#শুধু তুই
#পর্বঃ২,৩
#Tanisha Sultana (Writer)
পর্বঃ২
প্রচন্ড খিদে পেয়েছে তুলির। রুমের মধ্যে পায়চারি করছে।
“এখন খাওয়ার জন্য গেলে করলা শাশুড়ী আমাকে করলা ভাজি খাইয়ে দেবে। আবার না খেয়েও থাকতে পারছি না। করবোটা কি?
তুলির ফোন বেজে ওঠে। তুলির বাবা ফোন দিয়েছে
” একদম সিমপেথি দেখাতে আসবা না। বলে দিতা বাসা থেকে বেরিয়ে যেতাম। এরকম একটা করলার বংশধরের বাড়িতে না পাঠালে পারতে।
“আমার কথাটা তো শোন
” কোনো কথা শুনবো না। ফোন রাখো আর নেক্সট টাইম কল দিবা না।
তুলি ফোন কেটে দেয়। প্রচুর রাগ হচ্ছে তুলির। নিজের চুল নিজে টানছে। সায়ান রুমে আসে।
“আমি খাবো
সায়ান সরু চোখে তুলির দিকে তাকায়। তুলি মাথা নিচু করে আছে।
” আমাকে কি আপনার খাবার মনে হয়? রাগী গলায় প্রশ্নটা করে সায়ান। তুলি আমতা আমতা কটছে।
“আমার খিদে পেয়েছে। যদি কোনো খাবার হতো। তুলি বলে।
সায়ান কিছু না বলে কানে হেটফোন গুজে শুয়ে পরে।
” এ কেমন মানুষরে বাবা। একটা মানুষ নিজ থেকে খাবার চাইছে তাকে ইগনোর করে শুয়ে পরলো। তুলি বিরবির করে বলছে।
“আসবো। সায়ানের বাবা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলে।
” হুম আসুন। পারমিশন নেওয়ার কি আছে? তুলি বলে।
সায়ানের বাবা ভেতরে আসতে আসতে বলে
“ছেলে এখন বিয়ে করেছে তার রুমে কি পারমিশন ছাড়া ঢোকা যায়।
তুলি একটু লজ্জা পায়। যদিও লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু বলে নি।
সায়ানের বাবা সোফায় বসে খাবারের প্লেট টা টেবিলে রাখে।
” আমার পাশে বসো। হালকা হেসে বলে সায়ানের বাবা। তুলি ওনার পাশে বসে। উনি ভাত মেখে তুলির মুখের সামনে ধরে। তুলি খেয়ে নেয়।
“কাল থেকে তুমি অফিসে যাবে। তুমিই সায়ানের নতুন পিএ
তুলির গলায় খাবার আটকে যায়। সায়ানের বাবা তুলিকে পানি দেয়। পানি খেয়ে তুলি একটু শান্ত হয়ে মিনতির সুরে বলে
” আমি ওনার পিএ হতে পারবো না।
“কেনো
” প্লিজ
“তুলি তুমি আমার কথাটা রাখবে না।
তুলি পরেছে বিপদে।
” ওই গোমড়া মুখোর পিএ হলে তো সারাদিন ওনার সামনে থাকতে হবে।
“কি ভাবছো? সায়ানের বাবা তুলিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে।
” কিছু….. না। থেমে থেমে বলে তুলি।
সায়ানের বাবা তুলির মুখে ভাত দিয়ে বলে
“কাল থেকে অফিস জয়েন করবে। সকালে তারাতাড়ি ঘুম থেকে উঠবে ওকে।
তুলি ভাত চিবতে চিবতে মাথা নারায়।
সকালের খাবার বিকেলে খেয়ে তুলির খুব খারাপ লাগছে। সায়ান বেরিয়ে গেছে। তুলি এপাশ ওপাশ হাটছে। হঠাৎ তুলি চোখ পরে দেয়ালে থাকা একটা ছবির দিকে সায়ান আর একটা মেয়ের ছবি। সায়ান মেয়েটাকে হাটু মুরে প্রপোজ করছে আর মেয়েটা এক গাল হেসে ফুলটা নিচ্ছে।
” কে এই মেয়েটা ওনার গার্লফ্রেন্ড। আমি তো শুনেছিলাম ওনার একবার বিয়ে হয়েছিলো তাহলে এই মেয়েটাই ওনার বউ? কোথায় আছে এই মেয়েটা? দেখে তো মনে হচ্ছে উনি মেয়েটাকে খুব ভালোবাসে। তাহলে আমায় বিয়ে করলো কেনো? ধুর এসব ভেবে লাভ নেই।
বাইরে একটা বাচ্চার হাসির শব্দ শুনে তুলি বাইরে যায়।
“এবাড়িতে বাচ্চাও আছে। বাহ ভালোই হলো।
তুলি বাইরে গিয়ে দেখে সায়ানের কোলে একটা চার পাঁচ বছরের মেয়ে।সায়ানকে আবার পাপা বলছে।
“এমা ওনার তো দেখছি আবার বাচ্চাও আছে। বাবা আমাকে একটা বুরোর সাথে বিয়ে দিলো
” পাপা ওই বউটা কে?
