শুভদিন (পর্ব-০৫)

0
1442

শুভদিন (পর্ব-০৫)
লিখাঃ সুমাইয়া বিনতে আব্দুল আজিজ

সাধারণত টুইনদের চেহারায় মিল থাকলেও কোথাও না কোথাও একটা অমিল থাকেই যেটা দিয়ে তাদের আলাদা আলাদা করে চিহ্নিত করা যায় যে কে কোনটা।
কিন্তু অরিত্রী, আরশির ক্ষেত্রে সেই চিহ্নিত করার উপায় টুকু পর্যন্ত নেই।দুজনের হুবুহু একরকম…বিন্দুমাত্র পার্থক্যও নেই।ছোট বেলা এই ব্যাপার টা নিয়ে সবাই কনফিউজড হয়ে পরত।কিন্তু বড় হওয়ার পর দুইজন দুই লেবাসধারী হওয়ার পর তাদের মধ্যে পার্থক্যটা কৃত্রিম ভাবে সৃষ্টি হয়েছে।
বালেগ হওয়ার পর থেকেই আরশি নিজের মধ্যে,নিজের লেবাসের মধ্যে চেঞ্জ আনার চেষ্টা করেছে।আল্লাহর রহমতে শুরু থেকেই নিজেকে পর্দার ভেতর রাখার চেষ্টা করেছে।নামাজ তো সেই ছোট বেলা থেকেই পরার অভ্যাস।
ওদের বয়স যখন ৭ বছর;তখন আহসান আলম ওদের দুইবোনের জন্য দুইটা ছোট জায়নামাজ এনে দিয়েছিলেন।সেই জায়নামাজে প্রতি ওয়াক্তে আরশি ওর দাদির সাথে নামাজ পরত।নামাজের সূরা,ছানা কিছুই পারত না।শুধু ফিসফিস করে আল্লাহ আল্লাহ করত,ফিসফিস করে বানিয়ে বানিয়ে গজল গাইতো।দাদি যখন রুকুতে যেতো দাদিকে অনুকরণ করে আরশিও তখন রুকুতে যেত,দাদি সিজদায় গেলে আরশিও সিজদায় যেতো।

একবার ওদের দাদি ওদের দুইবোনকে একটা গল্প শুনিয়েছিল।গল্প টা এখনো আবসা আবসা মনে আছে আরশির।গল্পটা এরকম ছিল যে,,

“রাসূল (সঃ) এর বড় মেয়ে কুলসুম (রাঃ) ছিলেন অনেক বড়লোক।কিন্তু রাসুল (সঃ) এর ছোট মেয়ে ফাতেমা (রাঃ) ছিলেন অনেক গরীব।ফাতেমা (রাঃ) গরীব থাকায় কোনো এক অনুষ্ঠানে কুলসুম (রাঃ) তার ছোট বোন ফাতেমা (রাঃ) কে অহংকার বশত দাওয়াত দেন না।তিনি ভাবেন যে,ফাতেমা (রাঃ) গরীব।সে এত বড়লোকের এরকম অনুষ্ঠানে আসার সামর্থ রাখে না।কিন্তু পরে দেখা গেল যে,অনুষ্ঠানের সব খাবার হঠাৎ করেই পাথরে পরিনত হল..! কুলসুম (রাঃ) তো চিন্তায় অস্থির হয়ে গেলেন।এরকম কেন হল? এবার তিনি এতগুলা মেহমানকে কিভাবে আপ্যায়ন করবেন…!? তো,অবশেষে কেউ একজন তাকে বলল যে,একমাত্র ফাতেমা (রাঃ)-ই পারবেন এই খাবার গুলোকে পাথর থেকে পুনরায় খাবারে পরিনত করতে।মূলত,ফাতেমা (রাঃ) কে এই অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেয়ায় আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়ে এরকম শাস্তি দিচ্ছেন।
কুলসুম (রাঃ) লজ্জিত এবং অনুতপ্ত হয়ে ফাতেমা (রাঃ) এর বাড়িতে ছুটে গেলেন।তারপর তার কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে অনুরোধ করলেন অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য।ফাতেমা (রাঃ) কুলসুমকে একটু অপেক্ষা করতে বললেন।তারপর ফাতেমা (রাঃ) নামাজে দাড়ালেন।তার ভালো কোনো কাপড় ছিল না।তাই সিজদায় গিয়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে দুয়া করলেন যে,তাকে এমন একটা কাপড়ের ব্যবস্থা করে দেয়া হয় যেটা পরে তিনি সেই অনুষ্ঠানে যেতে পারবেন।
তারপরে নামাজ শেষে জায়নামাজ উঠাতেই জায়নামাজের নিচে একটা শাড়ি পেলেন।স্বয়ং আল্লাহ এই শাড়ি জান্নাত থেকে ফাতেমা (রাঃ) এর জন্য পাঠিয়েছেন।”

