শুভ্রমেঘের_ভালোবাসা,পর্বঃ৫(অন্তিম পর্ব)

0
1959

শুভ্রমেঘের_ভালোবাসা,পর্বঃ৫(অন্তিম পর্ব)
Saiyara_Hossain_Kayanat

রুম থেকে বের হয়েই দেখলাম সানিয়া আর হাবিবা আম্মুর সাথে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। এই মেয়ে দুইটা আমার থাকে বেশি আমার আম্মুর সাথেই ফ্রেন্ডলি। মাঝে মাঝে তো আমি বুঝতেই পারিনা ওরা আমার ফ্রেন্ড নাকি আম্মুর!! কিন্তু ওরা দুজন সকাল সকাল আমার বাসায় কি করছে!!

আমি ওদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-

—”আম্মু এভাবে সকাল সকাল চেচিয়ে ডাকলে কেন? আর ওরা এখানে কি করে??”

হাবিবা আমার কাছে এসে বললো-

—”কিছুক্ষণ পর মেহমান আসবে তাই তোকে আন্টি ডেকে ঘুম থেকে তুলছিল। আর আন্টিই আমাদেরকে এখানে ফোন করে আসতে বলেছে।”

—”কিন্তু কেন? আর কোন মেহমান আসবে?? আমি তো কিছুই জানি না।”

সানিয়া কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে বললো-

—”উফফ অনন্য এতো প্রশ্ন কেন করছিস!! রুমে চল তোকে সব বলছি।”

আমি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ওদেরকে নিয়ে রুমে চলে আসলাম। ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম-

—”এখন বল কাহিনি কি…”

—”কিছুক্ষণ পর তোকে দেখতে আসবে তাই জলদি রেডি হয়ে নে।”

হাবিবা খুব শান্ত গলায় বললো কথাটা। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। হঠাৎ করে এসবের মানে কি!! আমি নিজেকে সামলিয়ে বললাম-

—”হঠাৎ করে দেখতে আসবে মানে কি?? আমাকে তো কেউ এই ব্যাপারে কিছু বলেনি। তোরা কি মজা করছিস আমার সাথে!!”

সানিয়া আমার কাছে এসে বললো-

—”তোর কি মনে হয় আমরা মজা করছি!! ছেলে বেশ ভালো মানুষ আর ভালো চাকরিও করে তাই আংকেল আন্টি রাজি হয়ে গেল। আর তোকে ওনারা এসে পছন্দ করলে আজকেই কাবিন করে ফেলবে বলেছে।”

—”কিইইইই আজকেই বিয়ে??? এটা কেমন কথা চিনি না জানি না একটা অচেনা লোককে বিয়ে করে ফেলবো পাগল না-কি আমি!!”

কিছুটা চেচিয়ে কথাটা বললাম। হাবিবা আমার কথা পাত্তা না দিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বললো-

—”এখন বেশি কথা না বলে যা রেডি হয়ে আয়। আন্টি একটা শাড়িটা দিয়েছে ওটা পরে আয় আমরা তোকে সাজিয়ে দিবো।”

ওদের জোরাজোরিতে বাধ্য হয়ে রেডি হয়ে গেলাম। নীল রঙের শাড়ি পরিয়ে আমাকে হাল্কা সাজিয়ে দিল হাবিবা। খুব অস্বস্তি লাগছে হঠাৎ করে এমন কিছু হয়ে যাবে কখনো ভাবিনি। কিছুক্ষণ পরই হাবিবা আর সানিয়া আমাকে বাহিরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসলো। ছেলে পক্ষ না-কি এসে পরেছে। আমার ফ্রেন্ড গুলা এতো সহজেই সব মেনে নিচ্ছে আমার কোনো কথার পাত্তাই দিচ্ছে না।ওদের সাথেই মাথা নিচু করে হেটে যাচ্ছি ড্রয়িং রুমের দিকে। অস্বস্তি যেন ঝেকে বসেছে আমার উপর। ড্রয়িং রুমে এসে মাথা তুলে সোফায় বসে থাকা মানুষ গুলোকে দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে গেলাম। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছি সামনের দিকে শুভ্র আর ওনার আব্বু আম্মু হেসে হেসে কথা বলছে আব্বুর সাথে। শুভ্রকে দেখে প্রচন্ড অবাক হলেও একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।

