শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগো,২৪,২৫

0
297

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগো,২৪,২৫
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
২৪

আলো’র এইস‌এসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে গতকাল। পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
ফয়জান ঠিক করেছে আলো এবং তার ভাই বোনদের নিয়ে ট্যুরে যাবে।
বড়দের ও বলেছে কিন্তু তারা যাবে না বলেছেন।তাই তিন কাপল এবং ফাইজা যাবে।

প্রথমে ফাইজা ও বলেছিল যাবে না।পরে ফয়জান কড়া নির্দেশ দিয়ে বলেছে যেতেই হবে।তাই অঘর্তা যেতে হচ্ছে তাকে।
.
ফয়জান ক্যান্টিনে বসে অনলাইনে বিভিন্ন রিসোর্ট সম্পর্কে দেখছে,ট্যুরে কোথায় গেলে ভালো হবে। সবাই আনন্দ উপভোগ করতে পারবে মূলত সেই জন্যই।
তখন সমির স্যার এসে বসলেন।
জিজ্ঞাসা করলেন, ফয়জান ব্যস্ত নাকি?
ফয়জান বললো,
-“তেমন কিছু না স্যার।
আচ্ছা স্যার আপনি নিশ্চয়ই ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের মধ্যে একজন হবেন? কারণ প্রতিটি মানুষ ই ভ্রমণ পিপাসু হয়। হয়তো পরিস্থিতির বিড়ম্বনায় ভ্রমণ করা হয়ে উঠে না।যাই হোক আপনার জানামতে কোন ভালো রিসোর্ট আছে যেখানে বারান্দায় বসে এক কফিতে চুমুক দিতেই সব ক্লান্তি নিমিষেই দুর হয়ে যাবে। দখিনা বাতাস এর অপরূপ প্রকৃতিতে ভালো লাগতে বাধ্য হবো।

ফয়জান এর কথা শুনে সমির স্যার কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,
-” নিশ্চ‌ই এমন একটা খুবই সুন্দর রিসোর্ট আছে আমার জানামতে মতে।

ফয়জান ফোন রেখে, উৎসুক হয়ে বললো,
-” বাহ্। কোথায় এটা?এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন আপনি?

সমির স্যার তার বাম হাতের তর্জনী দিয়ে ভ্রুতে স্লাইড করতে করতে বললেন,
-” অবশ্যই কেন নয়।শুনেন বলছি,
লা রিভারিয়া রিসোর্ট এন্ড পার্ক,
হাজার বছরের ইতিহাস আর ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ আমাদের এই দেশ। আপনারা ভ্রমন পিপাসু মনের চোখ দিয়ে দেখলে দেখবেন এই দেশে দেখার আছে অনেক কিছু। হয়তো তার খোজ আমরা জানিনা।

“লা রিভারিয়া রিসোর্ট এন্ড পার্ক” এই রিসোর্ট টি ঢাকা বাসীর জন্য হতে পারে যান্ত্রিক জীবন থেকে হাফ ছেড়ে বাচার কাছে নতুন এক গন্তব্য। নারায়নগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ এ শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেসে গড়ে উঠেছে দৃস্টিনন্দন এই রিসোর্ট। রিসোর্ট এর অবকাঠামো এর কারনে ইতমধ্যেই এই রিসোর্ট টি অনেকের কাছেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

ঢাকার পূর্বাচল কাঞ্চন ব্রীজ থেকেই এই রিসোর্ট এর নান্দনিক অবকাঠামো আপনার চোখে পড়বে।

শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে রিসোর্ট এর খোলা বারান্দায় বসে এক কফিতে চুমুক দিতেই আপনার সব ক্লান্তি নিমিষেই দুর হয়ে যাবে। দখিনা বাতাস এর অপরূপ প্রকৃতি আপনারি ভালো লাগতে বাধ্য।

