#শুধু তুই
#পর্বঃ১০,১১
#Tanisha Sultana (Writer)
পর্বঃ১০
সায়ান জুজুকে কোলে করে জুজুর মায়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। তুলি চোখের পানি টা মুছে ফেলে
“ধুর ধুর আমার কেনো খারাপ লাগছে উনি তো আমার কেউ না। তবে আমি সায়ানকে এই মহিলার সাথে কথা বলতে দেবো না। কিছু একটা করতেই হবে
তুলি পুরো রুম ঘুরে ঘুরে দেখে। একটা ডাইরি পায়। ডাইরির পাতায় উল্টে দেখে বড় বড় করে লিখা সায়ানের জুঁই
” উহহহ সায়ানের জুঁই। বেয়াদব মহিলা
তুলি পুরো ডাইরিটা পড়ে।
“তাহলে এই বেপার। আমার কি করা উচিৎ এখন? করবোটা কি? সায়ান কোনো ভাবেই এই মহিলাটাকে ডিজার্ভ করে না। দুনিয়ায় এতো ভালো কিউট কিউট মেয়ে থাকতে সায়ান কেনো এই মহিলার পেছনে পরে থাকবে? আর আমিই বা সেটা কেনো হতে দেবো?
” আপনি ওখানে কি করছেন?
সায়ানের কন্ঠে তুলি হকচকিয়ে যায়। হাত থেকে ডাইরিটা পড়ে যায়। সায়ান তুলির কাছে যায়
“আপনি না অসুস্থ
” কে বললো?
“কে বললো মানে আমি দেখেছি
” কি দেখেছেন
“ইডিয়েট
” আই নো
“চলুন
” কোথায়?
“আমার মাথায়?
” এতো ত্যাড়া কেনো আপনি?
“কি?
” আপনার মাথা
তুলি সায়ানের আগে আগে বেরিয়ে যায়
“এই মেয়েটা আমাকে পাগল করে দেবে।
জুজু ওর ফ্রেন্ড দের সাথে সায়ানের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। তুলি এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। জিসানকে ফোন করছে কিন্তু জিসান ফোন তুলছে না
” জিসানের বাচ্চা তোকে আগে হাতের কাছে পায় তার দেখ কি করি
তুলি বিরবির করে জিসানকে বকছে। তখন একটা মহিলা তুলিকে জিজ্ঞেস করে
“তোমার নাম কি?
তুলি বিরক্তির সাথে উওর দেয়
” তুলি
“বাবার নাম
” তুহিন
“আমার ছেলেটা সরকারি চাকরি করে দেখতে শুনতে ভালোই। তা তোমার বাবার সাথে কথা বলি
” ঠিক আছে বাবার নাম্বারটা তুলুন
মহিলাটা তুলির বাবার নাম্বার নেওয়ার জন্য ফোন হাতে নেয় তখন সায়ান আসে
“আন্টি ও বিবাহিত।
” কিহহহহ
তুলি সায়ানকে বলতে না করছে তাও সায়ান বলছে
“হুম আন্টি। আর আমি ওর স্বামী
মহিলাটা রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়।
” এই যে একদম আমাকে আপনার বউ বলে পরিচয় দেবেন না। আমার একটা সম্মান আছে
“আমারও আপনাকে বউ বলে পরিচয় দেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। আমারও অনেক গুলা সম্মান আছে
” ও মা গো তাই না কি? তো এখন বললেন কেনো?
