#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগো,২৬,২৭
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
#সারপ্রাইজ_পর্ব
২৬
আলো’র জ্ঞান ফিরে আসার পর,কিছু টেষ্ট করানো হয়েছে!ফাইজা আলো’র একপাশে বসে শান্তনা দিচ্ছে আরেক পাশে বসে আছে ফয়জান।
সবকিছু যে মাথার উপর দিয়ে গেল ফয়জান এর। কি থেকে কি হয়ে গেল?
ঘন্টা খানেক আগের ঘটনা,আলো ফয়জান কে খুঁজতে খুঁজতে গভীর অন্ধকারে চলে যায়। তখন হঠাৎ কেউ মুখ চে’পে ধরে আলো’র! নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হয়ে উঠে আলো’র।ঘুঙানো স্বরে উহুম উহুম শব্দ।হাত দুটো ঝাপটাতে থাকে অনবরত। কিছুতেই শক্ত দেহের অধিকারী ব্যক্তির সাথে পেরে উঠেনা আলো।
ভয়ে ধ’ম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। মনে মনে আল্লাহ তা’আলা কে স্মরন করে চলেছে।এই পরিস্থিতি থেকে তাকে একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রক্ষা করতে পারেন।যদিও এমন পরিস্থিতিতে সূরা কালাম পড়তে কষ্ট হচ্ছে তবুও আলো পড়তে চেষ্টা করছে। চোখের অজস্র পানি ঝড়ে পড়ছে গড়িয়ে।
ফয়জান কে একটা ছেলে এসে বলেছিল, রিসোর্ট এর ম্যানেজার সাহেব তাকে ডেকেছে।
ফয়জান আলো কে বলে যেতে চাইলে ছেলেটা তাগাদা দিয়ে বলে,দ্রুত যেতে খুব জরুরী কথা বলবেন ম্যানেজার সাহেব।
তাই ফয়জান কটেজের ভিতরে চলে যায়।
তারপর যখন ম্যানেজার সাহেব কে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে তখন উনি জানান যে, তিনি ফয়জান কে ডেকে পাঠান নি!
ফয়জান খুবই আশ্চর্য হলো এ কথা শুনে। বললো,
-” তাহলে কে করলো এমন ফাজলামি? শুধু শুধু এমন মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার কি প্রয়োজন ছিল?
এ ব্যাপারে ম্যানেজার সাহেব কিছু বলতে পারলেন না। ফয়জান হাঁটতে ভাবলো এমনটা কেন করা হলো তার সাথে?
তারপর আলো’কে যেখানে রেখে গিয়েছিল সেখানে এসে দেখলো আলো নেই। এদিক ওদিক খুঁজেও পেল না। কায়েস আর তায়েস কে কল করে জিজ্ঞাসা করলো তাদের ওখানে আলো গিয়েছে কিনা? কিন্তু তারা বললো না আলো কে তো দেখেনি আসা তো দূর।
ফয়জান তখন ভাবো আলো বুঝি রুমে চলে গেছে তাকে দেখতে না পেয়ে।তাই দ্রত পায়ে ফয়জান রুমে গিয়ে দেখলো আলো কোথাও নেই। বেলকনিতে, বাথরুমে পর্যন্ত চেক করে দেখলো তাও নেই।
এরকম দেখে ফয়জান এর মনে ভয় জাগে কোথায় গেল মেয়েটা একা একা ?ফাইজা সহ বাকি সবাইকে কল করে আলো কে খুঁজে দেখার জন্য বললো ফয়জান।
সবাই হননি হয়ে খুঁজে বেড়ায় আলো কে।ম্যানেজার কে জানানো হলে তিনি লোক লাগিয়ে খুলতে শুরু করেন।
ফয়জান আর ফাইজা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে আঁধারের দিকটায় খুঁজে চলে আলোকে। খুঁজতে খুঁজতে এ পর্যায়ে আলো’র দেখা মিলে! তবে স্বাভাবিক অবস্থায় নয়!
মাটিতে জ্ঞান হারিয়ে পরে আছে আলো!
ফয়জান দৌড়ে গিয়ে মাটিতে বসে আলোর মাথাটা তার কোলে রেখে নেকাব খুলে ফেলল। তারপর চিৎকার করে ডাকতে শুরু করে,আলো?এই আলো কি হয়েছে তোমার? এখানে এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে কেন এসেছো তুমি?আলো উঠো?
পাশে ফাইজা বসে আলোর হাত দুটো ঘসে ঘসে ডাকে ভাবী মনি কি হয়েছে আপনার? কিন্তু কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যায় না।তাই ফাইজা বললো,
-“ভাইয়া ভাবী মনি কে হসপিটালে নিয়ে চলো দ্রুত?
