শুধু তুমি 💞
পর্বঃ- ১৫
Samira Afrin Samia
#নিপা
নীল আনমনে এসব কথা ভাবছে। হঠাৎ দরজায় কেউ এসে।
— আসবো?
নীল চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে একটু স্বাভাবিক হয়ে
— হুম আসুন।
বাইরে থেকে আনিকা নীলের ক্যাবিনে আসলো। নীল ঐ দিকে ফিরে আছে। আনিকা চেয়ার টেনে বসে। আনিকা নীলের দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে
— এই ফাইল টা তে তোমার সাইন লাগবে।
নীল ওপাশ থেকে আনিকার দিকে ঘুরে ফাইল টা হাতে নেয়। আনিকা খেয়াল করলো। নীলের চোখ লাল হয়ে আছে। গলার স্বর ও যেন কেমন শুনাচ্ছে।
— নীল কি হয়েছে?
নীল আনিকার দিকে না তাকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে ফাইল দেখতে দেখতে
— আপনি যে কাজে আসছেন ওই কাজ টা ঠিক মত করেন। কার কি হয়েছে না হয়েছে তা আপনার দেখার বিষয় না।
— এমন করে কথা বলছো কেন? কি হয়েছে তা আমাকে বলতে তো কোন প্রব্লেম দেখছি না। আমাদের মাঝে আগে কি হয়েছে না হয়েছে তা ভুলে কি আমরা নতুন করে সব শুরু করতে পারি না? আমরা তো বন্ধু হতে পারি। আমি তোমার বন্ধু হয়েই থাকতে চাই এর থেকে বেশি কিছু না। তুমি কি আমার দিকে তোমার বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে পারো না?
এমনিতেই নীল তনা কে নিয়ে চিন্তিত। তার উপর আনিকার এসব কথা। নীলের কাছে জাস্ট অসহ্য লাগছে। নীল আনিকার সাথে এখন কোন কথা বাড়াতে চাচ্ছে না।
— আপনি এখন যেতে পারেন। ফাইল টা দেখা শেষ হলে আমি আপনাকে ডেকে নিব।
আনিকা বুঝতে পারছে নীল কোন কিছু নিয়ে টেনশনে আছে। হয়ত তনার কিছু হয়েছে তাই নীলের মন ভালো নেই।
— নীল তনার কি কিছু হয়েছে? বা তোমার সাথে কি কিছু নিয়ে তনার ঝগড়া হয়েছে?
আনিকার মুখে এসব কথা শুনে হঠাৎ করে নীলের রাগ উঠে গেল। কেন ই যেন হঠাৎ করে নীল নিজের রাগের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেললো। নীল বসা থেকে দাঁড়িয়ে
— মিস আনিকা আপনি এখানে কাজ করতে আসছেন নাকি কার পারসোনাল লাইফে কি সমস্যা হয়েছে তা জানতে আসছেন। আর আপনাকে কত বার বলতে হবে আমি আপনার বস। বস কে নাম ধরে ডাকা এটা কোন ধরনের ভদ্রতা? আপনি আমার অফিসে জব করেন। আপনার কাজ আমার অফিসের ভেতরেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু না আপনি তো দেখছি আমার পারসোনাল লাইফ সম্পর্কে ও জানতে আগ্রহী। আমার ওয়াইফের কিছু হয়েছে কি না। আমার ওয়াইফের সাথে কি আমার ঝগড়া হয়েছে এগুলো নিয়ে আপনার এতো মাথা ব্যথা কেন। কাজ করতে ভালো না লাগলে জব ছেড়ে দেন। অফিসে এসে আজেবাজে কথায় মাথা ঘামানোর তো কোন মানে নেই।
হঠাৎ করে নীলের এমন ব্যবহার দেখে আনিকা কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। আনিকা কি এমন বলেছে যার জন্য নীল ওর উপর এতো রাগ দেখাচ্ছে। নীলের কথা গুলো শুনে আনিার চোখে পানি এসে গেল। না চাইতে ও আনিকা নীলের সামনে কান্না করে দিল। আনিকার কান্না দেখে নীলের আরো রাগ হচ্ছে।
— চুপ করুন একদম কাঁদবেন না। আপনার মত মেয়েরা কান্না ছাড়া আর কি ই বা পারে। আপনাদের চোখের জল এতো সস্তা কেন। কথায় কথায় শুধু কান্না করা। কি ভাবেন একটু চোখের পানি ফেলে ছেলেদের মন গলিয়ে ফেলবেন। আপনার চোখের পানি দেখে আমার মন গলবে না। তিন বছর আগে যখন আমাকে ছেড়ে চলে গেছিলেন তখন তো আমার জন্য আপনার এতো মায়া হয়নি। আজ কেন এতো মায়া দেখাচ্ছেন? আমি আমার ওয়াইফ কে নিয়ে সুখে সংসার করছি এটা আপনি দেখতে পারছেন না। ভেবে ছিলেন আপনি চলে গেলে হয়ত আমি আমার লাইফে সামনে এগুতে পারবো না?
