শুধু তুই #পর্বঃ২৩,২৪,২৫

0
1039

#শুধু তুই
#পর্বঃ২৩,২৪,২৫
#Tanisha Sultana (Writer)
পর্বঃ২৩

কিছুদিন পরেই এক্সাম। তাই তুলি আজ ভার্সিটিতে যাচ্ছে। সায়ান তুলিকে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিবে। সায়ান ডাইভ করছে তুলি পাশে বসে আছে

“শুনুন না

” বলুন

“আমাকে কেমন লাগছে

” সব সময় যেমন লাগে তেমন

“নিরামিষ

” আই নো। নতুন কিছু বলো

“ভাল্লাগে না

” আমাকে

“হুররর

” পাগলি
সায়ান মুচকি হেসে বলে।

“আমার সামনে হাসবেন না

” কেনো?

“খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে

” কিসব যে বলো

“তুমি তো ফিটার খাও বুঝবা না

” বোঝার দরকার নেই।

ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামায় সায়ান

“নামেন

তুলি সায়ানের গালে একটা কিছ করে বেরিয়ে যায়।

” সাবধানে যাইয়েন। পৌঁছে আমাকে কল করবেন। না করলে খবর আছে

তুলি চলে যায়। সায়ান মুচকি হেসে বলে

“আমি তো চায় তুলির সাথে স্বাভাবিক হতে। কিন্তু পারছি না। কেনো পারছি না? যদি জুঁইয়ের মতো তুলিকেও হারিয়ে ফেলি। না না এটা আমি হতে দেবো না

ভার্সিটিতে তুলির কোনো ফ্রেন্ড নেই। তুলি একা একা ক্লাসে বসে আছে।

“হেই

তুলি সামনে তাকিয়ে দেখে ওই দিনের সেই ক্লোজ আপ ছেলেটা।

” এ এখানে কেনো?

ছেলেটা তুলির সামনে এসে দাঁড়ায়। একগাল হেসে বলে

“এখন যে স্যারের ক্লাস সে আসে নি তো ক্লাস হবে না।

” জানতে চায় নি

“কিন্তু আমার জানাতে ইচ্ছে হলো।

ছেলেটা তুলির সামনে বসে।

” ফ্রেন্ডশিপ করবা

“নাা

” কেনো?

“আলরেডি এক ফ্রিজ ফ্রেন্ড আছে।

ছেলেটা হো হো করে হাসে

” ডিজগাস্টিং

তুলি বিরক্ত হয়ে উঠে ক্লাসের বাইরে যায়। ছেলেটাও তুলির পিছনে যায়

“আপনি আমার পিছু নিয়েছেন কেনো

“কিছু শেয়ার করতে চায়

” কিহহহ

“আমার দুঃখ কমাতে চায়

তুলি কিছু না বলে ঘাসের উপর বসে। ছেলেটা তুলির থেকে একটু দুরে বসে

“জানেন সময় হলো পৃথিবীর সব থেকে বড় বেইমান। একটা সময় আমি হাসতে পারতাম না আর এখন কাঁদতে পারি না।

তুলি মন দিয়ে শুনছে।

” আমিও একদিন এই ভার্সিটিতে পড়তাম। আমার কলিজার ফ্রেন্ড ছিলো তিনটা। সব সময় আমরা চার জন এক সাথে থাকতাম। মজার বেপার কি জানো আমরা চারজন মিলেমিশে দুজন হয়ে গেছিলাম

তুলি ভ্রু কুচকে বলে

“মানে

” মানে আমি ভালোবাসতাম প্রিয়াকে আর সায়ান জুঁইকে।

সায়ান নামটা শুনে তুলি চমকে ওঠে। ছেলেটা একটু হাসে

“আমি প্রিয়াকে এতোটা ভালোবাসতাম। ভীষণ ভালোবাসতাম। কিন্তু সায়ান প্রিয়াকে মেরে ফেলেছে

” মানে

তুলি জোরে বলে। ছেলেটা হো হো করে হাসে। তুলি ঘাবড়ে যায়

“হাসছেন কেনো?