যদিও এইসব গল্পগুলো বানোয়াট, ভিত্তিহীন।এইটা আরশি বড় হওয়ার পর ইসলামিক স্ট্যাডি করে জানতে পেরেছে।কিন্তু জানার আগে মানে যখন ও ছোট তখন তো এসব ঠিকই বিশ্বাস করত।
তো,এই গল্প শোনার কয়েকদিন পর একদিন ওর প্রচন্ড ভাপা পিঠা খেতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু এখন ভাপা পিঠা কে বানিয়ে দেবে? তখন মনে পরল অই গল্পের কথা….অজু করে নামাজে বসে পড়ল।সিজদায় গিয়ে ভাপা পিঠা চাইলো আল্লাহর কাছে।গল্পের ফাতেমা (রাঃ) এর মত নামাজ শেষে জায়নামাজ টা উঠালো। ভাবলো জায়নামাজের নিচে নিশ্চয়ই ভাপা পিঠা আল্লাহ জান্নাত থেকে পাঠিয়ে দিয়েছেন! কিন্তু জায়নামাজ উঠিয়ে কোনো পিঠাই সে পেল না।মনটা প্রচন্ড রকমের খারাপ হয়ে গেল।মন খারাপ করে দাদির কাছে গিয়ে এইসব বলতেই দাদি হাসতে হাসতে অস্থির…! পুরো বাসায় এই কাহিনি তিনি ছড়িয়ে দিলেন।সবাই সে কি হাসাহাসি এইটা নিয়ে…! অইরকম বোকামির কথা মনে পরলে এখনো আরশির প্রচন্ড হাসি পায়।

আর অরিত্রী?
ছোট বেলা থেকেই বাংলা সিনেমার প্রচন্ড ভক্ত।আদিম যুগের কমলার বনবাস,ঝিনুক মালার মত বিখ্যাত বাংলা ছবি সে দেখতে দেখতে মুখস্থ করে ফেলেছে।শুধু আদিম যুগের সিনেমার ভক্তই যে শুধু তা না….আধুনিক সিনেমাও তার প্রচন্ড রকমের পছন্দ।পছন্দের নায়ক সাকিব খান….ইন্ডিয়ান অভিনেতা দেব,জিৎ-এর পাগল ভক্ত সে।হিন্দি সে বুঝে না…কোনোভাবেই তার মাথায় ঢুকে না।তাই হিন্দি সিনেমা দেখেও না।দেখলে নিশ্চয়ই সেখানেও একগাদা হিরোর ভক্ত হত সে।

ছোট বেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল নায়িকা হওয়া।নায়িকা কোয়েল মল্লিক ছিল তার আইডল।কোয়েল মল্লিকের হাসি,কথা বলার স্টাইল,কান্না সব কপি করার চেষ্টা করত সে।