“বাবার ফ্রেন্ডদের বউ উনি তাই পরিচয় দিলাম।
” আমাকে উদ্ধার করছেন। শুনুন
“বলুন
” মদ খাবো
“কিহহহহহহহ
” ওই দিন খাইছিলাম অনেক ইয়াম্মি খেতে আমি খাবো
সায়ান হাত জোর করে
“দয়া করুন আমাকে
” হুররর
তুলি দৌড়ে চলে যায় মদ আনতে। কিন্তু কোথাও মদ পায়,না শুধু জুসের বোতল মদ নাই। তুলি মন খারাপ করে আবার সায়ানের কাছে চলে যায়। সায়ান জুজুর মায়ের সাথে কথা বলছিলো
“ও গো শুনছো
সায়ানের হাত ধরে বলে
” বলুন
তুলি টান দিয়ে সায়ানকে নিচু করে কানে ফিসফিস করে বলে
“আর একবার যদি আপনি করে বলেন তো আপনার একদিন আমার যতদিন লাগে। তুমি করে বলেন
” কি গো
“ববলো। সায়ান থেমে থেমে বলে
” সায়ান ও
তুলি জুঁইয়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে
“ও মা জানেন না আমি ওনার বউ।
” বউ
“হুমমম। সায়ান তুমি ওনাকে বলো নি
” জুঁই বাবা
জুঁই সায়ানকে থামিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বলে
“বাহহ তোমার বউটা তো খুব মিষ্টি। দোয়া করি সুখী হও
জুঁই চলে যায়। সায়ান তুলির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়
” আপনি এভাবে কেনো বললেন?
“ইচ্ছে হয়েছে তাই
” লিসেন আমি আপনাকে স্ত্রী হিসেবে মানি না আর মানবোও না।
“এতে আমার কিচ্ছু এসে যায় না। না মানলেও আমি আপনার বউ। আর আমি এক বাচ্চার মা কে আপনার সাথে সয্য করবো না। যতখন এখানে আছি সব সময় আমার সাথে থাকবেন। ভুলেও যদি ওই মহিলার সাথে কথা বলতে দেখি তো চিৎকার চেচামেচি করে মাথায় তুলে ফেলবো। আর আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না। বুঝলেন আমার টুনুমুনু বর।
তুলি চলে যায়। সায়ান ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। তুলির শশুর বাড়ির সবাই চলে এসেছে। তুলি জিসানের কান ধরে টেনে এক সাইডে নিয়ে যায়
” আরে তুলি কানটা ছাড় লাগছে তো
তুলি কান ছেড়ে দেয়
“কতোবার ফোন দিছি তোরে
” সরি রে
“তোর সরি তুই তোর পকেটে রাখ। জানিস দারুণ একটা খবর আছে
” কিহহ
“জুজুর মায়ের নাম জুঁই
” এটা তো আমি ছোট বেলা থেকে জানি
“বলতে তো দিবি
” বল
“তোর ভাই জুজুর মাকে প্রচন্ড ভালোবাসে
” জানি
“আমাকে আগে কেনো বলিস নি
” বললে কি করতি
“লুঙ্গি ডান্স করতাম
” আবার
“হুর কথা বলার মুডটাই নষ্ট করে দিলি।
” তুই আমাকে মোটামুটি যা বলবি তা আমি জানি
“এবার উপায় বল
” তুই তো ভাইয়াকে লাইকই করিস তো এসব দিয়ে কি করবি
“আমি ওনাকে ওই মহিলার সাথে মিশতে দেবো না
” এই এক মিনিট তুই কি কোনোভাবে সায়ান চৌধুরীর প্রেমে পরে গেলি না কি। তাহলে গান ধরতে হবে
“প্রেম জেগেছে আমার মনে বলছি আমি তাই, তোমায় আমি ভালোবাসি তোমায় আমি চায়”
তুলি বিরক্ত হয়ে চলে যায় জিসানের ওই খান থেকে।
“সব পাগল এতো পাগলের মধ্যে আমি যে কি ভাবে থাকবো সেটাই বুঝতে পারছি না। আল্লাহ আমারে নেও একেবারে না কয়েকদিনের জন্য।
অনুষ্ঠান শেষ হতে রাত একটা বেজে যায়। জিসান ডাইভ করছে আর তুলি পাশে বসে আছে। সায়ান পেছনে বসেছে।
” জিসান
“বল
” একটা গান ধর তো
“এখানে কোনো গান হবে না
সায়ান বলে।
” এখানে গান হবে। জিসান ১ ২ ৩
“প্রেম জেগেছে আমার মনে বলছি আমি তাই, তোমায় আমি ভালোবাসি তোমায় আমি চায়