” এতো হাইপার হচ্ছো কেনো? চলো তোমায় দেখাবো আমার প্রিয়াকে।

ছেলেটা তুলির হাত ধরে টেনে হিচরে নিয়ে যাচ্ছে।

“আমি যাবো না ছাড়েন আমার

ছেলেটা তুলির কোনো কথা শুনছে না। তুলিকে টানতে টানতে ভার্সিটি থেকে অনেকটা দুরে একটা কবরের সামনে নিয়ে আসে। কবরটা সুন্দর করে সাজানো। নিরন প্রিয়া লেখা।

” দেখো আমার প্রিয়াকে।

কবরের পাশে বড় একটা ছবি টাঙানো। সেই ছবিটা যেটা তুলি বিয়ের দিন সায়ানের রুমে দেখেছিলো। তুলি ছবিটা ছুঁতে যায়। ছেলেটা বাধা দেয়

“এটা ধরবে না

” কেনো?

“আমার প্রিয়াকে আমি ছাড়া আর কেউ ছুঁবে না

” আপনি নিরব। জুঁইয়ের হাজবেন্ড।

“আমি নিরব শুধু নিরব। প্রিয়ার নিরব আর কিছু না

নিরব চেচিয়ে বলে। তুলি ভয়ে কুঁকড়ে যায়।
নিরব শব্দ করে হাসছে। তুলির খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে আপনার ফুটফুটে একটা পরি আছে কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছে না।

তুলি দৌড় দেয়। এক দৌড়ে ক্লাসে চলে আসে।

রাতে তুলি জুজুকে খাইয়ে রুমে এসে দেখে সায়ান সেই ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে পানি চিকচিক করছে।

” কি হয়েছে?

সায়ান চোখের পানি মুছে নেয়। তারপর একটু হেসে বলে

“কিছু না

তুলি বেডে বসে বলে

” কি বেপার বলেন তো? আগে গোমড়ামুখো হয়ে থাকতেন আর এখন কথায় কথায় হাসেন।

সায়ান তুলির পাশে বসে বলে

“ইদানীং আমার ব্যবহারে আমিই অবাক। জানি না কি হয়েছে?

তুলি সায়ানকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে

“প্রেমে টেমে পড়লেন না কি?

“জানি না

” জানেন ডা কি

“সেটাও জানি না

“এই কিছ ইউ

” হপ

“ধমক দেন কেন

” বলো কি

তুলি সায়ানের কলার ধরে সায়ানকে কাছে নিয়ে আসে

“তুলি প্লিজ

তুলির কিছু শোনার মুডে নেই। যেই তুলি সায়ানকে কিছ করবে তখনই সায়ানের মা চলে আসে

” কি অবস্থা

তুলি সায়ান দুজনই ছিটকে দুরে সরে যায়। সায়ানের মা গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। তুলি আমতাআমতা করে বলে

“আন্টি আপনি

সায়ানের মা ধমকের সুরে বলে

” দরজা খোলা রেখে এসব কি হচ্ছে

“আসলে আপনার ছেলে যে নিরামিষ। কোনোরকম চান্সটা পেয়েছিলাম। কিন্তু আপনার জন্য কিচ্ছু হলো না

তুলির এরকম কথা শুনে সায়ান আর সায়ানের মা দুজনই বড় বড় চোখ করে তাকায় তুলির দিকে। তুলি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

” আমার কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি গোলুমোলু একটা নাতি নাতনি চায়

তুলি খুশি হয়ে শাশুড়ীকে টেনে বিছানায় বসায় আর নিজেও বসে

“তোমার ছেলেকে বলো। ও তো আমাকে

আর কিছু বলার আগেই সায়ান মুখ চেপে ধরে

” মা তুমি কিছু বলতে এসেছিলে।

“হুমম। কাল তন্নি আর জিসানের পাকা কথা বলতে যাবো তাই বলতে এসেছি

তুলি মুখ ছাড়িয়ে নিয়ে বলে

” আমিও যাবো

“ঠিক আছে

শাশুড়ী চলে যায়। সায়ান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুলির দিকে।

” এএভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?

তুলি ভয়ে ভয়ে বলে।

“সব সময় আমাকে ছোট করো কেনো?

তুলি খাটের অন্য পাশে যায়।

” সরি

সায়ান রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

“এতো রেগে গেলো কেনো?