সে স্বপ্ন দেখত,কোনো একদিন সাকিব খানের সাথ,দেব,জিৎ এর সাথে দেখা হবে।সে তাদের জড়িয়ে ধরবে,তারা অরিত্রীকে নায়িকাদের মত কোলে নিয়ে ঘুরবে।তাদের কেউ একজন তাদের বিয়ের প্রপোজাল দিবে। সে তার স্বপ্নের হিরোর বউ হবে।আরো কত কি….!!
এইসব চিন্তাভাবনার কথা এখন মনে আসলে একা একাই হাসে অরিত্রী।এখন আগের মত অইসবের প্রতি এত ঝোক নেই।এর পেছনে অবশ্য একটা কারণও আছে।

অরিত্রী আরশি যখন ক্লাস নাইনে পড়ে তখন সিনেমার হিরো+মিডিয়া জগতের অন্যান্য লোকদের প্রতি এত ভালোবাসা দেখানো,এত বাড়াবাড়ি করা দেখে একদিন আরশি অরিত্রীকে বলল,
-“অরু..?? একটা কাহিনি শুনবি?”
-“কিসের কাহিনি?”
-“শুনেই দেখ?”
-“আচ্ছা বল।”
-“খুব মন দিয়ে শুনবি।ওকে?”
-“ওকে রে বাবা…বল।”

আরশি বলতে শুরু করল,
-“একদিন এক লোককে সাথে নিয়ে নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলেন।এমন সময় অন্য এক লোক এসে আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন,কেয়ামত কখন হবে?
নবী (সাঃ) লোকটিকে বললেন,তুমি তার জন্য কি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ?
এতে লোকটি যেন কিছুটা লজ্জিত হল। লোকটি বলল,সাওম সালাত ও সদাকাহ খুব একটা করতে পারিনি তবে আল্লাহ্‌র ও রাসুলকে খুব ভালোবাসি।
আল্লাহ্‌র রসুল (সাঃ) উত্তর দিলেন, তুমি যাকে ভালোবাসো তারই সাথে তুমি থাকবে।”

এইটুকু বলে আরশি থামল।তারপর অরিত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“এখানে তারই সাথে তুমি থাকবে বলতে কিয়ামত দিবসে তার সাথে থাকার কথা বলা হয়েছে।কিছু ঢুকেছে মাথায়? মানে তুই যাকে ভালোবাসবি তার সাথেই থাকবি কিয়ামতের দিন”

অরিত্রীর চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।সে খুশি হয়ে বলল,
-“তার মানে,আমিও কিয়ামতের দিন রাসুল(সঃ) এর সাথে থাকব।আমিও তো তাকে ভালোবাসি।”
-“তোর কাজ কর্ম,চলাফেরায় মনে তো হয় না তুই আল্লাহ,তার রাসুল (সঃ) কে ভালোবাসিস।সারাক্ষণ তো সাকিব খান,দেব,জিৎ আর তাদের মুভি নিয়ে পরে থাকিস।”
-“তাতেই বা কি?এই জীবনে আমার এই হিরোদের দেখা না পেলেও কিয়ামতের দিন ঠিকই পাবো দেখা..! এটাই বা কম কিসের…! ইশ,আমার যে কি ভালো লাগছে রে…!”

এটা বলতে বলতে আরশিকে অরিত্রী জড়িয়ে ধরতে আসল।আরশি বিরক্তির সাথে ওকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে দিতে বলল,
-“মাথা টা তোর একবারেই গেছে রে অরু।”

অরিত্রী এবার অসহায় চোখে আরশির দিকে তাকালো।আরশি বলল,
-“কাহিনি টা বুঝলে এভাবে খুশি হতে পারতি না।কিয়ামতের দিন অইসব হিরো ফিরো,মিডিয়ার লোকদের স্থান হবে জাহান্নামে।কিয়ামতের মাঠে তারা দন্ডায়মান হবে অবিশ্বাসীদের সাথে,কাফের-মুনাফিকদের সাথে।এখন তাদের ভালোবেসে তুইও যদি সেই কাফের-মুনাফিকদের সাথে দন্ডায়মান হস তাহলে ফাইনালি তোর স্থান কোথায় হবে ভেবে দেখেছিস? জাহান্নামে…”

