শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,২২,২৩

0
282

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,২২,২৩
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
২২

ফাইজা পেন্সিল, রাবার নিয়ে সাদা কাগজে আঁকিবুঁকি করছে। গত এক দেড় বছর এটাই তার একমাত্র লক্ষ্য। কিভাবে ঐ হাতের ট্যাটু আঁকা যায়!

কিছুটা ঝাঁপসা হয়ে গেছে এতো দিনে। তবে সামনে থেকে দেখলে সে ঠিক চিনে নিতে পারবে।

আজকাল কেমন উদাস মনে বসে থাকে সে। পৃথিবীটা কেমন অসহ্য লাগে তার কাছে। মনে হয় এর থেকে বুঝি মৃ’ত্যুই শ্রেয়।
কিন্তু আবার ভয়ে ভীত হয়। মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে দাঁড়ানোর ভয়।তার দরবারে আমল নিয়ে দাঁড়ানোর ভয়।সেকি আমল জমা করতে পেরেছে? পারেনি তো!সে তো একজন পা’পী বান্দা আল্লাহ তা’আলার। আল্লাহ তা’আলা কি তার গুনাহ গুলো মাফ করবেন?

তখন কোরআন এর আয়াতের কথা মনে পরে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
তবে একটা ব্যাপার আছে, পূর্বের গুনাহের জন্য সর্বদা ত‌ওবা করে আল্লাহ তা’আলার পথে ফিরে আসতে হবে। পূর্বের গুনাহ পুনরায় করা যাবে না।

ফাইজা ঠিক করেছে তার চাওয়া পূর্ণ হয়ে গেলে সে আর কোন গুনাহ তে লিপ্ত হবে না ইনশা আল্লাহ। কিন্তু ততদিন?
.
.
আলো ব্যাগ থেকে সমস্ত জিনিস পত্র বিছানায় খুলে রাখলো। এতো কিছু দেখে তার চক্ষু চরক গাছ !

একটা সাড়ি হাতে নিয়ে দেখছে ভিশন সুন্দর শাড়িটা। গারো সবুজ রঙের জামদানি শাড়ি টা। সবুজ রঙ আলো’র ভিশন পছন্দ। ফয়জান কি করে জানলো তার সবুজ রঙ পছন্দ?সে তো কখনো বলেনি। তাহলে?

ফয়জান নিজ থেকেই বললো,
-“আমি খেয়াল করেছি তুমি সবুজ রঙটা বেশি ইউজ করো।যেমন, তোমার থ্রিপিস সবুজ, গলায় সবুজ রঙের লকেট,কানে ইয়ারিং পরে আছ, তোমার ব্রাশ সবুজ, তোমার হেয়ার ব্রাশ সবুজ, হেয়ার ফ্রান্স ক্লিপ সবুজ।
তাই এখানের বেশিরভাগ জিনিস সবুজ রঙের এনেছি। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তো সাদা রঙ প্রিয় ছিল।আর সাদা পোশাক পরিধান করা সুন্নাত।তো এই সবুজ রঙের রহস্য কি?

আলো বললো,
-“রাসূলুল্লাহ সাঃ কোনো এক কালারকে যে পছন্দ করেছেন এবং পড়েছেন। বিষয়টা এমন নয় বরং হরেক রকম কালার,যেমন সবুজ,সাদা,কালো,লাল,ইত্যাদি অনেক রকমের কালারকে পরিধান করেছেন।কোনো একটি কালারকে নির্দিষ্ট করে সুন্নত বলা যাবে না।বরং হাদীসে যতগুলো কালারের আলোচনা এসেছে,সবগুলোই সুন্নত।এবং এগুলো সুন্নতে যায়েদা।যার উপর কোনো সওয়াব ধর্তব্য নেই।হ্যা অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নতের অনুসরণ হবে।
আল্লাহ-ই ভালো জানেন।
-“আচ্ছা। তোমার পছন্দের রং অনুযায়ী তোমার বৈশিষ্ট কি জানো?
-“জ্বি না।
-“সবুজ?
তারা খুব অল্পতেই খুশি হন। নিজের কাজের সামান্যতম স্বীকৃতি পেলেই অনেক আনন্দ পান।
আচ্ছা এবার বলো পছন্দ হয়েছে কিনা?

