শুকনো_পাতার_বৃষ্টি,০৬,০৭

0
499

#শুকনো_পাতার_বৃষ্টি,০৬,০৭
#ফারজানা_আক্তার
০৬

অন্তরীক্ষে জমে আছে মেঘ। থমকে থাকা মেঘগুলো বেশ চমৎকার দেখতে না লাগলেও মন্দও লাগেনা। বৃষ্টির আগ মুহুর্তে যে মেঘ থমকে থাকে সেই মেঘ বেশি সময় নেয়না পৃথিবীটাকে শীতল করে দিতে নিজের জমানো সব অশ্রু দিয়ে। এই থমকে থাকা মেঘ সবার মনে দোলা দিতে না পারলেও আহানের বেশ প্রিয় এই মেঘমালা। আহান যতই কাজে বিজি থাকুকনা কেনো সে এই মুহুর্ত টা কখনোই মিস করেনা। সবসময়ই থমকে থাকা মেঘে নিজেকে বিলিয়ে দিতে ভালো লাগে আহানের। কিন্তু আজকে আকাশে থমকে থাকা মেঘ থাকলেও তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না রাতের আঁধারে। যার কারণে মন খারাপ করে বসে আছে বেলকনিতে আহান। আদিবা সিয়াকে নিয়ে প্রবেশ করতেই আহান তাকায় ওদের দিকে। সিয়া আদিবার কোল থেকে লাফ দিয়ে আাহানের কোলে চলে যায়। আদিবার চেহারায় ফুটে উঠছে একরাশ ক্লান্তি। জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে আর পারছেনা মেয়েটা। তখন খালেদা খাতুন এসে দরজায় নক করেছিলো। আদিবা দরজা খুলতেই হাঁসিমুখে খালেদা খাতুন বলেন “মা একটু আমার রুমে এসো তো কথা আছে কিছু।” খালেদা খাতুনের এই কথা বুক কাঁপিয়ে দিয়েছিলো আদিবার। খালেদা খাতুন কথাটা বলে চলে যাওয়ার পর আহান আদিবাকে বারণ করে দেয় না যাওয়ার জন্য তবুও আদিবা গিয়েছিলো কারণ আদিবার অজানা ছিলো তার শ্বাশুড়ি তাকে কি কথা বলবে সেটা। এমন অদ্ভুত ভাবে আদিবাকে ব্ল্যা’ক’মে’ই’ল করা হবে জানলে সে কখনোই যেতো না। ভাগ্য আর কত খেলবে, কিছু ভাবতে ভালো লাগছেনা আদিবার। আহান বুঝে গিয়েছে যে তার মা হয়তো এমন কিছু বলেছে আদিবাকে যা সে মেনে নিতে পারছেনা। যখনই আহানকে সব সত্যি বলে দিবে ভেবেছিলো আদিবা তখনই তার শ্বাশুড়ির আগমন তারপর বিভিন্নভাবে তাকে কথা শোনানো। ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে আদিবা এবার। আহান সিয়াকে দোলনায় বসিয়ে দিয়ে ওর হাতে একটা খেলনা দিয়ে বলে “মামণি তুমি এটা দিয়ে খেলা করো আমি একটু তোমার মাম্মামের সাথে কথা বলে নেয় কেমন?” খেলনা হাতে নিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায় সিয়া।