ফয়জান মাথা নাড়িয়ে,আলো কে কোলে তুলে নিল।এর মধ্যে ফাইজা তায়েস কে কল করে বললো,
-” আলো ভাবী কে ইমার্জেন্সি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে!ম্যানেজার কে বলে গাড়ি ঠিক করো!
এমন ধারা কথা শুনে তায়েসের মস্তিষ্ক যেন হ্যাং হয়ে গেল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কায়েস জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে আলোকে খুঁজে পাওয়া গেছে? তখন তায়েস ফাইজার কথা গুলো রিপিট করে বললো,
-“আলো ভাবী কে ইমার্জেন্সি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে!ম্যানেজার কে বলে গাড়ি ঠিক করো!
কায়েস চমকে উঠে বললো,
-” তো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?চল তাড়াতাড়ি।
কায়েস চলে যায় সব ব্যবস্থা করার জন্য। তখন তায়েস সম্বিত ফিরে পেয়ে সেও পিছু পিছু যায় কায়েস এর সাথে। তারপর হসপিটালে নিয়ে আসা হয় আলোকে।
ডাক্তার ইনজেকশন দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসে আলোর। তারপর ডাক্তার কিছু টেষ্ট লিখে দিলে এগুলো করানো হয়।
আলো ফয়জান কে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ভিশন ভয় পেয়েছে সে। তখন ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে না পড়লে হয়তো তার খুব বড় বি’পদ ঘটে যেত। মহান রাব্বুল আলামীন রক্ষা করেছেন তাকে।
.
.
ডাক্তার ফাইল হাতে কেবিনে ঢুকলে ফাইজা বলে উঠে ডাক্তার রিপোর্ট কি তৈরি হয়ে গেছে?
ডাক্তার ছোট করে বললেন,জ্বি,একটার রিপোর্ট এখন বলে দিচ্ছি বাকি গুলো আগামীকাল দেওয়া হবে।
তারপর ফয়জান কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-” কনগ্রেচুলেশন ফয়জান মাহমুদ চৌধুরী আপনি বাবা হতে চলেছেন!আর মিসেস আলো আপনাকে এখন খুবই সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে। আজকের মতো কেয়ারলেস হয়ে চলাফেরা করা যাবে না।
আলো ফয়জান এর বুক থেকে মাথা তুলে পাশে তাকাতেই পিলে চমকে উঠলো!
আকস্মিক ফয়জান কে ছাড়িয়ে বেড থেকে নেমে দৌড়ে গিয়ে ডাক্তার কে জড়িয়ে ধরে
“মামনি” বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
ঘটনার আকস্মিকতায় ফয়জান এবং ফাইজা খুশির সংবাদ ভুলে গিয়ে বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইলো।
ডাক্তার মিথিলা পাল নিজেও হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন!এদিকে আলো কেঁদেই চলেছে।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বললেন,
-” মিষ্টার ফয়জান আপনার স্ত্রীকে সামলান। এই সময় এভাবে উত্তেজিত হওয়া তার জন্য মোটেও ভালো কিছু নিয়ে আসবে না।
ফয়জান তখন বললো,
-” ইয়েস ডাক্তার।
তারপর আলোকে জোর করে টেনে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিল।
আর ডাক্তার মিথিলা পাল এই সময়ে কিভাবে চলাফেরা করতে হবে তা সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দিয়ে একটা বই দিলেন।ফাইজা এগিয়ে গিয়ে হাতে নিল ডাক্তারের কাছ থেকে।
তারপর তিনি চলে গেলেন।আলো ভিজে থাকা নেত্রজোড়া দিয়ে তাকিয়ে রইল সেদিকে যেদিকে ডাক্তার মিথিলা পাল হেঁটে গেলেন।
ফয়জান কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলো,
-” কি হয়েছে তোমার বলো তো? এভাবে ডাক্তার কে জড়িয়ে ধরেছিলে কেন? উনাকে তুমি কোন ভাবে চিন? পূর্ব পরিচিত তোমার?
