#শুধু তুই
#পর্বঃ২৬,২৭,২৮
#Tanisha Sultana (Writer)
পর্বঃ২৬
বাড়িতে এসে জোরে জোরে কলিংবেল বাজাচ্ছে তুলি। তুলির মা দৌড়ে এসে দরজা খুলে দেয়। তুলি হনহনিয়ে ভেতরে ঢুকে বাড়ির নিজিস পএ ভাঙতে থাকে। তুলির বাবা মা থামানোর চেষ্টা করছে
“মামনি কি হয়েছে বলবে তো
তুলি বাবার কলার ধরে টেনে সোফায় বসায়
” তুমি কেনো আমাকে ওই গোমড়ামুখোটার সাথে বিয়ে দিয়েছো বলো?
তুলি চিৎকার করে বলে। তুলির বাবা মা ভয় পেয়ে যায়
“কি হয়েছে?
” বের করে দিয়েছে আমাকে বাড়ি থেকে। শুনছো তোমরা
তুলি এবার কেঁদে দেয়। একটু পরে চোখ মুছে আবার বলে
“আমি প্রেম করবো। অনেক গুলো। দেখি উনি কি করতে পারে
তুলি রুমে চলে যায়। তুলির বাবা সায়ানের বাবাকে ফোন দেয়
” হেলো
“তুমি আমার পায়ে ধরে আমার মেয়ের সাথে তোমার ছেলের বিয়েতে রাজি করিয়েছিলে। এখন আমার মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার সাহস হয় কি করে?
” কে বের করে দিয়েছে?
“তোমার গুনোধর ছেলে৷ আজ থেকে তোমার সাথে আমাদের সম্পর্ক শেষ।
তুলির বাবা ফোনটা কেটে দেয়।
তুলি রুমে পায়চারি করছে
” বফ না থেকেও আমি এতোগুলো কথা শুনলাম। এখন আমি বফ বানাবো। করবো আমি প্রেম। দেখি হনুমানটা কি করতে পারে।
তুলি ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট করে ইমারজেন্সি বফ লাগবো?
সায়ান নিউজফিল্ডে ঘোরা ঘুরি করছিলো তখন তুলির পোষ্টটা চোখে পরে। পাঁচ মিনিট আগে পোষ্ট করছে তিনশত লাইক চারশো কমেন্ট হয়ে গেছে।
“এই মেয়েটাকে তাড়িয়ে দিয়ে ভুল করেছি। এটা যে একটা পাগল তা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। বফ লাগবো না। দেখাচ্ছি আমি
সায়ান শার্ট নিয়ে বেরিয়ে যায়। বাইরে বেরিয়ে দেখে বাবা দাঁড়িয়ে আছে।
” কোথায় যাচ্ছ?
“কাজ আছে
” তুলিকে বের করে দিয়েছো কোন সাহসে
অনেকটা রেগে বলে
“বাবা আসলে
” এতোটা বেহায়া তুমি। মেয়েটা তোমাকে ভালোবেসে আপন করে নিতে চায় আর তুমি সব সময় কষ্ট দাও কেনো?
ওহহ জুঁইকে ভালোবাসো। ঠিক আছে চলে যাও
সায়ান কিছু না বলে চলে যায়। তুলিদের বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছে। ঘড়িতে দুটো বাজে। এতো রাতে সবাইকে জাগাতে ভালো লাগছেনা সায়ানের। তাই গাড়িটা তুলিদের বাড়ির পেছনে নিয়ে যায় আর গাড়ির ভেতরে সুয়ে পড়ে।
পাঁচটা তেতাল্লিশে তুলির ঘুম ভেঙে যায়। হালকা শীত পড়েছে। তুলি গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে বেড়িয়ে পড়ে। বাড়ির পাশে একটা নদী আছে। যাকে সবাই ইচ্ছে নদী বলে। তুলি নদীর পারে যায় হাঁটতে হাঁটতে। নিস্তব্ধ পরিবেশ। দুইএকটা পাখির কিচিরমিচির ডাক শোনা যাচ্ছে। তুলির খুব ভালো লাগছে।
নদীতে পা ভিজিয়ে দুই হাত মেলে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। পরিবেশটা উপভোগ করছে।
কতোখন তুলি ওভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো জানা নেই
“ওই
তুলি চোখ খুলে পেছনে তাকিয়ে দেখে সায়ান। তুলি আবার চোখ বন্ধ করে। সায়ান এসে তুলির সামনে দাঁড়ায়।
” এখানে কেনো?
