শুধু তুমি 💞
পর্বঃ- ৯
Samira Afrin Samia
#নিপা
কলেজ ছুটি হওয়ার পর বাস স্টপে এসে, মেঘা বাসে উঠতে নিলে তনা পেছন থেকে মেঘার হাত ধরে টান দিয়ে একটু দূরে নিয়ে যায়।
— কি হলো এভাবে হাতে ধরে টান দিলি কেন? ব্যাথা পাইছি তো।
মেঘা এক হাত অন্য হাতে বোলাতে বোলাতে
— তোকে কি বলছিলাম মনে নেই?
— কি বলছিলি?
— আজ নীলের সাথে দেখা করে কথা বলবো।
— হুম বলবো তো। কিন্তু বাসে উঠতে দিলি না কেন?বাসে উঠলে প্রব্লেম কি?
— আরে গাধী বাসে গেলে ওকে পাবো কোথায়? আর কথা ই বা বলবো কি করে?
— হুম ঠিক বলছিস। তাহলে এখন কি হেঁটে যাবো?
— হুম। চল দেখি রাস্তায় নীল কে পাই কি না।
মেঘা আর তনা হাঁটছে। তনা একটু আগে আগে আর মেঘা পিছনে। পিছন থেকে মেঘা তনাকে ডেকে
— এই তনা একটু দাঁড়া। এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন? হেঁটে হেঁটে যা।
— কুত্তি দৌড়াচ্ছি কোথায়? আমি তো হেঁটে হেঁটে ই যাচ্ছি। তুই ই হাঁটতে পারিস না।
— আমি আর পারবো না রে দোস্ত। আমার পা ব্যাথা করছে।এমনিতেই আমি হাঁটতে পারি না।
— পারবো না বললে তো হবে না জানু।তোমাকে তো পারতে ই হবে। এখন ড্রামা না করে তারাতারি হাঁট তো।
কিছু দূর হেঁটে আসার পর মেঘা পিছন থেকে জোরে তনাকে ডেকে উঠলো। তনা বিরক্তি নিয়ে পিছনে ফিরে
— কি হয়েছে পিছন থেকে এভাবে ষাঁড়নীর মতো চেচাচ্ছিস কেন?
মেঘা হাতে ইশারা করে নীলকে দেখিয়ে
— ওই দেখ তোর রোমিও দাঁড়িয়ে আছে।
তনা নীলের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি ই ওখানে নীল কিছু ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে আছে।
— মেঘা চল।
— চলছি না তো কি দাঁড়িয়ে আছি?
তনা মেঘার কথার উত্তর না দিয়ে নীলের কাছে গেল। তনা আর মেঘা নীলের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘা তনাকে বলছে
— এখানে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য আসছিস নাকি। ওকে ডাক দে।কথা বল ওর সাথে।
— তুই একটু ডেকে দে না প্লিজ।
— ইস ন্যাকামি।আমি ডেকে দিব কেন। তুই কথা বলবি তুই নিজে ডেকে নে।
তনা মেঘার হাতে জোরে একটা চিমটি কেটে
— তোর ডাকতে হবে না। আমি নিজেই ডেকে নিব।হারামি একটা। এই তুই আমার ফ্রেন্ড?
তনা নীলকে ডাকছে।
— নীল শুনছেন?
নীল তনার দিকে তাকিয়ে ভাবছে। নীল তো এ মেয়েকে চিনে না। -তাহলে শুধু শুধু কেন একটা মেয়ে নীলকে ডাকতে যাবে এই ভেবে নীল তনার ডাকে সারা দিল না। নীল তনার ডাকে সারা না দেওয়ায় তনার অনেক রাগ হচ্ছে।
— দেখলি মেঘা আমি ডাকলাম। আমার দিকে তাকালো পরেও কোন কথা বললো না। কত দেমাগ দেখলি।
— ধুর নীল হয়ত বুঝতে পারেনি তুই যে ওকে ডাকছিস।
— সত্যি?
— হুম বাবা সত্যি। তুই আবার ডেকে দেখ।
–আচ্ছা।
তনা আবার নীলকে ডাকতে লাগলো।
— এই যে মি.নীল।আপনাকে ডাকছি। কানে কি কম শুনেন? কখন থেকে ডাকছি কথাই বলছেন না। আজিব লোক তো আপনি। কেউ ডাকলে তার সাথে কথা বলতে হয় এটা ও জানেন না?
নীল এবার সিউর হলো তনা ওকেই ডাকছে। কিন্তু অচেনা একটা মেয়ে নীলকে কেন ডাকবে। এটা ভাবতে ভাবতে নীল তনার কাছে আসলো। নীল তনার থেকে দু’পা দূরে দাঁড়িয়ে
— জি আমাকে ডাকছিলেন?
— হুম মি. আপনাকে ই ডাকছিলাম।
— ওহ আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি। কেন ডাকছিলেন বলুন?
তনার একবার মেঘার দিকে তাকিয়ে একবার ঢোক গিলে বলতে শুরু করলো
— কি হয়েছে আপনার?
