা বলে
“তাহলে সানিয়া আপু স্বামীর সাথে বিদেশ গিয়ে থাকেনা কেনো? আমার তো মনে হচ্ছে কোনো কারণ আছে এর পেঁছনে।”
“তুমিওনা নাহ। কি কারণ হতে পারে বলো তো, ছেলে ভালো।”
“ওহ্”
“হুম। সানিয়া একা থাকতে পারবেনা হয়তো তাই যায়না স্বামীর সাথে। সাইমন কাজ নিয়ে একটু বেশিই ব্যস্ত থাকে।”

“কি কাজ নিয়ে এতো ব্যাস্ত থাকে তা আমার ভালো করেই জানা আছে।”
মনে মনে বলে আদিবা।

আহান ড্রাইভ করছে। আদিবা ঝিমাচ্ছে। গাড়িতে উঠলেই আদিবার ঘুম আসে। সিয়া হঠাৎ বলে আহানকে “বন্ধু গাড়ি থামাও।”
সিয়ার মিষ্টি মাখা নরম কন্ঠে আহান গাড়ি থামিয়ে দেয়। তারপর সিয়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আদুরে কন্ঠে বলে “এখানে তো কিছুই নেই বন্ধু। এখানে নেমে কি করবে? সামনে একটা রেস্তোরাঁ আছে সেখানে নামলে হিসু করতে পারবে।”
“আরে বোকা বন্ধু আমি হিসু করার জন্য গাড়ি থামাতে বলিনি।”
নিজের কপালে হাত মেরে বলে সিয়া। ওদের এমন কাহিনী দেখে কুটকুট করে হেঁসে ফেলে আদিবা। আদিবার হাঁসি দেখে কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায় আহান। আহান ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে তাকায় সিয়ার দিকে। সিয়া একগাল হেঁসে বলে “ওই দেখো কত বড় কাঁশফুল বাগান। চলোনা বন্ধু আমরা যায় ওখানে। প্লিজ প্লিজ চলোনা।”

মুচকি হাঁসে সিয়ার আচরণ দেখে আহান। আহান যাওয়ার জন্য গাড়ি থেকে নামতে গেলেই আদিবা শক্ত কণ্ঠে বলে উঠে “কোথাও যেতে হবেনা এখন। ক্লান্ত লাগছে বাসায় যাবো।”
আদিবার কথা শুনে মন খারাপ করে ফেলে আহান আর সিয়া। দু’জনেরই ইচ্ছে করছে কাঁশফুল গুলো ছুঁয়ে দিতে। আহান আদিবার কানে কানে ফিসফিস করে বলে “আমরা যাচ্ছি, তুমি আসলে আসো আর না আসলে অন্য ব্যবস্থা করতে হবে আমার।”
আদিবা ঢুক গিলে আর আমতা আমতা করে বলে “ক কী ব ব্যবস্থা?”
“দেখতে চাও?”
“উঁহু, বলুন শুনি।”
“কোলে করে নিয়ে যাবো।”
আহান এটা বলতেই আদিবা নিজে নিজে গাড়ি থেকে নেমে যায়। গাড়ি থেকে নেমে আদিবা বলে “থাকো তোমরা বাপ বেটি, আমি তোমাদের আগে চলে যাবো কাঁশফুল বাগানে।”
আদিবা এটা বলেই হাঁটতে লাগলো। কাঁশফুল বাগান টা রাস্তা থেকে একটু দূরে তাই কয়েক পা হেঁটেই যেতে হবে। আহান দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা ধরে আদিবার সাথে পা মিলিয়ে। আহানের কোলে সিয়া। হাঁটতে হাঁটতেই আহান বলে “জানো এই সময়গুলো আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়। এই মুহুর্তগুলো সারাজীবন বুকে জড়িয়ে রাখবো আমি।”
আদিবা কিছু বলেনা। চুপচাপ থাকতেই পছন্দ করে সবসময় আদিবা। আহান একটু একটু কথা বলতে চাই আদিবার সাথে কিন্তু আদিবা প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা কথা বলেনা।