অরিত্রী চিন্তিত ভংগীতে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আরশির কথা শুনছে।আরশি আবার বলল,
-“সেজন্যই বলি কি অরু…এসব বাদ দে এবার।সময় এখনো আছে।একবারে বাদ দিতে না পারলে আস্তে আস্তে কমাতে থাক।একসময় দেখবি পুরোপুরি বাদ দিতে পেরেছিস।শোন,ভালোবাসার ক্ষেত্রেও দেখেশুনে ভালোবাসবি।এমন কাউকে ভালোবাসিস না যে তোর জাহান্নামের কারণ হয়।বুঝেছিস?”

অরিত্রী এবার কোনো কথা বলল না।বিষন্ন মুখে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে বারান্দায় এসে দাড়ালো।হয়তো অরিত্রীর কথাগুলো ওর মনে ধরেছে।তারপর থেকে এসব নিয়ে মাতামাতি আগের তুলনায় একটু কমই করে।

আরশি অনেক ট্রাই করে অরিত্রীকে নামাজী,পর্দাশালী বানানোর।কিন্তু সেসব কি আর ওর হাতে? ও চাইলেই কি অরিত্রীকে সৎ পথে আনতে পারবে? কখনোই না….আল্লাহ তো সূরা কাসাসে স্পষ্টই বলে দিয়েছেন,”আপনি যাকে পছন্দ করেন তাকে সৎ পথে আনতে পারবেন না,তবে আল্লাহ তা’য়ালাই যাকে ইচ্ছা সৎ পথে আনেন।এবং তিনিই জানেন কে সৎ পথের অনুসারণকারী।”

আরশির মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগে এটার জন্য যে এত ও প্রানপ্রিয় কলিজার টুকরা, ওর বোনকে সৎ পথে আনতে পারছে না।আল্লাহ ওকে হেদায়েত দিচ্ছে না।ও প্রতিবার নামাজের সময়ই অরিত্রীর জন্য দুয়া করে।দুয়া কবুল হয় না কেন কে জানে..!?
অবশ্য আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী। তিনি কোথায়,কবে কবে অরিত্রীর হেদায়েত পাবার কথা ঠিক করে রেখেছেন সেইটা তিনিই ভালো জানেন।

***

বাসায় ফিরতে ফিরতে ২ টা বেজে গেল অরিত্রীর।আজকের দিনের মত এত ভালো দিন ওর লাইফে আগে কখনো আসেও নি আর ভবিষ্যতেও বুঝি আসবে না।মনের সুখে জোরে জোরে গান গাইতে গাইতে বাসায় ঢুকছে অরিত্রী,

“আমার পরান যাহা চায়,
তুমি তাই তুমি তাই গো…
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো…
তুমি সুখ যদি নাহি পাও,
যাও, সুখের সন্ধানে যাও,
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে-
আর কিছু নাহি চাই গো…
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন,
তোমাতে করিব বাস-
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী,
দীর্ঘ বরষ মাস ।
যদি আর-কারে ভালোবাস,
যদি আর ফিরে নাহি আস,
তবে তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও-
আমি যত দুখ পাই গো….”

“ওরে আল্লাহ গো…..গেট টা খুলে না ক্যান কেউ? বাসায় কি কেউ নাই? ও মা? আশুউউউউউ?”

সেই কখন থেকে গান গাইতে গাইতে কলিং বেল বাজিয়ে যাচ্ছে…কারো খুলার নাম নেই।সবাই কই গেল? এবার দাদিকে ডাক দিল,
-“ও দাদিইইইই? গেট টা খুলো না।”

দাদিও আসল না।অবশেষে আসল ওর ছোট ভাই আদিল।আদিল এবার ক্লাস সিক্সে পড়ে।সৎ ভাই হলেও অরিত্রী,আরশির খুব ভক্ত সে।গেট খুলেই বলতেছে,
-“মা বলেছিল তোমাকে বাসায় ঢুকতে না দিতে।”
-“সেজন্যই কেউ গেট খুলছিল না?”
-“হ্যা।”

মা এবার সামনে এসে দাড়ালো….হাতে খুন্তি।মা বললেন,
-“তুই নাকি তোর নাগরের সাথে ঘুরতে গেছিলি? তোর বাপে নাকি তোরে তোর নাগরের সাথে রিকশায় তুকে দিয়ে আসছে?”