এই রিসোর্ট এ যাওয়া খুবই সহজ। আপনি ঢাকার যে কোন স্থান থেকে কাঞ্চন ব্রীজ পার হয়ে মায়ার বাড়ী বাস স্ট্যান্ড নেমে একটি রিকশা নিয়েই চলে যাওয়া যাবে এই রিসোর্ট এ।

এটি মূলত একাধারে রিসোর্ট/ রেস্টুরেন্ট এবং পার্ক হিসেবে গড়ে উঠেছে। রিসোর্টটি যেহেতু নতুন তাই এখানে অনেক প্রকল্পই বাস্তবায়ন এর অপেক্ষায়। রিসোর্ট এ লাগানো হয়েছে নানা প্রজাতির গাছ। যার মাত্র কয়েক বছর। এই গাছ গুলো বড় হয়ে গেলে রিসোর্টটিকে আরো বেশী আকষনীয় হয়ে উঠবে।

রিসোর্ট এ রয়েছে রাত্রী যাপনের জন্য বেশ কয়েকটি কটেজ যা বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় বুকিং দেওয়া যাবে।

চাইলে ওখানেই যেতে পারেন।

ফয়জান সমির স্যারের মুখে এতো প্রশংসা শুনে না দেখেই ভালো লাগলো। অনলাইনে গিয়ে সার্চ করলো “লা রিভারিয়া রিসোর্ট এন্ড পার্ক” লিখে।

সমির স্যার ঠোঁট কামড়ে ক্ষীণ স্বরে বললো,
-” তো ফ্যামিলি মেম্বারদের নিয়ে যাচ্ছেন? নাকি ফ্রেন্ড সার্কেল দের নিয়ে?

ফয়জান ফোন থেকে মাথা তুলে বললো,
-” না স্যার দেশে আমার ফ্রেন্ড নেই বললেই চলে।যারা আছে তারা সবাই বিদেশের। কাজের চাপে যোগাযোগ ও হয় না বললেই চলে।
-” একটা সময় এরকম ই হয়। সবাই সবার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আমার অবশ্য এখনো অবধি ফ্রেন্ডদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান আছে।
যাই হোক আপনাদের যাত্রা শুভ হোক।

শেষের কথাটা একটু টেনে বললো সমির স্যার। ফয়জান অতো আমলে নিল না হেসে চলে গেল ক্লাস রুমে।
.
.
রামিসা আর নূর বসে গল্প করছে। ইসলামের নিয়ম কানুন সম্পর্কে। ইদানিং রামিসা তার পাঠ্য বই থেকে বেশি ইসলামীক বই পড়ে।এই অভ্যাসটা তার কায়েস এর থেকে হয়েছে।
কায়েস প্রচুর ইসলামী বিভিন্ন হাদীসের ব‌ই পড়ে।তার বুক সেলফ জুড়ে সব হাদীসের ব‌ই মা শা আল্লাহ। সেই থেকেই রামিসা অনুপ্রেরণা পেয়েছে।অবসর সময়টা ব‌ই তে মগ্ন থাকে বেশিরভাগ সময়।

কথায় কথায় নূর বললো,
-“অনলাইনে কি শুরু হয়েছে দেখেছেন ভাবী?

রামিসা বললো,
-” সরি আমার অনলাইনে যাওয়া হয় না তেমন তাই কি হয়েছে আমি অবগত ন‌ই।
-” কি সব ছেলেরা মেয়ে সাজ এবং মেয়েরা ছেলেদের সাজে সজ্জিত হচ্ছে! আবার বলছে তারা পোশাক পরিধানে স্বাধীনতা চায়।
দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে থাকতে যে আরো কতো কি দেখতে হবে আল্লাহ তা’আলা জানেন।

রামিসা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“পোশাক পরিচ্ছদ মানব সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য বিষয়। আল কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, পৃথিবীর আদি মানুষ হজরত আদম (আ.) পোশাক পরিধান করতেন।