আলো’র আঁখিপল্লব দুটো পানিতে ডুবে আছে। হয়তো যেকোন সময় গড়িয়ে পরবে! দুই বছর আগেও সে এরকম ভাবেই শপিং করতো। তবে সেটা নিজে পছন্দ করে। এরকম কতশত জিনিস পত্র কিনতো যেগুলা ব্যাবহার করার ও সময় পেত না। কেননা কোনটা রেখে কোনটা ব্যাবহার করবে? বেশিরভাগ জিনিস পত্র ই অবহেলায় পড়ে থাকতো কাবার্ডে।
মাঝে মাঝে ফ্রেন্ডরা কোন জিনিস তাদের ভালো লেগেছে বললেই হতো,আলো’র ঐ জিনিষটা তার ফ্রেন্ডদের দিতে সময় লাগতো না।

ছোট বেলা থেকেই খুব উদার মনের অধিকারী আলো।অন্যের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে অন্য কে সাহায্য করার আর সে জন্যই আজকে সে এই স্থানে। না হয় তার স্থান আজ রাজকীয় হালে থাকতো।

আলো ছোট্ট করে ফয়জান কে বললো,
-“খুব সুন্দর হয়েছে।

ফয়জান আলোর হাত দুটো ধরে বললো,
-“আচ্ছা এতেও কি তুমি খুশি হ‌ওনি আলো? সবসময় এরকম গোমড়া মুখে কাঠিন্য ভাব ফুটিয়ে থাক কেন?মন খুলে হাসতে পারো না?
-“আমার হাসি গুলোকে মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য বিসর্জন দিয়ে দিয়েছি সেই কবেই!তাই এখন আর হাসতে পারি না আমি।

আলোর এমন অদ্ভুত কথা শুনে, ফয়জান আলোর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তুমি কাঁদছো আলো? কিন্তু কেন?আর হাসি বিসর্জন দিয়েছো মানে কি?

আলো হাত ছাড়িয়ে ছড়িয়ে থাকা জিনিস পত্র গুলো ব্যাগে গুছিয়ে রাখতে রাখতে বললো,
-“সেসব কথা বাদ দিন।আগে আপনি বলুন
এতো গুলো টাকা খরচ করার কি দরকার ছিল বলুন তো? শুধু শুধু এতো গুলো টাকা খরচ করেছেন। আমার এতো কিছুর প্রয়োজন ছিল না।
-“এই প্রথম ই তো কিছু দিলাম তোমাকে।তাও বলছো শুধু শুধু টাকা খরচ করেছি?

আলো কাবার্ডে ব্যাগ গুছিয়ে রাখতে রাখতে বললো,
-“আমার জন্য আপনি এবং আপনার পরিবারের লোকজন ই আল্লাহ তা’আলার দেওয়া শ্রেষ্ঠ নেয়ামত আমার জন্য।তাই এর বেশি কিছু আমার চাই না বুঝলেন?
আচ্ছা সে সব কথা বাদ দিন। একটা প্রশ্ন সমস্যা খুঁজে পেলাম একটু সমাধান করে দিন?
-“আচ্ছা দেখাও কি সমস্যা?
.
.
এক সপ্তাহ পর।
আজ শুক্রবার দিন সবাই বাসায় আছে।
আয়েশা দুই পরিবারের সাথে পরামর্শ করে। রাকিব হাওলাদার এবং তার স্ত্রীর সাথে কথা বলে সব ঠিক করেছেন দুদিন আগে।

আজকে তায়েস কে নিয়ে পাকা দেখা করে, নূর আর তায়েসের আংটি বদলের কাজটা সেরে ফেলবেন। সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক করছেন। তবে তায়েস কে সারপ্রাইজ দিবেন বলে জানানো হয়নি তাকে!

