#শুকনো_পাতার_বৃষ্টি,০৮,০৯
#ফারজানা_আক্তার
০৮
মুহুর্তে নিরব হয়ে গেলো পরিবেশ আহান কে দেখে। থমথমে পরিবেশে আহান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তার মায়ের দিকে। আফজাল খান অনেক বুঝানোর চেষ্টা করছে তার শা’লাকে যে আহান ভালোবেসে বিয়ে করেছে এতে তাদের কারো কোনো ষ’ড়’য’ন্ত্র নেই কিন্তু কিছুতেই মানতে রাজি নয় এই কথা মামুন সাহেব আর আফিয়া। আফিয়া তার বাবা মামুন সাহেবের চেয়েও বেশি উত্তেজিত হয়েছিলো এতক্ষণ কিন্তু আহানকে দেখেই চুপ হয়ে যায় সবাই। খালেদা খাতুন আজ কিছু বলছেনা, শুধু দেখছে চুপ হয়ে। আফজাল খানের সামনে একদম অন্যরকম একজন ভদ্র মহিলা খালেদা খাতুন তাই নিরবতা পালন করছেন এই মুহুর্তে, যাকে বলে গাছের মাথায় আগুন লাগিয়ে গোঁড়ায় পানি ঢালা। খালেদা খাতুন চুপচাপ থাকলেও মুখে খুচরো হাঁসি যা কারো নজরে পরার মতো নয়।
আহান সিঁড়ি বেয়ে নামতেই আফিয়া ছুটে আসে ওকে জড়িয়ে ধরার জন্য কিন্তু আহান তার আগেই সরে গেলো নির্দিষ্ট জায়গা থেকে। আফিয়ার গা জ্বলে যাচ্ছে রাগে। চোখ মুখ ভিষণ র’ক্তি’ম হয়ে আছে আফিয়ার। আহান মামুন সাহেবের সামনে গিয়ে বলে “মামা আপনার কোনো অধিকার নেই আমার আব্বুর সাথে এভাবে কথা বলার। আপনার যা বলার আপনার বোনের সাথে বলুন। আমার বাবা মোটেও আপনার বোনের মতো নয়। আমাদের র’ক্তে লোভ লালসার স্থান নেই।”
“ভুলে যেওনা আহান আমার বোন তোমার মা?”
উচ্চস্বরে বলেন মামুন সাহেব।
“আপনি ভুলে যাবেননা আমার বাবা আপনার বোনের স্বামী। বিয়ে আমি করেছি তাই যা বলার আপনি আমাকে বলুন, আমার বাবাকে অপমান করলে আমার বাবাকে কষ্ট দিলে আমি কাউকে ছেড়ে কথা বলবোনা।”
এবার খালেদা খাতুনের মুখটা মলিন হয়ে যায়। সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে দুতলা থেকে সব দেখছে আদিবা। সানিয়াও এসে দাঁড়ায় আদিবার পাশে। আফিয়া সানিয়ার মামাতো বোন হলেও আফিয়াকে মোটেও সহ্য করতে পারেনা সানিয়া। এদের প্রত্যেকের মাঝেই অহংকার আর লোভ ভরপুর যা সানিয়া আর আহান মোটেও পছন্দ করেনা। লোভ কখনো সুখ বয়ে আনতে পারেনা। লোভ মানুষকে ধ্বংস করে যা খালেদা খাতুন এখনো বুঝে উঠতে পারছেনা।
এবার আফিয়া বলে উঠে “আর আমার পাপ্পাকে কেউ অপমান করলে তার প্রতিশোধ আমি সুদে আসলে ফেরত দিতে জানি আহান।”
“আর কি বা জানিস। লোভ অহংকার প্রতিশোধ টাকার গরম এসব ছাড়া আর কিছুই বুঝিসনা তোরা। কোন পাপ করেছিলো কে জানে আমার আব্বু যার জন্য তোদের অহংকারী পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক করতে হয়েছে।”
সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বলে কথাটি সানিয়া। এবার আফিয়ার রাগ দ্বিগুণ হয়ে গেলো। সহ্য করতে পারছেনা আফিয়া তাই সে দৌড়ে গেলো সানিয়াকে থা’প্প’ড় দিতে তখনই ওর হাত ধরে ফেলে আহান। আর বলে “আমার বোনের গায়ে আঁচড় লাগলেও এই বাসা থেকে বেঁচে ফিরতে পারবিনা তুই। আচ্ছা তোর কি লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই? কত হাজারবার বলেছি আমি তোকে পছন্দ করিনা। আর যাকে আমি পছন্দই করিনা তাকে বিয়ে করার প্রশ্ন-ই উঠেনা আমার। তুই আমাকে পছন্দ করিস এটা তোর ব্যক্তিগত ব্যাপার আর আমি আদিবাকে ভালোবাসি এটা সম্পূর্ণই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই দূরে থাকবি আমার থেকে সবসময়ই।”
“সেই ছোট বেলা থেকেই আমি তোমাকে ভালোবাসি আহান। আমি জানিনা কেনো তোমরা আমাকে অপছন্দ করো কিন্তু এতটুকু জানি আমি তোমাকে ভিষণ ভাবে ভালোবাসি। স্বপ্ন দেখেছি তোমাকে নিয়ে আমি। প্লিজ এভাবে কষ্ট দিওনা আমায়, বেঁচে থেকেও ম’রে যাবো আমি।”
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে কথাগুলো আফিয়া।
সানিয়া আবারও বলে উঠে “বাহ্ বাহ্ কত সুন্দর মিথ্যা বানী। তুই যদি সত্যিই মন থেকে আহান ভাইকে ভালোবাসতি তবে এই কথাগুলো কর্কশ কন্ঠে নয় বরং খুব নরম কন্ঠে আদুরে সুরে বলতি। আর যেটা বলেছিস, কেনো তোকে আমরা পছন্দ করিনা এটা হলো একদম সহজ প্রশ্ন যার উত্তরও একদমই সহজ। উত্তর হলো তুই ছোট থেকেই অহংকারী লোভী আর একটা বাজে স্বভাবের মেয়ে যা আমাদের পছন্দ না মোটেও। টাকার গরমে যে মেয়ে পরপুরুষ কে শরীর দেখিয়ে ছোট ছোট কাপড় পরিধান করে ঘুরতে পারে লোক সমাজে কোনো ধার্মিক মানুষই তাকে পছন্দ করবেনা।।”
“তুই চুপ কর বন্ধ্যা মেয়ে একটা। বিয়ের চার বছরেও এখনো সন্তান জন্ম দিতে পারিসনি আবার আমাকে কথা শোনাতে আসিস কোন মুখে। আর সন্তান হবেই বা কি করে তোর স্বামী তো দুইদিনও তোর সাথে থাকেনা, আসে আবার দুইদিন পর চলে যায় বিদেশে অন্য মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করার জন্য। ”
আফিয়ার কথা বলা শেষ হতে না হতেই ওর গালে পরে গেলো ঠা’স ঠা’স দুটো থা’প্প’ড়। থমকে গেলো মুহুর্তেই পুরো খান বাড়ি। আদিবা হঠাৎ করে এমন একটা কাজ করবে ভাবতে পারেনি কেউ। আদিবা নিজেও অবাক বেশ নিজের এমন অমানবিক কান্ডে। আদিবা অস্পষ্ট মানুষ হলেও আজ স্পষ্ট ভাবে আফিয়ার মুখের উপর বলে দিলো “জন্মের পর থেকে অনেক ধরনের মানুষ দেখলেও আপনার মতো নিচু স্থানের মানুষ খুব কমই দেখেছি আমি। আপনি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে এমন কথাগুলো বলতে পারলেন কিভাবে? একটুও কি লজ্জা নেই আপনার মধ্যে?”