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ২৪
#Tanisha Sultana (Writer)

তুলি সারা বাড়ি খুঁজেও সায়ানকে পায় না

“কোথায় গেলো? কেমন মানুষ রে বাবা? করলাম কি? এতো রাগলো কেনো? রাগ ভাঙাবো কেমনে? গড হেল্প মি

” তুলি

সায়ানের মা রান্না করছিলো তুলিকে ডাকে

“জ্বী আন্টি

” কি আন্টি আন্টি করছিস মা বলবি। কিছু দিন পরে আমার নাতির মা হবি

তুলি লজ্জায় লাল নীল হতে থাকে

“এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেনো?

তুলি শাশুড়ীকে জড়িয়ে ধরে বলে

” তোমার নাতি নাতনির ইচ্ছে মনে হয় কখনো পূরন হবে না

“কেনো?

“যে নিরামিষ ছেলে তোমার

” আমিষ করে নে

“কি করে?

” এরকম শাড়ি সালোয়ার পড়লে আমিষ হবে না

তুলি শাশুড়ীকে নিয়ে বসে

“তাহলে

” হট কিছু পড়

“মানে ছোট ছোট ড্রেস

” হুমমম। ছোট ছোট ড্রেস পড়ে ইমপ্রেস কর

“ওহহো তুমিও কি শশুড় মশায়কে এভাবে ইমপ্রেস করেছিলে

তুলি শাশুড়ীকে চোখ মেরে বলে। শাশুড়ী কান ধরে বলে

” ওরে দুষ্টুরে

রাত দশটা। সায়ান রুমে ঢুকে দেখে রুমটা অন্ধকার

“রুম অন্ধকার করে পাগলটা গেলো কই?

সায়ান লাইট অন করে অবাক??

” একি দেখছি আমি

সায়ান চোখ ডলে আবার তাকায়। তুলি দুইহাত একটা ড্রেস পরে দাঁড়িয়ে আছে।

“হাই বেবি

তুলি সায়ানের দিকে এগিয়ে আসছে।

” তততুমি ঠিক আছো?
সায়ান পিছুতে পিছুতে বলে।তুলি দরজাটা বন্ধ করে দেয়।

“দরজা বন্ধ করছো কেনো?

” যাতে কেউ ডিস্টার্ব না করে

“মানে?

” আজ কোনো মানে টানে চলবে না। শুধু ভালোবাসা চলবে

তুলি সায়ানকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দেয়। সায়ান উঠে বসে

“কেমন লাগছে আমায়

” জঘন্য

“কিহহহ

রেগে বলে তুলি

” রেগে লাভ নেই যা সত্যি তাই বলছি।

তুলি সায়ানের কলার টেনে বলে

“আমার সাথে কেনো এমন করেন? জুঁইকে ভুলতে পারছেন না। এখনো মন খালি জুঁই জুঁই করে

সায়ান তুলিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চিৎকার করে বলে

” হ্যাঁ আমি জুঁইকে ভুলতে পারছি না। আর চায়ও না। আমি জুঁইকে ভালোবাসতাম ভালোবাসি আর ফিউচারেও বাসবো। জুঁইয়ের জায়গা আমি কখনো তোমাকে দিতে পারবো না। আর তুমিও কখনো নিজেকে জুঁইয়ের সাথে তুলনা করবা না। জুঁই আমার জন্য যা করেছে তুমি তা কখনো করতে পারবা না।

সায়ান হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তুলি কাঁদছে। তুলির ফোনে ফোন আসে। তুলি চোখের পানি মুছে বলে

“হেলো কে?

” পরের গল্পটা শুনবে না

কন্ঠ শুনেই তুলি চিনে ফেলে এটা নিরবের কন্ঠ।

“বলুন

” তোর স্বামী একজন খুনি। খুনির বউ তুই

“সাট আপ

লোকটা হো হো করে হাসে

” গায়ে লাগছে

তুলি উওর দেয় না

“একদিন আমি সায়ান জুঁই প্রিয়া ঘুরতে গেছিলাম। সায়ান রাস্তার মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো একটা ট্রাক আসছিলো। একটু হলেই ট্রাকটা সায়ানকে পিসে দিচ্ছিলো সেই সময় প্রিয়া সায়ানকে ধাক্কা দেয় আর প্রিয়া