আর বাদবাকি সবাই এ সম্পর্কে অবগত আছেন। দুই পরিবার যখন তৈরি হয়ে গাড়িতে চড়ে বসে তখন আড়চোখে তাকায় তায়েস।তার মনে প্রশ্ন জাগে এরা সবাই মিলে যাচ্ছে কোথায়?তাকে লোকেশন বলছে ও না।

শেষে যখন তার বস এর বাসার সামনে গাড়ি এসে থামে তখন।বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তায়েস। সবাই বাসার ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে অথচ তার কোন হেলদোল নেই।সে এখনো অবধি বিষ্ময় ভাব কাটিয়ে উঠতে পারছে না।কেউ কিছু বলছে ও না। কি এক অবস্থা?

আয়েশা শেষে টেনে নিয়ে গেল তাকে।
তাদের জন্য খুব রাজকীয় আয়োজন করা হয়েছে। এক পর্যায়ে আয়েশা বললো,
-“আপা মেয়েকে নিয়ে আসেন?

তহুরা বেগম সম্মতি দিয়ে শাড়ি পরিহিত এক মেয়েকে নিয়ে আসেন।যে কিনা বড় করে ঘুমটা এঁটে বসে আছে। ফাহমিদা খাতুন বললেন মা ঘুমটা টা তুলো?আমরা দেখে চোখ জুড়িয়ে নেই।

তায়েস বসে বসে সবকিছু হজম করছে।এর মধ্যে তার ভিতরে সন্দেহের বিজ বপন হতে শুরু করেছে। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না এখানের সন্ধান তার এই বি’চ্ছু পরিবার কিভাবে পেল?

বস সামনে থাকায় কিছু বলতেও পারছে না।

নূরের ঘুমটা খানিকটা সরিয়ে দিল তার মা। ছেলেরা অন্য দিকটায় বসে আছে।আর বাদবাকি মেয়েরা সবাই মন ভরে দেখছে তাকে। সাথে আছে তায়েস, তার জন্য মেয়ে দেখা তাই তাকে এখানে বসানো হয়েছে।
.
কিছু সময় পর,
ফাহমিদা আর আয়েশা পরামর্শ করে বললো,
-“আমাদের পাত্রি পছন্দ হয়েছে।তায়েস তোর মতামত জানিয়ে দে?

তায়েস কিছু না জানার ভান করে বললো,
-“কিসের মতামত?

এ কথা শুনে মুচকি হাসে নূর।

আয়েশা মজার ছলে বলে,
-“মেয়ে নিজেই পছন্দ করে বসে আছিস! এখান বলছিস কিসের মতামত?দিব একটা চ’র।

তায়েস এতোক্ষণ ভেবেছিল তার পরিবার হয়তো নূর কে পছন্দ করেছে তাই এখানে আসা। কিন্তু এখন তো দেখছে সব উল্টা!তার উপরেই সব দোষ দিয়ে দিচ্ছে! কখন এই মেয়েকে পছন্দ করলো?

তায়েস কিছু বলতে মুখ খুলবে তার আগেই আয়েশা বললো,
-“থাক তোকে আর কিছু বলতে হবে না। আমাদের সবার মেয়ে পছন্দ হয়েছে।এই নে রিংটা পরিয়ে দে নূর মায়ের হাতে!

তায়েস দ্বিমত পোষণ না করে পরিয়ে দেয় নূর এর অনামিকা আঙুলে রিং।
পরে নূর ও পরিয়ে দেয়।
.
.
অতঃপর,
এক সপ্তাহ পর ধুমধাম করে তাদের বিয়ের কার্য শেষ হয়।
বাসর ঘরে সব ফর্মালিটি শেষে নূর প্রথমে তায়েস এর গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
-” কি শান্তি টা কেমন দিলাম বলুন?

এ কথা শুনে বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে,তায়েস বললো,
-“এই সবটা আপনার পরিকল্পনা ছিল?
-“হুম সে একটু ছিল, তবে আপনার মানে বর্তমানে আমারো পরিবারের সদস্যরা সবটা সুষ্ঠু ভাবে এগিয়ে নিয়ে সাহায্য করেছেন আমাকে। বিশেষ করে আমার শ্বাশুড়ি মা।

তায়েস বলে,
-“আপনি তো মহা..