ফাইজা তখন বললো,
-” যদি পরিচিত হতো তাহলে ডাক্তার কিছু বললেন না কেন? উনি এভাবে স্বাভাবিক ভাবে উনার ডিউটি পালন করে চলে গেলেন কেন? হয়তো ভাবী মনি তখনকার জন্য নার্ভাস হয়ে এরকম করেছেন।যাই হোক ভাইয়া এবং ভাবী মনি তোমাদের দুজনকেই কনগ্রেচুলেশন।
আলোর এবার টনক নড়ে উঠলো।সে তো তখন ব্যাপারটা গুরুত্ব দেয়নি।ডাক্তার বলেছেন ফয়জান বাবা হতে চলেছেন! তারমানে তো সে মা… এতটুকু স্মরন হতেই নিমিষেই ডান হাতটা পেটের মধ্যে চলে যায় আলো’র।আরো আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে আলো। বাচ্চাদের মত ঠোঁট কামড়ে কান্না রোধ করার চেষ্টা করে আলো।
ফয়জান আলোর অনুভূতি বুঝতে পেরে তাকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নেয়।
এবার আলোর কান্না গুলো পানি হয়ে ঝরে পড়ে।
ফাইজা মুচকি হেসে কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে সবাইকে সু-খবর টা দেয়। এতো আনন্দের খবর শুনে রামিসা দৌড়ে যায় আলোর কেবিনে। গিয়ে দেখে ফয়জান আলো দুজন দুজনকে আলিঙ্গন করে রেখেছে।যা দেখে সাথে সাথে ঘুরে দায় রামিসা। তারপর হেসে বলে,
-“আমি কিন্তু কিচ্ছু দেখিনি।
রামিসার কথা শুনে দুজনেই সচকিত হয়ে ছাড়িয়ে বসে।আলো লজ্জা রাঙ্গা হয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে। ফয়জান উঠে গিয়ে রামিসার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
-” দুষ্টু মেয়ে ।
তারপর ফয়জান বাহিরে বের হয়ে গেলে নূর ভিতরে ঢুকে।
রামিসা আলোকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আল্লাহ তা’আলার কাছে লাখো লাখো শুকরিয়া ভাবী এতো সুন্দর একটা মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্য। তোমাকে জাযাকিল্লাহু খাইরন ভাবী মনি।
আলো তখন বলে আলহামদুলিল্লাহ।
নূর এগিয়ে গিয়ে হেসে বললো,
-” ভাবী আমাকেও একটু সুযোগ দিন?
তারপর রামিসা সড়ে দাঁড়ালে নূর আলোকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-” কনগ্রেচুলেশন ভাবী।
#চলবে… ইনশা আল্লাহ।
#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(২৭)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
হসপিটালের ফিনেইল এর গন্ধ সহ্য হচ্ছে না রামিসার।টিস্যু দিয়ে ঘ্রাণেন্দ্রিয় চেপে ধরে আছে সে।
কায়েস কে বসিয়ে রেখে ডাক্তার মিথিলা পাল এর সাথে দেখা করতে এসেছে সে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দেখা করার সুযোগ পেল।
ডাক্তার মিথিলা পাল রামিসা কে চুপ করে বসে থাকতে দেখে বললেন,
-” আপনি আপনার সমস্যার কথা না বললে তো আমি সমাধান দিতে পারবো না।আর ডাক্তার দের কাছে লুকানোর কিছু নেই। নির্দ্বিধায় আপনি আপনার সমস্যার কথা বলতে পারেন।
রামিসা এবার সাহস যুগিয়ে বললো,
-” আসলে ম্যাডাম আমি জানতে চাচ্ছিলাম প্রেগন্যান্ট হওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি?
ডাক্তার মিথিলা পাল এক হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে অন্য হাত রেখে বললেন,
-” আচ্ছা এই ব্যাপার? তো নতুন বিয়ে হয়েছে তাই না?
রামিসা মাথা নাড়িয়ে বলে,জ্বি।
মিথিলা পাল মুচকি হেসে বললেন,
-” বয়স কত আপনার?
-” সতেরো প্লাস!
-” বয়স তো অনেক কম আপনার। এতো কম বয়সে মা হতে চাচ্ছেন কেন? এতে তো আপনার অনেক ঝুঁকি নিতে হবে।
১৮ বছরের কম বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হলে গর্ভপাতসহ প্রসবকালীন মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে সবচেয়ে বেশি।কমবয়সে গর্ভধারণ করায় প্রসূতির শরীর ভেঙে যায়। নিজেকে বোঝার মতো উপলদ্ধির আগেই মেয়েরা দুই থেকে তিন বাচ্চার মা হওয়ার ফলে তাদের মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।
ডাক্তারের বয়ান শুনে একটু মন খারাপ হলো রামিসা’র।
ডাক্তার মিথিলা পাল সেটা বুঝতে পেরে বললেন,
-” আচ্ছা সেসব কথা বাদ দেই।
প্রেগন্যান্ট হওয়ার চারটা লক্ষণ শুনুন?