অরিত্রীর মাথায় কিছু ধরছে না।বাবা কি তাহলে বিয়ের কথা বাসাত জানিয়ে দিয়েছে? কিন্তু আরশি যে বলল,এখন এসব কাউকে জানাবে না।তাহলে মা এসব জানল কিভাবে? অরিত্রী কনফিউজড হয়ে যাচ্ছে!

ওদিকে আহসান আলম আর আরশি দুইজনে দুই ওয়াশরুমে ঢুকেছে গোসল করার জন্য।কেউ বাইরে নেই যে অরিত্রীকে এই মুহুর্তে হ্যান্ডেল করবে।অরিত্রী বুঝতেছে না মাকে কি বলবে।মা আবারো ধমকের সুরে বললেন,
-“তোর কলেজ শেষ হওয়ার কথা ১ টার দিকে।এখন ২ টার বেশি বাজে।কলেজ থেকে বাসা অবদি আসতে ১০ মিনিট সময় লাগে।এখন সত্যি করে বল কই ছিলি?”

ভয়ে অরিত্রীর মুখটা শুকিয়ে গেছে।চোর ধরা পরলে যেরকম অবস্থা হয় ওর-ও সেরকম অবস্থা হচ্ছে।ও ওর ভেতরের বাঘিনী টাকে বের করে এনে মায়ের কথার বাকা একটা জবাব দিতে ইচ্ছে করতেছে।কিন্তু ও পারতেছে না।তবে ওকে পারতেই হবে।কোনোরকমে এই যাত্রায় পাড় পেলেই হল।পরে আরশির কাছ থেকে সব জানা জানে।বাবা,আরশি ওদের কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।মেজাজ খারাপ হচ্ছে।মা আবারো ধমক দিলেন।
-“কিরে….বোবার মত চুপ করে আসিস কেন…!?”

অরিত্রী এবার মেজাজ দেখিয়ে বলল,
-“মাত্রই বাইরে থেকে ফিরলাম মা।সর তো…ভেতরে যেতে দাও।”

অরিত্রী মাকে সরিয়ে ভেতরে ঢুকতে গেলে মা ওকে পেছন থেকে টেনে ধরেন,
-“তোর সাহস দিন দিন বাড়ছে তাই না? কথায় কথায় মেজাজ দেখাস আমার সাথে?”
-“মা….একটু কাজ ছিল বাইরে।কাজ টা শেষ করে ফিরতে ফিরতে লেট হয়ে গেছে।”
-“কি কাজ? নাগরের সাথে ফষ্টিনষ্টি করার কাজ?”
-“হ্যা…তাই।নাগরের সাথে ফষ্টিনষ্টি করার কাজ করতে গিয়েছিলাম।শুনেছ? এবার ছাড়ো।যেতে দাও আমাকে।”

এটা বলেই হেচকা টান দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে কোনোরকমে রুমের ভেতরে ঢুকে গেল অরিত্রী।একবারো পেছন দিকে তাকালো না।তাকালে দেখতে পারত কিভাবে অগ্নি দৃষ্টিতে হুমাইরা জাহান ওর দিকে তাকিয়ে শাপের মত ফুসতেছে।রুমে ঢুকে অরিত্রী যেন হাফ ছেড়ে বাচল।আরশিকে ডাকতেই আরশি ওয়াশরুমের ভেতর থেকে জবাব নিল।