এটুকু বলতে নূর তায়েস এর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো,
-“আপনি কি হ্যা?ব‌উকে কেউ আপনি করে সম্বোধন করে? নিরামিষ কোথাকার!….

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

নোটবার্তা: আল্লাহ তআলা ওয়াদা ভঙ্গকারীর গোনাহ ক্ষমা করবেন না। কেননা অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে বান্দার হক নষ্ট হয়। আর বান্দার হক আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। খোলাসাতুত তাফসিরের তথ্য মতে, একবার মদিনায় ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।
এই ওয়াদার কারণেই কায়েস বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে।
আর বাকি সব ইসলামের নিয়মের কারণেই কায়েস রামিসা কে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।তাই কায়েস কে ভুল বোঝার অবকাশ নেই।

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(২৩)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা দিয়ে শুরু হয় তায়েস আর নূরের সকাল’টা।

স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে ফযর নামায পড়ে ঘুমিয়েছে।
তায়েস আগে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে বাহিরে বের হয়।নূর তখনো ঘুমে বিভোর হয়ে আছে।বেলা দশটার উপরে বাজে তখন তায়েস রুমে ফিরে দেখে নূর তখনো ঘুমিয়ে আছে।তাই পাশে বসে আলতো হাতে নূরের এলোমেলো বেবি হেয়ার গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বললো,
-“এই যে ড্রামা কুইন দেশ যে স্বাধীন হয়ে গেছে! সে সম্পর্কে আপনি অবগত আছেন?

নূর ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,
-“সে তো আমার জন্মের আগেই হয়েছে। এখন আবার কি স্বাধীন হয়েছে?

এই কথা বলে আবার পুনরায় ঘুমিয়ে পরলো নূর।তায়েস অনেক বার ডেকে যখন ব্যর্থ হলো তখন দুষ্টুমি মাথায় ভর করলো তার।

বাথরুমে গিয়ে বার্থটবে গরম আর ঠান্ডা পানির মিশ্রণে পানি তৈরি করে রুমে ফিরে এলো।
আচমকা পাঁজা কোলে তুলে নিল নূর কে! নূরের ঘুম হালকা হয়ে এসেছে এর ফলে।গলা জড়িয়ে ধরে তায়েস এর।পিট পিট করে চোখ মেলে তাকিয়ে বললো,
-“কোথায় যাচ্ছি আমরা?

তায়েস নূরের ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের সাথে নিজের ঘ্রাণেন্দ্রিয় স্পর্শ করে বললো,
-” চলো তারপর দেখতে পারবে বেব!

এই বলে হাঁটা শুরু করে বাথরুমের দিকে।
বাথরুমে ঢুকলে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে নূর বললো,
-“এখানে কেন?

তায়েস এর পাল্টা জবাব না দিয়ে আচমকা বার্থটবে বসিয়ে দিল নূর কে! নূর মুখশ্রী বিকৃতি করে চিৎকার করে উঠল।
এদিকে তায়েস হাসতে হাসতে শেষ নূরের এমন হতবিহ্বল মুখশ্রী দেখে।
নূর কিছুক্ষণ ভেবে এক মগ পানি ঢেলে দিল তায়েস এর গায়ে!তায়েস বরকে গিয়ে বললো,
-“এটা কি ঠিক হলো?

এবার নূর হাসতে হাসতে বললো,
-“বেশ করেছি পানি দিয়েছি প্রয়োজন হলে আরো দিব।

এই বলে আরো পানি ঢেলে দিল তায়েস এর গায়ে। এবার দু’জনের অবস্থা ভিজে একাকার।
.
.
কিছুদিন পর এক সকালে,
ফয়জান কল করে রামিসা আর কায়েস কে তাদের বাসায় ইনভাইট করলো। বললো সকালের নাস্তা যেন তাদের সাথেই করে।
রামিসা আর কায়েস তৈরি হয়ে ঐ বাসায় র‌ওনা হয়।কায়েস দের বাসা থেকে ফয়জান দের বাসা পাঁচ মিনিটের ব্যবধান।