আদিবা বেলকনির গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আহান আদিবার কাছাকাছি যেতেই লক্ষ করে আদিবার চোখে জল। বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে হঠাৎ আহানের। প্রথমদিকে স্বার্থ খুঁজলেও এখন ভীষণ ভালোবাসে ফেলেছে আহান এই শ্যামবতীকে। আহান আদিবাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে খুব যত্ন করে চোখের জলগুলো মুছে দেয় তারপর বলে “কি বলেছে আম্মু যার জন্য আমার শ্যামবতীর চোখে জল?”
খালেদা খাতুন যা বলেছে তা আহানকে বলা সম্ভব নয় কিন্তু এখন আহানকে কিছু একটা বলে বুঝ দিতে হবে। কি বলবে আহানকে ভাবছে আদিবা।
আহান আবার বললো “কি হলো? কি এতো ভাবছো? বলো কি বলেছে আম্মু। ”
“আমি তো কষ্টে কাঁদছি না। আমার চোখের জল খুশির জল কারণ আম্মু আমাকে আর সিয়াকে মেনে নিয়েছেন। সিয়াকে কোলে নিয়ে আদরও করেছেন।”
একটু হাসার চেষ্টা করে কথাগুলো বলে আদিবা। আহানের কেনো জানি মনে হচ্ছে আদিবা সত্যিটা বলছেনা ওকে। আদিবা মিথ্যা বলতে পারেনা যা আহান খুব ভালো করেই জানে। আদিবার কথায় যে বিন্দুমাত্রও সত্য নেই তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে আহান। আদিবা দ্রুত আহানের দিক থেকে অন্যদিকে ফিরে দাঁড়ায়। আহান কিছু বলতে যাবে তখনই আদিবা বলে উঠে “আপনি সিয়াকে নিয়ে ডাইনিংয়ে যান, সবাই হয়তো অপেক্ষা করছে। আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো।”
এটা বলেই আদিবা চলে যায় ওয়াশরুমে। আহানের রাগ হচ্ছে খুব। “চাপা স্বভাবের মানুষ ভালো কিন্তু এতোটাও চাপা স্বভাব ভালো না। নিজে সব কষ্ট একাই সহ্য করে নিবে তবুও কারো সাথে টুকরো কথা শেয়ার করবেনা। এমন কেনো মেয়েটা ধ্যাৎ।” নিজে নিজেই বিড়বিড় করে আহান। সিয়া দোলনা থেকে নেমে আহানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে দুই হাত উপরের দিকে তুলে দিয়ে বলে ওকে কোলে নিতে। আহান সিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। উদ্দেশ্য ডাইনিংয়ে যাবে খেতে। যেতে যেতে সিয়া বলে “বন্ধু তুমি আম্মুকে বকা দিছো কেনো?”
সিয়ার মুখে এমন কথা শোনে ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে গেলো আহান। মাঝে মাঝে সিয়া এমন কথা বলে যে আহান তার উত্তর-ই খোঁজে পাইনা। কিন্তু সিয়ার এই পাকনামি কথা বেশ ভালো লাগে আহানের কাছে। আহান সিয়াকে কিছু না বলে সিয়ার কপালে একটা চুমু খেয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকে।