যেমন সূরা আরাফের ২২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, হজরত আদম ও হাওয়া (আ.) নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীর থেকে কাপড় খুলে পড়ে যায়। সর্বকালেই সভ্য মানুষেরা লজ্জাস্থান ঢেকে রাখার জন্য পোশাক পরিধান করতো। এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর কোথাও এমন পাওয়া যায়নি, যারা স্বভাবজাত এই বিধানের বাইরে চলেছে আর পৃথিবীবাসী তাদেরকে সভ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে যাদের অবস্থান মানব সমাজ থেকে বহু দূরে, জংলি জানোয়ারের ন্যায় জীবন যাপন করে তাদের কথা ভিন্ন। কারণ, তারা সমাজ, সভ্যতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ।

অতিতের প্রত্যেক সভ্য সমাজে পুরুষের চেয়ে মেয়েদের পোশাকের গুরুত্ব বেশি ছিলো। কিন্তু বর্তমান অবস্থা হচ্ছে এর সম্পূর্ণ উল্টো। পোশাকের ক্ষেত্রে পুরুষরা শালীনতা রক্ষা করে চললেও নারীরা এ ব্যাপারে বেপরোয়া। ফলে ইভ’টিজিং ও ধর্ষ’ণের মতো গুরুতর সামাজিক ব্যধিগুলো সমাজে ভয়াবহ রূপ ধারন করছে। উপমহাদেশে ভারতে ধর্ষ’ণের হার সবচেয়ে বেশি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে নগ্ন পোশাক।

আল কোরআনে পোশাক সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘ হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সাজ-সজ্জার বস্তু। আর পরহেযগারীর পোশাকই সর্বোত্তম পোশাক। এই পোশাক আল্লাহর নিদর্শনসমূহের একটি, যাতে তারা গভীরভাবে চিন্তা করে।[১]
(সূরা আরাফ-২৬)

আয়াতে পোশাক অবতীর্ণ করার অর্থ হচ্ছে, তার উপাদানগুলো সৃষ্টি করা এবং তা থেকে পোশাক তৈরির কলা-কৌশল শিক্ষা দেয়া। অর্থাৎ এগুলো আল্লাহ তায়ালা নিজ কুদরতে মানুষদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। অন্যথায় মানুষের পক্ষে আদৌ সম্ভব হতো না বস্ত্র ও তাঁত শিল্প আবিষ্কার করে এমন সুন্দর করে পোশাক তৈরি করা। এ জন্য আল্লাহ তায়ালা পোশাককে তাঁর নেয়ামত ও কুদরতের নিদর্শন সাব্যস্ত করেছেন। উল্লেখিত আয়াতে আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, পোশাকের আলোচনা শুধু মুসলমানদেরকে উদ্দেশ্য করে করা হয়নি; করা হয়েছে সমগ্র মানব জাতিকে উদ্দেশ্যে করে। বলা হয়নি হে মুসলমানেরা! বরং বলা হয়েছে ‘হে আদম সন্তানেরা! যার মাঝে মুসলিম ও অমুসলিম সকলে অন্তর্ভূক্ত। এর দ্বারা ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, পোশাক পরিচ্ছদ এটা শুধু মুসলমানদের জন্য নয় বরং সমস্ত আদম সন্তানের জন্য। সঙ্গে সঙ্গে এই দিকেও ইশারা করা হয়েছে যে, পোশাক শুধু লজ্জাস্থান ঢাকার বস্তু নয় বরং সৌন্দর্য বৃদ্ধিরও কারণ। আর পোশাক দ্বারা ব্যক্তির সৌন্দর্য ফুটে ওঠবে যখন পোশাক শালীন হবে। আল কোরআনের আরো কয়েক জায়গায় পোশাকের আলোচনা এসেছে। যেমন সূরা আরাফ আয়াত নম্বর ৩১ ও ৩২।