তাই খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে যায় তারা।
গেইটে কলিং বেল বাজালে ফাইজা এসে দরজা খুলে দিল।
ফাইজা জানতো না যে কায়েস আর রামিসা আসছে তাই ওদের দুজনকে দেখে বরকে গেল খানিকটা।
কায়েস ও খানিক অবাক হয়ে তাকিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
রামিসা অনেক দিন পর আপু কে দেখতে পেয়ে জরিয়ে ধরে বললো,
-“আপু কেমন আছো তুমি? তুমি আসছো আমাকে একবার ও বললে না? এভাবে আমাদের ছেড়ে কষ্ট হয় না তোমার? কিভাবে পারো আমাদের ছেড়ে থাকতে বলো?

ফাইজা বোনের পিঠে আলতো হাত বুলিয়ে বললো,
-“ভিতরে আয় পাগলী। একসাথে এতগুলোর জবাব দেই কি করে?

তারপর কায়েস কে ও ভদ্রতার খাতিরে বললো,
-“ভাইয়া ভিতরে আসেন?

দুই বোন ভিতরে চলে আসলে, কায়েস ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সোফার এক কোণে বসে থাকে। তখন ফাহমিদা, ফয়জান আসলে তাদের সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে।

আর রামিসা তার আপু কে পেয়ে মন খুলে গল্প করা শুরু করে।
ডাইনিং টেবিলে আলো আর ফাহমিদা নাস্তা সাজানো শেষ হলে সবাই কে খেতে আসতে বলে।

তারপর আলো ছাড়া সবাই একসাথে খেতে বসে। খাবার টেবিলে রামিসা খেয়াল করে কায়েস কে। লোকটা মাথা নিচু করে যে খাচ্ছে আর মাথা উপরে তুলছে না। নিশ্চয়ই ফাইজার কারণে।
খারাপ লাগলেও আনন্দ লাগছে রামিসার এরকম একজন সৎ,দ্বীনদার জীবন সঙ্গী পাওয়ার জন্য। শুকরিয়া আদায় করতে আলহামদুলিল্লাহ বললো মনে মনে। নিজের আপুর প্রতি ও কৃতজ্ঞ সে। আজকে ফাইজার কারণেই সে এমন একজন মানুষ কে জীবন সঙ্গিনী হিসেবে পেয়েছে।

ফাইজার ভিতর পুড়ছে ঠিকই কিন্তু সে খুশি এই ভেবে যে তার প্রিয় দুজন মানুষ সুখী আছে।তাকে ছাড়াই সুখী হতে পেরেছে। সত্যি বলতে ফাইজা জানতো একবার রামিসা কে বিয়ে করলে কায়েস তাকে ঠিক মেনে নিয়ে স্ত্রীর মর্যাদা দিবে। কারণ সে জানে কায়েস আল্লাহ বিরু মানুষ।আর আল্লাহ বিরু মানুষ কখনো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য অস্বীকার করে না।
.
গতকাল রাতে ফাইজা কে ফয়জান কল করে বাসায় ফিরিয়ে এনেছে। প্রথমে স্নেহের স্বরে বলেছে, তারপর করা নির্দেশ দিয়েছে বাসায় আসার জন্য বলেছে,
-” তুমি এখনো অবধি বিয়ে না করার কারণ আমাদের বলনি ঠিক আছে,সময় হলে তুমি নিজেই বলবে এই আশায় আছি আমরা প্রত্যেকে। কিন্তু তাই বলে বাসায় না থেকে এভাবে বাহিরে থাকার মানে কি?আর অফিস করার হলে বাসা থেকে গিয়ে করবে নতুবা অফিস করার দরকার নেই।
তুমি একটা ভালো কাজের সাথে জড়িত বলে আমি এতদিন তোমার কাজ নিয়ে কিছু বলিনি।তাই বলে যে কোনদিন কিছু বলবো না এই ধারণা বাদ দাও।আমি আজকেই তোমাকে বাসায় দেখতে চাই।

