শুধু তুমি 💞 পর্বঃ- ৩ Samira Afrin Samia #নিপা

0
391

শুধু তুমি 💞
পর্বঃ- ৩
Samira Afrin Samia
#নিপা

তনা আবার কান্না শুরু করে দিল
— কি হলো আবার কাঁদছ কেন?
তনা নীলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে
— আমাকে হ্মমা করে দেও নীল। আমি জানি তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না। পরেও আমি আমার ভয় টাক
দূর করতে পারি না। আমি বার বার তোমার অতীত কে তোমার সামনে নিয়ে এসে তোমাকে কষ্ট দেই।আমি তোমার পঁচা বউ।
তনা ছোট বাচ্চাদের মত কাঁদছে
–আমি কান্না করলে কিন্তু আমাকে একদম ভালো দেখায় না। তুমি কি চাও আমি ও তোমার সাথে কান্না করি?
তনা নীলের কথা শুনে হেসে দিল
–কান্না করলে সত্যি ই তোমাকে খুব বাজে লাগে। তুমি ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো আমি খাবার দিচ্ছি।তোমার অফিসের জন্য লেট হয়ে যাবে তো।
নীল ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে। তনা ও নীলের পাশে বসে আছে
— কি হলো তুমি খাচ্ছো না যে?
— আমার খেতে ভালো লাগে না। সব কিছু কেমন বাজে লাগে। খেতে ইচ্ছে হয় না একদম।
— খেতে ইচ্ছে হয় না?
কি হয়েছে। তোমার শরীর ঠিক আছে তো। আগে আমাকে কিছু বলনি কেন। চলো এখনই ডক্টরের কাছে যাব।
— আরে মি.জামাই এত ব্যস্ত হচ্ছেন কেন। আমার কিছু ই হয়নি।
— কিছু হয়নি?
— বললাম তো না।
আচ্ছা নীল আজ একটু আমাদের বাসায় নিয়ে যাবে?
— আমরা তো আমাদের বাসায় ই আছি।
— আরে বুদ্ধু আমাদের বাসা মানে আমার বাবার বাসায়।
— ওহ,,, হুম নিয়ে যাব ঠিক আছে কিন্তু তুই ওখানে থাকতে পারবে না। আমার সাথে আবার চলে আসতে হবে।
তনা নীলের দিকে চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে
–মি.নীল বিয়ের পর কয়দিন আমাকে বাবার বাসায় গিয়ে থাকতে দিছেন?
নীল মাথা নিচু করে মাথা চুলকাচ্ছে
— তুমি তো জানোই তোমাকে না দেখে আমি এক মূহুর্ত ও থাকতে পারি না। কিছুক্ষণ তোমাকে না দেখলে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
— হুম মি. তাই তো অফিসে গেলে আপনার কাজ গুলোকে পেলে আমার কথা আর মনে থাকে না। ফোন দিলেই শুধু কাজ কাজ করেন।
— জি না মিসেস আপনাকে আমি কখনও ভুলি না।আপনি সব সময় আমার মনের মাঝেই থাকেন।
— আমার তো মনে হয় তোমার কাজ আমার থেকে তোমার কাছে বেশি ইম্পর্টেন্ট।
— এই পৃথিবীতে তোমার থেকে ইম্পর্টেন্ট আমার কাছে কিছু নেই। তোমার বাবা আমার উপর কতটা বিশ্বাস করে এসব কিছুর দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন। এখন যদি আমি কাজ কাজ না করে শুধু বউ বউ করি তাহলে এগুলো কে দেখবে?
— হুম হয়েছে আর চাপা মারতে হবে না। আর কত খাবেন এখন উঠেন। আমি বাবার বাসায় যাব।
— আমি তো কিছুই খেলাম না।
— কি,,,,,?
— কি,,, কি? এতক্ষণ আপনি খাইছেন।
— আমি খাইছি?
— হুম রাহ্মশনীর মত আমার হাত ও চেটেপুটে খেয়েছেন।
তনা যখন নীলের সাথে কথা বলছিল তখন নীল তনাকে খাইয়ে দিচ্ছিল।তনা নীলের সাথে কথা বলাতে এতই ব্যাস্ত ছিল যে কখন তনা খেল তা তনার খেয়াল ই নেই।
— এটা চিটিং। তুমি আমাকে চিটিং করে খাইয়ে দিছ।
— হুম ম্যাডাম চিটিং! আমি চিটিং করাতে কার উপকার হলো।খাবার গুলো কার পেটে গেল?
— আমি কিছু জানি না তুমি আমার সাথে চিটিং করছ।
নীল তনাকে কিছু বলতে যাবে তখনই নীলের ফোন বেঁজে উঠে।নীল ফোন হাতে নিয়ে দেখে অফিস থেকে পি.এ কল দিছে।
— হ্যা জাহিদ বলো।
— স্যার আজকে জবের জন্য ইন্টারভিউ নেওয়ার কথা ছিল। আপনি তো এখনও অফিসে আসলেন না। আজ কি ইন্টারভিউ নিবেন না?
— জাহিদ আমি আজ অফিসে আসতে পারবো না। তুমি ওদিকে সব সামলে নিও।আজকের ইন্টারভিউ তুমি নিয়ে নেও।আর কোন সমস্যা হলে আমাকে ফোনে জানিও।
— আচ্ছা স্যার তাহলে রাখছি।
— হুম।
— আজ তুমি অফিসে যাবে না?
— না।
— কেন?
— কেন কি? তুমি না একটু আগে বললে তোমার বাবার বাসায় যাবে।
— হুম। তুমি আমাকে বাসায় দিয়ে অফিসে চলে যাও।
— হুম ম্যাডাম।আমি তোমাকে ওখানে রেখে অফিসে চলে যাই। আর তুমি আজ বাবার বাসায় থেকে যাও?
এসব হবে না। আমি তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবো আবার আমার সাথে করে নিয়ে আসবো।

