শুভদিন (পর্ব-০৩)

0
1488

শুভদিন
(পর্ব-০৩)
লিখাঃ সুমাইয়া বিনতে আব্দুল আজিজ

রাত ৮ঃ৩০….
ফোন টা বেজেই চলেছে অরিত্রীর। কিন্তু রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না ওর।ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।প্রচন্ড অভিমান আর জেদে চোখের পানি ছলছল করছে।৩-৪ বার রিং হওয়ার পর কল টা রিসিভ করল অরিত্রী।কল রিসিভ করেই শক্ত কন্ঠে বলল,
-“সমস্যা কি তোমার হ্যা? বার বার কল দিচ্ছ কেন?”
-“এভাবে বলছ কেন অরু? এমনভাবে বলছ মনে হচ্ছে আমি তোমাকে সারাক্ষণ কল দিয়ে জ্বালাই।আজ কত দিন পর তোমাকে কল দিলাম বল তো?”
-“আজ কতদিন পরেই বা তোমাকে কে কল দিতে বলেছিল বল তো?
-“একটু ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিল অরু।”
-“আমার কোনো কথা নেই তোমার সাথে।”
-“প্লিজ অরু।যা করেছি ভুল করেছি।ভুল হয়েছে আমার।সরি অরু।”
-“ফোন কি তুই রাখবি নাকি আমি রেখে দেব?”
-“সত্যিই রেখে দেব তাহলে?”

অরিত্রী এবার কিছুক্ষণ চুপ রইলো।কি উত্তর দেবে সে? রাহাত কি একটুও বুঝে যে আজও অরিত্রী ওকে কতটা মিস করে…!? আজও ওর সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে ইচ্ছে করে।আচ্ছা,এই যে অরিত্রী রাহাতের জন্য কাদছে,ওর চোখ দিয়ে পানি ঝরছে এইটার নামই কি ভালোবাসা? নাকি এইটা সত্যিই বাচ্চা বয়সের আবেগ?
আরশি বলেছে এটা বাচ্চা বয়সের আবেগ।অরিত্রী সেইটাই মেনে নিয়েছে।এইসব আবেগের ফলাফল নাকি ভালো হয় না।তাই অরিত্রী আবেগকে প্রশ্রয় না দিয়ে বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে।কিন্তু মাঝেমাঝে ওর যে প্রচন্ড কষ্ট হয়,প্রচন্ড…!
অরিত্রীকে চুপ থাকতে দেখে রাহাত আবার বলল,
-“কি হল? রেখে দেব ফোন?”
-“রেখে দেবে না তো কি করবে…!? ঢং দেখানোর জন্য আর কক্ষনো ফোন করবে না আমায়।বাই।”
কল টা কেটে দিয়ে হঠাৎ-ই কান্নায় ভেংগে পড়ল অরিত্রী।বাচ্চা বয়সের এই আবেগগুলো খুব খারাপ।মিছামিছি কান্না করতে বাধ্য করে এই আবেগ।

লাইট অফ করে বিছানায় বালিশের সাথে হেলান দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় বসে আছে।প্রচন্ড কান্না করতে ইচ্ছে করছে।চোখ টা টলমল করছে।যেকোনো সময় চোখের পানি গুলো গাল গড়িয়ে পরবে।এমন সময় কেউ একজন লাইট জ্বালালো।অরিত্রী তারাতাড়ি করে চোখ মুছে দেখে যে হৃদয়।অরিত্রীর চোখের পানি হৃদয়ের চোখ এড়ালো না।সে বিছানায় অরিত্রীর পাশে বসে জিজ্ঞেস করল,
-“কি হয়েছে অরু? কোনো সমস্যা?”
-“উহু।” মাথা নিচু করে জবাব দিল অরিত্রী।হৃদয় এতে সন্তুষ্ট হতে পারল না।সে বলল,
-“কেউ মিথ্যা বললে আমি খুব তারাতাড়ি ধরতে পারি।তুমি এখন মিথ্যা বলছ।এমনি এমনি কেউ কান্না করে না।কি হয়েছে বল তো?

