শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,২০,২১

0
344

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,২০,২১
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
২০

ফয়জান সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে আর ভাবছে আলো’কে বকে দিবে,সে কেন একা একা এই ভোরের নির্মল পরিবেশে আসে? ফয়জান কে কেন বলে না আসার জন্য?

খানিকটা অভিমান হয়েছে ফয়জান এর। ছাদে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে, ছাদের ঠিক মাঝবরাবর তার নয়ন’জোড়া আটকে যায়।স্থিথ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

আলো শরীরের ওরনাটা খুব সুন্দর করে শরীর ডেকে বেঁধে নিয়েছে। তারপর, খুব সুনিপূণ ভাবে ব্যায়াম করছে!

আলো’কে দেখতে যেমন শান্তশিষ্ট, সহজ-সরল মানুষ বলে মনে হয় সে ক্ষেত্রে এরকম ব্যায়াম করা সত্যিই একটু আশ্চার্যো’র
বিষয়।
যাই হোক ফয়জান দাঁড়িয়ে শুধু দেখে যাচ্ছে কিছু বলছে না। বিদেশে থাকা কালীন সকাল বেলা ব্যায়াম করতে করতে বহু দূর দৌড়ে চলে যেত ফয়জান।নিয়মিত ব্যায়াম মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পুনরুদ্ধার হতে সাহায্য করে। হৃদ্ররোগ, সংবহন তন্ত্রের জটিলতা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা রোধে শারীরিক ব্যায়াম কার্যকর ভূমিকা রাখে।

কিন্তু দেশে ফিরে অলসতা প্রবল ভাবে গ্রাস করছে যেন। নামায পড়েই ঘুমিয়ে থাকে।

আলো এক পর্যায়ে হঠাৎ ফয়জান কে দেখে থেমে গেল। ধীর পায়ে এগিয়ে এলো ফয়জান এর কাছে। এসে ওরনার আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে বললো,
-“আপনি!কখন এসেছেন এখানে?

ফয়জান আলোর কপালে লেপ্টে থাকা বেবি হেয়ার গুলো কানের পিছনে খুঁজ দিতে দিতে বললো,
-“কিছুক্ষণ আগে।

আলো মাথা নিচু করে বললো,
-“আচ্ছা।
-“হুম।তা ম্যাডাম একা একাই ব্যায়াম করতে চলে আসেন? আপনার স্বামী নামক মানুষটাকে সাথে করে নিয়ে আসলে কি হয় শুনি?

আলো জ্বীবে কামড় দিয়ে বললো,
-“সরি! আমার মাথায় আসেনি আপনার কথা।
-“এটা কোন কথা হলো? তোমার অস্তিত্ব কে তুমি ভুলে গেলে? আচ্ছা ঠিক আছে ব্যাপার না।চলো তোমার সাথে ব্যায়াম করবো?

আলো সম্মতি দিলে ফয়জান হেসে শুরু করে ব্যায়াম করা।
.
.
কায়েস মসজিদে নামায পড়ে, কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে বাসায় ফিরে। রুমে ঢুকে দেখে রামিসা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।
কায়েস রুম থেকে শুনতে পায় রামিসা হাঁচি কাশি সমান তালে দিয়ে যাচ্ছে! কায়েস বেলকনিতে গিয়ে রামিসার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
-“এতো ঠান্ডা বাধালে কখন?

রামিসা লজ্জায় মাথা নিচু করে বললো,
-“হঠাৎ করে রাতের বেলা শাওয়ার নেয়ার ফলে এরকম ঠান্ডা লেগে গেছে।

কায়েস কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে বুঝলো ব্যাপারটা। আলতো হাতে রামিসা’র চুলে হাত রেখে বুঝতে পারলো এখনো অবধি চুল ভেজা আছে।তাই রামিসা কে বসিয়ে রেখে কাবার্ড খুলে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে খুব যত্ন করে ভেজা চুল গুলো শুকিয়ে দিতে শুরু করে কায়েস।

রামিসা পরম আদুরে নেত্রজোড়া বন্ধ করে নেয়। হঠাৎ মনে করে, আজকে এই স্থানে তো তার বোনের থাকার কথা ছিল।তার বোন তো এরকম সুখী হতে পারতো।

রামিসা বলে,
-“আচ্ছা ভাইয়া আপুই কে আপনি খুব মিস করেন তাই না?

