শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,২৮,২৯

0
274

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,২৮,২৯
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
২৮

ফাহমিদা খাতুন চুলায় রান্না বসিয়ে নিজের রুমে গিয়েছেন। তখন ভাত বলকানি এসে পড়ছে দেখে আলো দৌড়ে গিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে দিল।ঢাকনা টা নামিয়ে রেখে দিল।খু’ন্তি হাতে নিয়ে চারিদিকে ছিটিয়ে পড়া ভাত গুলো ঠিক করে দিতে নিলে ফাহমিদা খাতুন এসে ক্ষীপ্ত গলায় বললেন,
-” তোমাকে কে বলেছে আমার রান্না ঘরে ঢুকতে?

পিছন থেকে হঠাৎ করে এমন কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো আলো।হাত থেকে খু’ন্তি রেখে এগিয়ে এসে বললো,
-” মা ভাত বলকানি এসে পড়ছে দেখে আমি..

ফাহমিদা খাতুন আরো তীব্র ক্ষো’ভ প্রকাশ করে বললেন,
-” সব পরে গেলেও তুমি আমার কোন কিছুতে হাত দিবে না! তোমার ঐ নোং’রা হাত আমার সংসারটা ধ্বং’স করে দিবে!একদম হাত দিবে না বলে দিচ্ছি আমি।

ফাহমিদার এহেন কথায় যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হল!
আলো কি বলবে? সেই ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
-” মা আমি কি কোন ভুল করেছি?

ফাহমিদা খাতুন কিচেনে ঢুকে চুলায় কড়াই বসিয়ে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে নাড়তে নাড়তে বললেন,
-” তুমি এখান যাও। আমার মোটেও ইচ্ছে করছে না তোমার সাথে কথা বলতে।তাই বলছি কথা শুনতে না চাইলে চলে যাও!

আলো কাঁপা কাঁপা পায়ে কোন রকম নিজের রুমে ফিরে খাটে বসলো। নেত্রজোড়া ছাপিয়ে কান্না আসছে ভিশন। ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না রোধ করার চেষ্টা করছে মেয়েটা।

ফয়জান বাহিরে বেরিয়েছে।থাকলে কি হতো আল্লাহ জানেন।
ফাইজা ওখান থেকে ফিরে মাথা ব্যথা নিয়ে শুয়ে আছে তাই, না হয় নিশ্চ‌ই তার মায়ের থেকে জানতে পারতো। হঠাৎ করে ফাহমিদা খাতুন এর ঠিক কি হয়েছে? কি কারণে তিনি এমন রাফ ব্যবহার করছেন?
.
রুহুল আমিন এবং ফয়জান মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পর ফাহমিদা খাতুন হাতে করে ফোন নিয়ে এসে বললেন,
-” দেখ তোর পর্দাশীল ব‌উয়ের আসল রূপ!

ফয়জান এ কথার মানে কিছুই বুঝতে পারলো না।ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।
রুহুল আমিন থমথমে মুখ করে বসে আছেন। তিনি হয়তো আগেই এ সম্পর্কে অবগত আছেন। তাই কিছু বলছেন না।

ফয়জান মুখে কিছু না বলে ফোন হাতে নিল।ভিডিও তে টার্চ করে চালু করলো।

রঙিন আলোয় ঝলমলে এক কনসার্ট এ হাজারো মানুষের সমাগম।স্টেজে দাঁড়িয়ে একজন এনাউন্স করলো, এখন আমাদের মাঝে আসতে চলেছে নৃত্য শিল্পী ঐশ্বরিয়া পাল ঐশী!
হাজারো দর্শক তৃপ্তির আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে করতালিতে মুখরিত করে তোলে। তাদের প্রিয় নৃত্য শিল্পী ঐশ্বরিয়া পাল ঐশী আসতে চলেছে। অনেকের বহু দিনের স্বপ্ন ছিল বাস্তবে মুখমুখী নৃত্য শিল্পী ঐশ্বরিয়া পাল ঐশী কে দেখার।যে কিনা মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকে নৃত্য শিল্পী হিসেবে খ্যাত। পাশাপাশি তার গানের গলা ও দারুন।তার গান বেশ উপভোগ করে দর্শক।