অরিত্রী এবার উড়না দিয়ে ভালো করে চোখ মুখ মুছে হৃদয়ের দিকে তাকালো।তারপর বলল,
-“আচ্ছা ভাইয়া…আমাদের এই বয়সে আবেগ টা কি সত্যিই বেশি থাকে? এই বয়সে ভালোবাসা বলতে কিছু থাকে না?”
-“কি হয়েছে খুলে বল।”
-“ক্লাস টেনের প্রথম দিকে একটা ছেলের সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ হয়।ছেলেটা আমাদের পাশের মহল্লার হলেও পরিচয় টা ফেসবুকেই হয়।তারপর দেখা সাক্ষাত হল…সেও আমার সাথে এসএসসি দিল এবার।তবে আমরা ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে।ছেলেটা যে আমার প্রতি অল্প কয়েকদিনেই উয়িক হয়ে যায়।পরিচয়ের ২ মাসের মাথায় প্রপোজ করে আমাকে।সত্যি বলতে একরকম ফাযলামি মুডেই ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করি আমি।ফ্রেন্ডদের দেখতাম টাইম পাস করতে।আমারো কেমন যেন সেরকম অভিজ্ঞতা অর্জন করার ইচ্ছে হল।আরশি আমাকে বার বার নিষেধ করেছিল এইসব ঝামেলায় না জড়াতে।তারপরও জড়ালাম।সে যে আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসতাম বুঝতাম সেইটা।কিন্তু আমাদের এক্সাম শুরু হওয়ার দেড় মাস আগে হুট করেই সে উধাও।সব যোগাযোগের রাস্তা অফ,ওদের এলাকায়ও দেখি না।যদিও আমি এই রিলেশনে সিরিয়াস ছিলাম না তবুও ভীষণ মিস করতে থাকি ওকে।প্রচন্ড কষ্ট হত আমার।পাগলের মত চেষ্টা করতে থাকি একবার ওর সাথে কথা বলার।কিন্তু সম্ভব হয় নি।কয়েকদিন পর ও ওর এক ফ্রেন্ডকে দিয়ে আমাকে বলায় যে, আমি যাতে ওকে ভুলে যাই।ওর সেই ফ্রেন্ড আমাকে ও কোথায় আছে কিংবা কেন এমন করছে কিছুই বলে না।তারপরও বেশ কিছুদিন পাগলের মত অপেক্ষা করতাম এর একটা কল কিংবা মেসেজ পাওয়ার জন্য।কিন্তু লাভ হয় নি।আমার মনে হত আমি ওকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি।ওর কথা ভেবে ডিপ্রেশনে থেকে আমার এক্সাম টাও খারাপ হয়েছে।আজ যখন আমি নিজেকে একটু স্ট্রোং করতে পেরেছি তখন এতদিন পর উনি আমাকে ফোন করেছেন।উনার নাকি ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।”

অরিত্রী এইটুকু বলে থামল।হৃদয় বলল,
-“কথা বলেছ ওর সাথে?”
-“নাহ”
-“বল নি কেন?”
-“কি কথা বলব আর? সব কথা ফুরিয়ে গেছে।ওর মায়ায় নতুন করে আর জড়াতে ইচ্ছে করে না।যে একবার বিনা কারণে, বিনা নোটিশে এরকম হার্ট করতে পারে সে আবারো যে এমন করবে না তার কোনো গ্যারান্টি আছে?”
-“এক্সাক্টলি…. ভালো বুঝো তো তুমি অরু।এইসব কিছুই না বুঝছ? শুধুই আবেগ।”
-“শুধুই আবেগ ভাইয়া? আমার যে ভীষণ কষ্ট হত ওর জন্য।ওর সাথে আর কখনো কথা বলব না আমার জেদের জন্য।তা না হলে,কিভাবে ওকে আমি ইগনোর করতে পারলাম? যাকে কিনা এত বেশি ভালোবাসি..!”
-“অরু….এটা সত্যিই ভালোবাসা না…এটা আবেগ আর অভ্যাস।এই দেখো,এখন কি তোমার ওর জন্য কষ্ট হয় আগের মত?”
-“উহু….হয় না।তবে একটু আগে ওর ফোনটা পাওয়ার পর থেকে প্রচন্ড খারাপ লাগছে।জেদের চোটে কান্না করতে ইচ্ছে করতেছে।ওর চুলগুলো একটা একটা করে ছিড়তে ইচ্ছে করতেছে।”
-“হাহাহা….সেইটাই।এখন কিন্তু তোমার কষ্ট লাগে না ওর জন্য।আসলে,তুমি ওর সাথে কন্টিনিউয়াসলি অনেকদিন কথা বলেছ যেটা তোমার অভ্যাসে পরিনত হয়েছিল।তাই হুট করেই ও যখন চলে গেল তখন সেইটাকে সহজে হজম করতে পারো নি তুমি।তোমার কষ্ট হয়েছে তখন।ডিপ্রেশনে থেকেছ।আর এটাকেই তোমার ভালোবাসা বলে মনে হয়েছে।ভালোবাসা আসলে ঠিক এরকম না। ভালোবাসার অনূভুতি গুলা অন্যরকম হয়।”
-“ঠিক কিরকম?”
-“সেইটা এভাবে বলে বুঝানো যাবে না।যখন কাউকে সত্যিকারের ভালোবাসবে তখন এমনিতেই বুঝতে পারবে।”