এ কথা শুনে কায়েসের হাত থেমে গেল খানিকক্ষণ। তারপর আবার নিজের কাজ বহাল রেখে বললো,
-“না!

রামিসা চমকিত হয়ে কায়েসের দিকে ঘুরে বসে বললো,
-“কিভাবে সম্ভব ভাইয়া? আপনি তো আপুই কে ভালোবাসেন তাহলে?

কায়েস কিছুটা কঠোর গলায় বললো,
-“ভালোবাসি আর ভালোবাসতাম এর মধ্যে পার্থক্য বুঝ?

রামিসা মাথা নাড়িয়ে বললো,
-“জ্বি ভাইয়া।
-“আমি তোমার কে হ‌ই বলো?

রামিসা চুপ করে বসে রইল। কায়েস বললো কি হলো বলো?

রামিসা ছোট করে বললো,
-“স্বামী।
-“তাহলে ভাইয়া বলো কেন?

-“স্বামী আর ভাইয়ার মধ্যে বিরাট পার্থক্য।তাই ভাইয়া ডাকা নিষেধ।

রামিসা দুষ্টুমি করে বললো,
-“তাহলে নাম ধরে ডাকি?
-“না নাম নিয়েও ডাকা যাবে না।
-“কিন্তু কেন?
-”
স্বামী-স্ত্রী এক অপরকে সম্মান সূচক নাম ব্যবহার করে ডাকবে। বিশেষ করে স্ত্রী তার স্বামীকে সর্বক্ষেত্রে সম্মান প্রদর্শন করবে।পরিবারের মধ্যে যেহেতু স্বামীর মর্যাদা স্ত্রীর চেয়ে একটু উপরে তাই স্ত্রী কখনো তার স্বামীর নাম ধরে ডাকবে না। কেননা এতে বেয়দবী মূলক আচরণের বহির্প্রকাশ ঘটে।

এ সম্পর্কে ফাতাওয়া শামীতে বর্ণিত আছে। .
ছেলে কর্তৃক তার পিতাকে এবং স্ত্রী কর্তৃক তার স্বামীকে নাম ধরে ডাকা মাকরুহ।
ইবনে আবেদীন শামী রাহ উক্ত বক্তব্যর সুস্পষ্ট ব্যখ্যা প্রদান করে বলেনঃ-
বরং এমন শব্দের মাধ্যমে ডাকা একান্ত প্রয়োজন যা সম্মান বুঝাবে,

যেমনঃ- হে আমার সর্দার, অমুকের পিতা ইত্যাদি, অথবা সম্মানসূচক পেশার সাথে সংযুক্ত করে ডাকবে, যেমন,ইমাম সাহেব,ডাক্তার সাহেব ইত্যাদি)।
কেননা পিতা এবং স্বামী, তাদের উভয়ের হক্ব একটু বেশীই।
.
-“সরি ভাইয়া, আসলে আমি জানতাম না এ ব্যাপারে। তাছাড়া মজা করে বলেছি আমি কখনোই আপনার নাম নিতাম না।

কায়েস কপাল কুঁচকে বললো,
-“আবার ভাইয়া?

রামিসা কানে ধরে বললো,
-“সরি সরি আবারো মিস্টেক হয়ে গেছে।
-“আচ্ছা বাদ দাও এগুলো। এবার চলো কিছু খেয়ে মেডিসিন নিবে। না হয় ঠান্ডার কারণে কষ্ট পাবে।

তারপর কায়েস কিচেন থেকে শুকনো খাবার কেক,বিস্কুট নিয়ে এসে রামিসা কে খেতে বললো।রামিসা কেক কিছুটা মুখে পুরে বললো,
-“আপনিও খান।

কায়েস খেতে না চাইলে জোর করে খাইয়ে দিল রামিসা। তারপর খাওয়া শেষ হলে ডেসলর নামের একটা মেডিসিন খাইয়ে দিল রামিসা কে।

রামিসার পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে তাই তাকে শুইয়ে দিয়ে ব্ল্যাঙ্কেট গায়ে জড়িয়ে দিল কায়েস।