হঠাৎ সব লাইট অফ হয়ে গেল।সবার মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পিনপতন নীরবতা ভেঙে হঠাৎ করেই লাইট জ্বালিয়ে আঁধার কেটে ঝলমলে আলোর দেখা মিলল।স্টেজে গারো লাল রঙের গাউন পরিহিতা মেয়েটি তার নৃত্যের ছন্দে দাঁড়িয়ে আছে!
দর্শকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত নৃত্য শিল্পী ঐশ্বরিয়া পাল ঐশী কে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে জানান দিচ্ছে! চারিদিকে হ‌ই হুল্লোড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে পরিবেশ।

তারপর ঐশ্বরিয়া পাল তার নৃত্য শুরু করে একটি হিন্দি গানের মধ্য দিয়ে।
.
.
স্টেজের মেয়েটিকে দেখে ফয়জান এর ভিতরটা ধক করে উঠল। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না সে। মায়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় ফয়জান। ফাহমিদা খাতুন মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
-” দেখ কাকে ঘরে তুলেছিস!
নাচনেওয়ালি মেয়ে তোর বউ!

“নাচনেওয়ালী” কথাটা কয়েক বার বারি খেল ফয়জান এর কানে। সেদিন সমির স্যার ও বলেছিলেন নাচনেওয়ালী। তাহলে কি স্যার সবটা জেনে শুনেই বলেছিলেন?

মায়ের এমন চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ফাইজা রুম থেকে বেরিয়ে এলো কি হয়েছে জানার জন্য?এসেই বললো,
-” মা কি হয়েছে? এভাবে কথা বলছো কেন?

ফাহমিদা খাতুন ফয়জান এর কাছ থেকে ফোন নিয়ে ফাইজার হাতে দিয়ে বললো,
-” এই দেখ তোদের আদরের ভাবী মনির মুখোশ উন্মোচন!

ফাইজা এক হাতে মাথা টিপে বললো,
-” কি সব বলছো তুমি?

ফাহমিদা খাতুন ফোনটা ফাইজার সামনে ধরে বললো,
-” দেখে নে তারপর যা বলার বলিস।

অতঃপর ফাইজা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকালো!এ কাকে দেখছে সে? নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না ফাইজা। ফোন হাতে নিয়ে সোফায় বসে পড়লো।

তখন ফাহমিদা খাতুন আরো একটা আশ্চর্য জনিত খবর বলেন।যা শুনে ফয়জান এর চোখে পানি চলে আসে!

ফাহমিদা খাতুন জানান,আলো একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়ে!তার জন্ম হিন্দু পরিবারে!

একের পর এক অজানা সত্যের মুখোমুখি হতে নিজেকে সামলাতে বেশ কষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফয়জান এর।তাই মাথা চেপে ধরে বললো,
-” প্লিজ মা চুপ করো।আর কিছু বলো না আমি সহ্য করতে পারছি না প্লিজ।

ফাহমিদা খাতুন ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
-” এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করিস না বাপ। তুই ঐ মেয়েকে জিজ্ঞাসা কর কেন এভাবে আমাদের ধোঁকা দিল? আমরা কি ক্ষতি করেছিলাম ঐ মেয়ের?
.
আলো কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম ভাঙ্গতেই বাহিরের কিছু কথা কর্ণধারে পৌঁছায় আলোর। কিন্তু সবাই ঠিক কি নিয়ে আলোচনা করছে তা বুঝতে পারে না সে।তাই বাথরুম থেকে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসে রুমের বাহিরে বের হলো।
ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে এক পাশে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়াতেই ফাহমিদা খাতুন বলে উঠলেন,
ঐ তো মহারানী এসেছেন জিজ্ঞাসা কর তাকে?

সবার নজর এখন আলোর দিকে নিবদ্ধ। ফয়জান অসহায় মুখশ্রী করে তাকায় আলোর দিকে।
সবার এরকম চাহনিতে অস্বস্তি বোধ করে আলো। বুঝতে পারে না ঠিক কি হয়েছে?তার শ্বাশুড়ি মা কি জিজ্ঞাসা করার কথা বলছেন?

ফয়জান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-” আলো এখানে আসো?

আলো গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলে, ফয়জান তার পাশে বসিয়ে বললো,
-” সত্য কখনো চাপা থাকে না জানো তো?