অরিত্রীর চোখ মুখ এবার উজ্জ্বল হয়ে উঠল।সতেজ একটা হাসি দিয়ে হৃদয়কে জিজ্ঞেস করল,
-“আচ্ছা,যাকে সত্যিকারের ভালোবাসব তার ঘেমে একাকার হয়ে যাওয়া ক্লান্তিকর মুখটাকেও কি পৃথিবীর সবচেয়ে কিউট মুখ বলে মনে হবে? তার টিশার্টে লেগে থাকা ঘামের বিশ্রি ঘ্রাণ টাকেও কি পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা পারফিউমের ঘ্রাণের চেয়েও মিষ্টি মনে হবে?

হৃদয় অরিত্রীর কথার প্যাচ ধরতে পারল।সেও শয়তানী মার্কা হাসি দিয়ে অরিত্রীর কথার সম্মতিতে বলল যে,
-“হ্যা,এমনটাই হবে।কেন? তোমার অই ছেলের সাথে কি এসবের মিল আছে নাকি?”
-“আরে নাহ……ঘামলে তো ওকে কালা কাউয়ার মত দেখাতো।আমি তো অন্য কাউকে মিন করে বলছি।”
-“অন্য কেউ টা কে? টিকিটিকি?”
-“এখন সে যদি নিজেকে টিকটিকি মনে করে তাহলে তাই।”

দুজনেই একসাথে হেসে উঠল এবার।তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে অরিত্রী হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
-“তোমার ঘামের স্মেলটা জোস লেগেছে আমার কাছে।তার মানে তো আমি তোমাকে ভালোবাসি।সত্যিই ভালোবাসি।”

হৃদয় অরিত্রীর গাল ধরে টেনে দিয়ে বলল,
-“অইসব নিয়ে কখনো মন খারাপ করবে না।ওকে? লাইফ ইজ বিউটিফুল। থাকো এখন….”
-“আরেকটু বসুন না।ভালো লাগছে আপনার সাথে গল্প করতে।”
-“বসতে পারি।তবে এক শর্তে।”
-“কি শর্ত?”
-“এভাবে আপনি আপনি করবে না আমায়।আপনি শুনতে আমার জঘন্য লাগে।তুমি করে বলবে।”

এরকম প্রস্তাবে অরিত্রীর মনে লাড্ডু ফুটলো।তবে সেইটা প্রকাশ না করে বলল,
-“আপনাকে তুমি বলতে লজ্জা লাগবে।”
-“ছোট যখন ছিলা তখন তো ঠিকই তুমি করে বলতা।তখন লজ্জা লাগত না?”
-“ছোট বেলায় তো আমাকে কত কোলে নিয়ে ঘুরেছেন।তাই বলে কি এখন কোলে নিয়ে ঘুরতে পারবেন?”
-“খুব ইচ্ছে আমার কোলে চড়ার?”

অরিত্রী এবার আর কোনো কথা বলল না।ভীষণ লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে লজ্জা মাখানো হাসি দিল একটা।হৃদয় মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো সেই লজ্জাবতীর দিকে।