আল্লাহ তায়ালার পছন্দের পোশাক:
নবী-রাসূলগণ (আ.) কখনো পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা প্রভাবিত হতেন না। ঘুমানো, ঘুম থেকে ওঠা, পানাহার, প্রস্রাব-পায়খানা ইত্যাদির মতো সামান্য সামান্য বিষয় থেকে নিয়ে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে তারা আল্লাহর তায়ালার নির্দেশনার আলোকে আঞ্জাম দিতেন। অনুসারীরাও যেন আল্লাহর মর্জি মাফিক সেগুলো করে, সে ব্যাপারেও তারা সদা সচেষ্ট থাকতেন। নবী করীম (সা.) যখন সাহাবাদেরকে এগুলোর তালিম দিতেন তখন কাফেররা হাসাহাসি করে বলতো, ‘যে ব্যক্তি প্রস্রাব -পায়খানার তালিম দেয়, সে আবার নবী হয় কেমন করে!’ কিন্তু ওরা বুঝতে পারেনি যে দীন ইসলাম একটি ব্যাপক ধর্ম, যা জিন্দেগীর কোনো শাখা-প্রশাখাকে বাদ দেয়নি। প্রস্রাব-পায়খানার মতো হীন বিষয়গুলো যদি দীনের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে তাহলে পোশাক পরিচ্ছদের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দীন থেকে বাদ যাবে কোনো যুক্তিতে? এমন তো হতে পারে না যে, রাসূল (সা.) সবকিছু করতে বলেছেন ওহির ভিত্তিতে আর পোশাকের কথা বলেছেন পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে। বরং এক্ষেত্রেও তিনি আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছেন এটাই স্বাভাবিক।

আল্লাহর নির্দেশে বলেছেন বলেই কোনো পোশাকের ব্যাপারে তিনি বলেছেন এটা জায়েজ, কোনোটার ব্যাপারে বলেছেন নাজায়েজ, কোনটা উত্তম বা অনুত্তম ইত্যাদি। মুসলিম শরীফের এক হাদীস এসেছে নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘এটা কাফেরদের পোশাক তাই তা পরিধান করো না।[২]
(মুসলিম-৫৫৫৫)

এই আলোচনার আলোকে সন্দেহাতীত ভাবে বলা যায়, রাসূল (সা.) ওই পোশাক পরিধান করেছেন বা করতে বলেছেন যার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার হুকুম হয়েছে। এ ছাড়া সমাজ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তিনি কোনো পোশাক পরেছেন এটা বলা ভুল। তাই রাসূল (সা.) এর পোশাক আল্লাহর পছন্দনীয় পোশাক। অতএব যারা বলেন, ‘কোনো পোশাকই ইসলামী নয় বরং সমাজের প্রচলিত পোশাকই ইসলামী পোশাক, রাসূল (সা.) যদি ইউরোপ বা আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করতেন তাহলে তিনি ওই সমাজের পোশাককেই শরয়ী পোশাক হিসেবে গ্রহণের করতেন’ এই কথার কোনো ভিত্তি নেই।

হাদীসের আলোকে ব্যাখ্যা দিয়ে রামিসা নিজেকে খুব ক্লান্ত অনুভব করে। তারপর মাথা ঘুরে উঠলো। সাথে সাথে বসা থেকে শুয়ে পরে!

হঠাৎ এমন হ‌ওয়ায় বরকে গেল নূর। তড়িগড়ি করে শ্বাশুড়ি মাকে ডেকে আনলো।
ছেলেরা তাদের কর্মক্ষেত্রে আছে।
আয়েশা আর রিনু বিচলিত হয়ে পরলে রামিসা বলে তার কিছু হয়নি এমনি একটু মাথা ঘুরে গেছে!…..

#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগো(২৫)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

তপ্ত দুপুরের গরমে হয়তো মাথা ঘুরে উঠেছে এই বলে সবাই কে আশ্বস্ত করলো রামিসা। আয়েশা কায়েস কে কল করতে নিলে রামিসা নিষেধ করে বলে,
-“বড় মা উনার কিছুদিন যাবত কাজের অনেক প্রেসার তাছাড়া ট্যুরের জন্য ছুটি নিতে হবে তাই বলো না প্লিজ। আমি কিছুদিন দেখি তারপর না হয় উনাকে বলে ডাক্তার দেখাবো।

