শুধু তুমি 💞 পর্বঃ- ১৬(শেষ পর্ব) Samira Afrin Samia #নিপা

0
730

শুধু তুমি 💞
পর্বঃ- ১৬(শেষ পর্ব)
Samira Afrin Samia
#নিপা

তনার রুটিন চেকআপ এর জন্য নীল তনাকে নিয়ে হসপিটালে যায়। ডক্টর তনার চেকআপ করলে তনা ডক্টরের ক্যাবিন থেকে বের হয়ে চলে আসে। ডক্টরেরে সেই এক কথা বার বার শুনতে তনার একটু ও ভালো লাগে না। তনা ক্যাবিন থেকে চলে যাওয়ায় ডক্টর ও তেমন কিছু মনে করেন নি।কারণ ডক্টর তনার মনের অবস্থা খুব ভালো করেই জানে। নীল ডক্টরের সাথে কথা বলছে। তনা বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছে। আনিকা ওর মা’কে নিয়ে ডক্টরের কাছে আসছে। কিছু দিন ধরে আনিকার মায়ের প্রেসার একটু বেশিই বেড়েছে। আনিকা তনা কে দেখে ও তনার সাথে কথা বলতে গেল না। আনিকা তনার পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। তনা আনিকা কে দেখে ফেলে। তনা আজ নিজে থেকেই আনিকার সাথে কথা বললো।
— আনিকা।
আনিকা ভাবতে পারেনি তনা ওর সাথে নিজে থেকে কথা বলবে।
— তনা তুমি এখানে? কি হয়েছে শরীর সুস্থ আছে তো?
— হুম।
— তুমি একাই এসেছো, নীল আসেনি তোমার সাথে?
— নীল ডক্টরের ক্যাবিনে বসে আছে। আমার ভালো লাগছিল না তাই বাইরে চলে আসছি।
— ওহ।
— তুমি এখানে কাকে নিয়ে আসছো? একাই?
— না আমি মা’কে নিয়ে এসেছি।
— কি হয়েছে আন্টির?
— তেমন কিছু হয়নি। প্রেসার টা একটু হাই হয়ে গেছে।
— ওহ।
আর কি বলবে কেউই ভেবে পাচ্ছিল না। তাই দু’জনেই কিছুক্ষণ চুপ থেকে। তনা বলতে লাগলো
— আনিকা ঐ দিনের জন্য সরি। নীল তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করেছে। সরি টা ও নীলের ই বলা উচিত ছিল। যাই হোক ওর হয়ে আমি তোমাকে সরি বলছি। তুমি ওকে হ্মমা করে দিও।
— আরে না সরি বলতে হবে না। নীল ও রকম ই।
— হুম। তুমি তো জানোই নীল ওরকম ই। নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না। তুমি তো নীল কে আমার আগে থেকেই চিনো। তুমি ওর কথায় কষ্ট পেয় না।
— কোন ব্যাপার না। আমি নীলের কথায় কিছু মনে করিনি আর কষ্ট ও পায়নি। তোমার সরি বলা লাগবে না।
— তুমি তো এখন এখানেই থাকো। তাহলে একদিন আমাদের বাসায় উঠতে পারো না?
সময় করে একদিন আমাদের বাসায় যেও। যদি নীল কে আর আমাকে তোমার ফ্রেন্ড মনে করো।
আনিকা তনার ব্যবহার দেখে অনেকটা অবাক হচ্ছে। নিজের হাজবেন্ডের এক্স গার্লফ্রেন্ডের সাথে কেউ এতো সুন্দর করে কথা বলবে, এমনকি বাসায় ও যেতে বলবে তা আনিকার জানা ছিল না।
আনিকা মনে মনে বলছে
— তনা মেয়েটা অনেক ভালো। নীলের জন্য তনা ই একদম পারফেক্ট। নীলের তনা কে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে সত্যি ই অনেক ভালো হয়েছে। তনা এতো টা মিশুক।সবাই কে মুহূর্তের মধ্যে ই আপন করে নিতে পারে। তাই তো নীল তনা কে এতটা ভালোবাসে।
আনিকা কিছু বলছে না দেখে তনা আবার বললো
— কি হলো যাবে না আমাদের বাসায়?
— হুম। সময় পেলে একদিন অবশ্যই যাবো।
আচ্ছা তনা এখন যাই। মা ভেতরে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
— আচ্ছা।