এতটুকু বলে কল কেটে দেয় ফয়জান।
ফাইজা কিছু বলার সুযোগ পায় না। তবে সে জানে তাকে আজকে বাসায় ফিরতেই হবে।তার ভাই একবার রেগে গেলে আর র’ক্ষা নেই। তারপর এই ছিল ফাইজার বাসায় ফিরে আসার কারণ।
.
.
আলোর পরীক্ষা আর মাত্র ছয়দিন বাকি। এখন নিশ্চয়ই পড়ার মাত্রা বাড়ানো প্রয়োজন। অথচ আলো শুয়ে আছে। ফয়জান কয়েক বার ডাকার পরও উঠেনি।তাই ফয়জান একটু কাঠোর গলায় বললো,
-” রাত পোহালেই পরীক্ষা তোমার এখন এভাবে শুয়ে বসে সময় কাটালে চলবে কি করে? উঠে পড়তে বসো, আমি দেখবো কোথায় আর সমস্যা আছে কিনা।

এরকম কয়েকবার পড়ার কথা বললে,আলো খুব রেগে যায়! কান্না মিশ্রিত কন্ঠে এবং কন্ঠস্বর খানিকটা উঁচু করে বলে,
-“আমি এখন পড়বো না। আপনি প্লিজ এখান থেকে চলে যান! আমার ভালো লাগছে না।

ফয়জান ফ্রিজস হয়ে বসে র‌ইলো।আলো এভাবে কথা বলবে সে স্বপ্নেও ভাবেনি। কিঞ্চিৎ রাগ হলো ফয়জান এর।বাসা থেকে বেড়িয়ে চলে গেল গলির মোড়ে দোকানে। দোকানদার মামা কে বললো,
-“কড়া করে এক কাপ চা দেওয়ার জন্য।চা খেতে খেতে আশেপাশে বিরতিহীন পলক ফেললো। রাতের এই সুন্দর মূহুর্তটা যেন বি’ষের মতো লাগছে। মনে শান্তি পাচ্ছে না কিছুতেই।

ঘন্টা খানেক পর বাসা থেকে ফাহমিদা খাতুন কল করে বললেন,
-“বাবা তুই কোথায় আছিস?

ফয়জান গম্ভীর মুখে বললো,
-“বাহিরে বের হয়েছি।

ফাহমিদা খাতুন তাগাদা দিয়ে বললেন,
-“ব‌উ পেট ব্যথায় চিৎকার করছে!তুই তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আয়।

মায়ের কথা শুনে তড়িগড়ি করে ফোনে আজকের তারিখটা দেখলো ফয়জান। এখন নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে তার। আজকের তারিখটা তার মনে রাখা উচিৎ ছিল না?প্রত্যেক মাসের এই তারিখের দুই একদিন আগে পরে আলো’র পিরিয়ড শুরু হয়।ভিশন পেট ব্যথা শুরু হয় মেয়েটার।যখন সহ্য করতে না পারে তখন ব্যথায় চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে।

আজকেও এর ব্যতিক্রম হলো না।
মাসের ওই দিনগুলিতে মেয়েরা এমনিতেই শারীরিকভাবে একটু কাহিল থাকে। পেটে যন্ত্রণা, কোমরে ব্যথা, বমি বমি ভাব। মেজাজও খিটখিটে হয়ে যায়। পিরিয়ডের দিনগুলিতে মেয়েদের হজমের সমস্যাতেও ভুগতে দেখা যায়। কেউ কেউ কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। কেউ কেউ আবার ডায়রিয়ায়।
তাই তাদের খুব যত্নের প্রয়োজন হয়। তাদের সাথে কখনোই তর্ক করা উচিৎ নয়। বকাঝকা তো অনেক দূর।
প্রত্যেকের অনুভব করা উচিৎ।এই সময়ের যন্ত্রনা উপলব্ধি করা উচিৎ।

ফয়জান দ্রত বাসায় ফিরে হটব্যাগ চার্জ দিয়ে আলো’কে দেয়।আর নরম গলায় বলে,
-“তখন আমাকে বললে কি হত?

আলো চুপ করে থাকে কিছু বলতে চেয়েও বলে না।…

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here