.
.
.
কলিং বেল বাজার শব্দ শুনে নাজমা চৌধুরী রুম থেকে বের হয়ে এসে মেইন ডোর খুলে দেখে তনা আর নীল দাড়িয়ে আছে।তনা তার আম্মু কে দেখার সাথে সাথে আম্মু বলে জড়িয়ে ধরলো।
— তোরা এসে গেছিস।ভেতরে আয়।নীল বাবা ভেতরে এসো।
— আসসালামু আলাইকুম আম্মু কেমন আছেন।
— ওয়ালাইকুম আসসালামু বাবা এই তো ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?
তনা তুই যে নীলকে নিয়ে বাসায় আসবি তা জানাস নি কেন। আমি তোদের জন্য রান্না করে রাখতাম।
— রাখো তো তোমার রান্না। কতদিন পর বাসায় আসলাম। আব্বু কোথায়?
— এই টাইমে তোর আব্বু আর কোথায় থাকবে?
— আমি আসবো জেনেও আব্বু এখনও বাসায় আসেনি?
পিছন থেকে আজহার চৌধুরী মানে তনার আব্বু
— এই তো আমি এসে গেছি। আমার মামনি টা বাসায় আসবে আর আমি অফিস করবো তা কি কখনও হয়?
— আব্বু তুমি অনেক পচা একটা দিন ও আমাকে দেখার জন্য আমাদের বাসায় যাও নি।
— রাগ করে না মামনি।অফিসের কাজ সেরে আর সময় হয়ে উঠে না। আমি তো নীলকে বলে দিয়েছি তুমি যখন চাইবে তখনই যেন তোমাকে এখানে নিয়ে আসে।
— তোমাদের জামাই তো তোমার মতই সারা দিন শুধু কাজ কাজ করে। আমার জন্য একটু ও টাইম হয় না।
— দেখলেন তো বাবা আপনার মেয়ে কি মিথ্যা বলে।ঐদিন ই তো অফিস কামাই করে ওকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলাম। কত জায়গায় ঘুরলো কত কিছু শপিং করলো।আর আজ বলছে আমি ওকে টাইম দেই না।
–তোমরা সবাই পঁচা। সবার শুধু কাজ আর কাজ।এতো কাজ করে কি হবে?
আমি আমার রুমে গেলাম।কতদিন ধরে আমার রুমে যাই না। বেলকনিতে রাখা আমার গোলাপ গাছ গুলো কেমন আছে তা ও দেখা হয়না। আম্মু তুমি আমার গাছ
গুলোর ঠিক মত যত্ন রাখছো তো?
— দিনে দু’বার করে তোর গাছে পানি দেই।গিয়ে দেখ কত গুলো কলি আসছে গাছে। কয়েকটা আজ কালকের ভিতরেই ফুটবে।
— সত্যি? আমি দেখে আসি।
তনা দৌড়ে সিরি বেয়ে উপরে ওর রুমে চলে গেল। তনার মা পিছন থেকে তনাকে ডেকে
— আস্তে যা পড়ে যাবি তো। আর নীলকে সাথে করে তোর রুমে নিয়ে যা। দেখছ মেয়েটা কি পাগল। জামাই কে একা রেখেই উপরে চলে গেল।
— সমস্যা নেই আম্মু। আমি এখন রুমে যাব না। আমার একটু কাজ আছে।
— সে কি তুমি কি চলে যাবে? না না এখন কোথাও যাওয়া চলবে না।
— কাজটা সেরেই আবার চলে আসবো।
— আমি কিন্তু তোমার পছন্দের খাবার রান্না করবো।
— আমি জানি তো আম্মু। আপনি প্রতি বার ই আমার পছন্দের সব খাবার রান্না করেন। আমি কি মায়ের হাতের রান্না মিস করতে পারি। কাজ সেরে এসে এক সাথে সবাই লাঞ্চ করবো।
— আচ্ছা তাহলে তারাতারি আসবে।
নীল চলে গেলে তনার আম্মু তনার আব্বু কে বলছে
— দেখলে ছেলেটা কত ভালো।
— হুম সত্যি ই নীলের মত ছেলে হয়না। প্রথমে আমি ওকে বুঝতে ভুল করলেও এখন ঠিকই বুঝতে পারছি। আমাদের মেয়ের পছন্দ খারাপ হতে পারে না এটা এখন আমি প্রমান পাচ্ছি।
— মা হারা ছেলেটা জীবনে কত কষ্ট ই না করেছে। এত কিছুর পর ও সব সময় মুখে হাসি লেগেই থাকে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের মেয়েকে অনেক ভালোবাসে।তোমার পাজি মেয়েটার সব আবদার হাসি মুখে মেনে নেয়।
— আমাদের তনা ভাগ্য করে নীলের মত ছেলেকে স্বামী হিসেবে পেয়েছে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here