এতে উষ্ণতায় বেশ আরাম বোধ করে ঘুমিয়ে পরলো রামিসা। কায়েস মুচকি হেসে বলে,
-“পিচ্চি একটা।
.
.
গতকাল রাতের কথা,
রামিসা কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দেয়,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,বান্দা যখন বিবাহ করল তখন তার দ্বীনদারী অর্ধেক পূর্ণ হয়ে গেল। অবশিষ্ট অর্ধেকের ব্যাপারে সে যেন আল্লাহকে ভয় করতে থাকে।
এছাড়াও বিবাহের দ্বারা মানুষ নিজেকে অনেক গুনাহের কাজ থেকে বাঁচাতে পারে। নেক আওলাদ হাসিল করতে পারে। আর নেক আওলাদ এমন এক সম্পদ যা মৃত্যুর পরে কঠিন অবস্থার উত্তরণে পরম সহযোগিতা করতে সক্ষম হয়। কারো যদি নেক সন্তান থাকে তাহলে তারা যত নেক আমল করবে, সেগুলো পিতা-মাতার আমলে যোগ দেয়া হবে। বিবাহ-শাদী যেহেতু শরীআতের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি ইবাদত, সেহেতু এর মধ্যে কোনভাবে গুনাহ এবং আল্লাহ তা‘আলার নাফরমানীর কোন সংমিশ্রণ না হয় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাছাড়া এতে বেপর্দা, নাচ-গান, অপব্যয়-অপচয়, ছবি তোলা, নাজায়িয দাবী-দাওয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে দুরে থাকতে হবে। নতুবা মুবারক বিবাহের সমস্ত বরকতই নষ্ট হয়ে যাবে এবং স্বামী-স্ত্রী দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তি সূচনাতেই ধ্বংস হয়ে যাবে।

এতটুকু বলার পর কায়েস বলে এর মানে বুঝতে পেরেছো?রামিসা বলে কিছু কিছু।
কায়েস তখন বলে,
-” আমি এবং তুমি দু’জনেই এখন স্বামী স্ত্রী।আর তাই আমাদের কারোরই উচিৎ নয় পর-পুরুষ বা পর-নারীর দিকে নজর দেওয়া। অবশ্য এটা কখনোই উচিৎ নয়।যাই হোক যেটা বলছিলাম,
আমি যদি স্ত্রী ব্যাতিত অন্য নারীকে নিয়ে মত্ত থাকি বা মনে মনে তাকে কল্পনা জল্পনা করি তাহলে আমার অন্তর কুলসিত হবে। এতে আমার ঈমান নষ্ট হবে।
তাই আমাদের উচিৎ এই দুনিয়ার মোহে আকৃষ্ট হয়ে না পড়ে,পরকালের চিন্তা করে হলেও নিজেদের সম্পর্কটা ঠিক করে নেওয়া!

রামিসা অবাক চাহনিতে তাকিয়ে বললো,
-“আপুকে ভুলে যেতে পারবেন আপনি?
-“আমার আল্লাহ তা’আলার জন্য আমি সবকিছু করতে পারবো। হয়তো তোমাকে বিয়ে না করলে অন্য ব্যাপার ছিল কিন্তু এখন আমি আমার দায়িত্ব পালন থেকে এভাবে গুটিয়ে থাকতে পারি না। এতে আমার আল্লাহ আমার উপর নারাজ হবেন।
-“আচ্ছা বুঝলাম, শুধুমাত্র আল্লাহ তা’আলার ভয়ে..
-“এখন এতটুকুই জেনে রাখ। মানুষের মন পরিবর্তনশীল কখন কি হয় তারা নিজেরাই বুঝতে পারে না।

রামিসা মাথা নাড়িয়ে বলে,
-“আচ্ছা।

তারপর তারা বাসায় ফিরে আসে,রাত বেড়ে যাচ্ছে তাই।
এবং স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রথম আহ্বান জানায় কায়েস!
যত‌ই হোক স্বামীর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করার সাধ্য রামিসার নেই।
হয়তো এভাবেই তাদের পবিত্র বন্ধন জোড়ালো হয়ে উঠবে একদিন ইনশা আল্লাহ।
.
.
বেলা এগারোটা বেজে পাঁচ মিনিট,
কায়েস আর তায়েস নিজেদের কর্মক্ষেত্রে চলে গেছে।রামিসা আজকে কলেজে যায়নি, বাসায় ই আছে।
আয়েশা রান্নার তদারকি করছে আর রিনু আপা সাহায্য করছে।রামিসা কে কাজ করতে দেয় না বলে সে বসে বসে ম্যাগাজিন পড়ছেন।
এরমধ্যে কলিং বেল বেজে উঠল,
রিনু গিয়ে দরজা খুলে দিল। একটা মেয়ে হাসি দিয়ে বললো এটা নিশ্চ‌ই এস আই তায়েস মাহমুদ এর বাসা?