আদিবা ওয়াশরুমে গিয়ে নিচে বসে পরে দুই হাঁটু বুকে নিয়ে। আজ কষ্ট টা একটু বেশিই হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে। নিঃস্বাস নিতে বড্ড বেশি কষ্ট হচ্ছে। চোখের জলগুলো মানছেনা কোনো বাঁধা। মাঝে মাঝে কিছু কষ্ট এমনই হয়, যা মানুষকে মুহুর্তেই ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে। হাঁটু বুকে নিয়ে মাথা হাঁটুর মধ্যে গুঁজে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে আদিবা। আর পারছেনা সে মেনে নিতে। কতই বা সহ্য করা যায়? আহানকে মিথ্যা বলতে চাইনি আদিবা তবুও বলতে হলো নয়তো যে খালেদা খাতুন তার থেকে সব কেঁড়ে নিবে। আদিবার মনে পরে যায় সেদিনের কথা যখন খালেদা খাতুনের সাথে তার প্রথম দেখা হয়েছিলো। তখন সাইমনের সাথে বিয়ের ১ই মাস ৩দিন চলছিলো আদিবার। হঠাৎ একদিন সেই বাসায় আগমন ঘটেছিলো খালেদা খাতুনের। কলিং বেলের শব্দ পেয়ে দরজা খুলেছিলো আদিবা। তখন আদিবাকে দেখে বেশ অবাক হয়েছিলেন খালেদা খাতুন আর জিজ্ঞেস করেছিলেন “তুমি কি এই বাসার নতুন কাজের মেয়ে?”
লজ্জা নিয়ে নরম কন্ঠে বলেছিলো আদিবা সে সাইমনের স্ত্রী। কেঁপে উঠেছিলো যেনো সেদিন খালেদা খাতুনের পৃথিবী। আদিবাকে দরজার সামনে থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে খালেদা খাতুন হনহনিয়ে প্রবেশ করেন ঘরে তারপর উচ্চস্বরে ডাকতে থাকেন সাইমনের মা ফিরোজা আলম কে। বিকেলবেলা ছিলো বলে সেসময় ঘুমাচ্ছিলেন ফিরোজা আলম। খালেদা খাতুনের কন্ঠ পেয়ে ঘুম থেকে উঠে ভালো করে পরনের কাপড় ঠিক না করেই ছুটে আসেন ড্রয়িংরুমে। আদিবা এখনো দাঁড়িয়ে আছে দরজার পাশে। ফিরোজা আলম কে এভাবে এলোমেলো ভাবে ছুটে আসতে দেখে বেশ চমকে যায় আদিবা। বুঝতে পারছেনা আদিবা কি হচ্ছে বা কি হতে যাচ্ছে। ফিরোজা আলম এসেই খালেদা খাতুন কে জড়িয়ে ধরে বলে এখানে কথা বলা যাবেনা বাহিরে কোথাও গিয়ে কথা বলবে। ফিরোজা আলম খালেদা খাতুনের ডাকেই বুঝে গিয়েছেলেন যে উনি খুব রেগে আছেন এবং কি কারণে রেগে আছেন সেটাও জানেন। একটু পর-ই ফিরোজা আলম তৈরি হয়ে এসে খালেদা খাতুন কে নিয়ে বেরিয়ে পরেন। আদিবাকে বলে যান যাওয়ার সময় তিনি কাজে যাচ্ছেন। কিন্তু আদিবা সেদিন অজানা ছিলো যে ওইদিন থেকেই ওর সুখের দিন ঘনিয়ে আসছে যদিও আজকে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে সেটা।