আনিকা হসপিটালের ভেতরে চলে গেল। নীল যে ডক্টরের ক্যারিনে বসে ছিল। আনিকা সেখান দিয়েই যাচ্ছিল।হঠাৎ আনিকার চোখ নীলের দিকে চলে যায়।
— তনার সাথে তো কথা হলো। কিন্তু তনা কে এটাই জিঙ্গেস করলাম না। ডক্টরের কাছে কেন আসছিল। তনার কিছু হয়েছে নাকি নীলের?

আনিকা ক্যাবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে এগুলো ভাবছে। তখনই নীল ক্যাবিন থেকে বের হলো। অফিসে ঐ দিনের ঘটনার পর আনিকা নীলের সামনে যেতে চায় না। তাই আনিকা একটু সাইডে চলে গেল। যাতে নীল আনিকা কে দেখতে না পারে।
নীল চলে যাওয়ার পর আনিকা ক্যাবিনের ভেতরে গেল। আনিকা ডক্টর কে আগে থেকেই চিনে তাই নীল কেন আসছিল তা জানতে তেমন প্রব্লেম হবে না।
— আরে আনিকা তুমি। আসো তা কি জন্য আসা হলো?
— তেমন কিছু না। ডক্টর মা’কে নিয়ে আসছিলাম।
— ওর তা আন্টি কেমন আছেন?
— ভালো ই। আচ্ছা নীল কেন আসছিল একটু বলবেন প্লিজ।
— তুমি মি.নীল কে চিনো?
— হুম। ও আমার ফ্রেন্ড। কিন্তু এখন তেমন যোগাযোগ নেই।
ও কেন আসছিল? ওর কি কিছু হয়েছে?
— নীলের কিছু হয়নি। নীল ওনার ওয়াইফ তনা কে নিয়ে আসছিল।
— তনাকে নিয়ে? কি হয়েছে তনার?
— তুমি নীলের ফ্রেন্ড। তাহলে তো তনাকে চিনো ই। তনা মেয়ে খুব ভালো।
— হুম। কিন্তু কি হয়েছে তনার?
— জানো মাঝে মাঝে তনার জন্য অনেক খারাপ লাগে। এমন একটা হাসি খুশি চঞ্চল মেয়ে কখনও মা হতে পারবে না। এটা ভেবেই কেমন লাগে।
— কি! তনা মা হতে পারবে না?
— দেখো সব কিছুই তো আল্লাহ হাতে। মানুষ তো শুধু চেষ্টা করতে পারে। অনেক চেষ্টার পরেও তনার একটা বেবী হলো না। নীল তনাকে নিয়ে অনেক ডক্টরের কাছে গেছে। শুনেছি একজন ডক্টর নাকি বলেছে তনার মা হবার ১০% চান্স আছে। তবুও সিউর হয়ে কিছু বলতে পারছে না।
তনা এসব নিয়ে সবসময় চিন্তিত থাকে শরীরের একদম খেয়াল রাখে না। খাওয়ার দাওয়ার ও কোন ঠিক নেই। তাই নীল ওকে নিয়ে রুটিন চেকআপ করানোর জন্য আসছিল।

আনিকা ডক্টরের ক্যাবিন থেকে বের হয়ে গেল।
— তনার সাথে কেন এমন হলো। তনা মেয়েটা কত ভালো আল্লাহ তনার সাথেই কেন এমন করলো। নীল তনাকে নিয়ে টেনশনে থাকে তাই তো নীল ঐ দিন আমার সাথে এমন করেছে। আমি নীলকে বুঝতে পারিনি। নীল নিজের ভেতরে কতটা কষ্ট চেপে রেখেছে। আর তনা? তনা কে দেখে তো আমি এসব কিছু বুঝতেই পারিনি।
আনিকার তনার জন্য খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু আনিকা ই বা কি করবে। আনিকার ও তো কিছু করার নেই।