আফিয়া আদিবাকে চিনতে না পেরে ওকে মা’রা’র জন্য এগিয়ে যেতেই সামনে আহান দাঁড়িয়ে যায় আর বলে “আদিবা আমার স্ত্রী। আমার মনে হয়েছে আমার জন্য ওর চেয়ে ভালো জীবনসঙ্গী আর কেউ হতে পারেনা তাই আমি ওকে বিয়ে করেছি। এই ঘরে এসব বিষয়ে আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা। অনেক লম্বা জার্নি করে এসেছিস যা বিশ্রাম নে।” এটা বলেই আহান এক হাতে সানিয়ার হাত আর অন্যহাতে আদিবার হাত ধরে উপরে চলে যায়। আফজাল খান চলে যান মর্নিং ওয়ার্কে। খালেদা খাতুন মামুন সাহেব আর আফিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফুঁসছে রাগে। খালেদা খাতুন এসে আফিয়ার কাঁধে হাত রাখলেই ফুফিকে জড়িয়ে ধরে কান্না জোরে দেয় আফিয়া আর বলে ” ফুফি তুমি কিছু বলোনি কেনো ওরা আমায় এতো অপমান করে গেলো। আর ওই দুইটাকার মেয়ে তো হাতও তুলে গেলো আমার উপর। আহানকে ছাড়া বাঁচবো না ফুফি আমি। কিছু করো তুমি।”
“কি করবো বল? তোর ফুফার সামনে কথা বলার সাহস পাইনা আমি। তুই তো জানিস তোর ফুফা কেমন। তুই চিন্তা করিসনা মা, আমি থাকতে তোর আহান কিছুতেই অন্যকারো হতে পারবেনা।”
“কি বলছিস তুই? তোর ছেলে তো হয়েই গেছে অন্যকারো। এখন আর কিছুই করার নেই আমাদের। আমরা এখনই চলে যাবো আবার ঢাকা।”
মামুন সাহেবের কথা শুনে আফিয়া বলে “ফুফি আমি এখান থেকে কোথাও যাবোনা। পাপ্পাকে বুঝাও তুমি।”
তারপর ভেতরের দিকে নিয়ে যায় খালেদা খাতুন তাদের দুজনকে।
উপরে উঠে আহান সানিয়াকে বলে নিজের রুমে যেতে। তারপর আদিবাকে নিয়ে নিজেদের রুমে প্রবেশ করলো আহান। আদিবা চুপসে গিয়েছে একদম। এই প্রথম সে আহানের চোখে আগুন দেখেছে। এতদিনের পরিচয়ে এর আগে আর কখনো এতো রাগতে দেখেনি আহানকে আদিবা। রাগ যেহেতু তীব্র এর কারণও হয়তো খুব প্রচন্ড। আদিবা চুপচাপ বিছানায় গিয়ে বসে সিয়ার চুলে বিলি কা’ট’তে থাকে। আদিবার খুব খারাপ লাগছে এভাবে আফিয়ার গায়ে হাত তুলে কিন্তু ওই সময় কিছুই মাথায় ছিলোনা ওর। সানিয়াকে এতো বাজে কথা বলায় আদিবার মাথা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো যদিও আদিবা সানিয়াকে কম পছন্দ করে ওর অতীত নষ্ট করার দায়ে। আদৌ কি সানিয়ার কোনো হাত ছিলো? জানেনা আদিবা তবুও কষ্ট হয় সেসব কথা ভাবলে।
আহান চোখ বুঁজে শুয়ে আছে সিয়ার পাশে। আদিবা কিছুটা নড়েচড়ে বসে একটা লম্বা শ্বাস টানে তারপর আহানকে উদ্দেশ্য করে বলে “আফিয়ার কাহিনি টা কি ঠিক বুঝলাম না আমি। একটু ক্লিয়ার করবেন সব?”
বন্ধ চোখেই আহান বলে “এখন বাদ দাও, ভালো লাগছেনা কিছু।”
“বাদ দেওয়া যাবেনা। জানতে চাই আমি। বলুন।”
“আচ্ছা শুনো। আফিফা আমার বড় মামার মেয়ে। ও ছোট থেকেই আমাকে পছন্দ করে এটা আমি বিশ্বাস করিনা কারণ ওর মুখে মাত্র এই তিনবছর থেকে আমি ভালোবাসি শব্দ টা শুনতেছি। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আম্মুর মুখে শুনতেছি আফিয়াকে উনি আমার বউ করে এই ঘরে আনবেন। আর আমি জানি আফিয়ার মনে আমার জন্য যত অনুভূতি আছে সব আমার আম্মু জন্ম দিয়েছেন। আম্মু যেমন আমার কান ভরেছেন তেমন ওরা সাথেও করেছেন আর এই কারণেই হয়তো একটু একটু করে আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে যদিও আমি জানিনা ওর ভালোবাসায় সত্যতা কতটুকু আছে। তবে এইটুকু জানি ও যখন চলে এসেছে এখন আমাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে। আফিয়া একটু বেশিই অহংকারী যার কারণে আমি আর সানিয়া ওকে তেমন একটা পছন্দ করতাম না কিন্তু আজ যা হা’ঙ্গা’মা করেছে সকাল সকাল এর পর তো ওকে চোখের সামনেও সহ্য হবেনা আর। সাহস কি করে হয় ওই মেয়ের আমার বোনকে বন্ধ্যা বলে।”