আলো হকচকিয়ে তাকায় ফয়জান এর দিকে। ফয়জান আবার বলে,
-” কেন বললে না তুমি একজন হিন্দু ধর্মের! আমার আর তোমার বিয়েটা যে আদৌ বিয়ে হয়নি! সেই সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা আছে? একজন মুসলিম ছেলের সাথে একজন হিন্দু ধর্মের মেয়ের বিয়ে কে আমাদের ধর্মে নিষিদ্ধ আর সেই নিষিদ্ধ কাজটা আমি করেছি! আমাকে কেন বাঁধা দিলে না তুমি? কেন এই গুনাহের কাজ আমাকে করতে দিলে বলো?

আলো কে চুপ করে বসে থাকতে দেখে ফাহমিদা খাতুন রেগে বললেন,
-” এখন চুপ করে আছো কেন? জবাব দাও এমন অন্যায় কেন করলে?

ফয়জান তার মাকে চুপ করিয়া বললো,
-” মা তুমি চুপ করে থাক প্লিজ।যা বলার আমাকে বলতে দাও?

ফাহমিদা খাতুন চুপ করে বসে রইলেন। সাথে বাকিরা ও নিরব হয়ে শুনছেন।

আলো’র চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি ঝরে পড়ছে। ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করে বললো,
-” মুসলিম হওয়ার নিয়তে কালেমা পাঠ করা কি আমার অপরাধ হয়েছে স্যার?

এ কথা শুনে সবাই চমকে তাকায়।
তখন আলো আবারো বললো,
-” যখন আমি ব‌ই’য়ে পড়ি আমার রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম। তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগে এতো ধর্ম থাকতে এবং আমার হিন্দু ধর্ম থাকতে ইসলাম কেন রাষ্ট্রীয় ধর্ম?ভিশন জানতে ইচ্ছে করে এই ধর্মের ব্যাপারে।
তাছাড়া আমার একজন ফেসবুক ফ্রেন্ড মেয়ে ছিল কখনো কথা হয়নি উনার সাথে কিন্তু উনি নিয়মিত উনার ধর্মের কিছু কিছু কথা নিয়ে পোস্ট করতো। যেগুলো আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। তখন আমার খুব ভালো লাগতো। আলাদা একটা টান অনুভব করতাম আমি। আমার মনে এটাই সেরা ধর্ম,এর উপরে কোন ধর্ম হয় না।

প্রতিদিন ই কোন না কোন চ্যানেল থেকে আমার শো এর অফার আসতো। সেগুলো তে আমার অনিহা তৈরি হতে শুরু করলো। নিজেকে পর্দা নামক ছায়ায় আবৃত করতে ইচ্ছে শুরু হলো। এই নিয়ে আমি ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হতে থাকি। কারণ আমার সোসাইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। আমার সোসাইটি তে এগুলো কখনোই মেনে নিবে না আমি জানতাম।

অনেক ভেবে চিন্তে ঐ ফেসবুক ফ্রেন্ড আপুর সাথে যোগাযোগ করি আমি।আপুটা আমাকে অনেক গুলো হাদীসের ব‌ই সাজেস্ট করে….

#চলবে.…ইনশা আল্লাহ।

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(২৯)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

“ইসলাম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম, যার অনুসারী সংখ্যা প্রায় ২ বিলিয়ন এবং এটি মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪.৪%, যারা মুসলমান নামে পরিচিত। মুসলমানরা ৫০ এর অধিক দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসমষ্টি। ইসলাম শিক্ষা দেয় যে আল্লাহ দয়ালু, করুনাময়, এক ও অদ্বিতীয় এবং একমাত্র ইবাদতযোগ্য অভিভাবক”।

এর মানে আমি গভীর ভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছি স্যার।
ঐ আপু টার সাজেস্ট করা ব‌ই গুলো আমি নিজে গিয়ে নীলক্ষেত থেকে সংগ্রহ করেছি। তারপর আমার পরিবারের চোখের আড়ালে গভীর রাতে পড়া শুরু করেছি। কারণ আমি আমার মামনি আর বাবার একমাত্র সন্তান। তাদের চোখের মণি ছিলাম আমি। না চাইতেই সব কিছু হাজির করা হতো আমার জন্য।আর তাই তাদের চোখের আড়াল হ‌ওয়া মুশকিল ছিল আমার জন্য।
মামনি এবং বাবা দুজনেই প্রফেসর ডাক্তার! তাদের কাজের মাঝেও আমার খুঁজ নিতে এতটুকু ভুলতেন না কখনোই। সবসময় একজন গার্ড নিযুক্ত থাকতো আমার সাথে। সেই সব খবরাখবর মামনি আর বাবার কাছে পেশ করতো।তাই ভয় পেতাম সে যদি ব‌ইয়ের ব্যাপারে কিছু বলে দেয়?