“এটা আপনার নদী না। চাইলেও তাড়িয়ে দিতে পারবেন না
” তোমার পবলেম কি? ফেসবুকে কি পোষ্ট করছো?
তুলি একটা পাথরের ওপর বসে
“কোনো পোষ্ট করি নি তো
” মিথ্যা বলছো কেনো? আমি দেখেছি
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান। তুলি হালকা হাসে
“দেখছেন তো আবার জিজ্ঞেস করছেন কেনো?
” কেনো করেছো সেটা জানতে চাইছি
“লাগবে তাই
” চলো আমার সাথে
“যাবো না
” মতামত জানতে চায় নি
“জানি
“অসয্য লাগে তোমাকে আমার
” তাহলে কেনো এসেছেন?
“বলতে বাধ্য নই
” তা থাকবেন কেনো আমি তো আর জুঁই না।
“তুলি
” আমি ভেবে নিয়েছি আপনাকে মুক্তি দেবো
“আমার মুক্তি চায় না
” আমার চায়
“নতুন পাইছো। এখন তো মুক্তি চাইবাই
” রাইট
“আমি এটা হতে দেবো না। তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে
” যাবো না
সায়ান তুলিকে কোলে তুলে নেয়। গাড়িতে বসিয়ে দরজা লক করে দেয়। সায়ান ডাইভ করছে
“কেনো জোর করে নিয়ে যাচ্ছেন?
” কাজের বুয়া আসবে না কইদিন। সব কাজ তুমি করবা। কাজ করানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছি।
“আমি কাজ পারি না
” শোখাবো তোমারে
“ইডিয়েট
” আমার কাছ থেকে শিখছো
“হুরর।
“ছেলেটা কে বলো?
” বলবো না
“বলতে বলছি
” বফ?
সায়ান ঠাস করে গাড়ি ব্রেক করে
“মারবেন না কি?
” নাম আমার গাড়ি থেকে
“কিহহহ
” নামতে বলছি
তুলি সিটবেল খুলে সায়ানের কোলে গিয়ে বসে। কলার ধরে বলে
“তোর যখন যা করতে ইচ্ছে হইবো তুই তাই করবি। আমার ইচ্ছার কোনো দাম নাই তাই না। তুই তো আমারে ভালোবাসোস না তাহলে আমার বফ থাকলে তোর পবলেম কি?
” সরো
তুলি সায়ানের গলা জড়িয়ে বলে
“সরবো না কি করবি তুই।
তুলি সায়ানের ঠোঁটে চুমু খায়। তারপর সরে যায়।
” চলুন
সায়ান ডাইভ শুরু করে। তুলি বাড়ি আসতেই সবাই তুলিকে ঘিরে ধরে। ডলি দুরে দুরে থাকে।
“মনা আমি তোমার সাথে ঘুমবো
সায়ান পানি মুখে দিছিলো তুলির কথায় পানি পড়ে যায়।
” তুই মনার সাথে ঘুমালে আমারে গোলুমলু নাতনি এনে দিবি কেমনে?
“দত্তক এনে দিবো।
তুলি আর মনা জিসানের রুমে চলে যায়। জিসান তন্নির সাথে কথা বলছিলো। ওদের দেখে ফোন কেটে দেয়।
“তোরা এখানে এসময়ে
মনা জিসানের পা টিপে দেয় আর তুলি চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে
” আমার ওপর সালমান খান ভর করছে না কি এতো বালুপাসা
“ভাইয়া তোকে না দারুণ লাগছে এই হেয়ার স্টাইলে
” মনা তুই গাঁজা খাইছোস না কি?
“কেনো?
” আমি তো তিন মাস হলো চুলই কাটি না
“ওহহহ
” দোস্ত তুই খুব ভালো। নিরিহদের সাহায্য করোস (তুলি)
“আমি ভালো কিন্তু নিরীহদের সাহায্য করি না
” দোস্ত দুই হাজার টাকা দে
জিসান লাভ দিয়ে উঠে বসে
“এই জন্য এতো পাম
” প্লিজ ভাইয়া
“দে না দোস্ত
জিসান পড়েছে মহা মুশকিলে। কাল সায়ানের থেকে তিন হাজার টাকা নিয়েছে তন্নিকে কিছু গিফট দেবে বলে। এখন ওদের দিয়ে দিলে তন্নিকে কি দেবে
জিসান এসব ভাবছে সেই ফাঁকে ওরা টাকা চুরি করে ভো দৌড় দেয়।
” আমার টাকা পয়সা সব গেলো???
