#শুধু তুই
#পর্বঃ৮,৯
#Tanisha Sultana (Writer)
পর্বঃ৮
“আমি আর লুঙ্গি ডান্স
তুলি অবাক হয়ে বলে৷ জিসান কোনোরকম হাসি থামিয়ে বলে
” শুধু কি লুঙ্গি না আরও কতো কি
তুলি জিসানের পাশে বসে বলে
“আর কি
” মদ খেয়ে সত্যি কথা বলছোস তুই
তুলি এবার ভয় পেয়ে যায়।
“আমি কি ওনাকে বলে দিয়েছি যে ওনার মুখ থেকে কথা বের করানোর জন্য আমি মদ এনেছিলাম
” নাহহ
তুলি এবার হাঁপ ছাড়ে
“তবে
” ও বর তোর গাল ভর্তি দাঁড়ি আমি কিছ করবো কোথায়?
জিসান আবার হাসতে শুরু করে। তুলিও ফিক করে হেসে ওঠে
“সত্যি ওনার গালে যে পরিমাণ দাঁড়ি
জিসান তুলির দিকে তাকায় আর তুলি থেমে যায়
” পুরো কথাটা শেষ করুন
সায়ানের কথায় তুলি চমকে ওঠে। পেছনে তাকিয়ে হাত পা কাঁপা শুরু করে তুলির
“বলুন
চোখ মুখ শক্ত করে বলে সায়ান
” ননননা মমমমমাননননে
“তোতলা আপনি
” না তো
“এই তো কথা ঠিক হয়ে গেছে এবার বলুন
” আমি যাচ্ছি
জিসান চলে যেতে নেয় তুলি জিসানের হাত ধরে
“বাঘের মুখে আমাকে একা ফেলে চলে যাচ্ছিস
জিসানের কানে ফিসফিস করে বলে
” আমি বাঘ
রেগে বলে সায়ান
“না তুলি তুই একদম ভয় পাবি না
মনে মনে নিজেই নিজেকে সাহস দিচ্ছে তুলি।
” নাহহ আপনি বাঘ না আপনি করলার জুস। চেহারা তো মাশাল্লাহ পাগল হওয়ার মতো। তা বলি মুখ এতো তেতো কেনো? একটু কি মিষ্টি করে কথা বলতে পারেন না
“জাস্ট সাট
সায়ানকে থামিয়ে তুলি বলে
” জানি জানি জাস্ট সাট আপ। তাইতো
“জিসান এই ইডিয়েট টা কে আমার চোখের সামনে থেকে সরা
হুম যাচ্ছি যাচ্ছি। তবে আপনাকে একটা কথা বলি আরো ইংরেজি শিখবেন এই একটা শব্দ শুনতে শুনতে কান পঁচে গেলো
” ইউ
তুলিকে আর পায় কে এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়। জিসানও তুলির পেছনে যায়। দৌড়াতে দৌড়াতে তুলি শাশুড়ীর সামনে পরে
“এই মরেছি এবার আমার করলার জুস খেতেই হবে। আল্লাহ বাঁচাও
তুলি বিরবির করে বলে। সায়ানের মা তো রাগে কটমট করছে
” এটা কি তুমি ফুটবল খেলার মাঠ পেয়েছো না কি? ভদ্র বাড়ির বউরা কখনো এভাবে দৌড়ায় না
“আর হবে না
তুলি মাথা নিচু করে বলে
” স্বামী খেলো কি না শাশুড়ী খেলো কিনা কোনো দিকেই তো তোমার খেয়াল নেই। শুধু ধেই ধেই করে ঘুরে বেড়াও
“এক মিনিট আন্টি আমি জেনে আসছি
তুলি আবার দৌড়ে চলে যায়।
” কোথায় গেলো এই মেয়ে আর কি জেনে আসবে?
তুলি দৌড়ে রুমে চলে যায়। সায়ান শার্ট পরছিলো। তুলি গিয়ে সায়ানের শার্টের বোতাম লাগাতে থাকে
“আরে আরে কি করছেন আপনি?
” করলার জুস বলেছে স্বামীর খেয়াল রাখতে তাই রাখছি
“মানে
” আপনি খেয়েছেন
“নাহহ। কেনো বলুন তো
তুলি সায়ানের বোতাম লাগিয়ে ট্রাই বেধে দেয়। সায়ান বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তুলি শাশুড়ীর কাছে চলে যায়। শাশুড়ী আর কাকিমা খাবার সাজাচ্ছিলো। বাবা মনা ডলি ওরা বসে ছিলো।
“শাশুড়ী আপনি খেয়েছেন?
জিসান সিড়ি দিয়ে নামছিলো। তুলির কথায় বেষম খায়।
” দেখতে পাচ্ছো না মাএ খাবার বারছি
“ওহহহ স্বামীও খায় নাই। খেয়াল রাখা হয়ে গেছে।
জিসান আর বাবা এবার হেসে ফেলে। শাশুড়ীও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
“খেয়াল রাখা হয়ে গেছে মানে কি?