এইদিকে সবাই ডাইনিংয়ে অপেক্ষা করছেন রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। খালেদা খাতুন একবার বললেও আদিবাকে ছাড়া খাওয়া শুরু করার জন্য আফজাল খান রাজি হয়নি। তিনি তার পুত্র বধুকে ছাড়া কিছুতেই খাবার ছুঁবেনা বলে দিলেন। সিয়াকেও বেশ আদরে রাখছেন আফজাল খান। আফজাল খান ইশারায় ডাকলে সিয়া উনার কাছে যায়। আফজাল খান খুব সাবধানে কোলে তুলে নিলেন সিয়াকে তারপর বললেন “আজ থেকে এই পরিবারের নতুন সদস্য তুমি। সিয়া খান তোমার সম্পূর্ণ নাম আজ থেকে।” এটা শুনে আহান খুব বেশি খুশি হয়েছে। আনন্দ হচ্ছে আহানের ভীষণ তার বাবার কথা শুনে। কিন্তু অপরদিকে রাগে জ্ব’ল’ছে’ন খালেদা খাতুন। সহ্য হচ্ছে না খালেদা খাতুনের এসব কিন্তু কিছুই করার নেই তার কারণ আফজাল খানের কথার উপরে কথা বলার সাহস তার নেই। সাইমনও এখনো ফিরেনি, সানিয়া মায়ের কথায় একবার কল দিলেও সাইমন রিসিভ করেনি কিন্তু মেসেজ করে জানিয়ে দিয়েছে যে আজ সে বাসায় ফিরবেনা, নিজের বাসায় থাকবে।
আদিবার বেশি সময় লেগে যাচ্ছে দেখে সানিয়া সবাইকে বসতে বলে আদিবাকে ডাকতে যায়।
সানিয়া রুমে এসে ভাবি বলে ডাক দিতেই কেঁপে উঠে হঠাৎ আদিবা। সানিয়ার কন্ঠস্বর বুঝতে পেরে আদিবা দ্রুত বসা থেকে মুখমণ্ডল ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। আদিবা ওয়াশরুমে সেটা বুঝে সানিয়া বসে থাকে বিছানায়। আদিবা জোরে জোরে শ্বাস নেয় তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বেরিয়ে আসে ওয়াশরুম থেকে।
আদিবা বেরিয়ে এসে বলে “সরি গো, আমার একটু দেরি হয়ে গেলো। সবাই অপেক্ষা করছে সেটা মাথায় ছিলোনা আমার।”
সানিয়া বসা অবস্থায় বলে “কিভাবে বুঝলে খাওয়ার জন্যই ডাকতে এসেছি তোমায়?”
“এই সময় এসেছো তাই আর কি।”
কিছুটা হাঁসার চেষ্টা করে বলে আদিবা। সানিয়া বুঝতে পারছে আদিবা ঠিক নেই, কপালে ভাজ পরে আছে আদিবার তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে আর চোখ মুখও ফুলে ফুলে গেছে। যেনো ম’রা কান্না কাঁদছে এমন দেখাচ্ছে আদিবাকে।
“ভাবি তোমার কি শরীর খারাপ?”
ভ্রু কুঁচকে বলে সানিয়া। আদিবা কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বলে “তেমন কিছুনা বোন। একটু খারাপ লাগছে শুধু, ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে।”
“সত্যি বলছো তো?”
সন্দেহজনক স্বরে বলে সানিয়া।
আদিবা আমতা আমতা করে বলে “হুম সত্যি বলছি, তুমি হাঁটা ধরো আমি আসছি পেঁছনে।”
সানিয়া বেরিয়ে যায় রুম থেকে। আদিবা মুখে কিছু ফেস-পাউডার মেখে নেয় হালকা করে যাতে করে ওর এমন ফোলা চোখ-মুখ কেউ ধরতে না পারে।
আদিবা ভালো করে তৈরি হয়ে রুম থেকে বাহিরে পা রাখতেই দেখে সানিয়া দাঁড়িয়ে আছে রুমের বাইরে। আদিবা সানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে “কি গো দাঁড়িয়ে আছো যে এভাবে?”
“ভাবি কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে। ”
খুব শক্ত কন্ঠে বলে সানিয়া কথাটা। আদিবা ভয় পেয়ে যায় কিছুটা। সানিয়া কিছু জেনে গেলো না তো, সানিয়া যদি জেনে যায় সব তাহলে খালেদা খাতুন রেগে যাবে খুব আর উনি রেগে গেলে আদিবার জীবন আবারো অন্ধকারে ডুবে যাবে।
এসব ভাবছে আদিবা তখনই সানিয়া বলে উঠে “কি সম্পর্ক তোমার সাইমনের সাথে?”
ধুকপুক করে উঠে আদিবার বুক।

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

#শুকনো_পাতার_বৃষ্টি [০৭]
#ফারজানা_আক্তার

কি সম্পর্ক মানে? সাইমন তোমার স্বামী হলে আমার নন্দাই হবে, এটাই তো সম্পর্ক তাইনা?
খানিকটা চিন্তা করে বলে আদিবা।

“ওও এই কথা তাহলে। যদি এটাই আসল কথা হয়ে থাকে তাহলে চিন্তা করে কেনো বলতে হলো তোমায় কথাটা? হুট করেও তো বলে দিতে পারতে।”
“তুমি হঠাৎ করে এমন অদ্ভুত ভাবে কথা বলতেছো কেনো বুঝলাম না। আর এসব কেমন সন্দেহ জনক প্রশ্ন করতেছো তুমি আমায়?”
কিছুটা উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বলে আদিবা। সানিয়ার রাগ হচ্ছে এই মুহুর্তে আদিবার উপর কারণ সানিয়া বেশ বুঝতে পারছে যে আদিবা কথা লুকানোর চেষ্টা করছে। সানিয়া রাগান্বিত কন্ঠে বলে “তুমি কেনো সিয়াকে সাইমনের সাথে খেলতে নিষেধাজ্ঞা করেছো? আর এটা শোনে সাইমন কেনো রেগে চলে গেলো? আছে তোমার কাছে এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর?”
“হ্যাঁ আছে উত্তর? সাইমন কেনো রেগেছে তা আমার জানা নেই আর সিয়াকে আমি সাইমনের সাথে খেলতে নিষেধাজ্ঞা করিনি আমি শুধু সিয়াকে বলেছি যেনো অপরিচিত কারো সাথে যেনো সে না মিশে না খেলে। সাইমনকে হঠাৎ দেখে চিনতে না পেরে হয়তো সিয়া আমার বলা কথাটা বলেছে। সব কথা স্পষ্ট ভাবে না জেনেশোনে এভাবে সন্দেহ করা উচিত হয়নি তোমার।”
কথাগুলো বলেই আদিবা ডাইনিংয়ে চলে যায়। ভয়ে এখনো কাঁপছে আদিবার পুরো শরীর। সানিয়ার খুব লজ্জা লাগছে, সবটা না জেনে এভাবে ভাবিকে সন্দেহ করার জন্য কিন্তু সাইমনের ওভাবে রেগে যাওয়াটা সন্দেহের সৃষ্টি করতেছে সানিয়ার মনে বারংবার। সানিয়া আদিবার কথা বিশ্বাস করবে কিনা সেটাও ভাবতেছে।