অরিত্রী জামা কাপড় না ছেড়েই দরজা অফ করে ফ্যান টা অন করে বিছানায় শুয়ে পরল।ডাটা অন করতেই মেসেঞ্জারে কয়েকটা নোটিফিকেশন আসল Mr Mugdho send you a photo….
ভেতরে গিয়ে ছবিগুলো দেখে অরিত্রীর ঠোঁটের কোণে বিস্ময়ের সাথে হাসি ফুটে উঠল।ছবিগুলো হৃদয় কখন তুলেছে সেইটা অরিত্রী জানেই না।রিকশায় হৃদয়ের হাতটা ধরে হৃদয়ের বাম কাধে মাথা রেখে চোখ অফ করে শুয়ে আছে অরিত্রী।চুলগুলো এলোমেলো ভাবে বার বার মুখের উপর চলে আসছে।আর হৃদয় তাকিয়ে আছে ক্যামেরার দিকে।
এরকম ৩-৪ টা ছবি।ওদের দুজনের একসাথে তুলা ছবি এটাই প্রথম।এর আগে কখনো একসাথে ছবি তোলা হয় নি।ছবিগুলো দেখতে দেখতেই ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ পেল অরিত্রী।আরশি বের হচ্ছে…অরিত্রী তড়িঘড়ি করে আরশির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল যে,
-“অই…বাবা কি আমাদের বিয়ের কথা বাসায় সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে?”
-“আরে নাহ।”
-“তাহলে মা জানল কিভাবে?”

পরে মা কিভাবে কি বলছে সবটা আরশিকে খুলে বলল অরিত্রী আরশিও হাসতে হাসতে অরিত্রীকে বুঝিয়ে বলল বাবা কিভাবে কি বলেছে মাকে।অরিত্রী যেন হাফ ছেড়ে বাচল।

আরশি তারাহুরো করে নামাজ পরতে দাড়ালো।এমনিতেই আজ লেট হয়ে গেছে।বিলম্বে সালাত আদায়কারীদের ব্যাপারে ভয়াবহ দুঃসংবাদের কথা আল্লাহ কুরআনে জানিয়ে দিয়েছেন।

অরিত্রী আবার বিছানায় ফোন হাতে নিয়ে শুয়ে পড়ল।এমন সময় হৃদয় ফোন করল,
-“অরু…আজ আসি আমি তোমাদের বাসায়?”
-“সেকি…!! তুমি এখানো টাংগাইলে? ময়মনসিংহ যাবে না?”
-“নাহ…..আজ তো আর ময়মনসিংহ যাব না।তোমাদের বাসায় না গেলে সরাসরি ভার্সিটিতে চলে যাব।”
-“সত্যিই আসবে আমাদের বাসায়?” বিস্মিত হয়ে বলল অরিত্রী।
-“বা রে…. বিয়ের রাতে বউকে ছেড়ে দূরে থাকব নাকি? আবুল নাকি আমি?”

লজ্জায় লাল হয়ে অরিত্রী বলল,
-“এমনি তো আসোই না আমাদের বাসায়।এত বছর পর হুট করে আসবে….বাসায় সবাই যদি কিছু ভাবে? বাসায় সবাই যদি….”

হৃদয় থামিয়ে দিয়ে বলল,
-“আমি আমার মামার বাসায় যাব…এখানে এর ভাবাভাবির কি আছে?”
-“উম্ম…সেটাও ঠিক।”
-“হ্যা…কেউ কিছু বললে বলব যে,এক দরকারে টাংগাইল আসছিলাম তাই ভাবলাম মামার বাসার এক রাত থেকে যাই।ব্যস…!!”
-“তাহলে এক কাজ কর,বাবাকে ফোন করে বল তোমাকে গিয়ে নিয়ে আসতে।”

হৃদয় ফোন রেখে দিল।অরিত্রী বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে খুশিতে এলোপাথাড়ি নাচানাচি শুরু করে দিল।লুকিয়ে লুকিয়ে বাসর টা কি আজ সেরেই ফেলবে ওরা? ভাবতেই গায়ে শিহরণ দিয়ে উঠল ওর..!

চলবে ইন-শা-আল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here