রেগে বলে শাশুড়ী
” খেয়েছেন না কি জানালাম তো আর আপনাকে বললাম
“মা থামো তো খেতে দাও
সবাই খাচ্ছে তুলি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। কেউ তুলিকে খেতে বলছে না
” ধুর ছাতার মাথা কেউ তো খেতে বলছে না। এদিকে আমার তো খুব খিদে পেয়েছে।
বিরবির করে বলছে তুলি। সায়ান খাওয়া শেষ করে উঠে যেতে যেতে বলে
“মা আমি জুজুদের বাড়িতে যাচ্ছি তোমরা চলে এসো।
তুলি সায়ানের সামনে দাঁড়ায়।
” হোয়াট
“না মানে জুজু তো আমাকেও যেতে বলেছে
” তো
“আমি তো বাড়িটা চিনি না। যদি এড্রেসটা দিতেন
” পাঁচ মিনিট দিলাম রেডি হয়ে নিচে আসেন
“আমার টুনুমুনু
তুলি সায়ানের গাল টেনে দৌড়ে রুমে চলে যায়।
” ইডিয়েট
সায়ান বিরক্তি নিয়ে বলে।
তুলি গোলাপি রঙের লেহেঙ্গার পড়ে। সাথে মেচিং জুয়েলারি। আর ভারি মেকাপ। আয়নায় একবার দেইখা তুলি চলে যায়।
সায়ান আর জিসান দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো তখন তুলির দিকে নজর পরে ওদের। তুলি ওদের দিকে আসছে
“চলুন
তুলি সায়ানরে বলে সায়ান তো তাকিয়েই আছে। জিসান মাথা ঘুরে পরে যেতে নেয় তুলি ধরে
” কি হয়েছে তোর?
“তুই এতো কিউট কেন? আমি তো পুরাই ফিদা
” আমারে সুন্দর লাগতেছে
“হুম মারাক্তক
তুলি ফোন বের করে ফোনের স্কিনে খালি নিজেকে দেখছে।
” চলুন
“দাঁড়ান আগে আমি নিজেকে ভালো করে দেখে নি
চলবে
#শুধু তুই
#পর্বঃ৯
#Tanisha Sultana (Writer)
“আপনি কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। কোথায় কি ড্রেস পরে যেতে হয় সেটাও জানেন না স্টুপিট
সায়ান অন্য দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বলে
” অনুষ্ঠান তো অনুষ্ঠান ই। সেটা বার্থডে হোক না বিয়ে। আর কোথাও লিখা নেই কোন অনুষ্ঠানে কি ড্রেস পরতে হবে না
“এটা কমন সেন্স
” আপনার কমন সেন্স আপনার পকেটে রাখুন আসছে ড্রেস চেনাতে
“আরে তোরা ঝগড়া না করে রওনা হ
জিসান বলে
” ওনার মতো করলার বংশধরের সাথে ঝগড়া করতে আমার বয়েই গেছে
“কি বললেন আপনি?
” কালা না কি শুনতে পান নি
“সাট আপ থাম তোরা। তুলি ঝগড়া করলে সাজ নষ্ট হয়ে যায়
” কি বলছিস তুই
“হ্যাঁ আর কিন্তু ঝগড়া করিস না
” ঠিক আছে
তুলি গাড়িতে বসে পড়ে। সায়ান ড্রাইভ করছে। তুলির পেটের মধ্যে কথা ঘুমপাক খাচ্ছে
“এই যে শুনছেন
সায়ান কিছু বলে না
” আল্লাহ শেষ মেষ একটা কালা আমার বর হলো
“কি বললেন আপনি
” শুনতে পেয়েছেন তাহলে। যাক বাবা আপনি কানে শুনতে পান
“মানুষ হইলেন না
” বাবা বলে মানুষ হইলি না। স্যাররা বলে মানুষ হইলি না জিসান + বাকি ফ্রেন্ডরাও তাই বলে। আমিও তাই। এখন আমার কোশ্চেন টা হলো আমি আসলে কি?
“ইডিয়েট আপনি বুঝছেন
” আমি ইডিয়েট হলে আপনি করলা
তুলির সাথে অহেতুক কথা বলে মাথা নষ্ট করার ইচ্ছে সায়ানের নেই তাই কানে হেডফোন দেয়।
“কথা বলবে না আমার সাথে ঠিক আছে আমিও বলবো না
তুলি ব্যাগ থেকে মেকআপ বের করে সাজতে থাকে।
ছোটমট একটা বাড়ির সামনে সায়ান গাড়ি থামায়। বাড়িটার পাশেই একটা ফুসকার দোকান। তুলিকে আর পায় কে গাড়ি থেকে নেমে ফুসকার দোকানে চলে যায়। সায়ান পেছন থেকে ডাকে কিন্তু তুলি তা কানেই নেয় না।
” মামা প্রচুর ঝাল দিয়ে দুই প্লেট ফুসকা দেন তো
ফুসকাওয়ালা তুলির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে
“আমি জানি আমাকে খুব সুন্দর লাগছে তাই বলে তাকিয়ে থাকার কিছু নেই?