রিনু দ্রুত পায়ে চলে যায় কিচেন রুমে। ঠান্ডা পানি দিয়ে লেবুর শরবত তৈরি করে নিয়ে আসে রামিসার জন্য।রামিসা শরবত খেয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে শুয়ে রইলো।
.
.
এরপরের দিন এগারোটার দিকে সবাই কে র‌ওনা হয় “লা রিভারিয়া রিসোর্ট এন্ড পার্ক” এর উদ্দেশ্যে। তাদের সকাল সকাল র‌ওনা হ‌ওয়ার কথা ছিল কিন্তু নূরের জন্য লেইট হয়ে গেল।

নূর পর্দা না করলেও শালীন পোশাক পরিধান করে। কিন্তু গতকাল যখন রামিসার মুখে পোশাক পরিধান সম্পর্কে হাদীসের বিভিন্ন বয়ান শুনলো তখন তার বিবেকে বাধে যে সে তো পর্দা মেনে চলে না। তাই দ্রত অনলাইন থেকে কালো বোরকা,ছয় পার্ট হিজাব অর্ডার করে।
অবশ্য আবু দাঊদ তারা সুনানের ৪১০১ এ একটা হাদীস উল্লেখ করেছেন, যাতে বুঝা যায় সাহাবী মহিলারা কালো হিজাব পরে মসজিদে আসতেন।

উম্মে সালামা বলেন, যখন “মেয়েরা যেন তাদের জিলবাবের উপরে একটা কাপড় নিচে টেনে নেয়” আয়াত নাযিল হয়, তখন আনসার মহিলারা বের হলে দেখা যেত যেন তাদের মাথার উপর কাপড়ের কারণে কাকের মত লাগছে।

এ থেকে বুঝা যায় তারা কালো কাপড় মাথার উপর দিতেন। আর কালো রঙ মেয়েরা পরলে তাদের দিকে পুরুষের লোভাতুর দৃষ্টি অনেক কমে। সে জন্য কালো রঙ ভালো, কিন্তু তাই বলে এই কালো রঙ পরাটাকে ফরয বলা যাবেনা। বরং অন্য রঙের বোরকা ও পরা যাবে।

মেয়েদের পোশাকের জন্য কালো রঙ হতে হবে এমনটা নির্দিষ্ট করা হয়নি। বরং তার যে কোন রঙের পোশাক পরা জায়েয আছে, যদি তা সতরগুলো ঢেকে ফেলে। সেই পোশাকে থাকবেনা পুরুষের পোশাকের সাথে সাদৃশ্য, এমন টাইট হবেনা যা তার শরীরের খাঁজ নির্ণয় করে, বা এমন পাতলা হবেনা যা দিয়ে পোশাকের নিচে থাকা চামড়ার রঙ বুঝা যায়, এবং তা হবেনা এমন পোশাক যা দিয়ে ফিতনা উষকে দেয়। সর্বোপরি একজন নারী এমন পোশাক বা বোরকা পরিধান করবে যেন তার সুন্দর্যো বাহিরে প্রকাশ না পায়। তাহলেই হবে।

নূরের অর্ডার করা বোরকা ভেলিভারি হতে হতে বেলা সাড়ে দশটা বেজে যায়।আর এ কারণেই তাদের র‌ওনা হতে সময় লাগে।
.
.
ঘন্টা খানেক পর তারা রিসোর্ট এসে পৌছায়।গাড়ি থেকে নেমে চারিদিকে তাকায় আলো। সবুজ প্রকৃতির সমারোহ তাকে দারুন ভাবে আকৃষ্ট করে। সাথে আসা লোকজনের কথা ভুলেই যায় সে।একা একা হেঁটে বেড়াচ্ছে আর সবুজ পাতায় ছুঁয়ে দিচ্ছে তার কালো মৌজায় আবৃত হাত।কালোর মাঝে সবুজ রঙ যেন ফুটে উঠেছে।