***

রাত ২:০০….
কাচা ঘুম হঠাৎ করেই ঘুম ভেংগে গেছে হৃদয়ের।ভীষণ ছটফট লাগছে। খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে অরিত্রীর সাথে।ও কি এখন ঘুমিয়ে পরেছে? একবার গিয়ে দেখবে কি ওর রুমে? এত রাতে ওর রুমে যাওয়া কি ঠিক হবে?
ইশ,এখন যদি ওর ফোন নাম্বার থাকত…!! আজ ৪ দিন যাবত ওর সাথে আছে অথচ ওর ফোন নাম্বারটাই নেয়া হয় নি….! মেজাজ প্রচন্ড রকমের খারাপ হচ্ছে হৃদয়ের।
সে মাত্রই অরিত্রীকে নিয়ে ভয়ংকর সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখেছে। স্বপ্নটার বর্ননা যে পর্যন্ত অরিত্রীকে দিতে না পারবে সে পর্যন্ত ওর শান্তি লাগবে না।৭-৫ না ভেবে আগে গেল ওর বাবা-মা এর রুমের দিকে।বাবা-মা দুজনেই ঘুমুচ্ছেন।দেখেই বুঝা যাচ্ছে গভীর ঘুমে মগ্ন।এবার চুপিচুপি অরিত্রীর রুমের দরজার সামনে দাড়ালো।বাবা-মা এর পাশের রুমের অরিত্রী থাকে।দরজায় প্রথমে হালকা করে নক করল।নক করার সাথে সাথেই অরিত্রী চাপাস্বরে বলল,
-“কে?”
-“অরু…আমি হৃদয়। একটু গেট টা খুলো।”

অরিত্রী বেশ অবাক হল।এত রাতে এই রুমে হৃদয়ের কি কাজ?অরিত্রী দরজা খুলে দিতেই হৃদয় ভেতরে ঢুকল।তারপর বলল,
-“এত তারাতারি রেসপন্স করলে যে..!! ঘুমাও নি এখনো..!?”
-“নাহ…একটা ড্রামা দেখছিলাম।তা,এত রাতে তুমি এই রুমে…!?”
-“আসলে তোমাকে নিয়ে একটা ভয়ংকর সুন্দর স্বপ্ন দেখেছি।সেইটা বলার জন্যই আসলাম।আগে তোমার ফোন নাম্বার টা দাও তো।”

অরিত্রী মিষ্টি করে হেসে হৃদয়ের ফোনে ওর ফোন নাম্বার টা তুলে দিল।হৃদয় ফোন টা নিয়ে অমনিই সেই রুম থেকে বের হয়ে যায়।অরিত্রীকে পেছন থেকে ডাকতে গিয়েও ডাকতে পারল না।তার আগেই চলে গেল হৃদয়।অরিত্রী বেশ অবাক হল।কি যেন বলতে এসেছিল;না বলেই চলে গেল…!!
সাথে সাথেই অরিত্রীর ফোন টা বেজে উঠল। Mr Mugdho is calling…..
হৃদয়ের ফোন নাম্বার টা ফুপ্পির ফোন থেকে চুরি করে এনে অরিত্রী মিস্টার মুগ্ধ দিয়ে সেভ করে রেখেছে।যার প্রতিটা বিষয়ই ওকে মুগ্ধতার চরম পর্যায়ে নিয়ে যায় তাকে তো মিস্টার মুগ্ধ বলেই ডাকা উচিত।
কল টা রিসিভ করতে করতে বিছানায় আয়েশ করে বসল।হৃদয় বলতেছে,
-“কি স্বপ্নে দেখেছি জানো?”
-“জানি নাহ।বলেন”
-“তোমার জন্য আমি কোনো এক জায়গায় অপেক্ষা করতেছি।তুমি আসতে বেশ লেট করতেছ। বেশ খানিক্ষন পর তুমি আসলে একটা ধবধবে সাদা সালোয়ার কামিজ পরে।তোমাকে একদম সাদা পরীর মত লাগছিল।তুমি আসতেই আমি তোমার কাছে গিয়ে তোমার আংগুলে একটা আংটি পড়িয়ে দেই।আংটি পড়ানোর সাথে সাথে তুমি আমার বুকে ঝাপিয়ে পরলে। আমিও তোমাকে জড়িয়ে ধরলাম অনেক শক্ত করে।মনে হচ্ছিল একদম কলিজার ভেতর ঢুকিয়ে ফেলি তোমাকে।”