প্রায় পনেরো দিনের মত কেটে গেল। লিনা এখনও গ্রাম থেকে আসেনি। নীল মাঝে মাঝে অফিস কামাই করে তনা কে নিয়ে এখানে সেখানে ঘুরতে বের হয়। নীল অফিসে চলে গেলে তনা বাসায় একা একা ই দিন কাটায়।
নীল অফিসে কাজ করছে। এমন সময় নীলের ফোন বেঁজে উঠলে নীল ফোন রিসিভ করে কানে নেয়। ফোনের ওপাশের লোকের কথা শুনে নীল সাথে সাথে অফিস থেকে বের হয়ে যায়।

সন্ধ্যার দিকে আকাশে মেঘ করেছে। বৃষ্টি হবে হবে ভাব। প্রচুর বাতাস বইছে। তনার মন ভালো থাকলে তনা এখন ছাঁদে গিয়ে প্রকৃতির এই পরিবেশ টা কে উপভোগ করতো। কিন্তু আজকাল তনার মন ভালো থাকে না। তাই কোন কিছুই তনার কাছে ভালো লাগে না। ছাঁদে কাপড় শুকাতে দিছিল। ওগুলো আনতে ও ইচ্ছে হচ্ছে না। দেখতে দেখতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। নীল ও বাসায় এসে গেছে। মেইন ডোর খুলা ই ছিল। নীল রুমে এসে দেখে। তনা বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে।
— তনা বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।
— হুম।
— তুমি রুমে বসে আছো যে। আজ বৃষ্টিতে ভিজবে না?
— না। ভালো লাগছে না।
নীল ভালো করেই জানে তনা কেন বৃষ্টি তে ভিজতে গেল না। কিছু দিন ধরেই তনা এমন করছে রুম থেকে বের হয় না। ভালো করে কথা বলে না।সারা দিন মন খারাপ করে রুমে বসে থাকে। আজ ও তনার মন খারাপ। মন খারাপ না থাকলে কি তনা বৃষ্টি তে ভিজতো না?
নীল তনার পাশে বসে তনার হাতে হাত রাখে। তনা নীলের দিকে তাকাতেই চোখ বেয়ে পানি আসছিল।তনা নীলের কাঁধে মাথা রাখে। আর সাথে সাথেই তনার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
নীল তনার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে কিছুক্ষন চুপ থাকে। বাইরে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বৃষ্টি বেগ ও বেড়ে গেল। নীল তনার পেটে হাত রাখলো।
— তনা আমাদের প্রথম বেবী কি হবে। ছেলে নাকি মেয়ে?
নীলের এ কথা শুনে তনা নীলের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে কেঁদে দিল। নীল তনার চোখে পানি মুছে দিয়ে
— এই পাগলী কাঁদছো কেন? আজকের পর থেকে যেন তোমার চোখে আর এক ফোঁটা পানি ও না দেখি। অনেক কেঁদেছ আর কাঁদতে হবে না। আল্লাহ আমাদের দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন তনা।
তনা নীলের দিক অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
— আজ অফিসে ডক্টরেরে ফোন এসেছিল। উনি আমাকে উনার চেম্বারে ডেকেছিলেন। তোমার রিপোর্ট গুলো আনতে। রিপোর্ট দেখার পর ডক্টর বললো তুমি মা হতে পারবে তনা।
তোমার কোল জোরে ছোট একটা তনা আসবে। আমাদের বেবী হবে তনা। আমাদের বেবী, যে তোমাকে মাম্মাম আর আমাকে পাপা ডাকবে।
তনা নীলে কথা গুলো শুনে কিছু বলছে না। শুধু তনার দু’চোখ বেয়ে অঝোর দ্বারায় পানি পড়ছে। নীল ও তনাকে কাঁদতে বাঁধা দিচ্ছে তনা। এ কান্না যে সুখের কান্না। না পাওয়া কোন কিছু কে অনেক কষ্ট পাওয়ার কান্না। নীল তনাকে কোলে তুলে নিয়ে।
— চলো আজ দুজন এক সাথে ছাঁদে গিয়ে বৃষ্টি তে ভিজবো। অনেক দিন হয়ে গেল দুজন এক সাথে বৃষ্টি তে ভিজি না।

সমাপ্ত 💞

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here