দরজার বাইরে গিয়ে বলে
“দেখি এবার গিভট কি করে দেস হিহিহি
চলবে
#শুধু তুই
#পর্বঃ২৭
#Tanisha Sultana (Writer)
সায়ান টিভি দেখছে আর নুডলস খাচ্ছে। তুলি ঠাস করে রুমে ঢুকে।সায়ানের দিকে এক পলক তাকিয়ে জামাকাপড় গোছাতে শুরু করে। সায়ান এসে তুলির হাত ধরে
“এগুলো গোছাচ্ছ কেনো?
তুলি টান দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেয়। আবার গোছাতে শুরু করে। সায়ান লাগেজটা টেনে নিয়ে যায়
” বলো
তুলি সায়ানের মাথায় বালিশ দিয়ে বাড়ি দিয়ে আবার লাগেজ নিয়ে আসে
“হয়ছে টা কি বলবা। সারাক্ষণ তো বকবক করতেই থাকো আজ কি হলো? ওহহহ বুঝছি দাঁতে পোকা হইছে
তুলি বালিশ ছুড়ে মারে। সায়ান কেচ ধরে
” ভালোই ক্রিকেট খেলতে পারবো মনে হয়।
তুলি এবার বসে পড়ে। সায়ান তুলির পাশে বসে
“সরি তুলি। আসলে তোমার পিক দেখলাম একটা ছেলের সাথে। মাথা গরম হয়ে গেছিলো।
সায়ান তুলিকে পিক গুলো দেখায়।
” এই পিক গুলো কে তুলছে? নিরব তো আমার সাথেই ছিলো তাহলে? অন্যকেউ পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ছে। কিন্তু কে? তার মতলব আমাকে আর সায়ানকে আলাদা করা। এটা করে তার কি লাভ
“এই তুলি
সায়ানের ডাকে তুলি ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে
” আপনি কে বলুন তো?
“স্মৃতি শক্তি হারায় গেলো না কি?
তুলি সায়ানের চুল টেনে দেয়
” মারো কেন?
“আপনি আমারে দু দু বার বাসা থেকে বের করে দিছেন। তার শোধ তো আমি তুলবোই।
” হুম তুইলো
“আপনার লাইফটা জিলিপীর মতো।এতো পেছিগুছি মানুষ আমি জীবনে দেখিনি
” হুমমম
তুলি সায়ানের কপার ধরে সায়ানকে কাছে এনে বলে
“মেয়েদের জীবন একটা বিয়েও একটা। আমার বিয়ে আপনার সাথে হয়ে গেছে সো
” সো
তুলি কলার ছেড়ে লাগেজ হাতে নেয়
“চলে যাচ্ছ
” আমি চলে গেলে তো আপনি বেঁচে যান তাই না
“তাই না
” আজ থেকে মনার রুমে থাকবো জিলিপির রুমে থাকবো না
“আর কতো নাম দিবা
” যত ইচ্ছা
তুলি চলে যায়। মনা ফোনটা কথা বলছিলো তুলিকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়
“তুমি এখানে
” আজ থেকে তোমার সাথে ঘুমবো
“কিন্তু কেনো?
” তোর ভাই আমারে মারছে। ওর সাথে থাকবো না
তুলি বিছানায় বসে পড়ে। মনাকেও বসায়
“তোমার বফ আছে?
” হুমমম
“নাম কি?