এটা আপনার ভুল ধারণা। আমি তনা কে নিয়ে অনেক হেপি আছি। তনা আমার পৃথিবী তনা ই আমার সব।
আনিকা কাঁদতে কাঁদতে
— নীল তুমি কোথায় থেকে কোথায় চলে যাচ্ছ? আমি কিন্ত এসব কিছু মিন করে কথা গুলো বলিনি। তোমার চোখ লাল হয়ে আছে। কথা ও কেমন শুনাচ্ছিল। তাই ভাবলাম তোমার হয়ত কিছু হয়েছে।
বিশ্বাস করো নীল আমি মন থেকে চাই তুমি খুশি থাকো। আমি তোমার হাত ধরে রাখতে পারিনি এটা আমার দূর্ভাগা। তনা সত্যিই অনেক ভাগ্যবাতী যার জন্য তোমাকে স্বামী হিসেবে পেয়েছে। আমি তো নিজের সংসার টিকিয়ে রাখতে পারিনি।আমি জানি একটা সংসার ভাঙ্গার কষ্ট কতটা। তাই আমি চাই না আর কোন মেয়ের সংসার ভাঙ্গুক। জাস্ট একজন ফ্রেন্ড এর দাবি নিয়ে জানতে চাইছিলাম তনার সাথে তোমার কিছু হয়েছে নাকি।
আনিকা নীলের ক্যাবিন থেকে বের হয়ে গেল। আনিকা আর এক মিনিট ও অফিসে দাঁড়ালো না। সোজা বাসায় চলে গেল। আনিকা চলে যাওয়ার পর নীল ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়লো। নীল কি করলো এটা। নীলের সব কষ্ট, রাগ, খোব আনিকার উপরে ঝাড়লো।আনিকা কখনও নীলের খারাপ চায় না এটা নীল ভালো করেই জানে। পরেও অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে আনিকা কে। তনা ভালো না থাকলে নীলও ভালো থাকে না। তনার চোখের পানি দেখলে নীলের পুরো পৃথিবী তছনছ করে দিতে ইচ্ছে করে। আজ নীল তনাকে হাসি খুশি রাখতে পারছে না আর তাই হয়ত নীল নিজের অজান্তে আনিকা কে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। নীল কপালে হাত দিয়ে চেয়ারে বসে আছে। হঠাৎ নীলের ফোন বেঁজে উঠল। নীল ফোন রিসিভ করে কানে নিলে ওপাশ থেকে
— এই নীল তারাতারি বাসায় আসো।লিনার আম্মু অসুস্থ লিনা বাড়ি যাবে ওর আম্মু কে দেখতে।
— আচ্ছা আসছি।
নীল লিনা কে নিজেদের গাড়ি করে গ্রামে পাঠিয়ে দিল। তনার লিনা কে যেতে দিতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। কিন্তু লিনার মা অসুস্থ তাই লিনার যেতেই হবে।
রাতে নীল কপালের উপর হাত রেখে বেডে শুয়ে আছে। তনা নিচে থেকে রান্না শেষ করে শাড়ির আঁচল দিয়ে হাত মুছতে মুছতে উপরে রুমে আসলো।তনা রুমে এসে দেখে নীল শুয়ে আছে।
— নীল এখন শুয়ে আছো যে। শরীর খারাপ?
নীল তনার কথা শুনে উঠে বসলো
— না। শরীর খারাপ না।
— তাহলে কি মন খারাপ?
— না।
তনা নীলের পাশে বসে
— শুধু শুধু আমার কাছে কেন মিথ্যে বলছো?
নীল তনার থেকে আর লুকাতে পারলো না। তনা কে বলেই দিল আজ অফিসে আনিকার সাথে যা যা করেছে নীল। তনা সব কিছু শুনে ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে।
— তুমি আনিকার সাথে এমন ব্যবহার না করলেও পারতে। আনিকার তো কোন দোষ নেই শুধু শুধু ওকে এতো গুলো কথা কেন শুনালে। আল্লাহ আমাকে মা হওয়ার হ্মমতা দেননি। আল্লাহ যা করেন তা ভালোর জন্য ই করেন। আমি একথা মাঝে মাঝে ভুলে গিয়ে উল্টা পাল্টা কিছু করে বসি। আমি নিজও কষ্ট পাই আর তোমাকে ও কষ্ট দেই। আর তুমি সেই কষ্ট অন্যের উপর ঝাড়।
নীল তনার হাত শক্ত করে ধরে
— তনা!
— হুম।
নীল কিছু বললো না। তনা ও কিছু বলছে না। দু’জনই প্রায় অনেকক্ষণ চুপ থাকলো। তনার কষ্ট নীলের সহ্য হয় না। কিন্তু তনা কষ্ট দূর করার মত হ্মমতা নীলের নেই। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর তনা বলে উঠলো
— নীল তুমি আনিকার কাছে হ্মমা চেয়ে নিও। আনিকা কে কষ্ট দেওয়া ঠিক হয়নি। কারো মনে কষ্ট দিলে আল্লাহ নারাজ হন।
নীল চুপ করে তনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তনা নীলকে বললো
— এভাবে কি দেখছো? আমাকে কি আগে কখনও দেখোনি? আজ কি নতুন দেখছো?
রান্না করে আসছি। চলো খাবে।
— হুম।
পরের দিন নীল আর অফিসে যায়নি। লিনা বাসায় নেই তনা একা থাকবে এটা ভেবে লীন তনার সাথে বাসায় থেকে গেল। নীল জাহিদের কাছে ফোন দিয়ে জানতে পারছে। আনিকা ও অফিসে আসেনি। না আসার ই কথা। এতো অপমান সহ্য করে কোন মানুষ ই জব করবে না। আনিকা ও হয়ত আর জব করবে না। পরেও নীল আনিকার কাছে গিয়ে ওর কাছে হ্মমা চাইবে।
চলবে….