শুধু তুমি 💞 পর্বঃ- ১১ Samira Afrin Samia #নিপা

0
291

শুধু তুমি 💞
পর্বঃ- ১১
Samira Afrin Samia
#নিপা

কয়েক দিন পর

লিনা আজ স্কুলে যায় নি একটু অসুস্থ। নীল প্রতি দিনের মত আজও অফিসে। তনা আর লিনা বাসায়। তনা লিনাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু লিনা ডক্টররে কাছে যেতে চাইছে না।
— লিনা কি হচ্ছে এটা? আমি তোকে ডক্টরের কাছে যেতে বলছি। অন্য কোথাও তো যেতে বলিনি।
— না আপু আমি ডক্টরের কাছে যাবো না।
— প্রব্লেম কি তোর? ডক্টরের কাছে যেতে অসুবিধা কোথাও এটাই তো বুঝতে পারছি না।
— আপু ডক্টরের কাছে গেলে। ডক্টর আমাকে এতো বড় একটা ইনজেকশন দিবে। আমার ইনজেকশন নিতে অনেক ভয় লাগে। আমি পারবো না আপু।
লিনার কথা শুনে তনা হাসতে লাগলো। তনা হাসতে হাসতে পেটে ধরে সোফায় বসে গেল।লিনা মুখ মুচড় দিয়ে
— এভাবে পাগলীর মতো হাসছো কেন? আমি হাসার মতো কি এমন বললাম।
তনা হাসতে হাসতে
— এতো বড় মেয়ে। এবার এসএসসি দিবে সে কি না ইনজেকশন নিতে ভয় পায়। ইনজেকশন এর ভয়ে ডক্টরের কাছেই যেতে চাইছে না। তোর এসব কান্ড দেখে হাসবো না তো কি করবো।
— আপু একদম এভাবে হাসবা না। ভয় লাগলে আমি কি করবো। তোমার বুঝি ইনজেকশন নিতে ভয় লাগে না।
— না হেসে পারছি না তো। তুই এতটা ভীতু তা আমার জানা ছিল না। আমি আগে ইনজেকশন নিতে ভয় পেতাম। কিন্তু এখন আর পাই না।
— আপু তুমি এভাবে হাসলে আমি কিন্তু তোমার সাথে কথা বলবো না। অনেক রাগ করবো তোমার সাথে।
তনা হাসি থামানো অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।
— আচ্ছা আর হাসবো না। কিন্তু তোর তো ডক্টর দেখাতে হবে। ডক্টর না দেখালে তো জ্বর সাড়বে না।
— আপু তুমি না আমার ভালো আপু। তুমি আমার সাথে এমন টা করো না। আমি এমনি ভালো হয়ে যাবো। গ্রামে থাকতে আগে এমন অনেক বার জ্বর আসছে। তখন তো ডক্টর দেখাই নি এমনি ভালো হয়ে গেছি।
— ধুর পাগলী মেয়ে। ডক্টর তোকে ইনজেকশন দিবে না। আমি না করবো ডক্টর কে।
— আপু,,,!
— আর কোন কথা না। দিন দিন অনেক পাকা হয়ে যাচ্ছিস তুই। আমার কোন কথা শুনতে চাস না।
আচ্ছা চল আজ তোকে মেঘার সাথে দেখা করাবো।
— সত্যি আপু?
— হুম। আর তোকে ডক্টর দেখিয়ে। আমরা তিন জন ঘুরতে যাবো। রেস্টুরেন্টে খেতে ও যাবো। এবার যাবি তো।
— হুম আপু।
— তাহলে তুই গিয়ে রেডি হ। আমি মেঘা কে ফোন করে আসতে বলি।
— হুম।

বিকেলে তনা মেঘা আর লিনা এক সাথে ডক্টর দেখিয়ে শপিং করতে গেল।
— তনা তুই কতটা পাল্টে গেছিস দোস্ত। (মেঘা)
— তুই একদম ই পাল্টাস নি। ঠিক আগের মতই আছিস। বলতে গেলে আগে থেকে আর একটু বেশি বাদর হয়ে গেছিস।(তনা)
অনেক দিন পর দুজন এক সাথে হয়েছে। পৃথিবীর সমস্ত আলাপ শুরু করে দিছে দু’জনে।
— আমি যে অসুস্থ তা কি খেয়াল আছে তোমাদের? সেই কখন থেকে আমাকে নিয়ে এখানে সেখানে ঘুরছো। আমি আর এক পা ও হাঁটতে পারবো না।
— তনা ডক্টর কে বলা দরকার ছিল লিনা কে দুইটা ইনজেকশন বেশি দিয়ে দিতে। মেয়েটা অনেক অলস। (মেঘা)
— মেঘা আপু! তুমি ও তনা আপুর মত শুরু করছো।আমি কিন্তু এখন কান্না শুরু করে দিব।(লিনা)
— ওকে ওকে কান্না করিস না। এই মেঘা অনেক শপিং হয়েছে। এবার চল কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি।
— রেস্টুরেন্টে গিয়ে কি শুধু বসে থাকবো?
দোস্ত অনেক দিন হলো তুই কিছু খাওয়াস না। আজ কিন্তু তুই খাওয়াবি।(মেঘা)
— ওরে ফইন্নি তুই এখনও সেই আগের মত ফইন্নি ই থেকে গেলি।এখন তো তুই জব করিস পরেও।
— আরে তুই ওসব বুঝবি না। অন্যের টাকায় কিছু খাওয়ার মজাই আলাদা। বিশেষ করে তোর থেকে খেতে তো সেই মজা লাগে।
— আচ্ছা যা ফইন্নি। প্রতি বারের মত আজও আমি ই খাওয়াবো।তুই তো কোন দিন নিজের এক পয়সা ও খরচ করবি না।
–😁😁😁