হাঁটতে হাঁটতে অনেক খানি চলে এসেছে।তার সম্পূর্ণ মনোযোগ এখন প্রকৃতিতে মগ্ন। কখনো গ্রামে যাওয়ার সুযোগ হয়নি ঢাকা শহরেই তার জন্ম, সেখানেই বেড়ে ওঠা।

চিকন পাকা রাস্তার পাশে থাকা গাছ গুলো যখন ছুঁয়ে দেখছিল তখন পিছন থেকে আকস্মিক কেউ তার শরীর সাথে ছোট করে ধাক্কা দিল যেন!আলো চমকে উঠে তাড়াতাড়ি পিছনে ফিরে তাকাতে দেখতে পায় একজন পুরুষ লোক দ্রুত পায়ে হেঁটে সামনের কটেজে ঢুকে গেল।

মুহুর্তেই আলোর মন খারাপ হয়ে গেল। খুব রাগ হলো, লোকটাকে ইচ্ছে মত জেড়ে দিতে ইচ্ছে হলো। আলো ড্যাম শিউর লোকটা ইচ্ছে করে এরকমটা করেছে। মেয়ে মানুষ দেখলেই এদের গায়ে পড়তে ইচ্ছে করে!

ভাবী মনি?ডাক শুনে পিছনে ফিরে তাকায় আলো।ফাইজা সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আলো তাকাতে বললো,
-” তোমাকে আমরা খুঁজে পাই না!আর তুমি একা একা এখানে চলে এসেছো?চলো সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
রোদের তাপমাত্রা কমলে সবাই বের হবো কটেজ থেকে। এখন ফ্রেশ হয়ে লান্স করতে হবে তো নাকি? তাছাড়া যোহর নামায পড়তে হবে।চলো চলো?

আলো পিছনে একবার তাকিয়ে বললো,
-“আচ্ছা আপু চলেন।

তারপর যার যার বুকিং দেওয়া রুমে সবাই অবস্থান করে।

রামিসা রুমে ঢুকেই ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। কায়েস টলি ব্যাগটা একপাশে রেখে বললো,
-“এটা কি হলো? বাহিরে থেকে এসে ফ্রেশ না হয়ে এভাবে বিছানায় শুয়ে পড়ে কেউ?

রামিসা আঁখিজোড়া বন্ধ রেখে বললো,
-” খুব ক্লান্ত লাগছে। আপনি আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন প্লিজ তারপর আমি যাব।

এ কথা শুনে কায়েস এর খুব মায়া হলো তাই আর কিছু না বলে সে প্রথমে বাথরুমে গেল ফ্রেশ হতে।

তারপর, মিনিট খানেক পর ফ্রেশ হয়ে অযু করে এসে রামিসা কে বাথরুমে পাঠিয়ে নামাযে দাঁড়ায় সে।
.
নূর প্রথম বারের মত বোরকা পরে ঘামে জর্জরিত অবস্থা তার।তাই একেবারে শাওয়ার নিয়ে তবে বের হয়ে আসে সে। এখন খুব শান্তি লাগছে তার।
তার অবস্থা দেখে কায়েস বললো,
-” বেশি সমস্যা হলে না হয় বোরকা পড়তে হবে না।ডিলেডালা থ্রিপিস পড়লেই হবে।

নূর এর প্রতিবাদ করে বললো,
-” উঁহু তাও বোরকার মতো পর্দা হবে না। আমি রামিসা ভাবী,আলো ভাবী এবং ফাইজা আপুর মতো পর্দা মেনে চলতে চাই। তুমি শুধু দো’আ করো আমার জন্য। আমি যেন আল্লাহ তা’আলার এরকম প্রতিটি ইবাদত পালন করতে পারি।

তায়েস নূর কে তার খুব কাছে নিয়ে এসে গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আমি জানি তুমি ঠিক পারবে ইনশা আল্লাহ। তুমি তোমার এই অধম স্বামীর জন্য দো’আ করো সে যেন ইডাদতে মনোযোগী হতে পারে।