ওরা তিনজন অনেক আনন্দ করতেছে কাশফুল বাগানে। সিয়া বিভিন্ন ভঙ্গিমা করছে আর সেগুলো ক্যামরাবন্ধি করছে আহান। সময়টা ধরে রাখা অসম্ভব হলেও স্মৃতি গুলো সহজেই বন্ধি করা যায়।

বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর হয়ে আসে ওদের। পথে রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাওয়া সেরে এসেছে তাই এসেই ফ্রেশ হয়ে নামায পড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় আদিবা। সিয়া আদিবার সাথে ঘুমালেও ওর আগে ঘুম থেকে উঠে যায়। সিয়া ঘুম থেকে উঠে দেখে আদিবা ঘুমিয়ে আছে, পুরো রুম খোঁজেও আহানকে না পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে সিয়া। ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সিয়া। সাইমন অফিস থেকে ফিরেছে। নিজের রুমের দিকে এগুতেই সিয়াকে দেখে দাঁড়িয়ে যায় সাইমন। সিয়া গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে আছে সাইমনের দিকে। মুখে মিষ্টি হাঁসি লেগেই আছে ছোট্ট পরীটার। সাইমন দুই পা সামনে এগিয়ে সিয়াকে বলে “এতো চেনা চেনা কেনো লাগছে তোমায় ছোট্ট পরী? কে তুমি?”

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

#শুকনো_পাতার_বৃষ্টি [০৫]
#ফারজানা_আক্তার

মামণি আমাকে না বলে তুমি এই রুম থেকে বাহিরে যাবেনা কখনো আর ওই আঙ্কেলটার কাছে একদম যাবেনা, বুঝেছো?”

মুখে হালকা হাঁসির রেখা টেনে সিয়া হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়। তখন আদিবা ওদের কে সামনাসামনি দেখে দ্রুত সাইমনের সামনে থেকে নিয়ে আসে সিয়াকে। ঘুম থেকে জেগে সিয়াকে পাশে না পেয়ে অস্থির হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আদিবা ওকে খুঁজতে আর দরজার সামনে আসতেই দেখে সাইমন আর সিয়া মুখোমুখি। আদিবা সিয়াকে এভাবে নিয়ে আসার পর সাইমন ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে থ হয়ে। পাঁচ বছর পর নিজের প্রাক্তন স্ত্রী কে এভাবে চোখের সামনে দেখবে কল্পনার বাহিরে ছিলো সাইমনের। আরো বেশি অবাক হলো সাইমন আদিবাকে আহানের রুমে যেতে দেখে। সাইমন বুঝে গেছে যে আহানের স্ত্রী আর কেউ নয় বরং আদিবা। নিজের চোখ কে যেনো কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারছেনা সাইমন।
“মেয়েটাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। পাঁচ বছরে একদম অন্যরকম হয়ে গেছে মেয়েটা। সৌন্দর্য যেনো বেড়ে গেছে দ্বিগুণ।” ভাবছে সাইমন।
প্রাক্তনকে সবসময়ই একটু বেশি সুন্দর লাগে আমাদের চোখে। যদিও আদিবা আহামরি কোনো সুন্দরী নয় গল্পের নায়িকা বা সিনেমার নায়িকার মতো। তবুও উজ্জ্বল শ্যামলাবর্ণ মেয়েটার মাঝে চোখ আঁটকে যায় সকলের।
সাইমন নিজের রুমে না গিয়ে চলে যায় খালেদা খাতুনের রুমে। খালেদা খাতুনের রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে বলে “মা আপনি বলেননি কেনো আমায় সত্যি টা?”