আদিবা চুপ হয়ে আছে। আহান বলে “এসব নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা। যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।”
আদিবা চলে যায় ফ্রেশ হতে। আহান চিন্তায় পরে যায়। আফিয়া আদিবার ক্ষতি করতে পারে। কি করবে বুঝতেছেনা আহান।
**
সানিয়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কল দেয় সাইমনকে। সাইমন কল রিসিভ করতেই সানিয়া ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলে “আমি মা হতে রাজি আছি। আগামী একমাসের মধ্যেই আমি বাচ্চা নিতে চাই।”
এটা বলেই কল কেটে দেয় সানিয়া। অবাক হয়ে এখনো ফোন কানে ধরে রেখেছে সাইমন। সানিয়া এতসহজে বাচ্চা নিতে রাজি হবে ভাবেনি সাইমন।
“এ যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি” ভাবছে সাইমন।
অন্যদিকে গলা ছেড়ে দিয়ে কাঁদছে সানিয়া। আফিয়ার বলা বন্ধ্যা কথাটা বারংবার ওর কানে বাজছে। আফিয়া যে এতোটা নোংরা জানা ছিলোনা সানিয়ার। আজ খুব খুব বেশিই কষ্ট হচ্ছে সানিয়ার খালেদা খাতুনের কথা ভেবে। তার মেয়েকে তার সামনেই কেউ বন্ধ্যা বলেছে অথচ উনি চুপ ছিলেন, চিল ছিলেন একদম। এটা কিভাবে সম্ভব। সানিয়ার মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় ও কি আসলেই খালেদা খাতুনের মেয়ে এটা নিয়ে। সানিয়া ভেবেছিলো সে আজ ডিভোর্সের কথা বলবে সাইমনকে কিন্তু হয়ে গেলো সব উল্টা। নিজের ভাগ্যের উপর রাগ হচ্ছে খুব সানিয়ার।
#চলবে_ইনশাআল্লাহ
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।
#শুকনো_পাতার_বৃষ্টি [০৯]
#ফারজানা_আক্তার
বি’ষা’ক্ত লাগছে চারপাশ সানিয়ার। অদ্ভুত অদ্ভুত চিন্তা ভাবনা আসছে মনে। সকালের নাস্তা খাওয়ার পর সানিয়া নিজের রুমে বসে ছিলো, অপেক্ষায় ছিলো সাইমনের। সাইমন ফোন করে জানিয়েছে সে অফিসের কাজ শেষ করে ফিরবে বিকালের দিকে। সানিয়ার স্পন্দন যেনো বেড়ে চলেছে যত সময় গড়াচ্ছে। সানিয়া এখনো ভাবতেছে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলো তো সে? নাকি আফিয়ার উপর রেগে গিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো? রাগ সবসময়ই বিপদের মুখে ঠেলে দেয় আমাদের। রাগ খুব খারাপ জিনিস। রাগের মাথায় নেওয়া সিদ্ধান্ত কখনোই সঠিক হতে পারেনা। কি করবে এখন সানিয়া বুঝতে পারছেনা, এইদিকে সাইমনকে বলে দিয়েছে সে বাচ্চা নিতে রাজি। সবকিছু অসহ্য লাগছে সানিয়ার কাছে। মিনহাজের কথা মনে পরতেছে কিন্তু মিনহাজ তো ওর জীবনের টুকরো অংশ মাত্র। মিনহাজের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই বিয়ের পর থেকে। কোথায় আছে মিনহাজ তাও জানা নেয় সানিয়ার। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে সানিয়ার। মনে মনে দোয়া করতেছে আল্লাহর কাছে সাইমন যাতে আজ না আসে।
*
আফিয়া নিজের রুমে বসে বসে কিছু একটা ভাবছে। আহান চলে গেছে অফিসে। আদিবা ঘরে একা। এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনা আফিয়া। আফিয়া পরিকল্পনা করছে কিভাবে আদিবাকে আহানের জীবন থেকে সরানো যায়। তখনই আফিয়ার রুমে প্রবেশ করে খালেদা খাতুন। খালেদা খাতুন কে দেখে মুখটা মলিন করে ফেলে আফিয়া। আফিয়া এই মুহুর্তে খালেদা খাতুনের সামনে নিজেকে খুব অসহায় ভাবে উপস্থিত করতে চাই যাতে উনি আদিবাকে বের করে দেয় বাসা থেকে কিন্তু আফিয়ার অজানা খালেদা খাতুনের হাতে কিছুই নেই এখন কারণ আদিবাকে আফজাল খান পছন্দ করেন খুব।