————————

পরন্ত বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর শুভ্র। কিছুক্ষণ আগেই আমার মতামত নিয়ে ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা সম্পূর্ণ হলো। সকালে আমাকে দেখে যাওয়ার পর আমাকে সময় দিয়েছিল এবিষয়ে ভাবার জন্য। আমি আর এবার ওনাকে প্রত্যাখান করতে পারিনি। আমি বিকেলে আমার মতামত জানানোর আধা ঘণ্টার মধ্যেই কাজি এনে বিয়ে পরিয়ে দিল। তবে আমার পড়াশোনা শেষ হওয়ার পরই বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।

শুভ্র আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললেন-

—”দেখলে তো আমি আমার কথা রেখেছি। আর বিরক্ত করিবো না এইসব প্রেম ভালোবাসার জন্য তাই তোমাকে ডিরেক্ট বিয়ে করে ফেললাম। এখন নিশ্চয়ই নিজের স্বামীকে ভালোবাসতে কোনো আপত্তি নেই তোমার।”

আমি কিছু বললাম না আকাশের দিকে তাকিয়েই একটা মুচকি হাসি দিলাম। উনি আমার পাশে এসে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বললেন-

—”ভালোবাসি মেঘ। ভালোবাসবে আমাকে?? আজ প্রেমিকা হিসেবে না নিজের বউয়ের কাছে ভালোবাসার দাবী করছি। নিশ্চয়ই ফিরিয়ে দিবে না। আমি জানি আমি ব্যর্থ নই তাই তো আজ তুমি আমার বউ।”

ওনার কথা গুলো শুনে আজ প্রথম লজ্জা পেলাম। লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। ওনার মুখে বউ ডাক শুনে কেন যেন লজ্জা, ভালো লাগা, স্বস্তি সব কিছু মিলিয়ে নিজের মনটাকে এখন বড্ড অগোছালো মনে হচ্ছে। এটা কি ভালোবাসা নাকি অন্য কিছু!!

আমাকে লজ্জা পেতে দেখে শুভ্র হাসলেন খুব উচ্চস্বরেই হাসলেন। আমার দিকে ঝুঁকে আমার মুখোমুখি হয়ে বললেন-

—”তোমার এই লজ্জা পাওয়া টা খুব করে জানিয়ে দিচ্ছে শুভ্রমেঘের ভালোবাসা শুরু হয়ে গেছে। তোমাকে মুখে কিছু বলতে হবে না মেঘ এই শুভ্র সব কিছু অনুভব করে নিবে।”

এই কথা বলেই উনি আমার মুখে ফু দিলেন আর আমি সাথে সাথেই নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললাম। শুভ্র নিম্ন স্বরে বললেন-

—”ভালোবাসি বউ। আজ যাচ্ছি কাল আবারও বিরক্ত করবো তবে নিজের বউকে।”

কথা গুলো শেষ করেই আমার কপালে ওনার ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে চলে গেলেন। আমি চমকে গিয়ে চোখ মেলে তাকাতাই দেখলাম উনি ছাদের দরজা দিয়ে চলে যাচ্ছেন। আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কি করে গেলেন উনি এটা!!! যে ছেলে এই দশ এগারো বছরে মাত্র দুইবার আমার হাত ধরেছে তা-ও রাগের বশে আর আজ সেই ছেলেটাই আমার কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলেন। তবে কি এটাই স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক?? স্বামীর অধিকার!! মনে হাসলাম এই লোকটা আজ থেকে আমার স্বামী। আমার কাছে ভালোবাসার দাবি করেছেন আজ আর প্রত্যাখান করতে পারিনি আমি। তবে কি সত্যি সত্যিই শুভ্রমেঘের ভালোবাসা শুরু হয়েছে!! হয়েছে হয়তো শুভ্রমেঘের ভালোবাসা।

সমাপ্ত ❤️

(গল্পটা বাস্তব তবে তাদের মিলন হলো কাল্পনিক। ভালো করে লিখতে চেয়েও ব্যস্ততায় পুরো পুরি বাস্তবতাটা তুলে ধরতে পারিনি তাই তাড়াতাড়ি শেষ করে দিলাম। দুঃখিত এই অগোছালো গল্পের জন্য। আপনাদের মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা।❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here