“বলা প্রয়োজন মনে করিনি তাই বলিনি।”
“বেশ, মানলাম প্রয়োজন মনে করেননি কিন্তু আপনি কি জানেন একটু আগে সামনাসামনি দেখা হয়েছে আমাদের।”
“এতে জানার কি আছে? এক ঘরে থাকলে দেখা হবে স্বাভাবিক।”
“কিছুই স্বাভাবিক না। আপনি বুঝতে পারছেননা বিষয়টা।”
হালকা কেঁশে খালেদা খাতুন বলেন “এতো বোঝাবুঝির কিছুই নেই। ভয় পেয়োনা আদিবা কিছুই বলবেনা আহানকে। আদিবা যাতে আহানকে কিছু বলতে না পারে সেই দায়িত্ব আমার।”
“তবুও আম্মু আমার ভালো লাগছেনা। এমনিতেই বিয়ের চার বছর হয়ে গেলেও সানিয়া এখনো আমাকে মেনে নিতে পারেনি।”
“মেনে নিক বা না নিক সংসার তো করছে, তোমার সাথে তো থাকছে। আর বিয়ের চার বছর হয়ে গেছে, এসব জানলেও সানিয়া এখন কিছু করতে পারবেনা। ও এখন বাধ্য হবে তোমার সাথে সংসার করতে শুধু একটা কাজ করতে হবে তোমার।”
“কি কাজ?”
“আমাকে নানি বানাতে হবে। একটা বাচ্চা হয়ে গেলে সানিয়া আর চাইলেও ছাড়তে পারবেনা তোমায়। আমি সানিয়াকে ভুল কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দিবোইনা কখনো।”

খালেদা খাতুনের কথা শুনে মন খারাপ করে ফেলে সাইমন। কিভাবে বলবে শ্বাশুড়িকে সানিয়ার সাথে যে তার তেমন কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়নি এখনো। আর সানিয়া তার মাকে এই কথা বলতেও নিষেধাজ্ঞা করেছে। সানিয়া বলেছে সাইমনকে তাদের মধ্যে যে স্বামী স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক নাই এটা যদি সে খালেদা খাতুনকে বলে দেয় তবে সানিয়া মুহুর্তেই ডিভোর্স দিয়ে দিবে ওকে। এই ভয়ে সাইমন কিছু বলেনা খালেদা খাতুনকে। বাবা মা মারা যাওয়ার পর খালেদা খাতুন ছাড়া আর কেউ নেই সাইমনের জীবনে তাই সে উনাকে হারাতে চাইনা।