আফিয়া মুখটা মলিন করেই খালেদা খাতুনের পানে চেয়ে বলে “ফুফি খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। আমি কিছুতেই ওই আদিবাকে সহ্য করতে পারছিনা।”
খালেদা খাতুন বলেন “চিন্তা করিস না মা। আমি থাকতে তোর জায়গা কেউ দখল করতে পারবেনা।”
খালেদা খাতুন কথাটি বলে না থামতেই পেঁছন থেকে আদিবা বলে উঠে “আমি কারো জায়গা দখল করিনি মা। আমি নিজে নিজেও আসিনি। আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে। আমি আমার জায়গায় আছি এটা কেউ মানতে না পারুক বা আমাকে কেউ সহ্য করতে না পারলে তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। সিয়ার বন্ধু আমাকে ভালোবেসে আর এটাই আমার শক্তি।”
“তোর সাহস কি করে হয় আমার রুমে আসার? তোকে তো আজকেই খু’ন করবো আমি। তুই সব কেঁড়ে নিয়েছিস আমার।”
খুব উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বলে আফিয়া ছুটে যায় আদিবার কাছে। আদিবাকে স্পর্শ করার আগেই আদিবা থা’প্প’ড় লাগিয়ে দেয় আফিয়ার বাম গালে। আর ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠে “একদম কাছে আসবেনা জ্ব’লে পু’ড়ে ছাই হয়ে যাবে। মোটেও আমাকে পানি ভেবে ভুল করবেনা না, আমি অ’গ্নি বুঝতে পেরেছো? কথায় কথায় যেভাবে মানুষের গায়ে হাত তুলতে এগিয়ে যাও এতে বুঝাই যায় কেমন তোমার পরিবার আর কেমন তোমার শিক্ষা সাথে আচরণ তো আছেই। অ’স’ভ্য একটা মেয়ে লজ্জা করছেনা অন্যের সংসার ভা’ঙ্গ’তে আসছো? সাবধান করে যাচ্ছি তোমায় আমার সংসারে নজর দিবেনা, ফল কিন্তু ভালো হবেনা।”
আফিয়া গালে হাত দিয়ে র’ক্তি’ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদিবার দিকে। আদিবা কথাগুলো বলে চলে যেতে নিলেই খালেদা খাতুন বলে উঠে “ডিভোর্সি মেয়ের মুখে পরিবার শিক্ষা আর আচরণের কথা মানায় না। তোমার নিজেরই যদি শিক্ষা ভালো হতো তাহলে ডিভোর্স হলো কেনো তোমার?”
আদিবা এবার আর চুপ থাকলোনা। এদের সাথে অস্পষ্ট থাকা চলবেনা নয়তো আবারো সংসার ভা’ঙ্গা’র মতো য’ন্ত্র’ণা সহ্য করতে হবে ওকে। আদিবা দাঁতে দাঁত চেপে ধীর কণ্ঠে বলে “আমার আগের সংসার কার দ্বারা ভে’ঙ্গে’ছে এবং কে নিজের স্বার্থের জন্য ষ’ড়’যন্ত্র করেছে সব কিন্তু আপনি আর আমি জানি খুব ভালো করেই। দয়া করে আমার মুখ খুলবেননা সবার সামনে। নয়তো পরে নিজের সংসার নিয়েও টানাটানি করতে হবে আপনাকে।”
“এই মেয়ে কি বলছিস তুই এসব আমার ফুফিকে। ফুফি তুমি কিছু বলছোনা কেনো এই মেয়ে আজেবাজে কথা বলছে তোমায় এতো।”
মেজাজ দেখিয়ে বলে উঠে আফিয়া। থমথমে চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আনমনা হয়ে খালেদা খাতুন। ভাবছে খালেদা খাতুন “কি বলছে এই মেয়ে এসব?” কপাল ঘামছে। হাত পা কাঁপছে।
আদিবা আফিয়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে “কি বলবে তোমার ফুফি আর? ফেঁসে গেছো তোমরা নিজের পাতানো জালে। দেখো কেমন করে কাঁপছে তোমার ফুফি।”
এটা বলেই আদিবা সেই স্থান ত্যা’গ করে। ধপাস করে বসে পরে খালেদা খাতুন। সাইমনের কানে সব গেলে উনার খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে, সানিয়া শেষ হয়ে যাবে মুহুর্তে এসব ভেবেই থরথর করে কাঁপছে শরীর। আফিয়া কিছু বুঝতে পারছেনা। খালেদা খাতুন বিড়বিড় করে বলে উঠে “নাহ, আমার এতোদিনের লুকানো সত্য এভাবে প্রকাশ পেতে পারেনা। আমি এটা কিছুতেই হতে দিবোনা।”
“ফুফি কি বিড়বিড় করছো এসব তুমি?”