নিরব থেমে যায়৷ তুলির চোখে পানি

” তারপর

“আমি জুঁইকে কেঁড়ে নিয়েছি। এখন তোকেও। সায়ানকে আমি ভালো থাকতে দেবো না

নিরব ফোন কেটে দেয়। সব মিলিয়ে তুলি প্রচুর কান্না পাচ্ছে।

” আচ্ছা সেদিন যদি প্রিয়া মারা না যেতো তাহলে তো আমি সায়ানকে পেতাম না। ওদের জীবনটা নষ্ট হতো না। জুজু বাবা মা হাড়া হতো না।

“নতুন মা কাঁদছো কেনো?

জুজু তুলির পাশে দাঁড়িয়ে বলে৷ তুলি চোখের পানি মুছে বলে

” কাঁদছি না তো। তুমি কাঁদছো কেনো?

“মামনির কথা মনে পরছে

জুজু শব্দ করে কেঁদে ওঠে। তুলি জুজুকে জড়িয়ে ধরে

” আমিই তোমার মা

তুলি আর জুজু কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে। নিরব ফেক আইডি খুলে সায়ানকে তুলি আর নিরবের সব ছবি পাঠায়। নিরবের মুখ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু তুলির মুখ দেখা যাচ্ছে। হাত ধরা অনেক রকমের পিক।

পিক দেখে সায়ানের মাথা গরম হয়ে গেছে। রাগ কমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।

রাত দুটোই তুলির ঘুম ভাঙে। চেয়ে দেখে সায়ান এখনো আসে নি। তুলি ওয়াশরুমে যায়। ড্রেস চেঞ্জ করে। বাইরে এসে দেখে সায়ান রুমে ঢুকছে। চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে

“আপনি এতো দেরি করলেন কেনো?

সায়ান কিছু না বলে ওয়াশরুমে ঢুকে। তুলি খাবার নিয়ে আসে সায়ানের জন্য।

” আপনার খাবার

সায়ান জুজুর পাশে সুয়ে পড়ে।

“খাবেন না

সায়ান চোখ বন্ধ করে। তুলি খাবারটা ঢেকে রেখে জুজুর আরেক পাশে সুয়ে পড়ে।

” এমন করছে কেনো আমার সাথে? কি করছি আমি?

সকালে ঘুম থেকে উঠে তুলি দেখে সায়ান অফিসের জন্য রেডি হয়েছে।

“বাড়ি থেকে এক পা নড়লে পা ভেঙে দেবো

কথাটা বলেই সায়ান চলে যায়।

” অদেশ দিলো না কি থ্রেট দিলো কিছুি তো বুঝলাম না।

তুলি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। জিসান তুলিকে টেনে জিসানের রুমে নিয়ে যায়

“এখানে আনলি কেন?

” ড্রেস চুজ করে দে

“কেনো?

” প্রথম শশুড় বাড়ি যাবো একটা বোপার আছে না

“আচ্ছা

” যদিও আমি জানি সব ড্রেসেই আমাকে দারুণ লাগে?

“হনুমানের মতো লাগে তোরে

” তোর চোখই খারাপ

“হুরর

কিছুখন ঝগড়া করে তুলি সায়ানের ড্রেস চুজ করে দেয়।

তুলি আর ভার্সিটিতে যায়। বাসায় বসে বোর হচ্ছে। জিসানের শশুরবাড়িও যায় নি।

বিকেলে তুলি ঘুমচ্ছিলো। সায়ান অফিস ব্যাগটা নামিয়ে তুলির পাশে বসে তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তুলি এক চোখ খুলে সায়ানকে দেখে

“ভালুপাসা

” কিহহহ

তুলি লাভ দিয়ে বসে

“আলগা পিরিত ওরভে বালুপাসা দেখাচ্ছেন

” পিরিত বালুপাসা এসব কিহহ

“আপনার লিপ আর আমার লিপ। দুটো মিলে কি হয় বলেন তো

সায়ান ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে

” কিহহহ

“লিপ কিছ। কখনো টেস্ট করেছেন?