*
সানিয়া সিয়াকে কোলে নিয়ে খেলা করছে। অল্প সময়েই মিশে গেছে সিয়া সানিয়ার সাথে। সন্ধ্যার পর আহান বাসায় ফিরে এসে দেখে ড্রয়িংরুমে বসে সানিয়ার সাথে খেলছে সিয়া। আহান বেশ খুশি হয় কারণ অনেকদিন পর সানিয়ার মুখে হাঁসি দেখেছে সে। আদিবা রান্নাঘরে সিয়া আর সানিয়ার জন্য পাস্তা বানাচ্ছিলো, আহান ডাক দিতেই ছুটে আসে আদিবা। আদিবা আসতেই আহান আদিবার হাতে ধরিয়ে দেয় আইসক্রিম চকলেট চিপস আরো কিছু খাবার। তখন আদিবা বলে “বাচ্চাদের বাহিরের খাবার এতো বেশি খাওয়ানো ঠিক নয়।”
“বেশি না হলে কম খাওয়াবে, সমস্যা কি?”
“আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।” এটা বলেই আদিবা রান্না ঘরে গিয়ে পাস্তা নিয়ে আসে ওদের জন্য। আহান রুমে যায় ফ্রেশ হতে। সানিয়া আদিবাকে বলে “ভাবি তুমি রুমে যাও ভাইয়ার কিছু লাগবে নাকি দেখে আসো। সিয়া মামণি কে আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”
আদিবা যেতে না চাইলেও জোর করে পাঠিয়ে দেয় আদিবাকে সানিয়া। আদিবা সিঁড়ি বেয়ে উঠে রুমের দিকে যেতেই মাঝখানে সাইমনের সাথে দেখা হয়ে যায় আবার। আদিবা সাইমনকে দেখে এড়িয়ে চলে যেতে নিলে ও বলে উঠে “খুব সুন্দর হয়ে গেছো আগে থেকে।”
কথাটা কর্ণকুহর হতেই থেমে যায় আদিবার পা জোড়া। তাচ্ছিল্যের হাঁসি দিয়ে আদিবা বলে “তাতে কি? আমি গরীব ঘরের মেয়ে। ফ’কি’ন্নি আমি।”
ভ্রু কুঁচকে সাইমন বলে “তোমার সাথে ঝগড়া করার মতো সময় আমার নেই।”
“আর আপনার দিকে তাকানোর সময়ইও আমার নেই। আমার স্বামী আর মেয়েকে নিয়ে প্রচুর ব্যস্ততা আমার।”
“তুমি থেকে আপনি হয়ে গেলাম? যাক বাদ দাও সেটা, তুমি না বললেও আমি কিন্তু জানি সিয়া আমার মেয়ে। যেদিন তোমার হাতে ডিভোর্স পেপার দিয়ে চলে যাচ্ছিলাম সেদিন তোমার মা বলেছিলো মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছো তুমি। আর একটু আগে সিয়াকে তুমি আমার সামনে থেকে এভাবে নিয়ে গেছো তাতেও কিছুটা সন্দেহ হয়েছে যে ওর সাথে হয়তো আমার কোনো সম্পর্ক আছে। সবশেষে আরেকটা কথা, আমাদের বিচ্ছেদের পাঁচ বছর আর সিয়ারও আনুমানিক পাঁচ বছরই হবে তাই তুমি না বললেও আমি বুঝেছি সিয়া আমার মেয়ে।”

সাইমনের কথা শুনে আর এক মুহুর্তও সেখানে দাঁড়ালো না আদিবা। এক ছুটে নিজের রুমে চলে আসে আদিবা। আদিবার মনে ভয় ঢুকে গেছে। বুকটা কাঁপছে। যন্ত্রণা হচ্ছে ভীষণ। সাইমন যদি ওর থেকে ওর মেয়েকে ছিনিয়ে নিতে চাই তখন কি করবে ও কাকে নিয়ে বাঁচবে এসব ভাবতে ভাবতে কান্না করে দেয় আদিবা।