১)প্রেগন্যান্সি স্ট্রিপ
আপনি গর্ভবতী কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওষুধের দোকানগুলোতেই প্রেগন্যান্সি পরীক্ষার স্ট্রিপ পাওয়া যায়। তা দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এর নিয়মাবলি প্যাকেটের গায়ে স্পষ্টভাবে লেখা থাকে। তাছাড়া হসপিটালে টেষ্ট করিয়ে জানতে পারেন।
২)পিরিয়ড
নারীদের প্রতি মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে পিরিয়ড হয়ে থাকে (সাধারণত ২৮ দিন পর পর)। যদি তা না হয়, তবে বুঝে নিতে হবে আপনি গর্ভবতী।
৩)রক্তপাত
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পিরিয়ডের সময় খুব সামান্য পরিমাণ রক্তপাত হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। এটি হতে পারে গর্ভধারণের লক্ষণ।
৪)স্তনের পরিবর্তন
গর্ভধারণের আরেকটি লক্ষণ হল- স্তনের পরিবর্তন। আপনি যদি গর্ভধারণ করেন, তা হলে স্তনের আকৃতি কিছুটা বৃদ্ধি পাবে ও নিপল গাঢ় রঙ ধারণ করবে।
.
সবগুলো লক্ষন মনোযোগ দিয়ে শুনলো রামিসা।সে মনে করতে পারছে না শেষ বার কতো তারিখ পিরিয়ড হয়েছিল। তাই ডাক্তার কে বললো,
-” আচ্ছা ম্যাডাম মাথা ঘোরা,বমি এরকম কোন লক্ষণ নেই?
-“সাধারণত আমরা দিদা-থাম্মাদের মুখে শুনে আসছি যে, নারীরা গর্ভবতী হওয়ার পর সকালে ঘুম থেকে উঠলে প্রচণ্ড দুর্বল, মাথা ঘোরা ও বিষণ্ন লাগে।এটি গর্ভবতী হওয়ার অন্যতম লক্ষণ।এ ছাড়া হজমে সমস্যা বা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
এরপরেও আপনার সন্দেহ থাকলে আপনি টেষ্ট করিয়ে নিশ্চিত হতে পারেন।
-” আচ্ছা ম্যাডাম ধন্যবাদ।
.
.
সবাই হসপিটালে থেকে রিসোর্ট এ ফিরে আসে। তখনকার ঘটনা টা আলো কাউকে না বললেও মনে মনে ভিশন ভয়ে টটস্থ হয়ে আছে সে। ফয়জান কে সারাক্ষণ আঁকড়ে ধরে আছে।যেন ফয়জান কোথাও গেলে তখনকার কালো ছায়া মানব তার কোন ক্ষ’তি করে ফেলবে! না না তা তো হতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই। এখন তো সে একা নয়।তার মধ্যে অন্য আরেকটি প্রাণ বেড়ে উঠছে।
সেই প্রাণের জন্য হলেও তাকে সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
রাতের খাবার আনা হলে আলো নাক সিঁটকায়।বলে এসব খাবে না সে।
ফয়জান তখন বললো,
-” তাহলে কি খাবে বলো?
আলো একটু ভেবে বললো,
-” ব্রেড আর মিল্ক।
ফয়জান অবাক হয়ে বললো,
-” এই সময় এগুলো খাবে?
আলো বাচ্চাদের মত করে ঠোঁট উল্টে মাথা উপর নিচ করে বোঝায় এগুলোই খাবে সে।
ফয়জান বললো,
-” আচ্ছা ঠিক আছে আমি ব্যবস্থা করছি তুমি বসো।
এই বলে উঠতে নিলে আলো ফয়জান এর হাত ধরে বাঁধা দিয়ে বললো,
-” আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
ফয়জান কপাল কুঁচকে বললো,
-” তুমি তো বললে এই খাবার খেতে চাও না।তাই তো বাহিরে বের হয়ে দেখি পাই কিনা।
আলো ফয়জান কে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“না আপনি কোথাও যাবেন না।
-” তাহলে খাবার গুলো আনতে হবে না?যদি এখানে না থাকে তবে?
কোনরকম ভ্রক্ষেপ করলো না আলো। আগের ন্যায় জড়িয়ে ধরেই বসে রইল ফয়জান কে। ফয়জান আর কিছু না বলে পাশ থেকে হাতড়ে কাউকে কল করে ব্রেড আর মিল্ক এর কথা বললো।
কলের ওপাশ থেকে কিছু বলতেই ফয়জান থ্যাংক ইয়ু বলে কল কেটে দিল।
.