” কিহহ

“লিপস্টিক

” নাহহহ

“করবেন

” ফালতু

সায়ান ড্রেস নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে যায়।

“নিরামিষ একটা।

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ২৫
#Tanisha Sultana (Writer)

“বলছিলাম ভার্সিটিতে যাবো

সায়ান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় তুলির দিকে

” এভাবে তাকায় কেন?

“যাবে না কোথাও

” আমি যাবো

“বললাম তো যাবে না

” আপনি কি আমার কথা শুনেন যে আমি শুনবো

“তুমি বাধ্য

” কইলেই হইলো

“হুম

“তুলি একবার যা বলে তাই করে।

” ওহহহ রিয়েলি

“ইয়াহ। আমি যাবো

” ছেলেদের হাত ধরে ঘুরতে

তুলি যেনো আকাশ থেকে পড়লো

“আমি ছেলেদের হাত ধরে ঘুরি

” কেনো মিথ্যা বললাম

“আমি আবার কার হাত ধরে ঘুরলাম? আমার তো কেনো ফ্রেন্ডই নেই

” নিশ্চয় বয়ফ্রেন্ডের কথা ভাবছেন?

“বয়ফেন্ড যেনো কা রে কয়

” ড্রামা কুইন

“আপনার

” বলেন বয়ফ্রেন্ডের

“আর যদিও বয়ফ্রেন্ড থাকে আর আমি যদি তার হাত ধরেও থাকি তাতে আপনার কি? আপনি তো নিরামিষ। আমাকে ছুঁতেই ভয় পান। মনে হয় আমি কারেন্টের মিটার ছুলেই শট খান।

” কিছুটা সেরকম

“হুররর। ভাবতেছি

” কি

“প্রপোজ করমু

” কারে

“আপনারে

” ??

“না মানে যদি আপনি রাজি হন

” আগে প্রপোজ করো তারপর ভাববো

“তা হবে না

” কেনো?

“আমি দশ টাকা দিয়ে একটা গোলাপ কিনে আপনারে প্রপোজ করমু। আর আপনি যদি না করে দেন তো আমার দশটা টাকা তো লস হলো

” আল্লাহ। এসব ভাবো কি করে

“মাথা দিয়ে

” তুমি যদি সুন্দর করে প্রপোজ করতে পারো তো আমি এক্সেপ্ট করবো

“তুলি খুশি হয়ে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে

” ছাড়ো অফিসে যাবো

“হুম

তুলি ছেড়ে দেয়

” পাগলি
সায়ান চলে যায়। তুলিও রেডি হতে যায়

” আমার নিরবের সাথে দেখা করতেই হবে। লোকটা মনে হয় পাগল। জানতে হবে সব

তুলি রেডি হয়ে ভার্সিটিতে চলে যায়। সায়ানের প্রচুর রাগ হয়।

“আমার কাছে এখন সবটা ক্লিয়ার। নিরবের প্রেম ছিলো প্রিয়ার সাথে। এক্সিডেন্ট এ প্রিয়া মরে যাওয়ায় নিরন সায়ানকে ভুল বুঝে। সায়ানের দুর্বল জায়গায় আঘাত করে। আর সায়ানের দুর্বল জায়গায় ছিলো জুঁই। ভীষণ ভালোবাসে। এখন কথা হলো জুঁই কই? আর জুজুদের বাড়িতে এলবামে যে লোকটার ছবি দেকছিলাম সে কে? আর নিরব এখান দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অথৎ কেউ চিনতে পারছে না। কি করে? গাপলাটা কি?

” হেই মিছ

নিরবের ডাকে তুলির হুশ ফেরে। তুলি এতোখন ভার্সিটির পাশে বসে ছিলো।

“আপনি?

নিরব তুলির পাশে বসে। মুখে সেই ভুবন ভোলানো হাসি।

” এতো সুন্দর কেনো ছেলেটা? আর এতো সুন্দর ছেলের মনটা এতো জঘন্য।

“হেলো

” হুম বলুন

“আমাকে ভয় পাও

” নাহহহ। কিছু প্রশ্ন ছিলো

“বলো

” জুঁই কোথায়?