বাচ্চা মেয়েটা সায়ানকে জিজ্ঞেস করে। ওখানে সায়ানের মা মনা আর একটা মেয়ে ছিলো।
“কি হলো পাপা বলো
সায়ান একবার তুলির দিকে তাকায়। তুলি সায়ান কি উত্তর দেবে এটার শোনার জন্য অধিক আগ্রহে সায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
” তুমি ওকে আন্টি বলতে পারো।
“তোমার কে হয় সেটা জানতে চাইছি
“কি বিচ্ছু মেয়েরে বাবা জেনেই ছাড়বে। বলুন বলুন আমি কে হই
” আমার আপু হয়
সায়ানের কথায় সবাই চোখ বড়বড় করে সায়ানের দিকে তাকায়।
“আমি ওনার আপু হই। আল্লাহ আমারে তুইলা নেও
বিরবির করে বলছে তুলি।
তুলি মুখ ফুলিয়ে রুমে চলে যায়।
” আজ আর দোলনায় শুতে পারবো না। তারাহুরো করে খেয়ে খাটে শুয়ে পরবো
যেই ভাবা সেই কাজ। তুলি চক করে খেতে চলে যায়। সবে রাত আটটা বাজে। তুলি খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে খাবার বেরে রুমে চলে যায়। তারপর পায়ের ওপর পা তুলে আরাম করে খাওয়া শুরু করে।
খাওয়া শেষে চাদর মুরি দিয়ে শুয়ে পরে। সায়ান খাবার খেয়ে রাত দশটায় রুমে আসে। দেখে তুলি বিছানায় শুয়ে আছে। সায়ান লাইট বন্ধ করে সোফায় শুয়ে পরে।
সকালে তুলি চোখ খুলে দেখে রুমের কোথাও সায়ান নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নয়টা বাজে
“ও মাই গড এতো বেলা হয়ে গেছে।
তুলি তারাহুরো করে উঠে ফ্রেশ হতে যায়। ফ্রেশ হয়ে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নিচে যায়। দেখে সায়ানের বাবা বসে আছে খাবার টেবিলে।
” এতো লেট হলো
তুলি এক হাতে কান ধরে বলে
“সরি
সায়ানের বাবা একটু হেসে তুলিকে বসতে বলে। তুলি বসে খাওয়া শুরু করে।
সায়ান নিজের অফিস রুমে বসে আছে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। কারণ সায়ানের পিএ আসে নি এখনো।
” মায়া মায়া
চিৎকার করে ডাকে সায়ান। মায়া নামের মেয়েটি দৌড়ে সায়ানের কেবিনে ঢোকে
“সসস্যার
” পিএ আসে নি কেনো?
“বড় স্যার আপনার জন্য নতুন পিএ ঠিক করেছে
” কোথায় সে
“এখনো আসে নি
” আসে নি মানে নি?
সায়ানের রাগে মায়ার ভয় করছে।
“মে আই কাম ইন স্যার
সায়ান আর মায়া বাইরের দিকে তাকায়। তুলি ভয়ে ভয়ে ভেতরে ঢোকে।
” ডিসিপ্লিন বলে একটা শব্দ আছে জানেন
শান্ত গলায় বলে সায়ান।
“জ্বী
” আমি কি আপনাকে পারমিশন দিয়েছি ভেতরে ঢোকার
চিৎকার করে বলে সায়ান। তুলি কান চেপে ধরে
“আমি তো বলেছিলাম মে আই কাম ইন আপনি তে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলেন হ্যাঁ বা না কিছুই বললেন না। তো আমি ভেবেছিলাম আপনি কথা বলতে পারেন না। পরে
” সাট আপ
সায়ানের ধমকে মারা দৌড়ে চলে যায়। তুলি চোখ বুজে নেয়। এই বুঝি গালে থাপ্পড় পরলো।
চলবে
#শুধু তুই
#পর্বঃ৩
#Tanisha Sultana (Writer)
“আপনার কি মনে হয় আপনি আমার পিএ হওয়ার যোগ্য? দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান।
” নাা
“তাহলে কেনো এসেছে?
হুঙ্কার দিয়ে বলে সায়ান। তুলিতো ভয়ে শেষ।
” আআআআমাকে ববববববাবা
“সাট আপ
তুলির কথা শেষ হওয়ার আগেই ধমক দেয়। তুলি বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে সাহস বাড়িয়ে বলে
” আমি ইচ্ছে করে আপনার পিএ হতে আসি নি। আংকেল আই মিন আপনার বাবা আমাকে জোর করে এনেছে।
আংকেল আংকেলললললললল
তুলি জোরে ডাকে সায়ানের বাবাকে।
“এই মেয়ে এটা আপনার বাড়ি না। এটা অফিস
” আই নো। আমি যখন সাট আপ বলেন তখন আপনার মনে থাকে না এটা অফিস।
“আমার অফিসে আমার যা খুশি আমি তাই করবো
” কি হয়েছে তুলি
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সায়ানের বাবা বলে
“আংকেল উনি বলছে আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা কম। আমি ওনার পিএ হওয়ার যোগ্য না
” সায়ান তুলিই তোমার পিএ। এটা আমার ডিসিশন
“তোমার ভালোবাসা তুমি পার্সোনাল ভাবে দেখাবে কোনোভাবে তাতে আমাকে ইনভলভ করবে না।
” তোমার পিএ কে হলো না হলো এতে তোমার এতো মাথা ব্যাথা কেনো? আর এতে ভালোবাসা দেখানোর কি আছে?