তনা, লিনা,মেঘা রেস্টুরেন্টের একপাশের একটা টেবিলে বসেছে। রেস্টুরেন্টে এতো ভিড় নেই। কয়েকটা টেবিলে শুধু কয়েক জন বসে আছে।
— এই রোগী কি খাবা বলো?(মেঘা)
— আপু!!!!! (লিনা)
— ওকে যাও। তোমাকে আর রোগী বলবো না। কিন্তু কি খাবে তা বলো।মনে রেখো আজ কিন্তু তনা খাওয়াচ্ছে। সো কোন ছাড় দিবা না।(মেঘা)
— লিনা তোর মতো রাহ্মস না বুঝলি। লিনা তোর যা খেতে ভালো লাগে। তা ই অর্ডার দে। (তনা)
— হুম। আপু আমি শুধু একটা আইসক্রিম খাবো।
— এই মেয়ে তুই পাগল নাকি?
এতো জ্বর। ডক্টর দেখাতে আসছিল না। এখন সে আইসক্রিম খাবে। এবার তো ডক্টর ইনজেকশন দেয়নি। কিন্ত নেক্সট টাইম গেলে। ঠিক ই এই বড় ইনজেকশন দিবে। (তনা)
— আচ্ছা তাহলে আমি চকলেট খাবো।
— শুধু চকলেট? (মেঘা)
— হুম।
— তনা তুই বেঁচে গেলি।😂 আচ্ছা বোন তুই চকলেট ই খা।

লিনা বসে চকলেট খাচ্ছে আর পুরো রেস্টুরেন্টে চোখ বুলিয়ে দেখে নিচ্ছে। লিনা তো আগে কোন দিন রেস্টুরেন্ট আসেনি। তাই ওর কাছে সব নতুন নতুন লাগছে। তনা আর মেঘা তো কথা বলেই যাচ্ছে। লিনার তনা আর মেঘার কথায় মন নেই। ও তো সব কিছু দেখতে ব্যস্ত।
— তনা নীল কেমন আছে রে?কতদিন ধরে দেখি না নীল কে।(মেঘা)
— নীল তো ভালোই আছে। তুই নীলকে দেখবি কি করে। কত ব্যস্ত তুই। জব করিস। সংসার সামলাস। আমাদের বাসায় আসার সময় ই পাস না।
— আরে ধুর এভাবে বলিস না তো।তুই তো জানিস ই বাবু টা কত ছোট। ওকে রেখে জব করাটা কঠিন হয়ে পড়ে।
— ওহ মনেই ছিল না। এই তোর বেবী কতটুকু বড় হয়েছে?
— এইতো এক পা দু’পা হাটতে শিখছে। অনেক দুষ্টু। খুব জ্বালায় আমাকে।
— তুই অফিসে গেলে কার সাথে থাকে ও?
— ওর দাদুর সাথে।দাদু তো ওর পৃথিবী। দাদুকে পেলে আমার কথা ও ভুলে যায়।
— সেই কবে দেখছিলাম। তার পর তো বেবী টা কে আর দেখাই হয়নি।
— ওর পিক আছে তো। দেখবি?
— হুম দেখা তো দেখি তোর ছোট দুষ্টু টা কতটুকু বড় হয়েছে।
— দাড়া।
এতক্ষণে লিনার চকলেট খাওয়া শেষ। চকলেট খাওয়া শেষ করে লিনা তনাকে বললো।
— আপু চলো এবার বাসায় যাই।
— আরে দাড়া।মেঘার বাবু কে দেখে নেই।
— মেঘা আপু তোমার বাবু ও আছে?
— হুম।
— আমাকে ও একটু দেখাও না। ওকে নিয়ে আসছো।কোথায় ও?
— আরে আমার সাথে আসেনি। ও বাসায় ওর দাদুর কাছে।
— তাহলে?
— ওর ছবি আছে তো। আজ ওকে ছবিতেই দেখো।পরে কোন দিন সময় হলে আমার বাসায় গিয়ে সরাসরি ওকে দেখে আসবে।
— এতো কথা না বলে তারাতারি দেখা তো। (তনা)
— দেখাচ্ছি তো দাড়া না একটু। (মেঘা)
মেঘা ওর ফোন বের করে। বাবু ছবি বের করে তনার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে
— এই দেখ।
তনা মেঘার হাত থেকে ফোন নিয়ে। বাবুর পিক দেখতে লাগলো
— ওয়াও তোর বাবু টা তো অনেক সুন্দর। একদম তোর মত দেখতে। কত বড় হয়ে গেছে। (তনা)
লিনা তনার কাছ থেকে ফোন নিয়ে
— কই আমাকে ও একটু দেখতে দিবা নাকি? আমি তো পিচ্চি কে আগে কখনও দেখিনি। আমাকে আগে দেখতে দিবা তা না।
— নে রোগী ভালো করে দেখ।(তনা)
— আপু আবার রোগী বলতেছ?