জিসান আর তুলি উচ্চ সুরে গান গাইছে সায়ান কানে হাত দিয়ে বসে আছে।
চলবে
#শুধু তুই
#পর্বঃ১১
#Tanisha Sultana (Writer)
মাঝ রাতে তুলির ঘুম ভেঙে যায়। ঘড়ির কাঁটায় দুইটা ছুঁই ছুঁই। তুলি সোফায় ঘুমায়। বিছানার দিকে চোখ পরতেই দেখে সায়ান নেই। তুলি উঠে বসে
“যাহহ বাবা উনি আবার কই গেলো? জুঁইয়ের কাছে চলে যায় নাই তো। গেলে যাক আমার কি? ভাববো না আর ওনার কথা।
হঠাৎ গিটারের সুর ভেসে আসে। সাথে গান
” এতো রোদ্দুর তুই এনে দিলি তাই তোর বৃষ্টি আমি একটু পেতে চায়
মেঘলা হয়ে যাক আরও পাঁচটা বারো মাস কোনো বিকেল বেলাতে তুই আমার হয়ে যাস
#শুধু তুই শুধু তুই আর চাইছি না কিছুই
তুলি গানের সুর অনুসরণ করে বাগানে চলে যায়। সায়ান গিটার বাজাচ্ছে আর গান গাইছে। তুলি সায়ানের পাশে বসে। সায়ান গান গাওয়ায় এতোই মগ্ন ছিলো যে তুলি ওর পাশে বসে আছে তা খেয়াল ই করে নি।
গান শেষে পাশে তাকিয়ে দেখে তুলি
“একি আপনি এখানে?
” গান শুনতে এলাম
“গান তো শেষ এবার যান
” হা করে ইলি বলেন তো
“হোয়াট
” হা করে ইলি বলতে বলছি
“এটা কখনো পসিবল না
” আপনাকে ছাড়াও পসিবল না
“কি বলছেন পাগলের মতো
” বুঝবেন না। তবে গানটা দারুণ গান
“জানি
” আর কি কি জানেন
“ইডিয়েট
” আচ্ছা সব সময় আমার সাথে এভাবে কথা বলেন কেনো? মানছি আপনার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমাদের বিয়েটা হয়েছে তাই বলে এভাবে কথা বলার কি আছে? আমি তো বলেছি চলে যাবো। যে কটা দিন আছি একটু ভালো করে কথা বলুন না
তুলির কথায় সায়ান চুপ হয়ে যায়।
“আপনি যত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন ততই আপনার ভালো।
শক্ত কন্ঠে বলে সায়ান।
” আমি চলে গেলে আপনি বেঁচে যান তাই না
সায়ান এক পলক তুলির দিকে তাকায়।
“হয়ত
” আচ্ছা আমরা তো ফ্রেন্ড হতেই পারি তাই না? করবেন আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ
তুলি সায়ানের দিকে হাত এগিয়ে দেয়। সায়ান তুলির হাতের দিকে তাকিয়ে আছে
“আমার মতো খারাপ মানুষের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করা যায় না
তুলি হাতটা নামিয়ে নেয়।
” আপনি খাবাপ? হুম আপনি একটু লুচু টাইপের লোক বউ থাকতেও একটা মহিলার পেছনে ঘুরেন বাট আমার তো আপনাকে খারাপ মনে হয় না
“মাঝে মাঝে আমরা চোখের সামনে যা দেখি সেটা ভুল হয়।
” কিন্তু
“আমি রুমে যাচ্ছি।
সায়ান উঠে চলে যায়।
” কি বোঝাতে চাইছে সায়ান? অনেক বড় একটা রহস্য আছে যেটা আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে।
তুলিও রুমে চলে আসে। সায়ান লম্বা হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। তুলি আস্তে করে দরজা চাপিয়ে দিয়ে সোফায় শুতে যায়।
“আপনি চাইলে বিছানায় শুতে পারেন।
সায়ান চোখ বন্ধ রেখেই বলে। সোফায় শুয়ে তুলির ঘাড় ব্যথা হয়ে গেছে। তাই সায়ান একবার বলাতেই বিছানায় শুয়ে পরে। মাঝখানে কোলবালিশ রেখে।
” আপনার মনে অনেক প্রশ্ন। আমি কেনো জুজুকে নিজের সন্তানের মতো আগলে রাখি। কেনো জুজুর মায়ের খেয়াল রাখি। কেনো গোমড়ামুখো হয়ে থাকি।
তুলি মাথা উঁচু করে সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে
“আপনি জানলেন কি করে?