” না মানে আপনার কাছে তো ব্যাগ টেগ নাই তো টাকা দেবেন কোথা থেকে
তুলি রাগী দৃষ্টিতে তাকায়
“আমি কে??
কোমরে হাত দিয়ে বলে
” ও মা আপনি জানেন না
“সাট আপ। আমি মিস্টার সাট আপ থুক্কু করলা না মানে থুক্কু সায়ানের বউ। চিনলেন আমাকে?
” সায়ান আবার কে?
“আমি তো ভেবেছিলাম উনাকে সবাই চেনে এখন তো নিজের পরিচয় দিয়ে বলদ সাজলাম
তুলি বিরবির করে বলে
” ও মেডাম
“আমি টাকা নিয়ে আসছি
” খেয়ে যান টাকা পরে দিয়েন
তুলি খুশি হয়ে যায়। ফুসকাওয়ালা ফুসকা দেয় তুলি হাপুসহুপুস করে খেতে থাকে।
“বলছি সায়ান ভাই আপনার স্বামী
” নাহহ আমার শশুরের কাকাতো ভাইয়ের ফুপাতো বোনের চাচতো মেয়ের কাকাতো ভাইয়ের ছেলের ভাইয়ের বন্ধুর বোনের বন্ধু
ফুচকাওয়ালার মাথা ঘুরছে তুলি কথা শুনে।
“কি পাগলের পাল্লায় পরলাম রে বাবা
ফুসকা মামা বিরবির করে বলে
” আরও দেন
“আরও
ফুসকা মামা হতাশার কন্ঠে বলে
” হুম দেন
তুলি পুরো তিন প্লেট ফুসকা শেষ করে। এবার তুলির হাঁটতেও পারছে না।
“টাকা টা
তুলি ফুসকা মামার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলায়
” আমার কাছে যে টাকা নেই সেটা আপনি আগে জানতেন
“হুম জানতাম
” তাহলে ফুসকা কেনো দিলেন
“আপনি বললেন তাই
” এখন আমি বলছি টাকার কথা আল্লাহর নাম নিয়ে ভুল যান
“কিহহহহহ
তুলি দৌড়ে চলে যায়। জুজুদের বাড়িতে ঢুকে বসার রুমে সোফায় শুয়ে পরে। বাড়ি ভর্তি মেহমান। সবাই তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ান জুজুকে কোলে নিয়ে গল্প করছিলো তুলিকে দেখে তুলির কাছে আসে
” কি হচ্ছে?
সায়ান রাগী সুরে বলে। তুলি আশেপাশে তাকিয়ে বলে
“সব তো ঠিকি আছে
” নতুন মা তুমি এখানে শুয়ে আছো কেনো?
তুলি উঠে বসার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না
“ফ্রিতে অতিরিক্ত খেয়েছি
তুলির কথায় সায়ান ভ্রু কুচকে তাকায় তুলির দিকে
” কে আপনাকে ফ্রীতে খাইয়েছে
“কেউ না কায়দা করে খেয়েছি
” আপনি এখান থেকে উঠুন
“ট্রাই তো করছি কিন্তু পারছি না
” আরো খান ফ্রী তে
“কে খাওয়াবে
সায়ান বিরক্ত হয়ে জুজুকে কোল থেকে নামায়। আর তুলিকে কোলে তুলে নেয়।
” ও মা আপনি আবার কোলেও নিতে পারেন
“সাট আপ
সায়ান তুলিকে একটা রুমে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়।
” এখন এখানে পরে থাকেন
সায়ান চলে যায়। তুলি আস্তে আস্তে উঠে বসে পুরো রুমে চোখ বুলায়। দেয়াল জুড়ে শুধু জুজু জুজুর মামনি আর একটা লোকের ছবি। সব গুলো জুজুর ছোট বেলার ছবি
“ছবি দেখে তো মনে হচ্ছে হ্যাপি ফেমিলি তাহলে ওই লোকটা এখন কোথায়? কেনো থাকে না জুজুর সাথে? এর জুজুর মা কেনো সায়ানের পেছনে পরে আছে? আর সায়ানই বা কেনো ওদের এতো ভালোবাসে কেচ টা কি?
হাজার টা চিন্তা তুলির মাথায় ঘুটপাক খাচ্ছে। যার একটার উওর ও তুলি কাছে নেই। কি করে সমস্যা সমাধান করবে তুলি?
আর ভাবতে পারছে না তুলি
” ধুর আর ভাববো না যা হবার হবে। আমি বরং চারপাশটা ভালো করে দেখি
তুলি চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছে। হঠ্যাৎ তুলির চোখ আটকে যায় সামনে থাকা মানুষদের দিকে। তুলির বুকের বা পাশে চিন চিন ব্যাথা করছে।
“আমি কেনো এটা মানতে পারছি না? কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে আমার? এটা তো আমার প্রাপ্য তাহলে?
তুলির চোখ দিয়ে দুঠোটা পানি পরে
চলবে