সায়ান টেবিলে একটা লাথি মেরে বেরিয়ে যায়।
সায়ানের বাবা তুলির কাছে গিয়ে বলে
“মামনি
তুলি ওনাকে থামিয়ে বলে
” আমি জানি না আপনি বাবা আপনারা কেনো আমার সাথে এমনটা করলেন? কেনো এমন করলার সাথে আমার বিয়ে দিলে? তোমরা কাজটা ভালো করো নি
তুলি বেরিয়ে যায়। সায়ানের বাবা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“কারণটা জানলে তুমিও চমকে যাবে।
লান্স টাইম। সায়ান তুলিকে সায়ানের জন্য খাবার আনতে বলে। তুলি ভাবছে কোথা থেকে খাবার আনবে। এখানকার দোকানপাট কিচ্ছু চেনে না তুলি তার ওপর আবার সায়ান কি খায় তাও জানে না।
” কি করবো? কোথায় যাবো? ওই গোমড়া মুখোর জন্য এবার আমি কোথা থেকে খাবার আনবো? যদি খাবার না নিয়ে যায় তাহলে বলবে সাট আপ।
ঠাস করে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যায় তুলি।
“ও মা গো কোমরটা গেলো রে
তুলি তাকিয়ে দেখে ইয়া লম্বা মোটা চোখে কানাদের চশমা। বড় বড় চুল। তুলির চুলের থেকেও বড়। আবার চাপ দাঁড়িও আছে। তুলি এবার কনফিউজড উনি ছেলে না মেয়ে। তুলি ওনার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
লোকটা তুলির দিকে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে আছে। তুলি এবার লোকটার চুল ধরে টানাটানি শুরু করে দেয়। লোকটা তুলিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে
” কি হচ্ছে এসব কি হচ্ছে? লোকটা মালয়েশিয়ার ভাষায় বলে।
তুলি এবার লোকটাকে ছেড়ে দেয়।
“ও মাই গড আপনি উগান্ডার প্রেসিডেন্ট। তা বলছিলাম কি আপনি ছেলে না মেয়ে?
তুলি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করছে।
” আমি কিছু বুঝতে পারছি না আপনার কথা। লোকটা মালয়েশিয়ার ভাষায় বলে
“ওহহহ আপনি মেয়ে। দেখলেন আপনার ভাষা আমি কতো ভালো বুঝি। (তুলি লোকটার কাঁধে হাত দিয়ে বলে) আসলে আমি কে তুলি? আমি সব পারি। কারো মুখ দেখেই পবলেম বুঝতে পারি।?
” কি হচ্ছে এসব
পেছন থেকে সায়ান রাগী সুরে বলে। তুলি চমকে লোকটার কাঁধ থেকে হাটটা সরিয়ে নেয়। সায়ান লোকটার কাছে এসে হাত মেলায়। তারপর কি কি বলতে থাকে তা তুলি বুঝতে পারে না। সায়ান বারবার লোকটাকে মিস্টার বলছে
“আরে আরে আপনি ভুল বুঝছেন উনি মিস্টার না মিসেস।
” সাট আপ
“সত্যি কথা বললেও ধমক খেতে হয়।
মাথা নিচু করে বলে তুলি।
” উনি আমাকে বলেছেন উনি উগান্ডার প্রেসিডেন্ট। আর উনি মেয়ে। দাঁড়ি তো শখ করে রেখেছেন
তুলির কথা শুনে সায়ান হাসবে না কি কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
“উগান্ডা প্রেসিডেন্ট। লোকটা ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলে। তুলি খুশিতে গদগদ করে বলে
” দেখলেন উনি নিজেই বললো উনি উগান্ডার প্রেসিডেন্ট। শুনে নিয়েছেন
“উনি আমার বিজনেস পাটনার। মালয়েশিয়া থেকে এসেছেন। আর উনি ছেলে
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান। তুলি একবার সায়ানের দিকে তাকাচ্ছে একবার লোকটার দিকে তাকাচ্ছে
” দশ মিনিটের মধ্যে আমার খাবার চাই
এতোখান তুলি খাবারের কথা ভুলে গেছিলো।
“আসলে আমি তো জানি না আপনি কি খান
” যা খুশি নিয়ে আসেন
তবুও তুলি দাঁড়িয়ে আছে।
“যেতে বলছি। আউট
তুলি দৌড়ে চলে যায়। সায়ানের জন্য চিকেন বিরিয়ানি নিয়ে আসে। সায়ান লোকটার সাথে কথা বলছিলো। তুলি হাঁপাতে হাঁপাতে বলে
” বাকি নিয়ে এসেছি। এখন টাকা দেন দিয়ে আসি।
চলবে