সবাই বাবুর পিক দেখছে। এটা সেটা বলে হাসাহাসি করছে। এমন সময় হঠাৎ করে রেস্টুরেন্টের ওই কনারের টেবিল টায় তনার চোখ আটকে গেল। তনা কি ওখানে নীলকে দেখতে পেল। কিন্তু নীল এখন অফিস রেখে এখানে আসবে কেন। তনা ভাবছে এটা হয়ত নীল না। এমন সময় মেঘা তনাকে বলে উঠলো।
— কিরে এরকম ভুত দেখার মতো চমকে গেলি কেন? কাকে দেখলি ওখানে? কোন কিউট ছেলে কে দেখলি নাকি? দাড়া তো আমি একটু দেখি তুই কি দেখে এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস।
মেঘা তনাকে কথা গুলো বলে ওদিকের টেবিলের দিকে তাকিয়ে নীল কে দেখতে পেল।
— তনা হারামি। নীল ও এখানে আছে আর তুই আমার সাথে নীলের দেখা করালি না। হারামি মাইয়া। আমি কি তোর হাজবেন্ড কে নিয়ে যাবো নাকি খেয়ে ফেলবো। (মেঘা)
— আপু সত্যি ই তো ওটা ভাইয়া। কিন্তু ভাইয়া এখানে কি করছে? ভাইয়া তো অফিসে থাকে এসময় তাই না? (লিনা)
তনা এখন ও চুপ করে আছে। কোন কথাই বলছে না। কারো কথার কোন উত্তর দিচ্ছে না।
— কি হলো কথা বলছিস না কেন? হা করে নিজের হাজবেন্ড কে এভাবে দেখার মানে কি?
আর তোর নীলের সাথে ওই মেয়েটা কে রে?(মেঘা)
— কোন মেয়ে আপু?(লিনা)
— আরে দেখো না নীলের সাথেই বসে আছে। ওই যে।
— হুম আপু ভাইয়ার সাথে ওই মেয়েটা কে?(লিনা)
তনা কিছু বলতে পারছে না। নীল কে এখানে দেখে তনা যতটা অবাক হয়েছিল। তার থেকে হাজার গুণ বেশি অবাক হয়েছে নীলের সাথে ওই মেয়েটা কে দেখে। কারণ ওই মেয়েটা আর কেউ না। ও হলো আনিকা। মেঘা, লিনা কেউ ই আনিকা কে আগে দেখে নি। তাই কেউ চিনতে পারলো না। নীল কিছু দিন আগেও বলেছে আনিকার সাথে ওর দেখা হয়না। কিন্তু আজ আনিকার সাথে এক সাথে রেস্টুরেন্টে বসে আছে।এটা দেখে তনার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। তনা নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিল না। নীল তনার সাথে মিথ্যে বলেছে। এটা মেনে নিতে তনার কষ্ট হচ্ছে।
মেঘার কথায় তনার ঘোর কাটলো।
— আরে এই তনা। কিছু তো বল।আজিব তো এভাবে কি দেখছিস।তুই কি চিনিস ওই মেয়েটা কে?(মেঘা)
— হ্যা। কিছু বলছিলি?(তনা)
মেঘার তনার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে
— আমরা এতক্ষণ এতো কিছু কাকে বলছিলাম? তুই জিঙ্গেস করছিস তোকে কিছু বলছি কি না?
কোথায় ছিলি এতক্ষণ তুই? কই হারিয়ে গেছিলি?(মেঘা)
— আপু ভাইয়া এখানে আসবে এটা কি তুমি আগে থেকে জানতে? আর ভাইয়ার সাথের ওই মেয়ে টা কে তুমি কি চিনো?(লিনা)

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here