খাওয়া দাওয়া শেষে রুমে যাওয়ার সময় সানিয়া আদিবাকে বলে “ভাবি একটু আমার রুমে আসবে প্লিজ।”
আদিবা সিয়াকে নিয়ে রুমে যেতে বলে আহান কে। আহান চলে যায় রুমে কিন্তু সানিয়া হঠাৎ আদিবাকে রুমে ডাকলো কেনো সেই বিষয়টা ভাবাচ্ছে আহানকে।
সানিয়া হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে যায় আদিবাকে। আদিবাকে বিছানায় বসতে দিয়ে সানিয়া বলে “ভাবি সরি ওইসময় শুধু শুধু সন্দেহ করেছিলাম বলে। ক্ষমা করবে তো এই ছোট বোনটাকে।?”
বেশ নরম কন্ঠে বলে সানিয়া কথাটা।
আদিবা সানিয়ার হাতজোড়া ধরে বলে “এমা কি বলতেছো এসব তুমি? তোমার সন্দেহ করা টা হয়তো স্বাভাবিক ছিলো। কিছু মনে করিনি আমি।”
সানিয়া মিষ্টি করে একটা হাসি দেয়।
আরো কিছুক্ষণ খোশগল্প করে আদিবা পা বাড়ায় নিজের রুমের পানে। হঠাৎ করে কেনো জানি সানিয়াকে দেখলেই কষ্ট হচ্ছে আদিবার, মনে পরে যাচ্ছে সাইমনের সাথে কাটানো প্রতিটি মুহুর্ত। সানিয়াকে সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না আদিবার তবুও তা প্রকাশ করতে পারবেনা এই মুহুর্তে আদিবা। আদিবা সব সত্যি না জানলেও কিছুটা আন্দাজ করতে পারতেছে খালেদা খাতুনের কথার ধরণে। আদিবার কেনো জানি বারংবার মনে হচ্ছে ওর সুখের নীড়ে সানিয়ার বি’ষা’ক্ত প্রবেশ পরেছিলো। যদিও এসব কিছুই এখনো স্পষ্ট নয় আদিবার কাছে, শুধুমাত্র ধারণা করতেছে ও এসব।
আদিবা আনমনা হয়ে হাঁটতে হাঁটতে প্রবেশ করে নিজের রুমে।
আহান সিয়াকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে অপেক্ষা করছিলো আদিবার জন্য। আদিবা আসতেই আহান প্রশ্ন ছুঁড়ে ওর পানে “সানিয়া কেনো ওর রুমে নিয়ে গেলো তোমায়? কি চলছে এসব ঘরে? একবার মা ডেনে নিয়ে যায় অন্যবার সানিয়া। কি চলছে বলবে একটু?”
“এতো উত্তেজিত হচ্ছেন কেনো আপনি? মেয়েদের কত পার্সোনাল কথা থাকে সব কি বলা যায় পুরুষদের? ঘুমান এখন, আমারও বেশ ঘুম পাচ্ছে। ”
এটা বলেই আদিবা শুইয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে দ্রুত। নয়তো যে আহান সব কথা বের করে ফেলবে তার পেট থেকে। আহান সব জানলে অনেক সমস্যা হয়ে যাবে এই ঘরে। আদিবা চাইনা তার বিয়ের একমাস না গড়াতেই এসব ঝামেলায় পরুক আহান।
আদিবার এমন অস্পষ্ট কথায় খুব বেশি রাগ হচ্ছে আহানের তবুও সে চুপচাপ শুয়ে পরে। কারণ সে জানে আদিবার সাথে কথা বলে কোনো লাভ নাই এখন। আদিবা সহজে কোনো কথায় বলেনা স্পষ্ট ভাবে যা আহান প্রথম থেকেই জানে।