একটা মজার ব্যাপার হয়েছিল, আমি সারারাত জেগে ব‌ই পড়ে সারাদিন বিভোর হয়ে ঘুমিয়ে থাকতাম। খাবার খাওয়ার জন্য জোর করে ঘুম ভাঙ্গানো হলে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে ঢুলে পড়তাম। তখন মামনি আর বাবা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে আমার জন্য ভাবে আমার কিছু হলো নাকি?এর জন্য কিছু টেষ্ট করানো হয় হা হা হা!
.
এতটুকু বলে কান্নায় নেত্রজোড়া ঝাপসা হয়ে আসে আলো’র।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে,একটু পানি পেলে গলাটা ভিজাতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু কষ্ট চেপে রেখেছে নিজের মধ্যে পানি খেতেও তার ইগোতে লাগছে।
ফয়জান হাত ধরতে নিলে আলো হাত সরিয়ে নিল। অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় ফয়জান আলোর দিকে। ফয়জান বুঝতে পারছে আলো ভিশন কষ্ট পেয়েছে তার এবং তার পরিবারের ব্যবহারে।আলো’র কষ্ট সহ্য করতে পারছে না সে।তাই বললো,
-” আর কিছু বলতে হবে না, আমাকে মাফ করে দাও না জেনে অনেক কথা বলেছি তোমাকে?

আলো প্রতিবাদ করে বললো,
-” কথা যখন উঠেছে তখন সবটা বলতে চাই আমি। আমাকে বাধা দিবেন না প্লিজ?

ফাহমিদা খাতুন ভাষা হারিয়ে বসে আছেন নিরবে, মনে মনে ভিশন অনুতপ্ত তিনি।ফাইজার চোখে বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। মনে মনে ভাবছে ইসলাম ধর্ম কে কতোটা ভালবাসলে আলো তার জন্মদাত্রী মা এবং বাবা কে ত্যাগ করেছে। ভাবলেই শরীর লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে!

আলো জ্বীব দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে আবার বলতে শুরু করে,
-” হাদীসের ব‌ই গুলো পড়ে আমার চক্ষু খুলে যায়। আমি মহান রাব্বুল আলামীন এবং তার হাবীবের প্রেমে পড়ে যাই।
আমার ধর্মকে ভোজা মনে হতে শুরু হয়। যেখানে ইসলাম সম্পর্কে জেনেছি,
বিশ্বে ইসলাম সব বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ ধর্ম। ইসলাম শব্দের সরল অর্থ শান্তি। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই ইসলাম ধর্মের লক্ষ্য। অশান্তি হয় এমন সব কাজ ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ। আমাদের নবী হযরত মুহম্মদ (স.) বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানব। তিনি জীবনে মিথ্যা কথা বলেননি। তিনি ছিলেন সত্যের
উপাসক। নবী হওয়ার আগে মক্কায় তিনি সত্যবাদিতার জন্য ‘আল-আমিন’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি ইমান। আল্লাহ এক, অদ্বিতীয় তাঁর কোনো শরিক নেই। হযরত মুহম্মদ (স.) তাঁর (আল্লাহর) বার্তাবাহক। এই বিশ্বাসই ইমান। ইমান আনার পরে মানুষের পরিচয় হয় মুসলমান হিসেবে। মুসলমানরা হবে নবীর অনুসারী। মুসলমান আল্লাহর ইবাদত করে। ইবাদত শব্দের অর্থ সার্ভিস (সেবা) দেওয়া। ইবাদত দুই প্রকারের। আল্লাহর প্রতি (হকুল্লাহ) আর আল্লাহর সৃষ্টকুলের প্রতি (হক্কুল ইবাদত)। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত হলো আল্লাহর প্রতি বান্দার ইবাদত। এ ইবাদতে ভুল হলে আল্লাহ তা ক্ষমা করার অধিকার রাখেন। এ বিষয়ে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনে বহু আয়াত আছে। কিন্তু বান্দার প্রতি অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি যে ইবাদত তা যদি আমরা পালন না করি এ জন্য যে গুনাহ হবে তা ক্ষমা করার মালিক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি যদি তা ক্ষমা না করেন তাহলে তা আল্লাহও ক্ষমা করবেন না। এমন বিধান অন্য কোনো ধর্মে আছে কি? বান্দার হককে ইসলাম ধর্মে আল্লাহর হকের পরেই স্থান দিয়েছে।