আফিয়ার কথায় লাফিয়ে উঠে খালেদা খাতুন। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে খালেদা খাতুন আফিয়াকে বলে “তুই চলে যা মা এখান থেকে। আ… আ.. আমি কথা দিচ্ছি। আদিবাকে আমিই তোর রাস্তা থেকে সরাবো। শুধু তুই এখন চলে যা এখান থেকে প্লিজ।”
খালেদা খাতুনের এমন অনুরোধ কিছুতেই রাখতে পারবেনা বলে দিলো মুখের উপর আফিয়া। খালেদা খাতুন বুঝে গেছে আফিয়াকে আটকানো উনার পক্ষে সম্ভব না। যেমন ফুফি তেমন ভাতিজি। র’ক্ত র’ক্তে’র মতোই হয়েছে। যতক্ষণ না চাওয়ার জিনিসটা পাবে ততক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে যাবে। খালেদা খাতুন আফিয়াকে আর কিছু না বলে চলে গেলো নিজের রুমে।
*
সিয়া বেলকনিতে বসে বসে খেলছে। আদিবা মেয়ের খেলা দেখছে বসে বসে আর উপভোগ করছে মৃদু বাতাস। আহান অনেক রকমের খেলনা এনেছে সিয়ার জন্য সেসব দিয়েই খেলছে সিয়া।
আদিবা ডুব দেয় একটু আগে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোর ভাবনায়। আদিবা শুধুমাত্র খালেদা খাতুনের হাবভাব বোঝার জন্যই কথাটা বলেছে কিন্তু সে মোটেও জানতোনা সত্যি সত্যিই খালেদা খাতুন এভাবে রিয়েক্ট করবে। খালেদা খাতুনের শরীরের ঘাম আর কাঁপুনি দেখে আদিবা বুঝে নিয়েছে যে ওর জীবনের অতীত জোড়ে এই মহিলার ছায়া রয়েছে। কিন্তু বুঝতে পারছেনা আদিবা কিভাবে সব সত্যি সবার সামনে প্রমাণ করবে সে। খালেদা খাতুন মহিলাটা বড্ড রহস্যময়, সহজে কিছুই প্রমাণ করা যাবেনা। আদিবা মনে মনে ভাবে যেভাবেই হোক শুকনো পাতার বৃষ্টি ওকে এই বসন্তেই ঝড়াতে হবে। সিয়া খেলা করতে করতে হঠাৎ কান্না করে দেয়। সিয়ার কান্নায় ধ্যান ভাং’গে আদিবার। আদিবা দ্রুত কোলে তুলে নেয় সিয়াকে। আদিবা কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করতেই সিয়া ফ্যাঁকফ্যাঁক করে কাঁদতে কাঁদতে বলে “আমার পুতুল পরে গেছে নিচে।”
বেলকনি দিয়ে পুতুল পরে গেছে নিচে। এটার জন্যই এভাবে কান্না করছে সিয়া। আদিবা হেঁসে ফেলে মেয়ের এমন মায়াবী কান্না দেখে। আদিবার হাসি দেখে সিয়ার বেশ অভিমান হয় তাই সিয়া ছোট ছোট চোখ করে মুখ ফুলিয়ে বলে “মাম্মাম তুমি খুব পঁচা।”
ঠোঁট উল্টিয়ে আদিবা বলে “কেনো আম্মু? মাম্মাম কি ফেলেছি তোমার পুতুল?”
“তাহলে তুমি হাসছো কেনো?”
সিয়াকে বুকে জড়িয়ে খুব আদুরে কন্ঠে আদিবা বলে “আমি হাসছি কারণ তোমার পুতুল পরে না গেলে কি আমার পুতুল আমার কোলে আসতো?”