নিরব অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় তুলির দিকে

“জানি না

” আপনি কি জানেন আপনার ফুটফুটে একটা পরি আছে। ভীষণ মিষ্টি দেখতে। কেমন সুন্দর করে ডাকে। ছোট ছোট পায়ে ঘুরে বেড়ায়।

নিরব তুলির কথা মন দিয়ে শুনে

“আমার পরি নেই। আমার পরি তো মরে গেছে। তুমি মিথ্যা বলছো

” আমি সত্যি বলছি

“মিথ্যে মিথ্যে

চিৎকার করে বলে নিরব। তুলি কেঁপে ওঠে। তুলি নিরবের হাত ধরে।

” শান্ত হন। আমি মিথ্যা বলেছি। আমার পরি আছে। দেখবেন

নিরব শান্ত হয়

“নতুন মা

জুজু দৌড়ে তুলির কাছে আসে। তুলি কোলে নেয়

” সোনা তোমার পাপা কথা বলো

পাপা শব্দ শুনে নিরব চমকে ওঠে। জুজু নিরবের কোলে ওঠে। ছোট ছোট হাতে নিরবের সারা মুখ ছুঁয়ে দেয়। কপালে গালে চুমুকে ভরিয়ে দেয়। নিরব রোবটের মতো তাকিয়ে আছে। কিছু বলতে পারছে না। খুব টান অনুভব করছে

“ও পাপা তুমি কোথায় ছিলে? জানো কতো মিছ করেছি তোমাকে? তুমি চলে গেলে মামনিও চলে গেলো। আমাকে একা করে দিতে ভালো লাগে তোমাদের?

জুজু কান্না করছে। নিরব জুজুর চোখের পানি মুছে দেয়।

” কাঁদে না

তুলি বাবা মেয়ের ভালো মুহুর্ত দেখছে।

সায়ান অফিসে বসে আছে। আবার সেই অচেনা আইডি থেকে কিছু পিক আসে। সায়ান সেগুলো সিন করতেই মাথায় রক্ত চড়ে যায়। তুলি নিরবের ছবি। হাত ধরা বসে থাকা জুজুর সাথে সব ছবি।

সায়ান ফোনটা ভেঙে ফেলে। অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। জোরে ডাইভ করে তুলির ভার্সিটিতে চলে যায়। দেখে নিরব তুলি আর জুজু ফুসকা খাচ্ছে আর হাসা হাসি করছে। সায়ান চলে যায়

সন্ধায় তুলি জুজুকে রুমে দিয়ে নিজে রুমে চলে আসে। সায়ান সুয়ে ছিলো

“এই অবেলায় সুয়ে আছেন কেনো?

তুলি সায়ানের গায়ে হাত দিতে যায়। সায়ান তুলিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়

” তোর ওই নোংরা হাত দিয়ে আমাকে ছুবি না

তুলি ফ্লোরে পড়ে যায়। হাতে প্রচুর ব্যথা পায়

“কয়ডা লাগে তোর? ভার্সিটির নাম করে ছেলেদের সাথে নিক নিক করতে যাস। আর ঘরে তোর জায়গা নেই। বেরিয়ে যা

” আমার কথা শুনুন

“আর একটা কথা বলবি না

তুলি উঠে আবার সায়ানকে ধরতে যায়। সায়ান ধাক্কা দেয়। দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথা ফেটে যায়।

” তুই বেরোবি না তাই তো

সায়ান হাত ধরে টেনে তুলিকে দরজার বাইরে ফেলে দরজা বন্ধ করে দেয়। তুলি কাঁদছে আর সায়ানকে ডাকছে কিন্তু সায়ান দরজা খুলছে না।

সায়ান দারোয়ানকে ফোন দিয়ে তুলিকে বাড়ি পৌঁছে দিতে বলে।

“আপামনি চলেন

তুলি চোখ মুছে দাঁড়িয়ে বলে

” কোথায়?

“সায়ান বাবা আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে বলেছে

” লাগবে না আমার

তুলি একা একা এলোমেলো ভাবে দৌড়াতে থাকে।

দারোয়ান সায়ানকে বলে। সায়ান দরজায় একটা ঘুসি মারে

“ওই মেয়েটা এতো ইডিয়েট। যাক যেখানে খুশি। আমি ভাববো না

তুলি একটা বাসে ওঠে। একদম পেছনের ছিটে বসে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here