রিনু তখন কপাল কুঁচকে বললো,
-“হয়।তয় আন্নে কেডা?…..

#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(২১)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

আগুন্তক মেয়েটি মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
-“আমি নূর‌আইন বিনতে রাকিব।

রিনু একটু মনে করার চেষ্টা করে বললো,
-“ভালা নাম আন্নের কিন্তু আন্নেরে তো চিনবার পারলাম না শড়ি আন্নে আসেন এবার!

নূর দ্রত পায়ে ভিতরে ঢুকে বললো,
-“আপনি চিনবেন না কিন্তু এবাসার বাকি সদস্যরা নিশ্চ‌ই চিনবে আপনি ডাকুন কাউকে?

রামিসা এগিয়ে এসে বললো,
-“কে আপনি?
-“আসলে আমি এস.আই.তায়েস মাহমুদ উনার পরিচিত!

এ কথা শুনে রামিসা বিনয়ি স্বরে বললো,
-“আচ্ছা আচ্ছা ভিতরে আসুন?
-“জ্বি, ধন্যবাদ।

রামিসা নূর কে ভিতরে নিয়ে এসে ড্রয়িং রুমে বসালো।রিনু শরবত তৈরি করে দিতে বলে নিজেও বসলো মুখমুখি সোফায়।

কিছুক্ষণ নিরবতা শেষে নূর বললো,
-“তায়েস মাহমুদ উনি আপনার কি হয়?

রামিসা মজা করে বললো,
-“জেঠাতো দেবর!

নূর একটু ভাবলো এর মানে কি? ভেবে যখন উত্তর না পায়না তখন বললো,
-“সরি জেঠাতো দেবর মানে বুঝলাম না?

রামিসা ঠোঁটে হালকা হাসি ঝুলিয়ে বললো,
-“উনি আমার দেবর হন।

নূর একটু কৌতূহল নিয়ে বললো,
-“তাহলে যে জেঠাতো দেবর বললেন?
-“আসলে আমার হাসবেন্ড প্রথমে আমার জেঠাতো ভাই তারপর হাসবেন্ড।
-“ওয়াও ইন্টারেস্টিং ব্যাপার তাহলে!
-“না না ইন্টারেস্টিং কোন ব্যাপার নেই।

রিনু শরবত নিয়ে আসলে রামিসা শরবত এগিয়ে দিল নূর কে। সাথে আয়েশা আসলো। জিজ্ঞাসা করলো কে তুমি মা? তোমাকে ঠিক চিনতে পারলাম না?

নূর দাঁড়িয়ে সালাম দিল। আয়েশা ব্যস্ত হয়ে বললো,বসো বসো দাঁড়িয়ে পরলে কেন?

নূর হাসি দিয়ে বললো,
-“আপনিও বসেন আন্টি।

আয়েশা বসলে নূর তার পরিচয় দিয়ে বললো,
-“আমার বাবাকে চিনতে পারেন কিনা জানিনা, আমি ইন্সপেক্টর রাকিব হাওলাদার এর মেয়ে নূর‌আইন বিনতে রাকিব।

আয়েশা একটু ভেবে বললো,
-” ওহ আচ্ছা তায়েসের স্যার রাকিব হাওলাদার এর কথা বলছো?
-“জ্বি,আন্টি।
আসলে কক্সবাজার তায়েস মাহমুদ উনার সাথে পরিচয় হয় আমার। উনার সাথে পরিচয় হ‌ওয়ার পর আমার খুব ইচ্ছে হলো আপনাদের সাথে দেখা করার সে জন্যই চলে এসেছি। কিছু মনে করবেন না তো? এভাবে হুট করে চলে..

আয়েশা ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো,
-“আরে না না কি বলো? তুমি এসেছো আমি ভিশন খুশি হয়েছি।

নূর এর কথায় রামিসা কপাল কুঁচকে মনে মনে ভাবলো, এমনিতেই কি দেখা করতে এসেছে নাকি কোন ব্যাপার আছে? সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রামিসা।

আর আয়েশা গল্প জুড়ে দিলো নূরের সাথে। দুজনের মধ্যে খুব ভালো বন্ডিং তৈরি হয়ে গেল এর মধ্যেই।
দুজনের এমন নিবিড় কথাবার্তা দেখে বললো,
রামিসা কিচেনে গেল রান্না দেখার জন্য। সাথে রিনু আসলো। অল্পের জন্য তরকারি পুরে যায়নি,রামিসা এসে পানি দিয়ে নেড়ে দিল।
রিনু বললো,
-“ছোড ভাবী আন্নে কিছু বোঝবার পারছেন?