দশ মিনিট পর দরজায় কড়াঘাত শুনে ফয়জান আলোকে বললো,
-” ম্যাডাম ছাড়েন এবার,ওয়েটার দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
এবার আলো ছেড়ে দেয়। তারপর ফয়জান দরজা কিছুটা খুলে খাবার ট্রে হাতে নিয়ে পুনরায় দরজা বন্ধ করে, আলোর কাছে খাবার গুলো নিয়ে আসে।
তারপর আলো কোন রকম এক পিস আর কিছুটা মিল্ক খেয়ে বলে আর খাবে না। ফয়জান জোরাজুরি করলে বলে, জোর করতে না। না হয় বুমি হয়ে যাবে।
তাই আর ফয়জান জোর করলো না।
.
রামিসা দ্রুত অল্প কিছু খেয়েই শুয়ে পরেছে। খুব ক্লান্ত লাগছে তার।চোখ দুটো বুজে আসছে ঘুমে। কায়েস খাবার খেয়ে সব কিছু গুছিয়ে রেখে আসলে রামিসা তাঁকেও শুয়ে পড়তে বলে। কেননা কায়েস এর আলিঙ্গন বদ্ধ না হয়ে ঘুমাতে পারে না রামিসা।এ যেন তার নৃত্য দিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
কায়েস ও তাকে খুব সন্তর্পণে আগলে রাখে তার প্রশস্ত বুকে।
ঘুমের পূর্বে কায়েস রামিসা কে মাসনুন আমলের কথা স্মরণ করিয়ে দিল
আমাদের সবারই যাদু এবং জ্বিন- শয়তানের ক্ষ’য়ক্ষ’তি থেকে বাঁচার জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিখিয়ে দেয়া আমল গুলো যত্ন সহকারে করা উচিত। এগুলোকে মাসনুন আমল অর্থাৎ সুন্নাহসম্মত আমল বলে। এসবের অসাধারণ সব উপকারিতার পাশাপাশি বড় যে লাভ রয়েছে, তা হচ্ছে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বাড়ে।
.
.
তায়েস এর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আসছে কিন্তু নূর তাকে কিছুতেই ঘুমাতে দিবে না।
কফি অর্ডার করে বেলকনিতে তায়েসের কোলে বসে আছে নূর।সে এই নির্জন রাতের মুহূর্ত উপভোগ উপভোগ করতে চায়।তাই তার পাশে তায়েস কে ও থাকা চাই।
তায়েস বারবার ঘুমে বিভোর হয়ে যায়। তখন নূর এটা ওটা নিয়ে প্রশ্ন করলে হুঁ হাঁ করে উত্তর দেয়।যা দেখে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকায় নূর। দুষ্টুমি করে তায়েসের কান টেনে ধরে! কিন্তু তায়েসের কোন ভাবান্তর নেই এতে।সে চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়।
শেষে নূর তায়েস এর পুরো মুখশ্রী জুরে অজস্র অধরের স্পর্শ ছুঁয়ে দেয়।যার অনুভবে আঁখিপল্লব দুটো মেলে বড় বড় করে তাকায় তায়েস।
তখন লুকোচুরি খেলার মতো তায়েসের প্রশস্ত বুকে মুখ লুকায় নূর।তায়েস চেষ্টা করেও তার মুখশ্রী উপরে তুলতে ব্যর্থ হয়।
এমনি করে এক সময় ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় দুজনে।
.
সকালের নাস্তা শেষ করে ফয়জান আর আলো হসপিটালে আসে। আলোর বাকি রিপোর্ট গুলো নেওয়ার জন্য।
তারপর ডাক্তার আসতে দেরি হবে বিধায় তারা কাছের একটা পার্কে ঘুরে আসে।
ডাক্তার মিথিলা পাল রিপোর্ট দেখে জানান, রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। কোন প্রবলেম নেই।যা শুনে ফয়জান বললো, “আলহামদুলিল্লাহ।
ডাক্তারের কেবিন থেকে বেরিয়ে আসার সময় আলো পিছু ফিরে তাকিয়ে রইল মিনিট কয়েক। কিন্তু সামনে থাকা ব্যক্তিটির এতে কোনরকম ভ্রক্ষেপ করলো না! তিনি নিজের মতো ফাইলে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছেন।
.
.
সূর্য মামার তেজস্ক্রিয় রশ্মি কমে এলে তারা সবাই বাসায় ফিরে আসে।
বাসায় ফিরে আসার পর আলো লক্ষ্য করলো ফাহমিদা খাতুন তার সাথে কোন কথা বলছে না!আলো কিছু বললেও তার উত্তর দিচ্ছে না!..
#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।