” নিরব। জানো অনেক সুন্দর দেখতে। হাসলে তো পুরোই কিউটের ডিব্বা লাগে
তুলি তো শক
“নিরব মনার সাথে প্রেম করে। ও মাই গড। এই ছেলে তো পাগল করে দেবে
” এই কি ভাবছো
তুলি জোরপূর্বক হেসে বলে
“কিছু না। তুমি থাকো আমি আসছি
তুলি রান্না ঘরে শাশুড়ীর কাছে যায়। শাশুড়ী তুলির হাতে এক বাটি পায়েস ধরিয়ে দেয়
” ধর সায়ানকে দিয়ে আয়
“আমি
” তো কে যা
তুলি পায়েস নিয়ে সায়ানের রুমে যায়। সায়ান নেই ওয়াশরুমে গেছে। তুলি পায়েস রেখে বসে পড়ে। সায়ান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে তুলিকে দেখে
“তুমি না আর এই রুমে আসবা না
” কখন বললাম
“তখন
” রুমটা কি আপনার একার না কি
“একারই তো
” আমারও সমান ভাগ আছে
“কইছে
” হুম কইছেই। এটা আমারও রুম। আপনার সব জিনিসেই আমার অধিকার আছে
“অধিকার দেখাচ্ছ
” হুম দেখাচ্ছি। আর আমি ভেবেনিয়েছি আপনার সাথে আর রাগ অভিমান কিছু করবো না
“কারণ
” অভিমান আমরা তার সাথেই করি যাকে আমরা ভালোবাসি। আর আপনাকে তো আমি ভালোই বাসি না
“তাহলে এতো অপমান সয্য করে পরে আছো কেনো?
” আপনার কি মনে হয় আমি আপনার জন্য এখানে আছি
“হুমমম
” একদম না। আমি তো
“তুমি তো
” আমি তো আমার
“???
” ফিউচার বেবিদের জন্য এখানে আছি
“ওহহহ আচ্ছা
” একটা কথা বলুন তো আমি এখন আপনার সামনে আছি তাই আপনি আমাকে বকেন ইডিয়েট স্টুপিট বলেন বাড়ি থেকে বের করে দেন। যখন আমি থাকবো না তখন কি করবেন? আমাকে তো মিছ করবেন তাই না
সায়ান থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি যখন থাকবো না কথাটা কানে বাজছে
“এই যে হেলো কোমায় চলে গেলেন না কি?
আচমকা সায়ান তুলিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তুলি তো অবাক
“আমি যখন থাকবো না এই কথাটা আর কখনো বলবা না
” সামথিং সামথিং
সায়ান তুলিকে ছেড়ে দেয়
“নাথিং
বলে চলে যায়। তুলি মুচকি হেসে চলে যায়
জিসান তুলি মনা আর জুজুর মধ্যে তুমুল ঝগড়া হচ্ছে। বিষয় ঘুরতে যাবে
” নিয়ে যাবি কি না বল (তুলি)
“তোরা আমার দুই হাজার টাকা চুরি করছোস তোদের নিমু না (জিসান)
” তোর কাছ থেকে বইলা নিছি টাকা। এটাকে চুরি বলে না (মনা)
“আমার বইটারে আমি গিফট দিতে পারি না (জিসান)
” ওলে আমার টুনুমুনু লে আসো আদর করে দেই (তুলি)
“তুই তোর নিরামিষরে আদর কর আমার আদর লাগবে না (জিসান)
” কেনো রে তন্নি বুঝি আদর করে দেয় (তুলি)
“হুম কাল কিছ করছে
” কিহহহহহহহহহহ?
জিসান তুলির মুখ চেপে ধরে। সায়ান দৌড়ে আসে
“কি হয়েছে? জিসান ছাড় ওকে
জিসান তুলির মুখ ছেড়ে দেয়
“আপনার ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু শেখেন
বিয়ের আগেই কিছ হয়ে গেছে বিয়ের পর যে কি হবে সেটাই ভাবছি
” সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না
“আমি ওর একমাএ ভাবি আমি না ভাবলে কে ভাববে
” বোইন তোর ভাবতে হবে না। তুই প্লিজ যা
তুলি মুখ ফুলিয়ে চলে যায়
রাতে তুলি একটা মুভি দেখছে আর ঝালমুড়ি খাচ্ছে। সায়ান এসে তুলির পাশে বসে। তুলি মুড়ি এগিয়ে দেয়
“নাহহ আমি খাবো না
” কেনো
“যদি ঝাল গালে
” আই লাভ ইউ মুভি দেখেন নাই
“দেখছি তো
” পায়েল কিছ করে দেবের ঝাল কমিয়ে দেয়। তো আমিও কমিয়ে দেবো
“তুমি কি নিজেকে পায়েল ভাবছো না কি
” কিছু টা
“কোথায় পায়েল কোথায় তুমি
” এক আকাশের নিচেই তো থাকি তাি না
“তা ঠিক
” খান
সায়ান একমুঠ খায়।
“কিহহ ঝাল লাগছে
” নাহহ
“গুড
আমি একটু বেরুচ্ছি
” কোথায় যাবেন?