নূর তৃপ্তির হাসি হাসে।
তায়েস তার নরম মখমলে গাল দুটো তে নিজের অধরপল্লব দিয়ে আঁকড়ে ধরে।
এঁকে অপরের প্রতি ভালোবাসায় সিক্ত হয় তারা।
.
আলো দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নামাযে দাঁড়িয়েছে। নামায শেষে তাসবিহ পড়ার সময় পেটে খিদে অনুভব করলো। ইদানিং তার প্রচুর খিদে পায়। লজ্জায় কাউকে বলতে পারে না। আবার কি যেন খেতে ইচ্ছে করে তার নাম জানা নেই তার। শুধু মনে হয় ঐ খাবার টা খেলে সে তৃপ্তি পেত।

ফয়জান ফ্রেশ হয়ে মাত্র নামাযে দাঁড়িয়েছে।
আলো মোনাজাত ধরে উঠে দাঁড়ায়। আশেপাশে তাকিয়ে রুমটা পর্যবেক্ষন করে নিল। তারপর দক্ষিণে অবস্থিত বেলকনির সন্ধান পেয়ে খুশি মনে চলে গেল সেখানে।
বাহিরে থেকে ফুরফুরে বাতাস বইছে।শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে রিসোর্ট এর খোলা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আশেপাশের পরিবেশের সাথে নিবিড় সম্পর্ক এ যেন খুব সুন্দর অনুভূতি মিশ্রিত এক আবহাওয়া।

বছর খানেক পর এই সুন্দর মূহুর্তটা আলোর জীবনে এলো।এর আগে বিদেশে পর্যন্ত তার ভ্রমণ হয়ে গিয়েছে! তারপর একটা দিনের পর সব বদলে গেল! পরিবেশের সাথে সাথে আপন মানুষ গুলো পর্যন্ত।
জীবনের মানে শুধু সেদিন ই বুঝতে পারে আলো। তবুও কিছু করার ছিল না।এ দুনিয়ার মোহে আকৃষ্ট হতে পারেনি আলো!
.
সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে বিশেষ করে মেয়েরা।তাই লান্স যার যার রুমে নিয়ে আসে ওয়েটার। তাদের আর কষ্ট করে রেস্তোরাঁয় যেতে হয় না।

খাওয়া দাওয়া করে সবাই ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়। কয়েকদিন যেহেতু সময় আছে তাই আজকের দিনটা না হয় বিশ্রাম হয়ে যাক।

নিঝুম রাতে সবাই কটেজ থেকে বের হয়ে আসে। রিসোর্ট ঘুরে দেখার জন্য।
রিসোর্ট পুরোপুরি রঙিন আলোয় আলোকিত হয়ে আছে।তায়েস বললো,
-” আলো কিছুটা কম হ‌‌ওয়া উচিৎ ছিল। তাহলে রাতের মুহূর্তটা উপভোগ করা যেত।
এতো লাইটিং হলে তো দিন ই হয়ে গেল তাই নয় কি?

ফয়জান হেসে বললো,
-” চিন্তার কারণ নেই ভাই তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে।চলো রিসিভসনে কাউকে জিজ্ঞাসা করে নিব।
.
.
সবাই আবছা আলো যেখানে সেখানে আসে। রাতের মুহূর্ত উপভোগ করার এটাই সুন্দর প্লেস‌। আকাশে তারার মেলা।আলো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।ভাবছে আল্লাহ তা’আলা তাকে নিশ্চ‌ই দেখছেন। কি সুন্দর মুহূর্ত ভাবা যায়?

কিছু একটা মনে পড়তে আলো ফয়জান কে উদ্দেশ্য করে বললো,
-” ঐ দেখুন?

পিছনে ফিরে দেখল ফয়জান নেই।তাকে খুঁজতে আশেপাশে তাকিয়ে সামনে হাঁটল আলো।আর বাকি সবাই দূরত্বে দাঁড়িয়ে নিজেদের মতো সময় কাটাচ্ছে।

আলো খুঁজতে খুঁজতে একটা বাগানে চলে এসেছে! চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার,ঝিরঝির পোকার শব্দ কানে বাজছে!…

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here