অরিত্রী বেশ অবাক হল হৃদয়ের স্বপ্নের বর্ননা শুনে।তারপর আগে পিছে কিছু না ভেবে ঝটপট বলে ফেলল যে,
-“তার মানে হয়তো বা আমি তোমার বউ হব।হাহাহা”
-“সিরিয়াসলি?”
-“ভাগ্যে থাকলে হব না?”
-“ভাগ্যে কি আছে আদৌ?”
-“হয়তো বা আছে…হয়তো বা নেই।হাহাহা”
-“আচ্ছা,ভাগ্যে থাকলে কি তুমি খুশি হবে অরু?”
-“হয়তো বা হব…হয়তো বা হব না।”
-“”এভাবে বলছ কেন মিস গুলগুলি? স্বপ্নে এসে আমার ঘুমটা তো হারাম করে দিলে।ঘুমাবো কিভাবে এখন?”
-“এক কাজ কর,মাথার নিচে বালিশ না দিয়ে মাথার উপরে বালিশ দিয়ে শোও।দেখবে,ঘুম একাই আসবে।হাহাহ”
-“তুমি আমাকে যখন তুমি করে বল তখন কতটা কিউট লাগে শুনতে জানো?”
-“হ্যা জানি…তোমার বউ বউ লাগে।তাই না?”
-“এক্সাক্টলি ডিয়ার।”
-“তবে,তোমার পাশে আমার মত মেয়ে একটু বেমানান।তোমার পাশে আমার চেয়ে বেটার কাউকে চাই। আরো অন্নেক বেশি কিউট একটা মেয়ে চাই।তবেই পারফেক্ট জুটি হবে।”

অরিত্রীর কথা শুনে হৃদয় হাসল।তারপর বলল,
-“তোমার কি নিজেকে অসুন্দরী মনে হয়?”
-“উহু…অসুন্দরী না….তবে তোমার বউ হওয়ার মত সুন্দরীও না।তুমি অন্নেক বেশি কিউট।আর তুমি দেখতে যতটুকু কিউট তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি কিউট তোমার পারসোনালিটি। আই লাভ ইট মিস্টার।”
-“তুমি সবসময়ই আমার ব্যাপারে একটু বাড়িয়েই প্রশংসা কর অরু।আমার লজ্জা লাগে।”
-“তোমার মত লজ্জাশীল পুরুষ আমি একটাও দেখি নি।হাহাহা”

এভাবে এক কথা,দুই কথায় অনেক কথা বলে ফেলে সেই রাতে দুইজন।ওদের কথাবার্তায় বুঝার উপায় নেই ওরা প্রেমিক-প্রেমিকা নাকি কাজিন।দুজন খুব ভালো করেই বুঝত তারা একে অপরকে পছন্দ করে।কিন্তু তবুও মুখ ফুটে কেউ একদম সরাসরি ‘ভালোবাসি’ শব্দটা উচ্চারণ করে নি।অরিত্রীর বার বার বলতে ইচ্ছে করত,”হৃদ…আমি তোমার হতে চাই।সারাজীবন তোমার খোলা বুকে মাথা রেখে বুকের লোমের সুড়সুড়ি খেতে চাই।দাও না একটা সুযোগ।বড্ড ভালোবাসতে শুরু করেছি তোমায়।”
কিন্তু এসব মুখ ফেটে বলার সাহস হত না অরিত্রীর।পাছে যদি সে না করে দেয়?নিজেকে বার বার হৃদয়ের অযোগ্য মনে হত।তাই বলার সাহস হয়ে উঠত না।

তবে,সময় যত আগাচ্ছিল ততই হৃদয়ের প্রত্যেকটা ব্যাপার ওকে ক্রমশই মুগ্ধতার চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছিল।হৃদয়ের কথাবার্তা, ওর হাসি,ওর চাহনী,ওর পারসোনালিটি সবকিছুই অরিত্রীকে ওর প্রতি মুগ্ধ হয়ে বাধ্য করত।অরিত্রী হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলত,
-“এই যে মিস্টার মুগ্ধ…? এত বেশি মুগ্ধ করতেছেন কেন আমায় বলুন তো? এত্ত মুগ্ধতার রেশ তো আমি কাটিয়ে উঠতে পারছি না।”

দেখতে দেখতে হৃদয়ের চলে যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসল।আজ সকালেই ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে হবে।অরিত্রী কিচ্ছু ভালো লাগতেছিল না।ফুপা ফুপ্পি ৮ টার দিকেই কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে।উনারা বাসা থেকে বের হওয়ার পর অরিত্রী হৃদয়ের জন্য নুডুলস রান্না করতে লাগল।নুডুলস যে হৃদয়ের সবচেয়ে বেশি পছন্দের।আচ্ছা,স্পেশালি আর কি করা যায় হৃদয়ের জন্য?
হ্যা,ডিমের শামী কাবাব….অরিত্রীদের বাসার সবাই ওর হাতের ডিমের শামী কাবাব বেশ পছন্দ করে।এই অল্প সময়ের মধ্যে এটাই বেটার হবে।