“একটু কাজ আছে
” ওকে
সায়ান চলে যায়। তুলি মন দিয়ে মুভি দেখতে থাকে।
রাত দুইটার দিকে কলিং বেল বাজে। তুলি দরজা খুলে দেয়। সামনের মানুষকে দেখে তুলি চোখে পানি চলে আসে।
চলবে
#শুধু তুই
#পর্বঃ২৮
#Tanisha Sultana (Writer)
সায়ানের হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ। তুলি সায়ানকে ধরে বলে
“আপনার এই অবস্থা কি করে হলো?
কথা বলার শক্তি সায়নের নেই। সায়ান তুলির কাঁধে মাথা রাখে।
” জিসান জিসান
জিসান চিৎকার করে জিসানকে ডাকে। জিসান ছুটে এসে দেখে এই অবস্থা।
“কি করে হলো তুলি
” আমি কিছু জানি না। আমাকে হেল্প কর
জিসান আর তুলি সায়ানকে ধরে রুমে নিয়ে আসে।
“আমি ডাক্তারকে কল করছি
জিসান ডাক্তারকে কল করে। বাড়ির সবাই চলে আসে। সায়ানের মা তো কান্না কাটি শুরু করে দিছে। একটু পরে ডাক্তার আসে। কিছু ঔষুধ লিখে দিয়ে চলে যায়।
তুলি সায়ানের মাথার কাছে বসে আছে। একে একে সবাই চলে যায়। তুলির ফোনে ফোন আসে। তুলি চোখের পানি মুছে ফোনটা রিসিভ করে
” হেলো। কে বলছেন?
“জুঁই
” তুমি
“অনেক ভেবে দেখলাম এভাবে লাইফ কাটানো যায় না তাই ভাবছি সায়ানের লাইফে ব্যাক করবো
” মানে
“মানে কাল থেকে সায়ানের বাড়িতে থাকতে যাবো। আজ একটা পরিহ্মা নিলাম সায়ানের। দেখলাম বেচারা এখনো আমাকে ভালোবাসে
” তুমি এটা করো না আপু
“আমি এটাই করবো। না হলে কি করবো আমি? নিরব তো চলে গেছে। আমি একা একা থাকবো না কি?
” নিরব বেঁচে আছে।
“আমিও জানি
” তাহলে
“নিরব একটা সাইকো আর সায়ানের জন্যই নিরবের এই অবস্থা।
” আপু শুনো আমার কথা
“তুলি তুমি অনেক ভালো ছেলে পাবে। সায়ানকে ছেড়ে দাও
” সায়ান আমার স্বামী। মরে যাবো কিন্তু সায়ানকে ছাড়বো না।
তুলি ফোন কেটে দেয়।
“ছোট বেলায় ভাবতাম ইস যদি আমার জামাই নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে হইতো। এখন তাই হলো। করবো কি আমি? ওই ডাইনিরে তো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করবো। আসুক না। আমিও দেখি কি করে আমার জামাইরে কাইরা নেই
তুলি আবার সায়ানের পাশে এসে বসে।
” কি কপাল আমার বিয়ের পর থেকে কন্টিনিউ জামাই নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছি। নেহাত ভালোবেসে ফেলেছি নাহলে থাপড়াইয়া দাঁত ফেলাই দিতাম
তুলি সায়ানের পাশে বসে বকবক করে যাচ্ছে। সায়ানকে ডাক্তার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছে তাই ঘুমচ্ছে।
সকালে তুলি ফ্রেশ হয়ে সায়ানের জন্য খাবার নিয়ে রুমে এসে দেখে সায়ান মাথা ধরে বসে আছে।
“গুড মর্নিং জান
সায়ান তুলির দিকে তাকায়
” জান?