রামিসা কড়াইর দিকে নজর রেখে বললো,
-“কি বুঝবো রিনু আপা?
-“ঐ মাইয়ার বেপার টা!ছোড ভাইজান এর লগে কোন রকম সম্পর্ক আছে মনে অইতাছে!

রামিসা চুপ করে থেকে ভাবলো, হতে পারে অসম্ভবের কিছু নয়।আর রিনু কে বললো,
-“রিনু আপা তাহলে তো ভালই হবে তোমার নতুন ছোট ভাবী আসবে বাসায়। আমাকে তো আর তুমি পছন্দ করো না, এখন উনাকে পেয়ে তুমি নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে?

রিনু এ কথা শুনে চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেললো!রামিসা বরকে গেল রিনুর এহেন কান্ড দেখে।
রিনু বললো,
-“ছোড আফা আন্নে এই কতা ক‌ইতে পারলেন আমারে? আমি কি আন্নেরে ক‌ইছি আন্নেরে আমার ভাল্লা’গে না?
-“আমি বুঝতে পারি রিনু আপা। মুখে বলতে হয় না।

রিনু চোখের পানি ফেলে বললো,
-” আফা আমারে ভুল বুঝবেন না পিলিজ।এডা হক কতা পতথম পতথম আন্নেরে ভালা পাইতাম না কিন্তু বিশশাস করেন অনে আন্নেরে আমার মেলা ভাল্লা’গে।
-“কেন ভালো লাগে শুনি?
-“আন্নে আমার বড় ভাইজানের ব‌উ।হেল লাইগা।
-“অহ আচ্ছা সব ক্রেডিট তাহলে তোমার বড় ভাইজানের?তার ব‌উ হ‌ওয়ার সুবাদে আমাকে ভালো লাগে?
-“হ”।

এবার দুজনেই হাসলো।
তখন আয়েশা এসে ফিসফিস করে বললেন,রামিসা রিনু মেয়েটাকে তোদের কেমন মনে হলো?

দু’জনেই বিষ্ময় নিয়ে বললো,
-“কেমন মনে হয় মানে?
-“মানে বিয়ের পাত্রী হিসেবে কেমন মনে হয়?

রামিসা ভালো করে কনফার্ম হতে বললো,
-“কার জন্য বড় মা?
-” আমাদের তায়েসের জন্য! আমার মনে হয় তায়েসের সাথে মেয়েটির যোগাযোগ আছে! তোদের পছন্দ হলে আমি বিয়ের কথা আগাবো।

রামিসা একটু ভেবে বললো,
-“ভালোই হবে বড় মা। মেয়েটা দেখতে শুনতে স্মার্ট আছে।তায়েস ভাইয়ার সাথে বেশ মানাবে।

আয়েশা উৎসাহ ভরা কন্ঠে বললেন,
-“আমারো তাই মনে হচ্ছে।ইশ কি আনন্দ লাগছে তুই আসার সাথে সাথে এখন ছোট ব‌উ ও বাড়িতে আসতে চলেছে।

রামিসা মনে করিয়ে দিতে বললো,
-“কি বলছো বড় মা? আমি তো আরো কত মাস পূর্বে আসলাম তোমার ছেলের বউ হয়ে। সাথে সাথে কোথায় হলো?
-“আরে এক‌ই হলো। দেখি রান্নার কতটা বাকি? মেয়েটাকে তো না খাইয়ে ছাড়তে পারি না। তুই বরং মেয়েটার সাথে কথা বল গিয়ে। আমি ফাহমিদা কে খবর দিয়েছি ও এক্ষুনি চলে আসবে।

রামিসা অবাক হয়ে বললো,
-“এখানে মা এসে কি করবে?
-“আরে ওর মেয়ে পছন্দ হতে হবে না?পরে আবার শুনলে রাগ করে বসে থাকবে।
-“ওহ আচ্ছা।

রামিসা চলে গেল নূরের কাছে।আর রিনু বললো,
-“খালাম্মা আমি কিন্তু আগেই জানতাম!