ও ঝটপট ৪টা ডিম আর ৩ টা বড় সাইজের আলু সিদ্ধ করে নিল।
তারপর এক কাপ পরিমান ভেশন হালকা একটু তেল দিয়ে ভালোভাবে ভেজে নিল।
তারপর কিছুটা পেয়াজ, মরিচ কুচি আর ধনেপাতা পরিমানমত লবণ দিয়ে ভালোভাবে কচলে নিয়ে সেখানে আদা-রসুনের পেস্ট, ভেজে নেয়া শুকনা মরিচের গুঁড়ো,পরিমাণমত কাবাব মশলা দিয়ে আবারো ভালোভাবে কচলে নিল।
এরপর সেগুলোর সাথে ভেজে রাখা ভেশন, সিদ্ধ করা ডিম আর আলুগুলো একসাথে করে ভালোভাবে ভর্তার মত করে মাখিয়ে নিল।ভালোভাবে মাখিয়ে নেয়ার পর সেগুলোকে একটা একটা করে কাবারের সেপ দিতে লাগল।তারপর ২টা ডিম ভালোভাবে ফেটিয়ে নিল।
একটা প্যানে বেশ খানিকটা তেল গরম করে একটা একটা করে কাবাব সেই ফেটিয়ে রাখা ডিমের মধ্যে চুবিয়ে চুবিয়ে ডুবো তেলে ভাজতে লাগল।
১০ টা বেজে গেছে।অরিত্রী তারাহুরো করতে লাগল।কিচেনে এসে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।হৃদয় উঠার আগেই ফ্রেশ হওয়া লাগবে।এই অবস্থায় হৃদয়ের সামনে কিছুতেই যাওয়া যাবে না।ঝটপট কাবাব গুলা ভেজে নিয়ে নুডুলস আর কাবাব গুলো টেবিলের উপর গিয়ে রেখে দিয়ে নিজে ফ্রেশ হতে গেল।অইদিকে হৃদয় ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ আগেই ওয়াশরুমে গিয়েছে।অরিত্রী ঝটপট অন্য ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুলগুলো চিড়ুনি করে নিল।
ওদিকে হৃদয় ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে জামা-কাপড় পরে রেডি হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে যখন চুলগুলো ঠিকঠাক করছিল তখন হৃদয়ের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অরিত্রী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না।ওর বার বার মনে হচ্ছিল যে,আজ যদি হৃদয়কে সরাসরি কিছু বলতে না পারে তাহলে সারাজীবনের জন্য হৃদয়কে হারাতে হবে।তাই সাত-পাচ না ভেবে প্রথমবারের মত হৃদয়ের বুকে ঝাপিয়ে পরে ‘ভালোবাসি’ শব্দটা উচ্চারণ করেছিল অরিত্রী।
ওদের প্রেমের চূড়ান্ত যাত্রা এখান থেকেই শুরু হয়েছিল।রিকশায় বসে হৃদয়ের কাধে মাথা রেখে সেসব কথাগুলো ভাবতে ভাবতে গায়ে শিহরণ দিয়ে উঠছিল অরিত্রীর।ডান হাত দিয়ে অরিত্রীর ডান হাত শক্ত করে চেপে ধরেছে হৃদয়। আর বাম হাত টা দিয়ে অরিত্রীর কাধ জড়িয়ে ধরেছে যাতে পরে না যায়।এই মুহুর্তে অরিত্রীর নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে।অরিত্রীর মনে হচ্ছে সময়টা এখানেই থেমে যাক।

হঠাৎ করেই আবার অরিত্রীর মনটা খারাপ হয়ে গেল।ভীষণ কান্না পেতে লাগল ওর।হৃদয়ের হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরে ডাকল হৃদয়কে,
-“হৃদ?”
-“হ্যা বল।”
-“ফুপা ফুপ্পি পরবর্তীতে যদি বিয়েটা মেনে না নেন?”

চলবে ইন-শা-আল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here