তুলি সায়ানের পাশে বসে গাল টেনে বলে
“হ তুমি আমার জান। এবার যান তো ফ্রেশ হয়ে আসুন
সায়ান উঠতে নেয় তুলি হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয়
” কি হলো
“আপনার এই অবস্থা কি করে হলো
” জুঁইকে দেখলাম একটা গাড়ি করে চলে যাচ্ছে আমি গাড়ির পেছনে দৌড় দিছিলাম। এক্সিডেন্ট করছি
“ভেরি গুড। ভালোবাসা উতলিয়ে পড়ে তাই না
” তুমি কখনো কাউকে ভালোবেসেছো
“হুম আপনাকে
” তুমি আমাকে ছাড়তে পারবে
“নাহহ
” তুমি জাস্ট কয়েক দিন আমাকে ভালোবাসো তাতেই আমাকে ছাড়তে পারবে না তাহলে আমার ভালোবাসা দশ বছরের তাহলে তুমি বলো আমি কি করে ভুলবো
তুলি মন খারাপ করে উঠে যেতে নেয় সায়ান হাত ধরে
“আমাকে একটু সময় দাও তুলি। সব ঠিক হবে
তুলি সায়ানকে জড়িয়ে ধরে
” তুই আমার শুধু আমার। ওই জুঁই ফুলকে আমি তেল বানিয়ে শাশুড়ীর পায়ে মালিশ করাবো
সায়ানকে ছেড়ে দিয়ে
“বিয়ের পর থেকে আপনাকে নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছি। জিলিপির পেছে আটকে যাচ্ছি। ভালোবাসার জন্য পিছু পিছু ঘুরছি। নেহাৎ আপনি সময় চেয়েছেন নাহলে
” নাহলে
“আপনারে রেপ করতাম
????
এই মাইয়া কয় কি?
” ঠিকি কইছি
যান খাবো
সায়ান ফ্রেশ হয়ে আসে। সায়ান খাচ্ছে তুলি তাকিয়ে আছে
“তাকিয়ে আছেন কেন?
” খাওয়াই দেন
“অসুস্থ আমি খাওয়াই দিবো তোমারে
” হুমমম
“হা করো
তুলি হা করে সায়ান খাওয়াই দেয়। খাওয়া শেষে তুলি সাজুগুজু করতে বসে
” কোথাও যাইবা
“না তো
” তাহলে সাজছো কেনো?
“অনেক দিন ফেসবুকের প্রোফাইল কভার পিক চেঞ্জ করা হয় না। তাই সাজুগুজু করে পিক তুলে আপলোড দিবো
” দুইদিন আগেও না চেঞ্জ করছো
“আমার তো ঘন্টায় ঘন্টায় চেঞ্জ করতে মন চায়।
” পাগল যে তুমি
“আপনিও তো পাগলের জামাই
” কপাল
“লাকী আপনি আমার মতো একটা কিউট টুনুমুনু বউ পাইছেন
” সাথে গোলুমলুও
“আপনিও
” আমি যথেষ্ট ফিট
“মি টু
” তোমার সাথে তর্কে পারা যাবে না
“আসেন কেন
” সেটাই
“ভালো একটা শার্ট পরেন দেখি
” কেনো
“কভারে কপাল পিক দিমু
” না
“তুই পরবি না তোর ঘাড় পড়বো
তুলি জোর করে সায়ানকে নীল একটা শার্ট পড়ায়। তারপর জিসানরে ডেকে আনে পিক তোলার জন্য। কয়েকটা স্টাইলে পিক তোলার পরে তুলি বলে
” আপনি আমার কপালে চুমু দিবেন জিসান পিক তুলবো
“পারবো না
” তাহলে আমি এখন জিসানের সামনে আপনার
“করছি
” গুড জামাই
পিক তোলার পরে জিসান সুয়ে পড়ে। সায়ান আট তুলিও বসে পড়ে
“পিক তুলতে তুলতে জীবন শেষ (জিসান)
” সেম (সায়ান)
“আমার তো আরও পিক তুলতে মন চাইতেছে (তুলি)
” বোইন প্লিজ মাপ কর
সায়ানের ফোনে ফোন আসে। সায়ান বেরিয়ে যেতে যেতে বলে
“আমি একটু পরেই আসছি। জরুরি কাজ আছে
” আরে শুনুন। যাহ চলে গেলো। নিশ্চয় ডাইনিটাকে আনতে গেছে। আসো তুমি। এবার তুলির আদর দেখবা জুঁই বেবি। জন্মের মতো সায়ানের নাম ভুলিয়ে দেবো। আর তোমাকে ব্যবহার করে নিরবকে জাত করবো। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি
চলবে