ইমানের পরে আসে নামাজ। সময়ের ৫টি অবস্থানকে কেন্দ্র করে ইসলাম ধর্মে ৫ বার আল্লাহকে স্মরণ করার বিধানকে নামাজ বলে। ভোরে ফজর, দুপুরে জোহর, বিকালে আসর, সন্ধ্যায় মাগরিব আর রাতে এশার নামাজ ফরজ (অবশ্য পালনীয়) করা হয়েছে। মুসলমানরা একত্রিত হয়ে যথাক্রমে ২, ৪, ৪, ৩ ও ৪ রাকায়াত ফরজ নামাজ মসজিদে একত্রিত হয়ে আদায় করে। নামাজ আদায়ের আগে পানি দিয়ে পবিত্র হওয়ার (অজু করার) বিধান রয়েছে। দৈনিক ৫ বার অজু করার ফলে হাত, মুখমন্ডল, নাক, পা, মাথা পানি দিয়ে তিনবার করে বিশেষ নিয়ম মেনে ধৌত করা হয়। এতে মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি লাভ করা যায়। দৈনিক ৫ বার ছাড়াও ইসলাম ধর্মে সাপ্তাহিক, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক আরও তিন ধরনের ফরজ নামাজ আদায় করতে হয়। প্রতি শুক্রবার মসজিদে ২ রাকায়াত ফরজ নামাজ, দুই ঈদে মাঠে ২ রাকায়াত ওয়াজেব নামাজ ও বছরে একবার পবিত্র কাবাঘরে হজের তাওয়াফ করতে হয়। এতে মুসলমানদের মধ্যে সাপ্তাহিক, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক সম্মেলন আকারে পারস্পরিক দেখা শোনা হয় ফলে ভ্রাতৃত্ব দৃঢ় হয়। অন্য কোনো ধর্মে এমন ব্যবস্থা আছে বলে আমার জানা নেই। নামাজের মাধ্যমে মানুষের মনে আল্লাহর প্রেম সৃষ্টি হয়। ফলে প্রকৃত
নামাজ আদায়কারীর দ্বারা কোনো অন্যায় কাজ সাধিত হয় না।

দ্বিতীয় স্থানে আসে বছরে ১ মাস রোজা পালন। হিজরি বর্ষের রমজান মাসে দিনের বেলা পানাহার থেকে বিরত ও সকল প্রকার অন্যায় কাজ, অন্যায় চিন্তা ও কুমতলব থেকে মুক্ত থাকাই রোজা। রমজান মাসে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারী একই সময়ে সাহরি খায়, একই সময়ে ইফতার করে। এতে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে একটি শৃঙ্খলা আসে। দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজের অতিরিক্ত হিসাবে আরও ২০ রাকায়াত তারাবিহ নামাজ পড়ার ফলে প্রতিটি রোজাদারের শরীর ও মন পরিশিলীত হয়। সারা দিন পানাহার ও কামাচার থেকে বিরত থাকায় একজন রোজাদার ক্ষুধার কষ্ট বুঝতে পারে বিধায় সে অনাহারি মানুষের দুঃখ যাতনা অন্তর দিয়ে অনুভব করতে সক্ষম হয়। যা একজন বেরোজাদার কখনও অনুভব করতে পারে না। রোজাদার অনাহারি গরিব মানুষদের সহায়তা সরার তাগিদ রোজার মাধ্যমে অনুভব করে। ফলে মনুষ্যত্ববোধ হৃদয়ে বেশি করে জাগ্রত হয়। এতে মহান আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য বৃদ্ধি পায়। নামাজ ও রোজার মাধ্যমে মানব মনে আল্লাহর প্রেম (তাকওয়া) সৃষ্টি হয়। চরিত্রে নম্রতা ও বিনয় সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধ জাগ্রত হয়। এটাই রোজার শিক্ষা।
সব মুসলমানের জন্য ইমান, নামাজ ও রোজা ফরজ। মুসলমানদের মধ্যে যারা ধনী তাদের জন্য আরও দুটি ফরজ ইবাদত আছে। তা হলো জাকায়াত আদায় করা ও জীবনে একবার মক্কায় গিয়ে হজ পালন করা। ধনীদের সম্পদে রয়েছে গরিবের হক। ইসলামের বিধান মেনে নির্দিষ্ট হারে সম্পদের ওপর জাকায়াত হিসাব করে কড়ায় গন্ডায় আদায় করতে হবে। ক্ষোদ দেখানো, ফাঁকিঝুকি দিয়ে নিজের মনগড়া হিসাবে জাকায়াত দিলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। ধনীরা যদি ঠিকমতো জাকায়াত না দেয় তা হলে শেষ বিচার দিনে তাদের ধরা খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ইসলামের বিধান মেনে সব মুসলমান জাকায়াত দিলে বিশ্বে মুসলমানদের
মধ্যে গরিব খুঁজে পাওয়া যেত না। অন্য কোনো ধর্মে জাকাতের অনুরূপ আর্থিক ইবাদত নেই।