আদিবার কথা শোনে ফিক করে হেঁসে ফেলে সিয়া।
সন্ধ্যায় আহান নিজের রুমে প্রবেশ করতেই দেখে সিয়া ঘুমে বিভোর আর তার পাশেই বসে বসে হুমায়ুন আহমেদ এর অপেক্ষা বইটা পড়তেছে আদিবা। আহান যে এসেছে সেইদিকে কোনো লক্ষ নেই আদিবার। আহান হালকা কেঁশে বলে উঠে “কেউ কি অপেক্ষা বই পড়তে পড়তে কারো জন্য অপেক্ষা করছে?”
আহানের কন্ঠ শুনে চমকে উঠে হঠাৎ করে আদিবা। আহান হাসতে হাসতে এসে আদিবার পাশে বসে। আদিবা হাতের বইটা রেখে পাশের টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে আহানের দিকে এগিয়ে দেয় মুচকি হাসির সাথে। আহান ঢকঢক করে পানি খেয়ে বলে “জানো আজ সকালে এতোকিছু হয়ে যাওয়ার পরেও তোমাকে আমি এই ঘরে একা রেখে চলে গিয়েছি অফিসে। আর সারাদিন তোমার জন্য আমার একটুও চিন্তা হয়নি কারণ কি জানো?”
খুব নরম কন্ঠে আদিবা বলে “কেনো?”
“কারণ আমি জানি আমার বউটা খুব শক্ত ধাঁচের। অল্প আঁচড়ে তার কিছুই হবেনা। আর আফিয়া একটু চঞ্চল আর অহংকারী জেদি বে’য়া’দ’প হলেও ওর বুদ্ধি কম। মাথা মোটা একটা মেয়ে।”
আদিবা মুচকি হাসে। তৃষ্ণার্থভাবে দেখছে আদিবার হাসি আহান।
আদিবা বিছানার এক কোণে হেলান দিয়ে বসা ছিলো। আহান পা সোজা করে হুট করে আদিবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। আদিবা কিছু বলেনা, নরম হাতে আহানের চুল টেনে টেনে দিচ্ছে আর লজ্জায় কুটিকুটি হচ্ছে। বেশ আরাম পাচ্ছে আহান, সারাদিনের ক্লান্তি শেষে এমন একটা প্রিয় মানুষের ছোয়া বড্ড বেশি প্রয়োজন হয় মানুষের। ভালো না বাসলে কেউ বুঝতেই পারবেনা এই অনুভূতি গুলো। ভালোবাসা সত্যি নিদারুণ। আহান নেশালো কন্ঠে বলে উঠে “খুব বেশিই তৃষ্ণা পেয়েছে গো।”
বোকা কন্ঠে আদিবা বলে “এমা এখনই তো এক গ্লাস পানি ঢকঢক করেই খেলেন তবুও বুঝি তৃষ্ণা মিটলোনা? আরেক গ্লাস দিবো কি পানি নাকি ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি এনে দিবো? বাহিরে গরম বেশি তো তাই হয়তো এতো বেশি খারাপ লাগছে আপনার।”
“হুসসস বেশি কথা বলো। এমনিতেই তো কাজের কথা জিজ্ঞেস করলে অস্পষ্ট বাদি হয়ে যাও আর এখন বুঝেও না বোঝার মতো হয়ে বকবক করে যাচ্ছো।”
“কি করলাম আবার আমি? আপনিই তো বললেন তৃষ্ণা পেয়েছে।”
“হুম পেয়েছে তৃষ্ণা। কিন্তু এই তৃষ্ণা মনের তৃষ্ণা। যে তৃষ্ণা তুমি ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো কেউ পারবেনা মিটাতে।”
আদিবা চুপ হয়ে যায় একাবারে। আহানের মতিগতি ঠিক লাগছেনা দেখে আদিবা ইশারা দিয়ে সিয়াকে দেখিয়ে দেয়। আহান বলে আমার মেয়ে আমার মতোই, ঘুমালে কোনো হুস থাকেনা আর না ডাকা অব্ধি ঘুম থেকে উঠেওনা।”
এটা বলেই আহান আদিবার দিকে তাকায় অন্যরকম দৃষ্টিতে।
#চলবে_ইনশাআল্লাহ
ভুলত্রুটি মার্জনীয়। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি সবার কাছে।