এতদিন কোথায় ছিলেন?
নিজের এমন অবস্থা করছেন কেন?
র্ভাসিটি যান না কেন। পড়াশুনা কি আর করবেন না। এভাবেই কি নিজের জীবন টা নষ্ট করে দিবেন?
তনা এক দমে কথা গুলো বলে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। নীল কি রিয়েক্ট করে তা দেখার জন্য। নীল ভেবে পাচ্ছে না একটা অচেনা মেয়ে ওকে একথা গুলো কেন বলবে। মেয়েটা তো নীল কে চিনেও না নীলের জানা মতে।
— আপনি কে?
আপনি কি আমাকে চিনেন?
আমি জানি না। আপনি আমাকে চিনেন কি না তবে আপনাকে এটা বলে দেই।
আমার জীবন টা আর স্বাভাবিক নেই। হয়ত আর কখনও হবে না। যার জীবনে আপন বলতে কেউ নেই। যার বেঁচে থাকার কোন আশা নেই। তার নিজেকে গুছিয়ে রেখে আর পড়াশুনা করে কি হবে। যে দু’জন মানুষের জন্য আমি জীবনে কিছু করতে চেয়েছিলাম। তারাই যখন আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। তাহলে এ জীবনে কিছু করলেই কি আর না করলেই কি?
কথা গুলো বলে নীল যেতে নিচ্ছিল। তনা নীলকে পেছন থেকে ডেকে
— শুনুন?
নীল তনার কথায় পিছন ফিরে তাকায়।
— কিছু বলবেন?
— হুম।
তনা কিছুক্ষন চুপ করে কি যেন ভেবে। নীলের দিকে এক পা এগিয়ে গিয়ে।
— আমি সেই তিন /চার মাস আগে আপনাকে এই রাস্তায় ই দেখছি।প্রথম দেখাতে ই আপনাকে আমার ভালো লেগে যায়। তার পর থেকে কিছু দিন আপনাকে ফলো করছি। আপনার ব্যাপারে সমস্ত ইনফরমেশন বের করছি। কল্পনায় আপনার হাত ধরে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু যখন জানতে পারলাম আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন। তখন অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। আপনাকে ভুলতে অনেক কষ্ট হয়েছিল। দু’তিন দিনের দেখায় যে কেউ কাউকে ভালোবেসে ফেলতে পারে তা আমার জানা ছিল না। আমি ভেবে নিয়েছিলাম আপনি হয়ত আমার ভাগ্যে নেই। এটা ভেবেই নিজেকে শক্ত করে প্রায় তিন মাস আপনাকে ভুলে ছিলাম। মাঝে আপনাকে দেখতে পাইনি। চেয়েছিলাম আপনার খুজ নিতে কিন্তু ইচ্ছে করেই নেইনি। আপনার খুজ নিয়ে আপনার কথা মনে করে নিজের কষ্ট গুলো কে বাড়াতে চাইনি। কিন্তু সেদিন হঠাৎ করে বাস স্টপে আপনাকে দেখতে পেলাম তাও এমন ভাবে তখন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি। আপনার কাছে গিয়ে আপনার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্ত তার আগেই আপনি ওখান থেকে চলে গেছিলেন। তার পর আপনার খুজ নিতে আপনার বাড়ি ওয়ালার সাথে ও দেখা করছি। উনার থেকেই জানতে পারলাম আপনার মা মারা গেছেন। আর আন্টি মারা যাওয়ার পর আপনি বাসাটা ও ছেড়ে দিছেন। আপনার র্ভাসিটি গিয়ে আপনার কিছু ফ্রেন্ডদের থেকে জানলাম আপনি ঠিক মত র্ভাসিটি ও যান না। আর আপনার গার্লফ্রেন্ড ও নাকি আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে। দেখেন কারো বাবা মা ই চিরদিন বেঁচে থাকে না। বাবা মাকে হারানোর কষ্ট অনেক। কিন্তু তাই বলে কি আপনি এভাবে আপনার লাইফ টা নষ্ট করে দিবেন। যদি আন্টি বেঁচে থাকতো আর আপনার এমন অবস্থা দেখত তখন উনার কেমন লাগতো। উনি কি চাইতেন উনার ছেলে নিজেকে এভাবে শেষ করে দেক। উনি কি এসব মেনে নিতে পারতেন। আপনাকে এমন ভাবে দেখে উনার আত্মা কি কষ্ট পাচ্ছেন না?
আর গার্লফ্রেন্ড? যদি তার চলে যাওয়ায় আপনি কষ্ট পান। তাহলে এটা আপনার বোকামি। কারণ যে আপনাকে না বুঝে আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে তার জন্য কেন শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছেন। সে কেন আপনাকে ছেড়ে গেছে তা আমি জানি না। শুধু এইটুকু বলছি কারো জন্য আপনি আপনার লাইফ টা নষ্ট করবেন না।
চলবে……..