সায়ান চোখ খুলে তুলির দিকে তাকায়
” জুজু আর জুঁই আমার দায়িত্ব। আর দায়িত্বের কাছে ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই।
“কিছুই বুঝলাম না
” গুড নাইট
সায়ান আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। তুলি কিছু বলতে গিয়েও বলে না।
তুলির ঘুম ভাঙতে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়।
“ও মাই আল্লাহ এখন তো করলা শাশুড়ী আমাকে করলা খাইয়ে ছাড়বে।
তুলি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায়। সবাই খাচ্ছে। তুলির শাশুড়ী আর কাকিমনি খাবার সার্ভ করছে। তুলি কাচুমাচু হয়ে ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
“বাড়ির বউ দুপুরে ঘুম থেকে উঠছে চমৎকার।
” সরি আন্টি আসলে
তুলির শাশুড়ী তুলিকে থামিয়ে বলে
“এক্সকিউজ দিতে হবে না। তুমি যে গুড ফর নাথিং সেটা আমি আগেই জানতাম তাই তো আমার সায়ানের গলায় তোমাকে ঝুলাতে চায় নি কিন্তু কপালে দোষ
তুলির কান্না পাচ্ছে। তুলি অনেক কষ্টে কান্না থামায়।
জিসান বলে
” মা তোমার পবলেম কি বলো তো? সব সময় তুলির সাথে এমন বিহের করো কেনো?
“ও কে আমার জাস্ট সয্য হয় না বুঝলি তুই
শাশুড়ী রেগে মেগে চলে যায়। তুলিও দৌড়ে রুমে চলে যায়। বেলকনিতে বসে কান্না করছে তুলি। কেনো জানি খুব কান্না পাচ্ছে। তুলির বাবা ফোন দেয়। তুলি ফোনটা রিসিভ করে কানে নেয়
” কেমন আছে আমার মামনিটা
তুলি এবার শব্দ করে কেঁদে ওঠে
“কি হয়েছে কান্না করছিস কেনো?
” আমাকে নিয়ে যাও না বাবা প্লিজ
“তুলি
” বাবা এখানে কেউ আমাকে চায় না। এখানে আমার কোনো সম্মান নেই।
“ঠিক আছে কাল নিয়ে আসবো তোমাকে
তুলি ফোনটা রেখে দেয়।
” শুনুন
পেছনে তাকিয়ে দেখে সায়ান খাবার প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তুলি চোখের পানি মুছে ফেলে। সায়ান তুলির পাশে বসে।
“চলে যাবেন?
” হুম
“আর কিছু দিন থেকে যান
তুলি সায়ানের দিকে তাকায়
” না মানে আমাদের ডিভোর্স হয়ে যাক তারপর যাইয়েন। এখন আপনি বাড়ি গেলে অনেকে অনেক কথা বলবে। অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। তাই বলছিলাম আর কি। বাকিটা আপনার ইচ্ছা।
“আমি চলে গেলে আপনি আমাকে মিছ করবেন?
তুলি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করে
” এই তো কাঁদছিলেন
“আমি বেশিখন কাঁদতে পারি না। সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট না হেসে থাকতে পারি না
“খেয়ে নিন
” আপনি আমার জন্য খাবার এনেছেন?? সামথিং সামথিং
“ইডিয়েট
সায়ান চলে যায়। তুলি খাওয়া শুরু করে
চলবে