*
সানিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বেলকনি দিয়ে বৃষ্টি দেখছে। বৃষ্টি আসলেই সানিয়া পুরোনো স্মৃতিতে মেতে উঠে খুব করে কিন্তু তার সাথে নিয়ে আসে একরাশ হতাশা। চারবছর আগেই সানিয়ার জীবন সুন্দর ছিলো, এটা ভেবেই বেশ আফসোস করে সানিয়া। এই বৃষ্টি মুখর দিনেই সানিয়ার দেখা হয়ছিলো মিনহাজ নামের এক ছেলের সাথে। ধীরে ধীরে বন্ধুত্বও হয়ছিলো তাদের। কিন্তু সম্পর্ক টা বন্ধুত্ব থেকে হারিয়ে গিয়েছিলো যদিও দু’জনই দু’জনের প্রতি দূর্বল ছিলো কিন্তু কেউ কারো কাছে সেটা প্রকাশ করার সুযোগ পাইনি। ভালোবাসা শুরু হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু কারো সামনে কেউ সেটা প্রকাশ করতে পারেনি তার আগেই খালেদা খাতুন ইমোশনাল ব্ল্যা’ক’মে’ই’ল করে সাইমনের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় সানিয়াকে। সানিয়াকে এই বিয়েতে রাজি করতে একবছর সময় লেগেছে খালেদা খাতুনের। খালেদা খাতুন বলেছিলেন সানিয়া এই বিয়ে না করলে উনি নিজেকে শেষ করে ফেলবেন কিন্তু সানিয়া এখনো জানতে পারেনি যে তার মা এটা শুধু মাত্র অভিনয় করেছিলেন।
সানিয়া মিনহাজের কথা ভেবে নিজে নিজে মিষ্টি হাঁসে। ইদানীং মনে হয় মিনহাজ শুধুই তার কল্পনা। কখনো বাস্তব হতে পারবেনা মিনহাজ আর তার জীবনে। চার বছর ধরে কোনো যোগাযোগ হয়নি আর মিনহাজের সাথে। তবুও মনের কোনো এক কোণে রয়ে গেছে মিনহাজ নামটি। ভালোবাসা হয়তো এমনই। যুগ যুগ ধরে যোগাযোগ না হলেও বিন্দু পরিমাণ ভালোবাসা কমেনা হৃদপিণ্ড থেকে। ভালোবাসার অনুভূতিটাই অদ্ভুত রকমের। ভালোবাসার মানুষ জীবন জোড়ে থাকুক বা না থাকুক ভালোবাসা থেকেই যায়।
হঠাৎ ফোনের রিংটোনের শব্দে সানিয়া কেঁপে উঠে। ভাবনার মাঝে হঠাৎ এমন শব্দ একদমই পছন্দ না সানিয়ার। সানিয়া ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়। সাইমন কল করেছে। এই মানুষটাকে যতই ইগ্নোর করছে ততই যেনো মানুষটা ওকে নিজের সাথে জড়িয়ে রাখতে চাইছে। কল রিসিভ করেই সানিয়া বলে “কেনো কল দিয়েছেন? এখন কি ঘুমাতেও দিবেননা নাকি?”
“রেগে যাও কেনো সবসময়ই? বিয়ের চার বছরেও তুমি স্বামী মানতে পারোনি আমায় তবুও সব মেনে নিয়েছি কিন্তু আর নয় এবার ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিতে চাই আমি।”
সানিয়া অবাক হয়, কিছুটা নরম কন্ঠে বলে “মানে? কেমন সিদ্ধান্ত?”
“দেখো সানিয়া আমি স্পষ্ট কথা বলতে পছন্দ করি। আমি কোনো কথা অস্পষ্ট রাখতে পারিনা তাই সরাসরিই বলছি আমার বাচ্চা লাগবে, তুমি আমায় বাচ্চা দিলে দিবে নয়তো ডিভোর্স। আগামীকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় দিলাম তোমায়। সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দিও আমায়। তুমি ডিভোর্স দিবে বললে আমি ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবো যাবোনা ওই বাড়িতে আর কখনো। আর যদি বাচ্চা নিতে চাও তবে আলহামদুলিল্লাহ। নতুন করে সংসার শুরু করবো আমরা।”