সাইমনের কেমন জানি অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। সিয়া ওর মেয়ে। ওর মেয়ে এতো কিউট। এতো কিউট মেয়েকে রেখে পাঁচ বছর সে নিখোঁজ ছিলো, নিজের উপর রাগ হচ্ছে খুব। কিন্তু কিছু করারও তো নেই। খালেদা খাতুন যদি জানে সাইমন মেয়ের প্রতি দূর্বল হয়ে পরছে তবে তিনি রেগে যাবেন খুব আর উনাকে রাগানোর শক্তি সাইমনের নেই। খুব সম্মান করে সাইমন খালেদা খাতুন কে। আর আহান জানলেও সমস্যা হবে ব্যাপারটা তাই চাইলেও নিজের মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে পারবেনা সাইমন। তবে সাইমনের মনে নাঁড়া দিচ্ছে বারংবার একটাই প্রশ্ন তা হচ্ছে আহান সব জেনেশুনে একটা মেয়েকে নিয়ে কেনো আদিবাকে বিয়ে করেছে এর পেঁছনে কোনো রহস্য নেই তো? আহান কি সত্যিই ভালোবাসে আদিবাকে? নাকি সবটাই চোখের ভুল। সামনে কিছু আর পেঁছনে অন্যকিছু নয় তো। খটকা লাগছে সাইমনের মনে।
সাইমন ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখে সানিয়া সিয়াকে খুব যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে। অপলকে তাকিয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করছে সাইমন। সানিয়া সাইমনকে দেখেও না দেখার মতো হয়ে আছে। এই মানুষটাকে মোটেও সহ্য হয়না সানিয়ার। সাইমন সিয়ার পাশে বসে সিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে “সিয়া মামণি তুমি কি খেলবে আঙ্কেলের সাথে?”
না সূচক মাথা দোলায় সিয়া। মন খারাপ করে ফেলে সাইমন। তারপর আদুরে কন্ঠে বলে “কেনো মামণি?” আমি তো তোমার আব্বুর মতোই।”
কথাটা বলতেই গলা ধরে আসছে সাইমনের।
সানিয়া কর্কশ গলায় বলে উঠে “বুঝলাম না আমি ছোট্ট একটা মেয়েকে এতো জেরা করছো কেনো তুমি।”
“চুপ করবে? কথা বলতেছি তো আমি।”
কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে সাইমন। সানিয়া আর কিছু বললোনা। সাইমন আবারও বলে “বলো মামণি কেনো খেলবেনা আমার সাথে?”
“কারণ আম্মু বলছে তোমার কাছে না যেতে।”
নরম কণ্ঠে বলে সিয়া।
এটা শোনা মাত্রই রাগ উঠে যায় সাইমনের। সে হনহনিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বাহিরের দিকে চলে যায় সদর দরজা দিয়ে।
সানিয়া অবাক নয়নে দেখছে শুধু সব। হঠাৎ কি হয়ে গেলো সাইমনের বুঝতে বড্ড অসুবিধা হচ্ছে সানিয়ার। আর আদিবা-ই বা কেনো সাইমনের কাছে যেতে নিষেধাজ্ঞা করেছে এই পিচ্ছি মেয়েকে। কি চলছে ঘরে এসব? গতকালও সাইমনের সাথে দেখা করার জন্য নিচে নামেনি আদিবা। চোখ কি ধোঁকা দিচ্ছে?

*
আহান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে আনমনা হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদিবা। আদিবাকে দেখে আহান ওর দিকে এগিয়ে যায়। আদিবা যেনো অন্য এক দুনিয়ায় হারিয়ে ফেলেছে নিজেকে। আহান যে তার এতোটা কাছে তা লক্ষ-ই করতে পারেনি সে। আহান আদিবার কানের কাছে গিয়ে এহেম এহেম করে দু’বার কাঁশি দেয়। তবুও আদিবা আনমনা হয়ে আয়নার দিকেই তাকিয়ে আছে। বুকটা ভীষণ ভার হয়ে আছে আদিবার। আহান এবার ফুঁ দেয় আদিবার চোখেমুখে। হুঁশ ফিরে আদিবার। আদিবা কিছুটা নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে ডেসিং টেবিল গুছানোতে লেগে যায়। আহান বলে “কি হয়েছে? মনমরা হয়ে আছো কেনো আবার?”
“কই না তো, ঠিক আছি আমি।”
“বোকা বানানোর চেষ্টাও করিওনা। সব বুঝি আমি। বলো কি হয়েছে?”
“ভয় হচ্ছে। ”
“আবারও ভয় পাচ্ছো তুমি। বলছিতো আমি থাকতে সিয়াকে তোমার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবেনা আর এই দায়িত্ব আমার।”
“আর যদি সিয়ার বাবা নিতে আসে ওকে তখন? তখন কি করবেন?”
হঠাৎ এমন কথা শুনে চমকে উঠে আহান। চোখ বড় বড় করে তাকায় আদিবার দিকে।
“পাঁচ বছর যেহেতু আসেনি মানুষটা নিজের সন্তানকে দেখতে তবে পাঁচ বছর পর আর নিতেও আসবেনা। অযথা চিন্তা করো না তো।”
আদিবা আর কিছু বলেনা আহানকে তবে মনে মনে ভীষণ ভেঙ্গে পরেছে সে। আহান যখনই আরেকটু কাছে যাচ্ছিলো আদিবার তখনই দরজায় কেউ নক করে। আর আহান মুখটা ফ্যাকাসে করে ফেলে। আদিবা গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে সামনে দাঁড়িয়ে আছে________

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here