জীবনে একবার হজ পালন করা ধনী মুসলমানের জন্য ফরজ। হজ পালনের মধ্য দিয়ে একজন হাজী শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসেন। সারা বিশ্বের মুসলমানরা আরাফাত ময়দানে একত্রিত হয়। যা একদিক দিয়ে বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের রূপ নেয়। যার ফলে বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়। হক্কুল ইবাদতের মধ্যে নিষ্ঠার সঙ্গে সব কাজকর্মই আসে। কৃষকের কৃষি কাজ, জেলের মৎস্য ধরা, মাঝির নৌকা চালানো, ঠিকমতো ড্রাইভ করা, সৎভাবে চাকরি করা ইত্যাদি হক্কুল ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। কথায় সৎভাবে সম্পাদিত সব কর্মই ইবাদত।

এর পর কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে আমি পিছুপা হ‌ই না। একদিন মামনি আর বাবাকে বললাম চলো আমরা মুসলমান হয়ে যাই!এ কথা শুনে সেদিন প্রথম এবং শেষ বারের মত মামনি আমার গায়ে হাত তোলেছিল!যে কখনো একটা ভুলের টুকাও দেয়নি আমাকে। খুব কেঁদেছিলাম সেদিন কিন্তু মামনি আর বাবার চোখে এতটুকুও মায়ার ছিটেফোঁটা দেখতে পাইনি!

মামনি, বাবাকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু তার তাদের পূর্ব পুরুষদের রিতি কিছুতেই পরিবর্তন করবে না। আমি তখন পাগল প্রায় হয়ে পড়ি। কি করবো? কোথায় যাবো?
কলেজের অধ্যক্ষ থেকে শুরু জুনিয়র শিক্ষক’রা আমাকে খুব ভালোবাসে। আমার জীবন বিত্তান্ত প্লাস পড়াশোনার জন্য। একদিন মাথা ব্যথা নিয়ে কমন রুমে বসে ছিলাম তখন আইরিন সুলতানা মিস আমার পাশে বসে স্নেহের স্বরে জিজ্ঞাসা করলো আমার কি হয়েছে? আমি ক্লাসে মনোযোগী ন‌ই কেন?

তখন আইরিন সুলতানা মিস কে আমার সমস্যার কথা জানাই। তিনি এতে ভিশন খুশি হয়ে প্রায় কেঁদেই দিয়েছিলেন। এরপরের দিন লাইব্রেরী কক্ষে আমাকে ডেকে পাঠালেন। তারপর আমাকে বললেন যে, আমি ইসলাম গ্রহণ করলে তিনি আমাকে দত্তক নিবেন! সেদিন নতুন করে বাঁচার স্বপ্নের পথ পেয়েছিলাম আমি। আমি বুঝতে পারি সবটাই আমার আল্লাহ তা’আলার কুদরত ছিল।

অতঃপর,
আমি মুসলিম হওয়ার নিয়তে কালেমা পাঠ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি “আলহামদুলিল্লাহ”।
যারা কারণে মামনি আর বাবা আমাকে ত্যাজ্য কন্যা করে দেন! তারপর আইরিন সুলতানা মিস আইনগত সহায়তা নিয়ে আমাকে তার মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এস.আই. তায়েস মাহমুদ!যিনি সমস্ত ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন!

আলোর শেষার্ধ কথায় সবাই চমকায়! রুহুল আমিন বলে উঠেন,
-” আমাদের তায়েস! তারমানে ও সবকিছু জানতো?…

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here