কথাটা বলেই কল কেটে দেয় সাইমন। রোবটের মতো শক্ত হয়ে কানে ফোন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে সানিয়া। হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো মানুষটার? কেনো এমন ভাবে কথা বলছে ও? এসব ভাবতে একদম ভালো লাগছেনা সানিয়ার। নিজের অজান্তেই চোখের জল গড়িয়ে পরে সানিয়ার গাল বেয়ে। চারটা বছর পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ ছিলো যে মানুষটার সাথে সেই মানুষের এমন আচরণ সহ্য করতে পারছেনা সে। বিয়ের চার বছরে কখনো সাইমন জোর করে ওকে টাচ করেনি যদিও ওর সম্পূর্ণ অধিকার ছিলো আর সেই মানুষ কিনা সরাসরি ডিভোর্সে চলে গেলো। সানিয়া ডিভোর্স এর কথা ভাবতেই খালেদা খাতুনের চেহারা ভেসে উঠে ওর চোখে বারেবারে। সি সিদ্ধান্ত নিবে ভাবতে থাকে আর চোখের জল ফেলতে থাকে সানিয়া।
আর অন্যদিকে সাইমন বসে বসে একটানা সিগারেট খেয়েই যাচ্ছে। খালেদা খাতুনের কথাতেই সে সানিয়াকে এসব বলতে বাধ্য হয়েছে। সাইমন জানে খালেদা খাতুন সানিয়াকে কখনোই ডিভোর্সের মতো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে দিবেনা। কিন্তু সাইমনের মনের কোণায় এখনো আদিবার স্মৃতি রয়ে গেছে কিছুটা।
সাইমনের কেনো জানি আজ একটু বেশিই কষ্ট হচ্ছে। নিজের সন্তানকে চোখের সামনে পেয়েও কোলে তুলে নিতে না পারা, আদর করতে না পারা, ছুঁয়ে দেখতে না পারা যে কতটা কষ্টের তা একমাত্র সেই মানুষটাই বুঝে যার সাথে এসব ঘটে।

*
সকালের নামায পড়ে আদিবা কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করে আবারো শুয়ে পরেছিলো। আহানের চোখ লেগে এসেছে নামাযের পর।
হঠাৎ সকাল ৭টার দিকে ড্রয়িংরুম থেকে চিৎকার চেঁচামেঁচির শব্দ ভেসে আসে আদিবার কর্ণকুহরে। আদিবা উঠে বসে শোয়া থেকে। কান লাগিয়ে শুনতে থাকে কি হচ্ছে ড্রয়িংরুমে কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা সে। পরে কোনো পথ না পেয়ে আহানকে ডেকে বলে “শুনুন একটু দেখে আসুননা উঠে ড্রয়িংরুমে কিসের চেঁচামেঁচি হচ্ছে এসব। মনে হচ্ছে কোনো ঝামেলা হয়েছে।”
আহান উঠে বসে ভালো করে খেয়াল করে দেখে, আদিবার কথায় সত্য। ঘরে ঝামেলা হচ্ছে কিছু একটা নিয়ে। আহান দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে এগিয়ে যায় ড্রয়িংরুমের দিকে। আদিবাও পেঁছন পেঁছন যায় আহানের।

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here