আয়েশা চোখ দুটো খানিকটা ছোট করে বললো,
-“কি জানতি?
-“এই যে ছোড ভাইজান এর লগে এই আফার সম্পর্ক আছে!
-“তো আগে বললি না কেন?
-“আইজ ই তো জানলাম।
-“হ‌ইছে এখন মন দিয়ে কাজ কর
.
.
আলো আজকে খুব আনন্দে আছে। বেশি পড়ার চাপ নেই তবে পরীক্ষার জন্য দুশ্চিন্তা আছে। ফয়জান কলেজে গিয়েছে।
শ্বাশুড়ি মা একটু আগে রামিসা’দের বাসায় গেল।
এখন সে আর তার শ্বশুর মশাই বাসায়।একা লাগছে বলে শ্বশুরের সাথে গল্প করতে বসেছে। সাথে নিয়েছে ছুলা বুট।কুরকুরিয়ে খাচ্ছে আর গল্প করছে।

ফোনে কল আসলে আলো দৌড়ে রুমে এসে কল রিসিভ করে। ফয়জান কল করেছে।
আলো রিসিভ করে সালাম দিয়ে বললো,
-“কলেজে ঠিক মতো পৌঁছেছেন?
-“এখন আমি কল করাতে জিজ্ঞাসা করছো?নিজে থেকে তো কল করে জিজ্ঞাসা করলে না একবারো?

আলো ঠোঁট কামড়ে বললো,
-“সরি খেয়াল ছিল না।কি করছেন এখন?
-“এইতো একটা ক্লাস শেষ করে অফিসে এসে বসলাম। তুমি কি করছিলে?
-“আমি বাবার সাথে গল্প করছিলাম।
-“মা কোথায়?
-“রামিসা দের বাসায় গিয়েছে।
-“হঠাৎ ঐ বাসায়?
-“বড় মা জরুরি তলব করেছেন সে জন্য।
-“ওহ্ আচ্ছা। তাহলে গল্প কর আমি রাখছি এখন।
-“আচ্ছা।
আল্লাহ হাফেজ….

আলো একটু টেনে বললো “আল্লাহ হাফেজ”।যা শুনে মুচকি হেসে ফয়জান ও টেনে বললো,”আল্লাহ হাফেজ”…
.
.
কলেজে শেষে বাসায় ফিরে খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ফয়জান বাহিরে বের হয়। আলো জিজ্ঞাসা করলে বলে কিছু কাজ আছে তাই যাচ্ছে।তাই আলো আর কিছু বলে না, পড়তে বসে।

তারপর,
মাগরিব এর পূর্বে বাসায় ফিরে ফয়জান। হাতে এত্ত এত্ত শপিং ব্যাগ দেখে অবাক হয় আলো। তবে মুখে কিছু বলে না।

ফয়জান একে একে তার মা বাবার হাতে একটা করে ব্যাগ দিয়ে বললো,
-“এটা তোমার জন্য দেখো পছন্দ হয় কিনা?

তারপর আরো ছয়টি ব্যাগ দিয়ে বললো, এখানে ফাইজা আর রামিসা এবং রামিসার শ্বশুরবাড়ির জন্য।

আর বাকি অনেক গুলো ব্যাগ আলোর হাতে দিয়ে বললো,
-“এগুলো সব তোমার!

চক্ষু বিস্ফোরিত করে তাকায় আলো, এতো গুলো ব্যাগ? নিশ্চয়ই অনেক কিছু আছে।আর এগুলো নাকি সব তার?

ফাহমিদা খাতুন হেসে বললো,
-“খুলে দেখ ব‌উ ? আমার ছেলের পছন্দ তোমার সাথে মিলে কিনা।

বিয়ের পর এই প্রথম ফয়জান আলোকে কিছু দিলো। এতো দিন কিছুই দেয়নি। শুধু কায়েস এর বিয়ে উপলক্ষে ফাহমিদা আর আয়েশা সাড়ি, থ্রিপিস কয়েকটা কিনে দিয়েছে এই যা।

ফয়জান এতো দিন বেতন এর টাকা সংসারে খরছ করে কয়েক হাজার করে জমিয়েছিল।যেন আলোর সাথে সাথে পরিবারের সকলের জন্য শপিং করতে পারে।
.
.
ফাইজা পেন্সিল, রাবার নিয়ে সাদা কাগজে আঁকিবুঁকি করছে। গত এক দেড় বছর এটাই তার একমাত্র লক্ষ্য। কিভাবে ঐ হাতের ট্যাটু আঁকা যায়!…

#চলবে…ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here